Wednesday, September 1, 2021

ছন্দহারা

বাসন্তী দেবী নিজেকে শান্ত ভাবে নতুন পরিস্থিতির সাথে খাপ খাইয়ে নিয়েছেন।
তাবান, রুপলি আর জীবক সাতসকালে স্কুলে যায়। তার আগে তাদের টিভির প্রোগ্রাম দেখা হয়ে যায় এক প্রস্থ। গত রাতে দেখা কোনো ফিল্ম বা সিরিয়ালের গল্পও চলতে থাকে। ওদের বেরোবার একটু পরেই তিনিও বেরিয়ে পড়েন ডিউটিতে। তিনজনেই একটু আগে পরে বিকেলে স্কুল থেকে ফেরে। খাওয়া সেরে একটু টাস্ক নিয়ে বসে। টিভি চলতে থাকে। তখন অবশ্য তিনি বাড়িতে নেই। কারখানায়। যখন ফেরেন, দেখেন ওদের পড়াশুনোও চলছে, টিভিও চলছে। রাতে বৌয়ের, ছেলের, নাতিদের গল্পের মধ্যেও এসে পড়ে টিভি, সিনেমা, সিরিয়াল, বিজ্ঞাপন। বাসন্তী দেবীও বেশ সহজে তাতে শামিল হয়ে যান। তাঁর নিজেরই অবাক লাগে। বাসন্তী ঘোষ নামে একটি মেয়ে যখন পূর্ণিয়ায় স্কুলে পড়ত তখন দুনিয়াটা কেমন ছিল?
মাঝে মাঝে ঘরের পিছনে ডোবাটার কিনারে গজানো পুটুসের গন্ধ ভেসে আসে। বাসন্তী দেবীর পূর্ণিয়ার কথা মনে পড়ে যায়। কাটিহার স্টেশনের গরম ভাত আর গঙ্গার বুকে স্টীমারের সার্চলাইটও চোখের সামনে ভাসে। শিশমের সারি। জৈষ্ঠের লিচুবাগান। স্কুলের মোড়ে ঘুগনিওয়ালা। হালদার বাড়ির গ্রামোফোন আর পিছনের আমবাগানে চড়ুইভাতি। পঁচিশে বৈশাখ।

আটচল্লিশ বছরের জীবনে ঝড়ঝাপটা কিছু কম যায়নি। শৈশব, কৈশোরে মোটামুটি স্বচ্ছ্বলতা ছিল। বৈবাহিক জীবনে এল দারিদ্র্য। আরো অনেক কিছু। ছেলে দুটো একটু বড় হওয়ার পর যে পাশে ভেষজ ওষুধের কারখানার কাজটা ধরেছিলেন, এখনো চালিয়ে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে স্বামী মারা গেছেন। আশ্চর্য! ব্যাপারটা যত কষ্টেরই হোক, দিনের পর দিন মদ গিলে এত কম বয়সে যে মানুষটা চলে গেল, তার ফলটা কিন্তু পুরোপুরি খারাপ হল না। বাসন্তী দেবী একা ও অসহায় হয়ে পড়লেন। লোকের খারাপ নজর, দয়া-করূণার নামে খারাপ ছোঁওয়া তো এই বয়সেও সহ্য করতে হয়, তখন তো কথাই নেই। এমনকি উনি নিজেও ভাবতে শুরু করেছিলেন যে সত্যিই যদি ভালো কোনো বয়স্ক মানুষ সম্মানের সাথে প্রস্তাব দেয়, উনি বিয়ে করে ফেলবেন আবার। যার যা বলার হবে, বলবে। কিন্তু ছেলেদুটোই বদলে দিল ভাবনাচিন্তা। বাপ বেঁচে থাকার সময় যারা বয়ে যেতে শুরু করেছিল, বাবার শরীর পুড়িয়ে এসে তারা এক্কেবারে অন্য মানুষ হয়ে গেল। শান্ত, বুঝদার, মায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, কিছু কাজকর্মের যোগাড়ে তৎপর। বড় ছেলেটাকে তবু জোর করে তিনি ম্যাট্রিকের পরীক্ষাটা দেওয়ালেন। পাশ করে ও কাজ ধরল। ছোট ভাইটাকে লেখাপড়া করাবার দায়িত্ব নিল কাঁধে।  

এখন স্বচ্ছলতা না এলেও মোটামুটি একটা সুরক্ষা এসেছে। এখনো ভাড়াবাড়িতেই। কারখানার সময়টুকু বাদে নাতিপুতিদের সাথে শান্তি ও নির্ঝঞ্ঝাটেই সকাল সন্ধ্যাগুলো কাটে।
ক্রমে ক্রমে দিনকাল ভালো না খারাপ হচ্ছে তিনি ঠিক বুঝে উঠতে পারেন না। মারদাঙ্গা বেড়েছে ঠিকই অনেক বেড়েছে। জটিল হয়েছে দিনযাপন। তবু তারই মধ্যে নিজের ছেলেমেয়েদের তো তিনি মানুষ করতে পেরেছেন। আর আজকালকার বাচ্চারা অনেককিছু বেশি জানে তাঁদের সময় থেকে। কত পড়াশুনোর চাপ। কম্পিউটার, জেনারেল নলেজ।
বাসন্তী দেবী বছর পেরোয় জানতেন। নতুন বছর আসে। হ্যাপি নিউ ইয়ার। বিহারে তো বাংলা নববর্ষের কথা আলাদা করে ভাবতে হয়, মনে রাখতে হয়। তাও মনে রেখেছেন প্রতি বছর। কারখানায় ছুটি পাননি কোনো বার, এক রোববার না হলে। তবু ভোরবেলা সময় করে দ্বারভাঙ্গা কালিবাড়িতে গিয়ে পুজো দিয়েছেন। ছেলেদের, পরে বড় ছেলের বৌকে, তারপর নাতিনাতনিদের মিষ্টি খাইয়েছেন প্রসাদের, বাংলা নববর্ষের মিষ্টি বলে। ছেলেরা বাবার কাছেই শিখেছিল। বড় ছেলের বৌও নিজের বাড়িতে বাবা, মায়ের কাছে শিখেছে। নাতিনাতনিরা ওদের দেখে শিখেছে বাংলা হ্যাপি নিউ ইয়ারে ঠাকুমাকে প্রণাম করতে হয়। কিন্তু কখনও ভাবেননি, একদিন শতাব্দীও পেরোতে হবে। এই নতুন জিনিষ, টিভি আসাতে বসে দেখতে পেলেন সারা পৃথিবী কেমন আনন্দের সাথে স্বাগত জানাচ্ছে নতুন শতাব্দীকে।    
নিজের রক্তঘাম পুড়িয়ে ছেলেদের স্বাচ্ছন্দ্যময় জীবন গড়তে সক্ষম করে তুলেছেন এই সাফল্যবোধটাই তাঁকে সাহায্য করে খুব সহজে পরিস্থিতির সাথে মানিয়ে নিতে। অথবা তার আগের কোনঠাসা সংগ্রামের আত্মবিশ্বাসটা? ওষুধের কারখানায় বোতল সাজাতে সাজাতে বাসন্তী দেবী অনুভব করেন গত আঠেরো বছরে তাঁর প্রতি সহকর্মীদের দরদের ভাবটা সম্ভ্রমে বদলে গেছে।

আজ সকালে তাঁর সাথে একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটল। গলির কাদার পাশ কাটিয়ে সন্তর্পণে কিনারে পা রেখে রেখে ফিরছিলেন একাদশীর ফলমূল কিনে। এই কাজটা ছেলেদের বললে করে না এমন নয়। তবু এই অছিলায় একটু বাজার ঘুরে আসতে তাঁর ভালো লাগে। বিশেষ করে দিনটা যদি ছুটির, মানে রোববার হয়।
হঠাৎ সামনে থেকে মাথা নিচু করে আসতে থাকা এক জীর্ণ শীর্ণ প্রৌঢ় পা পিছলে মুখ থুবড়ে পড়ল কাদায়। এত কাছে তার পাটা পিছলোল যে স্বাভাবিক ভাবে বাসন্তী দেবীর হাতটা এগিয়ে গেল। কাঁধটা ধরেও ফেলেছিলেন কিন্তু ফস্কে গেল। আশেপাশের দুচারজন ধরাধরি করে লোকটিকে তুলে পাশের ছোটো শিবমন্দিরটার রোয়াকে বসাল। রোয়াকটা এক্ষুণি মোছা। আবার কাদাকাদা হয়ে যাচ্ছে দেখে পূজারি ঈষৎ অসন্তুষ্ট হলেও আপাততঃ চুপ মেরে গেল। লোকটির সর্বাঙ্গ কাদায় লেপটে গেছে। কপালটা ইঁটের কোনায় লেগে ভালো করে রক্ত পড়ছে। অথচ লোকটির যেন হুঁশ নেই। নিজের মনে বিড়বিড় করে চলেছে। হাসছে। প্রথমে শরীরের গঠন দেখে প্রৌঢ় মনে হলেও চেহারা বলছে প্রায় বৃদ্ধই।
তার মুখটা ঠাহর করে ভীষণরকম চমকে উঠলেন বাসন্তী দেবী। পঁচিশ বছর আগের একটা দোলের দুপুর মনে পড়ে গেল। তখন তাঁর স্বামী বেঁচেছিলেন এবং সুস্থই ছিলেন। সকাল দশটা নাগাদ বন্ধুদের সাথে দোল খেলতে বেরিয়ে তখনো ফেরেননি। বাসন্তী দেবী ঘরে একা। শুধু বড় ছেলেটা, চার বছর বয়স, বারান্দায় ঘুমোচ্ছে। হঠাৎ বাড়িওয়ালার বড়ভাইয়ের পাগল ছেলেটা খোলা দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকল। সারা গায়ে রঙ। হাতে রঙে ভর্তি পিচকিরি। এক মুখ বোকাটে হাসি নিয়ে এগিয়ে আসতে লাগল বাসন্তী দেবীর দিকে। জোয়ান, ঈষৎ রোগাটে শরীর, মুখে দশ পনের দিনের দাড়িগোঁফ। বাসন্তী দেবী তক্ষুনি চিৎকার করতে পারতেন। কিন্তু কেমন যেন দ্বিধায় পড়ে গেলেন। পাগলটা কক্ষনো তাঁর কোনো ক্ষতি করেনি। বরং, বাইরে রোয়াকে ওর প্রতিদিন দুপুরে বসে থাকাটা, চোরছ্যাঁচোড়দের হামলার বিরুদ্ধে ভরসা দিয়েছে। স্বামী চিন্তা করলে বলেছেন, পাগলটা বসেই তো থাকে বাইরে সারাদিন! কে ঢুকবে ঘরে? আজ ও আসছে কেন? রঙ দিতে? তাঁকে রঙ দেবে? কেন? মুখটা কেমন শিশুর মত বিব্রত হাসিতে পরিপূর্ণ! তাঁর এইসব ভাবার মধ্যে পাগলটা খুব কাছে চলে এসেছিল। হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেয়ে দেখলেন পাগলটা তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে। তখনো হাসছে। রঙ দিচ্ছে না। আত্মরক্ষার সহজাত বোধে তাঁর মুখ দিয়ে চিৎকার বেরিয়ে এল। বাচ্চাটা ঘুম ভেঙে কাঁদতে লাগল। ওপর থেকে বাড়িওয়ালার বৌ রেলিঙয়ে মুখ বাড়াল, কী হয়েছে? ও মা! পাগলটা? এ্যাই কে আছিস? ধর ওকে! কী কান্ড! ছি ছি! এ্যাতো নোংরামি আছে ওর পেটে? কতবার বলি গারদে পাঠিয়ে দিতে। বাড়িওয়ালার এক ছেলে আর এক চাকর সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে পাগলটাকে মারতে মারতে নিয়ে গেল। বড় নির্মম ছিল সেই মার। বাসন্তী দেবী ভুলতে পারেন নি। তারপর থেকে যখনই পাগলটার সাথে চোখাচোখি হয়েছে তিনি নিজেকে অপরাধী মনে করেছেন। চেয়েছেন যত তাড়াতাড়ি সম্ভব থাকার জায়গাটা বদলাতে। স্বামীকে বলতে স্বামীও না করেন নি। তবে সেটা স্ত্রীয়ের মনের কষ্টটার প্রতি সহানুভুতিবশতঃ নয়। সেদিনই ফিরে এসে শুনে ঘটনাটা তাঁর পৌরুষে ঘা দিয়েছিল। তাই দুমাসের মধ্যে অন্য বাসস্থান খুঁজে উঠে গিয়েছিলেন।আজ এত বছর পর এই লোকটির কাদারক্তমাখা মুখে সেই পাগলের মুখের আদল তিনি নির্ভূলভাবে চিনতে পারলেন। দাঁড়ালেন না। দাঁড়াবার কোনো কারণ ছিল না। দ্রুত পা চালিয়ে বাড়ি ফিরে এলেন।

বাসন্তী দেবী মাঝে মাঝে আনমনা হয়ে পড়ছেন। না, পাগলটার মুখ নয়। সেটা তো নিছক কাকতালীয়। কিন্তু জীবনের পরিণতিগুলো নিয়ে তিনি ভাবতে শুরু করেছেন নতুন করে। বা বলা যায়, এত বয়সে এই প্রথম তিনি ভাবতে শুরু করেছেন।
বাড়ি ফিরে চানঘরে গিয়ে কাপড়টা ছাড়লেন। জলে দিতে গিয়ে দেখলেন নিচের দিকে প্রায় হাঁটু অব্দি কাদার ছিটে লেগে আছে। সেদিন রঙ দিতে পারল না তো আজ রাগে মাটিতে আছাড় খেয়ে কাদা ছিটিয়ে দিল। এভাবে কথাটা মনে আসবে ভাবতেও পারেননি বাসন্তী দেবী। সরল বোকাটা তো রঙ দেওয়ার আনন্দেই হাসতে হাসতে রঙ দেওয়ার কথা ভুলে গিয়েছিল’ – এ কথাটাও কখনো ভাবেন নি বাসন্তী দেবী কিন্তু আজ মনে হল। তবে এটা ঠিক যে সেদিন থেকে আজ অব্দি কখনো মনে হয়নি যে পাগলটার উদ্দেশ্য খারাপ ছিল। যখন বাইরের বারান্দায় বসে বাড়ি পাহারা দিত কী যেন নাম ছিল ওর? যোগী? হ্যাঁ, যোগী বলেই স্নেহস্বরে ডাকতেন ওকে ওর বাবা মা ছিল না
দুপুরে খাবার খেলেন। একটু ঘুমোলেনও। কিন্তু কী যেন একটা অস্থিরতা কিছু একটা খুঁজে চলেছিলেন, হাতড়ে চলেছিলেন, একটা অবলম্বন। 
নাতি জীবক সন্ধ্যায় বসে টিভি দেখছিল। একটা সিরিয়াল চলছে। সিরিয়ালগুলোর নাম আজকাল ঘরোয়া হয়ে গেছে। তার মধ্যেকার চরিত্র আর সম্পর্কগুলো যেন আত্মীয়স্বজনের! যেমন করে মাস্তুতো ভাই কচিদার মেয়ের বিয়ের কথা বলি, চিন্তা করি, ঠিক তেমন করেই কার কার সাথে শত্রুতা গড়ে উঠল, কার বিয়ে হতে পারল না, কে জড়িয়ে পড়ল মিথ্যে খুনের মামলায় । জীবক হঠাৎ বলে উঠল, আসলে ওই ওর ছেলে! জীবকের মা ঠাট্টার ছলে প্রশ্ন করলেন, তুই কী করে জানলি?
-   তুমি দেখে নিও! পরে চিনতে পারবে।
-   তাহলে ওকে বন্ধ করে এত মারল যে?
-   সে তো এখন চেনে না বলে। পরে চিনবে।
-   আর ওর বিয়ে হবে কার সাথে?
-   কেন? ওই মনীষার সাথে!
জীবকের মা হেসেই কুটিপাটি। বাকি সবাইও হাসছে, বাব্বা, চার বছরের পুঁচকে ছেলের কী বুদ্ধি! বাসন্তী দেবীও জীবকের বুদ্ধি দেখে হাসছিলেন। হঠাৎ মনটা আনমনা হয়ে গেল। এটা কি ভালো? এত নির্দিষ্টভাবে জীবনের সব পরিণতি ছকের মত জেনে যাওয়া বা জানা আছে মনে করা? জীবনের পরিণতিগুলো এমনকি অঘটনগুলোও ছকে বাঁধা, এই ভূল ধারণাটা সত্যের উপলব্ধির মত শিশুমনে গেঁথে যাওয়া কি ভালো? জীবক কী শিখছে? আগে কখনো বাসন্তী দেবী এভাবে ভাবেননি। ভেবে মনে হল এটা ভাবা কত দরকার। অথচ এই মুহুর্তে এই ঘরে কেউ ভাবছে না। জীবক কী শিখছে?

আবার হঠাৎ করে ওই পাগলটার মুখটা ভেসে এল, বৃদ্ধের রক্তাক্ত মুখের আদলে। অথচ কোনো কারণ নেই। ওটাও একটা ছক। তবু এল। বাসন্তী দেবী উঠে তাঁর শোবার জায়গায় গেলেন। তাঁর নিজের বাক্সটা কেন জানি তাঁর খুলতে ইচ্ছে হল। পুরোনো কাপড়জামা। কিছু পেতলের বাসন। ন্যাপথালিন। কয়েকটি দেবীদেবতার ছবি। স্বামীর জামাপ্যান্ট। ডাক্তারের পুরোনো প্রেসক্রিপশন। দুটো পুরোনো পাঁজি সরাতে চোখে পড়ল বইটা কথা ও কাহিনী। একবার স্কুলে প্রাইজ পেয়েছিলেন। তুলে পাতা ওল্টাতে লাগলেন। তারপর ডাকলেন, জীবক! জীবু! জীবক রাতে তাঁর কাছেই শোয়। টিভির সামনে থেকেই চিৎকার করল ঠোঁট-ফোলানো গলায়, এখন শোব না! আচ্ছা, ঠিক আছে। যখন ইচ্ছে হবে আসবি। আর তাবান আর রুপালিকেও সঙ্গে নিয়ে আসবি। একটা জিনিষ শোনাব।
নতুন জিনিষের গন্ধ পেয়ে বাচ্চারা তাড়াতাড়িই চলে এল। মনে হল রুপালিই নিয়ে এসেছে সবাইকে।
-   কী ঠাকুমা?
আয়, এসে পাশে বস্‌ চুপটি করে। শোনাচ্ছি। যেখানে বুঝতে পারবি না বলবি, আবার থেকে পড়ব।
তাবানের মা এল, কী মা? ওদের খেতে, শুতে যেতে বলবেন না? কাল স্কুল আছে!
-   দশ পনের মিনিট! খাবারটা বাড়া হোক। এক্ষুনি নিয়ে আসছি ওদের।
বাসন্তী দেবী আর দেরি না করে সোজা আবৃত্তি করা শুরু করলেন ষাট বছর আগের স্কুল-ফাংশানের মত করে।
গ্রামে গ্রামে সেই বার্তা রটি গেল ক্রমে
মৈত্রমহাশয় যাবে সাগরসঙ্গমে
তীর্থস্নান লাগি। সঙ্গীদল গেল জুটি
কত বালবৃদ্ধ নরনারী, নৌকাদুটি
প্রস্তুত হইল ঘাটে ।।
                              পূণ্যলোভাতুর
মোক্ষদা কহিল আসি, হে দাদাঠাকুর,
আমি তব হব সাথি। বিধবা যুবতী,
দুখানি করুণ আঁখি মানে না যুকতি,
কেবল মিনতি করে
-   আরে? তোরা থামিয়ে প্রশ্ন করলি না কেন? সাগরসঙ্গমে জানিস?
-   পড় না, পড় না! কী সুন্দর পড় তুমি! পরে মানে জিজ্ঞেস করে নেব।

যত আবৃত্তি করছিলেন বাসন্তী দেবী ততই মনে হচ্ছিল, ছন্দ! ছন্দই পারে। কী পারে? কে জানে! বুঝতে পারলেন না। কী এক গভীর আনন্দে পড়ে যেতে থাকলেন।


[৯.৬.১৯৯৫; ডিজিটালে পুনর্লিখন ১.৯.২১]  



 

No comments:

Post a Comment