ওরা
পরে জলপাই রঙের কাপড় ।
ওরা
পরে মাটির রঙের কাপড় ।
কত
সুন্দর স্বাস্থ্য ওদের !
মজবুত
হাড় দিয়ে গড়া পেশীবহুল শরীর
যেন
পৃথিবীর আরো অনেক সকাল দেখে যাওয়ার শপথ !
আর
চলা !
শিরস্ত্রাণ,
বেল্ট, জুতো আর অস্ত্রে সজ্জিত
ওরা
কুচকাওয়াজ করে যায় –
এক কদম – এক আওয়াজ
হাজারটা কদম – এক আওয়াজ ...
কত
দুরূহ যাত্রার অনুভবে আবিষ্কৃত এই সংগীত !
আমাদের
চেতনায় আজ যা কিছু সুন্দর, আকাঙ্খিত
তার
নির্মাণের পথে এগোবার নির্ভূল পথের মতোই
নির্ভূল
ওই সংগীত !
দেশের
সবগুলো এলাকায় ছড়ানো ওদের ছাউনিগুলোর ওপর
রাতের
হাওয়ায়
রুটি,
ডাল আর গরম সব্জির গন্ধ ভাসে
তামাক
আর চায়ের গন্ধ ভাসে
ওদের
হাসি, ওদের গান, ওদের পুরুষালি কন্ঠস্বর ভাসে ।
আর
দেশের জনতা,
যারা
এসবকিছুই প্রতিদিন পেতে চায় –
যখন
দাবী তোলে,
ওরা
সন্ত্রাস ছড়াতে এগিয়ে আসে
ওরা
হত্যা করে ।
যেই
ধূলো যেই রক্তে ওরা গড়ে ওঠে
একদিন
তার বিরুদ্ধে ওরা গুলি চালায় ।
যে
দুটো চোখের প্রতীক্ষা মনে রেখে
ওরা
বরফের ঘা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় দুর্গম
সীমান্ত অঞ্চলে
একদিন
শাসকের আদেশে ফিরে এসে
সেই
দুটো চোখ ওরা বরফ করে দেয় ।
কৃষক
ও শ্রমিকের ওরা সন্তান ।
কৃষক
যে জমিতে কাজ করে
শ্রমিক
যে শিল্পোদ্যোগে কাজ করে
সেই
জমি, সেই শিল্পোদ্যোগ ওরা পাহারা দেয় ।
খাটে
ওরা শ্রমিকের মতো দল বেঁধে, মজুরি পায়;
কাজটার
প্রকৃতি যদিও কৃষকের কাছাকাছি ।
জমির
সীমানা,
দেশের
সীমানা,
চোখে
দেখতে পাওয়া যায় যে সীমানা
সম্পত্তির
কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা যে সীমানা
সেই সীমানা ওরা
পাহারা দেয় ।
মজুরির
সীমানা ওরা পাহারা দিতে পারে না ।
মুনাফার
সীমানাও না ।
বাজারের
অথবা বেকারীর
দামের
অথবা আকালের
সংকট
এমনকি সার্বভৌমত্বেরও সীমানা
ওরা পাহারা দিতে
পারে না
তাই
ওদের বসবার স্থান
শ্রমিক
ও কৃষকের মাঝামাঝি ।
জমির
লড়াইয়ে কৃষকের বক্তব্য কতটা স্থান পায় ?
দেশের
লড়াইয়ে সৈনিকের বক্তব্য ততটাই স্থান পায় ।
মজুরি
ও মুনাফার লড়াইয়ে
বাজার
ও বেকারীর লড়াইয়ে
দাম
ও আকালের লড়াইয়ে
সংকট
ও সার্বভৌমত্বের লড়াইয়ে
শ্রমিক যতোটা শ্রমিক হিসেবে
জয়ী,
দেশের
সীমানার লড়াইয়ে
সৈনিক ততোটাই শ্রমিক হিসেবে সৈনিক
।
বহুকাল
ওরা ঘরছাড়া ।
দেশের
সীমানায় ওরা কঠোর শ্রম করে চলে
পিছনে,
ওদের অজান্তে দেশ দুইভাগে ভাগ হয়ে যায় ।
শাসকের
নির্দেশে ওরা যে দেশকে রক্ষা করতে ছুটে আসে
সে
দেশ তখন কোথাও থাকে না ।
যে
দেশকে বস্তুতঃ তারা রক্ষা করে
সে
দেশ শাসকের দেশ ।
শ্রমিক
সেখানে দেশহীন হয় ।
কৃষক
সেখানে দেশহীন হয় ।
সৈনিক
সেখানে দেশহীন হয় ।
কঠিন
শ্রম করে ওরা ।
শাসকের
নির্দেশ মেনে মানুষের
মস্তিষ্ক কিম্বা শরীর
থেঁতলে দিতে
নিছক
পেটের তাগিদে কঠিন শ্রম করে ওরা ।
মাঝে
মাঝে
যখন
জেলের গরাদ ধরে মুচড়ে ওঠে আশার
আঙুলগুলো
ওরা
ছুটি পায় ।
যে
কোনো প্রবাসী মানুষের মতো
বিভিন্ন
অঞ্চল থেকে ওরা বাড়ি ফেরে ।
ফেরার
সময়
নিজের
ছোটো সন্তান কিম্বা ভাইয়ের জন্য
খেলনা
নিয়ে আসে ।
নিজেদের
ট্রিগার
আর নামহীন লাশের গন্ধে ভরা হাতে
ওরা
সেই খেলনাগুলো কিনে আনে।
দূর
থেকে ওদেরও চোখে ওদের নিজেদের বসত
বৌয়ের
খোলা বুকের মতো কাছে টানে ।
ট্রেনের
জানলা দিয়ে ওরা দেখে
পিছনে
উধাও হতে থাকা প্রান্তর ... গ্রাম ... শহরের পর শহর
কত
পরিচিত ওদের এই জায়গাগুলো ।
কতবার
এইসব জায়গায় ওরা হত্যা করেছে !
জানালার
ঝাঁপ বাজিয়ে ওরা দেশোয়ালি ভাষায় –
যাদের
হত্যা করেছে ওরা তাদেরই ভাষায় গান গায় ।
ওরা
কি ডাইরি লেখে ?
কী
কথা হয় নিভৃতে
ওদের পরিবারের সাথে
?
চিরসবুজ
জঙ্গল, মরশুমি হাওয়া আর কর্কটরেখীয় রোদে ভরা এই দেশ ।
মানুষের
আকাঙ্খার ওপর অবিরাম মৃত্যুবর্ষণের
ধূসর
দিশাহীন অন্ধকারে
এ
দেশের দশকগুলো হারিয়ে চলেছে ।
তবু
আদিম অরণ্যে জ্বালানো প্রথম আগুন
প্রাণের
সত্তায় যে এক ফুলের সম্ভাবনা এনেছিলো
তার
সবচেয়ে নতুন পাপড়িগুলো
ঘোষণাপত্র
হয়ে ফুটে উঠছে সেই দেশগুলোয়
যেখানে
মেহনতী দুই হাত
প্রভুত্ব
কায়েম করেছে মেহনতের লক্ষ্য ও সাধনের ওপর ।
এদেশের
আকাশের নিচেও বার বার
তার
একটি পাপড়ি উন্মীলিত হতে চায় ।
তখন
বার বার
পিপাসায়
উজ্জ্বল হয় রাত !
আর
পিপাসায় উজ্জ্বল ওই রাতগুলোয়
এদেশের
শাসকদের ঘুম ছুটে যায় ... ।
প্রশস্ত
হলঘরে
গোলাপের
ফুলদানির পাশে
ভোট,
শস্য, কাপড়, ইস্পাত আর হিংসার ইজারার
আদান
প্রদান করতে থাকা
ফ্যাকাশে,
কাপুরুষ আর ফাঁসির দড়ির মতো মসৃণ নিঃশব্দ হাতগুলো
ঈষৎ
কেঁপে ওঠে ।
ব্যস্ততা
বেড়ে যায় বিত্ত, গৃহ ও নানাবিধ মন্ত্রালয়গুলোয় ।
আমাদের
ঘরে নুন আরো নোংরা আসে
রুটি
আরো কালো হয়,
ভাত
দলা পাকিয়ে যায়, ঘরের যুবতী মেয়েদের
মাথার
চুল ওঠে বীভৎসভাবে,
জানালার
কাঠে বন্যার গন্ধ ওঠে সারা বছর ...
আর
ওরা জন্ম নেয়
অস্ত্রসজ্জিত,
সুন্দর, জলপাই আর মাটির রঙের কাপড় পরে ।
টেলিফোন
লাইনে ছুটে যায় হত্যার আদেশ আর প্রলোভন ।
সার্চলাইট,
জীপ আর টহলদারীতে ভরে যায় রাতের
ঘুমিয়ে
থাকা শহর, মফস্বল আর গ্রামের এলাকা ।
তীব্র
আলো সহসা খুঁজে নেয়
দেওয়ালের
কাছে –
ব্রাশ
আর রঙের ডিবে হাতে নিয়ে দাঁড়ানো
একটি নতুন
মুখ ।
অনেক
দিন পর বাড়ি ফিরে
মায়ের
সাথে কথা বলতে থাকা
একটি
শ্রান্ত কাঁধ ।
লন্ঠনের
আলোয়
ভবিষ্যতের
পান্ডুলিপি ঘিরে থাকা
কিছু
উত্তেজিত হৃদয় ।
জীপের
ইঞ্জিন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে থামে ।
আর
ওরা
এদেশের
সশস্ত্র বাহিনীর লোকেরা
এগিয়ে
আসে
আর
স্বপ্নের কন্ঠনালী চেপে ধরে ।
কিভাবে
তৈরি হয় ওই কন্ঠনালী ? স্বপ্নের ?
ওরা
কি জানে যে ওদের সঞ্চালিত করে যারা –
কত
অসহায় তারা বস্তুতঃ ?
যে
ওই সহজ নিয়মটাকে তারা রদ করতে পারে না, যাতে
যতো
ভয়াবহ আকাল তারা হানে
ততোই
সুন্দর ফল ও গরম দুধে ভরা সময়
তারা
আনতে বাধ্য হয়
আকালপীড়িত
মানুষের কামনায় ।
যতো
বন্যা ও খরা তারা হানে
ততোই
বেশি সেচ প্রকল্প ও হাইডেল
তৈরি
হয় বন্যা ও খরাপীড়িত মানুষের চেতনায় ।
যতো
বেশি অন্যায় তারা হানে
ততো
নির্দিষ্ট হয় তাদের বিরুদ্ধে ন্যায়ের
বুনিয়াদ
মজবুত করার জন্য জরুরি
ভবিষ্যৎ
রাষ্ট্র সংগঠন ...
ওরা
কি জানে যে ওদের সঞ্চালিত যারা
কত অসহায় তারা বস্তুতঃ ! –
যে শ্রমের মুক্তির ইচ্ছা দমন করার জন্য তাদের
সবচেয়ে বেশি সংগঠিত, শক্তিশালী
ও সশস্ত্র শ্রমিকবাহিনীর জন্ম দিতে হয় ?
No comments:
Post a Comment