পার্ল সিনেমা বলতে পাড়ার হল।
অশোকও পাশেই, কিন্তু একটু গৃহস্থ বাঙালি। …উত্তমসুচিত্রা, ছলছল প্রেম, হঠাৎ
হল-ফাটানো একটা কিম্ভুত আওয়াজ – ভ্র্যাঁ... । সেটাই ছিল খোকনের প্যাঁক। সাইকেলের
টিউবের টুকরো মুখে ঢুকিয়ে। আর তারপরেই আকূল স্বরে, “মা মাগো”। হলভর্তি পাব্লিক
খচে ব্যোম্।
ওদিকে বীণা, তবে স্টেশন ছাড়িয়ে, মানে পাড়া
বলতে যা বোঝায় তার এক্তিয়ারের বাইরে। পার্ল মানে একেবারে আমাদের পছন্দসই মিক্স,
কখনো সখনো বাংলাও চলে, আবার ম্যাটিনিতে চারবার চেষ্টা করেও টিকিট-না-পাওয়া ‘এক ফুল
দো মালি’, মাঝেমধ্যে সকালের শোতে ‘টু উইমেন’, ‘ইয়েস্টারডে টুডে টুমরো’…
তখন কি আর সানফ্লাওয়ার দেখেছি!
না সোফিয়া লরেনকে
নিয়ে পাগল হতে শিখেছি!
শুধু হটসীনের খোঁজ। এক-পাঁচের টিকিটের সুড়ঙ্গে ঢুকে জানলার কাছে পৌঁছোনোর
জন্য দেয়াল ধরে উপরে উঠে মানুষজনের মাথার ওপর দিয়ে টিকটিকির মত এগোনো, তারপর
জানলার কাছে পৌঁছে ঝপ করে নামা। জানলার খোপে হাত ঢোকাতে যেতেই পাশে দাঁড়ানো
পাহারাদারের রদ্দা, অথবা হাতের লাঠিটার এক বাড়ি পিঠের ওপর।… আলোচনা চলত নিজেদের
মধ্যে সবচে’ খুঙ্খার কোন হলের পাহারাদার, ‘রূপক’ না…!
মনে আছে তপু? সেই
‘রূপক’এ তোর আন্ডারওয়্যার আর গেঞ্জি পরে সুড়ঙ্গের দেয়ালের পথ ধরা? তোর জন্যই
‘পড়োসন’ দেখতে পেরেছিলাম। ম্যাটিনির একটা টিকিট কিনে দু’য়ের দামে ঝেড়ে ইভনিং শো’এর
দুটো টিকিট কিনলাম, তোর আর আমার! আবার ওই একটা টিকিটের দামও সন্টুর সাইকেলের
দোকানে পাঁচটা পাংচার বানিয়ে জুটিয়েছিলাম! পাংচার যে সারাত, হীরা, তাকে বসিয়ে
দিয়েছিলাম দু’ঘন্টা। কী সব দিন ছিল বস্!… দেবানন্দ যখন এল! নালন্দায় শুটিং। ‘জনি মেরা
নাম’। এয়ারপোর্টে গিয়েও দেখা পেলাম না। লাউঞ্জে একজন মহিলাকে দেখে কামিনী কৌশল মনে
হল। তাই সই। বুড়ি হলেও ফিল্মের হিরোইন তো!… পরে শুনেছিলাম অনেকে সাইকেলে নালন্দা অব্দি
গিয়েছিল।
তবু, পার্ল ছিল পাড়ার
হল। পাড়া বলতেও আবার
অনেকগুলো পাড়া। মিঠাপুর, জক্কনপুর, ইয়ারপুর, গর্দনিবাগ… সে এক্কেবারে আনিসাবাদ
অব্দি। ওদিক থেকে মেন শহরে আসার পথে এটাই তো প্রথম সিনেমা হল!
পাড়াগুলো মালার মত গাঁথা ছিল। ভিতরে
ভিতরে রাস্তার পর রাস্তা। আর সেই বাড়িগুলো চেনা যার জানলায় সুন্দরী মেয়েরা বড়
হচ্ছে! আমাদের, মানে বন্ধুদের সবাইকার একটা করে ‘খাস’ ছিল। “ওদিকে নজর দিবি না
সালা! জুলুম হয়ে যাবে!” আমার ‘খাস’ যে আমার বাড়ির সামনেই থাকে, আর সে আমারই
মাদুরটায় এসে মাঝে মধ্যে বসে, আমার মায়ের সাথে গল্প করে, আমারই কম্বলটা গায়ে লপটে
নেয়, সেটা ছিল আমার দেমাক।
বাড়ি থেকে নিউ মার্কেট হোক আর সিনেমাই
হোক, যাওয়ার পথে পড়ত মিঠাপুর গুমটি। গুমটি মানে রেলওয়ের লেভেলক্রসিং দুপাশে থাকত
(এখনও থাকে) হেঁটে পেরোবার ছোট্টো গেট। সাইকেলটা দুহাতে মাথার ওপর উঠিয়ে পেরোতাম।
পরে যখন কলেজ ফাঁকি দিয়ে মর্ণিং শোয়ে যাওয়ার মত বড় হয়েছি, দেখেছি ভটচাযজেঠুও
সাইকেলটা মাথার ওপর ওঠাচ্ছেন। ষাটের ওপর বয়স। তিন ছেলের কেউই কিছু করে না তখনো।
সাইকেলে প্রতিদিন মারুগঞ্জ, পাটনা সিটি মানে দশ কিলোমিটার যেতেন কাজে।
* * * *
সেই পার্লসিনেমা ভাঙা হচ্ছে। অশোক আগেই ভাঙা
হয়ে গেছে। নতুন মাল্টিপ্লেক্সটাও প্রায় তৈরি হয়ে এসেছে। ভেঙে নতুন কিছু তৈরি করায়
যেন জোয়ার এসেছে। পুরোনো ঐতিহাসিক জেল ভেঙে বুদ্ধ স্মৃতি পার্ক। জিপিও গোলচক্করের
ওপর আরেকটা গোলচক্কর - রেললাইনের ওপার থেকে রাস্তা মাথার ওপর উঠে দু’দিকে নেমে
গেছে। হার্ডিঞ্জ পার্কও ভাঙা হবে। বদলে যাবে শহরটা আর বদলে দেওয়াটাই দস্তুর। সরকার হাসবে, আমলারা
হাসবে, “দেখেছেন! কেমন নিজেকে চিনতেই পারছেননা! ভালো লাগছে কিনা এবার? মনে হচ্ছে
কিনা, যে আমরা আর আমরা নই? এ্যাঁ! এ্যাঁ! হে হে!”
সেদিন একটা ছেলে সাইকেলে করে যাচ্ছিল।
সাধারণ দেখতে, রোগাপাতলা, প্যান্টশার্ট-হাওয়াইচপ্পল, পিছনে ক্যারিয়ারে মুড়ে রাখা
একটা নোটখাতা।
-
স্যর,
বলতে পারেন, সিনেপলিসটা কোথায়?
-
পি
এন্ড এম মলে।
-
কোথায়?
-
পাটলিপুত্রা
কলোনী থেকে কুর্জির দিকে যেতে।… (ওর সাইকেলের দিকে তাকিয়ে) দূর আছে অনেকটা!
-
(সেও নিজের সাইকেলটা দেখে হাসলো) সে, পৌঁছে যাব!
-
সিনেমা দেখতে চললে?
-
না, কাজ দেবে বলেছে একজন।
ওর বয়সে আমরা টিউশনি করেছি। আজকাল টিউটরি
শক্ত ব্যবসার ঘাঁটি। টিচার, প্রফেসর, ইঞ্জিনিয়ার! তারপর ইন্সটিচিউট-এজেন্সির
কমিশন, নোটস, গেস…! শুধু ছাত্রজীবন কেন, একটা ভালো সরকারি/কর্পোরেট কিছু বাগাতে না
পারলে সারা জীবন কাজ বলতে মোবাইলসেট, নেটওয়ার্ক সার্ভিস প্রোভাইডার, আরো নানা রকম
জিনিষের প্রচার, দোকানে-মাল্টিপ্লেক্সে-মলে-রিটেলআউটলেটে সেলসম্যানশিপ, সিকিউরিটি,
ডেলিভারি বয়, এনজিও’র কম্যুনিটি ওয়ার্কার, সরকারি
স্কীম ওয়ার্কার এসবই তো কাজের জায়গা! অথবা নিজের কোচিংএর খরচ পোষাতে
বিকেলে দিনজমায় অটো নিয়ে ভুতনাথ, অগমকুঁয়া, গুলজারবাগ। সকালের প্রথম রুটিটার আগে
মুখে যায় গুটকা, নইলে দিন খোলে না চোখে।
* * * *
বিহারশরীফ
বাসস্ট্যান্ডে নেমে এগিয়ে যাচ্ছি। যাব গঢ়পর মহল্লায়। সেখান থেকে কলিমকে ধরে তার
বাড়ি। হঠাৎ পিছন থেকে একটা মটোর-ঠেলা ডানদিকে ঘ্যাষ্টা মেরে বেরিয়ে গেল। পড়ে গিয়ে
তক্ষুণি উঠলাম। দু’একজন সাহায্য করল, একটা রিকশা ধরিয়ে দিল গঢ়পর অব্দি। একটু
ডেটল-ফেটল লাগিয়ে নিলেই চলত কিন্তু কলিম জোর করে নিয়ে গেল ডাক্তারের কাছে। তার
শহরে অতিথি হয়ে এসেছি বলে কথা।
ডাক্তার ঝুঁকে আমার হাঁটুর
ডান দিকের পেশীতে ফোলাটা হাত দিয়ে টিপে পরীক্ষা করছিল। এতক্ষণে বেশ শক্ত ঝিঙের মত
হয়ে উঠেছিল ফোলাটা। আমি ডাক্তারের মুখ আর কপালটা দেখছিলাম। এত চেনা মনে হচ্ছে কেন?
“ডাক্টরসাহব, আপ…” আমি শুরু করতেই কলিম টুকল, “বংলা বোলো ন ইয়ার! নেমপ্লেট সে নহীঁ
সমঝে?”
-
(প্রায় নিশ্চিত হয়ে পয়েন্ট ব্ল্যাংক দিলাম) বৈদ্যনাথ গুপ্ত,
গর্দনিবাগ, রোড নম্বর টু? বদু?
-
(ডাক্তার চমকে মুখ তুলে আমার দিকে তাকাল) ??
-
আমি বিদ্যুৎ! বিদ্যুৎ পাল!
-
আরেঃ! তুই বেঁচে আছিস?
-
মরে যাওয়ার খবরটা কোত্থেকে পেলি?
-
শালা, খোঁজখবর নিয়েছিস কখনো বন্ধুদের? কত বছর পর দেখা বল্
তো!
-
পঁয়ত্রিশ বছর।
-
বোঝ্!
-
কি করবি! জগৎটা পাল্টে যায়। তোর জগৎ এখানকার রুগীদের
নিয়ে, আমার, আমার ইউনিয়নের কমরেডদের নিয়ে। (কলিমের উদ্দেশে) নিজের মহল্লার,
বেরোজগারীর জমানার সব দোস্তি কলিমভাই! (আবার ডাক্তারের দিকে তাকালাম) তা তুই
ডাক্তারি পাশ করলি কবে?
কলিমের বাড়ি আর যাওয়া
হলনা। কথা দিল সকালে আমাকে পিকআপ করে নেবে। বাইকে যাব নওয়াদা, শেরঘাটি। বদুর
বাড়িতে মাংসের ঝোল, ভাত লেখা ছিল। রাতে ওর উঠোনে বসে আছি। একটু আগে ওর বৌএর সাথে
আলাপ হয়েছে। ছেলে মেডিক্যালে, ইন্টার্নশিপ করছে গোয়ালিয়রে। মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে,
দুমকায় শ্বশুরবাড়ি।
-
তুই ডাক্তারি পাশ করলি কবে?
-
তোদের সামনেই তো হোমিওপ্যাথির ডিগ্রি নিয়েছিলাম!
-
কিন্তু এ তো…
-
হ্যাঁ, এলএমপি করলাম পরে। এসব জায়গায় ডাক্তারি কি শুধু
হোমিওতে চলে?
-
পাব্লিক জানে যে তুই এমবিবিএস নোস্?
-
পাব্লিক জানে যে ডাগদরসাহব ধণ্বন্তরি। আর আমি তিরিশ বছর
চেম্বারে, রুগীর বাড়িতে, - পরম নিষ্ঠার সাথে যেটুকু যা জানি কাজে লাগিয়ে - এমনকি
আয়ুর্বেদ নিয়েও পড়াশোনা করেছি দস্তুরমত – আজ এই জায়গায়। এই বাড়ি আগে কুঁড়েঘর ছিল।
-
তোর ওয়াইফ…
-
তুই চিত্রাকে চিনলি না?
-
??
-
রোড নম্বর পাঁচের পিছনে দশ ঘর মালি ছিল মনে নেই? অবশ্য
হ্যাঁ, তুই তো জক্কনপুর থেকে আসতিস, তোর সেভাবে না জানারই কথা। ওর জন্যই তো রাতারাতি
ডেরাডন্ডা উঠিয়ে এখানে এসে ঘর বাঁধতে হল।
-
??
-
ওর বাপের কোনো দোষ ছিল না বিশেষ। জামাই বেজাতের হলেও ওদের
থেকে নিচু জাত নয়। কিন্তু বেকার হলে দুশ্চিন্তা করা স্বাভাবিক। আমার বাপটাই… পুরো
পাড়াটাকে বেচারা মালিদের পিছনে লেলিয়ে দিল। সরকারি অফিসার ছিল, একটা প্রভাব তো
ছিলই। তার ওপর বিহারে জাতের ব্যাপারটা জানিসই।
-
আমি সেই যে চিত্রাকে নিয়ে বাড়ি ছাড়লাম আর যাইনি।
-
(কিছুক্ষণ চুপ থেকে) তোর বাবা মা?
-
এখানে এসেছে পরে… অনেক পরে… আমি যাইনি। বাবা বেঁচে থাকতে
তো পাটনাই যাই নি আর। মারা যাওয়ার পর সেই প্রথম বাড়ি যাওয়া আর শ্বশুরবাড়িতেও
যাওয়া। পরে তো মাও, যদ্দিন বেঁচে ছিলেন এখানেই ছিলেন।
রাত্রে শুয়ে আছি
বাড়ির বাঁপাশে গোল হয়ে বাইরের দিকে বেরিয়ে থাকা ঘরটায়। ঠিক এরকমই ডিজাইন বাড়ির ডান
পাশের ঘরটারও। ওটা ডাক্তারের রুগী দেখার জায়গা। চেম্বার, ক্লিনিক সব এক সাথে।
গেটের কাছে একটা শোরগোল। বাইরে বেরিয়ে দেখলাম কয়েকজন মানুষ অসুস্থ একজনকে ধরাধরি
করে আনছে। একেবারে সামনে একজন যুবক, বেশ স্মার্ট, শহুরে, মেধাদীপ্ত চেহারা। ওদিকে
ভিতর ঘর থেকে ডাক্তার বেরিয়ে এল। বেরিয়ে সামনের যুবকটিকে দেখে অবাক হল, “আরে,
ডাক্টরসাহব, আপ?”
-
জরা দেখ লিজিয়ে ইনকো। অভি তক যো দওয়াইয়াঁ চলি হ্যায়…
একটা কাগজ এগিয়ে দেয়;
লক্ষ করিনি পিছনে কখন ডাক্তারের স্ত্রী বেরিয়ে এসেছেন। বাইরের আর ক্লিনিকের
আলোগুলো জ্বালিয়ে দিয়ে গেলেন। রুগীকে ততক্ষণে ডাক্তারের ক্লিনিকে বেডে শোয়ানো হয়ে
গেছে। আমাকে দেখে এগিয়ে এলেন ডাক্তারের স্ত্রী। কালো, ঈষৎ মোটা। বয়সকালে নেশা
ধরানোর মতই মুখশ্রী আর চুল ছিল বোঝা যায়।
-
আপ কেঁও উঠ গয়ে? ইয়হ তো রোজ কা মামলা হ্যায়।
-
আপনি একটুও বাংলা জানেন না ভাবীজী?
-
বৌদি বোলিয়ে। থোড়া জানি। আপলোগনদের সামনে বলতে হিম্মৎ হয়
না।
“প্রণাম ম্যাডম” বলে
সেই সুপুরুষ যুবকটি দেখলাম বেরিয়ে গেল রাস্তায়।
-
সওয়ারি মিল জায়গি অভি, পটনা জানে কে লিয়ে?
-
(গেটের বাইরে থেকেই চ্যাঁচালো ছেলেটি) হাঁ, হাঁ,
গোপালগঞ্জ হ্যায় অভি তুরত্!
-
কে ছেলেটা বৌদি? রুগী নিয়ে এল অথচ চলে গেল!
-
ডাক্টর।
-
সে তো বুঝেছিলাম। বদু ডাক্তার বলেই সম্বোধন করল ওকে। তা
রুগীকে এখানে সোপর্দ করে পাটনা পালিয়ে গেল?
-
পিএইচসি মেঁ কাম করে। সরকারি এমবিবিএস ডাক্টর।
-
এমবিবিএস ডাক্তার এলএমপির কাছে রুগী ফেলে পালিয়ে গেল?
-
কী করবে? এ এলাকায় রুগী, রুগীর পরিবার কেউ কোনো ডাক্টরকে
বিসোয়াস করেনা আপনার দোস্তকে ছাড়া। ওরাই জবরদস্তী করেছে জরুর। ডাক্টর বেচারা অপনা
লাইন অফ ট্রিটমেন্ট বলে দিয়ে গেল ওই আপনার দোস্ত বদু…
ফিক করে হেসে ফেললেন।
তারপর খুব সুন্দর করে খোলা হাসলেন মহিলা। এক লহমায় মনে হল এও তো আমাদের জওয়ানির
খাসমহলের একজন ছিল, ফুটছিল কোনো জানলায়।
-
চা খাবেন?
-
আপনি কী করে জানলেন এত রাতে চা খেতেও ইচ্ছে হতে পারে
মানুষের?
-
বাঃ, বদুর সাথে সংসার করছি, জানুঙ্গি নহীঁ? (বদু বলে
আবার একপ্রস্থ হাসি) চলুন। অন্দরে বসবেন। চা বানাবো, কথা বলবো। (আবার গিয়ে
রান্নাঘরের সামনে খাবার টেবিলে বসলাম। সামনে ভিতরের উঠোনে ফুলগাছগুলোর ওপর এদিককার
আলো পড়ছে।)
-
আচ্ছা বৌদি, ওর সাথে আপনার আলাপ কিভাবে হয়েছিল বলুন তো?
তিন কাপ চা নিয়ে এসে
এক কাপ দিতে গেলেন ডাক্তারের ক্লিনিকে, তারপর ফিরে এলেন। ঝপ করে বসতে বসতেই বললেন,
“পার্ল সিনেমায়, ‘ইজ্জৎ’ দেখতে গিয়েছিলাম আমরা চার ফ্রেন্ড মিলে।”
-
ও কোথায় ছিল?
-
সামনের সিটে। একবার জোরসে সিটি মারলাম। আমার
ফ্রেন্ডলোগদের মধ্যে আমি বেস্ট সিটি মারতাম। মাথাটা নিচু ছিল। যাতে কেউ দেখতে না
পায়। যেই উঠিয়েছি, দেখি মাথা ঘুরিয়ে আঁখ লাল করে আমাকে দেখছে। আমি চিনতাম না। বলল,
তুম চিত্রা হো ন? ঠহরো, তুমহারে বাবুজি কো বোলনা হোগা।… হামার তো খুন সুখিয়ে গেছে।
(আবার হাসলেন মহিলা)
ওই কথাতেই রোজ রোজ ব্ল্যাকমেল করে তো তারপর আমাকে পটিয়ে নিলেন আপনার বদু…(হাঃ হাঃ
হাঃ)।
-
আমিও তো প্রথম সিগরেট খেয়েছিলাম ওই পার্লে ‘ইজ্জত’ দেখেই
ফেরার পথে – ওই যে ধর্মেন্দরের সাথে সেকেন্ড হিরোইন জয়ললিতা, ওটাই তো? যিনি পরে
বেশ কয়েকবার তামিলনাডুর মুখ্যমন্ত্রী!
-
সির্ফ সিগরেট খেয়ে বুক জ্বালিয়েছিলেন? কেন?
-
(আমি রহস্য করে বললাম) কী করব বলুন? আমার পিছনের সিটে তো
আর চিত্রা নামের কোনো সুন্দরী সিটি বাজায়নি!
-
(বাপরে! কী চৌখস মহিলা! আমার চেয়েও বেশি রহস্যঘন স্বরে
মুখ এগিয়ে বললেন) ও! মতলব আপনিও সেই এক? ‘বদু’? (আবার হাসি)
সেই পার্ল সিনেমা।
ভাঙা হচ্ছে।
ভারী জীবন্ত। জীবন থেকে নেওয়া। বিদ্যুৎ যেমন। সাবাস ।
ReplyDelete