আসানসোল। রাত ।
কুড়ি হাজার ভোল্টে ফুলকি ছুটিয়ে
কলকাতা থেকে বিহার, উত্তরপ্রদেশ
হয়ে দিল্লীর দিকে
মিলিয়ে গেল শেষ ট্রেন।...
যদিও ভারতবর্ষের বেশির ভাগ রেল স্টেশনে এর পরেও
(যুদ্ধ নেই তবু) প্রায় যুদ্ধকালীন বিস্ত্রস্ত ভীড়।
আর তাছাড়া
বেশীর ভাগ ডিস্ট্যান্ট সিগন্যালের ওপারে অন্ধকারে
বুর্জোয়া যোজনার বাদলাঘাট
কালো জল নিয়ে ফুঁসছে
আর বেশির ভাগ ফিসপ্লেট ঢিলে হয়ে আছে ভারতের
সংবিধানের কোনো না কোনো একটি ধারার সুবিধাবাদে।
জি টি রোড।
একের পর এক মাল বোঝাই ভারী ট্রাক
এগিয়ে এসে
শান্তির ক্ষণিক নীরবতা পিছনে রেখে মিলিয়ে যাচ্ছে।যদিও তারপর হাইওয়ে গুলো ভেঙে
ভাগবাঁটোয়ারা হয়ে গেছে বিভিন্ন বিকাশ কার্যক্রমের
শরিকদের বাড়ির দেওয়ালে কিম্বা লকারে।
বন্দরে পচছে রসায়ন, যন্ত্রপাতি ও শেক্সপিয়র রচনাবলী,
কেননা বাজার নেই।
কেননা আরো বেশি শ্রম নিংড়োতে দেওয়ার শর্ত ছাড়া
মালিকের ওগুলো খালাস করাবে না আর
শ্রমিকেরাও আর সে অবস্থায় নেই
যে বিনা বাধায় তা হতে দেবে।
গুদামে পচছে শস্য।
হাতের আঙুলের জোড়ে অনেকগুলি বসন্ত বৃথাই টাটিয়ে
যাচ্ছে।
ওই রেললাইন ও হাইওয়ের দুধারে প্রদেশের পর প্রদেশ
সেই অবধারিত খাল।
যদিও হয় কিছুতে জল নেই, নয়ত বেশি জলে
খাল ক্ষেত একাকার বা জল ঠিকমতো থাকলেও
লাঠিয়ালের জায়গায় বন্দুক এসেছে আর
চিরস্থায়ী বন্দোবস্তের কুমিরের রঙ পাল্টেছে
ভূমি সংস্কার আইনের সংশোধনের সাথে সাথে।
সারাটা ভারতবর্ষ আজ উপগ্রহের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।সারাটা ভারতবর্ষ আজ
ছোট ছোট উপগ্রহ আর বিক্ষিপ্ত গ্রহাংশে পরিণত হতে চলেছে
নিঃসন্দেহে একান্ত জরুরি ভারতবর্ষের একতা।
আর তারই জন্য একান্ত জরুরী
শোষক ও শোষিত ভারতবর্ষের পরিষ্কার বিচ্ছিন্নতা।
সীমান্ত বিহারে ইউনিয়ন ট্যুর সেরে এসে
সীমান্ত বাংলার একটি শহরে
হোটেলের ভাঙা ঝুলধরা জানালার ভিতরে ঘরে
আমরা –
আমি ও আমার হিন্দিভাষী সাথী
নিচুস্বরে আলোচনা করছি –
ভারতের শ্রমিক শ্রেণীর শ্রেণীগত ভাবে
দেশের ও পৃথিবীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক গতিতে
হস্তক্ষেপ
ত্বরান্বিত ও ব্যাপকতর করার
আশু কার্য্যসূচী।
আসানসোল। রাত।
মানুষের পায়ের ছাপ নিয়ে আধা-চাঁদ
ঈষৎ কুয়াশাচ্ছন্ন অক্টোবর শেষের আকাশে।
[১৯৮১]
No comments:
Post a Comment