-
“বৃদ্ধকালে বুদ্ধি বাড়ে,
তুই শুধু প্রবুদ্ধ হলি না !
যদিও সর্বত্র আজ নির্মম এক নৈরাজ্য বিরাজে
ব্যবস্থার ধুন্ধুমার, লুঠমারে আক্রান্ত জীবন
যদিও সমাজ আজ বিত্ত আর ব্যক্তিগত
সম্পত্তির আধারে, অপস্মারে ওষ্ঠাগত প্রাণ
;
তবু এই অন্ধকারে, সত্যের কঠিন মূল্য তুই
বুঝেও বুঝলি না, দেখেও দেখলি না তোর শিক্ষকেরা
কেন দিনরাত অদৃশ্য আঙুল তুলে বলে যাচ্ছে দ্বন্দ্ব-আচরণ,
যুযুধান শ্রেণীযুদ্ধ, বৈজ্ঞানিক সমাজ চেতনা,
বয়েসের তিনকাল এক করে এখনও তো তোর কোনও চেতনা
হ’ল না ।"
- “বার্দ্ধক্যে স্থিতধী হয়, তোর চিত্ত-চাঞ্চল্য গেল না !
যদিও কৈশোর থেকে চিত্রকলা, কাব্য, গল্প নিয়ে
অতিদীর্ঘসূত্রতায় দীর্ঘকাল অকালে কাটালি ;
যদিও জীবন থেকে বিম্ব, চিত্র, প্রতিচ্ছবি সব
আহরণ করে গেলি, তুচ্ছ করে দুঃখ, পরিহাস
তবু ওই জীবনকে ক্ষুদ্র, ক্লিন্ন, খন্ডে, পলে
দেখে
আদৌ দেখলি না তুই মনুষ্য-সম্বন্ধ সব কি বিশাল,
ব্যপ্ত চরাচরে – সূক্ষ্ম, স্থূল, বিচিত্র, জটিল !!
বুঝেও বুঝলি না তুই, আচরণে দ্বন্দ্ব-প্রকরণ
যার প্রতি ছত্রে লেখা মানুষের গতি, পরিণতি
;
ভেবেছিলি শিল্পী হবি, আরে তুই মানুষই হলি না
!”
-
“বৃদ্ধকালে ব্যবস্থিত হয়, তুই রয়ে গেলি এক ছন্নছাড়া
দারুণ কিম্ভুত ! এখনও হ’লনা তোর বুদ্ধি বাস্তবিকতার
এখনও তৎপর তুই তৎসম শব্দ ব্যবহারে – জীবনের
জঞ্জাল স্তুপে, আনবি ব’লে সুন্দর আঙ্গিক
জীবনের সাথে যুঝে এখনও শিখলি না তুই
কি করে সংহত হয়ে ক’রতে হয় লক্ষ্যবিদ্ধ ঠিক ;
এবং এখনও দেখ, হাঁটুর বয়সী তোর নিত্যসাথী সব
বৈষয়িক কর্মকান্ডে, সম্পত্তি ও বিত্ত আহরণে
উঠে যাচ্ছে বৈভব্র অভ্রভেদী শিখরচূড়ায়
বয়েসের তিনকাল এক করে, তুই আজও সংগঠিত হলি
না”
উপস্থিত দর্শকেরা বিবেকের এই সংলাপে
ফেটে পড়ে ছিঃ ছিঃ ধিক্কারে
উচ্চকিত ঘৃণা, উষ্মা, শব্দ হয়ে ভাসে
প্রেক্ষাঘরে কঠিন আঁধারে
;
আলোকিত বৃত্ত জুড়ে সেই বৃদ্ধ বলে ঋজুভাষে –
-
“তুমি যা বলেছ সত্য, প্রায় ঠিকঠাক, তবুও বেবাক,
আশা আছে ততক্ষণ, যতক্ষণ শ্বাস ; আমারই
ভিতরে দেখ, স্তরে স্তরে জমে আছে অজ্ঞানতা,
সংস্কার,
আত্মম্ভরিতার – কঠিন পাথর, শিলীভূত স্তূপ সব
পরতে পরতে – আমারও জন্মের আগে থেকে ;
এসব বিদীর্ণ করে লড়ে যাচ্ছি বারবার ঘোর অন্ধকারে,
ধিক্কার যে যত কর, আমৃত্যু এই কাজ ক’রে যেতে,
চাই – বে-আক্কেলে ছন্নছাড়া আমি, এবগ অনেকটা
ঐ ক্ষ্যাপার মতন – যে শুধু এখনো খোঁজে
পথেঘাটে সমুদ্র-সৈকতে – জীবনের অগ্নিগর্ভ পরশপাথর !!
৫.১.১৩৯৮ (বাংলা সম্বৎ)
No comments:
Post a Comment