Friday, October 9, 2020

বিহারে রবীন্দ্রনাথ

বোধগয়া

 

সেই রাতগুলো বড় টানে,

যেন ব্যাপ্তির টঙ্কার ।

অন্ধকারে অশ্বত্থের নীচে

বুদ্ধ-মাহাত্ম্য কথক নিবেদিতা,

শ্রোতা রবীন্দ্রনাথ ও ছেলে রথী,

জগদীশ বসু, স্ত্রী অচলা...

পাটনা থেকে তরুণ যদুনাথ ও মথুরা পৌঁছেছেন ।

 

যুক্তির প্রাচীনতম দিগ্বলয়

ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখাচ্ছে এক আবেগদৃপ্ত প্রাণ,

শুনছে পিতৃশোকে বিচলিত এক চিত্ত এবং এক দরদী বৈজ্ঞানিক;

বাকিদের চোখে বিস্ময়ের আলোড়ন ।

রাতভর সবাই বোধগয়ার

মন্দিরে, ঋদ্ধ ভারতের সাধক ।

 

হঠাৎ কেঁপে উঠল সেই দিগ্বলয় !

বুদ্ধ বলে উঠলেন

আমার শরণে, অর্থাৎ অন্বেষণে এগোও,

দৃঢ় রাখো তর্কের অনুশীলন ধর্ম আমাদের,

পথটা কঠিন সঙ্ঘে থাকো হাতেহাত ।

 ............

আমরা ওইসব

বড়মানুষদের ধারেকাছেও আসি না বস্‌ !

কিন্তু রাতগুলো আসে ।

কখনো দিনে, কখনো সন্ধ্যায়, আমাদের আলোচনায়

 

বুদ্ধের হাঁকটা শুনবো কিনা, সেটা আমাদের এলেম ।

 

 

 

বেলা স্টেশনে

 

সেদিন আপনার গায়ে জ্বর ছিল রবিঠাকুর !

যার পৌঁছোবার কথা ছিল আমাদেরই, মানে বিহারেরই তো লোক

পৌঁছোলোই না, অদ্ভুত !

আর আপনি, জোড়াসাঁকোর বাবু,

স্নান না, খাওয়া না,

সুর্যাস্তে সুর্যোদয়ে পথের গান লিখে গেলেন সারা দুপুর ।

 

পরে বুঝেছি, কবি হলেও

আসলে তো ছফুট্টা কুস্তিগীর !

চওড়া কব্জির রক্তবাহী শিরাগুলো দপদপ করছে আজও !

  

 

 

মুঙ্গের

 

ব্যাথার চাঁদ আরো বড়, আরো মাদক হতে থাকে

রক্তে তার শ্বেত নির্জনতা রোধ করে ইস্পাত-আকাশ

একটু আড়াল নীলে, মৌনে মুখর হয় ব্যস্ততা মহাজাগতিক 

 

কষ্টহরণীর ঘাটে কি শমী এসেছিল ?

 

মুঙ্গেরে উত্তরমুখী গঙ্গা,

অথচ কোনো উত্তর নেই

কেন কবির বুকে নিদারূণ এই শেলটা এখানেই বিঁধলো ।

 

এই যে এখন সেতু হল এপার-ওপার

এখনো কোনো উত্তর নেই ! 

 


 

মুজফফরপুর

 

তিরহুতের বৌ আপনার বড় মেয়ে ।

আবার স্কুলও তো একটা খুলে গেছেন, এখনো চলছে ।

শুনি, পণ নিয়ে কোনো ঝামেলায়

আপনাকে আসতে হয়েছিল আবার !

 

হঠাৎ শহর মুজফ্‌ফরপুর যখন

ক্ষুদি আর প্রফুল্লর বোমায় কাঁপলো...

মাধুরী শুনেছিলেন?

ছুটে এসে ধরেছিলেন জানলার গরাদ?

 

যাঃ, একটু বেশি কবিত্ব হয়ে গেল ।

কিন্তু সত্যিই তো,

এত কম আমরা জানি মুজফফরপুরের মাধুরীকে !   

  


 

পাটনা

 

তোমার সাথে ছিল চিত্রাঙ্গদার নাট্যদল ।

পাটনা জাংশন থেকে বিশ্রামের জায়গায় তারপর মহড়ায়...

তারা কেউ সাদাকালো ছিল না, রঙীন,

          তুমিও; জীবন, নিসর্গ, লড়াই সবই তো বাস্তবে রঙীন !

আর, রঙে বদল নিয়ম, যেমন এলফিনস্টোন এখন ।

 

যা অবস্থা হয়েছে,

টিভিতে সাদাকালো এলেই অ্যাই থাম, থাম, দেখা,

          কী চলছে চ্যানেলটায় ?

রঙে আর মন স্থির থাকে না, বিশ্বাসও থাকে না আজকাল...

 

ভাঙা স্বাস্থ্য নিয়ে,

বিশ্বভারতীর জন্য চাঁদা চাইতে এসেছিলে, সর্বস্ব ঢেলেছিলে,

যার আচার্য এখন পদগুণে এক দাঙ্গাবাজ ।

  হাঃ ।



No comments:

Post a Comment