১০০০এ ব্যাটালিয়ন *৩ ব্রিগেড *৩ ডিভিজন (ডিভিজনে ও
রেজিমেন্টে একই সংখক লোক, ব্যাটল ডিভিজন তৈরি হয় বিভিন্ন রেজিমেন্ট থেকে লোক নিয়ে)
*৩ কোর *৩ আর্মি *৮৬ আর্মি
ইনফ্যান্ট্রি
আর্মার্ড গ্রেনাডিয়ার্স সিগ্ন্যালস
ইঞ্জিনিয়ার্স – ফোর্স
বাকি মেডিক্যাল, কিচেন ইত্যাদি -সার্ভিসেস
এ ডি এস = এডভান্সড ড্রেসিং সার্ভিসেস, (আর্মি ডেভেলাপমেন্ট সার্ভিসেস?)
সি ও(কম্যান্ডিং অফিসার),
২ আই সি(সেকেন্ড ইন কম্যান্ড), এডজুট্যান্ট, ক্যাডেট(নিউ রিক্রুট সেকেন্ড
লেফটেন্যান্ট)) – কমিশন্ড অফিসার
সুবেদার মেজর –নন কমিশন্ড অফিসার (জওয়ান থেকে হাবিলদার,
তারপর অফিসারে প্রমোশন – সুবেদার মেজর) – সে পুরো রেজিমেন্টের
আর এম ও
কোর্ট মার্শাল – তখন অরুনাচলে পোস্টেড। ……সংখ্যক গোর্খা
রেজিমেন্টের সাথে। একটি ক্যাডেট এল। প্রথমে নিয়ম মত ঘোড়ার সাথে ডিনার করল দুমাস। হাই
অল্টিচুডে পোস্টিং পেল। তার শ্বাসকষ্ট। প্রথমবার আরএমও তাকে ফিরিয়ে আনেন।
এডজুট্যান্ট চটে গেল। রেজিমেন্টাল ডিনারে ছেলেটির নার্ভাসনেসে চামচ পড়ে যাওয়া
সত্ত্বেও আর এম ও নিজে সিওর সাথে ঠাট্টা করে হাত দিয়ে খেয়ে তাকে বাঁচালেন।
এডজুট্যান্ট আরো চটে গিয়ে তাকে আবার পোস্টিং দেয় ওখানেই। একদিন বার বার আর এম ওকে ফোন। আই অ্যাম
ডাইং স্যার! কলের ফোন ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আর এম ওর সে ফোন শোনা বাররুমে বসে। ফোনে
নিশ্বাসের ঘড়ঘড় শব্দ। এডজুট্যান্টকে বলতে গিয়েও কী মনে হয় বারনোটে লিখে পাঠান।
এডজুট্যান্ট ওই কাগজের ওপরই লিখে দেয়, “প্রয়োজন নেই। ওকে ওখানেই থাকতে দাও”।
এডজুট্যান্টের আগে থেকে রাগ ছিল আরএমওর ওপরও (সিপাহিকে পিঠঠু প্যারেড থেকে
বাঁচানো)। অবশেষে সুবেদার মেজরের কথায় আর এম ওর নিজের অর্ডারে হেলিকপ্টারে
ইভ্যাকুয়েশন। ক্যাডেটটির মারা যাওয়া। রাতে এডজুট্যান্টের পৌঁছনো আর এম ওর ঘরে। আঃ,
এ মার্কি ফেলো হী ওয়জ! কাগজদুটো ফেরত চেয়ে ধমকি দেওয়া। তার চলে যাওয়ার পর গভীর
রাতে সুবেদার মেজরের আস্তে করে ডাক – বাইরে এম্বুলেন্স রেডি। একটা পেশেন্ট রয়েছে
পিছনে। এক্ষুনি হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ইলাজ করতে হবে। চলে যান। রাতে ফিরবেন না। আর
কাগজদুটো কই। হয় আপনার কোর্টমার্শাল হবে অথবা এডজুট্যান্টের। ও আপনাকে রাতেই শ্যুট
করার কথা ভাবছে। তাই রাতভর হাসপাতালেই থাকুন। কাগজদুটো এই বুলেটব্যাগে ঢোকান। এই
সীল করলাম। আর এই নিন কোথের চাবি। সামলে রাখুন।… পরের দিন সিও নিজেই বললেন অন্য
কোথাও ট্রান্সফার নিয়ে নিতে। এডিশন্যাল ডিভিশন্যাল মেডিক্যাল সুপারিন্টেন্ডেন্টকে
বলাতে তিনি তৎক্ষণাৎ ট্রান্সফার করে দেন।
অবশেষে কোর্টমার্শাল। ওই কোথের চাবিই বাঁচালো। কোর্ট আগে
স্বীকার করোনি কেন যে লিখিত এভিডেন্স আছে? কোর্টকে তুমি মিস্লীড করছিলে। উকীল তার
মক্কেলের দেওয়া লিখিত স্টেটমেন্ট দেখালো। হী ওয়জ নট মিসলীডিং দ্য কোর্ট, স্যর! আগে
বললে এডজুট্যান্টের নির্দেশে কোথের জিনিষ ডেস্ট্রয় করিয়ে দেওয়া হত। এডজুট্যান্টের
চাকরি গেল। জেল হল। তার বেনেফিটস থেকে দশ লক্ষ টাকা দিতে হল ক্যাডেটের পরিবারকে।
ফৌজে চাকরী --আর এম
সি এচ এর ইন্টার্নশিপ থেকে আর্মির ক্যাম্পাস রিক্রুটমেন্ট। দুএকদিন রাঁচির
রেজিমেন্টাল হাসপাতালে। তারপর একরাতে গাড়িতে করে পাঁচ বন্ধুর যাত্রা শুরু। কনভয়ে
পৌঁছনো। বিরাট লম্বা কনভয়ের একটা গাড়িতেও হেডলাইট জ্বলছে না। শুধু চাকার মাঝখানের
আর হেডলাইটের নিচের ছোট লাইটদুটো। কোলকাতা কমান্ড হাসপাতালে ইউনিফর্ম বদল।
পায়জামা, জোব্বা, কাঁধে কাপড়ের তৈরি স্টার, গলায় মাদুলি করে ঝোলানো নাম, পদ,
ঠিকানা। রাতে আবার যাত্রা। আননোন ডেস্টিনেশন, চাটগাঁয়ের কাছে। এডিএসে পৌঁছতে
কাঁধের তারা ছিঁড়ে দেওয়া হল। এখন মুক্তিবাহিনীর একজন। গলার ‘মাদুলি’তে শুধু পরিচয়
লেখা। … একদিন যুদ্ধ ঘোষণা হল। ব্যস সাথে সাথে জোব্বা-পায়জামা খুলে ফুল ইউনিফর্ম।…
অফ আওয়ারে এডিএস থেকে বেরিয়ে একটু দূরে গাছতলায় চারপাঁচজন, রাম ও সিগারেট পানরত।
রাম শেষ হয়ে যাওয়াতে আরএমও জুনিয়র হিসেবে যেতে উদ্যত। সিনিয়র সার্জন বললেন তিনিই
যাবেন, কেননা যে পেশেন্টকে অপারেশন করেছেন তাকে একবার দেখে আসা জরুরি। সে ভাবে একে একে এনাস্থেসিস্ট ও বাকি দুজন
আরএমওও চলে গেল। একা। সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসছে। এন্ডলাইটের যুদ্ধ শুরু হয়েছে। হাতের
মুঠোয় লুকিয়ে সিগারেট খাচ্ছিলেন। শুনতে পেলেন চিঁ চিঁ … একটা শেল আসছে। কোনদিক
থেকে জানেন না। গাছের পিছনে উপুড় হয়ে শুয়ে দুহাত দিয়ে কান ঢেকে নিলেন। প্রথমটা
কাছেই ফাটল। সারা শরীর যেন জ্বলে গেল। দুটো একটু দূরে ফাটল। তারপর সব শান্ত। গিয়ে
দেখলেন এডিএসের ওপরই পড়েছে। পাঁচজন পেশেন্ট ছাড়া সব ডাক্তার, পেশেন্ট ও নার্সেস মৃত।
রাতভর রেস্কু অপারেশন চলল। ওনাকে একজন প্রশ্ন করল আপনি ঠিক আছেন তো? তখন খেয়াল
করলেন একটু খুঁড়িয়ে হাঁটছেন আর ডান পাটা চটচট করছে। দেখলেন প্যান্টটা ফালাফালা,
হাত রেখে বুঝলেন হাঁটুর ছোট হাড়টা ভেঙ্গে গেছে। স্প্লিন্টার ঢুকে আছে। ততক্ষণে খবর
পেয়ে গেছেন যে ঢাকার খুব কাছে আছেন তাঁরা। ওদিকে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা। পাকিস্তানী
ফৌজ পিছোচ্ছে। অনুরোধ করলেন বেসে না পাঠাতে। আজ বাদে কাল তো ঢাকা হাসপাতালে!
আত্মসমর্পণটাও দেখে নেওয়া যাবে। দেখলেন। ঢাকা আর্মি হাসপাতাল খুব পুরনো। প্রচুর
দামী জিনিষ, সোনারুপোর মুর্তি, আসবাবের অলংকরণ – সব লুট করে নিল ভারতীয় সেনার
অফিসার ও জওয়ানদের মধ্যে কয়েকজন। পরে তাদের কোর্ট মার্শাল হয়েছিল।
বাড়ির ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ার হব। ম্যাট্রিকে বাংলায় লেখার
জন্য অঙ্কে ফেল করলাম। এক্সট্রা পেপার হিসেবে বায়োলজিতে ভালো নম্বর পাওয়াতে নম্বর
যোগ হল, বেরিয়ে গেলাম। জৈন কলেজ, আরায় গ্র্যাজুয়েশনে ফার্স্ট ক্লাস ফার্স্ট হয়ে
এলাম পাটনায়। জুলজি নিতে চাইলাম। ছ’জন ছয় ইউনিভার্সিটির ফার্স্টক্লাসফার্স্টের
মধ্যে আমার নম্বর হাইয়েস্ট। তবু এন্ট্রান্সে ফেল করলাম। পাশের মধ্যে হঠাত দেখি
একটি মেয়ের নাম, যার সাথে হেড সুরেশ কেশবের অবৈধ সম্পর্ক, পরে জানলাম। বসে গেলাম
অনশন ধর্মঘটে। ভাইস চ্যান্সেলার কে কে দত্ত এলেন কথা বলতে। কথা বলছি এমন সময়
হুড়মুড় করে ঢুকে পড়ল কয়েকটি ছেলে, হাঙ্গামা ধাক্কাধাক্কিতে কে কে দত্ত চেয়ার থেকে
উলটে পড়ে গেলেন। আমি হলাম এক বছরের জন্য রাস্টিকেট। কী করি! বাড়িতে কেউ তখনও জানে না। কারোর কথায়
দেখলাম রাঁচি মেডিক্যাল কলেজের বিজ্ঞাপন বেরিয়েছে – গ্র্যাজুএশনে ফার্স্টক্লাস
থাকলে ভর্তির পরীক্ষায় বসতে পারবে। মাকে বললাম সব কথা, মায় রাস্টিকেটের গল্পও। মা
চাইতেন আমি ডাক্তার হই। বললেন বাবাকে বলতে। বাবাকে বললাম ডাক্তারি পড়তে চাওয়ার
ইচ্ছে। ‘শেষে ডাক্তার হবি?’ জিজ্ঞেস করে বাবাও রাজি হলেন।
এন্ট্রান্স পরীক্ষায় দেখি সবাই পাতার পর পাতা ভরিয়ে ফেলছে।
আমার একেকটা উত্তর দেড় পাতার বেশি এগচ্ছে না। মুষড়ে পড়লাম। বাড়িতে লিখলাম পরীক্ষা
ভাল হয়নি, সাপ্লিমেন্টারি দিতে হবে, দিয়েই তবে বাড়ি আসব। পড়তে হবে। খাবার দোকান
বলল, সবাই খেলে চল্লিশ টাকা মাসে হয়ে যেত। এখন ত সবাই বাড়ি গেছে। তুমি একা খেলে
ষাট টাকা লাগবে। আমি বললাম, তার মানে তিরিশ টাকায় এক বেলা হবে তো? হবে। তো আমি
একবেলা, রাতে খাব। রেজাল্ট বেরুন অব্দি সকাল থেকে রাত অব্দি শুধু পড়ে গেলাম।
এনাটমি, ফিজিওলজি…। কী আপশোষ! এত কিছু জানার আছে…। আর রাতে হোটেলে গিয়ে একবেলা
খাবার হিসেবে পঁচিশতিরিশটা রুটি খেয়ে হেঁটে বাড়ি ফিরতাম। ওই পড়া, ভাবা সারা জীবন
কাজে লেগেছে। রেজাল্ট দেখতে যাইনি। জানতাম ফেল করব। বন্ধুরা বলল দেখে তো আয়! গিয়ে
দেখলাম পাশে দ্বিতীয় নাম আমার।
আর্মি থেকে বেরুনো (গয়ায় পোস্টিং, ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ান,
নিজের কোয়ার্টারে এনসিওদের পরিবারের অবাধ প্রবেশ, তা নিয়ে মুখে মুখে গল্প, সিও র
জবাব তলব, সেই পথে কুড়িটা কোয়ার্টার এনসিওদের বাচ্চা-হতে-সমস্যা-এমন পরিবারদের
জন্য খালি করিয়ে রাখা –
(SHAPE-Psychic, Hearing, Appendices,
………….,Eye )
SHAPE 1 – Perfectly fit
SHAPE2 – Temporarily unfit
SHAPE3 – Permanently unfit
SHAPE4 – Services
Only SHAPE1 could rise up to Colonel.
SHAPE2 would be SHAPE1 tomorrow. SHAPE3 would rise maximum to Lieutenant
Colonel.
অগত্যা ফোর্স ছাড়তে চাওয়া। একদিন সুযোগ পেয়ে
জগজীবন রামের পিএ কে বলা। জগজীবন রামের সামনে পেশী। তিন মাস
পর ছাড়া পাওয়ার চিঠি।
আর্মি থেকে বেরিয়ে পিজি তে ভর্তি হওয়া নিয়ে – পেডিয়াট্রিক্স
না মেডিসিন। একটি মেয়ের কথায় তার এডমিশন যাতে হয়ে যায়, মেডিসিন থেকে নাম সরিয়ে
নিলাম। ওদিকে পেডিয়াট্রিক্সে ফ্যাকাল্টি কম হয়ে যাওয়ায় সিট কম হয়ে গেল। পাটনায়
হলনা। রাঁচিতে ইন্টারভিউএ গিয়ে দেখি সামনে বসে যে পেডিয়াট্রিক্সের ইনচার্জ, তার
পায়ে চপ্পল, শার্টের বোতাম খোলা। আমি তখন আর্মির লোক, ভাবলাম এমন লোকের কাছে পড়ব
না। পাশে অর্থোর ইঞ্চার্জ, স্মার্ট, জুতো মোজা টাই। হয়ে গেলাম অর্থো। ক্লাস শুরু
হতে হতে আগের ইনচার্জ বদলে গেলেন। এলেন আরপিসিং। আগেরজনের কেতা অনুসারে স্যারের
আসার সময়ে গাড়ির কাছে দাঁড়াই। ধমকতো খেলামই, আমি এসব পছন্দ করি না, ওয়ার্ডে থাকো,
নিজের পেশেন্টের কাছে। খারাপ নজরেও পড়ে গেলাম যে আমি পড়াশোনা না করে এসব চামচাবাজি
করতেই বোধ হয় ভালোবাসি। ক্লাসরুমে ত বটেই, ওয়ার্ডে বিশেষ করে আমাকে নানা ধরণের
প্রশ্ন করতে করতে আমায় নাজেহাল আর অপমানিত করতে থাকলেন। একটার উত্তর দিতে পারি না।
শেষে একদিন ওনাকে ধরলাম। ‘স্যার, আমি আর্মি থেকে রিজাইন করে পিজি করতেই এসেছি,
সিন্সিয়ারলি। আপনি যদি একটু গাইড করেন নিশ্চই পারব’। ‘বইপত্র যোগাড় করেছ?’ ‘না’। তিন
ভল্যুমে অর্থোপেডিক্সের বইয়ের নাম লিখিয়ে দিলেন। বললেন, এক বছর তোমায় কিছু জিজ্ঞেস
করবনা। এই এক বছরে এই তিন ভল্যুম চার বার পড়ে শেষ করবে। তারপর প্রশ্ন করে যদি
উত্তর না পাই অর্থোপেডিক্স ছেড়ে দেবে’। প্রথমবারে ত কিছুই বুঝলাম না। দ্বিতীয়বারে
আভাস পেলাম। এভাবেই……।
ভদ্রলোক আমাকে অর্থোপেডিক্স শিখিয়ে দিয়ে গেলেন।
প্রথম পোস্টিং পেলাম কাঁকে মেন্টাল হস্পিটালে। স্ত্রী তখন
পোস্টেড ছিলেন রাতু ব্লকে।……এম ডি পি (ম্যানিক ডিপ্রেসিভ সাইকসিস) –ফিলিং নিয়ার টু
গড। সিঝোফ্রেনিয়া – ফিলিং আই অ্যাম গড।
তারপরে
পোস্টিং পিএমসিএইচে। আর্মিতে কাজ করার সময় স্পাইনাল কর্ডের প্রব্লেম প্রচুর ডীল
করতে হত। এখানে রাজেন্দ্র সার্জিকাল ব্লকে বিভিন্ন ওয়ার্ডে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা যত
স্পাইনাল কর্ডের পেশেন্ট সব ঘুরে ঘুরে দেখতাম, খোঁজখবর নিতাম। ওদের তো স্পেশাল
নার্সিংএর প্রয়োজন হয়। অথচ অসাড়ে হয়ে যাওয়া পায়খানা পেচ্ছাপ পরিষ্কার করা ঝামেলা
বলে নার্স, এসিস্ট্যান্টরা এড়িয়ে যেতে চায়। আমি ওদের খোঁজখবর নিতাম, তা সে যে
ডাক্তারের আন্ডারে থাকুক। আমি সুপারকে বলতাম সব পেশেন্টকে এক জায়গায় করে একটা
স্পাইনাল কর্ড ইঞ্জুরি ওয়ার্ড তৈরি করতে। সুপার হাত ওল্টাতেন, জায়গা খালি ছিলনা।
একদিন চাপরাশি খবর দিল সুপার ডেকে পাঠিয়েছেন। যেতে দেখলাম চেম্বারে ঢোকেন নি।
বাইরে দাঁড়িয়েই বললেন, ‘চারতলায় একটা ওয়ার্ড খালি হচ্ছে। ওয়ার্ডটা চলে যাচ্ছে টাটা
ওয়ার্ডের বিল্ডিংএ। বিকেল চারটেয় আমি মিটিং ডাকছি হেডদের, প্রত্যেকেরই তো নিজের
নিজের দাবী আছে! তবে (অন্যদিকে তাকিয়ে) তার আগেই যদি জায়গাটা পেশেন্ট দিয়ে ভরে যায়
তাহলে তো আমার আর কোনো উপায় থাকবে না!’ বলে এমনভাবে ভিতরে ঢুকে গেলেন যেন কারোর
সাথে ওনার কোনো কথা হয় নি, কেউ নেইই আশেপাশে। আমি ফিরে এসে কথাটার মর্ম উপলব্ধি
করার চেষ্টা করলাম। গিয়ে দেখলাম ওই ওয়ার্ডের নার্স একা হিমশিম খাচ্ছেন। ‘কটা নাগাদ
খালি হবে?’ ‘কী করে করব, আমি একা?’ গেলাম আমার স্পাইনাল কর্ডের পেশেন্টদের
এটেন্ডেন্টদের কাছে। ওরা শ্রদ্ধা করত আমায়, জানত যে এই একটা ডাক্তার আছে যে ওদের
পেশেন্টদের খোঁজখবর রাখে। সবাইকে একসংগে করে প্ল্যানটা বোঝালাম। ‘আমাদের করতে
দেবে? কেউ বাধা দেবেনা?’ ‘করোই না। আমি তো আছি!’ প্রথমে ওদেরকে লাগিয়ে দিলাম নার্সটির
সাহায্যে। এতে কারোর কিছু অবজেকশন থাকতেই পারে না। করতে করতে দুটো বেজে গেল। দুটোর
পর ভার্চুয়ালি হাসপাতালে কেউ আর থাকে না। তারপরেই আঠেরোজন পেশেন্টের আঠেরোজন
এটেন্ডেন্ট যুদ্ধস্তরে কাজে লেগে গেল বেডসুদ্ধু পেশেন্টপাচারে। তখন সাড়ে তিনটে
বাজে। আমি নিচে নেমে সুপারের চেম্বারে গিয়ে আস্তে করে বলে এলাম ‘অপারেশন কমপ্লীট,
স্যার’!
চারটেয়
মিটিং। সবাই বসে গেলে সুপার ওয়ার্ড খালি হওয়ার সংবাদটা অফিসিয়ালি জানালেন। তারপর
বললেন আগে একজন চাপরাশিকে পাঠিয়ে খোঁজ নেওয়া হোক ওয়ার্ডটা খালি হয়েছে কি না।
চাপরাশি এসে জানালো ‘স্যর, ওয়ার্ড তো ভরে গেছে! ডাক্টর সিনহার ওই স্পাইনালের
পেশেন্টরা সব ওখানে চলে গেছে!’ সবাই রেগে আগুন। এটা তো ইল্লিগাল। কী করে ডাক্তার
সিনহা এরকম করলেন? ‘আমি তো কিছু করিনি! ওদের হয়তো কখনো কখনো বলতাম, তোমরা সব আলাদা
আলাদা জায়গায় রয়েছ, এক জায়গায় থাকলে ভালো করে এটেন্ড করতে পারতাম’। তাই হয়তো
ওয়ার্ড খালি হচ্ছে খবর পেয়ে ওরা তাড়াহুড়ো করে ঢুকে পড়েছে। এখন সুপার সাহেবই বলবেন
কী করনীয়’। সুপার সাহেব বললেন, ‘এখন আর কী করা যাবে। ধাক্কা দিয়ে ওদের তো আর ফেরত
পাঠানো যাবে না!’
এভাবেই
শুরু হল স্পাইনাল কর্ড ইনজুরি ওয়ার্ড। ধীরে ধীরে বেড বেড়ে ষাটটা হল। ভারতের সবচেয়ে
বড় স্পাইনাল ওয়ার্ড হয়ে উঠল। আমিও মন দিয়ে কাজ করে গেলাম। WHO র নজরে পড়ল। পাটনা মডেল অফ ট্রীটমেন্টের সুনাম ছড়িয়ে পড়ল।
পেপার পাব্লিশ করতে থাকলাম। দেশে দেশে ভাষণ দেওয়ার জন্য ডাক পড়তে লাগল—ডেভেলাপিং
কান্ট্রির মডেল, পাটনা মডেল এক্সপ্লেন করার জন্য।
একটা
উদাহরণ দিচ্ছি। ওয়ান ব্রেথ কাউন্ট। স্পাইনালের পেশেন্টদের ক্ষেত্রে ফুসফুসের
পেশীগুলোর ক্ষমতার প্রতি প্রতিদিন নজর রাখা খুব জরুরী। ক্রিটিক্যালের নিচে চলে এলে
রেস্পিরেটরি ফেইলিওর যে কোনো মুহুর্তে হতে পারে। রেস্পিরেটরি মনিটরিং মেশিনের দাম
চল্লিশ হাজার টাকা। আমি লক্ষ্য করে দেখলাম, এক নিঃশ্বাসে একজন মানুষ কত অব্দি
গুনতে পারে তার একটা হিসেব এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারে। যদি এক নিঃশ্বাসে একজন পনের
অব্দি গুনতে পারে তাহলে তার বাঁচার আশা থাকে। যদি তার নিচে থেমে যায় তাহলে আর আশা
থাকে না। আমি পেশেন্টের এটেন্ডেন্টদের বলি, নিজেরাই সকাল বিকেল হিসেব রাখো। বল এক
নিঃশ্বাসএ গুনতে। এখন ভারতের বহু হাসপাতালে ডাক্তাররা প্রেস্ক্রিপশনে লিখছে
ওবিসি-ওয়ান ব্রেথ কাউন্টের হিসেব।
…(৩০
মার্চ ২০১৪, বোলপুর যেতে যেতে বলা) বাড়িতে যখন ফিরতাম প্রথমদিকে ভীষণ ডিপ্রেসড হয়ে
পড়তাম। বন্ধুরা সবাই কোথাও না কোথাও ভালো জায়গায় আর আমি! সেই আর্মি হাসপাতালে
সারাদিন একধরণের রুগী দেখে দিন কাটাচ্ছি। তাই নিজের ইচ্ছেতে পোস্টিং নিলাম আর্মি
ডেভেলাপমেন্ট সার্ভিসেসে। উগ্রপন্থী অধ্যুষিত অঞ্চলে যারা স্থানীয় জনতার সাথে
বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কস্থাপনের কাজ করে আর ইন্ডিয়ান আর্মি সম্বন্ধে ওদের মনের
বিরূপ ধারণাটা দূর করে। নাগাল্যান্ডে গেলাম। দূর জঙ্গলে ক্যাম্পবাড়ি। পাঁচ জন লোক
আমরা। উগ্রপন্থীদের আসা যাওয়ার ট্র্যাক ঘেঁষে। ডাক্তারকে ওরা বলে জারুবা। ভগবানের
মত শ্রদ্ধা করে। আর উগ্রপন্থীরা সবচেয়ে আগে ডাক্তারের ওপর হামলা করে, কেননা
ডাক্তার মরলে আর্মি ভাববে মিশন আনসাক্সেসফুল আর টীমটাকে ফিরিয়ে নেবে। তখন
উগ্রপন্থীদের প্রচার জোর পাবে।
-----------------------------------------------------------------------------------------
১৬-৩-২০১২
মোতিহারির আগে জীবধারা থেকে ডান দিকে গ্রামের রাস্তা ধরে
গিয়ে
ধরমুহা কলোনি- বেলা দেড়টায় প্রথম মিটিং, গ্রামের বাঁধানো
‘বেদীতে’ (কী যেন আসল নামটা?)
রুলাই ২- বেলা আড়াইটেয় দ্বিতীয় মিটিং, একজনের বাড়ির সামনের
যায়গাটায়
হনুমানগড়- বেলা চারটায়, পুজো মন্ডপের সামনের মাঠটায়
১৭-৩-২০১২
বেতিয়া থেকে শুরু হল পাইলট জিপের পিছনে ঘোরা।
বেতিয়া শহরের কিনারে ওয়ার্ড ১এ
হাজারি(এটাই নাকি প্রথম ক্যাম্প যেখানে পশ্চিম চম্পারনের সব
উদ্বাস্তুকে প্রথমে রাখা হয়েছিল), বেতিয়া জেলের পিছনদিকে, পাড়ায় ঢোকার মুখে মন্দির
এবং চায়ের দোকানটির সামনে, সকাল আটটায়, মুখিয়া যাদবজী (জোয়ান ছেলে) মঞ্চে বসেছিল।
লোরিয়ার রাস্তায় একটু আগে বাঁদিকে
শনিচরি (বহুঅরোয়া ব্লক)-বেলা নটায়, মুখিয়া এবং সরপঞ্চ
দুজনেই বসেছিল মিটিংএ, স্কুলের ক্যাম্পাসে।
শিবপুর (রামনগর ব্লক)- বেলা এগারোটায়, সাতটা গ্রামের বড়
মিটিং, দু তিনটে মুখিয়া এবং অন্যান্য বিজেপি নেতারা, স্কুলের বড় ক্যাম্পাস,
স্কুলঘরে খাওয়া-ফ্রায়েড রাইস, ছোলার ডাল, চিকেন, পটলভাজা, পাঁপড়, স্যালাড।
১৮-৩-২০১২
মিশন কম্যুনিটি হল- সকাল সাড়ে নটায়, শহরের ভিতরে বড়
পরিষ্কার খ্রিষ্টিয় সামুদায়িক ভবন, ধার্মিক সংখ্যালঘুদের সঙ্গে মিটিং, শুধু
খ্রিস্টানেরাই ছিল।
মশান বাড়ি (মাঝেরিয়া)- বেলা বারোটায়; এই প্রথম মিটিংএ
হিন্দিতে মেয়েদের স্বাগতগান, বাংলায় কবিতা আবৃত্তি, একটি স্বঘোষিত হিন্দিভাষী ছেলে
পরশুরাম তিওয়ারির বাংলায় স্বরচিত ও গোলাম মুস্তাফার কবিতাপাঠ। তিনটি মেয়ের নালিশঃ
আঙ্গনবাড়ি সেবিকা ন’কিলো লিখিয়ে তিন কিলো ডাল দিয়েছে। তিনটি মেয়ের নেত্রী জাহ্নবী
হিরা, বিনয় হিরার মেয়ে, তেজী, বুদ্ধিমতী। জানলাম এই গ্রামে ভালো সংকীর্তনের দল
রয়েছে। দুপুরে কোনো গোঁসাইজীর বড় উঠোনে সবার খাওয়াদাওয়া-ভাত, ডাল, তরকারি, ভাজা,
পাঁপড়।
সরৈয়া মন রেস্ট হাউজ- উদয়পুর অভয়ারণ্যে, ‘মন’ মানে ঝিলের
ধারে।
সিরসা (জগদিশ বর্মনের বাড়ি)- জগদিশের বাড়ির সামনের
জায়গাটায়, বিকেল পাঁচটায়
বাঙালি কলোনি, বেতিয়া – শহরের মাঝে, সন্ধ্যে সাড়ে ছ’টায়,
বারোয়ারি পুজোমন্ডপের সামনে।
১৯-৩-২০১২
সকাল দশটায় ডিএমের সাথে মিটিং, আমি যাইনি ভিতরে।
লমহা চৌতরবা (বগহা)- বেলা বারোটায়, স্কুল ভবনের বারান্দা ও
সামনের জায়গাটুকু জুড়ে, মুখিয়া ছিল।
সেমরা (বগহা) – বেলা দুটোয়, স্কুলভবনের সামনে, মুখিয়া
শ্যামু পান্ডে, একটু বেশি ইন্টারভেনিঙ, উলুধ্বনি দিয়ে স্বাগত, আমিও চাদর পেলাম,
মিটিঙএ মহিলাদের সংখ্যা পুরুষদের চেয়ে বেশি, বড় উঠোনে খাওয়া-দেসি মুরগা, মুগের
ডাল, আলুভাজা, ভাত।
No comments:
Post a Comment