অত বড় তো নয়ই, কোনো ছোটো গাড়িও গলির ভিতর ঢোকে না। তাই গলির ছেলে তিনটে যখন ছুটে এসে, “কাকী, বিরাট গাড়িতে করে এসেছে। আপনার নাম বলে, বাড়ি জানতে চাইছিল… আসছে” খবর দিয়ে আবার ছুটে চলে গেল গাড়ির বহর দেখতে, সাবিত্রীও কাগজপত্র সরিয়ে বাইরের দরজায় গিয়ে মুখ বার করে বাঁদিকে তাকাল।
গলির মুখে চারজন। একজন ধোপদুরস্ত সাদা খাদির
কুর্তাপায়জামা, আরেকজন একটু সাধারণ কুর্তাপায়জামা আর বাকি দুজন জিন্স; একজন
গেঞ্জি, একজন শার্ট। ওই সাধারণ কুর্তাপায়জামাটিকে দেখেই চমকে উঠল সাবিত্রী।
ওই তো মেডিয়েটর ছিল!
তিন বছর আগেকার কথা। একদিন রাতে দোকান বন্ধ
করে সাবিত্রীর স্বামী শ্যামবাহাদুর বাড়ি ফিরল না। সারা রাত ফিরল না। আশেপাশের
দোকানের মালিক, যাদের টেলিফোন নম্বর বাড়িতে ছিল, তাদের কাছে ফোন করে কোনো হদিশ
পাওয়া গেল না। পরের দিন সকালে দোকানের কাছে গিয়ে, আশে পাশের কর্মচারীদের জিজ্ঞেস
করেও কোনো তথ্য পেল না। বাড়িতে মানুষ বলতে বুড়ি শ্বাশুড়ি, সাবিত্রীর শিশুপুত্র, যে
এখনো স্কুলে যাওয়া শুরু করে নি আর সাবিত্রী। অগত্যা, নিজের উদ্ভ্রান্ত অবস্থাটা চোখমুখ, উস্কোখুস্কো
চুল থেকে সরিয়ে শ্বাশুড়িকে সান্ত্বনা দিল। ছেলেকে তাঁর জিম্মায় রেখে পুলিস থানায়
খবর দিতে বেরোবে, তখনই ফোন এল। ছুটে ফোনটা ধরল সাবিত্রী। অচেনা কন্ঠস্বর, হুমকি
তারপর তার স্বামীর কন্ঠস্বর…।
টাকা! সে তো জানেও না তার স্বামী টাকা কোথায়
রাখে! আর অত টাকা! সে জানে না অথচ কিডন্যাপাররা জানে তার স্বামী দশ লাখ টাকার
মালিক! বা হয়তো এই বাড়িটার দাম যোগ করে! কে জানে। ওরা বলছে পুলিসে খবর দিলে
প্রাণের আশঙ্কা। কিন্তু তাহলে কাকে খবর দেবে সে?
কিন্তু খবর তো দিতেই হবে! সবচেয়ে আগে নিজের
বাপের বাড়িতে দাদার মোবাইলে খবর দিল। ওরা বলল ওরা আসছে এক্ষুণি, কোথাও না বেরোতে।
কিন্তু সাবিত্রীর কে জানে কেন মনে হল তাকে বেরোতেই হবে। নইলে স্বামীকে ফেরাতে অসফল
হবে সে। একটু পরেই ঘরটা ভরে উঠবে মানুষজনে। তখন সে হারিয়ে যাবে। আর তাহলে হারিয়ে
যাবে তার স্বামী – তার ছেলে! কেন হারিয়ে যাবে? হারিয়ে যাওয়া মানে?
জানতো না। কিন্তু সে বেরিয়ে গেল। এই এলাকার
থানাটাও তো সে তখন চেনে না। কখনো প্রয়োজন হয় নি। বড় রাস্তায় উঠে, অপরিচিত
দুএকজনকে, যতটা পারা যায় স্বাভাবিক কন্ঠস্বরে জিজ্ঞেস করে করে থানায় পৌঁছোলো। বড়বাবু
বয়স্ক বিচক্ষণ লোক। সামনের চেয়ারে মহিলাটির উদ্ভ্রান্তের মত এসে ধপ করে বসে পড়া আর
মাথা নিচু করে চুপ থাকা দেখে প্রথমে ভিতর দিকে হাঁক দিয়ে এক গ্লাস জল আনতে বললেন।
মহিলাটি গ্লাস খালি করে দিল ঢকঢক করে। তার মানে বিপর্যয়েও আত্মস্থ থাকতে জানে।
- কী হয়েছে বলুন
তো! (মহিলা চুপ করে আছেন দেখে একটু ইতস্ততঃ করে) কেউ পুলিসকে না বলার জন্য সাবধান
করে থাকলেও না বললে কি চলবে? আপনিই ভেবে দেখুন।
ব্যাস। ওষুধ পড়ার মত কাজ হল। মহিলা গড়গড় করে
যা কিছু বলা সম্ভব বলে গেলেন।
তারপর তো সে এক কাহিনী। ওই বড়বাবুই, হয়তো
নিজের মেয়ের বয়সী বলে মায়ায় পড়ে লাগাতার সাহায্য করে গেলেন। পনেরো কুড়ি দিন পরেও যখন
বিশেষ কিছু কাজ হল না, তখন ওই বড়বাবুই সদুপদেশ দিলেন, গলির সবাইকে, অন্ততঃ যারা
যারা সই করতে রাজি হয় তাদের সবাইকে দিয়ে সই করিয়ে একটা গণ-আর্জি দিতে সিনিয়র
এসপিকে। মহিলা আয়োগের ঠিকানা বলে দিলেন। পাড়ার একটি ছেলে, উঠতি নেতা, মাঝে মধ্যেই
থানায়, সরকারি দপ্তরগুলোয় ছুটোছুটি করে, তাকে ধমক দিয়ে বললেন পীড়িতা মহিলা ও আরো
কয়েকজনকে নিয়ে বড় নেতাদের কাছে যেতে, পুলিস বীট করা সাংবাদিকদের বললেন ইস্যুটাকে
হাইলাইট করতে। কিছু আর বাকি রাখলেন না।
ওদিকে সাবিত্রীর বাপের বাড়ির মানুষেরা তো ভয়
পেয়েই অস্থির! দাদাকে তো বেশি চিন্তিত মনে হল এই ভয়ে যে টাকাটা না তাদের ঘর থেকে
গুনতে হয়।
আর সাবিত্রী। এত জায়গায় গেল, এত ছুটোছুটি
করল তিন মাস যে ধীরে ধীরে কখন যে উদ্ভ্রান্ত ভাবটা উবে গেল, তার বদলে এল একটা
সামাজিক কর্মীর মনোভাব, যেন তার স্বামী কিডন্যাপ্ড্ নয়, অন্য কেউ, যার জন্য সে
অক্লান্ত চেষ্টা চালিয়ে চলেছে, কেননা এটাই তার জীবনের কাজ। থানার বড়বাবুও অবাক হয়ে
যাচ্ছিলেন মহিলাটির আত্মসংযম, জেদ আর প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক অলিগলিতে চলার ক্ষমতা
দেখে।
শেষে একটা ডীল হল। যে টাকার ডীল হল সেটা তার
আয়ত্তের মধ্যে ছিল। নিজের গয়না বেচে আর বাজার থেকে কিছু ধারকর্জ উঠিয়ে পাওয়া গেল।
বাড়ির লোকেদের কিচ্ছু বলল না এই ডীলের বিষয়ে। সবাই জানল যে দোকানের রোজগার নেই -
বাড়ির খরচ, শ্বাশুড়ির চিকিৎসা, ছেলের পড়াশুনো ইত্যাদিতেই যাচ্ছে টাকাগুলো। ডীলটা
হল কেননা, পুলিস পৌঁছে গিয়েছিল কিডন্যাপারদের ঘাড়ের ওপর। কিন্তু সোজা ঝাঁপিয়ে পড়লে
ভিক্টিমের প্রাণসংশয় হতে পারে, তাই পুলিস নেপথ্যে রইল।
আর ডীল চলাকালীনই সাবিত্রী প্রথম দেখেছিল এই
মেডিয়েটরটিকে। যে এখন আরো তিনজনের সাথে গলিতে এগিয়ে আসছে।
কী করবে সাবিত্রী? শ্যামবাহাদুর দোকান বন্ধ
করে দিয়েছে আজকাল। মদ খাওয়াও ছেড়ে দিয়েছে। সেদিন রাতে দোকান থেকে ফেরার পর মদের
ঠেকে যদি না যেত, হয়তো ঘটতই না ঘটনাটা।… একটা আয়ুর্বেদিক ওষুধ কোম্পানির
ডিস্ট্রিবিউটরশিপ নিয়েছে – সকাল থেকে রাত অব্দি ঘোরে একজন কর্মচারিকে স্কুটারের
পিছনে বসিয়ে। প্রথমে বলেছিল চলে যাবে কোডারমা। ওখানে নতুন করে জীবন গড়বে।
আত্মীয়স্বজনেরা আছে। সাবিত্রী রাজি হয় নি।
বস্তুতঃ সাবিত্রীও এখন একটা স্কুলে কাজ করে।
আর তাছাড়া আয়েষাদিদির কাজগুলো তো আছেই। আয়েষা খানম মহিলা আয়োগের সদস্যা। তার সাথে
পরিচয় হয়েছিল সেই প্রথমবার মহিলা আয়োগের চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করতে যাওয়ার দিন।
এখন ভালো বন্ধুত্ব। আয়েষা তাকে আয়োগের অফিসসংক্রান্ত নানারকম কাজ দেন। সে বেশ
সুষ্ঠুভাবে সেগুলো করে। শুধু সেটুকুই নয়। বলতে গেলে সে এখন এই পাড়ার সর্বজনপরিচিত
সামাজিক কর্মী। সবার কাজে লাগতে এগিয়ে থাকে।
কী করবে সাবিত্রী? ওরা আসছে কেন? হঠাৎ বুকটা
কেঁপে উঠল তার বহুদিন পর। ছেলে হস্টেলে থেকে পড়াশুনো করছে রাঁচিতে। যদিও প্রায়
অসম্ভব, তবু, তার কিছু হয় নি তো?
শ্বাশুড়িমা ভিতরের ঘরে কাতরাচ্ছেন, শব্দ
শোনা যাচ্ছে।
যাই হয়ে থাকুক, সামনাসামনি দাঁড়াতে হবে।
সাবিত্রী পুরো শরীরটা দরজা থেকে বার করে যাতে দূর থেকে দেখা যায় সেভাবে দাঁড়ালো।
ওরা এসে পড়েছে। এখন কাউকে ফোন করতে যাওয়া ভূল হবে!
দশ হাত দূর থেকেই চারজন নমষ্কার করতে শুরু
করলো। নমষ্কারের কী বহর!
- ম্যাডাম, আপনার
সাথেই দেখা করতে এসেছি। (ধোপদুরস্ত বলল; সাবিত্রী মুখে না চেনার ভাব দেখে মেডিয়েটর
পরিচয় করিয়ে দিল)
- ইনি মাননীয়
প্রিয়রঞ্জন অশোক, … দলের জেলা সভাপতি।
- ও। নমষ্কার।
(কেন এসেছে জিজ্ঞেস করলে উত্তেজনা আর আশঙ্কা ধরা পড়ে যেতে পারে, সাবিত্রী ভাবল)
আসুন। বসুন ভিতরে এসে!
ভিতরে এসে বসল ওরা। দুজন খাটের ওপর,
সাবিত্রীর কাগজপত্রগুলোর পাশে, আর দুজন দুটো প্লাস্টিকের চেয়ারে। সাবিত্রীর জন্য
একটা স্টুল বাঁচছে দেখে জিন্সগেঞ্জি উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আপনি এই চেয়ারে বসুন
ম্যাডাম” বলে চেয়ারটা ঠেলে এগিয়ে স্টুলটা নিজের দিকে টেনে নিল।
- (মাথাটাকে
সম্পূর্ণ ঠান্ডা রাখার চেষ্টা করতে করতে হাতের মোবাইলটা চেপে ধরল; সেসব দিনে তার
মোবাইল-টোবাইল ছিল না, শ্যামবাহাদুরের মোবাইল ছিল শ্যামবাহাদুরের কাছে; পরে পুলিস
বলেছিল ওই মোবাইল থেকেই নাকি কিডন্যাপাররা ফোন করেছিল প্রথম) আপনারা চা খাবেন তো।
একটু বসুন, ব্যবস্থা করে আসি।
- (আবার হাতজোড়)
না ম্যাডাম, প্লীজ! একটা জরুরী কথা বলেই আমরা চলে যাব।
তখনি একটা ফোন কল আসে সাবিত্রীর মোবাইলে।
সাবিত্রী কানে লাগায় ফোনটা। থানার সেই বড়বাবু। “ওরা পৌঁছে গেছে আপনার বাড়িতে?”
সাবিত্রী আন্দাজ করতে পারে। বড়বাবু তো আর তার আত্মীয়স্বজনের পৌঁছনো নিয়ে চিন্তিত
হবেন না। ছোট্টো করে “হুঁ” জানায়। “কী ধৃষ্টতা দেখুন। হারামজাদা। ওই অশোকই ছিল
কিডন্যাপিংটার রিংলীডার। এখন ঠিকেদারী আর নেতাগিরি ধরেছে।… সাবধানে থাকবেন”। আবার
একটা ছোট্টো “হুঁ” বলে ফোনটা কেটে দিল। তারপর সোজা চোখে ধোপদুরস্তের দিকে তাকাল।
- (উৎকন্ঠা চেপে)
জরুরি কথা!
- একটা প্রস্তাব।
- !!!
- দেখুন আমাদের
পার্টির জনমত বলছে যে এই পুরো এলাকায় আজ আপনি সবচেয়ে জনপ্রিয় মহিলা। মানুষ আপনাকে
শ্রদ্ধার চোখে দেখে। যুবা কর্মী, হিম্মত রয়েছে, সবার কাজে কর্মে সব সময় এগিয়ে
থাকেন। তাই আমাদের পার্টির তরফ থেকে আমরা আপনাকে আসন্ন পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থী
হিসেবে দাঁড় করাতে চাই। আমরা পুরো ভরসা নিয়ে এসেছি যে আপনি না করবেন না।
- !!!
- আপনি জিতবেন।
এখন যিনি ওয়ার্ড কাউন্সিলর, তাঁর যে কিছুই করার মানসিকতাটুকুও নেই তা এখানকার জনতা
বুঝে গেছে। আপনার স্বামীর কিডন্যাপিংএর সময় কী হল? উনি একবারও গেলেন আইজি, ডিআইজি
বা মুখ্যমন্ত্রীর কাছে? এমনকি সিনিওর এসপির কাছেও আপনি নিজে গেলেন। মহিলা আয়োগে
গেলেন। আয়েষাজী সাহায্য করলেন। আর থানার বড়বাবু, বিচক্ষণ ব্যক্তি, উনি আপনাকে পথ
দেখালেন। (সাবিত্রী ইষৎ ভীত, বিস্মিত এবং কিছুটা চমৎকৃতও হয়ে উঠছিলঃ সমস্ত খবর
নখদর্পণে লোকটার, আর নিজেরই করা অপরাধটার কথা বলতে গিয়ে গলাটা একবার কাঁপলনা
পর্যন্ত!) এক্ষুণি সম্মতি চাইছি না আপনার। ভেবে নিন। শ্যামবাহাদুরজীর অনুমতি নিয়ে
নিন। আমাদের ভারতীয় সমাজে এই অনুমতিটাও তো জরুরি। ঘরে শ্বাশুড়িমাও আছেন। কিন্তু
ম্যাডাম, (আবার হাতজোড় করে) আমাদের নিরাশ করবেন না, এই অনুরোধ!
………
এবার আমাদের অনুমতি দিন। আপনার সময় কিছুটা
নষ্ট করলাম ক্ষমা করবেন।… চা খাব না বলেছি, তবে একটু জল খাওয়াতে পারেন; খুব তেষ্টা
পেয়েছে।
সাবিত্রী জল আনতে ভিতরে যায়। একটা জগে জল আর
ট্রেতে চারটে গেলাস নিয়ে ঘরে ঢোকার মুখে চকিতে দেখে নেয় চারদিক, বিশেষকরে খাটের
একদিকে রাখা কাগজপত্রগুলো। নাঃ, ছোঁয়নি কিছু। যেমন ছিল তেমনই বসে আছে চারজন।
ওরা বেরিয়ে যায়। জিন্সগেঞ্জি আবার চেয়ার আর
টুলটা যথাস্থানে ঘুরিয়ে রেখে যায়। সাবিত্রী দরজা অব্দি গিয়ে ওদের যাওয়ার পথটা দেখতে
থাকে। তারপর দরজাটা বন্ধ করে যায় নিজের শোবার ঘরে।
আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। সকালের মুখ। চান
হয় নি। কপালে টিপটাও নেই। সাবিত্রী চুলটায় চিরুনি বোলায়, সামনের দিকটায় ইষৎ। দেরাজ
থেকে টিপের স্ট্রিপগুলো বার করে একটা বড় মেরুন টিপ পছন্দ করে। মুখটা আয়নার আরো
সামনে নিয়ে গিয়ে কপালে টিপটা জায়গামত সাঁটায়। তারপর চিবুক উঠিয়ে গলায় পরা সরু
সোনার হারটা দেখে।
এই হারটা সদ্য কিনে দিয়েছে শ্যামবাহাদুর।
এখনো তিন বছর আগে নেওয়া ধারকর্জগুলো পুরোটা শোধ হয় নি। দোকান বেচার টাকা পুরোটাই
লেগেছে নতুন ব্যবসায়। তবু, বৌয়ের একদম খালি গলা যেন অপরাধবোধ জাগিয়ে তুলছিল
শ্যামবাহাদুরের মধ্যে। আর তার বৌ কি যে সে মানুষ! গলিতে, মোড়ে তার বৌয়েরই প্রশংসা।
আর সত্যি তো, সাবিত্রী ঝাঁপিয়ে না পড়লে, অবলা হয়ে ঘরে বসে থাকলে শ্যামবাহাদুর
প্রাণে বাঁচতো কি না সন্দেহ।
এই হারটা তার বড় পুরষ্কার! তার নতুন জীবনের
প্রতি তার স্বামীর অকুন্ঠ সমর্থন! সাবিত্রী ভাবে। তখনি তার নিঃশ্বাসে ভাপালো,
অস্পষ্ট হয়ে ওঠে আয়নায় তার মুখ। আঁচল দিয়ে ঘষে ঘষে আয়নাটা পরিষ্কার করে সাবিত্রী। নিজের
মুখটা স্পষ্ট করে তার ওপর চোখ রাখে।
সত্যিই কি কোনো বৃহত্তর জীবন তাকে ডাকছে?
নাকি প্রতিশোধের একটা সম্ভাবনা উঁকি দিচ্ছে? কিন্তু সে জানে যে সেটা সৎপথে সম্ভব
নয়। তাহলে ভালোবাসা? তার প্রতি মানুষজনের শ্রদ্ধা? কাকে জিজ্ঞেস করবে সে?
দারোগাসাহেবকে, আয়েষাদিদিকে, না তার স্বামীকে?
যদি এগোয়, শেষ অঙ্কে কে কার প্রতিশোধ নেবে?
সে, তার জীবনে তিন বছর আগে আসা দুর্যোগের? নাকি এক দুর্বৃত্ত রাষ্ট্রশক্তি, বিগত
তিন বছর ধরে তার এক নতুন, সংগ্রামী পথে চলার চেষ্টার? আর তাহলে যে অকুন্ঠ ভালোবাসা
আজ আছে, তার আর শ্যামবাহাদুরের মধ্যে, সেটাও কি কাল থাকবে?
No comments:
Post a Comment