Labels
- Ajker dintar janya (10)
- Alokji's poems in English translation (6)
- Articles (116)
- Behar Herald (2)
- Bhinshohore (55)
- Biography (1)
- Engels (11)
- Hindi (48)
- Housing Question (10)
- Kedarnath Bandopadhyay (1)
- Krishak Sabhar Smriti (2)
- Lok Janwad (4)
- Magadher Sahitya (6)
- Meghsumari (155)
- Phire ese (170)
- Plays (10)
- Poems (462)
- Poems by Robin Datta (5)
- Priyo Pochis (8)
- Sanchita (1)
- Sirir mukhe ghor (20)
- sketches (6)
- Smritiprasanga (2)
- Somudro Dubhabe Dake (29)
- Song (1)
- Songs (7)
- Stories (52)
- Translations (88)
- Video (5)
- कौन थे इश्वरचन्द्र विद्यासागर (200वीं जन्मजयंती पर एक कर्मवीर की कीर्तिगाथा) (19)
Tuesday, August 31, 2021
চারবন্ধু
Saturday, August 28, 2021
কর্মাটাঁড় ১৯ কিমি
“এভাবে কোনোদিন যাওয়ার সুযোগ হবে ভাবিনি। সেই ৪৬ বছর আগে গুরুচরণ সামন্ত ও নরেন মুখার্জি গিয়েছিলেন। ডাক্তার ঘোষালের গাড়িতে। সঙ্গে নিশ্চয়ই ড্রাইভারসাহেবও ছিলেন। আজকে আমি দেবল, বুড়ো আর শ্যামাদা, ড্রাইভারসাহেবকে নিয়ে চারজন। তবে তাঁদের, কর্মাটাঁড়ে বিদ্যাসাগরের বাড়ির খোঁজ করে ফিরে এসে লিখিত রিপোর্ট জমা দিতে হয়েছিল বাঙালি সমিতিকে। আমাদের কাউকে কোনো রিপোর্ট দেওয়ার নেই কেননা বিদ্যাসাগরের বাড়িটা কোথায় সবাই জানে। খুঁজে বার করতে হবে রাস্তা, মানে গাড়িতে পাটনা থেকে কর্মাটাঁড় যাওয়ার হ্রস্বতম রাস্তাটা, আর সেটার খোঁজ পাওয়ার কারো কোনো দরকার নেই। দিব্যি ট্রেনে করে যাওয়া যায়। আমরা গাড়ি করেছি কেননা আমাদের... নাঃ বিশেষ করে আমার দায়।
“একটা বয়সের পর
সব যাত্রা যেন নিজেরই অতীতে হয়ে যায়। তাও আবার সেই অতীত যেগুলো বাঁচিনি, বাঁচার
ইচ্ছে হয়ে জমে ছিল বেঁচে থাকার পরতে পরতে। পরত বলছি কেন? পরতই তো! দশ-বিশ বছরের,
বা হয়ত তারও কম, পাঁচ বছরের! এদেশে ভোট তো হয় পাঁচ বছরেই! নতুন প্রেক্ষিত দেয় সময়,
আর সেই অনুসারে বদলে নিতে হয় বেঁচে থাকার চর্যা – সে তুমি ছাপোষা হয়েই বাঁচো আর লড়াকু হয়েই বাঁচো। আশির কথা সত্তরে
ভেবেছিলাম? নব্বইয়ের কথা আশিতে? আর এই ২০১৯শের কথা ২০০৯এ?
“১৯৭০এ ২০০০এর ভাবনাটা
১৯৭০এরই ভবিষ্যৎ-ভাবনা ছিল। আর ১৯৯০এ ১৯৮০এর ভাবনা বস্তুতঃ ১৯৯০এরই অতীত-ভাবনা। সেরকম
বিদ্বান হলে বলতাম ভবিষ্যত-দৃষ্টি আর অতীত-বিশ্লেষণ।
“এত তফাৎ হয়ে যায়!
যেন কাংস্যযুগের উদ্ধত রৌদ্র-সমুজ্জ্বল নগরায়ন, জানেই না যে লৌহ বলে এক নতুন ধাতু
আসবে, মুছে দেবে কাংস্যযুগের সমস্ত স্মৃতি-সত্বা-ভবিষ্যৎ। মানুষ আর ভাবতেই পারবেনা
যে কাংস্যযুগটা লৌহযুগের প্রতীক্ষা ছিলনা, তার ইতিহাস বইয়ে পরের অধ্যায়ের প্রতীক্ষার
মত। একটা সম্পূর্ণ সভ্যতা ছিল, পূর্ণ, সার্বভৌম, নিজের দিগন্তের অনিঃশেষ নিজেরই বলয়ে
রেখে।
“এভাবেই মানুষ
এগোয়।...”
- শুনছেন? দেবলবাবু! নিজের মোবাইলে একটু – ক্যা বোল রাহে হ্যাঁয় ড্রাইভরসাহেব ... জিপিএস! – হ্যাঁ, একটু জিপিএসটা খুলুন! ড্রাইভারসাহেব পথ হারিয়ে ফেলেছেন।
শ্যামাদার কথায় চমক ভাঙল। ড্রাইভারসাহেবকে ঝাঁঝিয়ে উঠে বললাম, “হামকো জিপিএস নহি আতা হ্যায়। গুগলম্যাপ মেঁ দেখকর তো আপকো
বতায়ে থে, বিহারশরিফ সে মোড়না থা। আপ হরনওত মেঁ হি মোড় দিয়ে। (জানলা দিয়ে বাইরে তাকালাম), অব ইয়ে তো স্টেট হাইওয়ে ভি নহি হ্যায়, গাঁও
কা রাস্তা হ্যায়, ক্যা দিখেগা গুগলম্যাপ মেঁ?”
সামনের সিট থেকে বুড়ো আশ্বস্ত করল, “চিন্তিত হবেন না। আমি তো খুলে রেখেছি জিপিএস। একদম ঠিক যাচ্ছি
আমরা। ড্রাইভারসাহেব আসলে একটু ক্রসচেক চাইছিলেন। কাহে কো পরেশান হো রহে হ্যাঁয়
বলরামজি, মেরে ফোন কা জিপিএস অওর উনকে ফোন কা জিপিএস অলগ হোগা ক্যা? বস আপ জহাঁ সে চঢ়
সকেঁ, সামনে এক এনএইচ হোগা, উস পর চঢ় যাইএ। ফির বাঁয়ে শেখপুরা মিলেগা বিস কিলোমিটর
পর।... দেবলদা, আপনি কখনো গেছেন ওই হরনওতের রেল-ওয়র্কশপে?”
-
তাহলে? কিছুদিন পর ওটা আর থাকবেই না হয়ত। একটা
ভাঙা দেয়ালের টুকরো হয়ত খাড়া থাকবে বেদীতে – এখানেই ছিল ঐতিহাসিক
জামালপুর রেল কারখানা ...
শ্যামাদা প্রশ্ন
করলেন, “জামালপুরে কিছু আছে আমাদের? মানে বাঙালি সমিতির ব্রাঞ্চ টাঞ্চ?”
-
অব কহীঁ নহী রোকেঙ্গে। ইতনা দের কর দিয়ে নিকলনে
মে আপলোগ। অব চকই কা ঘাটি পার করনা হোগা রাত মে। পতা নহী কহাঁ ফঁসেঙ্গে।
পঞ্চায়েতের সরু রাস্তা
দিয়েই বুন্দি থানা হয়ে কখন জানি পৌছোলাম বেলছি, সকসোহরা।
-
এখানে ইলেকশন ডিউটতে এসেছিলাম শ্যামাদা। অনন্ত
সিং, ছোটে সরকারের এলাকা। আর এই বেলছিতেই ইন্দিরা গান্ধী এসেছিলেন সত্তরের দশকে মনে
আছে? হাতিতে চেপে আসতে হয়েছিল, বেলছি নরসংহারের পর।
বারবিঘায় ঢুকতেই
আলোয় আলো। অবশ্য শহরের বাড়িঘরগুলোর আলো নয়, রাস্তার ওপর পর পর দু’তিনটে মন্দিরের
আলো। বাঁদিকে পিছনে অন্ধকার ওই উঁচু আকৃতিটা গিরিহিন্দা পাহাড়ের না? যবে থেকে
গিরিহিন্দার বিষয়ে জেনেছি, মাথায় ঘুরছে। নাঃ, অন্য কিছু হবে।
ড্রাইভারসাহেব
গাড়ি থামালেন সিকান্দ্রায়। নদী পেরিয়ে, বড় জৈন মন্দিরটা ছাড়িয়ে। তখন ন’টা বাজছে।
-
নাঃ অনেক দেরি হয়ে যাবে। তাড়াতাড়ি খেয়ে নিয়ে চলুন। ভাগ্যে যা আছে
তাই হবে।
আসলে ড্রাইভারসাহেব নিজেই বলেছিলেন বেশি রাত
হওয়ার আগে চকাইয়ের ঘাটি পেরিয়ে যেতে চান। মাওবাদীদের উৎপাত, আর ফলে পুলিশের খানাতল্লাশি।
যদিও, মাওবাদী হোক আর পুলিশ, পেত শুধু চারশো কপি বিদ্যাসাগরের জীবনী, ব্যানার, কিছু
ওষুধপত্র আর বিস্কুট, চানাচুর। ও হ্যাঁ, জামাকাপড়ের ব্যাগগুলো আর পয়সা।
লাইন হোটেলটা ড্রাইভারসাহেবের পরিচিত কিনা
বুঝলাম না। তবে লাইন হোটেলগুলোর প্রিয় খদ্দের তো ড্রাইভারেরাই। এটা ব্যক্তিত্বের অদ্ভুত
এক পরিচায়ক। লাইন হোটেলে রাত বারোটা নাগাদ সবাই দায়ে পড়ে খায়। কেউ একটু কিছু মুখে গুঁজে
নেয়। কেউ বেশ আয়েস করেই খায়। কেউ ওদিক ঘেঁষে বসে, মদের বোতলটা রেখে। কিন্তু, সব কিছু
সত্ত্বেও তাদের চোখেমুখে শান্তি আর পরিতৃপ্তির সেই ভাবটা থাকে না যেটা ড্রাইভারের চোখে
থাকে। এটা তার যাত্রাপথের সরাইখানা নয়, ওয়র্কশপের, কাজের জায়গার লাঞ্চরুম বা টিফিনঘর।
ড্রাইভারের ওয়র্কশপটাই পথে পথে আর রাতে রাতে ছড়িয়ে, তাতে সে আর কী করতে পারে! এমনই
একটা ভাব নিয়ে মুখ নিচু করে সে তার খাবার খায়। আমি মুগ্ধ হই এই এ্যাটিচুডটা দেখে।
ঝাঝা, জমুই পেরিয়ে চকাইয়ের ঘাটি। কালো মেঘে
ভরা আকাশ। তার প্রান্তগুলো কোথাও কোথাও দূরের বসতের আলোয় স্তিমিত উজ্জ্বল। বাকিটা অন্ধকারে
পাহাড় আর পাহাড়। ড্রাইভারসাহেব এমন শঙ্কিত করে দিয়েছিলেন, একবার পেচ্ছাপ করার অজুহাতে
দাঁড়াতে বলার সাহসও হল না। দাঁড়ালে পথের ধারে ঈষৎ নেমে উপভোগ করতাম চকাইয়ের ঘাটির এই
রূপ।
ঘাটি পেরিয়ে কিছুটা গিয়েই জসিডি, তারপর দেওঘর।
গুরুত্বপূর্ণ তীর্থক্ষেত্র, তাই ‘বিকাস’এর কল্যাণে আলোয় আলো। নানা দিক থেকে পথ এসে মিলছে কাজেই ট্রাকের
ভীড়ও তেমন।
আলো থাকলে অন্ধকারের মানে বদলে যায়। আলোরও মানে বদলে যায় অন্ধকার থাকলে। বিহার ‘ডেভেলাপ’ করে গেছে। ঝারখন্ডও ‘ডেভেলাপ’ করে গেছে। পিছিয়ে থাকা জায়গাগুলো পঞ্চদশ শতকের জার্মানিতে
চলে গেছে। বদলটাই শাশ্বত। দেওঘর পেরোতে পেরোতেই অনেককে জিজ্ঞেস করলাম
আমরা কর্মাটাঁড় কোনদিক দিয়ে যাব। জসিডি ফিরে গিয়ে রেললাইনের ধারের রাস্তা দেখে দেখে
গেলে হয়ত মধুপুর হয়ে যাওয়া যেত। অথবা হয়ত যেত না। আমরা কেউই কিছু জানতাম না সেরকম কোনো
রাস্তার বিষয়ে। আর দেওঘর থেকে সোজা রাস্তা আছে কেউ বলেছিল। গুগলও সেরকমই দেখাচ্ছিল।
চিত্রা কোলিয়ারি হয়ে। কিন্তু কিভাবে?
শেষে এক টেম্পোড্রাইভার ঠিক রাস্তাটা বলল। দেখাল, এদিক দিয়ে সারাঠ
চলে যান। সারাঠ পেরিয়ে একটা মোড় পাবেন। কোনদিকে না বেঁকে সোজা কিছুদূর এগিয়ে গেলে দেখবেন বাঁদিকে রাস্তা গেছে চিত্রা কোলিয়ারির দিকে। ওদিকেই কর্মাটাঁড়। অথচ টেম্পোড্রাইভারের
কথায় বিশ্বাস না করে সারাঠের মোড়ে আমরা দাঁড়িয়ে থাকা তিনজন পুলিসকে জিজ্ঞেস করে ফেললাম।
তারা জিজ্ঞেস করল, কর্মাটাঁড়? সারাঠ ব্লকে? তারপর তিনদিকে যাওয়া তিনটে রাস্তার দিকে
আঙুল দেখিয়ে বলল, এদিক দিয়েও যেতে পারেন, সোজাও যেতে পারেন আর ওদিক দিয়েও যেতে পারেন।
… শ্রদ্ধা বেড়ে গেল টেম্পোড্রাইভারের ওপর।
*
অন্ধকারে চোখ সয়ে গিয়েছিল কিছুক্ষণেই। এদিকে ভালো বৃষ্টি হয়ে গেছে।
গাড়িটা একেক বার জমা জলের ওপর দিয়ে ছুটলেই স্ক্রীন অব্দি ভিজে যাচ্ছে জলের ছিটেয়। অনেকক্ষণ
পরে গেট দেখা গেল চিত্রা কোলিয়ারি কলোনির। ঢুকে এগোচ্ছি। গভীর রাত। একটাও দোকান খোলা
নেই। মানুষজন নেই রাস্তায়। অন্য কোনো গাড়ি বা যানবাহনও দেখছি না। ট্রাকও দেখলাম না
এখন অব্দি একটিও। ধরেই নিয়েছি, কর্মাটাঁড় আমরা পৌঁছোচ্ছি না। এভাবে হাতড়ে হাতড়ে জামতাড়া
হয়ত পৌঁছোব, জেলাশহর। তারপর সেখান থেকে দেখা যাবে।
হঠাৎ একটা বাইক দেখলাম দাঁড়িয়ে। তারপর লোকটিকেও দেখলাম, বাঁপাশে
দাঁড়ানো একটা ট্রাকের আড়ালে পেচ্ছাপ করছে। গাড়ি দাঁড় করিয়ে অপেক্ষা করলাম তার ফিরে
আসার। কর্মাটাঁড় জিজ্ঞেস করায় সে হেসে বলল, এদিকে কেন এলেন? যেখানে ঢুকলেন এ রাস্তায়
সেখান থেকেই তো আলাদা রাস্তা গেছে। আচ্ছা, আমার সঙ্গে চলুন। বলে সে পিছন দিকে বাইক
নিয়ে চলল। আমরা অনুসরণ করলাম। অনেকটা দূর গিয়ে সে বলল, এবার আমি বাঁদিকে যাব। আপনারা
সোজা এগিয়ে যান। সামনের মোড়ের পর আরেকটা মোড়। তারপর অন্যদিক।
আমাদের মনের অবস্থা শোচনীয় ছিল। রাতের খাওয়া গেল, ঘুম গেল, নন্দনকাননে
পৌঁছোলেও শোবার জায়গা পাব নাকি গাড়িতেই বসে কাটাতে হবে। জামতাড়া গেলেই বোধহয় ভালো হত।
সেটাই বা কোনদিকে।
চিত্রা কলোনির বোর্ড লাগানো মোড়ে এসে পৌঁছোলাম। এবার? হঠাৎ সামনে
অন্ধকারে চোখ পড়ল। গ্রামীণ পথ পরিযোজনার ছোট্টো বোর্ড ঝোপগুলোর সামনে। তাতে প্রথম নামটাই
কর্মাটাঁড় – ১৯ কিমি। পাশ দিয়ে সরু রাস্তা ভিতরে ঢুকে
গেছে। যাব? এই রাতে? অন্ধকারে? যাওয়াই যাক। পথটায় চলতে চলতে বুঝলাম, অন্ধকারে মনে হলেও,
পথ ততটা সরুও না আর খারাপও না। একটু পরে একটা বাঁধ পেরোলাম। নদীটা দেখা গেল না। এবার
বসত আসছে। মাঝে মাঝে আলো। বাড়িঘর। সরকারি ভবন, স্কুল, মাঠ। একটা জায়গা দেখে মনে হল
এটাই। ড্রাইভারসাহেব বললেন, আমার মিটারে এখনো উনিশ কিলোমিটার হয়নি। এটাকেই আমি ভরসা
করি।
ঠিক উনিশ কিলোমিটারে পৌঁছোলাম একটা লেভেলক্রসিংএ। বন্ধ। নেমে রেললাইনের
ওপরে দাঁড়িয়ে দেখলাম অদূরে একটা স্টেশন। ওটাই
কি বিদ্যাসাগর স্টেশন? তাহলে আমরা কোনদিকে আছি? ঠিক হদিশ পেলাম না। কী করি? রেললাইনের
পাশ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলে যাই প্ল্যাটফর্মে? ট্রেনই বা আসছে না কেন? এমন তো নয় যে
এসব এলাকায় এটাই নিয়ম? যানবাহন বিশেষ থাকে না বলে দুর্ঘটনা এড়াতে রাতে বন্ধ করে দেওয়া
হয় লেভেলক্রসিংগুলো? কী যে করি? লেভেলক্রসিংএর ওপারে কোনো বাড়িতে কড়া নাড়ি?
অনেকক্ষণ পর দূরপাল্লার একটা ট্রেন এল। এখানে দাঁড়াবার না। জোর গতিতে
চলে গেল। লেভেলক্রসিং খুলল! যেন মনে পড়িয়ে দিল অদৃশ্য হাতটার কথা। কন্ট্রোলরুমে যে
হাতটা জেগে ছিল। কন্ট্রোলরুমটাই বা কোথায়? ওই দূরের স্টেশনটায়, না এদিকেই কোথাও? চোখ
পড়েনি!
আমরা খেয়াল করিনি, ড্রাইভারসাহেব লক্ষ্য করছিলেন আমাদের অস্থিরতা।
খোলা লেভেলক্রসিং পেরোতে পেরোতে হেসে বললেন, “বিদ্যাসাগরজী একটু ধৈর্য রাখতে শেখান নি আপনাদেরকে?”
অবশেষে নন্দনকানন।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে সোজা হলঘরটায়। বিদ্যাসাগরের প্রতিমার পিছনে। দিনে এখানেই কিছু অনুষ্ঠান
হবে। আপাততঃ ঢালাও শোওয়ার ব্যবস্থা। বাঃ, দু’তিনটে খালিও রয়েছে, তাও স্টেজের ওপর। স্যাঁতস্যাঁতে মেঝের একটা দুঃস্মৃতি
গড়ে উঠেছে ছোটবেলা থেকে, বন্যা আর বৃষ্টির বছরগুলোয়।
ঘুম যখন ভাঙল, দেখলাম
দেরি হয় নি একটুও। রাত তিনটেয় ঘুমোলেও, বিদ্যাসাগরমশাই ঘেঁটি ধরে উঠিয়ে দিয়েছেন। আশেপাশের
স্কুলগুলোর অনেক অনেক ফুটফুটে কালো মেয়েরা স্কুলড্রেস পরে ব্যানার নিয়ে লাইনের প্রথম
দিকটা বাঁধছে প্রভাতফেরিতে বেরুতে। ছেলেরা পিছনে। বিদ্যাসাগর দেখছেন। এখনও মালায় ঢাকা
পড়েনি নাক। নিশ্চয়ই গন্ধ পাচ্ছেন স্কুলড্রেস আর ঘামের। ঠিক তাঁর চোখের বিপরীতে মাঠের
ওপ্রান্তে তাঁর লাগানো আমগাছটা বিশাল হয়ে উঠেছে।
কী যেন ভাবছিলাম
কাল বিকেলে? একটা
বয়সের পর সব যাত্রা যেন নিজেরই অতীতে হয়ে যায়। তাও আবার সেই অতীত যেগুলো বাঁচিনি,
বাঁচার ইচ্ছে হয়ে জমে ছিল বেঁচে থাকার পরতে পরতে। কতটা অতীত? আঠেরো শতকের শেষ অব্দি? যখন জ্যান্ত বৌকে বাঁশ দিয়ে খুঁচিয়ে
জ্বলন্ত চিতায় ঢুকিয়ে রাখা হত? কে ওই বৌ? আমার মা, আমার স্ত্রী? আমার বোন?
পিছন অব্দি পুরো মিছিলটা ধরতে প্রথম সারির মেয়েগুলোকে ঈষৎ কোনাকুনি
রেখে দাঁড়ালাম। তারপর ক্যামেরার ভিতর দিয়ে তাকালাম ওদের কালো চোখগুলোর দিকে। একটা ছবি
নেওয়ার পরই দৃষ্টি গেল বাঁপাশে। ঠিক প্রতিমার গেটটার সামনেই দাঁড়িয়ে গাঢ় নীল ট্র্যাকসুট
পরে তিনটি চাবুকের মত মেয়ে। একজনের পিঠের খানিকটা দেখা যাচ্ছে – বিদ্যাসাগর স্পো …। কাছে গিয়ে
দেখলাম … স্পোর্টস একাডেমি। “এ্যাই, তোমরা তিনজনে পিছন ফিরে দাঁড়াও তো! … হ্যাঁ, তুমি সবচেয়ে লম্বা, মাঝখানে দাঁড়াও। একটা ছবি তুলি।”
ইসস, যদি বিদ্যাসাগরমশাইকে পাঠাতে পারতাম!
[শেষ করলাম ২৯.৮.২১]
Friday, August 27, 2021
জলেশ্বর
Thursday, August 26, 2021
নিঝনিনভ্গরোদ
Wednesday, August 25, 2021
অতিমারি পেরিয়ে বৈঠক
Saturday, August 21, 2021
মাইকেল ২০০
Wednesday, August 18, 2021
কৌম
৩০.৫.১৯৯৬
খবর ও কবিতা
১৮.১১.৭৮
চাঁদ
১১.১.৮২
Monday, August 16, 2021
কলকাতার বন্ধুকে চিঠি
১০.৯.১৯৯৯
Sunday, August 15, 2021
রবীন দত্তের কবিতা
মানুষের নামভূমিকায়
একবুক বারুদ নিয়ে
আপন্ন-স্বপ্নের আপনি
নতুন আবাদ দেখো
সে
ভার্সিটির দরজায়
প্রাণ ভেতরে সচিব
“অমৃতং তু বিদ্যা”
“প্রবেশ নিষেধ” – বেশ
এই আর্জিটুকু শুধু
ভেতরেতে পেশ করে দিন
(কারণ তাঁদের কাছে
কৃপাবৃষ্টি – তার জলে আচমন চাই);
যদিও ইদানীং
ছাব্বিশ বসন্তের
প্রাণ, বিবশ আকাশে দ্যাখে, ছাব্বিশ শকুন
তবুও দেখুন –
আমি তো ‘অমৃত’ চেয়ে, জন্ম থেকে,
সময়কে টানতে টানতে
বয়েসের এইখানে এনে
– এখন নিজের কাছে, নিরাকার
শূন্য সৎ একা বসে
আছি;
আমি তো প্রবেশ চেয়ে,
পাড়ি দিয়ে, আসতে আসতে
অবশেষে এইখানে এসে
– তাঁর দরজার পাশে বই হাতে
নতজানু বাধ্য বসে
আছি;
– যেমন বধির
থাকে মুখর সংলাপ দেখে নির্বোধের মতো
*
* * * * *
(সচিবের কন্ঠস্বর,
“বলেছি তো হবে না এখানে”)
কারণ তাঁদের কাছে
কৃপাবৃষ্টি – তার জলে আচমন চাই …!!
স্মৃতিতে সমুদ্র
নেই
১
স্মৃতিতে সমুদ্র
নেই
আছে শুধু তিক্ততার
সারিবদ্ধ দীর্ঘ ক্যারাভান
স্বপ্নে নেই মন্থনের
অমৃত-আস্বাদ
আর এই নিদাঘের প্রচন্ড
রোদ্দুরে
এখানে রয়েছে পড়ে
ধূ ধূ বালি কোনোদিন বৃষ্টি তো নামে না।
২
মাটি নেই জল নেই
তবুও এখানে দেখ দ্যাখো
উত্তপ্ত সীমুমে
মৃত্যুকে তর্জনী
তুলে অদূরের করোটীতে রেখে
ক্যাকটাস মাথা তোলে
পরিবেশে তপ্তশ্বাস ফেলে
৩
কি হবে সমুদ্র নিয়ে
সুক্তি আর ঝিনুকের রঙীন বিলাস
সত্তা, তুমি বাস্তবের
কঠিন মাটিতে চলো দৃঢ় পদক্ষেপে
কারণ আগামী দিনে
এ মরুতে বোনা হবে জীবনের চাষ।
ভ্লাদিমির ইলিচ লেনিন
এখানে তো মধ্যরাতে
সত্তার গভীরে শুধু পদধ্বনি শুনি
ভ্লাদিমির আপনি কি
আমাকে আজ ক্রুশে বিদ্ধ করে যাবেন
কারণ নিজের কাছে
সমর্পিত রক্তের লেগুনে
সূর্যোদয়
হলোনা এখনো
এবং আমি এই মিছিলের
শরণার্থী ভীড়ে
মানুষের স্বীকৃতিকে
দলিত দেখেছি
ইলিচ আপনিও দেখুন
– এখানে বান্ধব মুখে নিয়তই
শব্দ
সৃষ্টি হয়
মাইকের আর্ত্তনাদে
প্রতিদিন বাক্যের বেলুন
লেনিন আপনিই বলুন,
ইদানীং বার্ষিকীর ভীড়ে
উচ্চারিত মন্ত্র
কেন ফ্রেমেতে আবদ্ধ আজ ফ্রিজ ঝুলে আছে
(জীবন চলেছে তার
পল্বলিত খাতে)
অথচ এ সমাবেশে কাজের
আদেশ চেয়ে চেতনার ভিতরে
যে
জ্যোতি
তার স্থির বৃত্তে
এসে তিতিক্ষায় বিবিক্ত থেকেছি
কিন্তু কর্মের কাছে
শুধুমাত্র শব্দসৃষ্টি একেবারে অর্থহীন
বলে
মনে হয়
অনিবার্য আপনাকে
আমি জীবনের প্রেক্ষিতে রেখে
স্ফুলিঙ্গের মুখোমুখি
দাঁড়াতে এসেছি
যেমন মশাল জ্বেলে
বল্লমের স্পর্ধিত হাসি
পৃথিবীর ক্ষুধা মৃত্যু
মোকাবিলা করে …
এখানে তো মধ্যরাতে
সত্তার গভীরে শুনি দ্রিম দ্রিম
মাদলের
ধ্বনি
ভ্লাদিমির আপনি কি
আমার রক্তে আমাকেই দীক্ষিত
করে
যাবেন
কারণ ক্রুশের কাছে
সমর্পিত রক্তের লেগুনে সূর্যোদয়
দেখে
যেতে চাই …
জ্বলন্ত এক্জিট
আসরের সব বাতি ম্লান
হোলো –
শেষ দৃশ্যে – গোধুলি আলোয়;
একঘর দর্শক সামনে
রেখে অতঃপর সামান্য সময়ে –
ভূমিকা, সংলাপ আর
নেপথ্য সংগীত বেয়ে
নায়ক তো নীত হল আর্য
কোনো ট্র্যাজিক পর্য্যায়ে।
ছাব্বিশ বছর ধরি, ট্রাম বাস ট্রাফিকের ভীড়ে
ন্যুব্জ সত্তার এক রক্তমাংস আমি – পথ চলিতেছি
অদৃশ্য ইংগিতে; আমি একা কেহ কোথা নাই
প্রেম নাই, প্রীতি নাই, আসা নাই, ভালোবাসা নাই;
হাহাকার ভরা এক অন্ধ করা কবন্ধ আঁধারে
পথ চলিতেছি – ছাব্বিশ বছর ধরি পৃথিবীর পথে।।
আশেপাশে খস্খস্
বেসামাল শাড়ী
চারিদিকে পুষ্পিত
সুবাস আর
মেলোড্রামা ফেলে
রেখে আমি তাড়াতাড়ি –
সীট ছেড়ে –
অন্ধকার সুমুখে খুঁজি
জ্বলন্ত এক্জিট্।।
এখনো এ চতুরঙ্গ
এখনো এ চতুরঙ্গে
নৃপ, মন্ত্রী, তুরঙ্গের যথেচ্ছ দৌড়!
পদাতিক
তুমি শুধু একঘর যেতে
পারো, তার বেশী নয়,
নিয়ত এ সম্মুখ সমরে
তুমি এক ক্রীড়নক
আরোপের বোঝা বয়ে
যুঝে যাবে মৃত্যু অবধি;
(অথচ) তোমাকে ছাড়া
ওই সব চতুরের গত্যন্তর নেই।
ব্যবস্থা বদল ভিন্ন
শোষণের হাত থেকে মুক্তি হবে কি?
এখনো তোমার হাতে
বিধৃত রয়েছে সেই বিদ্রোহের বীজ
পদাতিক ভেবে দেখো
অন্যথায় চতুরঙ্গে
নৃপ মন্ত্রী তুরঙ্গের যথেচ্ছ দৌড়।
পর্যটন সপ্তাহে নালন্দা
সারাদিন বিচিত্র
শব্দ –
ট্রান্জিস্টার
ট্যুরিস্ট ভীড়
ইতস্ততঃ অর্ধভুক্ত গাইডের দল
মন্তব্যে মুখর-মুখ-মহিলারা
বলে যান –
‘ইস্ কি অদ্ভুত’
স্তিমিত রোদের আলো
– পৌষের পড়ন্ত বেলায়
অতর্কিতে সন্ধ্যা
আসে – নামে অন্ধকার
তখন নৈঃশব্দ শুধু
খুঁজে ফেরে
নালন্দার বারান্দা
অলিন্দে –
হুয়েন সাঙ্ কিম্বা
অন্য নাম।
সারাটা ইতিহাস ধরে
(অকারণে হাত মুচড়ে
ধ’রো না, বলতে দাও)
কারণ সারাটা ইতিহাস
ধরে
আমি –
মাঠ ছুঁয়ে ঘাস,
ঘাস ছুঁয়ে ধান,
ধান ছুঁয়ে চাল আনলুম
কিন্তু কি আশ্চর্য্য
দেখুন …
(অকারণে হাত মুচড়ে ধরো না, বলতে দাও)
কারণ সারাটা ইতিহাস
ধরে
আমি –
গাছ বুনে তুলো,
তুলো ধুনে সূতো,
সূতো বুনে ধুতি আনলুম
কিন্তু কি আশ্চর্য্য
দেখুন …
(অকারণে
হার মুচড়ে ধরো না, বলতে দাও)
কারণ সারাটা ইতিহাস
ধরে
আমি
মাটি ছেনে লোহা,
লোহা ঢেলে চাকা,
চাকা থেকে টাকা আনিলুম
কিন্তু কি আশ্চর্য্য
দেখুন …
অকারণে হাত মুচড়ে
ধরো না
কারণ আপনারাই দেখুন
আমি
এ ব্যবস্থার শেষ
না দেখে মরবো না।
জীবন মারা গেছে
হঠাৎ খবর পেলাম –
জীবন মারা গেছে;
জীবনের সঙ্গে আমাদের
অনেকদিনের চেনাজানা
তাই মনটা খারাপ হল;
আনমনা হয়ে
ছেলেবেলার কথা
ভাবতে ভাবতে
মনে পড়লো –
আমরা পাঁচ বন্ধু
হাতের পাঁচটা আঙুলের
মতো,
জীবন, সুনীতি
সত্য, আমি আর সুকৃতি
বলতে গেলে আমরা সকলে
একই সঙ্গে মানুষ
হয়েছি;
পুরোনো দিনে কলেজ
জীবনে
বইপাড়ায়, পূজোয় পার্ব্বণে
রোয়াকে আড্ডায় আমরা
পাঁচজনে
একই সঙ্গে উঠেছি
বসেছি।
তারপর যা হয় –
দুনিয়ার অমোঘ নিয়মে
হিসেবে নিকেশে
দেনায় পাওনায়
লাভে লোকসানে
আর পাঁচটা ভাবনায়
ক্রমে ক্রমে আমাদের
আনাগোনা কমে কমে
দেখা হত – বছরে
নিদেনপক্ষে একবার।
তাও শেষ দেখা হয়েছিলো
বেশ ক’বছর হয়ে গেল।
তারপর বহুদিন বাদে
হঠাৎ সেদিন খবর পেলুম
–
জীবন বেশ সুখেই আছে,
বাড়ী গাড়ী বিষয় আশয়
এ সব নিয়েই দিন চলে
যায়,
তাছাড়া এখন
বেশ গুছিয়ে বসেছে
এর তার সঙ্গে
দেখা করার
আর তার সময় নেই।
ঠিক তখনই জানলুম
জীবন মারা গেছে।
আমরা চার মাথা এক
হয়ে
জীবনকে কাঁধে নিয়ে
ঘাটের পথে পা বাড়ালুম।
*
* *
– “মাফ করবেন,
তারপর লাসটা কদ্দিন ধরে বইছেন?”
সিগারেটে শেষটানটা
দিয়ে, আমি
ছোকরার চোখে চোখ
বুলিয়ে বল্লুম্
– “জিজ্ঞেস করো
– লাসটা আরো কদ্দিন বইবেন?”
এই শুনে, আড্ডার
পাঁচজনে চেঁচিয়ে উঠলো,
– “আর সুনীতি,
সত্য, সুকৃতি?”
– “ফেরার,” বলেই আমি দরজার দিকে পা বাড়ালুম।
সাইক্লিক্
ওরা এসে মিলেছিলো
পরস্পরের ভাবপ্রবণতার ছায়ায় –
ওদের মন একে অন্যকে
দেখেছিলো নেড়ে চেড়ে
একটা প্রেমপত্রের
মতো উল্টে পাল্টে
যেন অনেক রহস্য আছে
এপিঠে ওপিঠে
আর যেমন সব পার্থিব
জিনিষেরই ছায়া আছে
সব ফলেরই খোসা আছে
আর যেমন ছায়াহীন
জিনিষ
আর খোসাহীন ফলের
কথা ভাবাই যায় না
তেমনি ওরাও ছিল অভিন্ন
হৃদয়।
কিন্তু কখন যেন ওদের
চিন্তাধারা আলাদা হল
দৃষ্টিকোণ পাল্টালো
কখন যেন ওদের অন্তস্থিত
সত্তা
একে অন্যকে
বিদ্ধ করল অন্ধ আবেগে
আর অনেক কাছে থেকেও
ওদের ব্যবধান বেড়ে
গেল যথারীতি
সেটা উনিশশো ছাপ্পান্নো
সন; তারিখ মনে নেই।
*
* * * *
চোখ তুলে তাকালাম।
তুমি যাকে দেখলে
তার পরণে ধূসর স্ল্যাক্স
আর বুক খোলা জামা
হাওয়ায় চুলগুলো উড়ছে
কপালে বয়েস রেখা
ফেলেছে।
তুমি অনেক কাছে এলে
– যেন বললে
‘এ সন্ধ্যেটা তোমার জন্য রেখেছিলাম।’
যেন এর আগে কোনো
সন্ধ্যে আমার জন্যে রাখতে না
থেকে থেকে ভাঙা ভাঙা
কথা হল;
কথায় কথায় ফিরে গেলাম
সেখানে –
যেখানে সবুজ ঘাসে
ঢাকা কানন পথ
আর সমুন্নত চিনার
গাছ
যেখানে চিত্রিত পটের
ওপর শুধু তুমি
দিন নেই রাত নেই
সময় নেই ইতিহাস নেই – শুধু তুমি।
দেখতে দেখতে সময়ের
কাঁটা ঘুরে গেল
আর মনে হল
পৃথিবীর সব পথের
শেষ বুঝি শুরুতেই ফিরে আসে।
সম্বিৎ ফিরে পেলে;
এবার ফেরার পালা –
যাকে ফেলে গেলে ভুল
বোঝাবুঝির বাষ্পে
সে একটা মিয়োনো বিস্কুট
আর মুচমুচে হবে না
তোমার ভালবাসার
চুল্লিতে একটু সাহচর্য্যের
উত্তাপে
সামনের ক্যালেন্ডার হাওয়ায় দুলে
উঠলো
যেন শব্দ করে বললো
–
‘এটা উনিশশো ছেষট্টি সাল, জুলাই মাস, বাইশ তারিখ।’
আজ শুক্রবার – মনে পড়লো মিতা বলেছে –
অপেক্ষা করবে পাড়ার
সিনেমা হলে।
তবুও কি যেন নেই
সুব্রত, এখানে এসে
নিয়েছিলে অতি মৃদু নিমফুল ঘ্রাণ
তরাই-এর মতো এক চড়াই
উৎরাই আর লাল মাটি শান
এখানে। শ্রাবণ মাসে
নিবিড় সবুজ গাছ, পাতা কিম্বা ঘাসে
সকালে বিস্তর রোদে
মড়কের মত খরা নিঃশব্দে আসে;
সাঁওতালডিহিতে এক
শালবনে নিয়ে গিয়ে সুব্রত তোমাকে
দেখিয়েছি আদিবাদী
হাড়। মানুষ তবুও দেখি খুব বেঁচে থাকে
রেশনে বরাদ্দ চালে,
অনাহারে কিম্বা এক নিতান্ত অভ্যাসে
আমরাও – অথচ অনেকটা সই শীতে সুপ্ত মন্ডক প্রবাসে।।
নিমফুল ঝরে গেছে
জাম নোনা কাঁঠালেরও ফুরিয়েছে কাজ
বেঁচে আছি আমরাও?
তবুও কি যেন নেই এ দশকে আজ?
নেক্রোপলিস্
রোদের পীচের গন্ধ
শহরের; ধোঁয়ার কালির রঙে ধূসর আকাশ
ঐহিক যন্ত্রণায় মৌননীল
অথর্ব শহর; ট্রাফিকের আর্ত্তনাদ
বিদীর্ণ বাতাস চারিধার;
পড়ে আছে শতাব্দীর বিসর্পিল পথ
“শেষ কোথা?” – শুধালো সে,
সত্তার উত্তরে, বয়স্ক
পৃথিবী শুধু হাই তুলে পিছনে তাকালো
পালোজোরি চোদ্দ মাইল
সাঁরোয়া বারো
দু’রাস্তা দুদিকে, মাঝামাঝি এক হাঁটু ধুলো নিয়ে
সিমেন্টের নিশানা
– পালোজোরি চোদ্দ মাইল সাঁরোয়া বারো
বাসের পর বাস ঠাসাঠাসু
মানুষ – টিয়া হাতে বুক
উঁচু সাঁওতাল
ধান তোলার সময় এটা
–
এরকম প্রচ্ছদপটে আমি
নিতান্তই বেমানান
কিন্তু যেহেতু গ্রামে
গঞ্জে শাখা প্রশাখা ছড়াতে ছড়াতে
অফিস এখন অজয়ের জলে
মুখ দেখছে এবং
টাঁড়ে টাঁড়ে সাঁওতাল
পরগণার ভেতরে আরো ভেতরে
পাহাড়ীডি গ্রামে
কিম্বা বাসাহায় – হায়
দু’বেলা দুমুঠো জোটেনা গাঁ ঘর হাঁ করে দেখছে আমাকে
(সেহেতু) এ লোকটা
এখানে নিতান্তই বেমানান;
সত্যি ধান ভর্ত্তি
কাড়াগাড়ি চলে যাচ্ছে
সত্য নারায়ণ মুদির
ভেতর ঘর-গোলায়
পুরোনো হিসেব পুরোনোই
থেকে গেছে এবং লাল বই
চলে
গেছে অন্যত্র
লাক ত্রিকোণ থেকে
বেরিয়ে এসে ছেলে পিলে –
দেখছে
শ্বেত ভীতি
লাল কাগজ পত্তর ‘সেইদিন’ আসছে আসবে আসছে
আসবে
লিখে
চলেছে খুব
– পুরোনো হিসেব পুরোনোই থেকে গেছে দু’রাস্তার মাঝামাঝি
রূগ্নোহি* ছ’মাইল মাঁঝিতর* দশ – ধুলো উড়ছে
আঁজোরিয়া রাতে বারাটাঁড়ে
লিক্ ধরে ঘরে ফিরছে
আদিবাসী
মেয়ে –
আজ ‘বান্দনা’ মাড় ভাত হাড়িয়া
আর নাচ কারণ এ লোকটা
নিতান্তই বেমানান
এবং আয়নার ভিতর থেকে
গের্ণিকার ষাঁড় বেরিয়ে
এসে প্রশ্ন করছে –
“এ এলাকায় কাজকম্ম কদ্দুর?”
– ধুর কিছুই হয়নি অর্থাৎ দু’রাস্তা দুদিকে
মাঝামাঝি এক হাঁটু
ধুলো নিয়ে পালোজোরি চোদ্দ মাইল
সাঁরোয়া
বারো
এবং …
--------
* গ্রামের নামে মুদ্রণপ্রমাদ ঘটেছে। কিন্তু যাচাই
করে নেওয়ার উপায় নেই।
“স্প্রিন্ট”
একটা দূর পাল্লার
দৌড়ে দৌড়ুতে দৌড়ুতে
যে ছোটখাটো বাঁক
পড়ে
সেখানে খানিকটা ক্লান্ত
হয়ে বললুম –
পেছনে অনেক ফেলে
দিয়ে
সামনের অনেক না দেখা
নিয়ে
এ দৌড়ে পূর্ণতা কোথায়?
পেছনের এক দৌড়বীর
আমায়
পেছনে ফেলে যাবার
সময় বল্লে –
“এ দৌড়ে তুমি অংশ নিয়েছ
সেখানেই নিঃসংশয়ে
তুমি পূর্ণ।”
আমি পেছন ফিরে দেখলুম।
কি পেলুম কি ফেলে
এলুম।
“আসলে প্রথম পদক্ষেপ থেকে
শেষের ক্লান্ত পদক্ষেপ
পর্য্যন্ত পূর্ণতা প্রবঞ্চনা।”
কথাটা জনান্তিকে
শোনা
তাই বিশ শতকের মাঝামাঝি
আমি
সামনে পেছনে দেখতে
দেখতে
দৌড়ুচ্ছি
দৌড়ুচ্ছি
দৌড়ুচ্ছি …
রাত থেকে সকালে স্রেফ
রাত থেকে সকালে স্রেফ
সময়
ভেঙে চুরমার হয়ে
যাচ্ছে নীল
আলো চলে যাচ্ছে কোল্কাতা
থেকে কুড্ডালোরে
নাম পালটিয়ে কি যেন
হতে যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গে এ্যাপোলো
১৬র পেটে জন ইয়ং
চ্যাঁচাচ্ছে খসে গেলো খসে গেলো চৌরাস্তায়
পাইপগান হাতে প্রমেথিউস্
সকাল থেকে সময়
দুমড়ে মুচড়ে দপ্
দপ্ করছে রাগে হে অন্ধ হ্রেষাধ্বনি
বুট ও বন্দুকের টেরাকোটা
হে ক্রমিক কাঁটাতার
টাট্ … টাট্ … টাট্ টাট্ … টাট্ টাট্ … বা …রু …ম্ম্ম্ম্
বি-৫২ বোমারু বিমান
হাতিন কোয়াং বিন্ বিন্ লিন্
থেকে শব্দ ভেঙে প্রতিশব্দে
নিয়ে যাচ্ছে সকাল
হে কাঞ্চনজঙ্ঘা নারী
রূপোলী ঠাসাঠাসি হে কনডম্
স্কুটার খাবার পিল্
হে বুভুক্ষা পিনিসিলিন দুমড়ে মুচড়ে
নীল অশ্বের যাতায়াত
হে ক্যালানে কার্তিক সময়
হে অন্ধ অ্যাপোলো
সময় কবে হবে কবে হবে কবে হবে কবে
স্রেফ চুরমার হয়ে
যাচ্ছে …
গাড়ীটা
গাড়ীটার নাম রাখলুম
– ‘ভালোবাসা’।
অনেক দৌড়ঝাঁপ করে
ছ’বছর পর
কপাল ভালো তাই পেলুম।
মনে হ’ল এতদিনে ভালোবাসাকে পেয়ে
রঙীন স্বপ্ন সার্থক।
এত ভালোবাসলুম
যে কাজে অকাজে ওকে
নিয়ে
ঘুরে বেড়ালুম এখানে
ওখানে।
তারপর
যায়
দিন
যায় …
ভালোবাসার মোহ কমতে
লাগলো
আর খরচ বাড়তে লাগলো;
এর তার পরামর্শে
ভালোবাসাকে
রাস্তায় নামালুম
– ভাড়া খাটাতে।
তারপর এ রাস্তা ও
রাস্তা
এ গলি ও গলি – ভাবটা
“ফেললে কড়ি তুমি কি আমার পর।”
তারপর
যায়
দিন
যায় …
ভালোবাসার সঙ্গে
আজকাল আর দেখাই হয় না
বহুদিন বাদে হঠাৎ
একদিন গাড়ীবারান্দায়
ভালোবাসার সংগে দেখা।
ওর আর
সে জৌলুষ নেই – এখানে ধুলো ওখানে ময়লা
রঙ চটে গেছে –
পুরোনো দিনের কথা
মনে পড়তে
আমি আর দাঁড়ালুম
না।
তারপর
যায়
দিন
যায় …
ভালোবাসার কথা ভুলেই
গিয়েছিলাম নানা কাজের ভীড়ে
এমন সময় একদিন বিকেলে
মালী এসে খবর দিলে
ভালোবাসা বেসামাল
হয়ে আমার
বাড়ীর ফটকে মাথা
কুটছে।
*
* *
দিন তিন পরে ওজন
করে
লোহার দরে
ভালোবাসাকে বেচে
দিলুম।