Monday, February 27, 2023

টিফিনবাক্স

আড়াইটে বাজে।
টেবিলের খাতাপত্র থেকে চোখ তুলে
পিছনে তাকালাম। টুলের ওপর
টিফিনবাক্স রাখা আছে।
আজ গোলামি করতে যাইনি।
আসলে কিছুদিন করেই মনে হয়,
কাল একটু স্বাধীনতাও করা চলবে,
পুষিয়ে যাবে মাসটা।
 
বাইরে বর্ষার দুপুরের নৈঃশব্দ।
টিফিনবাক্স খুলে
ঢাকনায় ধুঁধুলের তরকারিটা ঢাললাম।
রুটি ছিঁড়ে মুখে ওঠাতে যাব এক গ্রাস,
হঠাৎ একটা হাত
সেদিকে এগোল।
চোখ তুলে তাকালাম ওঃ,
জাঞ্জিবার থেকে!
রুটি চিবোতে চিবোতে বললাম,
তুই কী এনেছিস? রাখ এখানে পাশে!
ততক্ষণে আরেকটা কন্ঠস্বর,
দেখি কুলটির মাঠ থেকে,
হ্যাঁ, হ্যাঁ, সামনে রাখ!
নইলে আলুপোস্তও পাবি না!
 
এসমস্ত দিনগুলোয়,
রোদ্দুর উঠলে আরো বেশি,
আকাশি-নীল জামাটা চড়িয়ে নিই।
কি একটা বোঝাপড়া আছে তার সাথে
আমার সাইকেলের।
বস্তুতঃ দুজনে আমারই লাই পেয়ে
মাথায় উঠেছে। বলতেও হয় না,
জামাটা চড়ালেই
সাইকেলেরও হ্যান্ডেলে
যেন স্পন্ডিলাইটিস
টেরিয়ে থাকবে একদিকে
দেখার মত হয়ে যায়
যেন কেশর গজিয়েছে!
বার বার ঝিকোয় রোদ্দুরে
নিকেলগুলো নিজের,
চাকায় মোজার্টের
ফ্লুট কনসার্টো বেজে ওঠে।
লাইব্রেরি কিম্বা মাঠ,
কোনো বন্ধুর বাড়ি,
বা শহরের বাইরে কালভার্ট ছাড়িয়ে
পাশের অন্য শহরটার দিকে সোজা।
সেখানেই বাইপাসে খাট পেতে
খুলি টিফিনবাক্স।
 
অবশ্য গোলামি দিনেও
টিফিনবাক্সগুলো ঘিরেই তো আধঘন্টার
স্বাধীনতা।
একে অন্যের হেঁশেলে যেমন,
পকেটে যেমন বিড়ির জন্য,
মনেও ডোবানো,
কখনো বেল্লাগ,
কখনো ঈষৎ সাবধানী হাত।

১৯৭৮ ৮০


No comments:

Post a Comment