Monday, August 2, 2021

জালা

।। চরিত্র ।।
১. লক্ষ্মীচরণ গড়াই জালার মালিক। মামলাবাজী, ফেরেববাজী ও অত্যাচারে ওস্তাদ।
২. লক্ষ্মীচরণের পারিষদবর্গ সদর্থে, লক্ষ্মীচরণের পা-চাটা কতকগুলি গৃহপালিত শুয়োর।
৩. রূপকার মাথায় উদ্ভাবনী শক্তি, পেটে খিদে, শাসকশ্রেণীর পাতা ফাঁদে আটকে পড়ে হাত-পা ছোঁড়ে, কিন্তু সৎ আত্মসমালোচনার মাধ্যমে বাঁচার পথ খোঁজে।
৪. খচ্চর শাসকশ্রেণীর সভ্যতা ও সংস্কৃতির প্রতীক, যাকে বাহন করে লক্ষ্মীচরণেরা বেঁচে আছে।
৫. জালা নোনাধরা, পচা-গলা একটি মাটির জালা, মানুষকে আফিং খাইয়ে ঘুম-পাড়িয়ে রাখা শাসকশ্রেণীর প্রতিষ্ঠানগুলির প্রতীক।
৬. ছেলেরা

[পর্দা উঠলে দেখা যাবে মঞ্চের বাঁ পাশে একটা বিরাট মাটির জালা। হঠাৎ জালার মধ্যে ঢিল পড়ে একটা অদ্ভুত শব্দ হয়, সঙ্গে প্রবেশ করে লক্ষ্মীচরণ গড়াই।
হাতের ছড়ি দিয়ে সে আঘাত করে জালার গায়ে। সঙ্গে সঙ্গে প্রবেশ করে পারিষদবর্গ, নাচতে নাচতে, স্কুলের ছেলেদের মত সাদা হাফশার্ট ও নীল হাফপ্যান্ট পরে, সঙ্গে একটা খচ্চরবেশী মানুষ। লক্ষ্মীচরণ সেই খচ্চরের গায়ে হাত দিয়ে আরেক হাতে জালার গায়ে ছড়ি ঠেকিয়ে দাঁড়ায়। পেছনে গ্রামের যে কোনো সুর বাজতে পারে কেননা, লক্ষ্মীচরণ গ্রামেরই লোক, বা বলা যায় ভারতের সব গ্রামেই তার অধিষ্ঠান।]

 

লক্ষ্মী          লক্ষ্মীচরণ গড়াই আমি অতি সদাশয়
নামের মাঝেই লুকিয়ে আছে আমার পরিচয়।
আমার সাথে আছে আমার অতি প্রিয় বাহন,
(তার) গুণের কথা বলব কি আর করে সাত কাহন!
পারিষদের রক্তে আছে যে চিঁহি ধ্বনি
তার শব্দ কানে আমি ওরই মধ্যে শুনি
সত্যি বলছি, ওরই মধ্যে শুনি!
করেছি তার সাথে আমি পাঞ্চ ডাক গাধার
আপনাদের ঘুম পাড়াতে ককটেল মজাদার,
মাইরি বলছি, এটাই আমার রাজত্বের আধার!
আর আমার ওই জালা
পনেরো পুরুষ আগে থেকে করছে সবাকে কালা
শোনে না মোটেই রক্তের ডাক, উদ্দাম কল্লোল
থ্যাঙ্ক ইউ মাই জালা, ফর ইওর নাইস সাউন্ড কন্ট্রোল!

                                                (পারিষদদের দিকে আঙুল দেখিয়ে)

এর গুণগান করবে, ওরা মিথ্যে কথা বলবে না
অশ্বত্থামা হত শুনবেন, ইতি গজ শুনতে পাবেন না।
পারিষদ       এই জালার কথা বলতে চোখে আনন্দাশ্রু আসে
                   চার অঙ্কের টাকা মোদের দ্যায় এ জালা মাসে
                   মোরা যারা মামার দয়ায় পেছন ঘষি .........
                   তাদের দেওয়া জাজিম, পরে জালা দেবতার .........
জালা মোদের আজকের নয় মহেঞ্জোদাড়োর প্রতীক
মহেঞ্জোদাড়োয় নোনা ধরেছে, জালা কিন্তু আছে ঠিক!

লক্ষ্মী           হ্যাঁ, যা বলছিলাম, এটা হোলো গিয়ে জালা, কেউ কেউ কন মটকা, Some call it jar। না না, Tzar নয়, রাশিয়ার  Tzar শেষ হয়ে গেছে, এটা তাঁদেরই সংশোধিত রূপ অবশ্য। আমার পনেরো পুরুষ ধরে এই জালা আমাদের বাঁচিয়েছে। এতে ফল রাখা হয়। এই গ্রামে যত ফল হয়, তার অধিকাংশই এতে সঞ্চিত থাকে, কারণ সব ফলেই আছে আমার অধিকার। [দর্শকদের একজন বলে ওঠে ভাগ্যফলও আছে নাকি মশাই ওতে?] আছে। সব ফল আছে। ভাগ্যফল, দুর্ভাগ্যফল, কর্মফল, কুকর্মফল, ধর্মফল, অধর্মফল, পচাফল, ভালোফল সব মেশানো আছে এতে। যখন ফলের আকাল পড়ে, তখন সব বাজারে ছাড়ি। ন্যায্য দাম থেকে একটু বেশি দাম দিয়েই। ভাগ্যের সাথে দুর্ভাগ্য মিশিয়ে, কর্মের সাথে কুকর্ম মিশিয়ে, পচার সাথে ভালো মিশিয়ে ঠিক ভগবানের জীবন ধারার মত আর কি বাজারে ছাড়ি। লোকগুলো খুশি হয়ে বাড়ি চলে যায়। মানুষ আনন্দে থাকে, এর চেয়ে বড় লাভ আর কী আছে বলুন? আমি অতিশয় সদাশয় ব্যক্তি। তবে হ্যাঁ, এটাই আমার একমাত্র অবলম্বন। এটা যদি কেউ ভাঙে, তবে তাকে আর আমি আস্ত রাখব না, কারণ নইলে যে আমি নিজেই আস্ত থাকব না। যে এটা ভাঙার চেষ্টা করবে তাকে আমি জেলের ঘানি টানাব। কোন আইনে? মিসা, পিভিএ কত আইন আছে! মামলাবাজিতে এ শর্মা ওস্তাদ আরে আমার বিপক্ষে রায় দেবে কোন কাজি? সকলেই তো আমার আত্মীয়। সব objection overruled হয়ে যাবে বুঝলেন? একদিন সকালে উঠে দেখলাম, আমার বাড়ির দেয়ালের একটা ইঁট পড়ে গেছে। ব্যাস, আর যায় কোথায়? গেলাম এই খচ্চরের পিঠে চেপে উকিলের কাছে বুঝলেন, খচ্চরের পিঠে চড়লে গ্রামের বাচ্চা ছেলেগুলো বড় জ্বালাতন করে ব্যটা সবগুলো হারামজাদার দল ওই দেখুন না (দেয়ালের দিকে আঙুল দেখায় সেখানে কাগজ সেঁটে লেখা আছে লক্ষ্মীচরণ যায় শহরে / বুড়ো খচ্চরের পিঠে চড়ে / ব্যাটা শোষক অত্যাচারী / ভালোমানুষদের ছেঁড়ে চুলদাড়ি।”) যাক, ওতে কিছু যায় আসে না, আমার গায়ের চামড়া বেশ মোটা আছে হেঁ হেঁ হেঁ! তা, গেলাম উকিলের কাছে, বললাম ইটটার বিরুদ্ধে মামলা করব কেন শালা পড়ল! উকিল তো বুঝতে পারল, আমি নাছোড়ের বান্দা আমাকে একটা আইনের বই দিয়ে দিল, বলল আপনাকে আর কষ্ট করে আস্তে হবে না, এটা দিলাম, বাড়িতে সকালে প্রার্থনা-পুস্তকের মত এটা নিয়ে জপ করবেন ব্যস, কয়েকদিনে আইনজ্ঞ হয়ে যাবেন। (কথার মাঝে অন্যদিকের দেয়ালে আলো পড়ে, সেখানে লেখা সকালে উঠিয়া লক্ষ্মী প্রার্থনা করে / কার সঙ্গে মামলাটি করিতে সে পারে!) তাই বলছিলাম, যে এটাকে ভাঙার চেষ্টা করবে এ্যাই কে আছিস, এটাকে পাহারা দে আমি চললাম ঘুমোতে

[বলে খচ্চরটাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। পারিষদবর্গ জালার চারদিক ঘিরে ঘিরে নাচতে থাকে আর গায়)

পারিষদ        প্রণাম তোমায় প্রভু, হে প্রাচীন জালা,

                   তোমাকে আঘাত দিয়ে ভাঙে কোন শালা!

                   তোমার গলকম্বলে বুলিয়ে হাত

                   আমরা করি যে বাজিমাৎ।

তোমার ভেতরে মুখ লুকিয়ে যে খুঁজি

ভাগ্যফল পুণ্যফল ধর্মফল

মোদের একমাত্র পূঁজি!

(এই শেষ কথাগুলোর মধ্যে ভাগ্যফল, পূণ্যফল, ধর্মফল কথাগুলোর বারবার পুনরাবৃত্তি হতে থাকে আত ধীরে ধীরে স্টেজ অন্ধকার হতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে দুম করে একটা বিস্ফোরণের আওয়াজের সাথে পেছনের পাঁচিলের ওপর ভোরের সূর্যের লাল আলো ঝলসে ওঠে। সেই আলোয় দেখা যায়, জালাটা মাঝখান থেকে দুআধখান হয়ে ভেঙে পড়ে আছে। এবং সেই লোকগুলো, যারা নাচছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন একটা সিঁড়িকে খাড়া করে ধরে আছে এবং একজন সেই সিঁড়িটার টঙে চড়ে বিস্ফারিত চোখে ভাঙা জালাটার দিকে তাকিয়ে আছে। সে নেমে এসে দর্শকদের দিকে তাকিয়ে বলে জালা ভেঙে গেছে! তারপর ভ্যাঁ করে কাঁদতে থাকে বাচ্চাছেলের মত। বাকি সকলে সিঁড়ি ছেড়ে দিয়ে তাকে কোলে নিয়ে বসে …” করে চুপ করায়।)

                                                                                      (দৌড়ে ঢোকে লক্ষ্মীচরণ)

লক্ষী             এ্যাই, সব লাইন দিয়ে

                   সোজা হয়ে ব্যাঁকা হয়ে

                   এইখানে দাঁড়া।

                   মারের চোটেতে আমি

                   সকলকে করব যে দেশছাড়া।

                   কাল রাত্রে এইখানে পাহারায় ছিল কে বল্‌ দেখি নি?

পারিষদেরা   (একসঙ্গে) আমি ভাঙিনি, আমি ভাঙিনি!

লক্ষ্মী          (ভেংচে) ঠাকুরঘরে কে?

পারিষদেরা (একসঙ্গে) কলা খাইনি, আমরা কলা খাইনি!

লক্ষ্মী          তাহলে তোরা বল, হারামজাদার দল!

                   কে ভেঙেছে জালা, কে করেছে আমার রক্ত জল?

১ম            এটা মনে হয় ভেঙেছে ওই চাষাভুষোর দল,

                   ওদের হাতেই আছে এই জালা ভাঙার কল।

বাকি সকলে হ্যাঁ, আমাদেরও তাই মনে হয়

পারিষদেরা (একসাথে) এ্যাই চুপ, হুজুরকে ভাবতে দে

লক্ষ্মী           নিকুচি করেছে ভাবনার, এদিকে আমার সর্বনাশ! আগেকার দিন যদি হত, থানায় খবর পাঠিয়ে সব কটা গ্রামের শয়তানকে জেলের ঘানি ঘোরাবার ব্যবস্থা করে দিতাম। কিন্তু শহর থেকে সব বাপ-মা-খ্যাদানো চ্যাংড়ার দল চাষীদের মধ্যে থেকে, তাদের সঙ্গে ওঠা-বসা করে এমন লাই করে ফেলেছে যে, সব কটা লোকই যেন কেমন তেড়িয়া হয়ে উঠেছে। না ভেবে চিনতে দুম্‌ করে কিছু করাটাও মুশকিল!

                                                                             (দর্শকদের দিকে তাকিয়ে)

                   আর ওদেরও বলিহারি মশাই, ওই শহুরে ছোঁড়াগুলোর কথা বলছি! ব্যাটারা দিব্যি ছিলি শহরে! খাচ্ছিলি, দাচ্ছিলি, মৌজ করছিলি না হয় বললে এই জালার রস একটু সস্তায় দিয়ে দিতাম, বুকে তো আমার মায়া দয়া আছে তা প্রাণে সইল না, কি মাথায় ঢুকে আছে, উনিশশো সতেরোয় না কবে রাশিয়ায় মহামান্নো জারের জালা ভেঙেছিল, আবার চীনে নাকি কবে আফিংএর হাঁড়ি ফেটেছিল ব্যাস, এখানেও তাই করতে হবে! আরে বাবা, বলি সেটা ছিল একটা সময়, এখন কি আর তা হয় নাকি! তখন বলে, ভিয়েৎনামে না কোথায় জালা ভাঙছে! তা ভাঙছে তো ভাঙছে, এখানে ভাঙা এত সহজ নয় এ বাবা সেই মহেঞ্জোদড়ো আমলের জালা! কত বোঝালাম। কে শোনে, দিল ভেঙে জালাটা! ঠিক আছে, আমিও লক্ষ্মীচরণ গড়াই ও জালা আবার জুড়ব জা লাগবে তার দ্বিগুণ উশুল হয়ে যাবে এই জালা দিয়ে। মুশকিল হচ্ছে, ছোঁড়াগুলোকে শাস্তি দিয়েও কাজ হয় না। কটাকে জেলে পুরবো? শালা যেন রক্তবীজের ঝাড়, ঝাড় কে ঝাড় শেষ করলেও আবার বেড়ে ওঠে। যাক। সে কথা যাক কিন্তু কে যে এটাকে সারাই করবে

                                                                                      (সরে গিয়ে নিজের মনে)

                   এখন আমি কী যে করি ভেবেও পাই না ছাই,

ইচ্ছে করে সব কটাকে চিবিয়ে চিবিয়ে খাই।

কিন্তু দাঁত যে আমার নড়ছে

এক এক করে পড়ছে

নকল দাঁত লাগিয়ে নিয়ে আমি যে দাঁত খিঁচাই,

                                                          (কাঁদো কাঁদো মুখ করে)

আমায় ওরা ভয় পায় না ভাই।

ওই সব সৃষ্টিছাড়া ছোঁড়া

যারা করল আমায় খোঁড়া,

ওদের আমি দিচ্ছি শাপ,

ওরা সব চুলোয় যাক!

১ম            হুজুর, বরং একটা কাজ করা যাক।

লক্ষ্মী          কী?

পারিষদ      ওপাড়ায় একজন লোক থাকে, সে এসব মাটির কাজ খুব ভালো জানে তার নাম মাটির রূপকার। সে বলে

(নেপথ্য থেকে একটা গম্ভীর আওয়াজ ভেসে আসে আমি সাধের মাটিতে প্রাণ দিয়ে তাতে সবুজ রোদ ঢালি, নতুন যৌবনে ভরপুর লাল রঙের ইঁট দিয়ে আমি বিশাল দুর্গ তৈরি করতে জানি। ইঁটের সঙ্গে ইঁট জোড়া লাগানবার এই নতুন রসায়ণ, এ সম্পূর্ণরূপে আমার আবিষ্কার এ দিয়ে আমি কোনো একদিন কোনো নির্জন কুমারী সমুদ্রে আলোকস্তম্ভ গড়ব ! কথা শুনতে শুনতে ওরা যেন ঝড়ের ধাক্কায় সকলে একদিকে বেঁকে গিয়েছিল, কথা শেষ হতে আবার সোজা হয়ে গেল)

বুঝলেন হুজুর, ওর ওই অদ্ভুত মশলা দিয়ে সব জোড়া লেগে যাবে। যদি কোনো রকমে ওকে কাজে লাগান যায় কিন্তু মুশকিল হচ্ছে

২য়            সে এসব ভাঙা জিনিষ জুড়তে চায় না

৩য়            বলে, নতুন জিনিষ গড়বে

লক্ষ্মী          নিকুচি করেছে নতুন জিনিষের

                   যা তাকে ধরে নিয়ে আয় তোরা তাড়াতাড়ি,

                   ভুলিয়ে ভালিয়ে, যেন না করে বাড়াবাড়ি।

(সকলে একসঙ্গে যাচ্ছি বলে চারদিকে ছুট দেয়। মঞ্চ অন্ধকার হয়ে আসে। লক্ষ্মীচরণ ভিতরে চলে যায়। আধো অন্ধকারে দেখা যায় কয়েকজন যুবক, বগলে সাদা কাগজ, হাতে আলকাতরার বাল্টি নিয়ে কী যেন করছে। কিছুক্ষণ পরে নেপথ্য থেকে আওয়াজ আসে নিয়ে এসেছি হুজুর! সঙ্গে সঙ্গে এই ছেলেগুলো উধাও হয়ে যায়। ঢোকে পারিষদবর্গ এবং একজন উদ্‌ভ্রান্ত চেহারার যুবক)

১ম            এনেছি হুজুর, এনেছি

২য়            অন্য জায়গার সেই লোকটাকে

৩য়            যে নতুন জিনিষ তৈরি করে

লক্ষ্মী          (দৌড়ে এসে) এবং যে ওই ভাঙা জালাটাও জুড়বে একি, এগুলো কী? কে করেছে?

(দেয়ালে দেখা যায় আলকাতরা দিয়ে লেখা লক্ষ্মীচরণ সাবধান, তোমার দিন ঘনিয়ে আসছে। এইগ্রামের যতগুলো লোকের জমির ফল তুমি কেড়ে নিয়েছ, তারা প্রত্যেকে তোমার ওপর প্রতিশোধ নেবে। তোমার ফল রাখার ওই বিরাট জালা একবার ভেঙেছে, আবার ভাঙবে!)

                   ওরে সর্বনাশ! কী ভয়ানক কথা রে বাবা!

এ যে, কথার টানেতে আমার কাপড় খুলে যায়,

প্রাণটা দেহের খাঁচা ছেড়ে পালাতে চায় হায়

কে লিখল কথাগুলো তাড়াতাড়ি বল

তারপর বাবা নিয়ে আয় এক ঘটি জল

১ম            নিশ্চয়ই লিখেছে ওই পাজি ছোঁড়ার দল

২য়            হ্যাঁ তাই হবে, তবে সঙ্গে গাঁয়ের লোকও নিশ্চয়ই

বাকি সবাই  হ্যাঁ, নিশ্চয়ই তাই চল, হুজুরের জন্য জল নিয়ে আসি সকলে মিলে

(বেরিয়ে যায়)

রূপকার      জালাটা ভেঙেছে কে?

লক্ষ্মী          আবার কে, ওই ছোঁড়াগুলো ওটাই তো তোমায় জুড়তে হবে!

রূপকার      আমায় ওই জালা জুড়তে হবে? পাগল নাকি? প্রথমতঃ আমি ভাঙা পুরোনো জিনিষে জোড়াতালি লাগাই না এবং দ্বিতীয়তঃ, আপনার সম্বন্ধে যে কথাগুলো দেয়ালে লেখা রয়েছে সেগুলো সত্যি হলে, এবং আমার মনে হয় ওগুলো সত্যি, তাহলে বলব, আপনার জালা ভাঙার সময় এসে গেছে। ও নির্ঘাৎ ভাঙবেই যতবারই জুড়ুন না কেন

লক্ষ্মী          জুড়বে না তো এসেছিলে কেন মুখ দ্যাখাতে?

রূপকার      আমাকে আনা হয়েছিল অন্য কথা বলে, এখন দেখছি এসে ভালোই করেছি, একটা নতুন আলো দেখতে পাচ্ছি, আমার আলোকস্তম্ভ তাহলে আমি গড়তে পারব।

লক্ষ্মী          (দর্শকদের দিকে তাকিয়ে) একে তাহলে অন্য কথা বলে আনা যায় (রূপকারকে) তাহলে থাক, জুড়তে যখন চাইছ না, তখন মিছিমিছি আর জোর করতে চাই না। তোমার থলেতে কী আছে?

রূপকার      ওতে আমার নিজের আবিষ্কার এক নতুন রসায়ন, কিন্তু আপনি দেখে কী করবেন? ও জালা আমি এ দিয়ে জুড়ব না।

লক্ষ্মী          আহা, নাই বা জুড়লে দেখাতে দোষ কী? তোমার জিনিষ তোমারই থাকবে!

রূপকার      হ্যাঁ, তা অবশ্য ঠিক দেখাতে দোষ কী?

(ব্যাগ থেকে একটা পুঁটলি সযত্নে বার করে, তারপর সেটাকে খুলে মাটির ওপর বিছিয়ে রাখে)

লক্ষ্মী          বাঃ, কী সুন্দর! যেন শুকনো রক্ত

রূপকার      বলছেন? (চোখ মুখ উদ্ভাসিত) সত্যি বলছেন? শুনে কিন্তু সত্যি ভালো লাগল। জানেন, এর আগে যারাই এটা দেখেছে, কেউ এর ক্ষমতায় বিশ্বাস করে নি। অবশ্য আপনি বিশ্বাস করলেই বা কি হবে, আপনার ওই জালা তো আমি জুড়ব না

লক্ষ্মী          হ্যাঁ, হ্যাঁ, তা তো বটেই তা এর আগে এটা কখনও প্রয়োগ করেছ?

রূপকার      না

লক্ষ্মী          তবে? কী করে জানলে যে

রূপকার      আমার নিজের ওপর বিশ্বাস আছে।

লক্ষ্মী          তা বুঝতে পারছি কিন্তু ধরে নাও যদি এই যেমন তুমি যে আলোকস্তম্ভ না কী যেন গড়বে বলছিলে, তা গড়বার সময় ওটা যদি ভেঙে পড়ে তখন

রূপকার      আমি জানি ওটা ভাঙবে না

লক্ষ্মী          ধরে নাও, যদি ভাঙে?

রূপকার      বলছি না, আমার নিজের ওপর বিশ্বাস আছে

লক্ষ্মী          আহা, চটছ কেন, আমি একটা সম্ভাব্যতা

রূপকার      তা আমাকে কী করতে বলছেন?

লক্ষ্মী          মানে বলছিলাম যে, আর কিছু না হোক, তোমার নিজের ওই রসায়নটার গুণাগুণ পরখ  হয়ে যেত, জালাটা জুড়লে পর

রূপকার      না, ও জালা আমি জুড়ব না।

লক্ষ্মী          আহা জুড়ে দেখেই নাও না (রূপকার উত্তর দেওয়ার আগেই পারিষদবর্গ এক ঘটি জল ধরাধরি করে নিয়ে আসে লক্ষ্মীর কাছে) আমার লাগবে না, দে, ওকে দিই (ঘটিটা হাতে নিয়ে) এই নাও!

রূপকার      সত্যি আমার তেষ্টা পেয়েছিল, দিন।

(হাত বাড়িয়ে ঘটিটা নেওয়ার মুহুর্তে সবাই স্থির হয়ে যায় কয়েক মুহুর্তের জন্য তারপর রূপকার ঘটির জলটা খেয়ে, তৃপ্তিসূচক আঃ শব্দ করে)   

লক্ষ্মী          (মুখটা কাছে নিয়ে) জালাটা জুড়বে?

রূপকার      তা এত করে বলছেন যখন

লক্ষ্মী          (দর্শকদের) বলেছিলাম না, অন্য কথা বলে আনা যায়। (পারিষদদের) এ্যাই, তোরা নাচ (রূপকারকে) নাও, তাহলে তোমার কাজ শুরু করে দাও শুভস্য শীঘ্রম! ঘাবড়িও না, তোমাকে প্রচুর পুরস্কার দেওয়া হবে।

(রূপকারের শীর্ণ মুখ ঝলসে ওঠে আনন্দে)

পারিষদবর্গ জালা ফাটতে বুকটা যে ভাই করছিল ধড়ফড়

                   কখন যে ফাটি আমরাও, সে চিন্তা ছিল বড়।

                   আর ভয় নেই, ভাঙা জালা আবার জোড়া লাগবে,

                   জালার রস খেয়ে ধড়ে প্রাণটা যে ফের আসবে।

                   জালা আমার জালা ওগো জালা জীবনভরা,

জালার মাখেই লুকিয়ে আছে তাঁর করুণাধারা।

লক্ষ্মী          (পারিষদদের মধ্যে কজনকে একান্তে ডেকে) তোরা ওই লোকটার ওপর দেখাশোনা করবি যাতে ও কাজ ঠিক মত করে। (বাকি কজনের মধ্যে দুজনকে ডেকে) তোরা ওই কজনকে দেখবি যাতে ওরা এখান থেকে চলে না যায়। (শেষ দুজনের একজনকে ডেকে) তুই দেখবি, ওই দুজন যেন পালিয়ে না যায়। (শেষজনকে ডেকে) তুই আয় আমার সঙ্গে। মাঝে মধ্যে এখানে এসে এরা কী করছে না করছে দেখে গিয়ে আমাকে বলবি।

(তাকে নিয়ে বেরিয়ে যায়। প্রথমে চারজন, তার পেছনে দুজন ও তার পেছনে একজন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রূপকারের কাজ দেখে ও কাজের গতির সাথে শরীর নাড়াচাড়া করতে থাকে এবং ধীরে ধীরে প্রার্থনার মত গাইতে থাকে)

                   সকল জালার সেরা সে যে মোর হুজুরের জালা,

                   এই জালার দয়ায় প্রাণ ফিরে পায় বোবা কানা কালা,

অন্ধ লোকের মিছিল চলে এই জালাকে ঘিরে

ম্যায় ভুখা হুঁ’-কে ঘুম পাড়াতে জালা আসে ফিরে

এই জালা রাখে মোদের সকল

ভাগ্যফল, পুণ্যফল, কর্মফল

(শেষ তিনটি কথার প্রলম্বিত পুনরাবৃত্তির মধ্যে রূপকার কাজ করে যায়, তার কাজের গতি বাড়তে থাকে, কাজের মাঝে সে নিজের স্বতন্ত্র অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলে, তারপর বেশ কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ)

রূপকার      এই শোনো তোমরা। এতে মশলা লাগান হয়ে গেছে। আমি নিচের টুকরোটার ভিতরে দাঁড়াচ্ছি গিয়ে। তোমরা আমার মাথার ওপর উপরের টুকরোটা গলিয়ে দাও। আমি ভিতর দিয়ে একটু মশলা লাগিয়ে দেব যাতে জিনিষটা আরো পাকাপোক্ত হবে।

(কথা মত কাজ হয়। সে ভিতরে বসে কাজ করতে থাকে। ওরা আবার সেই কথাগুলো সুর করে গাইতে থাকে। ধীরে ধীরে মঞ্চ অন্ধকার হয়ে আসে। সম্পূর্ণ অন্ধকার হওয়ার পূর্বমুহূর্তে জালার ভেতর থেকে আওয়াজ আসে ব্যাস, হয়ে গেছে, এই আরেকটু ব্যাস।জালার মুখের ভিতর থেকে মাথাটা বেরিয়ে আসে)

রূপকার      এবার কেউ আমাকে টেনে তোলো তো। যা বড় জালা, ভিতর থেকে নিজে উঠতে পারব না।

(পারিষদেরা সিঁড়িটা নিয়ে আসে। সাতজনে মিলে সিঁড়িটাকে জালার গায়ে লাগিয়ে ধরে। একজন সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে রূপকারকে টেনে তোলার চেষ্টা করে। কিন্তু পারে না। জালার আয়তন অনুপাতে মুখটা বড্ড ছোটো। কাঁধ আটকে যায়। লোকটা নানাভাবে চেষ্টা করে। শেষে ওঠাতে না পেরে রূপকারের মাথায় একটা চাঁটি মেরে নিচে নেমে আসে। তারপর হো হো করে হেসে ওঠে। বাকি সকলে সিঁড়ি ছেড়ে প্রশ্নসূচক ভঙ্গীতে ওর দিকে তাকায়। এর মাঝে রূপকার নানাভাবে নিজে থেকে ওঠার চেষ্টা করে যায়। উপর থেকে নেমে আসা লোকটি আবার হেসে ওঠে হো হো করে। এবার বাকি পারিষদেরাও হাসতে থাকে)

১ম            জালার মধ্যে ঢোকে যে আর উঠতে পারে না

                   মুন্ডু বেরোয় কাঁধটা যে আর বেরোতে চায় না।

                   দ্যাখ সবাই জালার মধ্যে মানুষ নাচে কাঁদে

                   জালা থেকে বেরোতে গিয়েই বোঝে আছে ফাঁদে।

তাই তো বলি সক্কলকে জালা প্রণাম কর,

জালা মহান, পেটটি তাহার তাই যে বিরাট বড়।

ছোট কিছু রোচে না, চাই জ্যান্ত মানুষ-খাসি,

উদাহরণ দেখে যা ভাই কন্ডেন্স্‌ড আইপিসি,

দেখে যা ভাই, দেখে যা চিড়িয়াখানার বাসী

(শেষ কথাগুলো চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে বার বার বলায় ছুটে এসে ঢোকে লক্ষ্মীচরণ। সঙ্গে সঙ্গে সকলে চুপ করে যায়।)

লক্ষ্মী          (কিছুক্ষণ রূপকারের অবস্থা দেখে) কী হে, আমার জালা তো ঠিক হয়ে গেছে! এবার বেরিয়ে পয়সাটি নিয়ে ভালো ছেলের মত বাড়ি যাও দেখি!

রূপকার      নিকুচি করেছে আপনার জালার! আমি আটকা পড়ে গেছি। বার করুন আমায়, শিগগির!

লক্ষ্মী          তোমাকে বার করব? হাঃ হাঃ! বোকা পাঁঠা কোথাকার! ঢোকবার আগে মনে ছিল না? আমার জালায় একবার ঢুকলে কি বেরোন যায়?  

রূপকার      তাহলে জালাটা ভেঙেই বেরোতে হবে

লক্ষ্মী          এ্যাই খবরদার! দেখি (জালাটা ঠুকে ঠুকে দেখে, আওয়াজ শুনে সন্তুষ্ট হয়। বাঃ, খুব ভালো সারান হয়েছে এই নাও তোমাকে দ্বিগুণ পারিশ্রমিক দিলাম নিজে চেষ্টা করে বেরোতে পারলে বেরোও! (বলতে বলতে টাকার একটা বান্ডিল বের করে জালাটার ভেতরে ছুঁড়ে ফেলে) জালা ভাঙলে ভালো হবে না বলে দিচ্ছি!  

রূপকার      ওসব ছাড়ুন, আমাকে বের করুন

লক্ষ্মী          তোমাকে বার করার কথা তো হয় নি! তোমাকে দ্বিগুণ টাকা দিয়েছি, তাতে জালা সারানোর দাম তো বটেই, এমনকি তোমার নিজের দামও উঠে গেছে। বলো তো, তোমায় কিছু খাবার আনিয়ে দিচ্ছি, খেয়ে নিয়ে সারা রাত চিন্তা করো কোনো উপায় পাও কিনা, না পেলে কাল সকালে আমি আইনের বইটা দেখব, এটা কোন আইনে পড়ে হাঃ, হাঃ!

রূপকার      যাবেন না (কাতরোক্তি) আমাকে এ থেকে বের হওয়ার উপায় বলে দিন। আমি দম আটকে মরে যাব। আমার পয়সা-টয়সা কিছু চাই না। আপনার ওই খাবারও আমার চাই না। আমাকে শুধু এই ভয়ানক ফাঁদ থেকে বার করে দিন

                   (লক্ষ্মীচরণ কর্ণপাত না করে হো হো করে হাসতে হাসতে বেরিয়ে যায়) আমার কথা শুনুন দয়া করে

(পারিষদদের দিকে তাকায়) আপনারা তো জানেন সবই আমাকে বার করে দিন  (ওরা হো হো করে হাসতে থাকে)

(দর্শকদের দিকে তাকিয়ে) এই আমি কান মলছি আমি জালা জোড়া লাগাতে চাই নি আর জোড়া লাগাবোও না --- আমি শপথ করছি খ্যাতির লোভ দেখিয়ে ওরা আমাকে কিনে নিয়েছিল। আমায় ক্ষমা করুন আমি আর নির্জন সমুদ্রে আলোকস্তম্ভ গড়ব না। না আপনাদের মাঝেই গড়ব আমি যেন চিড়িয়াখানার জন্তু হয়ে যাচ্ছি আপনারা কেউ

(দর্শকদের মধ্যে থেকে একজন বলে ভালো শিক্ষা হয়েছে ওর। থাকুক ওইভাবে! ওই সব এস্ট্যাব্লিশমেন্টের তাঁবেদারি করতে গেলে ওই অবস্থাই হয়। ও চিনুক লক্ষ্মীচরণের মত খচ্চর সভ্যতার পোষকদের! এর পর এক অদ্ভুত অবস্থার সৃষ্টি হয়। পারিষদেরা হো হো করে হাসতে থাকে। দর্শকদের মধ্যে বাচ্চারা ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদতে আরম্ভ করে, বাকি সকলে তাদের চুপ করাআয়। কেউ কেউ গান করে। এর মাঝে মাঝে রূপকারের টুকরো টুকরো কাতরোক্তি, রাগ, আস্ফালন চুলোয় যাক সব নিকুচি করেছে প্লিজ বার করে দিন আমি ভেঙে ফেলব আর কক্ষণো করব নাধীরে ধীরে সে আত্মধিক্কারে মাথাটা নুইয়ে নেয়। এরই মধ্যে পারিষদেরা গান ধরে আর নাচে

১ম            মজার জিনিষ দেখ রে ভাই মজার জিনিষ

২য়            মাটির মধ্যে বন্ধ যে আজ মাটির মনিষ

৩য়            পুরোনো জালা জুড়তে গিয়ে

৪য়            তারই মধ্যে আটকে গিয়ে

১ম            হল যে তার ভুত-ভবিষ্য সব ফিনিশ!

২য়            চোদ্দ পুরুষ পুরোনো জালায় এখন পাখা ঝাপটায়

৩য়            ওই তাদেরই গুণগান ওকে করতে হবে শেষটায়।।

সকলে        আমাদের হুজুরের মহিমা অপার

খচ্চর বাহন তিনি বিনয়-অবতার।

সকলকে ভুলে তাঁর সেবা যে যে করে

মামা হয়ে রক্ষা তিনি করেন যে তারে।

অর্বাচীন যারা করে তাঁর সাথে ঝগড়া

তাদের বাঁচার পথে তিনি হন বাগড়া।

পেছনেতে কাঠি করে করেন অতিষ্ঠ,

মিসা আইনে বন্ধ্‌ - তারা যে পাপিষ্ঠ।

যারা তাঁর চামড়াটা খুলে নিতে চায়,

তাদের দুনিয়া থেকে ঝেঁটে দেওয়া হয়।

চালাক বনে সাথে থাক যদি তবে

মাছের মুড়োটি তুমি পাবেই যে পাবে,

আর যদি তুমি তাঁকে বোকা বানাতে চাও

ওই হাল হবে, নয় এই হাল হবে,

ওই হাল হবে, নয় এই হাল হবে

(একবার দর্শকদের দিকে আঙুল দেখিয়ে আরেকবার জালার মধ্যে রূপকারের দিকে আঙুল দেখিয়ে তারা বার বার শেষ কথাটার পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। মঞ্চ অন্ধকার হয়ে যায়)

নেপথ্য        আমাদের নাটক এখানেই শেষ হল। আপনাদের অনুরোধ, তাড়াহুড়ো না করে মেয়েদের আগে বেরুতে দিন। তারপর ছেলেরা বেরুবেন।

                   (হঠাৎ যেন অন্ধকার ভেদ করে মাটির রূপকার বেরিয়ে আসে মঞ্চের সামনের দিকে)

রূপকার      দাঁড়ান, দাঁড়ান! নাটক কখনো এমন জায়গায় শেষ হতে পারে না। এখনো আমার মাঝে সবুজ শক্তি আছে দেখুন কেমন করে জালা ভেঙে বেরিয়ে এসেছি (হাঁপাতে হাঁপাতে প্রাণখোলা হাসি হাসে) আঃ, মুক্তির কী আনন্দ! আমি এবার যাব সেই ছেলেগুলোর কাছে, গাঁয়ের খেটে-খাওয়া মানুষদের মাঝে। যাবার আগে এগুলো আমি আপনাদের দিয়ে যাই এগুলো ওই পুরোনো বীভৎস জালার মধ্যে ছিল সব শেষ করে দিয়েছি।

(বলে হাতে ধরা কাগজের বান্ডিল দর্শকদের মধ্যে ছিটিয়ে দেয়। দর্শকরা চেঁচিয়ে চেঁচিয়ে সেগুলো পড়তে থাকে পে-কমিশন রিপোর্ট, গরিবি হটাও, পাঁচলক্ষ বেকারের কর্মসংস্থান, সীমান্তে চীনা সৈন্যসমাবেশ, এশিয়ার মুক্তিসূর্য, ভারত-রুশ চুক্তি, পি-এল ৪৮০, গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র ইত্যাদি ইত্যাদি)

আমি তাহলে যাই এবার নাটক শেষ হলে আমার আপত্তি নেই।

(দর্শকদের মধ্যে একজন বলে ওঠে তোমার রসায়ন কোথায় মাটির রূপকার? হাতে নেই?)

না না না, আছে মেহনতি মানুষের ঘামে, আমার বুকে আর লক্ষ্মীচরণের দেয়ালে।

(ছুটে বেরিয়ে যায়। মঞ্চ আলোকিত হয়ে ওঠে। দেখা যায় জালাটা ভাঙা চার টুকরো হয়ে পড়ে আছে আর দেয়ালে ওই লাল পদার্থ দিয়ে লেখা … “লক্ষ্মীচরণ, তোমার জালা আবার ভাঙল। এবার তোমার পালা মানুষকে চিড়িয়াখানার জীব আর কেনাবেচার সামগ্রী ভাবার দিন ফুরিয়েছে!)

 

পর্দা নেমে আসে।

 

[পিরান্দেল্লোর ছোট গল্প দ জার এর ছায়া অবলম্বনে স্বচ্ছন্দ নাট্যরূপ। ১৯৭১এ এটা আমার প্রথম নাটক লেখার চেষ্টা। রীতিমত বদহজম। তা সত্ত্বেও ফল্গুদা (ফল্গু ঘটক) র শংসায় অনীক  পত্রিকায় ছেপেছিল। পত্রিকা থেকে ডিজিটাইজ করে রাখলাম।]   

 






No comments:

Post a Comment