বোধগয়া
সেই রাতগুলো বড় টানে,
যেন ব্যাপ্তির টঙ্কার ।
অন্ধকারে অশ্বত্থের নীচে
বুদ্ধ-মাহাত্ম্য কথক নিবেদিতা,
শ্রোতা রবীন্দ্রনাথ ও ছেলে রথী,
জগদীশ বসু, স্ত্রী অচলা...
পাটনা থেকে তরুণ যদুনাথ ও মথুরা পৌঁছেছেন ।
যুক্তির প্রাচীনতম দিগ্বলয়
ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখাচ্ছে এক আবেগদৃপ্ত প্রাণ,
শুনছে পিতৃশোকে বিচলিত এক চিত্ত এবং এক দরদী বৈজ্ঞানিক;
বাকিদের চোখে বিস্ময়ের আলোড়ন ।
রাতভর সবাই বোধগয়ার
মন্দিরে, ঋদ্ধ ভারতের সাধক ।
হঠাৎ কেঁপে উঠল সেই দিগ্বলয় !
বুদ্ধ বলে উঠলেন –
আমার শরণে, অর্থাৎ অন্বেষণে এগোও,
দৃঢ় রাখো তর্কের অনুশীলন – ধর্ম আমাদের,
পথটা কঠিন – সঙ্ঘে থাকো হাতেহাত ।
............
আমরা ওইসব
বড়মানুষদের ধারেকাছেও আসি না বস্ !
কিন্তু রাতগুলো আসে ।
কখনো দিনে, কখনো সন্ধ্যায়, আমাদের আলোচনায় –
বুদ্ধের হাঁকটা শুনবো কিনা, সেটা আমাদের এলেম ।
বেলা স্টেশনে
সেদিন আপনার গায়ে জ্বর ছিল রবিঠাকুর !
যার পৌঁছোবার কথা ছিল – আমাদেরই, মানে বিহারেরই তো
লোক –
পৌঁছোলোই না, অদ্ভুত !
আর আপনি, জোড়াসাঁকোর বাবু,
স্নান না, খাওয়া না,
সুর্যাস্তে সুর্যোদয়ে পথের গান লিখে গেলেন সারা দুপুর ।
পরে বুঝেছি, কবি হলেও
আসলে তো ছ’ফুট্টা কুস্তিগীর !
চওড়া কব্জির রক্তবাহী শিরাগুলো দপদপ করছে আজও !
মুঙ্গের
ব্যাথার চাঁদ আরো বড়, আরো মাদক হতে থাকে
রক্তে তার শ্বেত নির্জনতা রোধ করে ইস্পাত-আকাশ
একটু আড়াল নীলে, মৌনে মুখর হয় ব্যস্ততা মহাজাগতিক
কষ্টহরণীর ঘাটে কি শমী এসেছিল ?
মুঙ্গেরে উত্তরমুখী গঙ্গা,
অথচ কোনো উত্তর নেই
কেন কবির বুকে নিদারূণ এই শেলটা এখানেই বিঁধলো ।
এই যে এখন সেতু হল এপার-ওপার
এখনো কোনো উত্তর নেই !
মুজফফরপুর
তিরহুতের বৌ আপনার বড় মেয়ে ।
আবার স্কুলও তো একটা খুলে গেছেন, এখনো চলছে ।
শুনি, পণ নিয়ে কোনো ঝামেলায়
আপনাকে আসতে হয়েছিল আবার !
হঠাৎ শহর মুজফ্ফরপুর যখন
ক্ষুদি আর প্রফুল্লর বোমায় কাঁপলো...
মাধুরী শুনেছিলেন?
ছুটে এসে ধরেছিলেন জানলার গরাদ?
যাঃ, একটু বেশি কবিত্ব হয়ে গেল ।
কিন্তু সত্যিই তো,
এত কম আমরা জানি মুজফফরপুরের মাধুরীকে !
পাটনা
তোমার সাথে ছিল চিত্রাঙ্গদার নাট্যদল ।
পাটনা জাংশন থেকে বিশ্রামের জায়গায় তারপর মহড়ায়...
তারা কেউ সাদাকালো ছিল না, রঙীন,
তুমিও; জীবন,
নিসর্গ, লড়াই – সবই তো বাস্তবে
রঙীন !
আর, রঙে বদল নিয়ম, যেমন এলফিনস্টোন এখন ।
যা অবস্থা হয়েছে,
টিভিতে সাদাকালো এলেই – অ্যাই থাম, থাম, দেখা,
কী চলছে চ্যানেলটায়
?
রঙে আর মন স্থির থাকে না, বিশ্বাসও থাকে না আজকাল...
ভাঙা স্বাস্থ্য নিয়ে,
বিশ্বভারতীর জন্য চাঁদা চাইতে এসেছিলে, সর্বস্ব ঢেলেছিলে,
যার আচার্য এখন পদগুণে এক দাঙ্গাবাজ ।
– হাঃ ।
No comments:
Post a Comment