Friday, August 28, 2020

ভেন্ডিং মেশিন - হান্স ম্যাগনাস এঞ্জেন্সবার্গার

 

চারটে সিকে সে মেশিনের মুখে ঢোকায়

কিছু সিগারেট পায়

 

পায় সে কর্কটরোগ

পায় সে বর্ণবৈষম্য

পায় সে গ্রীসের রাজা

সঙ্ঘ-কর রাজ্য-কর বিক্রী-কর উৎপাদন-কর

পায় সে মেশিনগান এবং অতিরিক্ত মূল্য

মুক্ত উদ্যম এবং ইতিবাদ

পায় সে বড় তোল্লা বড় ব্যবসা বড় ললনা

বড় কাঠি বিশাল সমাজ মহাবিশ্বে আদিবিস্ফোরণ

বড় বমি

কিং সাইজ এক্সট্রা সাইজ সুপার সাইজ

 

আরো আরো সে পায়

তার চারটে সিকের বদলে

কিন্তু এক নিমেষের জন্য

যতকিছু সে পাচ্ছে হাপিশ হয়ে যায়

 

এমনকি সিগারেটগুলোও

 

ভেন্ডিং মেশিনটার দিকে সে তাকায়

কিন্তু দেখতে পায়না মেশিন

নিজেকে দেখতে পায় সে

বয়ে যাওয়া একটি নিমেষে

এবং নিজেকে দেখতে মানুষেরই মত প্রায় তার মনে হয়

 

তারপর খুব শিগ্‌গিরই

একটি ছোট্টো ‘ক্লিক’এ সে মুছে যায়

থাকে তার সিগারেটগুলো

সে অদৃশ্য হয়েছে

একটি নিমেষমাত্র ছিল বয়ে যাওয়া

আকস্মিক আনন্দানুভুতি ছিল এক ধরণের

 

অদৃশ্য হয়েছে সে

চারটে সিকের বদলে

পাওয়া সমস্ত জিনিষের তলায় চাপা পড়ে

সে আর নেই  

জোসিনা, তুমি মৃত নও - সামোরা মাশেল

জোসিনা, তুমি মৃত নও কেননা দায়িত্বগুলো তোমার, আমরা গ্রহণ করেছি আর আমাদের ভিতরে সেসব জীবিত ।

তুমি মরোনি কেননা তুলে ধরেছিলে যে লক্ষ্য তার সবটা আমরা উত্তরাধিকার বলে নিয়েছি । 

তুমি চলে গেছ আমাদের মধ্যে থেকে কিন্তু আমার বোঝার অংশ তোমার ছেড়ে যাওয়া অস্ত্র আর রুকস্যাক, কাজের সরঞ্জাম ।

তোমার দেওয়া রক্ত এক বিন্দু মাত্র সেই রক্তে যা আজ অব্দি আমরা দিয়েছি এবং আরো দিতে হবে ।

পৃথিবীকে পুষ্টি দিতে হবে; যত সে হয় উর্বরা, গাছগুলো বাড়ে তার, বড় হয় ছায়া আর বেশি মিঠে হয় ফলগুলো ।  

তোমার স্মৃতি দিয়ে গড়ব এক কোদাল তোমার ত্যাগে সমৃদ্ধ ঘাসের চাপড়াগুলো ওল্টাতে আর… নতুন ফল হবে ।

নিজের সবচে’ ভালো আর প্রিয় সন্তানদের দিয়ে নিজেকে নতুন করে বিপ্লব । 

এই অর্থ তোমার ত্যাগেরঃ জীবিত উদাহরণ হবে অনুকরণীয় ।

এ আমার আনন্দ যে দেশপ্রেমিক এবং নারী হিসেবে তুমি দ্বিগুণ স্বাধীন হয়ে সেসময় মরলে যখন নতুন শক্তি, নতুন নারীর জন্ম হচ্ছে । 

তোমার শেষ মুহুর্তগুলোতে ক্ষমা চাইলে ডাক্তারদের কাছে যে তাদের সাহায্য করতে আর পারছ না ।

যেভাবে স্বীকার করলে তুমি ত্যাগ তা একটি অক্ষয় উৎস প্রেরণার এবং সাহসের ।

এত সম্পূর্ণ ধারণ করে নতুন মূল্যগুলি যখন কোনো কমরেড, সে জয় করে হৃদয়, আমাদের পতাকা হয়ে যায় ।

তাই স্ত্রী থেকে বেশি তুমি আমার বোন, বন্ধু ও সহযোদ্ধা ছিলে । 

আর অন্য কেমন ভাবেই বা শোক কমরেডের প্রতি, তার বন্দুকটা তুলে নেওয়া আর লড়াই জারি রাখা ছাড়া ব্যক্ত করা যায় ? 

আমার অশ্রু বইবে সেই এক উৎস থেকে যেখানে জন্ম নিয়েছে আমাদের প্রেম, সংকল্প আর বিপ্লবী জীবন । 

তাই এ অশ্রু স্মৃতিচিহ্ন এবং লড়াইয়ের শপথ ।   

গাছ থেকে ঝরা ফুল প্রস্তুত করে জমি, নতুন আরো সুন্দর ফুল আসছে ঋতুতে ফোটাতে ।   

তোমার জীবন তাদের মাঝে আছে যারা এগিয়ে নিয়ে চলেছে বিপ্লব ।   







মুখোমুখি সংঘাত - মিরোস্লাভ হোলুব (১৯২৩-১৯৯৮)

ভাবো তো! মরে যেতাম যে!
সে বললো নিজেকে,
লজ্জিত,
এক আঁটি হাড় টেনে মানুষের উচ্চতা খাড়া করায়
যেন হৃদয়ের শাপ ছিল।
যেন মাটিতে ঝরে পড়া শব্দকেও স্পর্শ
নিষিদ্ধ হয়েছিল হঠাৎ। তাছাড়া ভয় ছিল
নিজের শরীরটাকে ধাতব চাপের নিচে পাওয়ারও।
শিরা-উপশিরা অব্দি অস্বস্তিকর!

বরফ-কাটিয়ের কুড়ুলের মত আটকে
ট্রামটা দাঁড়িয়েছিল তার ওপর
আর গাড়ীটার যা কিছু অবশিষ্ট,
দেখতে হয়েছিল এক উত্যক্ত পরীর নকল দাঁতে আধখাওয়া
বিদঘুটে লেড়ে বিস্কুটের মতন।
গাঢ় কিছু একটা ঝরছিল ট্রামলাইনে,
নজরকাড়া বিবর্ণ এক হাওয়া
তখনো-উষ্ণ একটি বইয়ের
পাতা ওল্টাচ্ছিল।

মূক-বধির সহানুভূতি নিয়ে
বৃত্তাকারে দাঁড়িয়েছিল লোকজন,
নাটকটির শেষ অঙ্কের অপেক্ষায়,
যেন পোকারা বেরুবে মুন্ডুকাটা মুর্গীর ডানার নিচ থেকে।
দূর থেকে কাছে আসছিল সাইরেনের আওয়াজ,
জমে যাচ্ছিল মিশে দিনটির,
মুহূর্তটির অভাগা বাতানুকূলতায়।
আবহমন্ডলের মর্যাদা যেটুকু অবশিষ্ট ছিল,
ঘাড়ে শিশির হয়ে ঝরছিল।
শিরা-উপশিরা অব্দি অস্বস্তিকর!

না, ধন্যবাদ, সে বলল, আমি অপেক্ষা করব;
কেননা নির্বাক একটি ছায়াছবি
শুরু হয়ে গিয়েছিল
সাবটাইটেলহীন, রঙহীন, উত্তরহীন।

তাহলে কী হবে সেই চুম্বকীয় একমেরু কণাগুলোর?
মহাবিশ্বের আদিবিস্ফোরণের কয়েক মুহূর্তের মধ্যে ছড়িয়ে পড়া?
সময়-প্রবাহের অপরিবর্তনীয়তাকে লঙ্ঘন করা প্রোটনগুলো?

আর ছায়াপথের কাঁধের নিচের সেই দৈত্যাকার আণবিক মেঘগুলোর
যাতে জন্ম নিচ্ছে নক্ষত্রদের ভ্রূণ?
কী হবে
সুদখোর শক্তিধ্বংসকগুলোকে ক্ষয় করে অগভীর প্রাগৈতিহাসিক 
                                                                জলাশয়ে জমা হতে থাকা
জৈব-অম্লগুলোর প্রথম প্রজন্মের?
 
কী হবে উবে যাওয়া সমুদ্রের বুকে গেঁথে থাকা
প্রাক-ইগলের নখের মত শুকনো তারামাছগুলোর?
 
কী হবে পাখিদের, সূর্যের হেলান দেখে শুরু করা এবং
যৌন-প্রাণরসের গর্জনে সাড়া দেওয়া মরণমুখী পরিযায়িতার?
 
কী হবে খাঁচাবন্দী আধপাগল ওরাংউটাংটার
কিচ্ছু করার নেই বলে যে শুধু বমি করে?
 
কী হবে হাজার বছর ধরে গাইতে শেখা ইঁদুরগুলোর
আর মেসোপোটামিয়ার রাণিসুন্দরীর জংঘার মত এক পায়ে
                         দাঁড়িয়ে টাল সামলানো ব্যাংগুলোর?
 
কী হবে কবিতার, এত যে বিশৃংখল এক উদ্যম
যা শাসকদের পেঁচিয়ে দেয় আর বাড়িয়ে দেয় চোখের টেরা
বিদ্যালয় পরিদর্শকদের?
 
এবং লিউকেমিয়া ওয়ার্ডের সেই ছোট্টো মেয়েটি
যে পায়খানায় বসে দেখাতে চেষ্টা করেছিল তার
ডাক্তারের গোঁফটি কেমন কিন্তু
সরু কাঠির মত হাত পিছলে গেল শৌচপাত্র থেকে,
সে পড়ে গেল আর তাই
দেখাতে চেষ্টা করে গেল বার বার তার কী হবে?
 
এবং দুর্বল-হাঁটু সেই বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক
যে প্রায়-ঠিক মহাবিশ্বটা বুঝত কিন্তু
ভুলে গিয়েছিল যাতায়াতের নিয়মাবলী তার কী হবে?
 
না, ধন্যবাদ, সে উর্দিধারী কাউকে বলল,
আমার কিছু চাইনা। কাগজপত্র সব পকেটেই আছে আমার
কিন্তু পৌঁছোচ্ছেনা হাতটা।
এবং সে একটু হাসতে চেষ্টা করল জটিল সৃষ্টির এই
 অস্বস্তিকর অবস্থায়।
এ সব আমারই দোষ, সে বলল,
আপনাদের ধন্যবাদ।
                                    এবং তারপর
সে মরে গেল।

জেরুজালেম - জেমস ফেন্টন

পাথর কাঁদে পাথরে
হৃদয় হৃদয়ে, হৃদয় পাথরে
এবং এ জেরা অন্তহীন
কেননা আদৌ কোনো শাশ্বত শহর নেই
করুণা নেই
কোনো চুক্তি রামধনু বা জামিন
তোমার ঈশ্বর ও আমার মাঝে নেই,
কিছুই এ আকাশের নিচে নেই।
 
আবহাওয়া দিলখুশ
যন্ত্রণা সর্বত্রব্যাপী এবং প্রতিটি মানুষ
নিজের যন্ত্রণা গায়ের চামড়া করে পরে।
গর্বিত আমার ইতিহাস।
আমার, পায়নি পাস্‌।
এই জলপাত্রই আখেরে
সব যুদ্ধ আর সাঁজোয়া গাড়িতে হাঃ হার জন্মভূমি।
এই সে মানুষ যে বিশ্বাস করে না তুমি তাই, যা তুমি।
 
দোষটা তোমার।
এই সমাধিকক্ষ ধর্মযোদ্ধার।
কিড্রনের পূণ্যতোয়া মে শেআরিম থেকে বইছে।
প্রার্থনা তোমার জন্য আমিই করব।
কি করতে হবে তোমায়, আমি বলব।
পাথর মেরে তোমার, ভেঙে দেব হাত পা খোল নলচে।
তোমাকে পাইনা ভয়,
তবে যেসব কাজ আমাকে দিয়ে করাও সেসব
                        কাজে ভয় পাওয়া উচিৎ বোধহয়।
 
এ নয় বারোয়ারি কবর।
এই পূণ্য সমাধিচত্বর
মন্দির। হেড্রিয়ানের, সেই সম্রাটের প্রেম,
যার ভাগ তিনি কাউকেও দেন নি বিশেষ।
কবর তো নির্বিশেষ !
স্বয়ং চলমান জেরুসালেম
পাহাড় থেকে পাহাড়ে লাফাচ্ছে
পথ ও ইচ্ছাপত্র নিজের, তৈরি করে নিচ্ছে।
 
শহরটা বরখাস্ত হয়েছিল।
জর্ডান পেছনে হটেছিল।
পবিত্র খ্রিস্তানগণ ইহুদিদের পুড়িয়েছিল জ্যান্ত।
এই যে আজানের মিনার।
আমি হইনি সাবাড়।
অপেক্ষা করছি, আসবে আরো রসদ, সৈন্য ও সামন্ত।
তোমার মায়ের আসল নামটা যেন কি?
বেথেলহেম যাওয়া আজ নির্বিঘ্ন তো? না কি?
 
এই হল সমাধি-উদ্যান।
না, এইটা সমাধি-উদ্যান।
আমি আর্মেনীয়। আমি মিশরী খ্রিস্তান।
এ তো ইউটোপিয়া!
দেশ আমার ইথিওপিয়া।
এই সে গহ্বর যেখানে উড়ন্ত গালিচা নামান
হজরত মহম্মদ, নামাজের জন্য, এক রাতে
এখান থেকেই,
যাওয়ার পথে আবার তিনি ওড়েন, এক ঘন্টা বাদে।
 
কে গোছালো ব্যাগ তোমার?
আমি, ব্যাগটা আমার।
কোথায় জন্মেছিল তোমার কাকার মায়ের সেই বোন?
কখনো কোনো আরবীর সাথে হয়েছে সাক্ষাৎ?
হ্যাঁ, আমি গুবরে, আলবাৎ ।
আমি পোকা। আমি ঘৃণ্যজন।
অশুচি, নিজ কান্নায় পথে ঘুরি,
দেখি হেয়তায় বিদ্ধ করে প্রতিটি দৃষ্টির ছুরি।

আমি তোমার দুশমন
এই হল জেথসিমান।
চেয়ে থাকে ভাঙা কবরগুলো, মাউন্ট মন্দিরের পানে।
বল, এখন বল আমরা সবে
আবার উঠে দাঁড়াবো কবে?
হব কি আমি প্রথম, দেহগুনতির সেই মহান আহ্বানে?
উপজাতিগুলির জমায়েত হবে কখন?
বল আমায়, শেষের সেই ব্যাপারগুলি শুরু হবে কখন?
 
তুমি ভ্রান্তিতে করছ বাস।
এ হল সন্ত্রাস।
এ তোমার নির্বাসন। এ আমার জনপদ।
এ উপার্জন তোমার।
এ নিয়ম, ফিরে না আসার।
এই হল টক ময়দার তাল, এই হল মিষ্টি মদ।
এ আমার ইতিহাস, এ আমার জাতি।
এবং এই অখুশি মানুষ
আমার মুখে ছুঁড়েছিল এ্যাসিড।
 
১০
পাথর কাঁদে পাথরে।
হৃদয়ে হৃদয়, হৃদয় পাথরে।
এই সেই যোদ্ধা-পুরাতত্ত্ববিদগণ।
এই আমার আর ওই ভিন্ন জনতা এক।
এই হল জেরুসালেম সাবেক।
এই সেই, কব্জিতে উল্কি আঁকা মৃতপ্রায় মানুষজন।
কাজ করো, আর আমি তোমার
বাড়িঘর করব ধ্বংস।
আমি তোমার ভিটে ধ্বংস করেছি,
তুমি আমার ভিটে করেছ ধংস।

Monday, August 17, 2020

দিলদারের দোহাবলী

(১)
শাহ মুজিবুল্লা এ জগতের দরবেশ, সৎকর্মীর সে আপন
মনের বাইরে মনদিশারী সে দিলদার  ভিখিরির সেই তো স্বজন

(২)
তোমারই এক কৃপায় শাহ মুজিবুল্লা, আমাদের ভরসা ও আশা
তোমার চরণধূলি সুর্মা দৃষ্টিহীন মানুষের দৃষ্টিপিয়াসা
ইস্‌কান্দার জামশিদের বিজয়পথ তোমারই আসন থেকে শুরু
তুচ্ছ সিকি আনির মানুষ এ দিলদার  বান্দা তোমার, শাহগুরু
 
(৩)
শাহ মুজিবুল্লার চৌকাঠ, প্রার্থনা-মন্দির সারা দুনিয়ার
প্রাণের জোয়ারে দেখো আনন্দ এনে দেয় গুণগান প্রশস্তি তাঁর
তালু জিভ মুখগহ্বর হল মধুময় তাঁর নাম জপে সারাদিন
এ মানবজীবনের পথের হে দিলদার  তিনিই যে দিশারী প্রবীণ

(৪)
বয়স্য শাহ মুজিবুল্লা আমার কত উচ্চ শিখরে উপবিষ্ট
একটি বারের তরে কৃপাদৃষ্টিতে এই আকুল যে পেল অন্বিষ্ট
পাথর নিরেট যদি, পরশ পাথর তাকে করে তিনি দিলেন দেখিয়ে
হতাশ মরিয়া দিলদার-টাকে পবিত্র করলেন নিজ ধূলি দিয়ে

(৫)
এগারোশো আটচল্লিশে আমি গুরুজির শ্রীচরণে ঠাঁই জোটালাম
লোভ লালসার পথে চলনের টান থেকে মনটাকে গুটিয়ে নিলাম
দেহের বৃত্তিগুলি নিজবশে আনলাম প্রতিপদে বসিয়ে লগুড়
তখন গুরু দিলেন পরিতোষে দিলদার  অধমকে গাড়ি ভরা গুড়

(৬)
নীরব নামাজী মাটি কোপানো মানুষটির অর্থ দিশারী বোঝালেন
ধ্বংস বিষাণধ্বনি চেতন হৃদয় মাঝে স্পষ্ট বাজিয়ে শোনালেন
উচ্চাভিলাষে লীন নিঃশ্বাস থেকে মন ফিরে এল, পাল্টালো ভোল
ঈশ্বরকে নিজের দেখলাম দিলদার  সামনে সজীব অবিকল

(৭)
সারা দুনিয়ায় ঘুরে ঘুরে আমি দেখলাম দুর্দশা যতেক, সকল
একেকটি জায়গায় পরখ করে নিলাম দুনিয়ার সাচ্চা নকল
মায়া মোহ ছেড়ে আমি তখন নিলাম খুঁজে ফকিরীতে আমার শিকড়
আজ দিলদার  তাই ইয়ারের মুখ হয় মাঠে ঘাটে জীবন ও জড়

(৮)
ওই সে ভালোবাসার জনটি আমার কাছে কতভাবে বিভাবে যে এল
মানব জনমে এল দেখাতে নিজের রূপ, ভক্তিতে অপরূপ হল
দুরাচারী শাসককে ডোবালো সে মুসা হয়ে আবার সে যীশু পেল নাম
আমি তো সবার মাঝে তাকেই গো দিলদার  শিবরূপে জগতে পেলাম

(৯)
প্রিয়র দেখা পাওয়ার সন্ধানে বরবাদ হল সারা জীবন আমার
প্রেমও না প্রিয়ও না কিছুই পেলাম নাকো পৃথিবীতে ঘোরা হল সার
গুরুর আশীর্বাদ নিলাম যখন গিয়ে রহস্য হল যে মোচন
ঘরে বসে দিলদার  পেলাম আমার সেই বড় প্রিয় প্রণয়ী আপন 

(১০)
অভিন্ন ঈশ্বর ছেড়ে এই বহুমতে কেমন ছিন্ন হতে হল
কোথাও মিথ্যে বলে মিথ্যুক হয়ে, বলে সত্য, প্রমাণ দিতে হল
মোমিন কথিত হল ইসলামে সে আবার বিধর্মে হল যে মহান
প্রতি পদার্থে আছে বন্ধু গো দিলদার  এ আমার অনুসন্ধান
 
(১১)
যথার্থ বাস্তব চিনলাম গুরুজীর দীক্ষা গ্রহণে যেই দিন
খুলে গেল সংসার কারাগার চিন্তার মুক্তিতে হলাম স্বাধীন
চারদিক থেকে নিশ্চিন্ত হয়ে হৃদয় প্রেমে মজে হল যে আবাদ
বন্ধু সঙ্গ পেয়ে দিলদার  হে আমার চিত্তের জুটলো প্রসাদ

(১২)
গলায় কাফ্‌নি আর মাথায় বাগিয়ে টুপি ঘরে ঘরে জানালো সালাম
আকন্ঠ ডুবে আছে মায়া মোহে তবুও সে জপে গেল আজাদির নাম
একেক পয়সা তার দাঁতে চেপে রাখা দেখে ফকিরীকে দুষলো সমাজ
শুধাও তো দিলদার  একবারও করেছে কি পরম ন্যায়ের তরে কাজ

(১৩)
রোজা নামাজের যত দেখনাই নিষ্ঠায় নিজেকে করল তালেবর
ছলনার জপমালা হাতে নিয়ে প্রতিদিন বাড়ালো সমাজে কলেবর
সমাজের মাথাগুলো বানিয়ে বসিয়ে তার প্রতিদানে কাটালো জীবন
ধনলোভে দিলদার  নিজেই নিজের মুখে দিল যে কালির আলেপন
 
(১৪)
কেন তুই দিলদার  রাতদিন ঘরে ঘরে ভিখ চেয়ে বেড়িয়ে বেড়াস
বিধাতা অন্নদাতা, তাঁর কাছে না জানিয়ে পরকে জানাস অভিলাষ
ভাব লেশ নেই তোর শূন্য হৃদয় মিছে মরিস কি সব পান করে
বিধির লিখন আছে যা কিছু তাই তো হবে কেন তাঁকে দিস ক্রোধে ভরে

(১৫)
কোত্থেকে এলি, হল কোন দিকে জাগরণ, কে তোকে এখানে নিয়ে এল
সুর্যের আদলেতে চাঁদের মুখটি তোর কেই বা তৈরি করে দিল
আদমের যুগ থেকে প্রীতির বাঁধনে দেওয়া কথা যাঁর আনলো এখানে
আবার সেই দিকেই জাগরণ দিলদার  শুরু হল যাত্রা যেখানে

(১৬)
সব কিছু ভুলে একা নির্জনে রয়েছিস শ্রেষ্ঠ সিংহাসনাধীন
ভাগ্য যদিও আজ চাতুরিতে ভরিয়েছে সমৃদ্ধিতে তোর দিন
আমি তো দেখছি তোর দরজায় আকাশটা বদ্‌লে হচ্ছে সুকঠিন
দিলদার  বলছে যে জাঁক জৌলুষ সব হয়ে যাবে হাওয়ায় বিলীন

(১৭)
মহাবীর মনসুর বলল আমিই খোদা দেখলে তো গেল গর্দান
সীমার বাইরে যার বেরিয়েছে পা তার এভাবেই ফুরোবে বাখান

(১৮)
দিশারীর দেওয়া পথ তর্ক বিতর্কের গোলক ধাঁধায় ছিল ঢাকা
প্রিয়কে পেলাম নিজ ক্রোড়ে যেই, পথ হল সুখ সমৃদ্ধিতে মাখা

(১৯)
সৃষ্টিকর্তা তিনি, আপন বান্দাদের পালনকর্তা এক তিনি
প্রাণের আবাদ করে সংসারে ধুলিকণা পবিত্র করেছেন যিনি
তিনিই তো আশা আর ভরসা সবার, তাঁর হাতে আছে মরণ বাঁচন
পবিত্র দয়া আর করুণায় দিলদার  ভরবেন তিনি তোর মন

(২০)
ঘুরে ঘুরে দেখেছি তাবৎ দুনিয়ায় যারা আসে তারা সকলেই যায়
না কারোর দুশমন না কারোর প্রিয়, কেউ চিরদিন থাকে না হেথায়
রইল না জহ্‌হাকফরীদুঁ অথবা দারা কিম্বা আলেকজান্ডার
সেই শুধু নিত্য এ সংসারে দিলদার  গড়লো যে এই সংসার

(২১)
হাল হকিকৎ এই দুনিয়ার তুই খুব ভালো করে মন দিয়ে দ্যাখ
কেউ কাঁদে একখানি রুটির জন্য কেউ ধনের জন্য কষে প্যাঁচ
ফলিয়ে ও গড়ে কেউ খায় ও খাওয়ায় কেউ করে সিন্দুকটা ভরাট
দেখে বুঝি দিলদার  দুনিয়ার সমস্ত কাজ মিছে ঝুঠঝঞ্ঝাট

(২২)
একটি শস্যদানা মাটির ভিতরে ফলে তরু হল নয়নাভিরাম
পাতা হল ডাল হল তারপর ফলবান হয়ে হল শক্ত সুঠাম
অবশেষে কাটা পড়ে কড়িকাঠ, ফের চিরে তক্তা এবং রাজাসন
দেখ দিলদার এক ইশ্বর তার শত বিভাজন গাছেরই মতন

(২৩)
নানা ধরণের মেঘ একদিক থেকে উঠে দিকদিগন্তে গেল ছেয়ে
কোথাও রইলো হয়ে কালো ও গেরুয়া, এসে কোথাও পশলা গেল দিয়ে
কোথাও ঝরালো খুব জল দয়াপরবশে ছায়া হয়ে রইলো কোথাও
কত জায়গায় গড়ে কত দিলদার কত জায়গায় দিল সুখছাঁও

(২৪)
সৃষ্টির কাজে নেমে স্রষ্টা দেখালো কত শত রকমের জাদুকরী
কোথাও আগুন হল বাগিচার শোভা, তুর পাহাড়ে জ্যোতির হল খড়ি
কোথাও দেখিয়ে দয়া দয়ালুর খ্যাতি, নাম দুরাচারী জোটালো কোথাও
হল কেউ বঞ্চিত দিলদার  হল রোম চীনের শাসক বলো, তাও

(২৫)
যাকে যা গড়ার ছিল উদ্দেশ্য সেমত হল তাঁর বন্দোবস্ত
একে উদ্ধার পেল ধুলো থেকে আরজন শয়তানিতে অভিশপ্ত
মুসা হল পয়গম্বর আর ফারাওকে করলেন তিনি বেইমান
দগ্ধ হল যে কেউ কোপে তাঁর দিলদার  কাউকে দিলেন বরদান

(২৬)
নিজেতে মত্ত তুই, করে যা এমন কিছু ভালো মানুষেরা সুখী হয়
আমার এ কথাগুলো প্রবেশ করে না তোর হৃদয়ের পাষাণবলয়
ভাই বল ছেলে বল সময়ে বাঁধনগুলো কোনোটা আসে না কাজে আর
ওদের সঙ্গে শুধু ইহজীবনের যত রক্তবন্ধ দিলদার

(২৭)
যা কিছু পূণ্য তোর তা থেকে এক পেয়ালা ভালো মদ দে আমায় সাকী
যাতে হয় কল্যাণ সমাজের, আমরাও মহৎ কর্ম নিয়ে থাকি
সময়ের হাওয়া যেটা চলছে বিফল হোক ভালো হোক আগামীর দিন
দুনিয়া দিলদারের খুশিতে ভরুক পরলোকে যাই আনন্দলীন

 

(২৮)

এ জগৎ সংসার প্রাণের নিমেষ ধরে সৃয়মান যেন বুদ্বুদ

স্বপ্নের মাঝে যেন স্বপ্ন এমন দেখ প্রতিভাত সৃষ্টির রূপ

এসবের পরে তুই ভরসায় দিলদার  থাকিসনে মদের নেশায়

স্মরণে রাখিস তাঁকে আর যেন হরদম ঘোড়ার রেকাব থাকে পায়ে

 

(২৯)

শাহ আদ্‌হম যবে নিলেন নিজের হাতে সিংহাসন ও উষ্ণীষ

দুঃখ ভিন্ন পারলেন না করতে দিলদার  কোনো কিছুরই হদিশ

ফকিরী মুকুট রেখে মাথার ওপর শেষে বিলিয়ে দিলেন সব ধন

ভিখিরি জীবন যত আনন্দে কাটালেন রাজত্বে পেলেন কখন

 

(৩০)

সকল সুফিকুলের মাথার মুকুট শাহ মুজীব্‌ আমার যিনি পীর

বিদ্বান মান্ত্রিক বয়স্য ওস্তাদ বন্ধু তিনি যে ন্যায়বীর

কেউ তো দেখিনা যার ভাগ্যে অন্ন তাঁর থাল থেকে, চেয়েও জোটেনি

এমন চিকিৎসক যার দিলদার  কেন রোগ তার সারবে না শুনি?

 

(৩১)

পেয়েছিস কখনো কি তপস্বী তুই পাঁড় মদ্যপ্‌দের সহবৎ

যা কিছু জোটায় পান করে ও করায় থাকে এক ঈশ্বরে একমত

যতই কষ্ট হোক কখনো ধারে না তারা আড়ম্বরের কোনো ধার

ভাব দিলদার  এরা নিঃসংশয়ে ঈশ্বরের স্নেহের দাবিদার

 

(৩২)

গৃহের বাইরে এসে গৃহটি আপন গেছে ভুলে এই হতভাগ্যরা

সুরার নেশায় কেউ হয়েছে বেহুঁশ কেউ চাইছে পিরিচ ভরে সুরা

প্রতিমা পূজায় কেউ মশগুল কেউ দেখো পাবক পূজনে খোঁজে সত্য

সৃষ্টির দিন থেকে তুমিই তো ঈশ্বর বলে দিলদার  আছি মত্ত

 

(৩৩)

চোখ যদি থাকে দেখো সামনে ঈশ্বরের ন্যায়ের আদলে প্রকৃতি

আকাশের নিচে আর মাটির ওপর কত সুষম শিল্পসংগতি

কত বিচিত্র সব মুখশ্রী আর সৃষ্টির এত ব্যাপক জগৎ

বলে দিলদার  এর অর্থ একটুখানি বুঝুন তো দেখি হজরত

 

(৩৪)

কিসে মন রাঙিয়ে রইলি বসে আজীবন কানেও গেল না কশাঘাত

কোরাণে উন্মোচিত বাণী এ জগতে প্রাণ পাবে মৃত্যুর আস্বাদ

যা কিছু সৃষ্ট সব শেষ হবে দিলদার  নিয়ত সময়ে যথারীতি

থাকবেন অদ্বৈত ঈশ্বর যিনি পুরো সৃষ্টির মূল অন্বিতি

 

(৩৫)

দেখছি ঘটনাবলী দুনিয়ার, অদ্ভুত হাহুতাশ সবার ভিতর

শান্ত ও দৃঢ়পদে দাঁড়াতে পারেনা যারা দিলদার একটি প্রহর

যাদের হৃদয় শুধু বিপদের শঙ্কায়, ভাবো, কাঁপে সারাটা সময়

তাদের জন্য যদি মায়া হয়, লাথি মারো, ভালোই তাদের দিনক্ষয়

 

(৩৬)

জ্ঞান হলে ছাড়বে সঙ্গ সঙ্গত দেশ-রাজনীতি ধান্ধাবাজির

কাজের বাড় দেখিয়ে জমাচ্ছো ধন আর ওঠাচ্ছো প্রাসাদ চুরির

খাও, খাওয়াও আর দেও, দেওয়াও এই নীতিই যে ভালো হে রাজন

কথাটা দিলদারের  মানো, হবে প্রতিফলে মানুষের শীর্ষে গণন

 

(৩৭)

ক্ষেতটাকে হৃদয়ের প্রেমের লাঙলে চষে করূণার চৌহদ্দি আঁক্‌

আগাছা বহুত্বের উপড়ে সরিয়ে কর একেশ্বরের গাঢ় পাঁক

বীজ রুয়ে স্মরণের সেচ কর্‌ দিলদার প্রেমোন্মাদের ঢেলে জল

কোনো বাধা আসবে না কৃষিকাজে, এই পথে আখেরে জোটাবি ভালো ফল

 

(৩৮)

ধরাধামে এল যারা সবাই ক্লিষ্ট মনে গেল নিয়ে অপূর্ণ সাধ

গেল সে আলেকজান্ডার বল দারা বল ফারাও অথবা শাদ্দাদ

যতেক প্রেমিক যথা মজনুঁ খুসরো আর ফরহাদ গেল তারা চলে

দীর্ঘশ্বাস যত ধরার পিয়াসে দিলদার  ঝরে ব্যর্থ, বিফলে

 

(৩৯)

যদি হোস সাচ্চা প্রেমিক তার তবে ভালোবাসিসনে তুই অন্যকে

করুন অত্যাচার জুলুম, প্রণয় তাঁর সরাসনে তুই মন থেকে

করুন তিরস্কার, মারুন তবুও তুই চৌকাঠে থাক তাঁর নিতি

থাকে দিলদার  যদি বুদ্ধি উপড়ে ফেল অন্তর থেকে পরপ্রীতি

 

(৪০)

আল্লার তরে যদি আকুলতা তোর তবে জাগা রে হৃদয়ে প্রেমরূপ

প্রেমের জাঁতায় পেষ হৃদয় আপন পিষে পিষে কর ময়দার স্তুপ

মায়া মোহ ছেড়ে দিয়ে মন কর তাঁর প্রতি আসক্ত মুগ্ধ মোহিত

তবেই বঁধুয়া তোকে দেখা দেবে দিলদার  দেখবি প্রকট উজলিত

 

(৪১)

হাকিম হয়েছ ভেবে জুলুম কোরো না তুমি বিধাতার সৃষ্টির পরে

নতুবা শেষের সেই দিনটিতে হবে তার প্রতিকার তোমাকেই ধরে

নিজের পদক্ষেপ সত্যের পথে রাখা তোমার জন্যে হবে ভালো

যে কোনো অবস্থায় দিলদার  সৃষ্টির বিধান খেয়াল রেখে চলো

 

(৪২)

বড় তপস্বী তুই, কেন এই মদ্যপগুলোকে করিস ধিক্কার

জীবিত মানুষদের করিস নে শ্লেষাঘাত, এরা তো বান্দা স্রষ্টার

বিধির ন্যায়বিধান উপহারে আগে নিষ্কর্মা বান্দারাই পাবে

মুক্তির বাণী তুই শুনিয়ে দে দিলদার  মুর্খ চক্ষুহীন সবে

 

(৪৩)

কিসের সদুপদেশ দিস রে উপদেশক কাজ তোর ভ্রান্ত মিথ্যে

কথা মিথ্যে কাজ মিথ্যে এমনকি তোর পরিণতিও শুধু মিথ্যে

বল তোর বলায় হয়েছে কবে প্রেমিকের সাচ্চা ইসলাম মিথ্যে

এই অন্ধ নিজের বিধর্মে দিলদার  দুর্নাম দিচ্ছে মিথ্যে

 

(৪৪)

সাকি তোর বৈভব যেন দেয় ভরে ভরে আমাদের পেয়ালা আসবে

হৃদয়ে যে গিঁটগুলো পড়েছে, উন্মোচিত এক লহমায় সব হবে

আশার যে ডালখানি রয়েছে উঠুক ভরে মেহেরবানিতে তোর, ফুলে

মত্ত একেশ্বরে থাকুক সংসারের চিন্তাটি দিলদার  ভুলে

 

(৪৫)

কার তরে বেড়াস উদাস তুই মন থাকে উচাটন কার ভাবনায়

কেন এত কাতরতা ভাই তোর, বিপত্তি কিসে ভেঙে পড়েছে মাথায়

বন্ধুর তরে হয়ে সত্যি ব্যাকুল দেখ রয়েছে তোরই মাঝে সে

এই ধাঁধা বুঝে নিলে দিলদার  হৃদয়ের কুঁড়িগুলো ফুটবে নিমেষে

 

(৪৬)

ভাবনাচিন্তা করে দেখলাম দুনিয়ার হালচাল বড় অদ্ভুত

জড়োয়া মুকুট দেয় কাউকে এবং করে কাউকে সিংহাসনচ্যুত

কাউকে পাঠায় ভিখ চাইতে দশ দুয়োরে কাউকে পাওয়ায় রাজধন

ভাবো তো একটু দিলদার  এই জমানার কতখানি হয়েছে পতন

 

(৪৭)

ধনসম্পদে এত হোস নে অহঙ্কারী দুনিয়াটা খেয়ালি স্বপন

স্বপ্নে দেখে যেমন টাকার পাহাড় উৎফুল্ল সবার হয় মন

যখন চক্ষু খোলে প্রাপ্তি শূন্য দেখে যা ছিল আছে যথাবৎ

মনস্বী সুখীই বা কবে হয় দিলদার  দেখ ভোজবাজির জগৎ

 

(৪৮)

ভালোই ওজন করে নিয়েছি যাদের সব অভিলাষ ইহজাগতিক

কাজে তারা ভালো নয় আমার থেকে এবং কথারও তাদের নেই ঠিক

অর্থ পেলেই হয় হৃষ্টচিত্ত আর গেলেই হৃদয়ে জাগে ডর

আল্লার প্রেমী যারা দিলদার  তারা করে পেচ্ছাপ টাকার ওপর

 

(৪৯)

সমস্যা দুনিয়ার বুঝতে চাইনু যেই, জনৈক প্রবুদ্ধ জ্ঞানী

অপ্রসন্ন হয়ে বললেন দিলদার  কোথায় নজর তোর জানি

পিষ্ট দলিত হয়ে বিনষ্ট হবে সব যত কিছু দেখছিস খাসা

উন্মাদপ্রায় এর পিছনে ছুটছে যারা অপূর্ণ থেকে যাবে আশা

 

(৫০)

হাল দুনিয়ার বড় আজব হে আজকাল দেখছি শুনছি দিলদার

রোজা ও নামাজে যত ঘেন্না ও দপ্তর খোলা বদকর্ম করার

মান প্রতিষ্ঠা সব খুইয়ে হচ্ছে বেশ চোরাপথে অর্থোদ্‌গম

অনেকে রয়েছে অর্থের তরে লালায়িত আল্লার তরে খুব কম

 

(৫১)

যা কিছু ফলাও, গড়ো, করো বা করাও দান, ভরবে তোমারি হালখাতা

পূণ্য সুক্তি শোনো নবীর ঈশ্বরীয় ন্যায়ের বন্ধু সে যে দাতা

কৃপণ যে, শত্রু সে, ন্যায়ের জগতে তার সাথে লেগে থাকে দুর্নাম

ভক্তির পথে দিলদার  দানী মানুষের ভালো হয় সব পরিণাম

 

(৫২)

বললেন শাহ মুজিবুল্লা পীর আমার যেতে যেতে মহতীর পথে

মনে রেখ বাস্তবে ন্যায়ের মর্ম যথা হৃদি রাখো করূণার ব্রতে

বলি দিলদার  থেক দৃঢ় পদে পয়গম্বরের সুসমাচারে আর

ফকিরির পথ যদি বলো তো এটাই ভাই রাখো নিচে নিজেকে সবার

 

(৫৩)

এই যে চেহারাগুলি ভিন্ন ভিন্ন সব একই মায়েতে জন্মায়

একই পাত্র থেকে ক্ষুধার আনাজপানি এরা সক্কলে মিলে খায়

কেউ যে মুসলমান কেউ যে ইহুদি আর কেউ যে হিন্দু নাম পায়

একেশ্বরকে এরা বহুত্বে ভাগ করে দিলদার  রাস্তা হারায়

 

(৫৪)

একেশ্বরে মতির মদটা দাও গো সাকী, পান করি এবং করাই

চাখনা ভালোবাসার মাঝে মধ্যে মিশিয়ে নিজে খাই এবং খাওয়াই

বয়স্য আছে যারা অন্ধ তাদের নামে ঢোল পিটি এবং পেটাই

শিকড় ভেদবাদের যত আছে দিলদার  কাটি সব এবং কাটাই

 

(৫৫)

মুর্তির মত কেন আছ বসে আপনার অন্তরে একটু তো ভাবো

ধুলো থেকে গড়লো যে, কি গড়লো, প্রাণ দিলো শরীরে একটুখানি ভাবো

কূলের মধ্যে জনতার মাঝে ওই এক রহস্য দেখ দর্পণে

তাকেই স্মরণ করো দিলদার  সেই আছে দেহাসনে এবং রতনে

 

(৫৬)

যাচিস নে নিজ মনোবাঞ্ছা সবার কাছে ফিরিস নে সম্বলহীন

হৃদয় শান্ত রেখে বোস এত অস্থির করিস নে মন রাত দিন

যদি কিছু বিপত্তি নেমে থাকে শিয়রে বা হয়ে থাকে কিছু ধার-দেন

একবার প্রার্থনা কর দিলদার  তোর মিতে হবে হাসান হোসেন

 

(৫৭)

দে আমায় তোর সেই কল্যাণী করূণার বিভাবিকীর্ণ মদ সাকী

ইতি উতি উড়ু উড়ু মন বেঁধে শুধু প্রিয়-ভাবনায় নিবিষ্ট থাকি

মুছে যাক হৃদয়ের ক্ষোভ যেন অবশেষ না থাকে কিছুই অভিলাষ

বস্তু হই এমন কোনো যাতে দিলদার  পাই তাঁর শোভায় প্রকাশ

 

(৫৮)

কি রয়েছে ভাবনায় বেড়িয়ে বেড়াস তুই অস্থির কিসের ধেয়ানে

হৃদয় দিসনে তুই কক্ষনো সোনা রুপো অথবা তামার সন্ধানে

আমার কথাটি মান্‌ অনেক বিঘ্ন ওতে পেরোতে জীবন হবে কালো

আকাঙ্খী হ সেই জিনিষেরই দিলদার  যাতে হয় কল্যাণ, ভালো

 

(৫৯)

নাও তো সৃষ্টিকর্তার কাছ থেকে পাওয়া জিনিষগুলির খতিয়ান

দেখতে দিয়েছে দুই চোখ আর যত ভালো মন্দ শুনতে দুই কান

দিয়েছে পাদুটো আর দিয়েছে দুহাত, বাণী মুখের ভিতর জিভটায়

নত ভাবে কৃতজ্ঞ হও তাঁর দিলদার  প্রাণখানি দিল যে তোমায়

 

(৬০)

যে প্রেমিক সৎ তার বন্ধু বিহনে জানো কাজ নেই ব্যস্ততা নেই

প্রিয়র অদর্শনে একটি ক্ষণের তরে নিঃশ্বাসে শান্তিও নেই

সকাল সন্ধ্যা মেহবুবের গলিতে তাকে হাজির থাকতে হবে ঠিক

লক্ষ্যে পৌঁছে দেওয়া ভালোবাসা দিলদার  তার তরে প্রাণের অধিক

 

(৬১)

এই যে শিল্পী এর শিল্পের শক্তিটা কে পারবে করতে বাখান

একেকটি ধুলিকণা জন্মে এর শোভায় আলোকিত করছে জাহান

মাটির মানুষ এর প্রশংসা করবে কি, দেবতাও বাক্য হারায়

সংশয়ী দিলদার  দেখে নির্বাক, খোঁজে অলখের ছলনে সহায়

 

(৬২)

চেতনা ও বোধ কিছু থাকে যদি তোর তবে করে নে যতটা করা যায়

অতিথিসেবক স্বাগতিক এ দুনিয়া তোর অতিথি তুই এ দুনিয়ায়

খুব বেশি দিন তোর হাতে নেই তাই এত থাকিসনে মুর্খ আকাট

কথাটা দিলদারের  মান্‌ আপনার হিতে পূণ্যের পথে তুই হাঁট

 

(৬৩)

মায়া মোহ ত্যাগ করে প্রথমে সবার থেকে বিযুক্ত করো নিজ মন

প্রেমের আগুন জ্বেলে শরীর পোড়াও ভাই দিলদার  তাদিয়ে আপন

স্মরণ-কাজল দিয়ে আলোকিত কর তুমি তারপর হৃদয়-রতন

এমন যতন শেষে দেখা দেবে তোমায় সে প্রিয় বন্ধু মনমোহন

 

(৬৪)

বড়ই অনুগ্রহ হবে তোর যদি দিস পিয়ার পত্র এনে তুই

অথবা খবর তার মুখে মুখে শিনে এসে আমায় শুনিয়ে দিস তুই

দাস হব তোর যদি মিলন করিয়ে দিস পিয়া সনে ক্ষণ তরে তুই

আপন ঝুলির ধন থেকে হরকরা দিলদার কে পাওয়াস দান তুই

 

(৬৫)

পাইয়ে দে সাকী সেই মদ যাতে ভালোবাসা পিয়ার জন্য জন্মায়

কামনা-বিরূপ হোক সংসারে মন, তাঁর প্রেমে হই উন্মাদপ্রায়

হৃদয়ে আসীন হোক সুন্দর আর কালো তিল হোক চোখের ভিতরে

যথার্থে রহস্য যা কিছু রয়েছে হোক প্রকট দিলদারের  তরে

 

(৬৬)

শোন আর সবাইকে শুনিয়ে দে নিশ্চিতি কিছু নেই এই দুনিয়ায়

দ্যাখ্‌ আর সবাইকে দেখিয়ে দে কালচিহ্ন-আকাশ তোর দরজায়

খা আর সবাইকে খাইয়ে দে যদি কিছু থাকে তোর কাছে মালপানি

বোঝ আর সবাইকে বুঝিয়ে দে দিলদার  যাওয়াটা অমোঘ, সেই বাণী

 

(৬৭)

ঈশ্বর-স্মরণে যে প্রশ্বাস সেকটিই প্রশ্বাস শুধু, তুমি জানো

বন্ধুর সন্ধানে ছুটোছুটিটুকু শুধু হিসেবে যে ছুট, তুমি জানো

যে সময় বন্ধুর বিহনে ব্যতীত হল সে সময় বিষ, তুমি জানো

বলছি যে দিলদার  কথাটি তোমায় এই কথাটি সত্য, তুমি জানো

 

(৬৮)

বুদ্ধিভ্রষ্টটাকে বোঝাও কেউ যে কেন পথ ভুলে চারদিকে ঘোরে

প্রতিটি বস্তু মাঝে রয়েছে সে, আয় দ্যাখ্‌, জগৎটা তুলেছে যে গড়ে

নিজের আত্মা থেকে দিয়েছে আত্মা এই নিখিল বিশ্বচরাচরে

সেই তাকে পায় দিলদার  যাকে দেখে ভোগসুখের দেওতা যায় ডরে

 

(৬৯)

শেষের দিনগুলোর চাষ এই দুনিয়াটা যতখানি পারো চষে ফ্যালো

জোতটায় বীজ রুয়ে শস্যটস্য কেটে নিজের অভাব মুছে ফ্যালো

পথের রসদে যত সম্ভব ভরে তুমি গাঠরি আপন কাঁধে তোলো

বেঁচে নাও যদি মন প্রাণ খুলে দিলদার  জীবনকালেই, হবে ভালো

 

(৭০)

ভাবো নিজ মনে তুমি দিলদার ঈশ্বর শুভার্থে দিয়েছে যে দান

দেখার জন্য চোখ দিয়েছে এবং ডাক সত্যের শুনে নিতে কান

মুখের ভিতরে জিভ দিয়েছে বুঝতে যত রকমের মজাদার স্বাদ

এসবেরও পর যদি কৃতজ্ঞ নও তবে শরম খেয়েছ গুলে চাঁদ

(৭১)

দ্বিধাহীন ভালোবাসে একাগ্রে যে প্রেমিক সেই পায় ইষ্ট আপন

শরীর ও মনটাকে মেরে করে ধুলোমাটি তবে পায় ইষ্ট আপন

ঈর্ষা ও দ্বেষ থেকে মুক্ত করে হৃদয় তবে পায় ইষ্ট আপন

বেশভূষা ছিঁড়ে উন্মাদ হয় দিলদার  তবে পায় ইষ্ট আপন

 

(৭২)

দিনগুলো বেখবর কাটলো পেরিয়ে গেল এতগুলো বছর ও মাস

যৌবন গেল, এল প্রবীণতা, বাকি শুধু ব্যথার গোঙানি নিশ্বাস

খোদার হুকুমগুলো হল না পালন করা পাপ হল সীমার অধিক

কোথাও শরণ নেই দিলদার  ঈশ্বর না দ্যান কৃপার যদি ভিখ

 

(৭৩)

রয়েছে সবাই, তুমি চোখ খুলে দেখ, ঘেরাবন্দিতে একই জাতের

এর আখরে জ্যোতিময় হল দিন আর এ হল তামস রাতের

এ রাজা এ আপামরপ্রজা ত্রিশক্তি রাণী ও চেড়ির আছে

ভাবো দিলদার  তবে কোত্থেকে ভিন্‌জাত তোমার আমার মাঝে হয়

 

(৭৪)

ঈশ্বরীয় ন্যায়ের মুলুকটা যেতে ভাই বিপদ রয়েছে বিস্তর

যেখানে সেখানে ফোটে কলি আর বৃষ্টির ফোঁটা পাবে পথের ওপর

ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে জনপদ দিলদার  চিঠি ডাকে হেথায় হোথায়

পথপ্রদর্শকের সঙ্গ না নিলে হবে বলির পাঁঠাটি সব ঠাঁয়

 

(৭৫)

মন বাঁধা দিওনা এ দুনিয়ায় এর কাজকর্মের অপরূপ ধাত

মিলিত হৃদয়গুলি ছিন্ন ভিন্ন করে যেন কাঠ কাটছে করাত

যারা এল প্রস্থানপথে চলে গেল সবে এ জগৎ প্রভ নদীর

জ্ঞানী সেদিলদার  সময় থাকতে ভেসে বিচরণে খুঁজে নিল তীর

 

(৭৬)

কাঁহাতক দিলদার  সবাইকে আপনার দুঃখ ও বেদনা শোনাবে

নিজের কষ্টগুলি মল্লার রাগে তুমি কতদূর গেয়ে গেয়ে যাবে

এই বসতির অলিগলিতে পাড়ায় শুধু কেঁদে কেঁদে রাতটা খোয়াবে

এ নগর ছেড়ে যাবে ধরবে যাত্রাপথ সুখের সোয়াদ তুমি পাবে

 

(৭৭)

কাকে বা বলবে কিছু কারটা শুনবে বসে, আছে কার স্থিরতা এখানে

এ তো শুধু পাথরের তৈরি সরাইখানা যেতে হবে সবার বিহানে

সফরের পথটার জন্য যা কিছু দিলদার  তোর রয়েছে করার

রাতেই করে নে সব নয়তো আগামিকাল অনুতাপটাই হবে সার

 

(৭৮)

দেখনাই ছেঁড়া আলখাল্লা চাপিয়ে তিনি সাজলেন গ্রামের প্রবীণ

ধর্মোপদেশ দিয়ে সবাইকে ফাঁসালেন আপনার জালে যেন মীন

জোটালেন দৌলত, নফরচাকর আর ত্যাগ দেখালেন খেয়ে শুখা

করলেন না কিছুই নিজমনে দিলদার দিবস-শেষের লেখাজোখা

 

(৭৯)

আপনাতে মোহিত যে তার কাছে বোসো না ক বিধাতার ন্যায়ের সে পর

বুদ্ধিমানের তরে সহবৎ তার শুধু ক্ষোভ আর ক্রোধের বিবর

অন্ধ সে মসনদে বসে নিজ ধারণার অহংএ রয়েছে অবিচল

পন্ডিত বিদ্বান সবাইকে দিলদার নির্বোধ ভাবে সে পাগল

 

(৮০)

ভরা বসন্ত তোর ফুলবনে যত আজ হয়েছে মালিনী উত্তাল

যা কিছু ফুটেছে কলি তুলে নে যেমন পাস এসময় থাকবে না কাল

মেনে নে দিলদারের  কথাটা নয়তো যেই ঢুকবে পর্ণমোচি হাওয়া

কাঁদতে থাকবি বসে, একটি পলের তরে অবসর হবে নাকো পাওয়া

 

(৮১)

ধন আর দাসকুল জোটানোর চেষ্টায় কেন তুই সময় খোয়াস

যে কটি আকাশ সব ম্লান বলে কেন মুখ লুকিয়ে করিস হাহুতাশ

কৃতজ্ঞ যে মানুষ ভাগ্যের প্রতি সে তো পা ছড়িয়ে আরামে ঘুমোয়

যা কিছু রয়েছে দিলদার  তোর ললাটের লিখনে, জীবনে তাই হয়

 

(৮২)

প্রাসাদ গড়ল উঁচু আর তার চারপাশে তুলে দিল পাঁচিলের ঘেরা

বালিশ লাগিয়ে মসনদে বসে জানালো সে এ আমার নিজস্ব ডেরা

জানলো না শেষ বিচারের সেনাদল এসে বসিয়েছে শিবির শিয়রে

যে কোনো সময় তাকে নিয়ে যাবে দিলদার, ডেরা হয় আপন কি করে

 

(৮৩)

প্রেমিক শুধালো নিজ কায়াকে, বলো মিলন কিভাবে প্রিয়ার সাথে হবে

বলল সে কায়া, আগে হৃদয় নিভিয়ে জাগো মর্ত্যের নিত্যানুভবে

এই আর ওই এর কলহের পথ ছাড়ো একাগ্র হয়ে তাঁকে স্মরো

পাবে দিলদার  তুমি নিজের মনমোহন এইভাবে প্রয়াস তো করো

 

(৮৪)

কেন সে অহঙ্কারে দাপিয়ে বেড়ায় নিজ ধনসম্পদসুখে লীন

কেন তাকে রেখেছিস দূরে দূরে ঈশ্বরচরণসাধনে মতিহীন

যেই দিন বিযুক্ত নিজের দেশটি থেকে হবে এ মানুষ দিলদার

কিছুই যাবে না নিয়ে সঙ্গে নিছক যাবে কাফন শরীর ঢাকবার

 

(৮৫)

এবার করেছি পান প্রেমের পেয়ালা তার যত কিছু হওয়ার তা হোক

এবার নিজ হৃদয় বশ্য করেছি তার যত কিছু হওয়ার তা হোক

এবার করেছি সাঁঝ দিনের প্রহরগুলি যত কিছু হওয়ার তা হোক

এবার করেছি সব কাজগুলি দিলদার  যত কিছু হওয়ার তা হোক

 

(৮৬)

জাগতিক কামনাবাসনাগুলি দিলদার  নিছক ফক্কিকারি জানো

আকাশটা রয়েছে যে মাথার ওপর খাড়া মাকড়সা বহুত পুরোনো

শিকড় খুঁজতে চেয়ে বিধাতার সৃষ্টির ঝড় তোলে প্রলয়ঙ্কর

আগুন লাগিয়ে দেয় ভয়াবহ লেলিহান গিলে খায় যেন কাঠখড়

(৮৭)

মাটির মহলটা যে দাঁড়িয়ে রয়েছে এর ভরসা কি, টিঁকবে কদিন

খাঁচার ভিতরে যেন বন্দী হয়েছে এসে পাখি নয় বাতাস অচিন

থাকাটাই দুষ্কর তার পক্ষে বরং যাওয়াটা আজব কিছু নয়

ধাঁধাটা বুঝতে পারে যে, তার চতুরালি দিলদার জানো কম নয়

 

(৮৮)

মধুতে গরল জানো রম্যদ্রব্য সনে সহবৎ ফকিরকুলের

সম্পদে অভিলাষ, খোয়ানো তাদের তরে বৎসর বাকি বয়সের

নামকে ওয়াস্তে ফকিরীর চেয়ে ভালো হওয়া দুনিয়াদারীর একজন

সে কাজটাই বা কেন দিলদার  যার শেষ ফল শুধু অশ্রুমোচন

 

(৮৯)

কিসের শোভার এই খেলা দশ দুয়োরের প্রাসাদের অন্দরে চলে

এক নিমেষের তরে কেই বা পশেছে এই নদীটার গহিন অতলে

যুঁই আর বেলফুল ফুটিয়ে চলেছে এই বাগিচার মাটিতে সে কে

কোন সাহেবের মেলা বোঝো দেখি দিলদার  এসব ভেল্কিগুলো দেখে

 

(৯০)

তস্‌বির মালা হাতে গলায় কুর্তা আর মাথায় বাগিয়ে টুপিখানি

ওই দেখ বয়স্য নমস্য আসছেন ভিতরে ধূর্ত্ত শয়তানি

বাইরে দেখাচ্ছেন দুনিয়ার মায়া থেকে রয়েছেন তিনি কত দূরে

ঘুরছেন দুনিয়ার মায়া মোহে দিলদার  নিজের আঁতটি টেনে জুড়ে

 

(৯১)

চোখ যদি থাকে তোর দ্যাখ্‌ সব জিনিষের ভিতরে তোকেই দেখা যাচ্ছে

একটু ভাবলে তুই বুঝবি প্রেমিক তোর যখন যেমন হাল জানছে

যা কিছু ঘটুক তার চেয়ে বেশি সমর্থ পবিত্র সব থেকে সেই তো

মোমিনে কাফেরে নেই ভেদ দিলদার  এক সেই মহাবিশ্বের সত্য

 

(৯২)

স্রষ্টাকে দেখ নিজ সৃষ্টিতে এসেছেন কত শত রূপে কতবার

কোথাও আদম আর ইভ হয়েছেন, ঝড়ে ঘিরেছেন নৌকো নোয়ার

কোথাও মোজেস আর ফারাও, কোথাও হয়ে কারুণের ধনসম্পদ

দিলদার পেয়ে গেছে দিলদার  তার প্রতি বস্তুর ভিতরে আদৎ

 

(৯৩)

সময় যেমন হোক অর্থ দ্রব্য ধরে রাখা থেকে বেশি ভালো দান

মেথর বিচারপতি হল এই সংসারে তারও ওই দানেই নিদান

মোমিন কাফের হোক মেথর হোক বা কৈবর্ত কথিত হোক জাতে

এ দুনিয়া দিলদার  সবার জন্য বেশি ভালো মহাবিশ্বসভাতে

 

(৯৪)

যেই পথে তপস্বী আপনার হাতিটিকে দাগ দিয়ে ছেড়ে এসেছিস

সে পথটি পথ নয় বোঝ যে এখনো তুই ভুলের পথিক বেহদিশ

যা কিছু দেখিস অভিব্যক্ত স্পষ্ট সে তো দিলদার  নিছক ভূষণ

একেশ্বরের এই বাগিচায় দ্যাখ্‌ কত ফুলে তাঁর হয়েছে স্ফুটন

 

(৯৫)

জগৎ সংসারের রীতিটা যা দেখলাম দিলদার  সত্যি আজব

মিথ্যেবাদীর ইজ্জৎ সব ঠাঁয়ে আছে সাচ্চা যে রয়েছে নীরব

ভালোর কদর নেই একটুও সবকিছু অথচ পাচ্ছে তঞ্চক

জ্ঞানী যে ঈশ্বরের তাকে নিকৃষ্ট বলে দুষে সব এ তো ভয়ানক

 

(৯৬)

কেউ এল কেউ গেল কারোর যাওয়ার পালা হয়তো বা এসেছে এখন

দুনিয়ার সব কাজ তেমনি চলছে ঠিক চলছিল অতীতে যেমন

পূণ্য কর্মে তবে দেরি কেন, কেনই বা প্রাসাদ গড়ার প্রস্তুতি

রাজ বা সর্দারির লালসা তোমার জেনো দিলদার  নিষ্ফল অতি

 

(৯৭)

বয়স সত্তরের বেশি হল আর বলো কিইবা রয়েছে করণীয়

আলস্যে বৃথা গেল দিলদার  দিনগুলো এবার মৃত্যু বরণীয়

আর তো হওয়ার নেই কিছু শুধু দিনগত পাপক্ষয় রইলো জীবনে

মুক্তি চাইনা আমি আল্লার দয়া ছাড়া আর কোনো পথের ছলনে

 

(৯৮)

হামেশা নালিশ মোদো লম্পটদের নামে ভালো নয় হে তপোনিষ্ঠ

এ পথে চলেছে যারা কোনোদিন তারা খুঁজে পাবেনা আপন অন্বিষ্ট

ঘ্যাঁঘানো চুগলিখোরদের পরে স্রষ্টার নজর নিচু, ভাবে আপদ

নালিশ না করা কোনো রকমের দিলদার  সাধনে থাকার সেরা পথ

 

(৯৯)

কেন বসে রয়েছিস বোকার মত এমন আরায় কি তোর ভিটেবাড়ি

বুদ্ধিভ্রংশ হল কারোর কথায়, মতি চুলোয় দিয়েছে নাকি পাড়ি

আরা নামে শহরটা জেনে তুই দিলদার  ভাবিস এখানে বাড়ি তোর

তাড়াতাড়ি খোঁজ কর নিজের বাড়িঘরের এখনো রয়েছে বেশ ভোর

 

(১০০)

কাদের আশায় থাকো এই ভরা দুনিয়ায় কে তোমার আপনার জন

এই যে সৃষ্টি এর নানা রং রূপ যেন খোলা চোখে দেখছো স্বপন

বরং তোমার তরে ভালো হবে দিলদার  ঈশ্বর-পথের সাধন

যা আছে ভবিষ্যতে বাকি সেই ভাগে শুধু রয়েছে রোদন হুতাশন

 

(১০১)

প্রতিটি দ্রব্যে সেই দ্রব্যকান্তি হয়ে রয়েছে তোমার প্রিয় দেখ

কেমন চেহারা সব সাজিয়েছে লাবণ্যে, দিয়ে নিজ কিরণের রেখ

মিশে আছে সে তোমার মাংসে ও চামড়ায় ধমনীতে আর কোশিকায়

এরও পরে দিলদার  মনে ভাবো বঞ্চিত তুমি তার প্রণয় সুধায়

 

(১০২)

কিছুই আশ্চর্য নয় তার কাছে ভালোবাসে যে শক্তি বিধাতার

কষ্ট বিপত্তির প্রহারে কাতর হয়ে আছে যে প্রেমিক দিলদার

একটি আর্তনাদে ছিঁড়ে দিতে পারে তারা পৃথিবী ও আকাশের পট

একটি দৃষ্টি হেনে সমাধান করে দেয় রাজা ও ভিখুর সংকট

 

(১০৩)

সিংহ খোদার, আলী মহাত্মা, মানবের দানবেরো পথের দিশারী

তোরণ জ্ঞানের মদিনার, তিনি পয়গম্বরের উত্তরাধিকারী

জোহরার স্বামী তিনি মহানুভব, হলেন কওসরেরও তিনি সাকী

শোনো তুমি দিলদার  এ অধম মহাপ্রাণ সে আলী হায়দারের দাসী

 

(১০৪)

কত শত রূপে করে দেখিয়েছে নিসর্গ নির্মাণশক্তি যে স্রষ্টা

মাটি থেকে আদমকে জন্ম দিয়ে ইভের লাগসই দিয়েছে যে জোড়টা

ওই দুজনকে দিয়ে সৃজিয়ে মানবলোক নানারঙা বসিয়েছে রাস্তা

সব কিছু মাটি দিয়ে গড়ে দিলদার  ফের মাটি হতে করেছে ব্যবস্থা

 

(১০৫)

ধর্মশাস্ত্রপথ আকাঙ্খী মানুষের যাত্রার লক্ষ্য প্রথম

ওই পথে পৌঁছোতে আত্মশুদ্ধিহিতে নেওয়া ভালো পয়লা কদম

শেখা ভালো ফের পথদিশারীর কাছে সৎপথে চলবার অভ্যাস

এসবের পর যাবে দিলদার  যেই পথে সাচ্চা যথার্থের বাস

 

(১০৬)

মুঠোয় রয়েছে যার ধনসম্পদ, সম্মান পায় প্রত্যেক স্থানে

ধনে বলী হলেই সে সবচেয়ে ভালো, জাতে স্থান হোক নিচের সোপানে

কোনোই কদর নেই তার সম্পদহীন কারো হোক না সে নবীর তনয়

যা কিছু রয়েছে এই দুনিয়ায় দিলদার  সব কিছু ধনবলে হয়

 

(১০৭)

সততা দরবেশের কেন মিছে নিন্দিস অশিষ্ট তুই কটুভাষে

দারিদ্রের দ্রাক্ষারসটা প্রবাদ হল দরবেশ প্রতাপ প্রকাশে

ঈশ্বর-যাথার্থ্যে প্রেমজ অগ্নিশিখা দরবেশ ধরে তার প্রাণে

দিলদার  মাটি আর আকাশ রয়েছে দরবেশের হুকুমে ফরমানে

 

(১০৮)

ফকিরেরা আছে বলে কেন্দ্র আকাশ আর পৃথিবীর রয়েছে কায়েম

সৌভাগ্যে আশীর্বাদে ফকিরকুলের জগৎ ব্যাপারে আছে ক্ষেম

ফকিরজনের এক কথায় ভিক্ষুকের হতে পারে রাজায় বদল

শ্রেষ্ঠীজনেরও হয় কল্যাণ দিলদার  আছে বলে ফকিরের দল

 

(১০৯)

জেনেছে ধর্মোপদেশক কবে দিলদার  ঈশ্বরপ্রেমিকের হাল

একটি আর্তনাদে বিদীর্ণ করে চাঁদ যদি হয় তেমন খেয়াল

পৃথিবী ও আকাশের পরতে পরতে যত অন্যায় করে পরাভূত

তাহলে কিসের এত শক্তি দেখাও উপদেশকের বাণীসম্ভূত

 

(১১০)

জীবনে ঈশ্বরের ইশারা জরুরী বেশি ফকিরের, রাজপাট নয়

মাটিতে উপবেশন তার তরে বিদেশের সিংহাসনটা করা জয়

অন্যায়ে লোকমত থাকলেও ন্যায়পথে খাড়া থাকা তার অর্চনা

জাগতিক আকাঙ্খা পোষা দিলদার  তার অশুচিলালসা, নীচমনা

 

(১১১)

ক্ষমতা হাসিল করে কক্ষনো করিসনা ভুলেও কারো অকল্যাণ

যদি কিছু করবার শক্তি রাখিস তবে করে নে সবার কল্যাণ

যত মানুষের কাছে পৌঁছোনো সম্ভব ভালো কর তাদের সবার

এই যে উপার্জন বরং এটাই ভালো তোর খতিয়ানে দিলদার

 

(১১২)

যে মানুষ চিনে নিল জাতটা নিজের, নিল চিনে সে ঈশ্বরের জাত

সংঘের মাঝে যেন নিজের সুরক্ষার সহজেই পেয়ে গেল স্বাদ

যথার্থ বাস্তব জানলো সে সস্তায় অমূল্য আলো পেল আঁখি

চলতি যুগের ভয় একটুও দিলদার  রইল না তার মনে বাকি

 

(১১৩)

সঙ্গে না থাকে যদি হৃদয় ঈশ্বরের কি বা থাকে তীর্থভূমেতে

দিলদার  থাকে যদি কৃপণতা হৃদিমাঝে কি বা থাকে ধনে দৌলতে

না হয় তোর কারণে ভালো যদি কারো তবে কি হবে এ নফরচাকরে

বন্ধুর প্রতি ভালোবাসাটা থাকুক, আর কি বা আছে প্রতিমার ঘরে

 

(১১৪)

পৃথিবীর মেঝে আর আকাশের গতি দেখ কোন দিকে গিয়েছে ছড়িয়ে

সুর্য আর চাঁদের চলন এর ওপর রয়েছে কতটা ভার দিয়ে

সবকিছু দিলদার  এ আমার দুখজাগানিয়া বসে রচনা করেছে

দেউল বা কাবা বলো আমার বঁধুয়া তার রূপ দিয়ে ভরিয়ে রেখেছে

 

(১১৫)

কেন বসে রয়েছিস মিছে যেন হুঁশ নেই আগল পাগল ওরে মেয়ে

পিয়ার রঙেতে নিজ শাড়ি ও কাঁচুলি তুই ক্ষণেকের তরে নে রাঙিয়ে

সখীদের সাথে নিয়ে পিয়ার সঙ্গে তুই খেলে নে দোলের মত দোল

হাসিঠাট্টায় তাকে ভুলিয়ে ভালিয়ে হাতে ফোটা তার হৃদয়ের বোল

 

(১১৬)

কোথায় সে সহবৎ যাতে নেই দুখজাগানিয়া সেই বন্ধু আমার

কোথায় রয়েছে সেই সেনাদল যার সেনাপতি নয় বন্ধু আমার

---------------------------------------

১। জহ্‌হাকঃ ইরাণের অত্যাচারী শাসক

২। ফরীদুঁঃ জহ্‌হাককে গ্রেপ্তার করেছিল

৩। দারাঃ আলেকজান্ডারের কাছে পরাজিত হয়েছিল

৪। তুর পাহাড়ঃ মোজেস যেখানে ঈশ্বরের বাণী পাথরে খোদাই পেয়েছিলেন

৫। শাহ আদ্‌হমঃ ইব্রাহিম-বিন-আদ্‌হম, এক সুফী সন্ত

৬। অলস্তঃ অর্থে অলস্ত বিরবিক্কম কাল্‌বলা (অবশ্যই! তুইই আমাদের ঈশ্বর)

৭। শাদ্দাদঃ অত্যাচারী রাজা যে নিজেকে ঈশ্বর বলত কিন্তু নিজের কৃত্রিম স্বর্গে প্রবেশ করতে গিয়ে মরেছিল

৮। কারুণঃ এক অত্যন্ত ধনবান কিন্তু কৃপণ ব্যক্তি যে তার ধনের সাথে পৃথিবীতে সমাহিত হয়েছিল

৯। আরাঃ বিহারের একটি শহর

 ----------------------

  

 (‘দিলদারের দোহাবলী’ পাটনার খুদাবখ্‌শ ওরিয়েন্টাল পাব্লিক লাইব্রেরী থেকে প্রকাশিত এবং কাজী আব্দুল ওয়দূদ কর্তৃক সম্পাদিত পুস্তিকা ‘দিলদার কে দোহে’ নামক পুস্তিকা থেকে কিছু বাংলা অনুবাদের প্রয়াস। পুস্তিকাটি এখন অনলাইনে https://www.rekhta.org/ ebooks/dildar-ke-dohey-ebooks?lang=hi তে গিয়ে পড়তে পারেন। নিচের সংক্ষিপ্ত কবিপরিচিতি উক্ত পুস্তিকার ভূমিকা এবং লাইব্রেরীর তৎকালীন নির্দেশক বেদার সাহেব লিখিত।)

 

দুটো কথা

চার চার লাইনের এই কবিতাগুলোকে কাজী আব্দুল ওয়দূদ সাহেব ‘কিতআত’ নামে অভিহিত করেছেন। তিনিই এই কবিতাগুলোর প্রথম সম্পাদক ছিলেন। এদের ‘দোহা’ বলাও মুশকিল কেননা এগুলো ‘চৌহা’। ‘চৌপাই’ও বলা যায়না কেননা চৌপাইয়ের টেকনিক্যাল পরিভাষায় এদের ধরা যায়না। আবার ‘কিতআত’ও বলা যায়না কেননা হিন্দীতে ওই নামটা অপ্রচলিত।  

দোহা না হয়েও এগুলো দোহার ছন্দের কাছাকাছি। দোহার যে অটুট সম্পর্ক সুফী সন্তদের সাথে গড়ে উঠেছিল এই কিতআতগুলি সেই পরম্পরা নিয়ে চলছে। তাই দুই লাইনের জায়গায় চার লাইনের হওয়া সত্ত্বেও এদের আমরা দোহা নামে অভিহিত করলাম।

এই দোহাবলীর লেখক ‘দিলদার’ ভোজপুর (আরা) নিবাসী ছিলেন। তিনি শাহ মুজীবুল্লার খাঁটি অনুযায়ী ছিলেন। শাহ মুজিবুল্লার প্রতি তাঁর ভক্তি দোহা সংখ্যা ১-৪, ৩০ এবং ৫২ থেকে বোঝা যায়।

দিলদার ঈশ্বর ভক্তির প্রচারক ছিলেন সেটা দোহা সংখ্যা ১৬ এবং ৩৯এ স্পষ্ট। তেমনই দোহা সংখ্যা ৬৩ এবং ১০০তে তিনি এই সংসারের মায়ামোহকে ভিত্তিহীন বলেছেন।

তাঁর কাছে বিশ্বসংসারের সমস্ত মানুষ এক সমান, বিভিন্ন জাতি ও ধর্মের ভাগবাঁটোয়ারা কোনো অর্থ রাখেনা। তিনি বলেনঃ –

এই যে চেহারাগুলি ভিন্ন ভিন্ন সব একই মায়েতে জন্মায়

একই পাত্র থেকে ক্ষুধার আনাজপানি সক্কলে মিলে এরা খায়

কেউ যে মুসলমান কেউ যে ইহুদি আর কেউ যে হিন্দু নাম পায়

একেশ্বরকে এরা বহুত্বে ভাগ করে দিলদার রাস্তা হারায়

দিলদার সোজা কথা সহজ ভাষায় বলেন, বাই বুঝতে পারে এমন উদাহরণ দেন। যেমন উনি বলেনঃ –

ক্ষেতটাকে হৃদয়ের প্রেমের লাঙলে চষে করূণার চৌহদ্দি আঁক্‌

আগাছা বহুত্বের উপড়ে সরিয়ে কর একেশ্বরের গাঢ় পাঁক

বীজ রুয়ে স্মরণের সেচ কর্‌ দিলদার প্রেমোন্মাদের ঢেলে জল

কোনো বাধা আসবে না কৃষিকাজে, এই পথে আখেরে জোটাবি ভালো ফল

 

দিলদারের দোহায় স্থানে স্থানে হিন্দী পিঙ্গল# বিদ্যার অনুসরণ পাওয়া যায়, যা থেকে ওনার জ্ঞানের গভীরতার পরিচয় পাওয়া যায়।

 

কাজী আব্দুল ওয়দূদ সাহেব লিখেছেন যে এই পাণ্ডুলিপি হাকীম নাসিরুদ্দীন, রাজা প্যারেলাল ‘উলফতী’র বংশোদ্ভূত কারোর কাছ থেকে পেয়েছিলেন। এখন এই পাণ্ডুলিপি জায়সওয়াল ইন্সটিট্যুট পাটনার সম্পত্তি এবং প্রফেসর হাসান আস্কারী কাজী সাহেবকে এর বিষয়ে জানিয়েছিলেন।

১৯৫৯ সালে উর্দু রিসার্চ ইন্সটিট্যুটের উদ্বোধনের সময় কাজী সাহেব এই পাণ্ডুলিপি প্রথম উর্দু লিপিতে প্রকাশিত করেন এবং আমাদের যুগের এক বড় সুফী জাকির সাহেবকে উৎসর্গ করেন।

এই কবিতা হিন্দুস্তানী ভাষায়। শুধু উর্দু লিপি জানা পাঠকদের মধ্যেই কেন সীমিত থাকবে, এই ভেবে হিন্দী লিপিতেও এই কবিতাগুলো প্রকাশ করা হল।

বিশেষ করে এই কারণে যে সুফী সন্তরা সবাইকার সম্পদ। সাহিত্যকে হিন্দী আর উর্দুতে ভাগ করা হল, হৃদয়গুলো হিন্দু আর মুসলমানে ভাগ করা হল কিন্তু, না সুফী সন্তদের ভাগ করা যায়, না এঁদের ভাবধারাটিকে ভাগ করা যায়। পড়ে দেখুন তো, এই কবিতাগুলো আমার, আপনার, সবাইকার জন্য কিনা!

- বেদার

 _______________________________

 

#পিঙ্গল হিন্দী ক্ষেত্রের একটি লৌকিক ছন্দ-ভাষার নাম। কথিত আছে যে ঋষি পিঙ্গল পাণিনির অনুজ ছিলেন এবং ছন্দশাস্ত্রের আদি রচয়িতা ছিলেন। পিঙ্গল রাজস্থানের কয়েকটি ভাষার শিকড়-ভাষার নামও বটে। বিদ্বানেরা বলেন যে চারণ-পরম্পরায় শ্রেষ্ঠ কবিতাবলী ওই ভাষাগুলোতেই রচিত হয়েছে। - অনুবাদক