জলাধার!
ভিতরে স্বচ্ছ টঙ্কার, তরল পৃথিবীর।
নিচে মেশিনের গুঞ্জরণে
লুপ্ত টেথিসের নিয়ন্ত্রিত আলোড়ন।
ওই স্তম্ভ আমার হাত ছিল।
সিমেন্টের ওই পাত্র – করতল, অসহায়
ঊষর মরুর ঝলসান আকাশের দিকে উঠেছিল।
অনেক নদীতীরে,
অনেক চাঁদের বছরের
একই শক্তি ও শৃঙ্খলে
আঁকা হয়েছিল প্রথম
অভিনিষ্ক্রমণ।
জলাধার!
পাখি ও হাওয়ার পথে জলের শহুরে ঘর।
ঘরে জলের পদশব্দ – প্রাচীন,
উচ্ছল!
জল!
একদিন তোমারই সন্ধ্যায় জনপদ গড়তে ডেকে
তারপর
বজ্রদীর্ণ রাতে
কুল ছাপিয়ে গর্জন করে এসে
ভেঙেছিলে উনুন,
মাটির পাত্রে আঁকা আমাদের পাতার গুচ্ছ
আর তারা। ...
আমরা ভয় পেয়েছিলাম।
মা তো প্রেয়সীও!
তবু নবজাত আমরা সেই রাতে
নগ্ন, বন্য অভিসারে দেখে তোমায়
ভয়
পেয়েছিলাম –
বাঁধ দিতে শিখিনি তখনো
দিতে পারিনি ব্যারাজ, টার্বাইন।
ভাঙা বসত আর মৃত হাড়ে কিছুটা পলিস্তরে
ডুবে তাই আবার
ছড়িয়ে পড়েছিলাম ... ।
কতবার রঙ আর গঠন বদলাল মাটির;
নতুন ফল, নতুন ধাতু আর নতুন যুগের দিকে
তবু
তোমারই নাম ধরে এগিয়েছি –
ইউফ্রেটিস, সিন্ধু, নীল, দানিয়ুব, ইয়াংসি,
আমাজন ...
আর আজ গঙ্গার পাড়ে এক মেঘলা সকালে
এই জলাধারের সামনে আমি দাঁড়িয়ে –
জল!
তারল্য, প্রণয়িনী বসুন্ধরার!
আমাদের কংক্রীটের হৃৎপিন্ডে তুমি বাজছ।
তুমি প্রাথমিক আয়না।
মুখচ্ছবি দিয়েছিলে।
মৃত্যু স্পর্শনীয় হল
(হয়ত অরণ্য হেসেছিল আমাদের মূর্খতায়
–
কোথায় গেল চতুর খরগোশ?) –
আজ
সহজভাবে বলতে পারি, ‘জল!
তুমি আমারই শঙ্খনাদে, কালবোধের
আঁধার
জট থেকে এক শুক্লা তৃতীয়ায়
উজ্জীবনে ফিরেছিলে ...’
ভাষার জলপাত্রে, নিজেরই তান্ডবের
মরমে
রুপোলী মাছ হয়ে থাকার
কবেকার প্রসঙ্গ এসব –
জেলেবস্তীর বারোমাস,
তোমার সাথে আমাদের ভালোবাসা ও কলহের
মাঙ্গলিক।
জলাধার!
পাখি ও হাওয়ার পথে জলের শহুরে ঘর।
ঘরে জলের পদশব্দ – প্রাচীন,
উচ্ছল!
মানুষের নিজস্ব আছে একটি মাধ্যাকর্ষণ।
জল!
তোমাকে সে নিজের কাঁধের আকাশে ওঠাল।
ভিস্তিওয়ালা! ভিস্তিওয়ালা!
পিঠে
টইটুম্বুর মশক!
বাঁশিগুলো ছড়িয়ে দিল সে শহরের মাটির
নিচে নিচে।
.................................
সকাল হয়।
রন্ধ্রে রন্ধ্রে উপচে পড়ে নদীদের আহ্লাদী
দুপুর –
ঘরে আনতে মাথা ফাটে মায়ের। ছোটো বোনের
...। ভিস্তিওয়ালার
ফুসফুসে কেন বালি, মরুভূমির?
জলাধার!
পাখি ও হাওয়ার পথে জলের শহুরে ঘর।
ঘরে বেদনার ডানার শব্দ – প্রাচীন,
ভারী!
জল!
কবে প্রথম চেতনায় ভাসল মরামাছ?
কবে চড়া হলাম?
কবে তুমি হলে হিংসা?
কবে ইশতাহার?
...............
...............
নীল আকাশের বুকে জলাধার –
রাস্তা থেকে একটু দূরে, কলোনীতে
কারো
ভেজা কাঠের গেটের ঠিকানা!
হেলিকপ্টার থেকে নিচে, ক্যামেরায়
শহরের ভাঁজে জলাধার, গায়ে শ্যাওলা এবারের
বৃষ্টির;
গোলাপি নারকোলকুচি ফুল
সিঁড়িটাকে
জড়িয়ে ধরেছে;
খুব কাছের ছবিতে আমার শতাব্দীর
করুণার
মত এক ষোড়শীর
চঞ্চল
দুটো চোখ ...
[৮০র দশকে কখনো]
No comments:
Post a Comment