Monday, February 27, 2023

গুর্জরি টোঢ়ি

দ্রুতের দিকে এগোচ্ছে মঞ্চে গুর্জরি টোঢ়ির ফেনিল আলাপ।
ঢেউয়ে ফুলে উঠছে সামিয়ানা শরতের দীপ্ত বৈঠার ধাক্কায়,
হাতে খবরকাগজ নিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়েছে বাচ্চাগুলো,
কালকের অনুষ্ঠানের খবর শহর, শারদ আনন্দে সরগরম
নিচে ছোট্ট কলামে ট্রাকে চাপা পড়ে মৃত্যু এক যুবকের।
কালরাতে হঠাৎ দুঃস্বপ্নে আমায় মেরে আধমরা করে কয়েকজন
সীমলেস টিউবশপের ফার্নেসে ঢুকিয়ে দিতে চাইছিল এবং আমি
একজনকে মাথার পিছনে মেরেও পালাতে অপারগ হয়ে শেষে,
ভালোবাসার জনটিকে কাছে টানতে না পেরে, ঘুম থেকে উঠে
কবিতায় বসে কিছুক্ষণ, ভোররাতে সঙ্গীত সম্মেলনে এসে দেখছি
দ্রুতের দিকে এগোচ্ছে করোটিতে গুর্জরি টোঢ়ির প্রশস্ত রোদ্দুর।
 
(পুরোনো পুনর্নির্মিত)



টিফিনবাক্স

আড়াইটে বাজে।
টেবিলের খাতাপত্র থেকে চোখ তুলে
পিছনে তাকালাম। টুলের ওপর
টিফিনবাক্স রাখা আছে।
আজ গোলামি করতে যাইনি।
আসলে কিছুদিন করেই মনে হয়,
কাল একটু স্বাধীনতাও করা চলবে,
পুষিয়ে যাবে মাসটা।
 
বাইরে বর্ষার দুপুরের নৈঃশব্দ।
টিফিনবাক্স খুলে
ঢাকনায় ধুঁধুলের তরকারিটা ঢাললাম।
রুটি ছিঁড়ে মুখে ওঠাতে যাব এক গ্রাস,
হঠাৎ একটা হাত
সেদিকে এগোল।
চোখ তুলে তাকালাম ওঃ,
জাঞ্জিবার থেকে!
রুটি চিবোতে চিবোতে বললাম,
তুই কী এনেছিস? রাখ এখানে পাশে!
ততক্ষণে আরেকটা কন্ঠস্বর,
দেখি কুলটির মাঠ থেকে,
হ্যাঁ, হ্যাঁ, সামনে রাখ!
নইলে আলুপোস্তও পাবি না!
 
এসমস্ত দিনগুলোয়,
রোদ্দুর উঠলে আরো বেশি,
আকাশি-নীল জামাটা চড়িয়ে নিই।
কি একটা বোঝাপড়া আছে তার সাথে
আমার সাইকেলের।
বস্তুতঃ দুজনে আমারই লাই পেয়ে
মাথায় উঠেছে। বলতেও হয় না,
জামাটা চড়ালেই
সাইকেলেরও হ্যান্ডেলে
যেন স্পন্ডিলাইটিস
টেরিয়ে থাকবে একদিকে
দেখার মত হয়ে যায়
যেন কেশর গজিয়েছে!
বার বার ঝিকোয় রোদ্দুরে
নিকেলগুলো নিজের,
চাকায় মোজার্টের
ফ্লুট কনসার্টো বেজে ওঠে।
লাইব্রেরি কিম্বা মাঠ,
কোনো বন্ধুর বাড়ি,
বা শহরের বাইরে কালভার্ট ছাড়িয়ে
পাশের অন্য শহরটার দিকে সোজা।
সেখানেই বাইপাসে খাট পেতে
খুলি টিফিনবাক্স।
 
অবশ্য গোলামি দিনেও
টিফিনবাক্সগুলো ঘিরেই তো আধঘন্টার
স্বাধীনতা।
একে অন্যের হেঁশেলে যেমন,
পকেটে যেমন বিড়ির জন্য,
মনেও ডোবানো,
কখনো বেল্লাগ,
কখনো ঈষৎ সাবধানী হাত।

১৯৭৮ ৮০


আমার ওপর রাগটা

কাদের কাছে কত কথা
ঠিক কী কথা দিয়েছিলাম
কিছুই মনে নেই,
অথচ দেখ সারাটি দিন
কথা রাখার পথ-শ্রমে
ভুলছি কথার খেই।

কার কাছে তা ভাবতে দেখি
গভীর রাতের বৃষ্টিশেষে
পাতায় আলোর নথ,
ঠিক কী কথা ধরতে খুঁজি
অনেক হাতে হাতটি রাখার
বাষ্পে মদির পথ।

জানলা আছে, মানুষটি নেই
দেখতে দেখতে জানলা-মানুষ
হওয়ার গোঁজামিলে,
আমার ওপর রাগটা যদি,
বল, ভরসা চাওয়ার, তবে
অচিন পাব নীলে।



Sunday, February 26, 2023

ছিন্নবিচ্ছিন্ন


দ্বিধার মত চাঁদের আলোয়
মেঘেরা আমার পাশ কাটাল
তোমায় পাওয়ার দেনায়, একা
নরক হলাম সারাটি রাত।

রাতের কলহ বৃথা ছিল, আরো বৃথা ভারি হয় বুকে
সকালে তোমার ঘুমন্ত মুখের ব্যথার গভীরে ঝুঁকে।
 
ভিক্ষা চাইতে না পারার কষ্টে মানুষটাকে
ফ্যাকাশে হয়ে যেতে দেখলাম
ব্যথার শিরায় টানটান হয়ে বেজেও
সে গান গেয়ে উঠতে পারছিল না

আমগাছের এই বাঁকা গুঁড়িটা রাতের পর রাত
আমার প্রবল বৃষ্টিগুলো সহ্য করেছে

মানুষের ভালো টানে।
মানুষের কালো আরো টানে।
জ্যোৎস্না পেরিয়ে মন পাড়ি দেয়
                   বাঁচবার অসুখ সন্ধানে।
মাথায় উপুড় থাকে সীমাহীন
                   কৃষ্ণবর্ণ সফেন তরল,
স্মৃতিগন্ধী নক্ষত্রের কুটো,
এ মাটির উপগ্রহ নিঃসঙ্গ, উজ্জ্বল
 
বিষ হই,
বিষ হয়ে বাঁচি

পিপাসা কাঁধ।
কাঁধে ফাটল।
ফাটলে জল।
জলে উদ্ভিদ।
উদ্ভিদে ফুল।
 
গ্রহণে চাঁদ।

বেলা বাড়ে, শাপলা ঝিমোয়।
বিজ্ঞাপনগুলো তেতে ওঠে।

দুহাজার মাসোহারা, দুই লক্ষ বীমা
ঘরে ঘরে রঙরুট, চাইছে প্রতিশোধ?
আশি হাজার একরে অনাবাদি ধুলো
জমিদারি, জাত-জওয়ারি, কিলাবন্দি, রোদ।
 
নতুন পাড়ায় প্রাচীন বৃষ্টি নামে
প্রগলভ এক তৃষার মধ্য যামে।

১০
আমাদের বিশ্বাসের প্রথম নীলিমা ফিরে পেতে
পারস্পরিক ধূসরতানির্ভর কিছু মিলনভূমিতে
ছোট ছোট সন্ধানী উড়াল আমাদের অসম্ভবে
লীন অধিকারপত্র, বিতর্কের উদ্দীপ্ত আসবে

জেগে ওঠে

১১
গ্রীষ্ম পারিজাত
নম্র নির্নিমেষ;
দীপ্ত কৌতুহল
অধরা উন্মেষ।

শ্রান্ত নাগরিকী
বিতান প্রহর;
নিবিড় দ্বৈরথ
তৃষ্ণা সহচর।
 
১২
আমার এক স্বাধীনচেতা মায়ের বিয়ে
কালো বলে যখন এক
দোজবরের সাথে হয়েছিল
তখন যারা ওই কালো ডানপিটে মেয়ের
দুঃখের ঘর ভেঙে দিতে
লিখেছিল বেনামি উড়ো চিঠি,
বেশ্যা বলতে ছাড়ে নি
তাদেরই আজ রমরমা।
 
ভারতবর্ষ তাই বাড়ছে
তিরতির করছে বাড়,
রক্তের ভিতরে অজানা কোষপুঞ্জের মত
কোন দিকে কতটা হবে বিকৃত বিস্ফার
কবে ফিরব নদীর কাছে
মাটির কাছে
প্রশ্ন কোরো না।

কোথায় কী নতুন প্রসঙ্গ ঢুকছে প্রাচীন গীতিকায়
কেমনভাবে ঢুকছে
মিশতে হবে হাওয়ায়;
ওবি ভ্যান শুধু অকুস্থলে ঘোরে।
 
১৩
ফণীমনসার ছায়া
ভাষাবদলের প্রজন্ম দুইতিন
শুকনোপানা নারী
          যেন ধারালো ইস্পাত।

১৪
এবারের মত এমন ব্যাকুলতায়
বৃষ্টির প্রতীক্ষা আমি কখনো করিনি।
 
কারোর প্রতি কারোর ভালোবাসা
একটুকুও কমেনি, শুধু নিছক আশ্রয়ের তালাশে
এত দূরে দূরে আমরা ছড়িয়ে পড়লাম
কেন পারলাম না হতে একে অন্যের আশ্রয়?
 
ওঘরে বৃষ্টির মত বাজছে হেমন্তের সিডি
বৃষ্টির মত জাগছে উত্তমের মুখ
সাদাকালো ছবির কাঁপা কাঁপা আকাশ
তবু এবারের মত এমন ব্যাকুলতায়
 
বিচ্ছিরি বৃষ্টি হচ্ছে এই ফাল্গুনে
নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ডালের ফসল;
বৃষ্টির এত প্রতীক্ষা আমি কখনো করিনি।
 
বৃষ্টি কি আসবে কোনোদিন?
 
[২০০৩ -০৪ এর ডাইরি থেকে]

সবকটা টেলিফোন নম্বর দেওয়া রইল তোমায়।
হারিয়ে যাওয়ার নয়, খুঁজে পাওয়ার কথা বলছি।
সমস্ত ঠিকানা, সারাদিনের প্রহরের পাঁচমিশেল
অনির্দিষ্ট নয়, চেনাজানা পথের হদিশ দিচ্ছি
 
তুমিও ছেড়ে যাচ্ছ তাহলে? যাও!
আমায় তো থাকতে হবে।
যেখানেই থাকি অথবা যাই
মেশিনটায় জায়গা খুঁজে নেওয়ার
ব্যাপারটা ধরতে হবে।

দরজাটা আস্তে খোলো
এমনভাবে খোলো
যাতে মনে না হয় যে আমরা
ভালোবাসি দামাল হাওয়া
কিম্বা বাইরে টলছে
রক্তাপ্লুত এক মানুষ।
 
দেশটা স্বাধীন আস্তে বলো
এমনভাবে বলো
যাতে মনে না হয় যে আমরা
ভরসা রাখি জনতার লাগামছেঁড়া বন্যায়
কিম্বা পিছনে
প্রশ্নাকীর্ণ হয়ে টলে দেশভাগ।
…………………


নরক আসে ছদ্মবেশে
বন্ধুবেশে, মুচকি হেসে,
সবার চোখে ধুলো দিয়ে
ভিতরপাড়ার খিড়কি দোরে
লিপ্সা ঢাকে ঈষৎ কেশে।

নরক চড়ে নেশার মত
মাথার ভিতর, টালের ওপর
অতর্কিতে রূপ দেখিয়ে
জ্বালিয়ে দেওয়ার, পুড়িয়ে দেওয়ার
নেশা রক্তে নরক ভরে।

৩.১২.১৯৯৭
 
তার বেঁচে থাকা মানে ভোর।
ঘরে ঘরে জেগে ওঠা।
কোনো একফালি জানলায়
কাগজ ছাপিয়ে শব্দ,
শব্দ ছাপিয়ে মুখ
মুখের বাগান কাঁপিয়ে কারো
হৃদয়বিদারি ডাক।
হায়দ্রাবাদের মাছ নিয়ে আসে ট্রাক।

১.১২.১৯৯৭


শৈশবের মঞ্জরিত রোদ
আবার নতুনভাবে জাগাব।
পলাশ ফুটবে ব্ল্যাকবোর্ডে।
শৈশব নিয়ে ছিনিমিনি খেলার জবাব
দুনিয়াকে দিতে হবে।

জানলা আঁধার করা মেঘ।
মুখগুলো মুখ ছাপিয়ে দেখছি।
পরিত্যক্ত বিমানপথে ভোর
ঋত্বিকের ভাবনায়
আর সে মেয়েটির গান
হাড়ের গরাদে যত দিন বন্দি রাখতে পারা যায়,
রাখছি।

১০.৫.১৯৯৮  


গোদাবরী রেলওয়ে জাংশনে

দিনের নদী অনেকটা উজানে গিয়ে জাগে
রাতে তার জাগরণ তটে উঠে আসে
বর্ষায় গাছ বেয়ে জড়ায় কোকিলের গলা

 



অন্যমনস্ক

নিঃসঙ্গ নারীদের নিঃসঙ্গতায় তুমি ভরে থাক।
কেউ যুবতী কেউ বিগতযৌবনা
কেউ বিবাহিতা – বিধবা, পরিত্যক্তা, গৃহত্যাগিনী
কেউ অবিবাহিতা;
সব বন্ধু তোমার। 

আমায় জড়িয়ে ধরো যখন তখনও                 
তাদের নিঃসঙ্গতায় মাঝে মাঝে
                   অন্যমনস্ক হয়ে পড়ো তুমি!

 



মুৎসুদ্দি

তল করলে জবাবতলব
ছাত দেখিয়ে বলেন ভ্রুভঙ্গিতে,
আমি কী করি ব্রাদার?
আমি তো গোলাম, আসল তো ওই ওঁরা!
পরক্ষণেই সেলাম পাঠান ছাতে,
ক্ষমা, হুজুর! ওসব একটু
যাকে বলে বাষ্পখালাস করা!
 
ছাত করলে জবাবতলব
তল দেখিয়ে বলেন ভ্রুভঙ্গিতে,
জানেনই সব, দিনকাল
বদলে যাচ্ছে, আসল তো ওই ওরা!
আর শিগগির লুকোন নকল
রসিদ, চুরির টাকায় শেয়ার,
জমির দলিল, ডিবেঞ্চারের তোড়া।
 
যুদ্ধ কিম্বা আকালের রমরমায়
বহাল করেন নিজের কাজে
উঠতি আরেক রঙরুট, আর নিজে
নতুন স্যুটে সেজে
প্রবেশ করেন বাণিজ্য চেম্বারে।
প্রাক্তন বস কুশল সারেন
কাষ্ঠ হেসে, বোতলটা কাত করে।
বাঘ ও ঘোঘের নৈশ মহোৎসবে
বোঝা কঠিন গল্পটাকে
কে কোথায় কেমন চালে
কতটা মোড় দেবে।
 
১০.১২.১৯৯৭




রোবসনের সাথে দেখা

যৌবনের সে দুপুরে নদীর ওপার ছিল না।
আদিগন্ত চৈত্র-ঝড়ে নৌকাহীন ব্যপ্ত জলধারা
তরঙ্গে তরঙ্গে ফুলে, ভেঙে পড়ছিল শহরের পাড়ে।
তোড়ে এগিয়ে যাচ্ছিল লক্ষ কোটি ফেনার স্তবক
হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরে
অত ক্ষুব্ধ নদী কখনো দেখিনি! রোবসন,
তোমার গানও তখন শুনিনি।
 
অথবা শুনিনি কি? তখন সন্ধ্যা,
ঝড় থেমে গেছে, নদী স্বাভাবিক, পারাপারময়,
দিগন্তের স্বর্ণদ্বার খুলে নেমে আসা আলোর প্রপাতের মাঝে
ফসলবাহী, ট্রাকবাহী নৌকা, গাদাবোট
আর যাত্রীবাহী স্টিমারের সিল্যুট
বৈঠা, ইঞ্জিন আর চাকার সমূহ আমন্ত্রণে,
আমি কি গঙ্গার বুকে তীরের বালিতে দাঁড়িয়ে দেখি নি,
কী তরল বয়ে যায় মিসিসিপি অথবা হাডসনে,
অথবা তোমার পূর্বপুরুষদের রক্তে, কঙ্গো, জাম্বেজির ধারায়?
 
সারাঠের কোমর-ছোঁয়া অজয়ের জলে আমি সদ্য জেনেছিলাম
মিশে আছে হুইটম্যানের অনুভূতিশীল করতলের গন্ধ ও উষ্ণতা;
এ দেশের বসন্তের ডাকে, বৃক্ষে, বনে, জলাশয়ে
যে অজস্র পাখিরা উড়ে আসে
তাদেরও তো জন্মের হ্রদগুলো দেখব না কখনও!
 
সেদিন তোমায় ডেকেছিলাম পল! রোবসন, বলেছিলাম
দাঁড়িও বালুবওয়া ঘাটায়, অশ্বত্থ গাছটির নিচে,
যে গাছের গুঁড়িতে বিগত বন্যার দাগ তখনো মোছে নি।
তীরের বাণিজ্যসীমা থেকে গলুই অব্দি সারাদিন
বালু আর ঘাম মেখে আসাযাওয়া মানুষগুলো তোমায়
আমার পাশে বসিয়ে দিয়েছিল রোবসন, পেয়েছিলে?
বাতাসে শুকনো পাতার স্তুপ জ্বলার গন্ধ
শুনেছিলে চৈতির গান ঢোল, ঝাঁঝরের শব্দে?
ঘোড়ার কন্ঠস্বরের মত দীপ্ত কামনাময় নক্ষত্রে ভরা আকাশ
রোবসন? কেমন তোমার গান? গাইবে?
জিজ্ঞেস করেছিলাম।

[৭.৪.৭৬ এর কবিতার কালবদল] 


 

Saturday, February 25, 2023

লুসি

কী যে সে খুঁজত সারাদিন
খাটের নিচে, ফ্রিজের পিছে, 
আলমারিটা খোলা পেলে 
কাপড়গাদায়, র‍্যাকের ভিতর!
কোথায় কোথায় খুঁজে রাখত
লুকিয়ে থাকার, অজানা এক
যুদ্ধের প্রয়োজনে
লক্ষ্য রাখার, কোটর!

আর কেউ জানবে না। 
ছোট্ট মেয়ে, ব্যস্ত মেয়ে লুসি
বড্ডো ছোট, বেড়াল যে! 
ফিরে আর আসবে না।

নিজের ঘরে ছিল না যে সেদিন!
শেষরাতে বেরিয়েছিল –
কখনো যে বেরোয় না –
ফেরার জেদে; পথ অচিন,
দুনিয়াটারও ধরণ ছিল অচিন! ...

আর কখনো 'টাইম' দেবে না
'ডেট দেবে না রাজকন্যে'
আমাদের, তাকে নিয়ে
নানারকম খেলায়,
নানান ছবি তোলায়,
দু’পায়ে বুঝে মুখের ভাব
সইবে না আর আদর, 
ভুতুর মত তাকাবে না
জুলজুলে দুই চোখে,
পাথরচাপা সেও আজ
এক অনন্তলোকে! 

২৯.৬.২২



Thursday, February 23, 2023

ছাতিম

একটা ছাতিম মানে সুগন্ধের একশোচুয়াল্লিশ!
ফুল ফোটার মাসে জানান দেয়
কোথায় কোথায় সে আছে।
পুরোনো গোরস্তানের দেয়ালের ওপর দিয়ে
ডালগুলো নেমে আসে
গন্ধে ম ম করে পুরো রাস্তাটা!
সারাটা সন্ধ্যাপথ জুড়ে
দু-পাঁচজনের বেশি একসাথে
পেরোনো চলবে না,
তাও কথা বলতে বলতে,
ইয়ারির দাস্তানগুলো খুলে খুলে
ছাতিমের গন্ধে ভিজিয়ে এগোতে হবে
আবার একলাও পেরোনো চলবে না
গন্ধ যে কোথায় হাপিশ করবে তাকে!
বুঝবেও না এ কোন শহর
ক্যারাকাস না ম্যাকাও,
কোন ভিতরমাঠে ডাকছে তাকে উদ্দাম একটি রাত!
একটি চূড়ান্ত রাত!
 
২৩.২.২৩
 


ভুলের মজা

ঠিক কাজটা যেমন
একেবারেই একা কেউ করি না;
এমনকি সব আবিষ্কারেরও সাথে থাকা
একটি নামের
আড়ালে থাকে হাতড়ানোর,
বিশ্বের উঠোন ভরা পায়চারি নির্ঘুম
সবচেয়ে মজার এটাই যে ভুল কাজটাও
একা করি না কেউ;
কিছুক্ষণেই দেখি আরো দুচারজন
পৌঁছোচ্ছে ওই
গোলকধাঁধাতে।
 
ঠিক দিকে ঘুরবার
চেষ্টাটা তো স্বাভাবিক,
সবাই একসাথে করব তাড়াতাড়ি
আলো কমছে দেখে আকাশে
মজা বাড়ে যখন
সবার মেজাজ থাকে চোস্ত,
একটু বিপজ্জনক হলেও
ঠিক দিকে পৌঁছোবার
আরো একটি নতুন পথের সন্ধানে
ভুলের আরো ভিতরে ঢুকে পড়ি।
 
সমুদ্রের লোক হলে হয়তো জুতোয়
ফসফোরাস লাগিয়ে ভুলে ঢোকার কথা বলতাম;
চিরিমিরির জঙ্গলে সেই ছোটোবেলায় অমরদার,
পাতা জড়ো করে আগুন লাগিয়ে
এগোনোর কথা মনে পড়ে।
 
২৩.২.২৩


 

প্রশ্ন – উত্তর

উত্তর নেই, একটারও উত্তর নেই .... প্রশ্নগুলো কিছুদিন হল ঝেঁটিয়ে সাফ করেছিলাম;
                                        উত্যক্ত করে তুলত
গন্ডাখানেক ধেড়ে ইঁদুর যেমন
চিবিয়ে নষ্ট করে বই, জামাকাপড়
ঠাকুরের প্রসাদ

প্রশ্নগুলো চিবোয় তো অন্য জিনিষ
মগজ আর হৃদয়ের সংযোগকারী তন্তুগুলো             
                                               বিশেষকরে
ধীরে ধীরে দমবন্ধ হয়ে আসে,
রাস্তায় বেরিয়ে কোনদিকে যাব, হিসেব থাকে না!
পেরোতে ধাক্কা খাব ভয় ধরে।
 
এখন একে একে বেশ কয়েকটি উত্তর ফুটেছে এদিক ওদিক।
প্রশ্নহীন উচ্চকিত আরামের সুসঙ্গত ঘরে, আসবাবে ঢুকে
আদৌ কিছু চিবোচ্ছে কিনা জানি না,
বুঝতেও পারছি না এত সন্ত্রস্ত হয়ে উঠছি কেন?
ওরা কি নিজের প্রশ্নদের খুঁজছে?
 
বাইরে গলির ধুলো, গর্ত্ত, আবর্জনা ঘেঁটে
ইঁদুরও চিনে ফেরানো সম্ভব নয়,
প্রশ্ন কী করে চিনব?
উত্তরেরা উত্তরেরা হে বহমান নশ্বরতা
পৃথিবীর রাজপথে এত সুন্দর, তারুণ্যময়, আলোকজ্জ্বল
প্রশ্নহীন আরাম সন্ত্রস্ত করে তোলা উত্তরেরা!
 
২৩.২.২৩


 

Friday, February 17, 2023

কর্তার পূনরাবির্ভাব

(বাবরি মসজিদ ভাঙার আগে-পরের পরিস্থিতি দেখে লেখা একটি পুরোনো কবিতা)


কর্তা গুটিয়েছিল               জমানার নাড়িটেপা
              নীতির খোলসে এতকাল।
কত কী যে হতে হল           সাজাতে সংবিধানে
              দখলীভোগ রাখার চাল।।
সুদক্ষ প্রশাসক                 কুশল আইনজীবী 
               ধীরমতি সেনাধিনায়ক।
পুরোধা বুদ্ধিজীবী             বিনীত শিক্ষাবিদ
               রাজনীতিবিদ সার্থক।।
কর্তা টুকরো হয়ে               যেন ছিল এ শালার
                গণতন্ত্রের দারোয়ান।
অজাত, কুজাত, ছোট-       লোকগুলো বাদ দাও,
                 দায় ছিল ঘরে রাখা মান।।
শাসন তো ছিল তবু             মজা যেন ছিল নাকো
                 গাঁটকাটা সেজে, খুলে ট্যাঁক,
দেখানো যে আধুলিও         নেই, তবে মালা পাওয়া,
                 নলের গুড়ুমও সেই এক!
শাসন বেনামি রাখা             শাস্ত্রমত করে খেতে
                 ঢেকে সনাতন টঙ্কার, 
আহা দেখ সময়ের              কী ফের! একেই বলে
                  ঈশ্বর-লীলা বোঝা ভার!
নতুনের হাওয়া দিক            বদলালো এমন যে
                  জার্মানে ভাঙলো প্রাচীর।
সংসদে দুই শত                  চার কুড়ি, কিছু কম,
                  আসনের আঁক দিল ক্ষীর।।
গুরুমহারাজ! তবে             আসুন! মহাপ্রসাদ
                   নামসংকীর্তনে পাই!
দীক্ষা দিয়ে যাবেন             ছোট ছেলেটাকে, বেটা
                    হয়েছে নিজ জাতের চাঁই।।
ওই এক সিন্ধির                 কেরামতে কী দারুণ
                   মতিটা ফিরেছে দুলালের,
বেলেল্লাপনা ছেড়ে             মেতেছে কার সেবায়
                  একে বলে সুফলা আখের।।

২রা মার্চ ১৯৯৬



Wednesday, February 15, 2023

रूबरू

 कविता से बुनियाद बचाने की कोशिश

आदमी के रोजमर्रा के संघर्षों के बीच आदमी की संभावनाओं को देखना होगा। मजदूर जहां अपनी ऊर्जा लगा रहा है, स्थिति को नियंत्रित कर रहा है वहां एक वर्ग के रूप में खुद व खुद उभर रहा है। रचनाकारों को वहीं अपने नायकों को ढूंढना होगा। कविता को विद्युत पाल शब्दों और शब्दजनित निःशब्दों का कारोबार मानते हैं

विद्युत पाल बांग्ला भाषा के स्थापित कवि और हिन्दी प्रदेश में एक चर्चित नाम हैं। इनके दोनों कविता संग्रह आजकेर दिनटार जोन्नोतथा 'समुद्रो दुभावे डाके' की कविताएं आम लोगों के भावों की परत दर परत कलात्मक अभिव्यक्ति है। इनकी कविता एक नये किस्म का डिक्सन रचती है जिसमें बांग्ला की मौलिकता के साथ ही बिहार की माटी की खुशबू भी है। आजकेर दिनटार जोन्नो' की पहली कविता कलीम लोग जहां अपने बाप की बीड़ी की दुकान पर बैठे कलीम के सपनों और संघर्षों की बात करती है वहीं समुद्रो दुभावे डाके की कविता जलाधार में वे वाटरटैंक के हवाले जीवन में जल के प्रवेश को चिन्हित करते हैं। रोजमर्रा की जिंदगी के अंतरद्वंद्वों को रेखांकित करने वाले कवि विद्युत पाल रू-ब-रू करा रहे हैं चर्चित रंगकर्मी हसन इमाम :

कविता के प्रति पाल दा के झुकाव की कहानी दिलचस्प है। युवा विद्युत के रोमांटिसिज्म ने उन्हे देश की सैर करने को उकसाया और 1969 में दोस्तों के साथ साइकिल से निकल पड़े यात्रा पर। बिहार से प. बंगाल, उड़ीसा, आंध्रप्रदेश, तमिलनाडु होते केरल पहुंचे रास्ते में नये-नये अनुभव बटोरते, सहेजते। इस क्रम में अपना देश जैसा दिखा, उससे जिन्दगी को लेकर कई सवाल खड़े हो गये सवालों जूझते कोलियरी के मजदूरों के बीच रहते हुए एक दिन ईश्वर की पड़ताल करती कविता फूट पड़ी और यह सिलसिला चल पड़ा। इसी सिलसिले पर ये कहते हैं मेरी कविताओं में मेरी निजता होती है।

रोजमर्रा के जीवन में जो घूटन है, टूटन है उसे एकांत में कविता के साथ शेयर करता हूं। तमाम तरह के विभाजनों के बीच बेसिक इंटीग्रिटी की तलाश और उसे बचाने का प्रयास कविता के माध्यम से करता हूँ। इस प्रयास में कविता के साथ कोई संघर्ष चलता है तो उसे कैसे सहेजते हैं मेरे इस सवाल पर पाल दा कहते हैं कविता के क्षेत्र में मैंने पहली दुश्मनी मनोगत आशावाद से ली। फिर मैने इस मनोगत आलंकारिक आशावाद का कारण ढूंढ़ा तो पाया कि अन्तविरोधी यथार्थ को विरोधाभासी यथार्थ के रूप में देखना, कंट्राडिक्शन को पैराडॉक्स के रूप में देखना, संघर्ष की गति और गति के संघर्षो को विड़म्वित रूप में देखना इस तरह कविता में यथार्थ की विरोधाभासी प्रस्तुति से मैंने दूसरी दुश्मनी मोल ले ली। मैंने इसका भी कारण ढूंढ़ा तो पाया कि खुद को उस यथार्थ से बाहर तथाकथित निरपेक्ष स्थिति में रखने की कोशिश में मूलतः अन्तविरोधी यथार्थ आपातदृष्टया विरोधाभासी दिखता है ऐसे में यथार्थ के किसी एक तरफ मैं हूँ। आप जिस तरफ होते हैं उसको गति में आशा झलकती है? अगर नहीं तो 'वाद' कैसा ? और अगर झलकती है तो उसकी बुनियाद कहां है? वे कहते हैं गुलामी की जंजीर में जकड़ा हुआ भविष्य का राजा कहीं तो दिखता है, अचानक किसी विरल क्षण में राजा की हैसियत में उन्हीं हैसियतों को कविता में तलाशता हूँ मिल जाने पर तराशता हूँ अपनी अभिव्यक्ति की क्षमता के मुताबिक इसी तलाश और तराशने के क्रम में मैं अपनी दिनचर्या में रोज बिखरते हुए खुद को भी जोड़कर एक कर लेता है अगले दिन के लिए। और इस तरह बिना हैसियत बताये राजा का ढिंढोरा पीटने वालों से भी मैंने तोसरी दुश्मनी मोल ले ली। मेरी इस जिज्ञासा पर कि विडम्बनाओं के बीच आशाएं टूट रही है, फिर भी लोग आशावादी हैं ऐसे में नायको की तलाश कहां होगी - पा दा 1983 की एक घटना की चर्चा करते हैं। तारापुर एटोमिक प्लांट में रसायन रिसने से पूरा इलाका रेडियो एक्टिव हो गया। इंग्लैंड व अमेरिका से वैज्ञानिक बुलाने की बात होने लगी। इसी बीच वहां कार्यरत मजदूरों ने उपलब्ध साधनों द्वारा इलाके को कुप्रभाव से बचानें का बीड़ा उठाया और आखिरकार वे इसमें सफल हो गये। इस रोमांचक घटना के हवाला से वे कहते हैं - आदमी के रोजमर्रा के संघर्षों के बीच आदमी की संभावनाओं को देखना होगा। मजदूर जहां अपनी ऊर्जा लगा रहा है, स्थिति को नियंत्रित कर रहा है वहाँ एक वर्ग के रूप में खुद व खुद उभर रहा है। रचनाकारों को वहीं अपने नायकों को ढूंढ़ना होगा। कविता को विद्युत पाल शब्दों और शब्दजनित निःशब्दों का कारोवार मानते हैं। उनकी नजर में सारी सच्ची बातों को इस देना कविता नहीं है। वह भाषा को व्यंजना, हृदय और चेतना के अंदर शब्दों की अनुगूंज का सर्वोत्तम औजार है जो सैकड़ों वर्षों के परिष्कार से हासिल हुआ है। इसलिए किसी अतिक्रांतिकारिता में इसे नकारते हुए कविता लिखने की बात बेईमानी होगी। कविता को कविता होनी होगी। पहले ही श्रवण में उसे भीतर र कर जानी होगी। कविता के स्वरूप पर वे कहते हैं अपने समय को बहुआयामी चुनौतियों का सामना करते श्रेष्ठ कविता का जो स्वरूप सामने आया उसे देखकर कहा जा सकता है कि कविता फ्रंटियर सायंस का सहचर है। कई बार कविता में उठाये गये सवाल विज्ञान (समाज विज्ञान एवं प्रकृति विज्ञान) के लिए रास्ते खोलते हैं तो कई बार विज्ञान में उठाये गये सवाल कविता के लिए दोनों में झगड़े भी खूब होते हैं लेकिन दोनों ऐसे सहचर है कि एक दूसरे के बगैर जीवनबोध अधूरा रह जाता है।

बिहार में साहित्यिक आन्दोलन की मौजूदा स्थिति पर वे कहते हैं साहित्यकारों, कवियों का आपस में मिलना-जुलना और संवाद करना कम हुआ है। काफी हाउस परम्परा के अभाव को स्वीकारते हुए वे कहते हैं इसकी वर्गीय स्थिति चाहे जो भी हो, लेकिन उस तरह की अड्डेबाजी से, अनौपचारिक ढंग से ही सही, साहित्य के सवाल परत दर परत खुला करते हैं। मेरे इस अंतिम सवाल पर कि कवि का एक्टिविस्ट होना जरूरी है ? पाल दा कवि सुकांत भट्टाचार्य को थाह कर कहते हैं अगर यथार्थ से जुड़कर कविताएं लिखनी है, उस यथार्थ में किसी किस्म के बदलाव की चाहत है तो यकीनन कवि को पोएट एक्टिविस्ट के रूप में सामने आना होगा। वे महाश्वेता देवी के इस कथन को रेखांकित करते हैं तुम कहां खड़े हो वही तुम्हारा रणक्षेत्र है।

[कसौटी, दैनिक जागरण, पटना दिनांक 26 मई 2006 में प्रकाशित]