লেভেল ক্রসিংএ পৌঁছোতেই আজ রাস্তার পাশের মাটিতে
নজর কাড়ল তোলা উনুন – ভুট্টা পুড়ছে!
কবে বা ঘরে ফিরি এমন বর্ষণক্ষান্ত সন্ধ্যায়!
কচি দেখে দুটো ভুট্টা সেঁকালাম –
খোসায় নুন লঙ্কা সুদ্ধু লপ্টে দিল বৌটি।
সামনে অটোও মনের মত –
এক সওয়ারি খামতি – পেয়ে গেলাম।
তুমি আছ তো বাড়িতে?
কোনো সহকর্মী শুনলে বলত,
“এই জন্য মোবাইল নিতে
বলি পাল”!
তুমি আছ তো বাড়িতে?
হয়ত পৌঁছোতেই নিচে দারোয়ান
ফ্ল্যাটের চাবিটা দেবে ধরিয়ে।
সিঁড়ি বেয়ে উঠে
ভিতরে ঢুকে সবচেয়ে আগে
আলোগুলো নেভাব ফটাফট –
এ এক অদ্ভুত দেওয়ালি তোমার –
সন্ধ্যে দেওয়া মানে প্রদীপের সাথে
সবকটি আলো জ্বালিয়ে দেওয়া ঘরের বাইরের।
ভুট্টা দুটো ঠান্ডা হতে থাকবে।
চা করে
চুমুক দিতে দিতে একা
দেখব আকাশ কালো হচ্ছে নিকষ
ব্যাঙ ডাকছে পাড়ার আনাচে কানাচে।
একটু পরে আসবে ফোন,
“একা একা ভালো লাগছিল
না আর,
তাই রিনিদের বাড়িতে –
হ্যাঁ, মেয়েকে নিয়ে – এসেছি –
চা খেয়েছ?
সরি।
ইস্, ভুট্টা এনেছিলে? …"
ভাবব, যাক,
টিভির দৌরাত্ম নেই,
একটু চেষ্টা করি কবিতার কাছে পৌঁছোবার,
ডাইরিটা
খুলে হিসেব করি কদ্দিন পর খুলছি।
সেদিন কথা হচ্ছিল দীপনের সাথেঃ সত্ত্বার
সংশ্লেষে পৌঁছোতে – এক,
নতুন সময়ের স্পন্দ ও বুনটটাকে ধরা,
এবং দুই
ঘরের টানাপোড়েনে ও প্রাত্যহিক বিশৃংখলায়
তাকে ছেড়ে দেওয়া …
ধরা আর ছেড়ে দেওয়া?
একি পাখি না বাঘ?
আর ঘরটাই বা কী?
খাঁচা না জঙ্গল? না আকাশ?
তুমি আছ তো বাড়িতে?
খোসার ভিতর দিয়ে আঁচ লাগছে হাতে ঈষৎ
দুধেলা গন্ধও উঠছে ফুরফুরে।
ছেলে আছে কি বাড়িতে?
এ প্রশ্ন অর্থহীন। ওরই সময়।
হয় কোনো বন্ধুর সাথে রাস্তায়,
নইলে সাইবার কাফে কিম্বা জিম।
বাড়িতে থাকলেও
কল্পবাস্তবের অভিঘাতে একা,
সঙ্গী কিওনু রিভস্।
তবু ভাবি যে যাক আমারই মত
বৃষ্টিতে ভিজতে ওর ভালো লাগে
ভালো লাগে পছন্দমত গান
আমার সাথে গলা মিলিয়ে গাইতে
এই বিহারের মাটিতেও ভালো লাগে পড়তে ‘চাঁদের পাহাড়’ …
আঠেরোর কোঠায়
ও কী হবে, কী হবে না
তা নিয়ে ঈষৎ টেনশনে এলেও
জানি
যে এক জায়গায় আমি তুমি যেমন
সে আরো অব্যক্তভাবে কাতর …
ঘরের ভিতরে এক অন্য ঘর
আমরা একা একা খুঁজি
আর ফিরে যাই অস্পষ্ট
অলৌকিক এক ভাতের আলোয়
যা বড় হাঁড়িতেও দুবারে প্রয়োজন মেটায়,
যার ক্ষুধাকুম্ভে জলের
রোদবুনটে আঁকা হয়
শিশুপ্রাণ ছন্দকৌমুদি,
স্টিমারের ভোঁ, রাতের জাংশন, উৎপাটিত শিকড়ের
দুধ,
শ্রান্ত শক্তিমতি মায়েদের মধ্যরাতে হাসির মজলিস,
কোনো পিতার নিরুদ্দেশবাস,
কোনো দিদির সাঁতারশব্দ চাঁদের ছায়ায় …
ওই আলোতেই কি দেশ?
ওই আলোতেই কি ভাষা?
ওই আলোতেই কি বিশ্বের যত ধ্বংস? যুদ্ধ? নরসংহার?
ওই আলোতেই কি সৈনিকের ফিরে না আসা?
তার চিঠি?
তার দ্বৈরথ?
দগ্ধ উঠোনের ধোঁওয়ায়
অপরিচিত যমজের সাথে তার দেখা?
সন্ধ্যা গাঢ়তর।
অটো হুহু করে ছুটছে ডোবার ধার দিয়ে।
তুমি আছ তো বাড়িতে?
খোসার ভিতর দিয়ে এখনো
আঁচ লাগছে গরম ভুট্টার।
৮.৭.২০০৪
No comments:
Post a Comment