Friday, December 29, 2023

চলছেই

চলছেই। 

            থেমে আছে এমন

অশথের দুপুরও বলবে না। 

প্রতিদিনই

দেশটা,

রাজধানীতে, জেলায়,

মহকুমায়, তহশীলে,

হাত, মাথা বা পায়ের তাগিদে।

চোখের তাগিদেও, 

                      অবশ্যই। 

অগুনতি যুথবদ্ধ পথচলা

হ্রস্ব কিম্বা দীর্ঘ কোনো কোনোটির

সাড়া

গুহাচিত্রে, হোমাগ্নিতে,

অন্ধকূপে,

           পাগলা হাতির গর্জনে।


আমের বোলে এবছরেও

ভারি হচ্ছে হিন্দের কলম।

 

বিদর্ভের

গোয়ারি মানুষেরা

যে পথ বেয়ে বিধানসভার 

সামনে এসেছিল

সে পথটি কি প্রহেলিকা?

শাসনের তন্ত্রটি,

শক্ত মোটা পরতের ভিতরে পরত,

তার ভিতরে গ্রন্থিপিন্ড, জীবিত ঘিন্‌ঘিনে।

মাছি ঘুরছে, মরছে,

জমছে বহুশতক ধরে।


৮.৩.১৯৯৫




Tuesday, December 26, 2023

জোম্বি

কখনো বেশ ভৌতিক বা যাকে বলে ওই
                   জোম্বি, তাই মনে হয়।
এক পরিচিতের জন্মদিনের কথা
এখুনি মনে করিয়ে দিল ফেসবুক; তার
প্রোফাইলে জন্মদিন লিখে পোস্ট করতেই
দেখি ধীরে চলছে নেটওয়ার্ক
                 ফাইভ-জির বাজার-চাপ
পোস্ট হল কী? সোজা ওর
প্রোফাইলে আঙুল ছুঁইয়ে পৌঁছোই।
নাঃ, পোস্ট এখনো ওঠেনি টাইমলাইনে আর
তখনি দেখি সেখানে পিন্ড্‌ পোস্ট
তার ছেলে বা মেয়ে কেউ করেছে
বাবার মারা যাওয়ার খবর
নিচে অনেক অনেক আত্মীয়বন্ধুর
শোক ও সমবেদনা বার্তা রিপ, রিপ, রিপ    
তখনি শুধরে গেল নেটওয়ার্কের গতি
লাফিয়ে ওপর থেকে নামল আমার
ও বেশ কয়েকজনের পাঠানো শুভ জন্মদিন!

তার মুখটার দিকে তাকাতেই
আবার মনে হল শুনতে পাচ্ছি
আভাসি দুনিয়ার
আনন্দোচ্ছল বিস্তারের নিচে
কখনো রিপ কখনো লোল শব্দে
বাড়তে থাকা আমাদের অর্দ্ধমরণ!
নাঃ, দোষটা শব্দদুটোর নয়,
আনন্দোচ্ছল বিস্তারেরও নয়,
আভাসি দুনিয়ারও নয়।

আসলে সমস্যাটা হলঃ
আমরা ছোটো হয়ে চলেছি ক্রমাগত, আর
ছোটো জায়গায় মৃত্যু আর জীবন
আধাআধি করে থাকবে না বেশিদিন। 

ব্যাঙ্গালোর
২১.১২.২৩

 


Monday, December 25, 2023

ব্রীজের এপার থেকে ওপার

রাতের আলোয় জেগে আছে জনহীন ধানবাদ আউটার রেলব্রিজ
ইয়ার্ডের দশটা ইঞ্জিনের ধোঁয়া উড়ে যাচ্ছে ব্রিজ ভরে ১৯৭৫এর বৈশাখি আকাশে
রং-ওঠা পাতলুন, ছোটভাইয়ের জামা পরে হেঁটে যাচ্ছেন পূর্ণেন্দু মুখার্জি
ব্রিজের এপার থেকে ওপার …

এশিয়ার হাওয়ায় ফুলে উঠছে তাঁর জামা, তাঁর চুল ওলটপালট,
মাথায় নতুন খবর – আরেকটা দ্বীপ মুক্ত হল,
কালকের দিন আরো উজ্জ্বল হবে – পৃথিবী আরো কিছুটা এগোল
ব্রিজের এপার থেকে ওপার …

এগিয়ে যাচ্ছে রাত –
মাটির নিচে কোথাও ফিউজের আগুন এগোচ্ছে ডিনামাইটের দিকে
পৃথিবীর কয়েক লক্ষ ইঞ্জিনে নতুন কয়লা ভরা হল

এই মুহুর্ত্তে …
হিমালয়ের গর্ভ থেকে আরো কিছুটা প্রাগৈতিহাসিক হিম জল
        বেরিয়ে নেমে আসলো সমতলে বঙ্গোপসাগরের পথে

এই মুহুর্ত্তে শহরের ছোট্ট কোনো ঘরে
তাড়াতাড়ি তৈরি হচ্ছে প্যাম্ফলেটের মুসাবিদা –
কোথাও দশ জন হয়ত মিলিত শপথ নিয়ে চলে গেল দশ দিকে
ব্রিজের এপার থেকে ওপার …


[১৯৭৫ সালের একটা লেখা একটা ছেঁড়া কাগজের বান্ডিলে পেলাম।]




Sunday, December 24, 2023

আরব্ধ শৈশব

ক্রুশের কাঠ বেয়ে আপনার
শেষ রক্তবিন্দু মাটিতে মিশে যাওয়ার অনেক পরে
অত্যাচারিত মানুষের গোপন হৃদয়সভাগুলোয়
আস্তে আস্তে জুটেছিল শৈশবকথা:
সেই রাত, দূরের তারাটি, তিন মহাদেশ থেকে জ্ঞানী,
এমনকি খড়ের পিছনে ভেড়াটির ডাক! 

অত্যাচারিত মানুষেরা তাদের রোজকার 
আত্মপরিচয়ে এঁকেছিল,
তরুণী কন্যার প্রসবক্লান্ত মুখ দেখে চিন্তিত পিতা,
এঁকেছিল প্রশ্নদীর্ণ নৈঃশব্দ –
এ শিশু কি ভালোবাসার? নাকি ...? চুপ! 
গ্রামের বাইরে কুচকাওয়াজ রোমক বাহিনীর! ... 

তারা শুনেছিল, 
কুমারী মায়ের অটল প্রসবসিদ্ধান্তের 
পাশে দাঁড়ানো তাদের পূর্বপুরুষদের
জয়ধ্বনি, "এই তবে ঈশ্বরপুত্র!
             জন্ম হোক! মুক্তির বার্তা ছড়াক দিকে দিকে!" 

বলা হয় নাকি বেথেলহেমের রাস্তায়

ইয়ারদোস্তদের সঙ্গে মৌজে মশগুল

ভিনদেশি ব্যাপারিদের আপনি ত্রাস ছিলেন!

শহরটাকে ঘিনঘিনে বাজার করে তুলছিল তারা ...

সে নিয়েই তো বাধল ঝগড়া!

ঢুকে পড়েছিল, কবজায় করে নিয়েছিল এমনকি

                                              মন্দির চত্বরও!

সেদিন দেখেই ক্ষেপে উঠে

মেরে ভাগালেন তাদের ...

                            আর মিথ্যে লুটের অভিযোগে 

আপনাকে গ্রেপ্তার করল রোমের পুলিস!


গত শতকেই তো ক্রুশে বিদ্ধ হয়েছিল স্পার্টাকাস 
ও তার সঙ্গীদল;
তার একশো বছরে ঈশ্বরপুত্রও! 
বৃষ্টিতে রক্তের রঙ ছাড়ছেই না কিছুতেই! 
মুক্তিরই বার্তা তো! ভিজেও বুঝলে না?

ব্যাঙ্গালোর 
২৫.১২.২৩



Wednesday, December 6, 2023

আলোর বিলম্বিত লয়ে

স্কুলে পড়া বীজগণিতের অঙ্ক যেন
ফেসবুকে আসা ছবিটার
ওই টাটকা সকাল।
মনেও পড়ছে একটু একটু,
এমনকি উত্তরটারও আন্দাজ
                       করতে পারছি কিন্তু
কিভাবে শুরু করব, বুঝছি না।
 
কোথাকার সকাল? কোন মহাদেশের?
জানি না।
গাজারও হতে পারে; বোমা পড়ার
আগে বা পরের অঙ্কটা বদলায় না তাতে।
 
একটা মান নিতে হবে চলকটার, সেটা কী?
শিশিরভেজা ধুলো না আকাশ,
                               নাকি বনস্পতি?
নাকি উৎসারিত সুর, আলোর বিলম্বিত লয়ে,
অথবা এক এক করে বাল্যবন্ধুদের
                             জড়ো হওয়া?
এ্যাই, এ্যাই, উল্টে পড়লি তো রেলিঙে
ওস্তাদি মারতে গিয়ে?
 
পৃথিবীজোড়া আমার শৈশবে
হয়ে উঠতে থাকি মান সে চলকটার।
সকাল, কারো দিদির মুখের মত হয়ে ওঠে।
অঙ্কটা হতে শুরু করে কারোর ছোঁড়া বলে
পায়ে পায়ে ড্রিবলের মত।
 
৫.১২.২৩



Saturday, December 2, 2023

মরুভূমি

তোমার মরুভূমি তোমায় ডাকে?
যেমন আমায় আমার মরুভূমি
ডানা ঝাপটালেই, জনে-বিহনে
দাঁতে কিচকিচ তামস ধুলোর
 
কী ডাক! অথচ অতল নীরব!
 
ঢেউও তুলবেনা সে অভিমানী,
আমরা গেলে, দেবেনা সাড় তবু
অন্তরে ক্ষীণ দ্যুতি, চাপা কূজন
অপরিণতির। ঠাসা ভূস্তরের
স্থির চাউনি, নিজের অপলাপ,
অনেক ব্যাহত জীবনাভিসার,
মরীচিকায় তার ভুতুড়ে ক্ষয়। 

কী জেদ! যেন অসময় ভালো!
 
২১.৫.৯৫    



নৈঃশব্দের কোলাহল

বেনালিম সমুদ্রতীর থেকে মাডগাঁওয়ের জন্য বেরিয়ে শেষরাতে,
অজানা গ্রামে ঢুকেই হঠাৎ চারদিক থেকে এগোন শুরু করেছিল 
একরাশ কুকুরের গর্জন; অন্ধকারে একটাই বাল্ব জ্বলছিল এক 
বারান্দায়, দেখলাম স্কুলবাড়ি – গেট খুলে মেঝেতে গিয়ে বসলাম।
হেডমাস্টারের বন্ধ ঘরে ঘড়ি বেজে উঠল – রাত তিনটে। …

কোঙ্কণি ভাষার সে গ্রাম এ দেশেরই এক অঞ্চল, যে দেশটাকে 
নতুন করে গড়ার কথায়, আমার ভাষার কাটাকুটিতে ভরা কাগজে
সুদূর গঙ্গাতীরের শহরে আমার ছোট ঘরটা ভরিয়ে রেখেছিলাম।
এটাও বাস্তব যে ভাষারই দূরত্বে, ঈষৎ ভয়ও করছিল আমার –
এক্ষুনি বেরিয়ে এল বোধহয় চোর মারতে দু’দশটা দোনলা। …

বোধহয় ভয়টারই জন্য শুনতে পারছিলাম না সেই অদ্ভুত শব্দ, যেন
বাড়ির ভিতসুদ্ধু জালে টানছিল কারা – মাছ আর গুল্মে ভরা জাল।
বস্তুতঃ স্কুলবাড়িটাকেই টানছিল, পুরোনো, কত প্রজন্মের ছাত্ররা, যারা 
ছড়িয়ে পড়েছিল জীবনে; স্বপ্ন ও স্মৃতি একসাথে টানছিল প্রতিটা ইঁট।

সে টান জানত না, জালের মধ্যিখানে গিয়ে, বসে সিগারেট টানছে
একটি ভিনভাষী – আরবসাগরের নুনে শক্ত প্যান্ট, চামড়ায়, চুলে
বালি আর শঙ্খবীজ, ঠোঁটে তারাদের বিদায়স্পর্শ! … ভুল করে
ঢুকেও পড়তে পারে তাদের স্মৃতিতে, স্বপ্নে, স্কুলবাড়িটার সাথে।

অন্ধকার ছিল গভীর ও উদগ্রীব! যেন কোনো মহাকাব্যের শেষ ক’টি 
পংক্তি লেখা হচ্ছে কোথাও! আকাশে মেঘের ছোট ছোট অনুজ্জ্বল স্তবক 
ভেসে আসছিল, একটু পরে এক বর্ণাঢ্য, মহান ভোরের জন্ম দিতে।