বাপ
মায়েরা বিশ্বযুদ্ধ আর আকাল দেখেছিলো ।
চটকলে
ছাঁটাই হয়ে রজ্জাক
এই
ছোট্টো শহরে এসে বিড়ির দোকান দিয়েছিলো ।
“বেশ তো চলছে দোকানটা”
রজ্জাকের
বৌ ছেলেকে বোঝায়
“বড়ো হচ্ছিস,
বুড়ো
বাপকে সাহায্য কর !
তোর
নামেই দোকান,
না
হয় দুটো রুটি কম, তবু
রোজই
জুটবে তো?
বাইরে
গিয়ে কাজ পাওয়া সোজা কথা ?”
ছেলের
মন তবু মানে না ।
ওর
রক্তের ভিতর কাজ করে
সময়ের
ঘোড়ায় চড়বার মারাত্মক নেশা –
“দেখাই যাক না দুনিয়ার
হালচাল
হাতে
পায়ে জোর থাকতে মরবো কেন ?” ...
ওকে
টানে এক-পাঁচের টিকিটে দেখা আলোয় ঝলমল
বিশাল
শহর
গতি
আর কোলাহল ...
পরবের
রাতে গলির মুখে টাঙানো পর্দায়
হাওয়া
খেলে –
দোলে
সুনসান মেরিন ড্রাইভ ...
স্বপ্নের
জগতের রহস্যময় ঠিকানা সব !
ওরা
তিন বন্ধু পালিয়ে যায় বম্বে মেল ধরে ।
২
“কোথায় দাঁড়ালো ট্রেনটা
?”
জানালায়
মাথা গলিয়ে বাইরে
অন্ধকারে তাকায় কলিম ।
পাটনার
এঁদো গলিতে কাদায়
চোদ্দ
বছর ধরে বেড়ে ওঠা কলিম
মধ্যপ্রদেশের
তারার নিচে
নিঃসীম
অন্ধকারে তাকিয়ে থাকে ।
পাহাড়ের
গন্ধ ভরা হাওয়া নাকে এসে লাগে ।
“কি ভাবছে আম্মা ?
আব্বাজান
?” ...
বাপের
কাঁধে চড়ে চার বছরের কলিম একবার
সোনপুরের
মেলায় গিয়ে মাটির বাঁশি কিনেছিলো । ...
কলিমের
ভয় ভয় করে ।
দুই
সাথীর মুখের দিকে তাকায় ।
ষোলো
বছরের রফিক পোড় খাওয়া বেশী ।
একবার
কলকাতা পালিয়ে গিয়েছিলো ।
রফিক
সামাল দেয় –
“ঘাবড়াস না ।
নে,
বিড়ি ধরা ।”
কলিম
বিড়ি ধরিয়ে কাশে ।
ওর
ঘুম পায় ভীষণ ।
ট্রেনে
এক রত্তি জায়গা নেই ।
ওপাশে
কিসের ঝগড়া শুরু হলো হঠাৎ ?
বেঞ্চে
বসে দুটো লোক হাসতে হাসতে কথা বলছে ।
... সব ঠিকেদারের ব্যাপার !
গ্রাম ঝেঁটিয়ে লোক নিয়ে চলেছে ।
ফসল খারাপ । কাজ নেই । তা কাজ দেবে বলে
নিয়ে চলেছে ঠিকেদারের দালাল ।
নেবার
সময় বলেছিলো রাস্তায় খেতে দেওয়া হবে ।
এখন
বলছে যে যার মতো কিনে খেয়ে নাও
পরে
হিসেব হয়ে যাবে ।
হিসেব
হবে কচু । ...
কলিমের
শুনতে শুনতে খিদে পায় ।
ওদিকে
ঝগড়াটা বচসা থেকে হাতাহাতিতে উঠেছে ।
ট্রেন
চলতে শুরু করে । ...
ভোর
রাতে ঘুম ভাঙে ।
চেকিং
।
রফিক
সাবধান করে দেয় – “খবরদার ।
বাড়ির
ঠিকানা বলবি না ।”
৩
জেল
থেকে বেরিয়ে আসে ।
স্বপ্ন
নয়
অন্য
কিছু ঠিকানা পকেটে নিয়ে ।
মুম্বই
– মাহিম বস্তি, ভিক্টোরিয়া
গোদি,
ছোটো বড় সমস্ত রেস্তোরাঁ,
ঠিকানা
দেখে ঘুরে ঘুরে
অবশেষে
কাজ পায় কলিম ।
থাকার
ঘর নেই, ফুটপাথ
খাবার
গলায় আটকে যায় –
খারাপ
বলে ততোটা নয় যতটা
‘ঘর’ ও ‘আজাদি’র দোটানায় ।
তবু
পিছনে কে ফেরে ?
একজন
বলেছে একটা ভালো কাজ পাইয়ে দেবে ।
ইস
!
সদ্য
পরিচিত ওই গোদির ছেলেটা
লাট
সাহেবের মত ঘোরে ।
মটোর
মেকানিকের কাজ শিখে নিয়েছে ।
দাঁতে
বিড়ি চেপে কথা বলে । ...
বলুক
।
কোই
বাত নহীঁ !
আমিও
বলবো ।
ব্যাস
কোনো একটা ভালো কাজ শিখে নিই ।
তারপর
। ...
তাছাড়া
সারাদিন সারারাত
চোখের
সামনে মুখর বিশাল শহর ।
সেদিন
আন্ধেরীতে গিয়েছিলো ।
সেই
রাজকাপুর । মোটা বাম্পু হয়ে গেছে !
ডকে
লেগে থাকে বিরাট সব জাহাজ ।
ঝিলমিল
করে আরব সাগর ।
মরিশাস
ওদিকেই না ?
লাক্ষাদ্বীপ
? জাঞ্জিবার ? আরব ?
ওদিকে
শুনেছি লেবারের খুব ডিমান্ড আছে ?
সতেরো
বছরের কলিম
পোড়
খাওয়া হাতে সুর্যকে আড়াল করে
পিপাসার্ত্ত
চোখে সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকে,
মায়ের
হাতের বেড় থেকে অনেক
দূরে
দাঁড়িয়ে ।
৪
রজ্জাকের
বিড়ির দোকানে
ফ্লোরা
ফাউন্টেনের ছবিওয়ালা ক্যালেন্ডার
বিবর্ণ হয় ধীরে ধীরে ।
দু’বছর ... পাঁচ বছর ...
দশ বছর ... ।
কতো
জায়গা থেকে দুর্ঘটনার খবর আসে ।
মা-বাপ
ভয় পাওয়া ছেড়ে দিয়েছে এখন ।
মন্ত্রগোণা
খবর পেয়ে দু’বার কলকাতা, দু’বার বোম্বাইও
গিয়েছিলো রজ্জাক ।
কোনো
হদিশ পায়নি । কেজানে কোথায় আছে কলিম ।
কলিমের
ছোটো ভাই এখন কিশোর ।
লুঙ্গি
পরে একাই দোকান সামলায় ।
বাপের
থেকে বেশী ওস্তাদ,
পরিবারের
ভার কাঁধে নিয়ে ভারিক্কী চালে হাঁটে ।
৫
কোথাও
খনি ধ্বসে যায়
কোথাও
মাচান ভেঙে যায়
ভারাশুদ্ধু
হুড়মুড় করে নেমে আসে বহুতল বাড়ী,
কোথাও
শহর ভেসে যায় সমুদ্রের ঝড়ে,
মাঝে
মাঝেই গুলি চলে বিভিন্ন এলাকায়
অথবা
বিষাক্ত মদ খেয়ে লাশ হয় পুরো একটা বস্তী,
কোথাও
আগুন নেবে না সবকিছু না পুড়িয়ে দিয়ে –
কলিমেরা
মারা যায়
কলিমেরা
বেঁচে ওঠে ।
কেউ
মিথ্যে স্বপ্ন নিয়ে গিয়েছিলো
কেউ
সামান্য রুটির আশ্বাস নিয়ে গিয়েছিলো
ভেদ
মুছে যায় –
জেগে
ওঠে
প্রতিদিন
বেঁচে থাকবার তাগিদ আর লড়াই,
প্রতিদিন
বেঁচে থাকবার ঝাঁঝালো অনুভব ।
আর
জেগে ওঠে
উনিশশো
আশির এই ভারতবর্ষে
প্রতিদিন
বেঁচে থাকবার জন্য জরুরি মিছিল আর
লালঝান্ডার
সাথে পরিচয় ।
কেউ
সহজ বিশ্বাসে নিজের করে নেয়,
কেউ
সন্দেহে পাশ কাটিয়ে থাকে কিছুদিন,
তবু
বন্ধের একটা ডাকে নিস্তব্ধ হয়ে যাওয়া
এলাকাটা
দেখার গর্ব ও আনন্দ
মুখ
দিয়ে বলিয়ে ছাড়ে – “বুঝলি !
এই
হলো মজদুরের তাকৎ !”
পাঁচ
সাত বছর পর একটা করে সঙ্কট,
পাঁচ
সাত বছর পর একটা করে তুমুল হয়ে ওঠা
জন
আন্দোলন ...
কে
গিয়েছিলো দিলীপকুমার হতে ?
কে
গাইতো মুকেশের গাওয়া, শৈলেন্দ্রের
দুঃখের
গানগুলো !
তার
মুখ দিয়েও বলিয়ে ছাড়ে জীবন
শৈলেন্দ্রের
অতীত গান ও আজকের স্লোগান
“... হর জোর জুল্মকে
টক্কর মে,
সংঘর্ষ হমারা নারা
হ্যয় ।”
৬
পাটনা
স্টেশনে
ট্রেনের
জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখে লোকটি ।
আঠাশ
বছরের যুবক ।
খাকি
প্যান্ট আর চেকের শার্ট গায়ে ।
পকেটে
সিগারেট, দেশলাই আর ঘামে ভেজা রুমাল ।
দাড়ির
গোড়াগুলো শক্ত ।
কন্ঠস্বর
ভারি, পশমি ।
ট্রেনের
জানালা দিয়ে বাইরে তাকায় ।
ভোরের
আলোয় তার শৈশবের শহর,
ছোট্টো
শহরটা হাসছে ।
ক’বছর হলো ?
দশ
? বারো ? চোদ্দ ?
শেষ
ছ’বছর বাড়ীতে চিঠি দেওয়া
শুরু করেছিলো ।
তার
উত্তরও পেয়েছিলো ।
মা
বাপের আকূল ডাক ।
ছোটো
ভাইয়ের গম্ভীর, দাদার মত উপদেশ ।
কিন্তু
প্রথম দু, তিন বছর তো পয়সাই ছিলো না ফিরবার ।
আর
শেষ তিন বছর সে ইচ্ছে করে ফেরেনি ।
কেননা
সলমাকে স্বীকার করে নেয়নি বাড়ীর লোকেরা ।
সলমার
মুখটা মনে আসে হঠাৎ ।
সীটের
একপাশে রাখা
সলমার
রুমালে বাঁধা আপেলটা দেখে ।
রাত্রে
খায়নি সে ।
এই
শহরে নেমে ওটার স্বাদ পেতে চেয়েছিলো ।
তার
বৌ সলমা ।
বুড়ো
ক্রেন ড্রাইভার আফজলের মেয়ে ।
পঁয়তাল্লিশে
করাচি থেকে এসে
বোম্বাইয়ে আস্তানা গেড়েছিলো আফজল
।
না,
সলমাকে
নিয়ে এসে এবারে
ঝামেলা পাকাতে চায়নি কলিম ।
আগে
ব্যাপারটা রপ্ত হোক,
তারপর
।
উঠে
দাঁড়িয়ে
সফরের
সাথী
সামনের
দাড়িওয়ালা লোকটিকে হেসে বললো –
“চলি মশাই
এক
দেশে পৌঁছে গেলাম
অন্য
দেশ মনে পড়ছে ।
বলছিলাম
না কাল রাতে,
যেখানেই
ভালোবাসা, সেখানে দেশ ?” ...
ভিক্টোরিয়া
গোদির মটোর মেকানিক কলিম
পাটনা স্টেশনের
বাইরে এসে দাঁড়ায় ।
সকলকেই
মনে হয় পরিচিত ।
কথা
বলতে ইচ্ছে হয় বাস কন্ডাক্টরের সাথে
“চিনতে পারেন ?
বাসের
যাত্রীরা সকলে ? চিনতে পারেন ?
আমি
সেই ছোট্টো কলিম ।
পাওয়ার
হাউজের চিমনি !
পার্ল
সিনেমা !
এক-পাঁচের
ভোল পালটে যাওয়া টিকিট ঘর !
চিনতে
পারলেন ?
দশ
লক্ষ মানুষ ! চিনতে পারলেন আমাকে ?”
চোদ্দ
বছর পর কলিম
তার
গুলি ডান্ডা খেলা ছোট্টো গলিটার ভিতরে ঢোকে ।
আর
হঠাৎ
বাড়ির
দরজাটার দিকে তাকিয়ে
চোদ্দটা
বছর তার চোখ বেয়ে নেমে আসে ।
চোদ্দ
বছর সে ভাবেনি
বাড়ি
ফেরা যে এত অসহ্য বেদনাদায়ক
ভালো লাগা হতে পারে । ...
দরজা
খোলা ছিলো ।
তবু
পরিচিত বারান্দাটায় সে ঢোকে না ।
বাইরে
ভেসে আসে পাঁচটা পরিবারের কোলাহল ।
সে
কড়া নেড়ে যায় ।
কড়া
নাড়তে তার ভালো লাগে ।
৭
ওরা
দশটা জীবন পার করে ওদের একটা জীবনে ।
এতো
বড়ো দেশ ভারতবর্ষ
এদেশের
শিরা উপশিরায়
ওরা
ঝোড়ো রক্তের মতো ঘুরে বেড়ায় ...
মেসের
রাঁধুনি ছেলেটা অস্থায়ী দারোয়ান হয় ব্যাঙ্কের
তারপর
চায়ের স্টল দেয় বাজারে পঞ্চাশ টাকা ধার নিয়ে
তারপর
রিকশাওয়ালা
অথবা
বাদামের ফেরিওয়ালা
কিম্বা
ডিম বেচে সন্ধ্যায়
তারপর
একদিন জি টি রোড পার করে বালির ট্রাকে
ঝরিয়ায়
রাতের শিফটে ভূগর্ভে ঢোকে –
ডেটোনেটরের
কর্ডের রোলটা কিছুদিন
মিথ্যা ভয়ে টপকে পেরোয় ।
সেখানেও
বেশি দিন নয় ।
কিছুদিন
ধানবাদ পাথরডিহি ট্রেকারের ক্লীনার
তারপর
পাকাপোক্ত ড্রাইভার
তারপর
কে যেন খবর পাঠায় তার ঘর
সীতামঢ়ী
থেকে
ফিরে
গিয়ে কাঁটি থার্মালে পাকা একটা কাজ পায় ।
কল্যাণের
সেই ছিপছিপে ফর্সা ছেলেটি !
রেসিন
প্ল্যান্টে বাবা মারা যাওয়ার পর
বন্ধুদের
চক্করে পড়ে
মেরিন
ড্রাইভে গিয়ে তিনপাত্তি শুরু করেছিলো
সেখানে
মারপিট করে বম্বে সেন্ট্রাল জেল ...
বেরিয়ে এসে
খান্ডালা
থেকে বেলগাঁও ফেরিওয়ালা
তারপর
পুণায় – কোন্ না কোন্
কোম্পানির এজেন্ট
হাতে
ব্রীফকেস –
কোলহাপুর
এক্সপ্রেসের বগিতে
মেঝেতে কাগজ পেতে
বসে ওরা
চারবন্ধু
ব্রীফকেস বাজিয়ে কাওয়ালি গাইতে শুরু করে ।
বাহাত্তরে
চেকের লুঙ্গি পরে, ঠোঁটে বিড়ি গুঁজে
কাঁটাতারের
ফাঁক দিয়ে গলে বাংলাদেশ গিয়েছিলো
সুনীত
।
কার
না কার ঠাকুর্দার সম্পত্তি ক্লেম করে
কিম্বা
অন্য কোনো রকম ভাবে
যুদ্ধ
শেষের বাজারে মাল কামাবার ধান্দা করেছিলো ।
হালে
পানি পায়নি ।
কোথায়
কোথায় ঘুরলো তারপর ।
মাঝে
পরিবারের ব্যবসা, মিষ্টিও বিক্রী করলো কিছুদিন ।
সেদিন
হঠাৎ দেখা হলো,
রক্সৌল
এলাকার নাম করা রেফ্রিজারেটার মেকানিক,
সাথে
স্মাগলিংটাও উপরি হিসেবে রয়েছে ।
শুধু
এরাই নয় । কোডাইকানালের মেয়ে এগনেস
হাসপাতালের
ভ্যানে ঘুরে বেড়ায় দক্ষিণ বিহারের গ্রামে ।
জানালা
দিয়ে দেখে
বাচ্চাটা
মোষের পিঠে চড়ে
ওদের দিকে তাকিয়ে আছে
অবাক হয়ে –
কেন
ওই বাচ্চাটা মরে যায় বারবার ?
কলেরায়
? বসন্তে ? দুর্যোগে ? ...
হাসপাতালে
ভূস্বামীদের লম্পট ছেলেগুলো
জুলজুল
করে তাকায়, ইশারা করে –
ও দাঁতে দাঁত চেপে
সহ্য করে,
“শালা নার্স মানেই যেন ...”
সামনের
বছর ও কানাডা যাওয়ার চেষ্টায় আছে ।
“মিডল ইস্টও হতে পারে,
যুদ্ধ তো লেগে আছে হামেশাই ।”
মোজাটা
পরতে পরতে এগনেস
শশীর
ছবিটার দিকে চোখ ফেলে একবার,
জুতোর
ধুলো ঝাড়ে মেঝেতে পটকে ।
লামডিংএ
কুলিরা ঘিরে দাঁড়িয়ে বলেছিলো –
“সারা দুনিয়ায় কুলি মানে
বিহার উত্তরপ্রদেশ,
বাবু
মানে বাংলা । ...”
বিনাটিকিটে
বিদিশা অব্দি পৌঁছোতে পেরেছিলো
জব্বলপুরের
ওই বাচ্চা ছেলেটা ।
রেলিং
টপকে পার হয়ে তারপর
ঝুড়ি
মাথায় উদয়গিরির কাছে
হাজার
বছরের ভূস্তর সরিয়ে রাজত্বের
কঙ্কাল বার করতে লেগে
গিয়েছিলো ।
আর
কেরলের রাস্তার সেই অনাথ ছেলেটা ?
সমুদ্র
প্রেমিক ?
জুতো
পালিশে দিন না চলাতে ট্রেনে চেপে বসলো ।
সফরি
রোজগারে পেট চালাতে চালাতে
পাড়ি
দিলো তিন হাজার মাইল ।
পারাদীপ
।
সেখান
থেকে ফিরে কলকাতা ।
তখন
সারা দেশে সংকট ।
বেকারের
সংখ্যার কোনো হিসেব নেই ।
শ্রমিকেরা
পর্যুদস্ত ।
খুন,
রাহাজানিতে রাতগুলো চটচটে কালো ।
তবু
হাতে পাওয়া সিঁদুর কারখানার কাজটা
সে ছেড়ে দিলো ।
কেন
না একদিন
বর্ষা
বাদলা আর ঝড়ের সন্ধ্যায় সে শুনলো,
বঙ্গোপসাগরে
তুফান উঠেছে ।
আর
তার মন কেমন করে উঠলো তার ছোটোবেলার সাথী
আরবসাগরের
কথা ভেবে ।
এলাহাবাদে
জেল খাটলো তিনমাস ।
মানমাডে
আবার ।
সাত
মাস পরে বোম্বাই ।
কোথাও
কাজ নেই ।
না
খেয়ে মাথা ঝিমঝিম করছে ।
ব্রীজের
ওপর শুয়ে পড়েছিলো প্রায় অচেতন ভাবে ।
একজনের
উপদেশ শুনে গোয়ায় পাড়ি দিলো ।
তার
সাথে গোয়াতে যখন আমার দেখা হয়েছিলো
রাতের
নির্জন সমুদ্রতীরে
একমাত্র
মদের দোকান আর রেস্তোরাঁটায় –
আমার
দিকে চায়ের গেলাস বাড়িয়ে দিয়ে
পরিষ্কার
বাংলায় বলেছিলো –
(পাঁচ
ভাষায় সম্ভাষণ করতে জানা
বছর পঁয়ত্রিশের
সেই লোকটা)
“হ্যাঁ, মাইনে এখানে
কম;
কিন্তু
সমুদ্র আছে যে !”
[১৯৮০]
No comments:
Post a Comment