১
দ্বিধার মত চাঁদের
আলোয়
মেঘেরা আমার পাশ
কাটাল
তোমায় পাওয়ার দেনায়,
একা
নরক হলাম সারাটি
রাত।
২
রাতের কলহ বৃথা ছিল,
আরো বৃথা ভারি হয় বুকে
সকালে তোমার ঘুমন্ত
মুখের ব্যথার গভীরে ঝুঁকে।
৩
ভিক্ষা চাইতে না
পারার কষ্টে মানুষটাকে
ফ্যাকাশে হয়ে যেতে
দেখলাম –
ব্যথার শিরায় টানটান
হয়ে বেজেও
সে গান গেয়ে উঠতে
পারছিল না …
৪
আমগাছের এই বাঁকা
গুঁড়িটা রাতের পর রাত
আমার প্রবল বৃষ্টিগুলো
সহ্য করেছে …
৫
মানুষের ভালো টানে।
মানুষের কালো আরো
টানে।
জ্যোৎস্না পেরিয়ে
মন পাড়ি দেয়
বাঁচবার অসুখ সন্ধানে।
মাথায় উপুড় থাকে
সীমাহীন
কৃষ্ণবর্ণ সফেন তরল,
স্মৃতিগন্ধী নক্ষত্রের
কুটো,
এ মাটির উপগ্রহ – নিঃসঙ্গ, উজ্জ্বল …
বিষ হই,
বিষ হয়ে বাঁচি …।
৬
পিপাসা কাঁধ।
কাঁধে ফাটল।
ফাটলে জল।
জলে উদ্ভিদ।
উদ্ভিদে ফুল।
গ্রহণে চাঁদ।
৭
বেলা বাড়ে, শাপলা
ঝিমোয়।
বিজ্ঞাপনগুলো তেতে
ওঠে।
৮
দুহাজার মাসোহারা,
দুই লক্ষ বীমা –
ঘরে ঘরে রঙরুট, চাইছে
প্রতিশোধ?
আশি হাজার একরে অনাবাদি
ধুলো
জমিদারি, জাত-জওয়ারি,
কিলাবন্দি, রোদ।
৯
নতুন পাড়ায় প্রাচীন
বৃষ্টি নামে
প্রগলভ এক তৃষার
মধ্য যামে।
১০
আমাদের বিশ্বাসের
প্রথম নীলিমা ফিরে পেতে
পারস্পরিক ধূসরতানির্ভর
কিছু মিলনভূমিতে
ছোট ছোট সন্ধানী
উড়াল আমাদের – অসম্ভবে
লীন অধিকারপত্র,
বিতর্কের উদ্দীপ্ত আসবে
জেগে ওঠে –
১১
গ্রীষ্ম পারিজাত
–
নম্র নির্নিমেষ;
দীপ্ত কৌতুহল –
অধরা উন্মেষ।
শ্রান্ত নাগরিকী
–
বিতান প্রহর;
নিবিড় দ্বৈরথ –
তৃষ্ণা সহচর।
১২
আমার এক স্বাধীনচেতা
মায়ের বিয়ে
কালো বলে যখন এক
দোজবরের সাথে হয়েছিল
তখন যারা ওই কালো
ডানপিটে মেয়ের
দুঃখের ঘর ভেঙে দিতে
লিখেছিল বেনামি উড়ো
চিঠি,
বেশ্যা বলতে ছাড়ে
নি –
তাদেরই আজ রমরমা।
ভারতবর্ষ তাই বাড়ছে
তিরতির করছে বাড়,
রক্তের ভিতরে অজানা
কোষপুঞ্জের মত –
কোন দিকে কতটা হবে
বিকৃত বিস্ফার …
কবে ফিরব নদীর কাছে
মাটির কাছে
প্রশ্ন কোরো না।
কোথায় কী নতুন প্রসঙ্গ
ঢুকছে প্রাচীন গীতিকায়
কেমনভাবে ঢুকছে …
মিশতে হবে হাওয়ায়;
ওবি ভ্যান শুধু অকুস্থলে
ঘোরে।
১৩
ফণীমনসার ছায়া
ভাষাবদলের প্রজন্ম
দুইতিন
শুকনোপানা নারী
যেন ধারালো ইস্পাত।
১৪
এবারের মত এমন ব্যাকুলতায়
বৃষ্টির প্রতীক্ষা
আমি কখনো করিনি।
কারোর প্রতি কারোর
ভালোবাসা
একটুকুও কমেনি, শুধু
নিছক আশ্রয়ের তালাশে
এত দূরে দূরে আমরা
ছড়িয়ে পড়লাম –
কেন পারলাম না হতে
একে অন্যের আশ্রয়?
ওঘরে বৃষ্টির মত
বাজছে হেমন্তের সিডি
বৃষ্টির মত জাগছে
উত্তমের মুখ
সাদাকালো ছবির কাঁপা
কাঁপা আকাশ
তবু এবারের মত এমন
ব্যাকুলতায় …
বিচ্ছিরি বৃষ্টি
হচ্ছে এই ফাল্গুনে
নষ্ট হয়ে যাচ্ছে
ডালের ফসল;
বৃষ্টির এত প্রতীক্ষা
আমি কখনো করিনি।
বৃষ্টি কি আসবে কোনোদিন?
[২০০৩ -০৪ এর ডাইরি
থেকে]
১
সবকটা টেলিফোন নম্বর
দেওয়া রইল তোমায়।
হারিয়ে যাওয়ার নয়,
খুঁজে পাওয়ার কথা বলছি।
সমস্ত ঠিকানা, সারাদিনের
প্রহরের পাঁচমিশেল
অনির্দিষ্ট নয়, চেনাজানা
পথের হদিশ দিচ্ছি
২
তুমিও ছেড়ে যাচ্ছ
তাহলে? যাও!
আমায় তো থাকতে হবে।
যেখানেই থাকি অথবা
যাই
মেশিনটায় জায়গা খুঁজে
নেওয়ার
ব্যাপারটা ধরতে হবে।
৩
দরজাটা আস্তে খোলো
এমনভাবে খোলো
যাতে মনে না হয় যে
আমরা
ভালোবাসি দামাল হাওয়া
কিম্বা বাইরে টলছে
রক্তাপ্লুত এক মানুষ।
দেশটা স্বাধীন আস্তে
বলো
এমনভাবে বলো
যাতে মনে না হয় যে
আমরা
ভরসা রাখি জনতার
লাগামছেঁড়া বন্যায়
কিম্বা পিছনে
প্রশ্নাকীর্ণ হয়ে
টলে দেশভাগ।
…………………
নরক
আসে ছদ্মবেশে
বন্ধুবেশে,
মুচকি হেসে,
সবার
চোখে ধুলো দিয়ে
ভিতরপাড়ার
খিড়কি দোরে –
লিপ্সা
ঢাকে ঈষৎ কেশে।
নরক চড়ে নেশার মত
মাথার
ভিতর, টালের ওপর –
অতর্কিতে
রূপ দেখিয়ে
জ্বালিয়ে
দেওয়ার, পুড়িয়ে দেওয়ার
নেশা
রক্তে নরক ভরে।
৩.১২.১৯৯৭
তার
বেঁচে থাকা মানে ভোর।
ঘরে
ঘরে জেগে ওঠা।
কোনো
একফালি জানলায়
কাগজ
ছাপিয়ে শব্দ,
শব্দ
ছাপিয়ে মুখ –
মুখের
বাগান কাঁপিয়ে কারো
হৃদয়বিদারি
ডাক।
…
হায়দ্রাবাদের
মাছ নিয়ে আসে ট্রাক।
১.১২.১৯৯৭
শৈশবের মঞ্জরিত রোদ
আবার নতুনভাবে জাগাব।
পলাশ ফুটবে ব্ল্যাকবোর্ডে।
শৈশব নিয়ে ছিনিমিনি
খেলার জবাব
দুনিয়াকে দিতে হবে।
জানলা আঁধার করা মেঘ।
মুখগুলো মুখ ছাপিয়ে দেখছি।
পরিত্যক্ত বিমানপথে ভোর –
ঋত্বিকের ভাবনায় –
আর সে মেয়েটির গান
হাড়ের গরাদে যত দিন বন্দি রাখতে পারা যায়,
রাখছি।
১০.৫.১৯৯৮
গোদাবরী রেলওয়ে জাংশনে
দিনের নদী অনেকটা উজানে গিয়ে জাগে
রাতে তার জাগরণ তটে উঠে আসে
বর্ষায় গাছ বেয়ে জড়ায় কোকিলের গলা
No comments:
Post a Comment