যৌবনের সে দুপুরে
নদীর ওপার ছিল না।
আদিগন্ত চৈত্র-ঝড়ে
নৌকাহীন ব্যপ্ত জলধারা
তরঙ্গে তরঙ্গে ফুলে,
ভেঙে পড়ছিল শহরের পাড়ে।
তোড়ে এগিয়ে যাচ্ছিল
লক্ষ কোটি ফেনার স্তবক
হিমালয় থেকে বঙ্গোপসাগরে
…
অত ক্ষুব্ধ নদী কখনো
দেখিনি! … রোবসন,
তোমার গানও তখন শুনিনি।
অথবা শুনিনি কি?
তখন সন্ধ্যা,
ঝড় থেমে গেছে, নদী
স্বাভাবিক, পারাপারময়,
দিগন্তের স্বর্ণদ্বার
খুলে নেমে আসা আলোর প্রপাতের মাঝে
ফসলবাহী, ট্রাকবাহী
নৌকা, গাদাবোট
আর যাত্রীবাহী স্টিমারের
সিল্যুট …
বৈঠা, ইঞ্জিন আর
চাকার সমূহ আমন্ত্রণে,
আমি কি গঙ্গার বুকে
তীরের বালিতে দাঁড়িয়ে দেখি নি,
কী তরল বয়ে যায় মিসিসিপি
অথবা হাডসনে,
অথবা তোমার পূর্বপুরুষদের
রক্তে, কঙ্গো, জাম্বেজির ধারায়?
সারাঠের কোমর-ছোঁয়া
অজয়ের জলে আমি সদ্য জেনেছিলাম
মিশে আছে হুইটম্যানের
অনুভূতিশীল করতলের গন্ধ ও উষ্ণতা;
এ দেশের বসন্তের
ডাকে, বৃক্ষে, বনে, জলাশয়ে
যে অজস্র পাখিরা
উড়ে আসে
তাদেরও তো জন্মের
হ্রদগুলো দেখব না কখনও!
সেদিন তোমায় ডেকেছিলাম
পল! রোবসন, বলেছিলাম
দাঁড়িও বালুবওয়া
ঘাটায়, অশ্বত্থ গাছটির নিচে,
যে গাছের গুঁড়িতে
বিগত বন্যার দাগ তখনো মোছে নি।
তীরের বাণিজ্যসীমা
থেকে গলুই অব্দি সারাদিন
বালু আর ঘাম মেখে
আসাযাওয়া মানুষগুলো তোমায়
আমার পাশে বসিয়ে
দিয়েছিল – রোবসন, পেয়েছিলে?
বাতাসে শুকনো পাতার
স্তুপ জ্বলার গন্ধ …
শুনেছিলে চৈতির গান
– ঢোল, ঝাঁঝরের শব্দে?
ঘোড়ার কন্ঠস্বরের
মত দীপ্ত কামনাময় নক্ষত্রে ভরা আকাশ …
রোবসন? কেমন তোমার
গান? … গাইবে?
জিজ্ঞেস করেছিলাম।
[৭.৪.৭৬ এর কবিতার
কালবদল]
No comments:
Post a Comment