ভাবো তো! মরে যেতাম যে!
সে বললো নিজেকে,
লজ্জিত,
এক আঁটি হাড় টেনে মানুষের উচ্চতা খাড়া করায়
যেন হৃদয়ের শাপ ছিল।
যেন মাটিতে ঝরে পড়া শব্দকেও স্পর্শ
নিষিদ্ধ হয়েছিল হঠাৎ। তাছাড়া ভয় ছিল
নিজের শরীরটাকে ধাতব চাপের নিচে পাওয়ারও।
শিরা-উপশিরা অব্দি অস্বস্তিকর!
বরফ-কাটিয়ের কুড়ুলের মত আটকে
ট্রামটা দাঁড়িয়েছিল তার ওপর
আর গাড়ীটার যা কিছু অবশিষ্ট,
দেখতে হয়েছিল এক উত্যক্ত পরীর নকল দাঁতে
আধখাওয়া
বিদঘুটে লেড়ে বিস্কুটের মতন।
গাঢ় কিছু একটা ঝরছিল ট্রামলাইনে,
নজরকাড়া বিবর্ণ এক হাওয়া
তখনো-উষ্ণ একটি বইয়ের
পাতা ওল্টাচ্ছিল।
মূক-বধির সহানুভূতি নিয়ে
বৃত্তাকারে দাঁড়িয়েছিল লোকজন,
নাটকটির শেষ অঙ্কের অপেক্ষায়,
যেন পোকারা বেরুবে মুন্ডুকাটা মুর্গীর
ডানার নিচ থেকে।
দূর থেকে কাছে আসছিল সাইরেনের আওয়াজ,
জমে যাচ্ছিল মিশে দিনটির,
মুহূর্তটির অভাগা বাতানুকূলতায়।
আবহমন্ডলের মর্যাদা যেটুকু অবশিষ্ট ছিল,
ঘাড়ে শিশির হয়ে ঝরছিল।
শিরা-উপশিরা অব্দি অস্বস্তিকর!
না, ধন্যবাদ, সে বলল, আমি অপেক্ষা করব;
কেননা নির্বাক একটি ছায়াছবি
শুরু হয়ে গিয়েছিল
সাবটাইটেলহীন, রঙহীন, উত্তরহীন।
তাহলে কী হবে সেই চুম্বকীয় একমেরু কণাগুলোর?
মহাবিশ্বের আদিবিস্ফোরণের কয়েক মুহূর্তের
মধ্যে ছড়িয়ে পড়া?
সময়-প্রবাহের
অপরিবর্তনীয়তাকে লঙ্ঘন করা প্রোটনগুলো?
আর ছায়াপথের কাঁধের নিচের সেই দৈত্যাকার
আণবিক মেঘগুলোর
যাতে জন্ম নিচ্ছে নক্ষত্রদের ভ্রূণ?
কী হবে
সুদখোর শক্তিধ্বংসকগুলোকে ক্ষয় করে অগভীর প্রাগৈতিহাসিক
জলাশয়ে জমা হতে
থাকা
জৈব-অম্লগুলোর প্রথম প্রজন্মের?
কী হবে উবে যাওয়া সমুদ্রের বুকে গেঁথে থাকা
প্রাক-ইগলের নখের মত শুকনো তারামাছগুলোর?
কী হবে পাখিদের, সূর্যের হেলান দেখে শুরু
করা এবং
যৌন-প্রাণরসের গর্জনে সাড়া দেওয়া মরণমুখী
পরিযায়িতার?
কী হবে খাঁচাবন্দী আধপাগল ওরাংউটাংটার
কিচ্ছু করার নেই বলে যে শুধু বমি করে?
কী হবে হাজার বছর ধরে গাইতে শেখা
ইঁদুরগুলোর
আর মেসোপোটামিয়ার রাণিসুন্দরীর জংঘার মত এক
পায়ে
দাঁড়িয়ে টাল সামলানো
ব্যাংগুলোর?
কী হবে কবিতার, এত যে বিশৃংখল এক উদ্যম
যা শাসকদের পেঁচিয়ে দেয় আর বাড়িয়ে দেয়
চোখের টেরা
বিদ্যালয় পরিদর্শকদের?
এবং লিউকেমিয়া ওয়ার্ডের সেই ছোট্টো মেয়েটি
যে পায়খানায় বসে দেখাতে চেষ্টা করেছিল তার
ডাক্তারের গোঁফটি কেমন কিন্তু
সরু কাঠির মত হাত পিছলে গেল শৌচপাত্র থেকে,
সে পড়ে গেল আর তাই
দেখাতে চেষ্টা করে গেল বার বার – তার কী হবে?
এবং দুর্বল-হাঁটু সেই বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক
যে প্রায়-ঠিক মহাবিশ্বটা বুঝত কিন্তু
ভুলে গিয়েছিল যাতায়াতের নিয়মাবলী – তার কী হবে?
না, ধন্যবাদ, সে উর্দিধারী কাউকে বলল,
আমার কিছু চাইনা। কাগজপত্র সব পকেটেই আছে
আমার
কিন্তু পৌঁছোচ্ছেনা হাতটা।
এবং সে একটু হাসতে চেষ্টা করল জটিল সৃষ্টির
এই
অস্বস্তিকর অবস্থায়।
এ সব আমারই দোষ, সে বলল,
আপনাদের ধন্যবাদ।
এবং তারপর
সে মরে গেল।
No comments:
Post a Comment