Tuesday, May 31, 2022

শ্রীপুর কলোনি

তৃতীয়, মানে সবচে বড় যে নিমগাছটা দেবেন! 

দেখলাম, সত্যিই, ঠিক তার বিশাল গুঁড়ি ঘেঁষে
ছাতুর ঠেলাগাড়ির শীতল তৃপ্তি ছাড়িয়ে রাস্তা
গেছে পশ্চিমে তিনকিমি গিয়ে ছোট কালীমন্দির
 
বাহারি সামিয়ানার ছায়ায়, সামনে একরাশ
বাচ্চা, পিছে মায়েরা, বাপেরা, দাদারা তারও পিছে,
অশথমূলে বেদিতে, দেবীমন্ডপে বসে ছড়িয়ে
 
সেই কখন থেকে অপেক্ষা করে আছে যে আজকে
সংগঠন তৈরি হবে, ক্রমশঃ বিস্মৃত সে ভাষার,
যার দেশ এই বিভুঁয়ে, দান-জমিতে এখনও
তারা নয়, পাড়ায় তাদের বৃদ্ধ-বয়স্করা খোঁজে
 
যেমন করে মানুষ ফোটে নিজের মাতৃভাষায়
তেমন করে ফুল বা তারা নয়, ফোটে শুধু চোখ,
পাপড়ি খুলতে খুলতে বিস্ময়ে দেখে রঙ ধরা
নিজস্ব আকাশ, নদীর চর, নিজস্ব জঙ্গলের
 
ভোজপুরির অনেকটা ভিতরে ঢুকে একমুঠো
বাংলা ছড়ায় মাইক, ঝোপঝাড় টপকে উঠোনে,
রান্নাঘরে, ক্ষেতে; কেজো মানুষকে থামিয়ে রাস্তায়

১.৬.২২ 




 

নীলুদি

বলেছিলেন, "আয় না, ওখানেই আয়, দেখা হবে"।
জুলাইয়ের বাদলছেঁড়া ভ্যাপসা দুপুরে 
থানায় গিয়ে দেখি আটক
জনাদশ মহিলা আপনারা, কাঁধে ব্যানার ...

বসে পড়ি।
কথায় কথায়
বহুক্ষণ ধরে দেখি কবেকার স্কুলের বিকেলে
আমাদের বিপন্ন জল, খয়েরি পাতিহাঁস

কোতোয়ালি থানার ভাঙা বারান্দার সেই
দুপুরটা রিবন করে রেখেছি আপনার
স্নেহঋণের পুঁটুলি বাঁধার!
আর সেই রিবনে ফুল
আপনি, সুধাদি, আরো সবাই।



জলে

জলে ট্রেনের ছায়া।
ছায়ায় হোঁচট খেয়ে খেয়ে
ট্রেনটা যায়।

জলে মানুষের ছায়া।
ছায়ায় ভর দিয়ে লাফে
মানুষটা ওড়ে।

জলে আকাশের ছায়া।
ছায়াটা হারাবার ভয়ে আকাশ
বাঁধা পড়ে।



Sunday, May 29, 2022

তামাকগুঁড়ো

পকেটদুটোর সেলাই খুঁটে 
          তুলি, প্রথম চুমুর ঘামে 
                     ভেজা তামাকগুঁড়ো।
গন্ধে থাকে সকাল, কাঁচা 
                   বাঁশের বেড়া, নরম ঠোঁট, 
জিভের তেতোয় 
       ফালতু প্রেমের গান!

মেটে হাঁসের কথাও ছিল, 
                    সরিয়ে দিলাম।
ঘন কালো আঁধার বিকেল 
                     তুঁতের রসে রাঙা।
তবু মাটির রাস্তার ভাঙা 
                  নিচটা হয়ে কারো
উঠে আসার সময় হয়না, 
বিস্ত্রস্ত চুল সরিয়ে, 
                 ছাপা শাড়ি 
                       হাঁটুর কাছে ধরে …।

ভুলছি এ কোন ভূমি। 
বাঁচছি গোয়ার্তুমি। 
মোদ্দা ওই কঙ্কালটাই ছুঁতে 
পকেট উল্টে তামাকগুঁড়ো দেখি।
 বাকি তো সব সময়ডুবি, 
              গড়ে উঠছে ভিনশহর,
              গলা অব্দি উন্নয়নের পরত। 
……
অগোছালো আকাশকুসুম
সাফ করি, 
             সামনে পাতি হাত –
কথা ছাড়, হিসেব নাও, স্যাঙাত! 



Tuesday, May 24, 2022

সামিয়ানা

একচল্লিশে রবি গেলেন,
                   তিনি বেয়াল্লিশে স্তব্ধ!
বলতে গেলে রবিঠাকুরেরই
বাঁধা সামিয়ানায়
গোলাম-সৈনিকের জ্বলুনি নিয়ে ঢুকে
শোনালেন  
সৃষ্টিযন্ত্রণার ওম;
রবিও চিনলেন বিদ্রোহী!
 
রোদে আসা মানুষকে নিজের
গান শুনিয়েছেন,
ঝগড়া বাঁধলে ঢুকে তুমুল ক্রোধে
থামিয়েছেন
                  উচ্ছন্নে যাবে জীবন
               জাত-ধর্মের এই কোন্দলে
            রক্ত খাবে ক্ষেত-কল-মালিকদের
                              মুনাফারাজ
 
শাসিয়েছেন বেধড়ক অত্যাচারী
                              ফিরিঙ্গিদের!
ধরে নিয়ে গেছে পুলিস,
কয়েদ খেটে ফিরেছেন।
আবার সেই সামিয়ানায়,
                  রবি জার্মান, আইরিশ,
উনি আরবের সুর বুনেছেন,
                        গজলের বাঁক
 
বৃষ্টির জল জমলে বাঁশ
                   উঁচিয়ে ঝরিয়েছেন,
ঝড়ে খুলে গেলে নতুন
              পাকিয়ে বেঁধেছেন দড়া।
ভাষায়, ছন্দে, সুরে, সত্ত্বায়
বহুধা ব্যস্ত, চঞ্চল!  
কাজীর যুগ ওই সামিয়ানা
ধরে রাখছে আজও।

২৪.৫.২২
['কুলায় ফেরা' ওয়েবজিনে প্রকাশিত]



Sunday, May 22, 2022

শুধু পাহাড় বা সমুদ্র নয়

কোন জায়গা মন টানে না বলো?
সে শুধু পাহাড় বা সমুদ্র নয়
এমনকি এই সপাট সমতল ঘিঞ্জি শহরেও
যদি আসো কোনোদিন, ওঠো এ আড়াইঘর মেঘে, 
যদি দিতে পারি যাকে বলে জলরেণু, প্রাণের ছোঁয়াচ –

দশজন মেয়েপুরুষ, দুটো প্রজন্ম রাত তিনটে অব্দি
“এবার একটা ডুয়েট হোক বুলি, তোর প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে”
সকাল আটটায় গাদাগাদি ঘুম থেকে উঠে
অপরিচিত জানলার বাইরে এক আটপৌরে পৃথিবীর মুখোমুখি

দুপুরে ঘুরে আসবো কোথাও, শিশুর হাত ধরে তার দর্পে –
মনোরম সবুজ, পাখির কাকলি, পুরোনো মন্দির ইত্যাদি…
বিকেল হতেই “কী ধুলো রে বাবা তোদের শহরে”
তবু সন্ধ্যায় কারো ডেরায় নেমন্তন্ন –
মানুষটি বৌয়ের ক্যান্সার সারাতে সারাতে নিজের
দাম্পত্য, ভালোবাসা বাঁচছে রোয়াবে
যেন বিশবছর ধরে ফোরলেনে চালাচ্ছে বুলেট

আর কিছু না হোক
ফিরে গিয়ে ওই বুলেটের শব্দ মন টানবে আলবাৎ। 



Friday, May 20, 2022

শংসাপত্র

শংসাপত্র নিয়ে আসিনি। এনেছি সহজ
জিজ্ঞাসা পড়শির –
নতুন এলাম। লাগতে পারি কাজে?

নৌকো আছে জলও আছে আমার।
তোমরা বললে নদী হবো পুকুর হবো,
নৌকো উল্টে সভামন্ডপ,
বাতিল হলে গাছ, পিঠে ফাটল ধরিয়ে।

পৃথিবীর কাংস্যযুগে এত স্থাপত্য রয়ে গেছে আমার!
এত ভাষা এত চাবুক – কোথায় নিয়ে যাবো?



এক শিক্ষিকাকে

প্রবীণা তোমার চোখে আমি সেই দুপুর দেখি
দূর প্রদেশের নতুন কলেজে প্রথম ছুটির।
বইয়ে পড়া এক ঐতিহাসিক ভূমির খোঁজে
বারণ না শুনে, চাট্টি ভাত খেয়ে বেরিয়েছিলে।
ভিনগাঁয়ে মোড়ে বাসের আশায় – যেন সিনেমা –
ঘিরল বাদল, ঠাঁই দিল এক দুখী পরিবার।

স্মৃতি-তোলপাড় বৃষ্টিসজল এক সন্ধ্যা ...
গল্প উঠোনে নতুন মা ভাই বোনের সাথে!
পরদিন ভোরে আবাদ মাটির শিশিরে রোদে
পৌঁছোলে; খুঁজে ব্যথার মুকুলে, পেলে ইতিহাস?

তিন দশকের শিক্ষকতায় কত অগুনতি
মেয়েদের তুমি স্বদেশ দিয়েছ সেদিন পাওয়া
আজো ফুরোয় নি, ভাবি বলি, “তা’লে চলুন দিদি,
আরো একবার খুঁজি সে ছুটির দুপুরটা কই!”

১.৪.৯৫ 



বাদলাঘাট দুর্ঘটনা – ১৯৮১

ছোটোবেলার দামাল সাথী কালে উন্মাদিনী
শুয়ে যেন চিকিৎসাধীন হাসপাতালের রাতে
ফিসফিসিয়ে ডাকি, “কোশি!” ঘোলাটে চোখ তুলে
খামচে আমার বুকের কাছে ছাড়ে অবজ্ঞাতে।

হাসে সে – দুর্ভাগা সেই ঝড়ের রাতে ট্রেন
মানুষসুদ্ধু টেনে দুমড়ে নিমেষে তলিয়ে – 
মরা বাচ্চায় ফোলা পেট কাঁপে অট্টহাসে
বাদলাঘাটের রক্তঘোলা জলের মেটে ঢেউয়ে।

বাইরে আসি, অন্ধকারে ঠাহর করে দেখি –
ট্রেনের চালক, যাত্রী এবং সেতু গড়ল যারা,
নানান কাজের শ্রমিক, রুগ্ন মাঝিও এক কোণে
হাসপাতালের দারোয়ান, চরের কৃষকেরা। 

জীবনমৃত্যু একাকার, বাতাসে অশনি
হঠাৎ ওঠে চেনা সুরের বিষন্ন গোঙানি –

অপরাধী যুবক ও তার আত্মঘাতী নারী
নদীকে দেয় প্রণয়গীতে মায়াবী মুকুর
সে মুকুরের অভিশাপে যেখানে যে নদী
দেশ ছেড়ে শুকনো খাতে, ঘুমন্ত শিশুর

সহজপাঠে একটি মুঠো বাষ্প হয়ে ভাসে
যে গানে সব সেতুনির্মাণকারীদের কথা
মাঝির কথা, চাষীর কথা, রেলচালকের কথা
গাংচিলেরা চাউর করে মজলিশে, এজলাসে...

গানটা ফুরোয় বাঁট অব্দি হৃৎপিন্ডে ঢুকে
কেঁদে উঠতে চাই, কেউ সান্ত্বনা দেয় ঝুঁকে – 

হাসপাতালের দারোয়ান, সোজা করে পিঠ,
নিচে গিয়ে চালু করে পাম্পটা রোজকার
গোঁ গোঁ শব্দে কাঁপে দেয়াল, নৈঃশব্দ ভাঙে
বাইরে চাঁদের হাটে বাড়ে ফ্যাকাশে আঁধার। 

১৩ই মার্চ ১৯৯৬  



বস্তী উন্মুলন অভিযান নিপাত যাক

ব্রীজের নিচে রেললাইন, তার আপডাউনের খেপে
জ্বলছে কুটোর উনুন, ফুটছে ভাতের গন্ধে বিকেল –
পাঁচটার আপ্‌ বম্বেমেল, ছ’টার প্যাসেঞ্জারের
সময় বুঝে শহরফেরতা দলগুলি আম হেঁসেল

গড়ছে; ভাতের চারদিক ঘিরে শিশুদের হইচইয়ে
দিনভর কার গোরখধান্ধা কী দিল সে তর্কে
সব সতর্ক – সেদিন সে কার উনুনে চড়া ভাত
বেটাইমের এক ট্রেন আসাতে, গেছিল হড়কে! 




বকাইন

এ বছরও আকাশ থেকে নাগাল অব্দি ফুটে
একটি দুটি ঝরার স্পর্শে থরথরিয়ে উঠে
সুরভিত অন্ধকারের অস্ফূটে তার ঠাম!

পেরিয়ে গিয়ে, সাইকেল ফিরিয়ে আনলাম।
‘মাফ করিস, মনটা এত দিচ্ছে গিঁটে গিঁট;
সবাই বলছে, শহর ছেড়ে যাওয়াই ভালো…’

ফুলগুলো আরেকটু ফুটিয়ে গেল নীট
হাওয়া চৈত্রপথের - শুখা, স্বচ্ছ কালো।



পড়শি

পড়শি আমার সদ্য চেনা,
ঠিক পাশে নয়, দুচার মিনিট
পথ পেরিয়ে ডেরা – 
ও পড়শি ! ঢুকব নাকি ?
সকালেই রোদ এজলাসে আজ – 
পাতার শব্দে জেরা !

শহর ছেড়ে প্রান্তে এলাম
তুমিও, আর ভরল চোয়াল
পাকা দাড়ির ফলা !
মজাডোবায় এখানেও সেই
ঘুমপাড়ানি গানের সুরে
ফেরেববাজির শলা ...

বেশ কিছু দিন ইচ্ছে আছে
তোমার আমার রোজনামচার
রক্তে খুঁজি সাঁকো ।
আজ রোববার, জেনেই নিই
রাত্রে যখন ঘুম আসে না
তখন কোথায় থাক ।

মাঝে মধ্যে এমন দিনও
আনব – থাকবে বাচ্চাগুলো
বসবে বৌ দুজনাও – 
বেলায় বসে মেঘ পোহাব
এক বিকেলে চার শৈশব
মাপব নদীর বাঁও ।

পড়শি আমার নয়া পড়শি
কার্ড পাঠাব অনুষ্ঠানের
আর প্রচারের বই !
তোমার বা আমার কোনো
বন্ধুও এলে জানবে, বাঁচার
ধকল কিসে সই । 

৮ই নভেম্বর ১৯৯৬ 

   


বিষয়টা তো চেনা – নিজের জীবন

ছেলে সেদিন পেরুলো মাধ্যমিক – 
রোজই বলছে সাইকেলটা নতুন না হলে চাই না।
দিতেও চাও; পারছো না, 
তা নিয়ে দুঃখ পুষে গোমরানোটা ঠিক?

কথা কও তার সাথে!
রাত্রে খাওয়ার পাতে
আলোচনা করো মাসের হিসেব
খোলাখুলি সব দিক।
ছেলেই বলুক তার
প্ল্যানটা – ঘর চলবে যে,
কিভাবে শুধবে ধার;
বলো, 
স্রেফ দাবি নয়, দিক বিকল্প, আর্থিক!

মেয়ে বাড়ছে তরতর প্রতিদিন।
সমস্যা শুধু তোমার 
ও মায়েরই মাথায় – কেন?
মেয়েকে রাখো এমন নীরব
আজ ঘরের প্রশ্নচিহ্ন যেন!
একদিকে তার বাপের অহঙ্কার –
সবাই চুপ, তুমিই ঘোরাও লাঠি,
অথচ মনে ভয় কাঁপে – 
পালিয়ে যাবে? …
ঘরেই বুড়োবে? …
তোমারই প্রাণের ধন সেই ছোট্টোটি?

যাও না, বেরোও সাথে! 
সময় করে ছুটির দিনে
বেড়িয়ে এস বোটানিক।
জড়তা ভেঙে হাতটা ধরো বুকে,
বলো জীবনের যা কিছু দেখ চোখে;
স্নেহ নয়, তার কাঁধ চাও,
চাও হতে তার স্বাভিমানের শরিক।
(ভোটার লিস্টে নাম লিখিয়েছ তার?
লেখাও, ভোটটা দেওয়াও।
আগে হও তার অগ্রজ নাগরিক।)

মনে রাখো ভাইটাকে?
তোমারই সাথে মানুষটা এত বছর ধরে থাকে।
চাকরি নেই, জীবনটা লোকসান –
সকালে সেই যে যায় …
কোথায়?
ছেলেও জানে, ছোটকার খোঁজ 
দেয় ভোলার দোকান …

বলতে পারো,
কদিন পাও
সুযোগ সাথে বসার?
রুগ্ন শিল্প বড় চারশো, ছোটো পঞ্চাশ হাজার!
তেরঙা লাভের বিল
চুকতা করতে চার কোটি হাত বাতিল …
হয়ত ভাবি যে আমারই ভাই –
কক্ষনো মিছিলে
সোডার বোতল ছুঁড়বে না সে, তাও রোজ বিকেলে
হদিশ রাখো তার?

দেশটা হচ্ছে দালালের গুলজার।
কেউ বলে একবিংশ শতকে যাবে।
তার আগে করো ফয়সালা
বিপন্ন সাঁঝে চায়ের দোকানে কে আগে পৌঁছোবে?
তুমি না দালাল – 
কে রাখবে হাত ভাইয়ের কাঁধে,
কোথায় ভাইকে পাবে?  

ঘেমেচুমে ফেরো ঘরে।
তোমাদের দুটো ভিন্ন জগত, 
কিছুই বলার নেই, তাই বৌ নীরবে
রাতের ভাতটা বাড়ে।
নাহয় বিয়েটা হয়েছে অনেক আগে,
দেহে ছিল রসের আনাগোনা,
বাপজ্যাঠাদের পুরোনো রেওয়াজ ভাঙতে চাওনি, 
           ভাঙার কোনো 
                                  কারণও তখন ছিল না।
কিন্তু সে এত বছর ধরে তোমার;
তুমিও তো তার!
কখনো চেয়েছো গান তার দুনিয়ার?

কখনো চাই?
রাতের গভীর ক্ষণে
কোনোদিন মেঘ গর্জনে,
জানলাটা হয় নিরুদ্দিষ্ট সময়ের হাহাকার!
পাশে ঘুমন্ত যার মুখ ঘিরে বৃষ্টির ধ্বনি ভাসে
জীবনের এত নিবিড়ে এল
সে ছাড়া কেই বা আর?
তবু চাই তার গান?

বলাৎকার ও হত্যার করাঘাতে
যে কোনো নারীর নির্জন ক্ষণে মনের দরজা কাঁপে
কতটুকু করি তার হৃদয়ের ঘৃণাটাকে সম্মান?
সারাদিনে তাকে জীবনসত্যে কতটা দীপ্ত চাই?
ভালোবাসা, ঘরের শান্তি বাজি ধরে
কতটা তাকে তার চেতনার
অগ্নিকোণে জাগাই?

আজই বেরোও!
বসো’গে কোথাও!
বয়স হল তো কি?
ছুটি না থাকে, মাইনে কাটুক – 
জীবন কোরো না ফাঁকি।
সাথে বসে করো নিজের সমালোচনা,
জরুরি মিটিংএ যেমন হয়
বিষয়টা তো চেনা –

নিজের জীবন!
তবুও দেখবে কত
অপরিচিত 
রাস্তা বেরোবে সময়ের জাল থেকে।
যেই নীরবতা এত বছরের –
… ভাঙো!
… অশান্ত করো তাকে!

তুমি তো শোষক নও!
পাবে না শান্তি হিমালয়ে সেঁধিয়ে!
দুর্দিনেরশমন আসছে ধেয়ে!

২৩.৩.৮৭ 



কোচ্চিতে, মিছিলে

একটুখানি চলার পথেও এত কিছু হওয়ার থাকে!
হয়ে ওঠার নিমেষগুলোয় চোখ বুঁজলে – কালের চাকে 
মুখগুলো সব একলা একলা ভিতরফাঁপা কালোয়াতির
পরমান্নে চরম-বিষম খায় দুপুরে; একটি তিতির
খাঁচার মধ্যে খোঁজে, মাংস হওয়ার আগে, নখের ছায়ায়ঃ
আকাশটা কই বলছে না তো, দেখছে আমায় কিসের মায়ায়?

চাইলে হৃদয় – ভাবনার বিষগাছড়াগুলোও পুষ্প হল,
চাইলে বাঁধন – খুদকুঁড়োটাও পায়সান্নের সুবাস দিল,
চাইলে ডানা – বিতন্ডাতেও পেলে দেশের উদ্ভাবনী –
ভালোবাসার সাংগঠনিক প্রকৌশলে ছাঁচলে মণি!

হিন্দের শেষ সবুজ নোঙর! বলতে পার ঢেউয়ের দোলা –
তোমার গানের সুরে আমার একটু বেহুঁশ পিছিয়ে চলা।  



Thursday, May 19, 2022

যদি

পাহাড়
শহরগুলোয় পাথর দিতে কতো পাহাড় হারিয়ে গেল।
পাহাড়তলির বসত ভরা গল্পগুলো কোথায় গেল?
শিশুর ছুট চুড়োর দিকে! নির্জনে গান হাওয়ার পালে!
পাথর আড়াল প্রথম চুমুর! মাঝরাতে লন্ঠনের দোলা!
পাহাড় থাকলে যেতেও পারতো সেই শিশুর স্বপ্নে যার
স্কুলের পথে পাহাড় নেই!
 
নদী
শহরগুলোয় জমি দিতে নদীগুলো হারিয়ে গেল।
বর্ষাকালের প্লাবনে তার গানগুলো কোথায় গেল?
কোথায় গেল তার পাড়ের সুরে বাঁধা মনের অপার?
শুকনো খাতে মানুষ, পশু, সরীসৃপের চলার দাগ?
নদী থাকলে কচুরিপানার ভেলায় উঠতো শিশু যার
বিকেলে আর নদী নেই!
 
পুকুর
বাড়ি তোলার দৌরাত্ম্যে পুকুরগুলো হারিয়ে গেল।
আসা যাওয়ায় তারই পাড়ের প্রথম দেখা কোথায় গেল?
কোথায় গেল জলে ছায়া ভীরু পায়ে কোচিং যাওয়ার?
বর্ষাজলে রাস্তা ভরে কিলবিলানো মাছের দল?
যদি পুকুর থাকতো, শিশু পেতো আকাশ-পাতাল ভাবার
নিরিবিলি, তাও যে নেই!
 
গাছ
উন্নয়নের করাত-কাটায় গাছগুলো হারিয়ে গেল।
গাছের নিচেই হাত বদলের ছোট্টো উপহারও গেল?
ভালোবাসার বৃষ্টিদুপুর, মধু ফেলত মাথায় গালে!
সন্ধ্যা নামলে জাগতো পাতার আড়াল ভরে পাখির পাড়া
গাছও থাকলে যেতো শিশুর স্বপ্নে যার স্কুলের পথে
বড় হওয়ার গাছই নেই!

২০.৫.২২

Wednesday, May 18, 2022

জনৈক মদ্যপ মৃতকের স্ত্রীকে

যদি সে থাকত অম্নি, আপনি ঘরণী
এত যুদ্ধ একহাতে ঘরে বাইরে লড়ে
ভাঙতেন বিধিলিপি নামহীনতার?
তার সে মাতলামোয় সন্ত্রস্ত শিশুরা
হত এত স্বাভাবিক সন্তান মায়ের?
দেখুন, বিব্রত আমি তুলতে কথাটা,
কাড়ে জিভ তবু কিছু জিজ্ঞাসা শানায়
সোয়ামিত্বের জমাখরচ কিসে যায়?
 
এ দায় বা সে দায়ের তোড়া বাঁধা ডিম
বস্তুতঃ ঘোড়ার; তথা লায়েক মর্দানি
এদেশের সনাতন, সংহিতাপ্রসূত
শুধু এক ধোঁকাবাজি, পাহাড়প্রতিম।
 
স্তব্ধ রাতে চেনে পথ, পাথরের চাঁদ
নারীর শূদ্র-প্রজাতিস্মৃতি সহজাত। 




মেগাসিরিয়াল

দামী মানুষের দামী দুঃখকষ্টগুলি
কবুতরী গুঞ্জে ভরে বৈদ্যুতিন ধুলি
 
জানলার রোদ মুখে বিধ্বস্ত রূপসী;
কলহ নব প্রজন্মে প্রাসাদবিনাশী;
কুলীন নৈশভোজের টেবিলে ভ্রুকুটি
নব্য ভারতে তাঁদের প্রতিষ্ঠিত ঘুঁটি
যাই হোক দিচ্ছে অন্ন, ঐশ্বর্যে যোগান!
দুঃসাহসে থালা ভাঙে অবুঝ সন্তান!
 
পবিত্র পরিবারের সাম্রাজ্য সংকটে
আপামর রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা চাটে।

সাঁজোয়া গণতন্ত্রের মেধাযুদ্ধ চলে।
প্রজাদের ঘরে ঘরে বিনোদন ফলে।
স্বপ্নে ঢোকে প্রাসাদের কালাজাদু বুঝি!
উন্নতির ধূর্ততর ধারাপাতে মজি।
 

 


মহাশয়

মহাশয় নিজ সমালোচনার জাত-অনুরাগী।
উপসংহার বাণীর আত্মসমালোচনায়
টানলে কখনো ভুলে যান না যে শেষ পংক্তিতে
জ্বালতেই হবে সংকল্প ও আশার আগুন।
 
মহাশয়, তাঁর আশয় সদাই প্রিয় জনগণ।
ইতিহাস আজ এভাবেই তাঁর কুক্ষিগত;
দুধালো গরুর লাথি খেতে তিনি পেছপা কবে?
ভগবানও তাঁর দূতকে পাঠান ছদ্মবেশেই।
 
মহাশয় আরো চুটিয়ে বাসেন ভালো গালাগাল
আম খাওয়া হলে জমে প্যাঁক শোনা আঁটির ভেঁপুর।
 
শব্দ নিয়ত পথ বিপথের কুহকে দাঁড়ায়
মুছে স্বপনের বর্ণালি বোঝে প্রকৃত আঁধার
মহাশয় শুধু তন্তু ছাড়েন শাবকটি যেন
কাব্য-কাব্য-ভাব ছেড়ে থোক হিসেব না চায়।

২৭.৩.৯৫

 


 

কূটবুদ্ধি ও কাব্য

কাব্যে উপেক্ষিত থাকে, যারা সত্যাদেশে
কর্মরত, জীবনের প্রপঞ্চিত জালে।
যথা আত্মা আগুনে ও জলে নির্বিকার
তন্ত্রে থাকে যন্ত্র হয়ে নিপূণ খোলসে।
 
আমাদের কাব্যবোধ সারল্য-প্রতিমা ;
ছোটো স্বপ্নে, সুখে দুখে, মাটির সকাল,
বিপরীতে ক্রান্তিদর্শী বিহঙ্গ ঝড়ের।
কূটসময়ে সারল্যের মাংস আগলাতে
কূটবুদ্ধি বান্ধবেরা ঘড়ি রাখে দুটো
মণিবন্ধে বৈদ্যুতিন, ধুলোর, শোণিতে।
 
কূটবুদ্ধি মানুষেরা শীলিত প্রত্যয়ে
আনন্দে বিষাদে ধরে সময়ের ক্ষতি
বিহ্বল ভাবালুতায় বিরক্তি লুকিয়ে
অকথায় বড়কথার করে সুত্রপাত। 



যক্ষের পায়রাগুলি

গুণধর্মে থাকে কিছু উচিৎএর খাঁড়া।
আপসবিদ্বেষী সাজে যেথায় সেথায়
দিনরাত ঘুঁষি ঠুকে হাওয়ার তক্তায়
বিবিধ প্রপঞ্চ ক্রুশবিদ্ধ করে তারা।
 
তেমনি থাকে অনেক স্বাধীন ফানুষ
অন্নের হিসেব বাদে সর্বার্থে স্বাধীন,
অস্তিত্ত্বে স্বাধীন অনস্তিত্ত্বেও স্বাধীন,
বন্ধুমুখে ঘষে দেয় বিতন্ডাবুরুশ।
 
দাসবৃত্তে উপজাত এ পায়রাগুলি
বস্তুতঃ যক্ষপুরীর জ্ঞানবৃক্ষে ফলে।
 
আমাদের দুঃখ, সাধ, সংকল্প, সংশয়
উষার দীপ্তিতে জাগে অন্তরঙ্গ জলে
সংগ্রামে যখনি চলি, সার্বিক আঁধার
ছুঁয়ে বিপদ বোঝাই অযথা কথার। 

 



 

চশমা

(পঞ্চাশের দশকে স্বদেশ-নির্মাণে শরিক এক পূর্বজকে)
 
তুমি ও তোমারই মত অনেক স্থপতি
ভেসেছিল যারা, শুনে উদ্বুদ্ধ দেশের
স্বপ্নলীন নির্বচন পাহাড়ে জঙ্গলে,
জনপদে, ক্যাম্পে মিশে ভাষায়, জাতিতে,
চৈতন্যে বিশ্বাস ছিল হবে, সব হবে
স্বাধীন ভারতবর্ষ, রুশ কিম্বা চীন
কিম্বা ভারতবর্ষেরই পথে হবে ভালো
সে কিছু উন্মুখ দিন ছিল এ মাটির!

আমরা যারা সন্তান, ঠারি অন্ধকারে
অসমাপ্ত উন্মেষের কার্বনতারিখ
নুনের আগাছা ভরা শ্রমের সম্ভার!
তোমাদের কাছে বসে সেসব দিনের
অভিজ্ঞতা শুনি আর ফিরি চোখে নিয়ে
চশমা তারুণ্যময়, পুড়ে যাওয়া কাঁচ।
 


কবন্ধ

বেশ কিছুদিন ছিল মস্তিষ্কে নাজুক
ভারসাম্য, উত্তেজনা এবং হতাশার,
হঠাৎ ফেটেছে রগ ক্ষুদ্র বিকলনে
যদিও সহনশক্তি গর্ব ছিল তার।
 
ধরাধরি করে তাকে আমরা চলেছি
মৃদুভাষে স্তোক দিচ্ছি, সন্ধ্যা ও সকাল
যে সমাজে বাস করি, এভাবেই তা চলে,
বিক্ষেপে সময় যায়, ঢিলে হয় চাল।
 
আমরা সত্য! মুঠোয় সংঘকিশলয়!
অথচ এ জীবনের যতেক নোংরামি
আমাদেরো মাঝে নিত্য অসুখ ছড়ায়!
 
এটুকু বলে নিজের কন্ঠ শুনে থামি,
ভাবি এ পথের শেষ যেখানে ঘনাবে,
ডাক্তার? না এক ধর্মযাজক পৌঁছোবে?

৬.৩.১৯৯৪  



প্রৌঢ়ত্বে বেকারী

ছাঁটাইগ্রস্ত সুশীলবাবু, বুড়ো আর্মিম্যান হরি,
বয়স-পেরিয়ে-যাওয়া-নিরঞ্জন-বেকার-ভাদুড়ি
অফিসঘরে চৌখস যুবাটির হন সম্মুখীনঃ
আরে আসুন! এস হে! দুকাপ চা দিস, ও নবীন!
কাজ? আরে হ্যাঁ হ্যাঁ! হবে! এত অস্থির কেন? নাকি গো
শালাবৌ টানেন কর্তা অনুরাগে, হেসে রসপ্রিয়
হাহা। অনুজ লাজুক মাথা নিচু করে হাসে হেঁহেঁ!
শহরের রৌদ্রে মেঘে এ দুঃসহ বালখিল্যরূপে
 
সারাটি জীবন মনে হয় মাথার অপরিণতি,
দাঁড়ায় যখন তারা অন্য কিছু লোকের সম্মুখে।
সে অন্যেরাও এদের সাথে অতিস্মার্ট ব্যস্ততায়
অগ্রজ-প্রতিম হয়ে কথা বলে স্বচ্ছল-কৌতুকে।
 
থে নেমে তারা দেখে বাণিজ্যিক সভ্যতার তট
ঢেউয়ের জেল্লায় অন্ধ চোখ, দাঁতে ধুলোর ঝাপট।

 


মাতানচেরি দ্বীপ

ভাষার মূলশরীরে সংলগ্ন রয়েছে এক দ্বীপ।
মূল হতে ভিন্ন তার ছোটোসুর্য ছোটোচাঁদ মাছ
সুগন্ধিত মশলার লোভে নৃপতি ও হার্মাদের
ছোটোসন্ধি ছোটোদুর্গ ঘামের শিকড় ঠাসা মাটি
ছিল রুধিরের আধাবিস্মরণ আধেক স্মরণ;
সেতু হয়ে ফেরি হয়ে নিরন্তর আজ পারাপার।
 
সমুদ্রে লবণ জ্বলে জাহাজের ধীর গতি ঘিরে।
মলয়ালী, চীনা ও ইহুদি এবং আরো প্রকৌশল
অবক্ষয়ে আত্তিয়নে গলিপথে রোদ হয়ে ওঠে।
সেলফোনে কথা বলে আধুনিক বণিকপুঙ্গব
প্রাচীন মুখোশকাঠে গহনায় পড়ে তার চলমান ছায়া,
পর্যটকদল ঢোকে ঠান্ডা সিনাগগে

ভাষাপথস্মৃতিগুলি পৃথিবীর যেন বা জাগায়
চঞ্চল জানালা ছাত সকালের কাজে ব্যস্ত পাড়া। 



অধুনান্তিক

কবিতা খানিক ধাঁধার মত দেখাবে; চিত্রকল্পে
আনব অর্থবিভ্রাট। শব্দ উড়িয়ে দিয়ে বাক্যের
বোমার আঘাতে, বাঁদিক, ডানদিক বা মাঝ থেকে
প্রস্ফুট করব বিবর্তন স্নায়বিক শিং ও লেজের।

ছন্দের চাকা ঘুরবে রুলেটের মত, খেলাড়িরা
উত্তেজিত; ছোট্টো গোল ঈশ্বর, নিরীহ, নির্বিকার
বাজির আবর্তে ঘুর্ণমান – কোথায় দাঁড়াবে? যাবে
ভাগ্যলক্ষ্মী কার ঘরে? কবিতা ক্রমে হচ্ছে বাস্তব।

কবিতা সোজা গেলে এক, উল্টো গেলে অর্থ আরেক
নিচের থেকে ওপরে গেলেও অর্থবহ! লুধিয়ানা
থেকে আসবে বিস্তর কিট, দিল্লী থেকে নিসর্গের
বুকে যাওয়ার টিকিট। প্রাতঃস্মরণীয়রা অবশ্যই
প্রাতঃস্মরণীয়। কিন্তু প্রাতঃ মানে নির্ধারিত স্লট।
জীবনে অসফলতা নেই; অভাব সমঝদারির।

৩.১.৯৫



Tuesday, May 17, 2022

গয়াযাত্রা

আজন্ম পাটনাইয়ার গয়া যাওয়া আসা
সহজাত অন্তর্যাত্রা অর্দ্ধ-শতকের। …

ট্রেনের ইঞ্জিন ফেল, সারা রাত হত 
রেললাইন বন্ধুসঙ্গে গানে গুলজার।
পাটনা-গয়া রেলপথ কিম্বদন্তি যেন  –
ভ্যাকুয়াম নিয়ে যেত বালখিল্যদল। 
কালে কালে ডবললাইন, বিদ্যুতিকৃত
মাতৃভূমি মগধের ভিতর-উঠোন।
 
শহরগুলো ছন্ন ছড়া বেড়েছে ইদানিং, 
মনে ভাসে সাথীদের বিশ্বস্ত ঠিকানা। 
অন্তঃসলিলা বালিতে গর্ত খুঁড়লেই 
তিরতির ওঠে ফল্গু পাঁজর ভিজিয়ে! 
পারসা, পুনপুন, তারেগ্‌না, টেহটা,
জাহানা…, বেলা, মখদুমপুর, চাকন্দ...

পাটনা
২৮-৩-১৫/২২.৪.২২ 



১৯শে মে ১৯৬১

শহর জুড়ে বন্ধ্‌! রবির শতক যাপন যেন!
তাঁরই ভাষার তারুণ্যের রক্ত বইল জলে!
মানচিত্র কেটে দিলেই ভাষা হারায় না
বরাকবাংলা বললো তার সত্যের সম্বলে।
 
আন্দোলিত শিলচর ভাবেও নি হঠাৎ
গুলি দাগবে পুলিস নিছক ভাঙতে অবরোধ!
ভাবেও নি, গোরা ডায়ার বহাল স্বাধীন দেশে।
ভেদ-মন্ত্রে শাসনধর্ম লাশে ভরলো রোদ।
 
নামগুলো খুঁটিয়ে পড়ি – 
                                শস্যে নামে মেঘ!
কোন স্টেশনে দূরের ট্রেন দৌড়োয় উন্মুখ
নিজ-শহরে বাংলা দেখি ক্ষইছে ক্রমাগত! 
লিখবো মায়ার এ বন্ধনে বিহারি তমসুক?

ভাষা-সখ্যে জুটে শোনাই এ দেশেরই ব্যথা।   
স্মৃতির হক কর্জ নিতে সব লড়াইয়ে লাগে।  
অচেনা দশ ছেলে,এক মেয়ের আবছা ছবি
ফ্রেমে নিয়ে ছাপাই দিনের ব্যানার উনিশে মে।   

 ১৭.৫.২২ 
 


Sunday, May 15, 2022

বুদ্ধ

আপনি বুদ্ধ ফিলিম শুরুর
ধামাকেদার সীন!
মনে হয় সিনেমা হলের
সস্তা ভাঙা সিটে বসে
দেখছি জবর হিট
          জন্ম-ঋণ!
 
সমুদ্রের সুর্য উঠছে
গাদিপচা রীলে!
পরেই উঠল ছায়ামানুষ
ঢাকল সুর্য বিশাল বুক
হলের তিনশো দর্শককে
উৎকণ্ঠায় ফেলে।
 
একটু পরেই বুক ছিঁড়ল
আলোর বিচ্ছুরণ।
সুর্য আবার সুর্য হল,
ছায়ামানুষ আকাশ হল,
লেখায় সুরে ফুটে উঠল
বুদ্ধং শরণং !
 
বুদ্ধ অর্থে মহৎ মানুষ
যাও তাঁর শরণে!
আরো এগোও, ধম্ম অর্থে
জ্ঞান, ধরো শিরে,
আরো এগোও, সঙ্ঘ ঐক্যে
মানুষ হওয়ার রণে!

সাত দশকের দেশকালও
ফিলিমই, বিন্দাস!
তবু আপনার সাধনছায়ে
পাতার মর্মর,
শুনতে বড়ো ভালো লাগে;
কথা কি ছাই বুঝি?
হাওয়া, আলোয় পাতাগুলোর
গন্ধে ভরি শ্বাস।  

১৬.৫.২২