ড্রাইভার মন্দিরটা দেখিয়ে বলল, “খুব জাগ্রত দেবীমন্দির; এবারে তো হবেনা, যদি কখনো দর্শন করার ইচ্ছে হয় বলবেন, নিয়ে আসব।”
“আর এই মন্দিরের সাথে একটা গল্পও আছে। অনেককাল আগে এদিকে
বন্যা আসত।”
-
বন্যা? কোন নদীর?
“ছিল কোনো নদী। আমিও
তার নাম জানিনা। আর এখন তো ধারে কাছে কোনো নদীই নেই। অনেকে বলে বিরাট জঙ্গল ছিল
এদিকটা। কোনো জঙ্গলের চিহ্ন দেখতে পাচ্ছেন?”
“তা, সেই বন্যা থেকে গ্রামটাকে বাঁচাতে বাঁধ দেওয়ার চেষ্টা
করছিল গ্রামের লোকেরা – কিন্তু বারে বারে চিড় খেয়ে যাচ্ছিল বাঁধটা।”
“শেষে ওই, যেখানে
মন্দিরটা দেখছেন, সেখানেই বাঁধ ছিল – এখনো জায়গাটা একটু উঁচু – ওই চিড় খাওয়া বাঁধের
ওপর গ্রামের মানুষদের সভা বসল বিকেলবেলায়। সবাই গ্রামের পুরুতের মুখের দিকে তাকিয়ে।
পুরুতমশাই বিধান দিলেন, আজ সুর্যাস্তের আগে যে অবিবাহিত কিশোরী কন্যাকে প্রথম এই
বাঁধের ওপর দেখা যাবে, তাকে বলি দিতে হবে। তার বলির রক্তে ভিজে এই বাঁধের মাটিতে
আর চিড় ধরবে না।”
“এখন ওই সভা থেকেই কেউ উঠে বাড়ির দিকে হাঁটা দিয়েছিল আগেভাগে।
কাজ মনে পড়ে হবে কিছু। যেতে রাস্তায় ওই পুরুতের বাড়ি। পুরুতের ছোটো
মেয়েটা হাতে জলের ঘটি নিয়ে বেরুচ্ছে – একে দেখেই জিজ্ঞেস করল, কাকু,
ওখানে সভা শেষ হয়ে গেল?”
“লোকটি সাধারণভাবেই জবাব দিল, নারে, এখনও চলছে। আমার কিছু
কাজ আছে তাই বেরিয়ে এলাম।”
“যাই এই জলটা বাবাকে
দিয়ে আসি, মেয়েটি বলল, এই সময়টায় বাবার খুব জলতেষ্টা পায়।”
-
তারপর?
ড্রাইভার গাড়িটা আস্তে করল। “তারপর আর কি? সুর্যাস্তের
আগে পুরুতের মেয়েই প্রথম পৌঁছোলো বাঁধের ওপর। পুরুতমশাই নিজের কথা থেকে আর ফেরত
আসেন কী করে। সবার রায়ে ওই মেয়েকেই বলি দেওয়া হল।”
“ওই বলির জায়গাটাতেই দেবীমন্দির।”
-
বাঁধের মাটিতে চিড় ধরা থামল তার পর?
“নিশ্চয়ই থেমে হবে।
মন্দিরটাই তো দাঁড়িয়ে গেল!”
-
আর হয়ত সেই পুরুতই হয়ে থাকবে
মন্দিরের প্রথম পুজারী!
২২.৫.১৯
No comments:
Post a Comment