Saturday, October 31, 2020

বাংলা

তার হাতে ছিল একটা পুঁটুলি, কলমের মাটির মত ভারী।
বেশবাস শিশুর খিদের মত অবোধ।
শরীর,
মা ও দিদির মত,
দিদি ও মায়ের মত এমনকি তার সন্তানের পিতার জন্যও।
সে করেছিল ছিন্নবিচ্ছিন্ন কিছু স্বগতোক্তি নিজের দুর্ভাগ্যের যেগুলো
      উপন্যাসে বহুবার আমরা পড়েছি তাই
          সে উপন্যাসগুলোর মহান বাস্তববাদ অভিভূত করেছিল আমাদের।
সেই অন্ধকার প্ল্যাটফর্মে আমাদের মাতৃভাষায় কথা বলা
      বিপজ্জনক ছিল আর যেহেতু
          স্থানীয় ভাষা আমরা জানতাম না তাই
                   ভারতের রাজভাষায় কথা বলছিলাম।
      অনেকগুলো রেললাইন পেরিয়ে সে আমাদের কাছে এসেছিল।
সে জানতে চেয়েছিল তার হাতের টিকিটটা ঠিক কিনা,
তার ট্রেনটা কখন আসবে।
      কিছুটা পর
নিজেদের ট্রেনে চেপে, সেতু পেরোবার তীব্র ধাতব নিনাদে
হঠাৎ মনে পড়েছিল যে আমরা ইতিমধ্যে তার গন্তব্য ভুলে গেছি।
 

রেশ

ধীরে ধীরে শহরটা হল শান্টিং ইঞ্জিন।
হল বাইপাসের চা-দোকান
রেলগেটের কর্মচারীর
       গাঁ-থেকে-সদ্য-আসা বৌ,
ক্ষেতের কেয়ারিতে
        জল দিতে থাকা কৃষকছেলেটির
                         গায়ে রঙ্গিন গেঞ্জি ও হাফপ্যান্ট

ঠিক এ কথাটা মনে করার আগেই যে এবার
স্মৃতি ছাড়া আর কোনো অস্তিত্ব
                   রইল না শহরটার - ছপ
একটা হাত পড়ল ট্রেনের জানলায়
লিট্টিওয়ালা ছেলেটির
ঝুড়ি আর জলের টিন নিয়ে  
                   কামরা বদল;
চেঁচিয়ে সে ডাকল
ভিতরের
বাদামওয়ালা ছেলেটিকে,
      হ্যাঁরে, অনিল
          দোকান খোলেনি আজকে?
          কে বলছিল ওর মা হঠাৎ কাল রাতে…”

বাইরে তখন
জঙ্গল পাহাড় আর
গ্যাংম্যানদের দল মাঝে মাঝে।

 


আখ

ডান্ডা কম পড়ায়
আখওলার কাছ থেকে একটা আখ কিনে ব্যানারে লাগিয়ে
শুরু হয়েছিল মিছিল।
ভেবেছিলাম,
খেয়ে নেওয়া যাবে আখটা
ছোটো এক কবিতায় ধরব তার মিষ্টি রস।

আখের কবিতা গেছে অনেকদূর।
আমাদের রোজকারে ততদূর যাওয়ার
স্বপ্নও দুরূহ।

হাঃ হাঃ !
সম্মেলন শেষে
আমাদের প্রথম সম্মেলন
আখটা পাওয়াই গেল না।
দারোয়ানের কথায় মনে হল,
আবর্জনা-কুড়ানি ছেলেমেয়েদের একটি দল
হলের বাইরে রাখা ডান্ডার গোছায় আখটা
নিশ্চয়ই চিনে নিয়েছিল।
গেটের কাছে তাদের
একটা আখ ভেঙে ভাগ করতে
দেখা গিয়েছিল।

বুঝলাম,
ছোটো হওয়া, মিষ্টি হওয়া বা মনের মত হওয়া
বড় কথা নয়।
কিউবা হোক বা ভারতের এই
আমাদের ছোটো শহরটায়,
কবিতা যেভাবে এগুলো এবং যদ্দুর,
সেভাবে একটি, এবং একটিতেই ধরা
বড় কথা
এবং সমস্যা।



দশ নম্বর রোডের বাগান

পথের কিনারে তার দেয়াল অব্দি আমায়
তোমরা নিয়ে গিয়েছিলে।
সামনের সবুজ অন্ধকার দেখিয়ে বলেছিলে,
দেখ, যে অদ্ভুত বাগানটার কথা উঠেছিল!

ঠাহর হতে দেখলাম
ভিতরে অন্ধকার শুধু জোনাকির নদী

বহুক্ষণ প্রতীক্ষা করলাম যে বাগানের ধার দিয়ে যাওয়া
রেললাইনে একটা রাতের ট্রেন যাক।
জোনাকির নদীটা কাঁপুক।
শিশমের গাছগুলোয় হাওয়া খেলুক
                   ট্রেন যাওয়ার পরের নৈঃশব্দের।
 
আজও সেই পরের নৈঃশব্দ আমাদের
একসাথে একটা রাতের ট্রেনে বসবার জায়গা দেয়

……………
নাকি বসেছিলাম সেদিন!
ভাবিনি যে রাত
গাঢ় হতে হতে এক ধাতব ভাঙনে টেনে নেবে ট্রেনটাকে!
আলো ফুটতে দেখব লোহার,
ফুটন্ত তরল কাদার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছি!
 
তারপর সে কাদাও ঠান্ডা হল!
টুগবুগ শব্দে দেখলাম প্রাণ জন্ম নিচ্ছে,
বেরিয়ে আসতে চাইছে অসংখ্য বুদ্বুদে!

ধীরে ধীরে স্বচ্ছ হচ্ছি কি?
হয়ে উঠছি কি আমাদের শতকের
রাতের বাগান?
হাওয়া দিচ্ছে নতুন শতক,
জোনাকির নদীতে দাঁড়িয়ে
অন্ধকারে ফুটছি কি, আপাদমস্তক?
দূরে একটা ট্রেনেরও এগিয়ে আসার
পাচ্ছি কি
শব্দের কাঁপন, মাটিতে?




Tuesday, October 27, 2020

কেউ জানি?

এও এক অদ্ভুত নদী, স্রোত নেই,
তীরে বালি নেই; জঞ্জাল, কাদামাটি,
কিনারে জল বেঁধে পদ্মচাষ, হাঁস –
মনে হয় লম্বা ধাঁচের কোনো বিল।

অলস বুড়ো দৈত্য এক, যেন বলে,
“আয়, বাঁধ্‌ আমায় যত ইচ্ছে, ধান,
সর্ষে বোন্‌ চর ভরে, পাথর ফেলে
ঘর বাঁধ্‌…কলাবন…কুঁয়ো…মন্দির!”

বেশ কিছু আছে এরকম, যেগুলো
কোনো বড় নদী থেকে বেরিয়ে মূল
নদীতে মিশেছে –
                        একটির বুকে তো
দেখি পাকা মঞ্চ, বাঁশে মাইক বাঁধা,
বড় জনসভা হবে আজ বিকেলে!
…………
তারপর বর্ষা আসবে – কোনো এক
বর্ষার রূপে, অপরূপে, রৌদ্ররূপে
নদী খাবে মানুষের সব বেসাতি।

তাও ভালো। মরে যাওয়ার চেয়ে ভালো।
ভালো? কিভাবে মরে নদী? কেউ জানি?

পাটনা
৩১.১২.২০১৩





এস নাকাল করি বিস্মৃতির…

শোকসভা চলছে।
কাদা পায়ে
উঁকি দিচ্ছি কাঁচের বন্ধ দরজায়,
দেখছি সাদা বাষ্প পেরিয়ে মেটে ঘাম, ধুলোটে সতরঞ্চি।
ওই তো ওদিকে কলঘর – চটি ধুয়ে নিই।
যদিও এ মেঘে বৃষ্টি ধরবে না আজ –
খরিফের ধান বোনার পুরো সময়টাই
সাইক্লোনে মার খেল।

এস, সংগঠিত করি স্মৃতি।
মূল প্রসঙ্গে কিছুটা অন্য ভাবে ফিরি –
অনিবার্য দৈনন্দিনে
ছোটো ছোটো গল্পে খুঁজি স্পন্দঃ

ভীড়ে ঠাসা সওয়ারি ট্রেনের কামরায়
এক পাহাড় বৃষ্টি আর হাওয়া,
ঝিমোতে থাকা, শক্ত রুটি চিবোনো মুখগুলোয়
আলো ফেলি আগামী কোনো দিনের,
অথবা অনুন্নত এক দেশে
গাছতলায় সরকারী ইস্কুলে পড়া কিশোরীদের
বাড়িফেরতা কিচিরমিচির যা নিজের ভাষায় ভালো লাগে,
অন্য ভাষায় আরো ভালো লাগে
এবং আরো অন্য ভাষায় যারপর
তিনদিকে সমুদ্র একদিকে হিমালয় নাকি এন্ডিজ!

এস নাকাল করি বিস্মৃতির
দুরন্ত আলো গতিবেগ মেগাসিরিয়াল ছায়াচ্ছন্ন নেক্রোপলিস।রাজপথে উবু হয়ে
ট্রাকের পাশ কাটিয়ে কানে-হাত
                             কনুই দিয়ে মার্বেল ঠেলছে শিশু;
পেট্রলগন্ধী ভেজা বিকেল…

এস।




আগমকুঁয়া

ওপর দিয়ে পুল; পুলের পহুঁচপথে
দেড়-দু মাইল যানজটের হাল্লা।
নিচে, পূবপছিম চমকে দিয়ে ছুটছে
সকাল বেলার ট্রেন সব দূরপাল্লার।

কুয়াশার বেলা আটটায়
ডাকছে মিনি, ম্যাক্সি, অটো   
হিলসা, বাঢ়, অথমলগোলা, ইসলামপুর
বস্তি-জলা-গাছ-পলিথিন-আবর্জনার স্তূপ ঢেকে ধোঁয়া
অদূরে বৌয়ের জাগ্রত থান, শীতলামন্দির
উঠোনে সেই ঐতিহাসিক, এখন বেনেবস্তির  
আগমকুঁয়া।
 
এক দোকানির বেঞ্চি পেয়ে বসি,
ঠেকাই পিঠ পহুঁচপথের থামে।
মৌতাতের এই রোদটা কিনি  
পরোটা আর ডিমের ঝোলের দামে।

বেলা বাড়ুক।
ফেরিওয়ালা তার দুপুরের ফেরি,
আপন ঘরের মাচা থেকে পাড়ুক।
কোথায় সে যে ইশ্বর, তার
ফাল্গুনখানা ঝাড়ুক
বেজে উঠুক মাটির খুরি, কঞ্চির একতারা!
আমি বরং আগমকুঁয়ার অতলে চোখ বুঁজে
থাকি কিছুক্ষণ,
ইস্কুলের মেয়েগুলোর
গলায় বুঝে নেব
বাড়ি যাওয়ার তাড়া।

 



 

Saturday, October 24, 2020

সন্ধ্যা কখন হয়

সন্ধ্যা কখন হয়?
এত শত বছর ধরে তিলে তিলে
ভাষা ধরছে রং
সন্ধ্যা হতে কিছু তো তার, লাগে?
 
সন্ধ্যা হতে, গোধূলির চরাচর
সব মানুষের ঘরে ফেরা
আশ্বাস চায় আগে।
ফেরে না তার
দাহ চায় দায়ভাগে।
 
হিসেব লাগে, সারাদিনে
করতে পারা কাজের।
না পারার ক্ষোভেরও।
লজ্জারও। সন্ধ্যা হতে,
অত্যাচারের বানভাসিতে
জাতিস্মর এক রাতের ব্যথায়
জেগে থাকার
প্রতিশ্রুতি লাগে।

রাত তো ছিল ঘুরঘুট্টি, অন্ধ!
আগুন খুঁজে পেয়েও শুধু
তাপের জন্য রেখে আলোর
ন্য নানা সরঞ্জাম
গড়ল কেন মানুষ?
আলো দিয়ে খুঁজল কী, মানুষ?
ভাবার তাগিদ লাগে।
আবার নিভিয়ে আলো
অন্ধকারে ভিন্ন এক
আলোর কথায় জেরবার রাত...
লাগে, তবেই সন্ধ্যা হয়।

আকাশ, মাটি মাখে রং
একে অন্যের
পৃথিবী নয়
আমার তোমার বেঁচে থাকার
সাবেক ঘরের দিকরেখায়।

সন্ধ্যা হয়।

ব্যাঙ্গালোর
২০.৯.২০


বিদ্যেসাগর

বামুন ছিলেন, বামনেমিতে
কষ্ট পেতেন রাগে,
বিদ্বানদের শ্রেষ্ঠ হয়েও থাকতেন না
বিদ্বানদের বাগে
তাঁকে পেত গ্রামের গরীব
ছানাপোনা, বৌ, দিদিমা,
চাষী, রাখাল, জেলে,
শূদ্র হোক বা মুসলমান
হতেন তাদের ঘরের আপন ছেলে।

বীরসিংহ, কলকাতা
বর্ধমান বা কর্মাটাঁড়
ধুলোয় ঘামে চষা,
ভুখার মুখে অন্ন তোলা,
মারীর গ্রাসে পড়া রুগির শুশ্রূষা
নিজের হাতে, আর তাদের
ওষুধ-পথ্য ... সারাটা জীবন,
প্রশ্নে দাগল জ্ঞানমুগ্ধ যুগের সঞ্চরণ।

তবুও আবেগ নয়।
কাজের ধারায় বলে দিলে
ঠান্ডা মাথার,
যোদ্ধার কূট-রোখের হবে জয় 

প্রয়াসী তাঁর কাজে,
লড়াকু এক ধার,
নতুন যুগকে ধরিয়ে দিল উত্তরাধিকার   

খন্ডন করো যুক্তি দিয়ে মিথ্যার বেড়াজাল!
শক্তি হবে জীবনসত্য মানলে সমকাল।
দেশের সেবা বঞ্চিত ওই মানুষজনে ঢালো
কাঙাল নয় কেউ;
দেশকথায় আলো চাইলে মোছ
ওদের প্রাণের অবিশ্বাসের কালো।

ব্যাঙ্গালোর
৪.৯.২০/ ২০.১০.২০/ ৯.১১.২০ 



পাঠচক্র

আয় রে টবের গাছগুলো,
পাঠচক্রে বসি।
তোরাও থাক, পায়রার দল,
কাকদুটো আর কাঠবিড়ালি ...
ওখান থেকেই,
পালা এলে বলিস।
 
রোদ্দুর নিয়ে তৃতীয় পাঠ
মেঘলা দিনের কাজ।
মেঘলা দিনের ফাটল খোঁজা,
রোদ্দুর কুড়োনো,
ছোট্টো ছোট্টো কণা,
এক জায়গায় করা।
সবার কাজ,
আমরা সবাই খুঁজবো আমি
তোদের মেঘে! আর
তোরা আমার।

তার আগে নয় একটু আধটু
গল্প করি
তুই শুরু কর
গন্ধলেবু
অনেক তো খেলি মাছের নাড়ি,
ফুলটা কবে দিবি?
তারপর তোকে ধরব কাক,
রাজাধিরাজ,
ঝাঁ দুপুরে টিটকিরি দিস কাকে?
তুইও কিছু
পেয়ারা খাওয়া বন্ধ করে
বলিস রে কাঠবেড়ালির মা!
এইভাবেই চলুক!
একটু আপন হই
পাঠটা নাহয়
ধরব তারপর।

ঠিক?
সবাই নিজে বলব
মেঘযাপনের ব্যথা।
খুঁজব একে অন্যে,
অন্ধকারের ফাটল।

পরের পাঠে জানবো সেসব
ফাটল খুঁজে
পাওয়া কণা
কুড়োনো রোদ্দুর
গালিয়ে শক্ত ছাঁচে ঢালার
কামারশালা গড়া।
 
ব্যাঙ্গালোর
২.৯.২০  



হাতে লেখা পত্রিকা

হাতে লেখা পত্রিকাতেই ছড়িয়েছিল শহরটা সাইকেলে।
হাতে লেখা পত্রিকাতেই একে অন্যের বন্ধু হয়েছিলাম।
হাতে লেখা পত্রিকাতেই ঢুকেছিলাম অনেক ভিতর-বাড়ি।
হাতে লেখা পত্রিকাতেই মুক্তিপথের বিশ্ব ডেকেছিল।
 
দুচারটে দিন পরে যখন চেঁচিয়ে কেউ পথের ওপাশ থেকে
বলত ভালো লাগার কথা, বাজত যেন ভরা নদীর ওপার।
 
তারপর তো জেরক্স এল, ছাপা এল, এখন এ অনলাইন
তবু সে সব পৃষ্ঠাগুলোই অনন্য, সব একটা করেই আছে।
পড়ার মত পড়তে গেলে ঘরে এসে নিতে হবে দিতে হবে হাতে,
হাতে লেখা পত্রিকাতেই, জীবনটা হয় পাড়ার, হয় কৈশো নিবিড়।      
 
ব্যাঙ্গালোর
৩০.৮.২০



অর্থহীন

অনেকদিনই ভোরের দিকে
হাঁটতে হাঁটতে নতুন পথে
যাওয়ার কথা ভাবি!

নতুন পথ বলতে কোনো
কাব্যধর্মী খোঁজ! ... না,
পাড়া-বেপাড়ার রাস্তা।
অচেনা দোর, গলির বাঁক
খুব চেনা এক সাবান-গন্ধে
ভরা অন্য উঠোন।

শ্যাওলা-ধরা ফাটল থেকে ... আরে!
চেনা লোক যে! ... ফেরিওলার
বেরিয়ে আসা
দিনের রোজগারে।
তারই পায়ে পায়ে
অচেনা বদগন্ধ নালার পাশ দিয়ে
পৌঁছোনো
বড় রাস্তায়
কাজের বেলা শুরুর
রোদটা ধরা মুখে।
...
দেখ তো, বিস্ময় কেমন এক
অদ্ভুতুড়ে
যন্ত্র হয়ে পাহাড়-প্রমাণ,
কাজ করছে!

স্নিগ্ধতা নেই রঙে,
বাতাসে নেই সুবাস,
বিচিত্র সব গতির গুঞ্জরণে
মুগ্ধ করছে, ভয় ধরাচ্ছে,
যন্ত্রটারই চালক
চেঁচিয়ে উঠল,
পিছনে যান, পিছনে যান!
 
হকচকিয়ে পিছিয়ে গিয়ে
হোঁচটে ধরলাম
কাটা গাছের গুঁড়ি।

প্রকৃতির বিস্ময়কে
জয় করছে
যন্ত্রের বিস্ময়।
মানুষ জিতছে
মানুষেরাই অবাক হয়ে
দেখছে নিজের জয়।
এ মুহুর্তে
যন্ত্রটার মালিক কে তা
অর্থহীন।  

তবে,
পাশের চায়ের ঠেকে
বেঞ্চে বসে
প্রশ্নটা ঠিক আসেই মুখে,
কার জেসিবি, গোপালজি,
কে পেয়েছে ঠেকা?

ব্যাঙ্গালোর
২.১০.২০

বিহারী হওয়া

ছোটো কোনো শহরতলির বাজারপথে
বেলা করে, আরো বেশি, সন্ধ্যেরাতে
চলতে গিয়ে পেরোই
সেখানকারই বাসিন্দা এক অন্য সাথীর স্মৃতি

হঠাৎ হাতের আঙুলে টের পাই
আঙুলটা ফাঁসালো তার ছোট্টো ভাই,
টানলো বাঁয়ে
দুধাপ সিঁড়ি বেয়ে,
দোকানে আগেই পৌঁছেছে তার মা, ছোটো দিদি। ...
 
এভাবেই মাঝেমধ্যে নানান কাজে পৌঁছে,
অনেক সাথীর শৈশব, কৈশোরের সাথে বেড়ে উঠি আর,
খুঁজে বেড়া তাদের মু
আমারই অগুন্‌তি মুখ  
বিহারী হওয়ার।
কখনো দলসিংসরাই, নাকি টেহটা
ডুমরাঁও বা জমুই থেকে কখনো
পাটনা, মানে রাজধানী
পৌঁছোতে হয় সকাল

কাজের শেষে কোথায় ফিরবো আমি?
টায় ছাড়বে বাস বা আমার লোকাল?    

ব্যাঙ্গালোর
৫.৯.২০



শরতকালের রোদটায়

শরতকালের রোদটায় এক টানের ব্যাথা ওঠে।
দুদিক থেকে টানলে যেমন পেশির ভিতর ফোটে।
জলকে টানে নিচের মাটি আর আকাশের শুকনো হাওয়া।
শিষের ভিতর জমা দুধ হয় কঠিন, হয় শক্তি, আর
                       খোলসসুদ্ধু গাছটা ধরে ফুরিয়ে যাওয়া।
জানলা দিয়ে আলো এলে ঘরটা টানে মন, আবার
বাইরেটাও যে ডাকে, আয়, হাত ধরে আয় সবার!  

এ টান বড় সুখের টান, ব্যাথাও বড় সুখের
মাকে দেখি দেবীর সামনে প্রণাম করছে, করজোড়ে ফুল।
অস্থিরতার ডানাদুটো ঝাড়ে রাতের শিশির;
অনেক কাজে পিছিয়ে আছি, অনেক জানা কাঁচা...
পুজোর মাসের মধ্যে অনেক ঝাড়তে হবে ঝুল।

ব্যাঙ্গালোর
৬.৯.২০


 

 

 

  

দেনার চিরকুট

সেসব দিনে আমরা কিছু
ফেল-মার্কা বেকার ভাইয়েরা
ভাইফোঁটা আর রাখীতে সব বোনকে দিতাম
উপহারে, দেনার চিরকুট।
কত কত জমে হবে সেসব?
বোনেরা কি জমা রাখত ডিবেয়,
হিসেব করে নেবে বলে
যেদিন পরবো কাজে যাওয়ার বুট?
নিশ্চয়ই না, কক্ষনো দেখায়নি তারা পরে।
পিঁড়ি তুলে অনেককে পাঠিয়েছি শ্বশুরবাড়ি,
অনেকে রয়েই গেছে ঘরে।
তাদের দেনায় চলেছে এক একটা বড় পরিবার
চিরকুটও কেউ দেয়নি তাদের আর।

এসমস্ত পুরোনো দিনের সেন্টু;
সাদা-কালো বাংলা ছবির দিন।
এখন প্রকৃতিকেও মানুষ শোধ করে না ঋণ।
নাঙ্গা এক লুটের তন্ত্র
মঞ্চে উঠে ডাকে, আমার ভাই, মা-বোন!
কোটি কোটি মজুর, চাষীর
মেহনতের কর্জ তারা স্বীকারও করে না।
মুন্‌ফাখোরীর সনদ গড়ে দালাল এক শাসন।
শাসক বলে
ওরাই তো দিচ্ছে তোদের রোজগার
বাঁচার যোগাড়  
তোরাই ওদের ঋণী!
এই পাবি সেই পাবি ওসব
ফোঁপরা চিরকুট, তোদের
ভোটের জন্য কিনি!

ব্যাঙ্গালোর
৪.৯.২০