বাপ্পা, মানে সুহৃদ আজ সুহৃদ সেন - মহামান্য বড় হাকিম। বাড়িতে ঢোকা সহজ নয়। বিরাট, পুরোনো ব্রিটিশ আমলের সরকারি আবাসন, চারদিকে বাগান, ক্ষেত, লন, সুরক্ষার বেড়াজাল। গেটের কাছে কেউ এসে ঢোকার অনুমতি চাইলে সাহেবের পক্ষে জানা সম্ভবও নয় যে প্রহরী কাকে ধমক দিয়ে তাড়াচ্ছে।
কিন্তু মিহির তরফদারও
চালাক। প্রথমে ফোন নম্বর জোগাড় করে কথা বলার চেষ্টা করেছিল। শালা, নিজে তোলেই না
ফোনটা! কর্মচারীকে বলল ছোটোবেলার বন্ধু। কর্মচারীটি সাহেবকে জিজ্ঞেস করে ফিরে এসে
জানিয়ে দিল এখন সময় নেই। ফোন নম্বর দিতে বলেছেন, পরে সময় করে সাহেব নিজেই কথা
বলবেন। ফোন নম্বর দিল একটা, যদিও বুঝল ব্যাপারটা। তিন মাস পেরিয়ে গেল, সাহেবের সময়
হল না।
মিহির দু’চার দিন গেটের
পাশে ঘোরাফেরা করে দেখল যে ছুটির দিন বেলা এগারটা নাগাদ সাহেব বাইরে পোর্টিকোতে
বেতের চেয়ারটায় বসেন। কফি বা চা কিছু একটা খান। পেপার, ম্যাগাজিন পড়েন একাধ ঘন্টা।
ঠিক সেই সময়েই পৌঁছোল
আজ। প্রহরীদের কাছে অনুমতি পাওয়ার চেষ্টায় বিফল হয়ে হঠাৎ অস্বাভাবিক জোরে চেঁচিয়ে
উঠল, “শালা বড় মানুষ হয়ে গেছে! ছোটোবেলার বন্ধুর সাথে দুমিনিট কথা বলার সময় নেই।
বন্ধু বলে ইজ্জৎ করি। নইলে বাঞ্চোৎ, পুরোনো কেচ্ছা ফাঁস করে এমন হাল করতাম, ঘুচে
যেত হাকিমগিরি!”
কাজ হল। সাহেব হলঘরে
ঢুকে প্রহরীকে ডেকে পাঠালেন।
-
কিন্তু সাহেব, লোকটা বদমায়েস!
যা তা গালাগাল দিচ্ছে দাঁড়িয়ে। ওকে পুলিসে…
-
(সাহেব হাত তুলে থামালেন) হয়ত
কোনো তকলীফ আছে মনে। আমারই কোর্টে হয়ত… আমাদের কাজ তো সহজ নয়! লোকটার মনের কথা
শুনেই নি।
বাঃ, কী উদারমনষ্ক আমাদের সাহেব! প্রহরীটি
ভাবল। দেবতামানুষ! গেটের পাশে নজরদারির ছোট্টো খুপিটায় দাঁড়ানো কার্বাইনধারী
সেপাইকে সাহেবের কথা বুঝিয়ে, লোকটিকে ভালো করে সার্চ করে ভিতরে নিয়ে এল। লোকটি
ভিতরে ঢুকে সাহেবের সামনে দাঁড়াল। সাহেব ইশারা করলেন তাকে বসতে। তারপর প্রহরীটিকে
যেতে বললেন। “কিন্তু সাহেব…” সাহেব প্রহরীকে মাঝপথে থামিয়ে আবার ইশারা করলেন চলে
যেতে।
-
কী, বল্! রাস্তায় দাঁড়িয়ে গালি
দিচ্ছিস কেন? জানিস তো সরকারি কাজ। যে জায়গায় আছি তার কিছু ডেকোরাম আছে। আর তুই তো
আমার সাথে পুজোর সময় কালীবাড়িতেই দেখা করতে পারতিস! চারদিন আমি ওখানেই থাকি সকাল
বিকেল। ওখানে সিকিউরিটিও থাকেনা। বাড়িতে এলি কেন?… যা হোক, চা খাবি তো? আবার জিজ্ঞেস
করছি কেন, অ্যাই (দরজার ওপারে ছোট অফিসঘরটার উদ্দেশে হাঁকেন) কুশলজী! একটু চায়ের
ব্যবস্থা করুন। (এদিকে ফিরে) অনেক বছর পর তোর সাথে দেখা হল!
-
সাত বছর পর। তখন এত র্যালা ছিল
না।…তিন মাস আগে তোর ফোন নম্বরে ফোন করেছিলাম। তোর কর্মচারী- দের কেউ আমাকে ফোন
নম্বর দিতে বলল, বলল তুই…
-
আঃ, ছাড়, অনেককেই বলতে হয় ওসব।
হয়ত ব্যস্ত ছিলাম, কার ফোন বুঝতেও পারিনি। দরকারটা বল। আর তুই থাকিস কোথায় আজকাল?
-
ঠিক বলেছিস। দরকারটা বলি!
দ্বিতীয়বার হয়ত ঢুকতেই পারবোনা, মানে প্রমোশন-টমোশন হলে আরো এত বড় মহলে থাকবি যে
বুঝতেই পারবিনা কে দেখা করতে এল, কে গালাগাল দিয়ে সীন ক্রিয়েট করছে…! গার্ড পাল্টে
যাবে। শহর পাল্টে যাবে… টাকা চাই।
-
হুম!
-
এক্সপ্রেশনটা কারেক্ট! আফটার অল
আর কি দরকারে আসতে পারে একটা মায়ের ভোগে যাওয়া ছোটোবেলার কানেকশন, তোর মত একজন
গণ্যমান্য…
-
কেন? মানে টাকা চাই কেন? তুই তো
ব্যাঙ্কে চাকরি করিস, মাইনেও খুব কম নয়। আর আমার কাছেই বা কেন? তুই তো শুনেছি বেশ
পপুলার লোক! ইউনিয়ন করিস, অনেকে চেনে তোকে!
-
(মিহির একবার ভাবল বলে দেয় যে
চাকরিটা গেছে, তারপর হিসেব করল, ‘বললে এ মাল টাকা দেবে না’) ধারে জড়িয়ে
সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছি। (স্থিরভাবে সুহৃদের দিকে তাকিয়ে) বৌয়ের গয়না কিনবো।
মায়েরগুলো পাইনি। নিজে যা দু’একটা কিনে দিয়েছিলাম সব বিক্রি হয়ে গেছে। (হেসে) আমার
লিভারটা পচছে হাকিম। সিরোসিসে পৌঁছোবার আগে ওকে কিছু গয়না দিয়ে সাজাবো!…
-
শালা! নাটকের ডায়ালগ! খাস কেন
মদ? আর তাই যদি হয় তো মদ খেয়ে লিভার পচাবি তুই আর তোর বৌয়ের গয়না আমি দেব?
-
একশোবার! (একটা শয়তানি হাসির
সাথে) তোরও তো একটা দায়িত্ব আছে আমার বৌকে সাজাবার! নয় কি? তোর, সুখময়ের, লখনের, কিশোরের…
-
(হাত তুলে থামিয়ে) নিজের জীবনটার
বারোটা বাজালি তুই! ইয়ং এজে এসব ঘটনা ঘটেই থাকে। মিডলক্লাস ঘরের ভদ্র বাঙালি ছেলে!
একটা রাঁড়কে বিয়ে করে (মুখটা কালো হল মিহিরের, কিছু গালাগাল মুখে আসছিল কিন্তু চুপ
করে রইল) হিরো হলেন! কত দিতে হবে?
-
কুড়ি হাজার আমার চাই। তুই যা
দিবি, তারপর বাকিটা ওদের কাছে চাইব নাহয়!
-
একমাত্র লখন ছাড়া বাকি তিনজন
কেউ দেবে?
-
জানিনা। আসলে তোর কাছে চাওয়ার
মজা আছে। সরকারি পয়সা! সরকারি ইজ্জৎ!
-
স্সালা, ব্ল্যাকমেলার হয়ে
গেলি?
-
ব্ল্যাকমেলার হলে আগেই হতাম।
বারবার আসতাম। হইনি। আসিওনি। আসবওনা। আর হ্যাঁ, জিজ্ঞেস করেছিলি থাকি কোথায়। থাকি
লোহানিপুরে। মা মারা যাওয়ার পর থেকে ওখানেই আছি, আঠেরো বছর হয়ে গেল।
চা আসে। নিঃশব্দে মিহির চা, বিস্কুট,
চানাচুর সবটাই সাবাড় করে। হারামিটার বাড়িতে কাষ্ঠভদ্রতা করে লাভ নেই। খিদে তো
পেয়েই থাকে সারাক্ষণ। সুহৃদ ভিতরে গিয়ে কিছুক্ষণ পর একটা খাম নিয়ে এসে হাতে দেয়।
-
ওদের কাছে যেতে হবে না। পুরো
কুড়ি হাজার আছে। কিন্তু দ্বিতীয়বার গেটের কাছে এলে পুলিস ডাকব। জেনে রাখ যে তোর
কেচ্ছায় ভয় পাই না। কেউ বিশ্বাসও করবে না তোর কথা। তবু দিলাম কেন না আপাততঃ দেওয়ার
মত আছে আমার। আর তুই, হাজার হোক, ছোটোবেলার বন্ধু। এবার যা। কুশলজী, এনাকে বাইরে
ছেড়ে আসুন।
… … … … …
গলির আদ্ধেকটায় প্রায় সারা বছর নালার জল
উপচে থাকে। মুদির দোকানের পাশ দিয়ে সরু সিঁড়ি। ওপরে উঠে একখানাই ঘর বলতে গেলে।
সামনের দিকে, মানে পূর্ব দিকে এক চিলতে বারান্দার ছাতটা করোগেটের। উত্তর দিকে
কলঘর, পায়খানা। দক্ষিণ দিকে একটা ছোট্টো ঘর রান্নাঘর করে নেওয়া হয়েছে। জানলা একটা
পশ্চিম দিকেও আছে, তবে খুললেই পিছনের তেতলা বাড়িটার বাথরুম, পায়খানার লিক-ধরা
পাইপ। ইঁটের খাঁজে বেড়ে ওঠা অশত্থের পাতায় ময়লা জল পড়ে ছিটকে আসে জানালার ভিতর।
তাই বন্দ রাখতে হয় সবসময়।
এই বড় ঘরটাতেই মাঝখানে একইঁটের পার্টিশন
করিয়ে নিয়েছে ওরা নিজেরাই। পার্টিশনের দু’দিকে একেকটি ডবল খাট। ভিতরের খাটটায়
মিহির আর সুনয়না শোয়। বাইরের খাটটা দিনের বেলায় বসার জায়গা, রাতে দুই ছেলের শোয়ার
জায়গা। সামনের বারান্দাটাতেও শোয়া যায়, কিন্তু টেবিল ফ্যান লাগিয়ে। কিছু গাছপালা
আছে দক্ষিণ কিনারে। ভেজা কাপড় টাঙানোর দড়ি, ভাঁজ করা ক্যাম্পখাট, কিছু প্যাকিং
বাক্স রাখা আছে। বসার ঘরে খাট ছাড়া দুটো লোহার ফ্রেমে প্লাস্টিকের বেত দিয়ে বোনা
চেয়ার, একটা টেবিলের ওপর সাদাকালো টিভি, নিচের র্যাকে খারাপ হয়ে পড়ে থাকা ভিসিডি
প্লেয়ার, ক্যাসেট প্লেয়ার ও আরো কিছু জিনিষপত্র। বাইরের দরজার একপাশে দেয়াল-র্যাকে
দুই ছেলের বই, খাতা। অন্যপাশে একটা সাইকেল।
এটুকুই সংসার বলতে করতে পেরেছে মিহির
তরফদার। তাও সম্ভব হয়েছে সেই রানিরই জন্য।
রানি মানে সুখিয়া। সুখিয়া মানে কুড়ি বছর
আগের সেই দুঃস্বপ্নের দিনরাত।
প্ল্যানটা ছিল কিশোর জায়সওয়ালের।
বাঁসঘাট ছাড়িয়ে দুজরায় ওদের পুরোনো ঠেকে
সেদিন রাত্রে ওরা আকন্ঠ গিলেছিল। ঠেক, মানে লখন অধিকৃত একটি ছোটো দোকানঘর। দোকান
নেই। ঘরটা বন্দই থাকে, খোলে শুধু ওদের ঠেক হিসেবে, অথবা একান্ত প্রয়োজনে লখনের,
পার্টনারদের সাথে মন্ত্রণাঘর হিসেবে।
মিহির, সুখময়, লখন, কিশোর আর বাপ্পা, মানে
সুহৃদ। তখন মিহির কাজ বলতে পার্টটাইমে কাজ পেয়েছে ব্যাঙ্কে। সুহৃদ আইন পড়ছে। সুখময়
বড় সরকারি অফিসারের ছেলে, বেকার কিন্তু স্বেচ্ছায়, ভাবছে বিজনেস করবে নিজের। কিশোর
পৈত্রিক ব্যবসায় সময় দেওয়া শুরু করেছে। লখনের লাইনটা শেডি। ছুট্কোছাট্কা
স্মাগলিং, কখনো সখনো বড় দাঁও – আর্ম্স ডিলিঙে মিড্লম্যান। কারোরই বিয়ে হয়নি।
বেহেড মাতাল হওয়ার পর ওরা এবার রাস্তা
পেরিয়ে গঙ্গার দিকে নামছিল। হাওয়া খাবে। কিশোর সুখময়কে সঙ্গে নিয়ে বাকিদের বলল
এগোতে। ওরা দুজন ডানদিকে অন্ধকারে হারিয়ে গেল।
সুহৃদ, মিহির আর লখন বালির ওপর বসে হাওয়া
খাচ্ছে – সামনে, আরেকটু নিচে নেমে মে’মাসের নদী – পিছন থেকে সুখময়ের আস্তে ডাক
শুনল “চলে আয়!”
ওরা উঠে গিয়ে আবার ঢুকল নিজেদের ঠেকে।
ঘরের দরজাটা আবজানো। কিন্তু ভিতরে আলো
জ্বলছেনা। তবে ভিতরের শব্দে স্পষ্ট ঠাহর হল একজন পুরূষ এবং নারীর সম্ভোগদৃশ্য। লখন
উত্তেজিত হয়ে হিসহিসিয়ে উঠল, “স্সালা … এই কিশোরটা ডোবাবে। এই ঘরটার মালিক আমি।
আমার একটা গুডউইল আছে এখানে। এ্যাই কিশোর…!”
ততক্ষণে কিশোরের হয়ে গেছে। হাসতে হাসতে উঠে
আসে, “রেপ কেস নয় রে শালা! পয়সা দিয়ে এনেছি, কড়ার করে! পাঁচজন, পারাপারি! হার্ডকোর
রাঁড় সালি, দেখতে খুকি হলে কী হবে! কে যাবি, যা!”
শেষ ছিল মিহির। উঠতে উঠতেই হাল্লা শুনতে
পেল। ঘরটা ঘিরে ধরেছে লোকজন। কয়েকজন দাবী করছে তারা মেয়েটির আত্মীয়স্বজন। মেয়েটি
তখনো ভিতরে অর্দ্ধ অচৈতন্য। ব্লাউজ খোলা, পুষ্ট বুকদুটো দুদিকে হেলে আছে। শাড়ি
ওঠানো, খোলা জংঘায় পাঁচটি পুরূষের বীর্য আর ইষৎ রক্ত চটচট করছে।
পরে কথা বলে মিহির জেনেছিল যে মেয়েটি যে
পরিবেশে সেখানে এধরণের ব্যবসায় নামা স্বাভাবিক বলে জানতো সে। তাই কিশোরের
প্রস্তাবে টাকার অংকটা শুনে সাতপাঁচ না বুঝে রাজি হয়ে গিয়েছিল। মালফাল খাওয়া হবে,
একটু টেপাটেপি, আদর…! পাঁচটি পুরূষকে লাগাতার শরীরে নেওয়া যে কত অমানুষিক ধকল সে
জানতোও না, আর হয়ত পারতোও না। ঠেকে এনে কিশোর আগে ওকে ভালো মত মদ গিলিয়ে মাতাল করে
নিয়েছিল।
মেয়েটি ওই অবস্থাতেই পেচ্ছাপ করে দিল। এবং
তাতেই বোধহয় অর্দ্ধচৈতন্যভাবটা কাটল।
উঠে শরীর ঢেকে বাইরে এল। সত্যি বলতে ওর
মাথায় কিচ্ছু ঢুকছিল না যা কী ঘটছে। শুধু ভীড়ের মধ্যে নিজের মা বাপকে দেখে ওদের
কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়ল।
ততক্ষণে সুহৃদ আর কিশোর কোনদিক দিয়ে কেটে
পড়তে গিয়েছিল, লোকেরা ধরে এনেছে। টাকার পরিমাণ বেড়েই চলেছে অথচ ফয়সালা হচ্ছেনা।
পুলিস চলে এলো। ঘটনাটা রেপকেসের রূপ নিতে থাকলো পুলিসের সুবিধে অনুযায়ী। ততক্ষণে
মিহিরের নেশা কাটতে শুরু করেছে। আলোয় মেয়েটিকে ভালো করে দেখতে লাগলো, কালো হলে কী
হবে, গা ভরা রূপ! শরীরের স্বাদ তো একটু আগেই পেয়েছে।
লখন আর সুখময় আলাদা করে ডীল করছিল পুলিসের
সাথে, হঠাৎ মেয়েটির পরিবারের কেউ চেঁচিয়ে বলে উঠল, “ওদের কেউ বিয়ে করে নিক! পয়সা
চাই না আমাদের! পয়সার ভিখিরি নই আমরা!”
ওদিকে আবার কয়েকজন মার দিতে চড়াও হল সুহৃদ
আর কিশোরের ওপর। এটাই বদলে দিল কেস। মারের মধ্যে হাত ছাড়িয়ে চকারমের ভিতর দিকে দৌড়
লাগাল তীরের মত। পিছন পিছন ছুট দিল মেয়েটির লোকজন। তাই দেখে পুলিসও দৌড়ল। সুখময়
ফিসফিসিয়ে বলল, “পালা! এটাই চান্স!” বলেই, লখনকে নিয়ে ছুট দিল রাজাপুলের দিকে। আর
মিহির! পা বাড়াবার আগেই অনুভব করল নরম দুটো হাত জড়িয়ে ধরেছে তাকে। জড়ানো কন্ঠস্বর
শুনল বুকের কাছে, “তুই যাস না!”
হাতদুটো ছাড়াবার চেষ্টা করতে করতেই ফিরে এল
মেয়েটির পরিবারের দুজন মহিলা। তারাই দুজনে মিলে পেটাতে শুরু করল মিহিরকে। একে একে
পুলিস আর বাকি সবাই ফিরে এল।
সে কি পালাতে পারত না? একবারও হাত জোড় করে
ক্ষমা ভিক্ষা করল না কেন? কেন, এমনকি এটুকুও বলল না যে ও একা দায়ী নয়? এখনও
প্রয়োজনে কুর্জির দিকে যেতে গঙ্গার ধারের ছোটো মন্দিরটা দেখে মনে হয় মিহিরের।
মারের চোটে সারা শরীরে যন্ত্রণা। চোখের আর ঠোঁটের পাশটা ফেটে রক্ত গড়াচ্ছে। দুবার
পড়ে গিয়ে ছেঁচড়ে গেছে হাঁটুদুটো। মন্দিরে যখন পৌঁছল ছোটো ভীড়টা তখন আশেপাশের
বাড়িঘর জেগে উঠেছে। অনেকেই এগিয়ে এসেছে তামাশা দেখতে। কেউ কি চেনে ওকে? চিনুক! আর
কিছু আসে যায় না। যা হবার তা যখন হবেই… হেঁট মাথাটা এতক্ষণে ওপরে তুলল। মানসিক
অবসন্নতায় নিজেকে ভবিতব্যের হাতে সঁপে দিল সম্পূর্ণভাবে।
যখন সিঁদুর পরাল মেয়েটিকে, তখন তাদের
দুজনেরই ভোল কিছুটা পাল্টেছে। তার জামাকাপড় ঝেড়ে ঝুড়ে, পাশের নার্সিংহোমে তার
ড্রেসিং করিয়ে ভদ্রস্থ করা হয়েছে। মেয়েটিকেও, চুলটুল আঁচড়ে একটা শাড়ি পরানো হয়েছে।
মিহিরের মন মড়ার মত শান্ত। এরপর বাড়ি যাবে কি সে? বাড়িতে একা মা। কী বলবে মাকে? জানাজানি
হলে মা…
যা হবার হবে। একটা জীবন মিহির তরফদারের,
গেল। মা তাড়িয়ে দেবে? দিক। বিষ খাবে? খাক। পাড়ায় ঢিঢি পড়বে, পড়ুক। লোকে ঢিল ছুঁড়বে
পিছন থেকে? ছুঁড়ুক। কাজের জায়গায় কী বলবে? বলে দেবে সত্যি কথা। তাহলে মাকে বলতে
পারবে না কেন?…মা তার গল্প বিশ্বাস না করলে মাকেও বলে দেবে সত্যি কথাটা।
মিহিরের দুই দাদা বাইরে থাকে। বলা নেই কওয়া
নেই, রাতভর বাড়ির বাইরে থাকা ছেলে ভোরবেলায় সোজা বৌ নিয়ে ঢুকছে, ভাবা যায়! তাই সারাদিন
ছিল লখনের বাড়ির কাছে হোটেলে। লখনও ওদের দেখে অবাক, “এটা কী করলি? আমি পালালাম
সুখময়টার জন্য। আর এসেই দ্যাখ্, তোকে ছাড়িয়ে আনার জন্য টাকার ব্যবস্থা করছিলাম! যাচ্ছিলাম
থানায়। ভাবছিলাম লক আপে আছিস তুই। চালান কাটার আগেই ছাড়িয়ে নেব!…
কী বোঝাবি মাসিমাকে? আর বাঁচবিই বা কীভাবে?”
মিহির চুপ।
-
আর ওর, ওই ফ্যামিলির লোকজন?
-
বলে দিয়েছি, ওরা আমার কেউ নয়।
নিজেদের মেয়ের ভাল চাও তো আমাদের সংসারের দিকে তাকাবেনা।
-
আর এ?
-
একেও বলে দিয়েছি।
-
কী?
-
আজ থেকে তুই আমার স্ত্রী।
ব্যাস্! নিজের পাস্ট ভুলে যা।
-
হুঁহ্! এত সহজ?
লখনই মেয়েটির জন্য দু’একটা ভালো শাড়ি,
ব্লাউজ কিনে দিল। প্রয়োজনে ওর নিজের পাড়ায় ভাড়াবাড়ি ঠিক করে দেওয়ার কথা দিল।
সন্ধ্যায় মায়ের উত্তেজনা কমাতে মিহিরকে
আরেকটি গল্প ফাঁদতে হল। সে গল্পে সে আরো বড় হিরো। মেয়েটি লগ্নভ্রষ্টা, মারফৎ -
বাংলা সিনেমা। চোখের, ঠোঁটের কাটার জন্য পড়ে যাওয়ার গল্প ফাঁদতে হল। মা ইষৎ
অবিশ্বাসের কাঁপা হাতে শাঁখ বাজালেন। বধু বরণ করলেন। আশেপাশের কয়েকজন যারা এল, কে
বিশ্বাস করল কে করল না, মিহির ভ্রুক্ষেপ করল না।
কিন্তু মিহিরের দুই দাদা একেবারেই বিশ্বাস
করল না। যেদিন এল সেদিন থেকেই খোঁজখবর নেওয়া শুরু করল। খোঁজখবর পেয়েও গেল। সালি
রাঁড়! তাও আবার এক্কেবারে নিচু জাতের!
মা হয়ত মরতেন না। দুই দাদার জ্বালানিতে মাও
মরলেন, মিহিরও পাড়া ছাড়ল।
বস্তুতঃ লোহানিপুরের এই বাড়িতেই প্রথম সুহাগরাত
সারল মিহির। তার আগে অব্দি তার নিজের সাথেই লড়াই চলছিল মাসখানেক। আলাদা শুত। কথা
প্রয়োজনে ছাড়া হতই না। দুই দাদার জ্বালানি তার পক্ষে আশীর্বাদ হল। মেয়েটিকে সত্যিই
নিজের স্ত্রীর মর্যাদায় দেখতে আরম্ভ করল মিহির। লখনের ঠিক করে দেওয়া এই বাড়িতে এসে
প্রথম রাতে মিহির বৌকে প্রথম প্রশ্ন করল, “তোর নামটাই তো জানলাম না এত দিনে! মাকে
তো রানি বলে দিয়েছিলাম। নাম কী?”
-
সুখিয়া।
-
ছাড় ওই নামটা। আজ থেকে তোর নাম
রানিই থাকুক।
… … … … … …
প্রথম কিছু দিন তো রানি বা সুখিয়ার বিশ্বাসই
হয়নি যে এটা কোনো নতুন জীবন। এটাও কোনো খেলা, তার মনে হত। তারপর যখন বিশ্বাস হতে
শুরু করল যে এটা সত্যিই একটা জীবন, পড়ালেখাজানা বাবুর সে ঘরনী এবং এটা তার সংসার
তখন তার মনে আসতে শুরু করল বাবুদের ঘরসংসার নামক ব্যাপারটার আনুষঙ্গিক, যেমন সে
বুঝে এসেছে এতদিন। বাড়তে শুরু করল তার খাঁই। তার দামী শাড়ি নেই কেন? তার গয়না নেই
কেন? তার এটা নেই কেন? ওটা নেই কেন?
কিছুটা মিহিরেরও মনে হল সত্যিই তো, তার বৌয়েরও
তো এসব পাওয়া উচিৎ! পার্টটাইম চাকরিতে কুলোয় না। কত সাহায্য চাইবে লখনের কাছ থেকে।
শুরু করল ধার করা। চাকরিটা ফুলটাইম হল, স্থায়ী হল। কোথায় রোজগার বাড়াতে কমবে ধার
করা, উল্টে আরো বেড়ে গেল। এখন তো সোফাও চাই, ফ্রিজও চাই। নতুন শাড়ি, গয়নাও চাই। অফিস
থেকে, তারপর বাজারের সুদখোরদের থেকে, তারপর ব্যাঙ্কের গ্রাহকদের কাছ থেকে, শুরু হল
পাওনাদারদের তাড়া। মাঝে মধ্যে মোড়ের মাথায় চড়চাপড়ও খেতে লাগল।
এসব সহ্য হত। তারপর একদিন কেউ বৌয়ের নামে একটা
অশ্রাব্য কটুক্তি করল। মাথাটা ঘুলিয়ে উঠল তার। মারপিট না করে হজম করে গেল অপমানটা।
কিন্তু পরের দিন প্রথম একটা ছোটো প্রতারণা করল সে, একজন গ্রাহকের সাথে। আর সেটা
বেড়ে চলল পরের দিন থেকে।
তার সাথেই বাড়ল তার মদ্যপান। মাঝে মধ্যে
দীর্ঘ অসুস্থতা। ফলে ছুটি। মাইনে বন্ধ।
এরই মধ্যে একের পর এক দুটো ছেলে হল। তাদের
প্রতিপালন। অনেক দেরিতে টের পেল শহরের বহু জায়গায় তার পরিচয় মদ্যপ, সর্বস্বান্ত এক
কর্জখোর এবং প্রতারক হিসেবে। অফিসে সবাই তাকে সন্দেহের চোখে দেখে। ম্যানেজার একদিন
ডেকে পাঠাল। মিহির গিয়ে দেখল ওদের ইউনিয়নের বড় নেতা বসে আছেন।
-
আপনি! কখন এলেন?
-
এসব কী বাধিয়ে বসে আছ?
-
কী?
-
তুমি পোস্টগ্র্যাজুএট। বোকা নও।
জান কিসের কথা বলছি। ইউনিয়নে তুমিও একটা ভাল পোস্ট হোল্ড কর। তোমার কিছু হলে কি
করে সামাল দেব? আর, করছই বা কেন এসব? টাকার দরকার হতেই পারে। তা’বলে ফ্রড!
-
আমি তো ওদের টাকা ফিরিয়ে দিচ্ছি
একটু একটু করে!
-
বাজে কথা বোলো না। অন্য কোথাও
থেকে নিয়ে ফেরাচ্ছ যেটা হয়ত কাল ধরা পড়বে।
ম্যানেজার বাধা দেয়।
-
এসব বোঝানোর স্টেজ পেরিয়ে গেছে
দাদা। মিহিরবাবুকে একসময় আমরাও দেখেছি। রেস্পেক্ট করতাম। কিন্তু, আমি তো
ম্যানেজার! জবাবদিহি করতে হবে। দু’দুটো কমপ্লেন এসে গেছে। ওপরতলায় চলে গেলে?
-
আর আসবে না স্যার। ও দুটো
পার্টিকে আমি বোঝাচ্ছি। ওরা ফেরৎ নিয়ে নেবে কমপ্লেন।
কিন্তু কেউ ফেরৎ নিল না। প্রথমে সাসপেন্ড হল
মিহির। সে অবস্থাতেও আবার কমপ্লেন। আরও প্রমাণ। শেষে চাকরি খোয়ালো। বন্ধুবান্ধব
বলতে যে কজন ছিল, এক লখন ছাড়া সবাই তাকে এড়িয়ে যেতে লাগল।
… … … … … …
আজ সন্ধ্যায়, উনুনের কাছে বসে রানি হতবাক।
হঠাৎ এতগুলো গয়না! গলার হার, হাতের দুগাছি রুলি, কানের দুল! মদ্যপানে আর রুগ্নতায়
হলদেটে ফোলা মুখ মিহিরের চোখের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল, “ফের লখনভৈয়ার কাছে হাত
পাতলি?”
গত কুড়ি বছর ধরে মিহিরের সবচেয়ে বড় বন্ধু
লখন। একমাত্র ওই ওদের দাম্পত্যটাকে সম্মান করে। অতীতের সাক্ষী হওয়া সত্ত্বেও
কক্ষণো তোলে না সেই রাতের কথা। আর মিহিরের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে আশঙ্কার মেঘ থাকা
সত্ত্বেও মিহিরকে সমীহ করে। যতদিন মিহিরের চাকরীটা ফুলটাইম, আর স্থায়ী হয়নি লখন
প্রতিমাসে সাহায্য করে গেছে। তাতে আর কারোর যে বিশেষ অংশ ছিল না একমাত্র কিছুটা
সুখময়ের ছাড়া, সেটা মিহির জানে। প্রথম দিকে যখন রানির অবিশ্বাস্য আর ছেলেখেলা মনে
হত ঘরসংসার তখন লখন রানিকেও বুঝিয়েছে দিনের পর দিন, “তোর স্বামী খুব ভালো লোক রে
রানি। তুই একটু বুঝেশুনে চললে ওকে বাঁচিয়ে রাখতে পারবি। নইলে ওও মরবে। আর তুই… তোর
দুই ছেলে…!”
আজও লখনই মাঝে মধ্যে সাহায্য করে। আজকাল
কখনো সখনো আসে। মিহিরের সাথে দু’এক গেলাস খায়। তার বেশিতে গেলে মানা করে, “মিহির!
কমাবার চেষ্টা কর। যা টাকা পেয়েছিস, সব শেষ করে দিচ্ছিস এভাবে। ছেলেদুটো দাঁড়ায়নি।
আর দাঁড়ালেও তাদের মাকে তারা দেখবে কিনা সন্দেহ আছে আমার। তোর স্ত্রী তুই ছাড়া
এক্কেবারে একা, মনে রাখিস!”
-
জিজ্ঞেস করিস লখনকে, এলে পর!
-
সে তো তোর শেখানো কথা বলবে। তুই
পেলি কোথায় এসব? আর আজ হঠাৎ, কিসের জন্য?
-
তুই পর না, পর, পর দেখি! আয় আমি
পরিয়ে দিই।
পরানো আর হয়না। গলার পিছনে হারের হুকদুটোকে
একসাথে করার জন্য রানির মুখটার কাছে আসতেই রানি মিহিরের বুকে মুখ গুঁজে ফুঁপিয়ে
কেঁদে ওঠে। মিহির জড়িয়ে ধরে রানিকে। উবু হয়ে বসতে আজকাল পেটে হাঁসফাঁস করতে থাকে।
তাই বসতে গিয়ে ধপ করে আধশোয়া হয়ে পড়ে মাটিতে আর রানি যেহেতু মোটাসোটা, নড়ে না -
তার শরীর থেকে মিহিরের হাতদুটো খসে যায়। সঙ্গে সঙ্গে গ্যাস বেরোয় শব্দ করে। হাসতে
থাকে মিহির।
-
জীবনটা বুঝতে বুঝতেই কেটে গেল
রানি - কেন, কিভাবে, কোথা থেকে কী হল! যেটুকু মনের তৃপ্তি বলে পেলাম, সেটুকুই
পেলাম। বুঝি না বুঝি, সেটুকুই ‘তেওহার’(উৎসব) করে বাঁচি ক’দিন! কী বলিস?
রানি বুঝল না মিহিরের কথাগুলো।
… … … … … …
মিহিরের মৃত্যু হলো কয়েকমাস
পরেই। তবে সিরোসিস পুরোটা হওয়ার আগে। হৃদযন্ত্রের গতিরোধে। কর্মক্ষেত্রের
সহকর্মীরা আগেই ওকে নিয়ে তিতিবিরক্ত ছিল। মিহিরের চাকরি যাওয়ার পরও অফিসে রোজ
পাওনাদারদের আসাযাওয়া।
তবু মিহিরের মৃত্যুর পর তারা
প্রথম মিহিরের এই লোহানিপুরের বাড়িতে এল। বৌয়ের সাথে সাক্ষাৎকারে তারা জানতে পারল
মহিলাটি নিরক্ষর। ছেলেদুটোর কেউ এখনও ম্যাট্রিকও পাশ করেনি। তবুও হয়ত সাফাই
কর্মচারীতে ঢোকানো যেত, কিন্তু বৌটিই বেঁকে বসল।
আসলে রানি আবার কিছুতেই সুখিয়া হতে পারছিল
না। মিহিরের শেষটাকার কিছুটা বেঁচেও ছিল ওর হাতে। একমাত্র লখনই রয়ে গেল ওর আর ওর
ছেলেদের পারিবারিক বন্ধু হিসেবে।
-
ভাবীজী, আমাকে ডেকেছিলেন? (খোলা
দরজা দিয়ে লখন ঢোকে) ভাবীজী! কোথায়? (কাউকে দেখতে না পেয়ে ভিতরের পার্টিশনটায়
ঢোকে, ঢুকেই দেখতে পায় রানি অদ্ভুতভাবে কাত হয়ে আছে মাটিতে, বিছানার পাশে) একি? কী
হয়েছে আপনার?
এই মুহুর্ত্তে পিঠের নিচে হাত লাগিয়ে রানিকে
উঠিয়ে বিছানায় শোয়ানো উচিৎ, কিন্তু লখন স্থানু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এই প্রথম তার মনে
পড়লো এতদিন পর যে এই মহিলা প্রথম যৌবনে তাদের ও হয়ত আরো অনেকের লালসার শিকার! না,
তার প্রতি কোনো ঘেন্নায় নয় বরং নিজেদের প্রতি ঘেন্নায় আর লজ্জায় তার হাতদুটো আড়ষ্ট
হয়ে গেল। “ছেলেদুটোই বা কোথায়? আমায় খবর দিয়ে নিজেরা নিজেদের ধান্ধায় চলে গেল? এরা
মা’কে দেখবে?”
অগত্যা নিজের দ্বিধাটা জোর খাটিয়ে কাটিয়ে
রানির দেহ কোলে তুলে নিলো লখন। বিছানায় শুইয়ে দিল।
-
কী হয়েছে আপনার?
-
আপনি সত্যি বলেছিলেন লখনভৈয়া। ও
না থাকলে আমার থাকারও কোনো মানে নেই। আমি চললাম। ছেলেদুটোকে দেখবেন।
-
কী যা তা বলছেন এসব? কী হয়েছে
কী? আমি ডাক্তার ডেকে আনছি।
-
(লখনের হাতটা চেপে ধরে রানি) আমি
কোনো বিষটিশ খাই নি। অত সাহস আমার নেই। কিন্তু আমার শরীর ভিতর থেকে বলছে আমি
যাচ্ছি। (হাতের একটা পুঁটলি লখনকে দেয়) এটা রাখুন। কয়েকমাস আগে আমাকে এনে দিয়েছিল।
অনেকটাকার গয়না। কোত্থেকে এনেছিল জানিনা। আমাকে পরিয়ে দিয়েছিল। আপনি যা ভালো বোঝেন
করবেন। চলি!
লখনকে হতবাক করে সত্যি সত্যি চোখের সামনে
শেষনিঃশ্বাস ফেলল রানি। কিছুক্ষণ পরে ডাক্তারকে সাথে নিয়ে ঢুকল দুই ছেলে। ডাক্তার অনেক
ভাবে দেখলেন। “নাঃ বিষজাতীয় কিছু খাওয়ার লক্ষণ তো পাচ্ছিনা। ম্যাসিভ সেরেব্রাল
অ্যাটাক মনে হচ্ছে! আগে কখনো কিছু কমপ্লেন ছিল? আছে, পুরোনো কাগজপত্র কিছু?”
No comments:
Post a Comment