ছোটোবেলার দামাল সাথী কালে উন্মাদিনী
শুয়ে যেন চিকিৎসাধীন হাসপাতালের রাতে
ফিসফিসিয়ে ডাকি, “কোশি!” ঘোলাটে চোখ তুলে
খামচে আমার বুকের কাছে ছাড়ে অবজ্ঞাতে।
হাসে সে – দুর্ভাগা সেই ঝড়ের রাতে ট্রেন
মানুষসুদ্ধু টেনে দুমড়ে নিমেষে তলিয়ে –
মরা বাচ্চায় ফোলা পেট কাঁপে অট্টহাসে
বাদলাঘাটের রক্তঘোলা জলের মেটে ঢেউয়ে।
বাইরে আসি, অন্ধকারে ঠাহর করে দেখি –
ট্রেনের চালক, যাত্রী এবং সেতু গড়ল যারা,
নানান কাজের শ্রমিক, রুগ্ন মাঝিও এক কোণে
হাসপাতালের দারোয়ান, চরের কৃষকেরা।
জীবনমৃত্যু একাকার, বাতাসে অশনি
হঠাৎ ওঠে চেনা সুরের বিষন্ন গোঙানি –
অপরাধী যুবক ও তার আত্মঘাতী নারী
নদীকে দেয় প্রণয়গীতে মায়াবী মুকুর
সে মুকুরের অভিশাপে যেখানে যে নদী
দেশ ছেড়ে শুকনো খাতে, ঘুমন্ত শিশুর
সহজপাঠে একটি মুঠো বাষ্প হয়ে ভাসে
যে গানে সব সেতুনির্মাণকারীদের কথা
মাঝির কথা, চাষীর কথা, রেলচালকের কথা
গাংচিলেরা চাউর করে মজলিশে, এজলাসে...
গানটা ফুরোয় বাঁট অব্দি হৃৎপিন্ডে ঢুকে
কেঁদে উঠতে চাই, কেউ সান্ত্বনা দেয় ঝুঁকে –
হাসপাতালের দারোয়ান, সোজা করে পিঠ,
নিচে গিয়ে চালু করে পাম্পটা রোজকার
গোঁ গোঁ শব্দে কাঁপে দেয়াল, নৈঃশব্দ ভাঙে
বাইরে চাঁদের হাটে বাড়ে ফ্যাকাশে আঁধার।
১৩ই মার্চ ১৯৯৬
No comments:
Post a Comment