Monday, June 27, 2022

ন্যায়মহল

তা তুমি বেশ ভালো করেই বুঝিয়ে দিচ্ছ সায়েব
কত গুমখুন চালিয়ে যাওয়ার চোরাকুঠরি, গলি 
ছড়িয়ে আছে বাহারি এই ন্যায়মহলের গড়ে,
সবাই ঘুরছে, জানছে না কেউ; ওই কে হল গায়েব!

চড়বড়িয়ে দু’পাক উড়ে ফিরে আসছে পাখি
টিকটিকিরা গম্বুজ ছেড়ে নামছে তরতরিয়ে
পিঁপড়েসারি ঢুকে যাচ্ছে কয়েকটি ফাটলে
এসব দিয়েই বুঝছে কেউ দেয়াল-থামের ফাঁকি!

আবার খোলা বাগানও আছে, ফুলে ঢাকা ঢিপি
মাগিবাজ এক ন্যায়পতির পাট্টি চলছে জবর
ফেরেন্ড আছে, তুমি আছো, দেওয়ানি লেনদেন
অনেকগুলো ফৌজদারির টাইট করতে ছিপি!

বাগান ছেড়ে খোলা মাঠ, জমিদারির শুরু
কোটপ্যান্টে ঘুরছে তোমার ন্যায়ঠ্যাঙাড়ের দল
জবর তোমার মহলখানায় বড় গন্ধ সায়েব,
রঙ করাবার সুযোগ পেলে ঘোল বানিও পুরু। 

২২.৬.২২



Friday, June 24, 2022

চাঁদ চুঁইছে কবিকন্ঠে

তাশা বাজছে, বাজছে জংলি হাতি –
চাঁদ চুঁইছে কবিকন্ঠে, 
                                ভালোবাসার শপথ,
উপড়ে ফেলবে চার্দিকের এই লুটের বেসাতি।

শপথছায়ে মা-পাখির ভীত বাচ্চাগুলো
দুর্যোগের রাতে মায়ের ডানার নিচে খেলে।
লেবুরঙা রোদে ওড়ে ঘুড়ির সাথে বালক,
ভোরের শরত ঘন্টি বাজায় চকচকে সাইকেলে।

শপথছায়ে ইতিহাসের পায়ের জুতো জাগে,
কালের যুদ্ধে হাসিল প্রাণের জীর্ণ নির্মোক, 
শেকল ভেঙে দেশের মেয়ে মুখর স্টেডিয়ামে
পৌঁছোতে চায়; 
                       বেসাতিও বদলে চলে ছক।

বয়সকালে আমাদেরও সখ্যযাপন ভাঙে, 
কে কোথায়? নিজের মত, চালিয়ে যাই লড়াই,
আলোয় বাড়ে চোখের আঁধার, আঁধারে নেই আলো,
শব্দে-সুরে খাদ ধরতে, গড়ি নতুন নেহাই।  

কবি এগোন, মগ্ন রাতে দেখেন দেশ, পৃথ্বী –
ধ্বংস, ধ্বংস .... প্রশ্ন করেন, এই হওয়ার ছিল?
আমরা গুছোই যুদ্ধরসদ – ভগত সিংএর বাণী,
ক্ষেতে পোড়া মজুর মেয়ে, ফসল-তারার মিলও।

তাশা বাজছে, জংলি হাতি বাজছে –
চাঁদ চুঁইছে কবিকন্ঠে:
                           পবিত্রতম ঘৃণায়
কলম তার মানুষখুনের শাসনগুলো দাগছে।

২৪.৬.২২



Thursday, June 23, 2022

বুলডোজার

তোদের মনু তোদের ধেনু তোরাই রাখ
আমি বরং রাখছি তোদের বুলডোজার।

মনু নিলে ডোমনি আমার ঘর ছাড়বে
ধেনুর মায়া ছেড়েই আছি কংসবধে

তোরা তোদের অস্ত্রেশস্ত্রে নেচে বেড়া
আমি আমার উজাড় মাঠে জমা করি

আখলাকের খাবার শোঁকা বুলডোজার
আসিফার লাশ খোবলানো বুলডোজার।

দেশ বলতে রইল আমার ত্রিনয়নে
আফরীনের ব্যথার শান্ত বুলডোজার।

১৪.৬.২২



 

নতুন চরে দুপুর

নতুন পুলে ট্রেন, বাস যাচ্ছে ওপর নিচে।
লঞ্চগুলো ধুঁয়ো ছাড়ছে মাটির খাড়াই ঘেঁষে।
নদীর বুকে নতুন চর, জলের নতুন বাঁক,
নিরুদ্দেশও দেশ গড়ছে অচিনপুরের রেশে।
 
চরে খাড়া চালায়, বলছে নতুন বৌয়ের হাসি,
তোমাদের বনভোজনের সাকিন আমার ঘর,
এখানে যে জন্ম নেবে আমার সোনামনি,
তার চোখে মেপে দেখব তোমাদের শহর।
 
স্বাচ্ছল্যের পৃথিবীটা ক্রমে ছোট হলেও
প্রতিদিনই বড় হচ্ছে রুজির পায়ে পায়ে!
ধ্বংস করছে পৃথিবী যে মুনফাবাজি, তার
দালালটিও হিসেব লিখছে ওই চালায় ছায়ে।

২২.৫.২২



  

 

অতিমারির মাশুল

সে যে আমার এত আপন বুঝিও নি।
পাতা দেখেই চিনব তেমন ওস্তাদ নই।
প্রথম যখন ফুল ধরল,
ভরে গেল মনটা তবু
আকাশ দেখে বুঝলাম না কোন ঋতু।
 
প্রশ্নে নিলাম অন্য কাউকে, কে ইনি?
চেনা একটা নাম পেলাম পুরোনো পাড়ার।
একটা আঁধার জানলা তার
মুখের পিছনে আরেক মুখ
কী আপশোষ, কেউ এতও আপন ছিল!
 
আজ যে এমন বন্ধু ডাকলে,
এমন করে ডেকেছিলে, জানলা দিয়ে?
 
নেই সে আর, খবর পেলাম, বলতে গিয়ে।

কিছু তারা থেকেই যাবে অন্ধকারে।
স্মৃতিও তো মহাকাশ, তার অপারে।

২৩.৫.২২



 

Wednesday, June 22, 2022

জলগন্ধে উন্মত্ত

প্রতিধ্বনিত দুপুরে, 
জলগন্ধে উন্মত্ত গন্ডারের মত –
একটাই তো জীবন! – 
নাহয় ভুল পাথর ফাটিয়ে খোয়াব!

যত নিঃশব্দ হচ্ছে দুপুর
বেড়ে যাচ্ছে প্রতিধ্বনি!
তপ্ত আকাশ
বাড়িয়ে তুলছে হিম, করোটির।

করূণ, হাস্যকর হলেও,
গলা থেকে মৃত্যুর একেকটি আঙুল
ছাড়াতে চেয়ে, ব্যর্থতায়  
লিখে যাব – আত্মশ্লেষে বেখাপ্পা পয়ার।
“কিরে বিদ্যুৎ! কেমন আছিস? 
এখনো চলছে লেখালিখি?”
“একশবার সালা! 
বন্ধ হয় নাকি?” 

বর্ষার নতুন স্রোত 
সারারাত ছটফটানি শেষে ঘুম আসার
সেই এক লহমায় ঠিক
ডুবিয়ে নেবে আমায় বসতগন্ধী জলে।
ওপরে পুরোনো পুলে,
ভাঙা বাসটা বাজবে শিশুদের হাল্লায়
আকাশভাঙা বৃষ্টির 
                   বিকেলটা বাজবে।



Tuesday, June 21, 2022

তলানির ভুগোল

নদী যখন শুকোতে থাকে
শুকোতে শুকোতে 
তলানিতে এসে ঠেকে
এপার থেকে ওপার 
মাঝে মধ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে 
পেরিয়ে দিব্যি যেতে
একটুও ভেজে না পা

বোঝা যায়, যাকে সমতল
বা ঈষৎ নতোদর সমতল ছাড়া
আর কিছু ভাবি নি,
আজ ঘাস, আগাছা, ফুল 
নাড়িয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে
কত হাজার ক্ষুদে ক্ষুদে
ঢিপির আড়ালে 
টিমটিমে জলস্রোত
জলাশয় হয়, বাড়ে …
তখন অনেক ছোট পশুর জন্য
ওগুলোই নদী 

এক আঁজলা জল তুলতে গেলে
মাটিও উঠে আসে কিঞ্চিৎ
বস্তুতঃ তখনই খেয়াল করি
কতগুলো ছোট ছোট 
ক্ষীণ ধীরগতি স্রোত ধরে
জল বাড়লে সেটা
নদীস্রোত হয়ে ওঠে
বেশি জলে
তলানির ওই 
ভুগোলটা খেয়াল থাকে না

অথচ বিজ্ঞান কিন্তু 
রাখতে বলে খেয়াল
রাখে, নইলে কি আর
আমাজনের নিচে
আরেকটি নদী পাওয়া যেত? 

মাঝি ও জেলেরাও তো 
খেয়াল রাখে
হাত ডুবিয়ে অথবা
এমনকি আকাশের সময়
বা হাওয়ার গন্ধে বোঝে
চোরাস্রোত বইছে, বাড়ছে
সেটা কোন চোরাস্রোত
তার দিশা কী
কাটাতে হলে
কোন দিকে ঘোরাতে হবে দাঁড়!

এসব কথা নদীর
গানে অবশ্য থাকে না।

২২.৬.২২



Sunday, June 19, 2022

আমাদের বাঙালিয়ানা

আমাদের বাঙালিয়ানা কোথাও মগহীর,
কোথাও ভোজপুরির ক্ষেতে, কেয়ারিতে, 
অঙ্গিকা-বজ্জিকা-মৈথিলির ফলনে জড়িয়ে  
সাথীফসলের চাষ – একই জল যায় গোড়ায়, 
একই রোদ পায় গাঙ্গেয় সমতলে এবং 
গন্ডকের, কোশির সাদামাটিতে সারাদিন।

কোথাও বাংলা হয় সুরজপুরিয়া – ট্রেনের
জেনেরালে সফর করে মজুরি খুঁজতে দিল্লী; 
একই মুড়িগুড়, চিড়েছোলা থাকে জিহবায়।
কখনো ঠেঁটা বাংলাটাই হিন্দি হয়ে রাগ দেখায়
সার্কেল অফিসে টেবিলে, জাতি-প্রমাণপত্র চায়;
এটাই, এটাই বাঙালিয়ানা আমাদের বিহারে।

বাংলা পড়তে চাওয়ার আকাঙ্ক্ষার বর্ণপরিচয়
পাতা মেলে অপটু মসলা-পোছা হাতে রান্নাঘরে,
শিশুহাতে সামুদায়িক হলঘরে কোন রোববার … 
আশা ও ক্ষোভ ওড়ে অশথের বেদিতে, মন্দিরে।  
একই সরকারের উপেক্ষা আমরা কিছু বেশি পাই 
সংখ্যালঘুতার প্রশাসনিক হিসেবী বেহিসেবে।

বড় শহরে আমরা নাহয় কিছু রঙচঙে উদযাপন-
টুদযাপন সেরে নিই সম্বৎসর; ছবিতে দেখেন। 

১৯.৬.২২



Saturday, June 18, 2022

অজিত সরকার

ভাবতাম হবে – পরিচয়, 
সৌজন্যবিনিময়। মুড়ির ফাঁকে কথায় কথায়
চটেমটে শুনিয়ে দেব অনেকদিনকার 
জমা বিরক্তি – এভাবে চলে? হল না।

মনে আছে অনুপম, বাইসিতে চাষির বৈঠকখানায়
তক্তপোষে পাহাড় করা মুড়ি, রাত এগারোটায় বসে খাচ্ছি?
অথবা খুঁজতে বেরিয়েছি অন্ধকারে, 
নওরতনে শৈশবের সেই বাড়িটা, পেঁপেগাছ …
যেখান থেকে বিকেলে দৌড়োতে দৌড়োতে 
ছ’বছর বয়সে যখন

পাক্কিতে পৌঁছোতাম, উনিও সেসময়
এগার বছরের, অন্য কোনো পাড়ায় উঠতি ওস্তাদ!
সেই পাক্কি, যার পিচগলা রোদের ঝিল্লিতে
স্বাধীনতার পরের দেশটার দিকে
এগিয়ে গিয়েছিল ঢোঁড়ই … 

ওটাই স্টাইল ছিল অজিতদার যেন স্বয়ম্ভূ –
জনতার প্রতিবাদে এগোতে এগোতে – 
হতে হতে সবর্ণ, শূদ্র, হিন্দু, মুসলমান,
জাতি, উপজাতি, বাঙালি, বিহারি …
এবং এই হওয়াটার বিশ্বাসে একদিন 
জেলাস্কুলের মাঠে সভায়

বলেছিলেন – জেলার আখ গিয়ে দিল্লী সরকারের 
বুকে বসে মাড়াই করবেন!

লাল ঝান্ডার মানুষ, চার বার বিধায়ক, মেনে নেবে 
লোচ্চা এস্টেট আর জমিদারিগুলোর দালালেরা? 
মেনে নেবে জমিতে ঝান্ডা গাড়া কৃষকদের?

মানুষতো একটা গুলিতে মরে যায়!
একশো সাতটা গুলি!
কী ভীষণ হিংস্র ভয় কায়েমী স্বার্থের, ভেবে দেখ!

১৪.৬.২১



কাজিপেটের পাহাড়গুলো

এত তারা আমার মুঠোয় নেই যে সবকটি 
নদীর সিঁড়িতে নামব।
এত হাওয়াও আমার মুঠোয় নেই যে সবকটি 
পর্বতশ্রেণিতে বাজব।
কাজিপেটের পাহাড়গুলো মাথায়
একটা ভাঙা ক্ল্যারিওনেটের ভিতরের অন্ধকার হয়ে জেগে থাকে!

শুধু চিৎ থাকতে চাই মাটিতে যেখান থেকে
চলতে থাকা জগদ্দলের পেটটা দেখা যায় –
সন্তান তস্য সন্তানের সাথে বুড়ো হয়ে চলার চোখে;
সাদাটে, একপোঁচে চিরে দেওয়ার মত তবু পারছি না …
দমবন্ধ হয়ে আসে।
টিনের বদলে প্লাস্টিক, ইদানিং থার্মোকলের ভাঙা টুকরোগুলো
ছায়া দেয়, জল, শীত কিছুটা আটকায়। 

পৃথিবী অবশ্যই এক ছোট্ট গ্রহ, সবুজ, দ্যুতিময়!
কিন্তু আগে সে ক্রমাগত প্রসার, একটি নতুন দেশ প্রতিদিন,
নতুন ভাষা, সংহতি, পতাকা ও মাতৃত্বের
এক ভিন্ন অন্বয়।
সিওয়ানের দর্জি গায় ময়দানে পাটনার
বিশহাজার মাথা থেকে একটু উঁচুতে কাঁধ তুলে …
অথবা কাপড়ে দেয় ফোঁড়, জেলাশহরের
ছোট্ট দোকানে বসে টুলে,
প্রতিবাদ-সমাবেশের জনপ্রিয় গায়ক।
এদেশের দিনটা আজ অনেক দেশের,
অনেক ব্যথার শুশ্রূষায় এদেশের আগামিকাল, 
যোগাবে সংহারক। 
এদেশেরই আমরা কবিকুল;
দেশটা সুন্দর কেননা দ্বন্দ্বসঙ্কুল।   

৯.১২.১৯৯১



Thursday, June 16, 2022

কবিতায় ইস্পাত

কবিতায় ইস্পাতটা ঠিক থাকে কোথায়?
যেমন দেশান্তরী পাখি ও মহাসাগর পেরুনো মাছেদের
মগজে থাকে মেরুনির্দেশী চুম্বক
যেমন আমাদের শরীরে বিভিন্ন ধাতু এক এক পরমাণু করে
প্রোটিনের কোটরে বাহিত পৌঁছোয় যেখানে প্রয়োজন
কবিতায় কিভাবে ঢোকে ইস্পাত কিভাবে
জায়গা মত পৌঁছে লাফিয়ে নেমে আশ্বাস জানায়
হয়ত প্রোটিনধর্মী কোনো বাহক শব্দকে,
"হেই ওস্তাদ, এসে গেছি, বন্ধ করো ইঞ্জিন!"
ইঞ্জিন বন্ধ হলে, ঝাঁপ দিয়ে বুনো ঝোপে নিজের
ডাগ-আউটে ঢুকলে ইস্পাত
দুলে ওঠে না কবিতাটা? লেখার সময়?
নড়ে যায় না ভালোবাসার মুখ?
বালিতে গলুইয়ের ঘষায়?
নড়ে নিশ্চয়ই!
টের পায় না কবি
ইচ্ছে মত তো আর ইস্পাত ঢোকানো যায় না!
আদিগন্ত ভালোবাসার একটি নিঃশ্বাসেই তো সেটা
হয় থাকে নয়ত থাকে না!

১৭.৬.২২

[ছোট্ট ইতিহাস - চার-পাঁচ বছর পর ল্যাপটপ বা ট্যাব ছেড়ে হাতে কলম ধরে কাগজে লেখা]



Saturday, June 11, 2022

প্রথম বৃষ্টি

কখন যেন বৃষ্টি এল
মাটি আমায় জন্ম দিচ্ছে 
গন্ধে টের পেলাম।

বাষ্পচূর্ণে হাত বাড়িয়ে
জলের ফোঁটা সুদ্ধু তাকে
জাপটে নিলাম কোলে।

আমি আমার স্বচ্ছ মুখ
আলতো করে চুমে পেলাম
স্বপ্ন ধরিত্রীর।

আবার তাকে মিশিয়ে দিয়ে
পাগলপারা বৃষ্টিগন্ধে,
হারিয়ে গেলাম দিনে। 

বেজে উঠুক চরাচরে
অক্ষৌহিণী জলপ্রহার
ঝরুক ঋতুর ক্ষোভ।

১২.৬.২২ 




Thursday, June 9, 2022

জন্ম নেওয়ার শেষ নেই

কলমা পড়িনি  
কোরাণের আয়ত ঘাঁটিনি, 
কিন্তু কলিমের বৌএর হাতের
অন্ন খেয়েছি, ঘুমিয়েছি
তেগ আলির ঘরে
জহিরের বোনেদের সাথে
ঈদের চাঁদ খুঁজেছি আকাশে
এমনকি বৌ যখন
মাজারের চাদরে গুঁজেছে
নাম লেখা কাগজ, আমি চাদরটা 
আরেকটু তুলে দেখেছি,
ব্যথার গোপন দুনিয়া … 
তোমরা আমার 
মুসলমান হওয়া আটকাবে?

কী দুর্ভাগ্য তোমাদের
এক জীবনে এক
হিন্দু ছাড়া কিছু 
হয়ে উঠতে পারলে না।
একটু বৌদ্ধ হয়ে দেখতে!
জৈনি হয়ে! শিখ হয়ে?
না, 
গুরুদ্বারায় ভয়ে
মাথা ঠেকিয়েছ বোলো না
জন্ম নিয়েছ? 
জন্ম কাকে বলে ভেবেছ?
জন্ম নিতে হয় –
সব ধর্মে জন্ম নেওয়া যায়
তার মানুষটার
খোঁজে লাগিয়ে কাঁধ –
ধর্ম তো মানুষেরই খোঁজ,
কাজেকর্মে,
আত্মত্যাগে তার নির্মাণ,
একেক যুগে, একেক জগতে!

ক্রিশ্চান হব, ইহুদি হব …
জন্ম নেওয়ার 
কোনো শেষ আছে নাকি?
এমনকি নাস্তিকও হতে গেলে
আশ্রমের
সেবায়েতদের আদেশে
জল আনতে হয় নদীর …
গরম খিচুড়ি ঢেলে হাঁড়িতে
পাতাচাপা দিয়ে
পুঁততে হয় মাটির ভিতর,
খেতে দেরি আছে বলে। 
আমি দর্শক নই শৌখিন
আমিই ভারতপর্ব,
কবীরের খঞ্জনী আছে হাতে।
এতেই তো বাজে তাল,
শোষণের বিরুদ্ধে গাই সমবেত
যুদ্ধসঙ্গীত।

১০.৬.২২



Wednesday, June 8, 2022

জোড়

ধরে নাও বাঁচাটা কাঁচ।
ভেঙে পড়তে পারি
অবস্থার ফেরে
মচকাবো না স্থির করে
ভেঙে যেতেও পারি
প্রাণঘাতী আঘাতে,
কিন্তু কিভাবে হবে সেটা
কয় টুকরোয় এবং
কেমন ধরণের
হবে টুকরোগুলো
ভেঙে পড়ার বা যাওয়ার
ঠিক করা যায় কি?
ভাঙন তো ভাঙনই, ধ্বংস।
 
তবু যদি জুড়তে পাই নিজেকে
আদৌ যদি সময় পাই
কখনো,
খাপে খাপে জোড়া
লাগি না কিছুতেই।
সবচে ভাল কথা
যে ফাটলগুলো রয়ে যায়
বেখাপ্পা জোড়ের ফাঁকে ফাঁকে
তাতে বাঁধন হয়ে ঢোকে
তীব্র রোদের কিরণ
জঙ্গলের আঁধার শিষ
জলের খলবলে তোড়
শিশুর বাড়ানো আঙুল
আর দেখতে দেখতে তারা
একে অন্যকে এবং
পুরো বাঁচাটা জড়িয়ে ধরে
আষ্টেপৃষ্ঠে।
জোড়াতালি শরীর মন
আশ্চর্য মহীরুহ হয়ে ওঠে।

৬.৬.২২



 

 

স্মৃতিগরল

তুমি কি সত্যি সারাটা রাত
ঘুমিয়েছিলে?
টের পাওনি আমার একা
এঘর ওঘর, বটের ঝুরি,
ভাঙ্গা মন্দির পাশ কাটিয়ে
নদীর কাছে পৌঁছে একটু
হাত ডোবানোর চেষ্টা করা,
একটু চোখেমুখে দিতে
গাঢ় সবুজ ঠান্ডা জল
নামতে নামতে চিনতে পারা
এ তো আমার শহরটারই
কত ভুস্তর সিঁড়ির মত,
সিঁড়ির ওপর তুমি বসে
ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে আছ
আমার দিকে, মৃদু হাসছ
মাঝরাতের এই পাগলামিতে,
জন্ম-জোড়া হাসিমুখে
পানপাত্রে এগিয়ে দিলে
ভালোবাসার স্মৃতিগরল
তুমি কি সত্যি সারাটা রাত
ঘুমিয়েছিলে?
নাকি আমায় খুঁজতে খুঁজতে
পর্দা, নুপুর, মৃতভ্রুণ আর
গানের পান্ডুলিপি ঠেলে
পৌঁছেছিলে আস্তাবলে?
হাতে ছিল বাঁকা কিরীচ?

৬.৬.২২



ফিল্মী

সব রাজত্ব একটি পরিচ্ছন্ন ইতিহাস চায়
যে সেটি রাজার ঔরসে রাণীর গর্ভজাত।
জারজ নয়, অবৈধও নয় এবং বংশানুক্রমে
এভাবেই রক্ষিত তার রক্তের বিশুদ্ধতা।
 
আবার সব রাজত্ব একটি গল্পও চায়
রোমাঞ্চকর, যাতে বংশ রক্ষা পায় তার
কোনো দাসী বা ভৃত্যের ঘরে গোপনে।
প্রশ্নঃ গল্পে বাঁচে ইতিহাস না বিপরীত?
 
ইতিমধ্যে অভিসারী ছায়ারা প্রায় রোজই
রাজ-ঘরে, রাণী-ঘরে, সন্ততির ঘরে ঢোকে।
সিঁড়ির দিকে তাকিয়ে রাজত্ব দেখে হাপিশ
তার তরোয়াল; কামানের মুখ গেছে ঘুরে।
 
ঘাসে মুখের রক্ত তুলে গর্জায়, শালা পুরো
সভ্যতাই জারজ, ঔরসে, গর্ভে হেরফের!

৬.৬.২২

 


কম. এনকেপি

বন্ধুত্বের রগড়গুলো এগোত এভাবেই – 
– কী প্রসাদজি? টেহটার মাছ কবে খাওয়াবেন?
– আসুন একদিন! ওখানেই রাখুন মিটিং! 
    খাওয়ানো কোন কথা নাকি? যেদিন বলবেন!

বাজারে কদমছাওয়া মোড় থেকে গলি
ভিতরে ঢুকে যায়, আধতৈরি বাড়ির ছাতে বসি।
বৈঠক এজেন্ডা ধরে। তবে আগে চা;
সুগন্ধে টের পাই নিচে সন্তানদের নিয়ে তাঁর স্ত্রী, 

নানা সুখাদ্য একে একে পাঠাতে ব্যস্ত! …
– যাঃ, মাছেই ফাঁকি দিলেন, মাংস-ডিমের আড়ালে!
– হবে, বড় মাছ উঠুক বাজারে, শেষ নাকি? 
কখন যেন রোদ ম্লান হয়, দেখি অদূরে সিগন্যালে

আমাদের ট্রেনগুলোর সময় হয়ে গেছে।
মাছ বেচা ছেলেরা বাকি মাছ ফিরিয়ে দিচ্ছে জলে।

৮.৬.২২





Tuesday, June 7, 2022

হল্ট

ওফ্‌! বিরক্ত করে দিয়েছে এই আভাসী জগৎ।
জানি, এভাবেই সার্বভৌম হয় নতুন।
উন্নয়ন, প্রযুক্তি এসব অমোঘ –
কথাগুলো ব্যবহার করি আমিও।

তবে আগে এই রোববার,
সওয়ারি গাড়িতে চড়ে পরের
হল্টটায় নামবো।

হল্টটা তো আরো নতুন, তৈরি হল
ওই আভাসি দুনিয়া জেঁকে বসার
অনেক পরে, বলতে ওই
হোয়াটস্যাপ গ্রুপটুপও চালিয়ে...

লড়ে, কাঠখড় পুড়িয়ে,
সামাজিক বুদ্ধি ও স্থানীয় নেতার 
নেতাগিরি তোয়াজ করে
ট্রেন দাঁড়াতে বাধ্য করল বসতের মানুষেরা।

প্ল্যাটফর্মও ঠিক তৈরি হয়নি;
মাটির রাস্তা এঁকে বেঁকে গিয়ে হারিয়েছে।

হাঁক দেব।
ভূলে যাবো যে বহুদিন দেখা হয়নি।
সেও ভুলবে, ওই আভাসি দুনিয়ারই
যন্তরটা কানে লাগিয়ে বেরুতে বেরুতে।

“সাবধানে আসবেন!
বৃষ্টিতে পিছল হয়ে আছে উঠোনটা।”
পিছল উঠোনের আছাড় সামলাতে সামলাতে
গল্প শুনবো নতুন বসত গড়া
এবং তাতে হল্ট বসানো মানুষদের সাতকাহন।


ব্যাঙ্গালোর
১৬.৭.২০


Monday, June 6, 2022

সোমেনের মৃত্যু

ঢাকায় শীত কেমন পড়ে?
মনে হয় একটা হাফ সোয়েটারে মাফলারে
কাজ চলে যেত সোমেনের – 
নিশ্চিত কয়েকটি ঠেকে তো যাওয়া রোজকার –
লেখকসঙ্ঘ, রেলকর্মী ইউনিয়ন, বিপ্লবী পাঠচক্র,
তাছাড়া চাকরির খোঁজ, হাটবাজার, লেখালিখি,
মেডিক্যাল পড়ার তো আর কোনো গল্প নেই তখন …
ঘরের কোণে, খাতায় শব্দ হতে থাকা জীবনগুলোর
কোনোটায় বসন্ত, শীত, গ্রীষ্ম, কোনোটায় বর্ষা ঢুকলেও
ঢাকার রাস্তায় বসন্ত কোন গাছে দেখা যেত প্রথম
আমি জানি না।

তখনো গান্ধিজি ডাক দেন নি ‘ভারত ছাড়’
কিন্তু মস্কোর সীমায়, দশ লক্ষ মৃতদেহ থেকে উঠে
প্রথম ঘুঁষিতে হিটলারের নাক ফাটিয়েছিল লালসেনা …
আটই মার্চের বিকেলে রোদে
সশস্ত্র ঘাতকেরা দাঁড়িয়েছিল এক তরুণ লেখকের প্রতীক্ষায়
যেমন পাঁচ বছর আগে এক কবির জন্য স্পেনীয় গ্রানাডায়; 
সে তো তবু একা ছিল, রক্তের সবুজ রহস্যের গায়ক,
সোমেন মিছিলকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে আসছিল … 

সোমেনের দিকে তাকাও,
সোমেনের মৃত্যুর দিকে তাকাও,
ঘাতকদের জিঘাংসার দিকে, 
শরীরের কাটা খন্ডগুলোর দিকে তাকাও
যেগুলো ছড়িয়ে পড়েছিল রাস্তার কাঁকরে, ঝোপঝাড়ে …

মৃত্যুই প্রমাণ করে আজ যাকে তিন দেশে পাই সে মৃত্যুহীন জনতার
চৈতন্য কত সরব ছিল তার দিনযাপনে –
কত স্পষ্ট স্বপ্ন, কোমসোমোলের স্বেচ্ছাশ্রমিকের মত
দেখত তার সুকুমার 
মৃত্যুই প্রমাণ করে বেয়াল্লিশে বাংলার ফাল্গুন
কতটা পলাশে ফুটছিল কতটা গুটিবসন্তের পূঁজভরা ফোড়ায়
সাতচল্লিশে বাংলাভাগে তার দ্বিতীয় হত্যায় আমরা চিনেছিলাম,
বাংলার চিরতারুণ্যের প্রথম লালতারা! 

৭.৬.২২ 



এই ঠেকটাতে লাহিড়ী, তোমায় ধরব

যে কয়েক হাজার বাঙালির বাচ্চা এই শহরে অথবা
খন্ডিত বিহারের অন্য সব শহরে জনপদে
মাঝেমধ্যে ক্ষুদ্রাংশে পুজোয়, সমিতির বার্ষিক সভায়
বাঙালির অনৈক্যে অন্ধত্বে হয়ে মূর্তিমান চ্যাঁচামেচি
জমে কিম্বা দমে
হচ্ছি ভাকপা, মাকপা, ভাজপা, মালে, কংগ্রেস, রাজদ
কিংবা নির্ভেজাল বদ

কী জানি কেন দেখছি না বাঙালি বাংলা ভুলে গেলেও
বাঙালিয়ানা বাড়ছে গলিতে, চৌরাস্তায়
সন্ধ্যার আঁধারে গাছতলায়;
পিছনে প্রেমচন্দ রঙ্গশালায় চলছে ইটিভির শুটিং
সামনে গেটের বাইরে লেবু চা – 
এই ঠেকটাতে লাহিড়ী,
তোমায় ধরব বাড়ি ফেরার পথে একদিন
দেখাব চমকপ্রদ ভাষায়ন
সৈদপুর, চাঁইটোলা, রামপুর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে বেরিয়ে এসে
বিস্মৃত পুকুরগন্ধী পাতিহাঁস, রোঁয়াওঠা বাচ্চা সমেত
মগহীতে নির্ভেজাল বাংলা বলছে

চা’ওলা চশমা খুলছে বাংলায়
ওষুধ-দোকানী মেয়েটির
চাউনি নির্লিপ্ত হচ্ছে বাংলায় …
কলকাতার বাঙালিও তো বাংলায় বলছে হিন্দি
ফিলিমে দেখ না?




Sunday, June 5, 2022

ভারতপথ

ভারতপথ বাড়িরই রাস্তা দোস্ত!
তবে, সোজা পথটা নয়,
জমজমাট বাজারও নেই,
কম লোকেই যায়।
 
অনেক পাড়া, ঘিঞ্জি হয়ে,
একটু হয়ত ইচ্ছে করেই
হেথা হোথা থামতে থামতে
জটলা ঘুরে যায়।
 
অনেক জিনিষ দেওয়ার থাকে
পিসির বাড়ি, মাসির বাড়ি
অনেক হিসেব দেওয়ার থাকে
হাড়কঞ্জুষ দিদার বাড়ি
দোকানঘরের মেয়েটাকে
খেলে ফেরা ছেলেটাকে
কেমন আছিস না বলে কি
এমনি যাওয়া যায়?
 
সবার প্রিয়, সবার কাজের,
যে সোনাটার ঘরের খেয়ে
বা না খেয়ে বনের মোষ
তাড়াতে সাধ যায়।
 
আটকা পড়ে চায়ের ঠেকে
বন্ধুসঙ্গে চর্চা সেরে
কালকের কাজ, চলার ছক,
সারা দেশের গ্রামশহরে
ভারতপথের নকশাগুলো
দ্রুত চলার ছায়ায় গলির
সাবানজল পেরিয়ে ঢেউ
তিন সাগরে যায়
 
ভারতপথটা বাড়িরই এক পথ!
ফেরার ছলে ঢেউয়ের সঙ্গত!
 
৬.৬.২২
 
আশঙ্কা তো প্রতিটি দিন!
সাঁজোয়া হোক, ফতোয়া হোক,
কম ভুগেছে মানুষজন?
তাই রাখতে হাওয়ায় চোখ
 


Saturday, June 4, 2022

বেমক্কা সবুজ

ইঁটপাঁজা, জংলা ঘাস, বর্ষাজলে সাপ
মাঝে অবশিষ্ট দুটো পোড়ো ঘর –
লগ্নীর ঝামেলা মিটলে ভাঙবে।
ততদিন এ জমির 
পাহারাদারের মেয়েটির মনে কষ্ট,
“একটুও পদের যদি হত! নোনাঘর, ভুতুড়ে উঠোন!”

মেয়েটি, বোঝা যায় লড়াকু, কোনো শহরে 
স্বপ্নকাজলে কাঁচমহলে হাঁটবে কাজে চৌখস।
সঙ্গীও, নিজের মত, আশা করি জোটাবে। 

কোনোদিন কোনো প্রশ্নের অমোঘ জেরবারে
এই জংলা ঘাস কি খিলখিলিয়ে উঠবে বেমক্কা সবুজ?
অন্যায় বশ্যতার অস্বীকার
 ধরে রাখবে কি একগোছা হেলে সাপ?
হবে কি চোখ, মায়ের গন্ধ ছড়ানো দুটো পোড়ো ঘর?
কাদাসুরকি উপচে উঠবে পায়ের আঙুলের ফাঁকে, যেন জারক?

দিনযাপনে রক্তের সে হিমশীতল প্রয়োজন 
ভরসা রাখি, মেটাবে তার এই নোনাঘর, ভুতুড়ে উঠোন।



পথসভায় বৃষ্টি

আকাশ ভরে কালো মেঘ,
দিগন্ত ছেয়ে আসছে তুমুল বৃষ্টি –
পথসভার কর্মসূচী 
ছেঁটে নিচ্ছি কানে কানে;
ঠিক শেষের স্লোগানগুলোয়
নামল তোড়, যেন প্রথম সৃষ্টির, …

হেসে ভাবি, “আরে, এসব 
ঘরণীটির কারসাজি, 
দেশের ঋতুর স্পন্দে
তার আসার শব্দ -   
ঠাট্টা, ‘আরো থাক একা!
পৃথ্বী হয়ে করছি কেমন জব্দ!’
মানছি বঁধু! আসুক বিকেল, 
যেদিন সাথেই থাকব।
পথসভায়, 
আমরা তোমরা, কাঁধে কাঁধ!
আঃ, সে মেঘ সোনায় মুড়ে রাখব!”