Friday, May 20, 2022

বিষয়টা তো চেনা – নিজের জীবন

ছেলে সেদিন পেরুলো মাধ্যমিক – 
রোজই বলছে সাইকেলটা নতুন না হলে চাই না।
দিতেও চাও; পারছো না, 
তা নিয়ে দুঃখ পুষে গোমরানোটা ঠিক?

কথা কও তার সাথে!
রাত্রে খাওয়ার পাতে
আলোচনা করো মাসের হিসেব
খোলাখুলি সব দিক।
ছেলেই বলুক তার
প্ল্যানটা – ঘর চলবে যে,
কিভাবে শুধবে ধার;
বলো, 
স্রেফ দাবি নয়, দিক বিকল্প, আর্থিক!

মেয়ে বাড়ছে তরতর প্রতিদিন।
সমস্যা শুধু তোমার 
ও মায়েরই মাথায় – কেন?
মেয়েকে রাখো এমন নীরব
আজ ঘরের প্রশ্নচিহ্ন যেন!
একদিকে তার বাপের অহঙ্কার –
সবাই চুপ, তুমিই ঘোরাও লাঠি,
অথচ মনে ভয় কাঁপে – 
পালিয়ে যাবে? …
ঘরেই বুড়োবে? …
তোমারই প্রাণের ধন সেই ছোট্টোটি?

যাও না, বেরোও সাথে! 
সময় করে ছুটির দিনে
বেড়িয়ে এস বোটানিক।
জড়তা ভেঙে হাতটা ধরো বুকে,
বলো জীবনের যা কিছু দেখ চোখে;
স্নেহ নয়, তার কাঁধ চাও,
চাও হতে তার স্বাভিমানের শরিক।
(ভোটার লিস্টে নাম লিখিয়েছ তার?
লেখাও, ভোটটা দেওয়াও।
আগে হও তার অগ্রজ নাগরিক।)

মনে রাখো ভাইটাকে?
তোমারই সাথে মানুষটা এত বছর ধরে থাকে।
চাকরি নেই, জীবনটা লোকসান –
সকালে সেই যে যায় …
কোথায়?
ছেলেও জানে, ছোটকার খোঁজ 
দেয় ভোলার দোকান …

বলতে পারো,
কদিন পাও
সুযোগ সাথে বসার?
রুগ্ন শিল্প বড় চারশো, ছোটো পঞ্চাশ হাজার!
তেরঙা লাভের বিল
চুকতা করতে চার কোটি হাত বাতিল …
হয়ত ভাবি যে আমারই ভাই –
কক্ষনো মিছিলে
সোডার বোতল ছুঁড়বে না সে, তাও রোজ বিকেলে
হদিশ রাখো তার?

দেশটা হচ্ছে দালালের গুলজার।
কেউ বলে একবিংশ শতকে যাবে।
তার আগে করো ফয়সালা
বিপন্ন সাঁঝে চায়ের দোকানে কে আগে পৌঁছোবে?
তুমি না দালাল – 
কে রাখবে হাত ভাইয়ের কাঁধে,
কোথায় ভাইকে পাবে?  

ঘেমেচুমে ফেরো ঘরে।
তোমাদের দুটো ভিন্ন জগত, 
কিছুই বলার নেই, তাই বৌ নীরবে
রাতের ভাতটা বাড়ে।
নাহয় বিয়েটা হয়েছে অনেক আগে,
দেহে ছিল রসের আনাগোনা,
বাপজ্যাঠাদের পুরোনো রেওয়াজ ভাঙতে চাওনি, 
           ভাঙার কোনো 
                                  কারণও তখন ছিল না।
কিন্তু সে এত বছর ধরে তোমার;
তুমিও তো তার!
কখনো চেয়েছো গান তার দুনিয়ার?

কখনো চাই?
রাতের গভীর ক্ষণে
কোনোদিন মেঘ গর্জনে,
জানলাটা হয় নিরুদ্দিষ্ট সময়ের হাহাকার!
পাশে ঘুমন্ত যার মুখ ঘিরে বৃষ্টির ধ্বনি ভাসে
জীবনের এত নিবিড়ে এল
সে ছাড়া কেই বা আর?
তবু চাই তার গান?

বলাৎকার ও হত্যার করাঘাতে
যে কোনো নারীর নির্জন ক্ষণে মনের দরজা কাঁপে
কতটুকু করি তার হৃদয়ের ঘৃণাটাকে সম্মান?
সারাদিনে তাকে জীবনসত্যে কতটা দীপ্ত চাই?
ভালোবাসা, ঘরের শান্তি বাজি ধরে
কতটা তাকে তার চেতনার
অগ্নিকোণে জাগাই?

আজই বেরোও!
বসো’গে কোথাও!
বয়স হল তো কি?
ছুটি না থাকে, মাইনে কাটুক – 
জীবন কোরো না ফাঁকি।
সাথে বসে করো নিজের সমালোচনা,
জরুরি মিটিংএ যেমন হয়
বিষয়টা তো চেনা –

নিজের জীবন!
তবুও দেখবে কত
অপরিচিত 
রাস্তা বেরোবে সময়ের জাল থেকে।
যেই নীরবতা এত বছরের –
… ভাঙো!
… অশান্ত করো তাকে!

তুমি তো শোষক নও!
পাবে না শান্তি হিমালয়ে সেঁধিয়ে!
দুর্দিনেরশমন আসছে ধেয়ে!

২৩.৩.৮৭ 



No comments:

Post a Comment