Monday, November 29, 2021

প্রথম এজেন্ডা

পাথরটা একটু সরিয়েছি।
                   আরো অনেকখানি
সরাতে হবে; সবাই
                             বুঝছি তো
যে এটা পাথরের ভার?

ভেরিনিয়াকে আবার দাসী হতে হবে, নইলে
কি করে ফিরবে স্পার্টাকাস?

কবি বলেছিলেন
এই দাগ ধরা উজালা, রাতের ছোপ লাগা সকাল
যার প্রতীক্ষা ছিল, সে সকাল তো এ নয়।
তবু বাঁচছি।
 
জায়গাটা খুঁজে বার করতে হবে
                             ভূমিকম্পেও।
দুটো কথা বলার,
সিদ্ধান্ত নেওয়ার,
                             প্রয়োজনে
পিঠোপিঠি দাঁড়িয়ে।
 
পতাকাটা উড়তে দিতে হবে
আকাশ ছিনিয়ে নিলে ওরা
পাঁজরের আড়ালে।

প্রথম এজেন্ডাঃ
সংগঠন।
 


Thursday, November 25, 2021

মাতৃবরণ

মায়ের ছবিটা বাঁধিয়ে নিয়ে এসেছে ভাই।
ফ্ল্যাটে ঢুকে প্যাসেজটা পেরিয়ে প্রথমে বাঁদিকে খাওয়ার টেবিল, চেয়ার। ডানদিকে বসার ঘরের দরজা। প্রথম নজরটা বসার ঘরের দেয়ালে পড়ে না। বাঁদিকের জায়গাটা যেহেতু খোলা, সেদিকেরই দেয়ালে পড়ে।
এ বিষয়ে ভাই বোন এক মত হল। ভাই একটা পেরেক আর হাতুড়ি নিয়ে উঠল খাওয়ার টেবিলের ওপর। রুমু একবার দেখে নিল, নাঃ, নড়বড়ে নয়, ধরার দরকার নেই, পড়বে না। তারপর বসার ঘরের সোফায় ফিরে খবরের কাগজটা হাতে নিল। যে বিজ্ঞাপনটা কলমের দাগ দিয়ে ঘিরবে ভেবেছিল সেটা খুঁজল আবার। ঘিরল। সোফার ডানদিকে ঘেষটে গিয়ে টেলিফোনটাকে নাগালে নিল। ডায়াল করল বিজ্ঞাপনের নম্বরটা। 

তোর মা মরার আগে তোর বিয়ের সমস্ত কিছু ঠিক করে দিয়ে গেছে। এক বছর পরের যে প্রথম লগ্নটা ঠাকুর মশাই বলবেন, সেদিনই তোর বিয়ে দেব ভেবেছিলাম রুমুর ছোটোমামা রাগত স্বরে বলছিলেন, তোর বাবার সাথে সমস্ত কথা হয়ে আছে হল, রান্নার লোক সবকিছু জন্য প্রাথমিকভাবে কথা বলা হয়ে গেছে আর এখন তুই নিজের বাবার বিয়ে নিয়ে পড়েছিস! আশ্চর্য! আর রমেনদারও বলিহারি। দ্বিতীয়, তৃতীয় বিয়ে কি লোকে আজ থেকে করছে? কর! একা থাকার বিরাট অসুবিধে এই বয়সে, আমরা বুঝিনা? কোনো ভালো পরিবারের মেয়ে দ্যাখ যার বিয়ে হয় নি, পারিবারিক অসুবিধেয় ... হাজারে হাজারে মেয়ে পাবি তেমন ... না, সমবয়সী চাই, বিধবা চাই, সঙ্গে তার সন্তান থাকলে আরো ভালো ... সব সমাজ-সংস্কারক এখানেই জুটেছে। ...
পঞ্চাশের কাছাকাছি বয়স হল লোকটার! তুই আছিস। বাবু আছে।... তোর কি বুদ্ধি লোপ পেয়েছে?... কে আসবে, তোদের প্রতি তার কী এ্যাটিচ্যুড হবে... শান্তির সংসারে নিজে যেচে কেউ আগুন লাগানোর ...
তোমাদের থেকে অনেক অনেক বেশি আমি আমার বাবাকে চিনি, রুমু নিজের ব্যাগটা চেয়ারের পিঠে ঝুলিয়ে পাখাটা চালালো। তারপর এসে বসল, এত গরম! পাখা না চালিয়ে বসে থাকো কী করে? ...উনি তো কিছু বলবেন না। সব সময় ঠান্ডা মাথা, সব সময় হাসিমুখ, সব সময় হাতে কাজের নোটবুক। আমি জানি কতদূর একা হয়ে গেছে ভিতরে ভিতরে মানুষটা। এরপর আমি চলে যাব। বাবু থাকবে নিজের চাকরির জায়গায়। বাবার সাথে থাকবে কে? ওই নোটবুক? ও আমি হতে দেব না। বলার সময় বড় বড় কথা বলবে তোমরা, লাইফ কত এডভান্সড হয়ে গেছে আর একটা একা হয়ে যাওয়া মানুষের আবার বিয়ের কথা উঠলে তোমাদের মনে হচ্ছে ঘরে আগুন লাগার কথা? লাগলে লাগবে। আমাকে সেই নতুন মা না দেখতে চাইলে দেখবে না! বাবুকে দেখবে না! আমরা কেউই তো আর সাথে থাকতে যাচ্ছি না। বাবাকে দেখলেই হল। ... এই বিয়ে আগে হবে, তারপর আমি বিয়ে করব।

রুমুর মামার বাড়ি খুব বেশি দূরে নয়। হেঁটেও যাওয়া আসা যায়। কিন্তু ও পারেনা। বিশেষ করে এই শ্রাবণের দমবন্ধ রোদে তো একেবারেই নয়। রিক্সাওয়ালা বেশি পয়সা চাইছিল। তাই মিটিয়ে ও বাকি পয়সা ফেরত নেওয়ার জন্য হাত পেতে দাঁড়িয়ে ছিল। চোখটা ছিল মামার বাড়ির পরের বাড়িটার দিকে। ওটা অপর্ণাদের বাড়ি। অপর্ণা বিয়ের পর আসানসোলে। তবু আশা নিয়ে তাকিয়েছিল যদি এসে থাকে কোনো কারণে। আর, দ্যাখো কান্ড! ওই তো অপর্ণা!
-      কবে এলি? জানাস নি তো!
-      আজকেই তো এলাম সকালে। হঠাৎ।
-      আসছি আমি। আগে মামাদের সাথে দেখা করে নিই।... যাবি না তো কোথাও? কথা আছে।  
-      আয় না।
মামাদের বাড়িতে কাজ সেরে অপর্ণাদের বাড়িতে ঢুকল রুমু। অপর্ণাদের বাড়িতেও অপর্ণা না থাকলে এখন শুধু ওর মা, একা। বাবা মারা গেছেন বেশ কয়েক বছর হল। তবু এত কাছে থাকা মানুষদের নিয়ে চিন্তা করার সাহস হয় নি রুমুর। তাছাড়া মাসিমার বয়সও বাবার থেকে বেশি। শরীরটাও অসুস্থ থাকে আজকাল। অথচ অপর্ণা চলে গেলে তাঁরও তো সারাটা দিনরাত একা। অপর্ণা ভাবে নি কখনো? রুমু জিজ্ঞেসও করেনি কথাটা।
-      বললি, কথা আছে!
-      বলছি, আগে বল, তুই হঠাৎ এলি কেন? সব ঠিক আছে তো?
-      হ্যাঁ, হ্যাঁ। আরে, বাবার পেনশন, মানে ফ্যামিলি পেনশনের কাগজটা ট্রেজারিতে জমা দিতে হবে। বছরকার লাইফ সার্টিফিকেট তো মা একাই গিয়ে দিয়ে আসে। পাড়ার একজন রিক্সাওয়ালা আছে, সেই নিয়ে যায়। কিন্তু এটা অন্যধরণের কাজ। তাই দুদিনের জন্য আসা ... (রুমুর দিকটা শোনার জন্য উৎসুক ভাবে তাকালো অপর্ণা)
-      আসানসোলে রাধানগর নামে কোনো জায়গা আছে?
-      হ্যাঁ, আছেই তো। কেন?
-      তুই গেছিস ওদিকে?
-      নাঃ।
-      আচ্ছা, তুই ফিরবি কবে?
-      পরশু।
-      ঠিক আছে। দেখা হবে তোর সাথে। আসছি আমি।
-      মানে? কেন?
-      (চকিতে অপর্ণার মায়ের দিকে চেয়ে নিল রুমু) বলব, পরে। এখন আসি।

কেন যে অপর্ণাকে রাধানগর জিজ্ঞেস করেছিল। একঘন্টা ধরে রিক্সাটাকে ঘোরাতে ঘোরাতে রুমু টের পেল, দোমোহানি বাজারের সাথে রাধানগরের কোনো সম্পর্কই নেই। বিজ্ঞাপনেও লেখা ছিল না, ফোনে যখন কথা হয়েছিল পাত্রীপক্ষও রাধানগরের নাম নেয় নি। কিন্তু কিভাবে জানি ওর মাথায় ঢুকে গিয়েছিল রাধানগর।  
বাগানওয়ালা একতলা পুরোনো বাড়ি। আগের দোকানটায় জিজ্ঞেস করে নিশ্চিন্ত হল রুমু, তারপর রিক্সার ভাড়া মিটিয়ে গেট খুলে ভিতরে ঢুকল।
মোটামুটি তাদেরই মত, একই আর্থিক সঙ্গতির পরিবার মনে হল। বাড়ির মেয়ে বিধবা হওয়ার পর ছেলেকে নিয়ে ফিরে এসেছে, সেটা একটা বাড়তি আর্থিক এবং মানসিক চাপ।

-      পাত্র, মানে রমেনবাবু নিজে একবার আসবেন না?
-      আসবে। নিশ্চয়ই আসবে। তবে, এটা তো সেই বিলিতি টাইপের, কোনো রেস্টুরেন্টে বয়স্ক পাত্র আর পাত্রীর নিজেদের মধ্যে দেখাসাক্ষাতের ব্যাপার নয়! পারিবারিক ব্যাপার। আর বাবার পরিবার বলতে তো এখন আমি আর আমার ভাই। তাই প্রাথমিকভাবে আমরা দুজনেই আসতে পারতাম। কিন্তু ও এসব ব্যাপারে লাজুক লাজুকই বা কেন বলি একটু মানে, ঠিক বুঝে উঠতে পারেনি বাবার জীবনের শূণ্যতাটা। ছেলেরা তো কিছুটা এইরকমই!
বলে, সামনে বসে থাকা পাত্রীর দিকে তাকিয়ে হেসে, সম্মতি নিতে চাইল রুমু। পাত্রী, সুলগ্না দেব (আগের বৈবাহিকে রায়) আড়ষ্টভাবে চোখ নামাল। এর বেশি সম্মতি জানানর মত অবস্থায় সে ছিল না।
-      আপনার ছেলে কই?
ওই তো ও ঘরে হোমটাস্ক করছে, সুলগ্নার মা বললেন, সুলগ্নাই করিয়ে দিচ্ছিল এতক্ষণ।
-      ওকে ডাকুন একটু, দেখি! বন্ধুত্ব করি! ও তো আমার ভাই হবে!

রাস্তায় বেরিয়ে রিকশাস্ট্যান্ড অব্দি হেঁটে যাওয়ার ছিল। যদিও সুলগ্নার বাবা বলেছিলেন রিকশা ডেকে দেওয়ার কথা। কিন্তু রুমু রাজ হয়নি, এইটুকু তো রাস্তা! হেঁটে গল্প করতে করতে যাব। কী সায়ন? পৌঁছে দেবে না আমায়?
কান টানলে মাথা আসে কিনা দেখার ছিল। তাই হল। ছেলের সাথে মা, সুলগ্নাও সঙ্গী হল। ভালো লাগল রুমুর এই সপ্রতিভতা। রোদ্দুরে আড়চোখে ঝটিতি একবার তাকাল সুলগ্নার মুখের দিকে। মোটামুটি উনচল্লিশ, চল্লিশ মত বয়স হবে। বাবার বয়স পঞ্চাশের কাছাকাছি। খুব বেমানান হবে না। আর ছেলেটাকে পেয়ে তো বাবা আহ্লাদে আটখানা হবে। এত ভালোবাসে বাচ্চা। অথচ আমরা তো আর বাচ্চা নই।
রিকশাস্ট্যান্ড অব্দি পথটুকু সুলগ্নার সাথে কথা বলতে বলতে ভালোই কাটল। একটু এড়িয়ে চলছিল সম্বোধনটা, কেননা সুলগ্না তো আর বলা যায় না! আর যাকে কাল মা বলবে (যদি বলতে হয়, বাবা এসে দেখে যাওয়ার পর ফাইন্যাল হবে) তাকে এখন দিদি বলতে কেমন যেন লাগবে! তবুও মুখ ফস্কে একবার বেরুলো দিদি
-      সরি!
-      সরি কেন?
-      না, এমনিই মানে
এবার সুলগ্না হাসল, প্রথমবার, মন খুলে। ভালো লাগল হাসি মুখ। নইলে চোখের নিচে কালির দাগটা বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছিল বাপের বাড়িতে, পাড়ায় একা জীবন কাটানোর সমস্যাগুলো। ভালো লাগল কথাটাও।
-      তোমার মা না হতে পারলে কি দিদিও থাকব না?
-      তুমি যে স্কুলের কাজটা ধরেছ সেটা তো ছাড়তে হবে।
-      সেটা এমনিতেও ছাড়তে হবে ছেলে আরেকটু বড় হলে। নাইনের পর তো পড়াটা শক্ত করে ধরতে হবে। আর কোনো এমন সরকারি চাকরিও নয়।

বিয়েটা হয়েই গেল। আসানসোলেই হল রেজিস্ট্রেশন। একমাত্র রুমু আর রুমুর বাবা ছাড়া বিয়েতে যারা এসেছিল কলকাতা থেকেই এসেছিল।
রুমু ভাইকে আর ছোটমামাকে পই পই করে বলে গিয়েছিল কাকে কাকে ডেকে রাখতেই হবে বাড়িতে যাতে ওদের বাড়ি ফেরার সময় কিছু লোকজন থাকে। বাবার আগের পক্ষের মানে রুমুর মায়ের বাড়ি থেকে এক তার ছোটমামা আর মাসি ছাড়া আর কেউ আসার নেই। বাবার দুএকজন বন্ধুবান্ধব যাদের রুমু চিনত, তাদেরও বলা হয়েছিল। আশেপাশের ফ্ল্যাটের মহিলারা, বাঙালি-অবাঙালি, তারাও কয়েকজন ছিলেন।
স্টেশনে নেমে বাবা আর নতুন মা সামনের রিকশায় উঠল। পিছনের রিকশায় রুমু আর সায়ন। রিকশা বাড়ির কাছে পৌঁছোতেই সায়নের হাত ধরে লাফিয়ে নামল রুমু। বাবাকে আর নতুন মাকে শাসাতে শাসাতে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে শুরু করল, ধীরে সুস্থে এস!ওপরে তিনতলার দিকে তাকিয়ে হাঁক দিল, ছোটমামা! বরণডালা কে রেডি করছে? শুনতে পেল, আয় না তোরা! সব রেডি আছে। বাবাঃ, মেয়ে না যেন পাগলা ঘোড়া!
ততক্ষণে সায়নের হাত ধরে ওপরে উঠে এসেছে রুমু, কই শাঁখ কই? কে বাজাচ্ছে? সত্যিই কেউ ছিল না। বরণডালাটা মনে হয় ছোটমামাই সাজিয়ে লিপির (ভাইয়ের হবু বৌ) হাতে দিয়েছিল। আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে রুমু বুঝতে পারল সবাই একটু ইতস্ততঃ ভাবে রয়েছে। এসেছে বটে, সামাজিকতার খাতিরে, কিন্তু এর বেশি কী করা উচিৎ তারা বুঝে উঠতে পারছে না।
রুমুই শাঁখটা নিয়ে বাজান শুরু করল। তারই মধ্যে উঠে এল তার বাবা আর নতুন মা। সুলগ্নাকে দাঁড় করিয়ে রুমু বরণডালা হাতে নিয়ে প্রথা মত বরণ করল। কেউ উলু দেওয়ার নেই বলতে বলতে সাকুল্যে একটা ক্ষীণ উলুর আওয়াজ ভেসে এল পিছন থেকে। রুমু অবাক হয়ে দেখল অপর্ণা। নাঃ, ও তো দিচ্ছে না উলু! কে?
 
বাবা আর নতুন মা সায়নকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে গেছে। ভীড়ের মধ্যেই ভাইকে মনে করিয়ে দিল রুমু, প্যাকেট এনে রেখেছিস? মিষ্টির? সবাইকে দে হাতে হাতে। লিপিকে সঙ্গে নিয়ে নে!
ওদিকে অপর্ণাকে দেখে এগিয়ে গেল। তুই কি করে এলি? তুই তো ফিরে গিয়েছিলি আসানসোলে! তোকে ওখানেই এক্সপেক্ট করেছিলাম। বলেওছিলাম। এলি না তুই!
-      কিছু কাজ ছিল। তাই এখানে এসে পড়েছিলাম। এসেই মনে হল তুই যেমন একটা কাজের কাজ করছিস, আমিও একটা কাজের কাজ করি।
-      !!!
-      মাকে জোর করে ধরে রিকশায় বসিয়ে নিয়ে এলাম এখানে। বলে তো, এসব ব্যাপারে নাকি বিধবাদের সামনে থাকতে নেই। তা তুই যখন বাবার বিয়ে দিচ্ছিস বিধবার সাথে, আমিও আমার মা'কে ওখানে নিয়ে যাই।
-      কোথায় মাসীমা?
-      ওদিকের ব্যালকনিতে বসিয়ে দিয়েছি। অসুস্থ শরীর তো, হাঁপাচ্ছিল।
রুমু গেল বাইরের ব্যালকনিতে। পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করল মাসীমাকে। পিছন থেকে আওয়াজ পেল অপর্ণার, আসল মজাটা তো জানিস না। তোর শাঁখের সাথে উলু দিল কে?
-      হ্যাঁ, আমি তখন থেকে ভাবছি, কে দিল উলু! সামনে তো কাউকেই দেখলাম না। কে দিচ্ছিল?
-      মা! তুই যখন বললি, কেউ উলু দেওয়ার নেই! কেউ দিচ্ছে না দেখে মাই ওই দুর্বল গলায় উলু দিল কিছুক্ষণ!

 


 

  

Tuesday, November 23, 2021

তুই শুধু প্রবুদ্ধ হলি না

 -         বৃদ্ধকালে বুদ্ধি  বাড়ে, তুই শুধু প্রবুদ্ধ হলি না !
            যদিও সর্বত্র আজ নির্মম এক নৈরাজ্য বিরাজে
            ব্যবস্থার ধুন্ধুমার, লুঠমারে আক্রান্ত জীবন
            যদিও সমাজ আজ বিত্ত আর ব্যক্তিগত
            সম্পত্তির আধারে, অপস্মারে ওষ্ঠাগত প্রাণ ;

             তবু এই অন্ধকারে, সত্যের কঠিন মূল্য তুই
             বুঝেও বুঝলি না, দেখেও দেখলি না তোর শিক্ষকেরা
             কেন দিনরাত অদৃশ্য আঙুল তুলে বলে যাচ্ছে দ্বন্দ্ব-আচরণ,
             যুযুধান শ্রেণীযুদ্ধ, বৈজ্ঞানিক সমাজ চেতনা,
             বয়েসের তিনকাল এক করে এখনও তো তোর কোনও চেতনা হল না ।"
         -         বার্দ্ধক্যে স্থিতধী হয়, তোর চিত্ত-চাঞ্চল্য গেল না !
              যদিও কৈশোর থেকে চিত্রকলা, কাব্য, গল্প নিয়ে
              অতিদীর্ঘসূত্রতায় দীর্ঘকাল অকালে কাটালি ;
              যদিও জীবন থেকে বিম্ব, চিত্র, প্রতিচ্ছবি সব
              আহরণ করে গেলি, তুচ্ছ করে দুঃখ, পরিহাস
              তবু ওই জীবনকে ক্ষুদ্র, ক্লিন্ন, খন্ডে, পলে দেখে
              আদৌ দেখলি না তুই মনুষ্য-সম্বন্ধ সব কি বিশাল,
              ব্যপ্ত চরাচরে সূক্ষ্ম, স্থূল, বিচিত্র, জটিল !!
              বুঝেও বুঝলি না তুই, আচরণে দ্বন্দ্ব-প্রকরণ
              যার প্রতি ছত্রে লেখা মানুষের গতি, পরিণতি ;
              ভেবেছিলি শিল্পী হবি, আরে তুই মানুষই হলি না !

-         বৃদ্ধকালে ব্যবস্থিত হয়, তুই রয়ে গেলি এক ছন্নছাড়া
      দারুণ কিম্ভুত ! এখনও হলনা তোর বুদ্ধি বাস্তবিকতার
      এখনও তৎপর তুই তৎসম শব্দ ব্যবহারে জীবনের
      জঞ্জাল স্তুপে, আনবি বলে সুন্দর আঙ্গিক
      জীবনের সাথে যুঝে এখনও শিখলি না তুই
      কি করে সংহত হয়ে করতে হয় লক্ষ্যবিদ্ধ ঠিক ;
      এবং এখনও দেখ, হাঁটুর বয়সী তোর নিত্যসাথী সব
      বৈষয়িক কর্মকান্ডে, সম্পত্তি ও বিত্ত আহরণে
      উঠে যাচ্ছে বৈভব্র অভ্রভেদী শিখরচূড়ায়
      বয়েসের তিনকাল এক করে, তুই আজও সংগঠিত হলি না

       উপস্থিত দর্শকেরা বিবেকের এই সংলাপে
                  ফেটে পড়ে ছিঃ ছিঃ ধিক্কারে
      উচ্চকিত ঘৃণা, উষ্মা, শব্দ হয়ে ভাসে
                        প্রেক্ষাঘরে কঠিন আঁধারে ;

      আলোকিত বৃত্ত জুড়ে সেই বৃদ্ধ বলে ঋজুভাষে

-         তুমি যা বলেছ সত্য, প্রায় ঠিকঠাক, তবুও বেবাক,
      আশা আছে ততক্ষণ, যতক্ষণ শ্বাস ; আমারই
      ভিতরে দেখ, স্তরে স্তরে জমে আছে অজ্ঞানতা, সংস্কার,
      আত্মম্ভরিতার কঠিন পাথর, শিলীভূত স্তূপ সব
      পরতে পরতে আমারও জন্মের আগে থেকে ;

       এসব বিদীর্ণ করে লড়ে যাচ্ছি বারবার ঘোর অন্ধকারে,
       ধিক্কার যে যত কর, আমৃত্যু এই কাজ করে যেতে,
       চাই বে-আক্কেলে ছন্নছাড়া আমি, এবগ অনেকটা
       ঐ ক্ষ্যাপার মতন যে শুধু এখনো খোঁজে
       পথেঘাটে সমুদ্র-সৈকতে জীবনের অগ্নিগর্ভ পরশপাথর !!

    ৫.১.১৩৯৮ (বাংলা সম্বৎ)   

 


 

 

 

স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পূর্তিতে

তাঁহাদের দৃষ্টি ছিল কালজয়ী হাজার
শলাকাবিদ্ধ অন্ধকার সেলুলার সেল্‌-এ;
শিকল-বেড়ির শব্দ, বীভৎস যাতনা
এইসবে বিচলিত হতনাকো তাঁদের চেতনা;
স্বাধীন দেশের এক কল্পচিত্র ভাসত রেটিনাতে !
 
তাঁহাদের অপার বোধ কালজয়ী আঘাতে
পীড়নে নিত্য স্থূল অপমানে অনুভূতিহীন !
সংগ্রামের সুর এক সূক্ষ্ম সংবেদনে, বলে যেত
প্রতিদিন স্বাধীনতা হীনতায় কে বাঁচিতে
চায়, বলো কে বাঁচিতে চায়?
তাঁহাদের স্মৃতি আজ ধূসর আঁধারে
জল্লাদের হাতে ফেঁসে নাম হয়ে ঝুলে আছে
দীর্ঘ তালিকায় সেলুলার জেলে আর আমাদের
স্মৃতিহীনতায় বাংলার খাঁড়িতে এই
কালাপানি আন্দামান আর্কিপেলাগোতে !!

অর্দ্ধশতবর্ষ পূর্তি স্বাধীনতা দিবসেতে আজ
অতীতের ঐ দৃশ্য আড়চোখে দেখে নিয়ে,
অন্ধকার, ধীরে তার এলোমেলো চুলে
পোর্টব্লেয়ারের আলো জড়িয়ে নিয়ে মুক্তোর মতন
তাকালো সামনের ঐ পাঁচতারা হোটেলের ব্লেজে,
স্বাধীন দেশের সব গণ্যমান্য অনন্যর ভীড়ে
মদ, মাংস, মার্মালেড, মার্কিন জ্যাজের তালে
আন্দোলিত তন্বী সব মহিলার দিকে ।।

১৫.৮.১৯৯৭



ঝড়ের কার্তুজ

ভেবেছ বৈভব দিয়ে, রাখবে ঢেকে মনের দীনতা
বিত্ত, অর্থ বিলাসে লোকাবে পরজীবি হৃদয়হীনতা?

সময় নিষ্ঠুর আজ সিপাহসালার এক, হাতে যার
নির্মম চাবুক মিলের পাঁশুটে ধোঁয়া কালোছায়া তার

শীর্ণ কামিজের ভাঁজে ঘাম রক্ত, দীর্ঘ নিপীড়নে
মানুষ তবুও বেঁচে মনে রেখো বেঁচে এই দারুণ শোষণে !!

ভেবেছ কি সঙ্গ দিয়ে, সরকারী এ শ্বেত সন্ত্রাসে,
হনন, ধর্ষণ, লুঠে ভরবে দেশ মানুষের লাশে?
 
মানুষ এখনও বেঁচে লুঠ, মার, দুর্ভিক্ষ, মড়কে
রাষ্ট্রের আখের কলে রক্ত দিয়ে গলিতে সড়কে !!
 
বীভৎস বস্তিতে থেকে জেনেছে সে সংগ্রামের গাথা,
করেনি আপোষ কোনও মূল্যবোধে, করেনি শঠতা ।
 
ভেবেছ শিরোপা পাবে শাসকবর্গের এঁটো চেটে,
নিরাপদে থাকবে সুখে পুলিশের কাঁধে কাঁধ সেঁটে ?
 
সময় পাল্টেছে বলে, ভেবো না ওদের আজ বিধ্বস্ত বুরুজ,
কারণ বুকেতে আছে, ক্রোধে ভরা অনিবার্য ঝড়ের কার্তুজ;
 
ভোলে নি স্মৃতির রোষে বারুদের জ্বালাময়ী চাঁদমারি-টারে
হয়ত এখনই নয়, ইতিহাস এ কথার সাক্ষী দিতে পারে ।

বাংলা সম্বৎ ১৪.২.১৪০২



সাইকেল - রবীন দত্ত

এখন আমি আপনাদের সাইকেলের কথা বলব,
নেহাতই মামুলি সাইকেলের কথা ভাইসব!
সেই সাইকেল যার গতি বা গতরে নেই আভিজাত্য,
নেই জৌলুষ, নেই কোনও কুলুজি বা আত্মম্ভরিতার
দাম্ভিকভাব !!
যে যানটি উদ্ভাবন থেকে এখনও ছিমছাম
আবর্তনে বন্‌বন করে ঘুরে যাওয়া দুটো চাকা,
ধাতব ফাঁকা টিউবের শরীর, লোহার চেন, আর হ্যাঁ
বসার জন্য চামড়ার সীট একটা; ব্যাস, ঝাঁ চকচকে
গাড়ী তৈরী, ভাইসব, আসুন, বসুন, পিছুটান ভাবনা ভুলে,
সিটি মারতে মারতে চলে যান সামনের রাস্তা ধরে
নিকট কিম্বা দূর !!
কিন্তু আমি জানি, এবং মুখ দেখেই বুঝতে পারছি
ব্যাপারটা আপনাদের আদপে পছন্দ নয়, বাস, ট্যাক্সি,
ট্রাম, মেট্রোরেল, ভলভো বা এস্ট্রা ওপেলের পাশে
ছন্দপতনের মতন পছন্দ হচ্ছে না দূরন্ত এ শব্দভেদী
গতির যুগে যুগপৎ মন্দগতি এই মামুলি ছ্যাঁকড়া
সাইকেলের কথা !!

যখন ইদানিং তূর্যনিনাদ কংকর্ড, বোয়িং, হোভার ক্র্যাফট
বা দূর্দ্দান্ত ভয়েজার, একদা-অনন্ত অন্তরীক্ষ ও
মহাশূণ্য মেপে শূণ্যে ফেলে দিচ্ছে প্রতিদিন;
যখন গতির প্রচন্ড দাপট, সপাটে জলস্থল,
আভূমি হিমালয়কে ঘাড়ে ধরে পাশাপাশি এনে
দূরকে করে ফেলছে নিকট, তখন আমার একান্ত
আপন ভাইসব, আপনারা কেন শুনবেন মামুলি
এই সাইকেলের কথা ?

আমি জানি, দুয়ে দুয়ে চারের মতন আপনাদের
আকাট যুক্তির খন্ডন, কি দারুণ কঠিন, কিন্তু তবু
একটু ভাববেন দুটো দুর্বল হাড় হাভাতে দুই মিলে
পুরো চার হতে পারে না, যেমন ক্ষণজন্মা কিছু
লোক একাই একশোর মতন এসব আপনারা
ভালোই জানেন আমি শুধু ঝালিয়ে দিলাম !!

আমি জানি, আপনারাও দেখুন প্রগতিবাদী
গতিভক্তেরা মুখ চাওয়াচায়ি করে বিভক্ত
হয়ে গেলেন ভাইসব আপনি, আপনি,
আপনি এবং আপনিও !! তাইলেই বুঝুন
কেন আমি ধীরগতি মামুলি সাইকেলের
কথা বলবো

কারণ, ধুন্ধুমার গতির এই গতিময় যুগে
যুগপৎ গতির এখন চরম দুর্গতি এবং
পরম বৈপরীত্যের এই যুগে গতির সঙ্গে
বেগতিক এক অবস্থা ব্যাবস্থায় অনাস্থা এনে
রাস্তা মাপছে চল্লিশ হাত অন্তর হাম্প, বাম্প,
বা স্পীডব্রেকারে !!

গতির মেলগাড়ি অগতির মালগাড়িতে সেঁধিয়ে,
বেসামাল ঝারসুগোড়ায় কিম্বা বাত্তিকালোয়ায়,
যাত্রীসাধারণের যতিসাধনে ব্রতী হচ্ছে অনন্তর;

কিম্বা, আরো গতিশীল বিমান বা অন্তরীক্ষযান
টুপটাপ খসে পড়লে ভালো করে লক্ষ্য করবেন,
বিবদমান ইউক্রেনিয়ান বাইলোরুশ, প্যালেস্টিনীয়
ইজরায়েলী, রুশ, আমেরিকান, বা নেহাতই পাতি
পাকিস্তানি হিন্দুস্তানী যাত্রীগণ কিরকম জড়াজড়ি
করে তালেগোলে জাতি-সমস্যার আন্তর্জাতিক সমাধান
করে নিচ্ছেন গতিপ্রাপ্তির মধ্যে দিয়ে, ভাইসব !!

এখন এই দারুণ সুসময়ে আমরা হিঁদী ও আমাদের
দেশ হিঁদোস্তান সপ্রমাণে মনের আনন্দে স্রেফ
সাইকেল চালানোও, আহা কি আনন্দের, তাই না ?
এখন ঐ ডি.ডি. ও টিভির যুগপৎ সংক্রমণে
বুদ্ধিজীবিদের মেট্রো চ্যানেলে, স্নায়ু ও শীষ্ণদেশের
নিয়ত চাগাড়ে, খবরের ভাগাড়ে ব্যবস্থার
থাম্‌স আপ, তুফানি ডান্ডা ভারতের রাজ্যে রাজ্যে
জলকামান, কাঁদানে গ্যাস ও বুলেট ১৪৪ ভান্ডাফোড়
রলে সংবিধান ও সি.আর.পি.সি.র শক্ত হাতে
ধরা রক্তধারায়, বাঁশের ব্যালান্সে সোজা সাইকেল
চালিয়ে দেখবেন লাশঘরে আঃ কি ঠান্ডা, কি মজা !!

কিম্বা ঐ এহি হ্যায় রাইট চয়েস বেবে এবং
আহাঃ ওই উদোম-কামদো চিত্ত-জড় বেবীদের
স্ট্রীটক্যাট সাইকেলে চড়লেই দেখতে পাবেন
রাষ্ট্রশক্তির বুমবুম শ্যাকাল্যাকা বুমবুম বোমার
ধোঁয়ায় হাড়কাটা গলি থেকে ট্যাংড়া, মেটিয়াব্রুজ
বা অক্রুর দত্ত লেন থেকে রাষ্ট্রপিতার ক্রূর শ্যেণদৃষ্টি,
বাবরি মস্তক এবং ইস্তক কপালের জয় শ্রীরাম টীকা
ও অনতিদূরের মিলিটারি অপারেশন বজরং পর্য্যন্ত !!

আর ঐ আহা-উহু-ইয়াহুর ফুরফুরে বি.এস.এ.
ইলু, সাইকেলে, আই লাভ ইয় বলতে বলতে
আই.এস.এফ,, আর.সি.এফ., আর.এ.এফ.,
শিবসেনা, কমান্ডো, ভূমিসেনা, মায় ব্যবস্থার
মানবশৃংখল, ধর্মনিরপেক্ষ মধ্য, দক্ষিণ, আবাম
সুপারহিট সিটিবাইকে শ্রমজীবিদের সুপারহাইক
করে যাচ্ছে ডিংডং দাঙ্গার কিংকং অগ্নিযুগে, ভাইসব !!

এবং এই কলিউশ্যন, পলিউশ্যন, ইলিউশ্যন এর
গতিময় শ্যন শ্যন শব্দ, শনৈঃ শনৈঃ আরো,
বহুবিধ সাইকেল বিপরীত বদ্ধতায় ফেলে দিচ্ছে, ভাইসব ।

এখন এই বিত্তব্যাবস্থার ক্যাশ সাইকেল, মুদ্রা-মাল-মুদ্রার
মনমোহন খোলাবাজারে মালামাল হতে গিয়ে,
বেগতিক ক্র্যাশ-সাইকেলে ফেঁসে যাচ্ছে বারবার !!

এখন ঐ ধনবর্দ্ধন মধ্যবিত্তের, হর্ষবর্দ্ধন ফাটকার
ক্রমবর্দ্ধমান সাইকেল শেয়ারের ষাঁড়ের ধাক্কায়
ভোগ, সুখ ও হার্টের অসুখে টেঁসে যাচ্ছে বেবাগ্‌ !!

এখন ঐ আবহাওয়ার অম্লযান সাইকেল ডিজেলে,
পেট্রোলে, কাটা ও গোটা তেলে, যবক্ষার-এর যৌগিকে
কার্বন-সাইকেলের পর্দা ফাঁসিয়ে দিচ্ছে বারবার !!

এখন ঐ দ্যুতিময় গতির এমনি অবস্থা যে
ব্যবস্থার ভেতরঘরে, ভাইসব, এসেছে নধর সুখী
সাইকেল, বাবু ও বিবিদের তেল ঝরার কাজে

যা বহুক্ষণ চালালেও এত্তোটুকুন চলে না,
যার বাঁকানো হাতল ঘুরিয়ে নৌকোর দাঁড় বাওয়ার,
দাঁড়ের প্যাডেল ঘুরিয়ে ঘামের দাম পাওয়ার,
গতরের চর্বি গলিয়ে কোমরের ঢাল বাড়ার
এবং শেষমেশ মনের বেদম দোটানায় শমেদম
রক্তের গুণটানার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে আকছার !!

আর ঐ বেকার পরজীবি আজব সাইকেলের বিপরীতে
রয়েছে সারিসারি হাড্ডিসার মেহনতী সাইকেল
যা দিনরাত একাকার করে কাজে ভরে গায়েগতরে,
বাঁচিয়ে রেখেছে গাঁঘর, শহরতলি, মহানগর ও বন্দর !!

আছে, উধাওরাতের খবরভরা কাগজভরা
                   ফুর্তিবাজ, ঝড়ঝড়ে সাইকেল
আছে, ভোরের আলোর দুধের ভারে দোরেদোরে
                   ঘুরে যাওয়া ঢক্‌ঢকে সাইকেল

আছে, সকালবেলার টিনের পেটির দরাজহাঁকা
                   ডবলরুটির নড়বড়ে সাইকেল
 
আছে, দুপুরবেলার সেইসব সাইকেল
          যা পুরানো কাগজ, শিশি-বোতল, প্লাস্টিক
                   বা জঞ্জাল রিসাইকেলে দুষণের হাওয়া
                             বদলে দিতে চাইছে সুষম আবহাওয়ায়;

আছে, রিক্সার তিনচাকা সাইকেল
          যা কোল্‌জের হাপরে সাঁইসাঁই শব্দ তুলে
                   বাউ, বিবি, দাদা, দিদিদের পৌঁছে দিচ্ছে
                             গলি থেকে গতিময় বড় রাস্তায়;

আছে, চোরাচালের বেদমভারী বস্তাবওয়া
গভীর রাতের কঙ্কালসার সাইকেল
আছে আরো অনেকরকম, ভাইসব,
                                      কিন্তু থাক্‌
 
আমি শেষমেশ, সেই দুঃখী সাইকেলের কথা বলব
যা গ্রামেগঞ্জে শহরের পার্কে পার্কে লাগাতার,
একশো আটাত্তর, একশো চুরাশি বা একশো নব্বই ঘন্টা

চালিয়েও বেগতিক শুষে নেওয়া ঘাম, ঘুম ও শ্রমের
পর দিব্যি বুক, পেট, মগজ খালি রেখে নিরন্তর
ভাত ও ভূত হয়ে যাওয়ার সূক্ষ্ম ব্যালান্সেও
ফ্রিলান্স নাগরিক হয়ে বেঁচে থাক্‌তে সক্ষম !!!

                   অতঃপর,
বিশাল প্রাচুর্যের মধ্যে নিদারুণ অনটনের
এই সাইকেলটাও, দেখতে ভুলবেন না, ভাইসব !!!
 
৩.১০.১৯৯২