সত্যপীরের কথা
অথ কথারম্ভ
কলি যুগে সত্য সত্য
সত্যপীর কথা
যে শোনে যেমন মনে না হয় অন্যথা।
শামি বাসী পাঁচি
খেন্তী যত বিদ্যাধরী
এই কথা শুনি সবে
গেল স্বর্গপুরী।
শৌনকাদি ঋষিবৃন্দ
একত্র হইয়া
চিৎ হয়ে উর্দ্ধমুখে
গিয়াছে লিখিয়া।
একদা বণিক এক, অতি
ক্ষুন্ন মন
নারদের সন্নিধানে
করে নিবেদন।
অতি কষ্টে দিন যায়
জোটে না বসন
দুশ্চিন্তায় কাটে দিন,
সদা অনশন।
করুণ যা বিধি হয়
আমার কল্যাণে
নতুবা সাক্ষাতে প্রাণ
ত্যজিব এখানে।
শুনিয়া নারদ ঋষি
দয়াতে ভিজিল,
কী কী ধর্ম্ম করিয়াছে,
তারে জিজ্ঞাসিল।
কহিল বণিক আমি পূজা
হোম যাগ
ব্রত ধর্ম্ম দান ধ্যান
নিজ স্বার্থ ত্যাগ,
সকলি করেছি প্রভু
করি প্রাণ পন
এবে ঘোর কষ্টে তব
লয়েছি শরণ।
কহেন নারদ ঋষি, ভাল
যদি চাও
এখনি ওসব ব্যাধি দূর করি
দাও।
কর অবধান যাহা কহি
হে তোমায়
অবশ্য হইবে পীর তোমাতে
সদয়।
ধর্ম্ম কর্ম্ম দান
ধ্যান ব্যাধি আছে যত
এই দন্ডে ত্যাগ
কর, হও অবগত –
টাকা ধর্ম্ম টাকা
কর্ম্ম টাকাই দেবতা,
আর যে যা বলে
তাহা ডাহা মিথ্যা কথা।
টাকা তরে কর চুরি গলাতে লাগাও ছুরি দ্বিধা নাহি কর
তার তরে মারে গরু অনায়াসে ব্যাচ জরু, পর দ্রব্য
হর।
চুরি যপ চুরি তপ
চুরি আরাধনা
মাল লোট জাল কর,
নাহি তাহে মানা।
ষোলো আনা ছাপাইয়ে
মিথ্যা কথা কবে
বকের নিকটে সদা ধর্ম্ম
শিক্ষা লবে
বিড়াল তপস্বী হয়ে
দাগাবাজী করি
লুটিবে অন্যের ধন
বলি হরি হরি।
সুদীর্ঘ রাখিবে টিকি,
ভালে দীর্ঘ ফোঁটা
কার সাধ্য মাথা খুঁড়ে
চিনে কোন ব্যাটা।
ফোঁটা হবে ঢাল তব,
টিকি সুদর্শন
হাতে মালা মুখে হরি
লবে সর্ব্বক্ষণ’
মিথ্যা সাক্ষ্য দিবে
আর ফাঁসাইবে ব্যাওয়া,
ঘরে বসি স্বর্গ পাবে,
খাবে দিব্য ম্যাওয়া।
কিন্তু কভু নিজ ব্যয়ে
না পোরো না খেয়ো
অপরের মুন্ডে সদা কঁটাল
ভাঙ্গিও।
সদাই কহিবে মুখে
ধর্ম্মের কাহিনি
খাট দিব পথ দিব
রক্ষিব দুঃখিনী –
কিন্তু কভু স্বপনেও
সেদিকে না যেও -
সন্মুখে আসিলে কিন্তু
ঘাড় ভেঙে খেও।
মায়েরে না খেতে দিও
ভায়েরে না অংশ
রাঘব বোয়াল হয়ে উজ্জ্বল
হে বংশ।
এখন ঘরেতে যাও বণিক
কুমার -
এ করিলে কোন দুঃখ না রবে
তোমার।
এই পুণ্য কথা যেবা
করিবে শ্রবণ
সব দুঃখ দূর হবে
ঋষির বচন।
উদ্যান ও অট্টালিকা
ধন ধান্য আদি
যে দিবে এ কথা তার
না রবে অবধি।
এই কথা দ্বাপরেতে
দেয় হনুমান
নিশ্চিন্তে তাই চারি
যুগ খাচ্ছে মর্ত্তমান।
বাঁদরেতে শুনেছিল
হয়ে বড় খুশি
তাই, বেপরোয়া ছোলা
খায় বৃন্দাবনে বসি।
জাম্বুমান কথা দিয়ে
কপিরাজ হোলো
প্রজাগণ প্রাণ লয়ে ব্যাকুল
হইল।
দক্ষিণা না দিয়ে
যেই শোনে আগাগোড়া
সেও চিরদিন সুখে খায়
কচুপোড়া।
এমন সুদিব্য কথা
নারদ শোনায়
হৃষ্ট হয়ে বণিক আনন্দে
ঘরে যায়।
সেই মত করে যাহা
কয়ে দিলি ঋষি
মায়েরে খেদায় আগে – পরে পদী পিসী।
চুরি করে জাল করে
ফাঁকি দেয় লোকে
মিষ্ট কথা কয় আর ধুলো
দেয় চোকে।
এই মতে বহু ধন সংগ্রহ
করয়
সিকি পয়সা কিন্তু কভু
উদরে না দেয়।
ছেঁড়া জুতো ছেঁড়া
ন্যাতা ঠ্যানা পরে থাকে
কতই রহস্য কথা বলে
কত লোকে।
কেবা শোনে কার কথা
কারে বা শোনাই
কোন কালে নাহি থাকে বেহায়ার
বালাই।
এই রূপে বহু অর্থ
সঞ্চয় করিল
না খেয়ে না পরে
বাছা পটল তুলিল।
অধিক শুনাতে গেলে
পুঁথি যায় বেড়ে -
এইখানে সাঙ্গ করে দাও
আজ ছেড়ে।
এতক্ষণে ধন্য পুণ্য
কথা সাঙ্গ হোলো -
একবার, বদর বদর বুলি
সকলেতে বল ।।
ইতি বিটকেল পুরাণান্তর্গত সত্যপীরের কথা সমাপ্ত।
ভট্টা – যতক্ষণ না শান্তিজল দি ততক্ষণ সকলে ভুমিষ্ঠ হইয়া থাক।
ধৃ – সামগ্রী কোথায় –
ভ – আমি এমন পূজা করি না, যাতে পীর স্বয়ং উপস্থিত হয়ে
আহার না করেন।
ধৃ – ফেরৎ দিতে হবে –
ভ – পূর্ব্বে তা বললেই হত, আমি সেই মত পূজা কত্তুম,
আমাকেও তাহলে আর ৩২ নাড়িতে টান পড়িয়ে পীরকে সশরীরে আনবার জন্য – এ প্রসববেদনা সহ্য কর্তে হত না। স্বাভাবিক ভাবে পূজা কল্লেই চুকে
যেতো, – আপনার যেমন জিনিষ তেমনি থাকতো। আপনার কার্য্যসিদ্ধির
জন্যে আমাকে প্রাণ খুলে ডাকতে হয়েচে যে, তিনি কি না হাজির হয়ে থাকতে পারেন?
ধৃ – অনেকটা রয়েছে –
ভ – ওটা যেরূপ ঢেইখেলানে
হয়েচে, পীর তো পীর,ওর কাছে মামদোও ঘেঁষতে পারে না।
ধৃ – ফ্যাঁসাদে পড়ে গেলুম
–
ভ – (জনান্তিকে) অপচার গুণে পেটের ভিতর যে রকম ঘুনুচ্চে,
ঠেলে না তুলে দেয় – অসম্মানই না হতে হয়, একটা হাঁচি হলেই ফেঁশে
যাব! পেটে যেন রথ দোলের ভিড় ঠেলা মার্চ্চে (ধৃ প্রতি) আপনি কি জিনিষ গুনে ফেরৎ চান?
ধৃ – উপায় আছে না কি?
ভ – শাস্ত্রে কোন উপায় নেই – আপনি চট্ করে – একটা মেদী
ময়নার আখন্ড চোনা আনুন দিকি –
ধৃ – আমি এখনি চেষ্টা পাচ্চি
(প্রস্থান -)
ভ – ব্যাটা এখুনি ফিরবে,
আর বামাল পর্য্যন্ত বার কোরে ছাড়বে, সরে পড়াই শ্রেয় –
(প্রস্থান)
No comments:
Post a Comment