শহরের মাঝখান দিয়ে রেললাইন গেছে। আসলে মূল শহরের পাশ দিয়ে রেললাইন তৈরি হওয়ার পর তার ওপারেও প্রায় ততখানিই ছড়িয়ে পড়েছে শহর। ওপারে ছড়িয়ে পড়ার কারণ, এপারে তো রেললাইনের উল্টোদিকে নদী! পিঠ ঠেকে আছে! বাড়বে কী করে?
যাহোক ওপারটাই আমাদের এপার। আর মূল শহরটা ওপার। অফিস ধরতে, কলেজ বা বড় স্কুলে পৌঁছোতে ওপারে যেতে হয়। এমনকি এপারে যাদের ব্যবসাপত্তর তাদেরও মাল যোগাড় করতে ওপারে যেতে হয়। আর সবার একে অন্যের সাথে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে যখন ছুটির দিনে সিনেমা, থিয়েটার দেখতে বা পার্কে, ময়দানে ঘুরতে, দামি বাজারে কেনাকাটা করতে ওপারে যেতে হয়। তারপরও আছে। মাঝেমধ্যে সার্কাস আসে, সেও ওপারে। মেলা বসে, ওপারে। এমনকি দুর্গোপুজোর মরশুমে বড় ও নামকরা মন্ডপগুলোও সব ওপারে। গঙ্গার ওপারে যেতেও আগে শহরের ওপারে যেতে হয়। ট্রেন ধরতে অবশ্য, খুব বেশি জিনিষপত্তর না থাকলে ওপারে যেতে হয় না। নৌকো বেয়েই স্টিমারঘাটায় পৌঁছোনোর মত, রেলগেটে ঢুকে রেললাইন ধরে প্ল্যাটফর্মে উঠে পড়া যায়, ইয়ার্ডে দাঁড়িয়ে থাকা কামরায় ঢুকে পড়া যায়। হ্যাঁ, ঠিক সেরকমই! বলতে গেলে, রেললাইনটাও তো আমাদের জন্য আরেকটা নদীই! পাড়া থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তায় পৌঁছোলে দুদিকে বেশ কিছুটা গিয়ে দুটো ঘাট, মানে দুটো লেভেলক্রসিং বা রেলগেট, ওপারে যাওয়ার; ভবিষ্যতে দুটো উড়ালপুল হবে।
কথা হচ্ছিল খুড়তুতো ভাইয়ের সঙ্গে। অন্য শহর থেকে এখানে বেড়াতে এসেছে। সিনেমা যাবে বলে উসখুস করছে, অথচ আমার সময় নেই। তাই ওকে রাস্তাটা বাৎলে দিচ্ছিলাম, কিসে সুবিধে হবে। ভীড়ও এড়ানো যাবে।
সামনের বাড়ির দিদা বসে গল্প করছিলেন মায়ের সাথে। ভীড়ের কথা শুনে ঘুরে বললেন, “আর বলিস না, গত কয়েক বছরে কি রকম ভাবে মানুষজন বেড়ে গেল। অথচ তোর দাদু যখন এখানে বাড়ি করল, এইটুকু (ঘরের দেয়ালগুলো দেখিয়ে) এক ঘরের বাড়ি, এতটাও বড় নয়, তখন এখানে শেয়াল কাঁদত। ওইদিকের পাড়ায় কিছু সরকারি কোয়ার্টার ইংরেজ আমলের আর এদিকে মাইলের পর মাইল জুড়ে শুধু ক্ষেত আর নালা। ডাকাতদের রাজ্য ছিল, ক্ষেতের আল খুঁড়তে গেলে কঙ্কাল বেরোত।”
খুড়তুতো ভাই ফস করে জিজ্ঞেস করল, “ওনার ভয় করে নি?”
“নাঃ, জোয়ান, সাহসী মানুষ ছিলেন, বাংলার জলে সাঁতার কেটে গতর করেছিলেন দেখার মত … লোকে দূর থেকে দেখলে চিনত ‘ওই যে মোহনবাবু আসছেন’। তাছাড়া, বিদেশে বাজারে ব্যবসা দাঁড় করাতে হলে এদিকে সস্তা দরে জমি কেনা ছাড়া উপায় কী ছিল? সারাদিন ওপারে স্টেশনের কাছে দোকানে বসতেন আর আমি একবছুরে খোকাকে নিয়ে ঘরে দোর দিয়ে বসে থাকতুম।” দিদার পুরোনো স্মৃতির তোড় বাড়ছিল।
দেরি হচ্ছে দেখে ভাইকে বললাম, “তুই বেরিয়ে পড় তাড়াতাড়ি। ওই বড় ঘুমটি (লেভেলক্রসিংকে ঘুমটি বলি আমরা) ধরেই যাস। ভীড় বেশি, বাজারে কাদাফাদা থাকতে পারে তবে রাস্তা চিনতে অসুবিধে হবে না; চট করে পৌঁছে যাবি।
কিন্তু ওকে যেন ইতিহাসচর্চায় পেয়ে বসেছে। উঠবার কোন লক্ষণ দেখা গেল না। গ্যাঁট হয়ে বসে দিদাকে প্রশ্ন করতে থাকল।
তারপর, লোকজন আসতে শুরু করল কবে থেকে।
লোকজন? লোকজন কই? শুধু এদেশীয় গোয়ালাদের তিনচারটে বসত, ছোট বড় কিছু কুঁড়েঘর। তাও আমাদের ঘরটা থেকে একটু দুরেই; আল চওড়া করে মাটির রাস্তা, সে পেরিয়ে পৌঁছোতে হয়। তোদের দাদুর বাড়ি করার পাঁচ বছর পর বড় কুঠিটা তৈরি হল। ইংরেজ আমলের পুলিস দারোগা, কাজের জন্য খেতাব। বলল, ‘এখানেই থাকব, দেখি ডাকাত কী করে!”
অনাদিবাবুর সে, কী যেন বলে ভালো বাংলায়, দোর্দ্দন্ডপ্রতাপ আর নেই। তবে তাঁর স্ত্রীর প্রতাপ এখনও অক্ষুন্ন। সকলে বড়মা বলে ডাকে। পাড়ার কোথায় কী খবর সব ওনার নজরে আসা চাই। পনের বছর আগে এ পাড়ায় ভাড়া আসার পর প্রথম কালীপুজোর রাতে পুজোমন্ডপে সবাই ‘বড়মা বড়মা’ করে গিয়ে প্রসাদ চাইছে দেখে আমিও চাইলাম। ভুরু কুঁচকে চোখ কটমটিয়ে বললেন, “তুই কে রে ছোঁড়া?” খুব খারাপ লেগেছিল। নতুন এসেছি বলে কি ওনার কাছে নাম লিখিয়ে আসতে হবে নাকি? এক টুকরো প্যাঁড়া দিয়েছিলেন। পরে দেখলাম ওনার জন্য একটা টিফিন ক্যারিয়ারে প্রসাদ রিজার্ভ রাখা থাকে।
দিদা বলে চলেছিলেন, “তারপর একে একে এলেন ডাক্তারবাবু, গাঙ্গুলি মশাই, এল চক্রবর্তির গুষ্টি, দোকানপাট খুলল, লোকজন বাড়তে শুরু করল। এখন দিন থেকে রাতে লোক বেড়ে যাচ্ছে। প্রতি সকালে পাঁচ-দশটা নতুন মুখ দেখি। আর হুটহাট বাড়ি উঠছে …পাড়া চলে গেছে কত দূর অব্দি!”
আমি আবার ভাইকে তাড়া দিলাম, “তোর দেরি হয়ে গেছে … এক কাজ কর … এখান থেকে বড় রাস্তায় উঠে ডান, বাঁ কোনো দিকে যাওয়ার দরকার নেই। ওখানেই বাঁদিকে পড়বে একটা কালভার্ট। নিচ দিয়ে বড় নালা বেরিয়ে গেছে সোজা। রাস্তাটা ক্রস করে সেই নালার বাঁ পাশ ধরে এগোবি। দেখবি একটা ইঁটের দেয়াল, ওপারে রেললাইন। ওই দেয়ালেই দেখবি দু’মানুষ সমান একটা গর্ত বা ফুটো। ব্যস পেরোলেই ওপার। রেললাইন পেরিয়ে, কিছুটা ঝোপঝাড় পেরিয়ে দেখবি আরেকটা রেললাইন, বিশেষ ট্রেন যায় না। ওটা পেরোলেই রাস্তা। রিক্সা ধর, হলে পৌঁছে যাবি দশ মিনিটে।”
“ফুটোটা বন্ধ করে দিয়েছে না?” দিদা আবার শুরু হওয়ার তোড়জোড় করছেন মনে হল। মা হাতে চা নিয়ে কনুই দিয়ে পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন। আমি পর্দাটা তুলে ধরে জবাব দিলাম, “কোথায়? … আবার ভাঙা হয়ে গেছে। লোকে মানবে কেন? কত তাড়াতাড়ি হয় কাজের সময়। সরকার বন্ধ করার দুদিন পরেই ভেঙে দিয়েছে।”
ভাই ঘুরে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল, “তা দু’দুটো লেভেলক্রসিং থাকতে দেয়াল ভেঙে যাওয়া আসা কেন? রাতবিরেতে অসাবধানে ট্রেনে কাটা পড়বে যে!”
“পড়েই তো! কত লোক মারা গেছে। তবু কি মানে? লোক যে কত বাড়ছে তার ঠিক নেই। গ্রাম থেকে আসছে, এ শহরের অন্য পাড়া থেকে আসছে, অন্য শহর থেকে আসছে”, দিদা ফের শুরু হলেন।
আমার ছোটবেলার কথা মনে পড়ছিল। বাবার সাথে ডানদিকের লেভেলক্রসিংটার ধারে বাজারে যেতে বা রেললাইনের ওপারে যেতে সব সময় দেখতাম হৈ-হট্টগোল, কাদা, ছাই, নোংরা আবর্জনা, তারই মধ্যে ট্রাক, ট্যাঙ্কার, ঠ্যালাগাড়ি সকলে মিলে তারস্বরে চিৎকার করছে সকাল থেকে রাত অব্দিই। কেননা ওটা স্টেশনের কাছে। লাইনের সংখ্যা বেশী আর তাই প্রায় বন্ধই থাকে। যখন খুলবে, ট্রাক, ট্যাঙ্কারের ভিড় খালি হবে। তাই যেদিন তাড়া নেই, অন্য কোথাও যাওয়ার বা মা, বোনেরাও সঙ্গে আছে, বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তায় উঠেই রিক্সা নিয়ে বাঁদিকে যেতে বলত। ওই লেভেলক্রসিংটায় ভিড় নেই। এই যে অনেকখানি ঘুরে যেতে হয়। … তারপর যখন হাইস্কুলে যাওয়া শুরু করলাম, বাস ধরতে শিখলাম। স্কুলবাস নয়, শহরে নতুন শুরু হওয়া রিং সার্ভিসের বাস। ওপারে গিয়ে ধরতে হত। তখনই একদিন এক বন্ধু দেয়ালের ফুটোটা দেখিয়ে দিল। তখন সদ্য ভেঙেছে, ইঁটগুলো পড়ে আছে। হন্তদন্ত হয়ে ঢুকে, এদিক-ওদিক ট্রেন আসছে কিনা দেখে সবাই ছুটে পেরিয়ে যায় বাস ধরতে। ছুটতে গিয়ে লাইনদুটো পেরোতেই অনেকের পা ফাঁসে সিগন্যালের তারে, হুমড়ি খেয়ে পড়তে পড়তে বাঁচে। অথবা পড়ে, আমিও পড়েছি। বাস যায় সেক্রেটারিয়েট হয়ে, আমাদের স্কুলের পাশ দিয়ে দূরের আধাশহরগুলোর দিকে। বাস যায় শহরের ভিতর হয়ে পুরোনো পত্তনি শহরটার দিকে। বাস যায় উত্তর-পশ্চিমে নদীর ধারে গজিয়ে ওঠা নতুন কারখানাগুলোর দিকে। আবার কেউ কেউ সাইকেলসুদ্ধু রেললাইন পেরোয়। বগলে বা ঘাড়ে তুলে পার করাই সহজ। লেভেলক্রসিং বন্ধ থাকলেও তো পাশের লোহার ঘোরা-গোলটা সাইকেল মাথায় তুলেই পার করতে হয়। … প্রথম প্রথম সাবধানে দেখে পেরুতাম। তারপর ভয় কেটে গেল। মাঝপথে ট্রেন দাঁড়িয়ে থাকলেও অন্য অনেককে দেখে নিচের ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যেতে শিখলাম। একবার তো ঢুকেছি হামাগুড়ি দিয়ে আর ওদিকে বাঁশি বেজে উঠল; ঘেমে নেয়ে গেছিলাম। …ওপরে কামরার দরজা খোলা থাকলে তো কথাই নেই। সোয়ারিদের সশঙ্ক দৃষ্টির সামনে স্থানীয় হিরোর মত সিঁড়ি বেয়ে উঠে ওদিকে লাফিয়ে নামতাম।
স্কুল থেকে কলেজ। তখনও ওই ফুটো। হ্যাঁ, তখন আমারও সাইকেল। বগলদাবা করে পেরোই। বার বার রেলবিভাগের লোক এসে বন্ধ করে দিয়ে যায়… আর পরের দিনই – যেন নিজেই ধ্বসে গেছে নতুন গাঁথা ইঁট – লোকে নির্বিকার আসে যায়।
তারপর চাকরির চক্করে ঘুরে ঘুরে একটা কাজে ঢুকেছি এই বছরখানেক হল। এখন আর ফুটোটা পেরোবার দরকার পড়ে না। সকাল সাতটায় বাঁদিকের লেভেলক্রসিংটা পেরিয়ে আরো উত্তরপশ্চিমে চলে যাই কারখানাগুলোর দিকে। তবে বাসরুট নয়, ভিতরের রাস্তাগুলো দিয়ে। এরকমই সকালে ভটচাযজেঠুকে দেখেছি ছোটবেলায়, ষাট বছর বয়সেও সাইকেল কাঁধে ওদিকের লেভেলক্রসিংটা পেরুচ্ছেন; তাঁর কাজের জায়গা ছিল পূর্বদিকে, সেও প্রায় দশ মাইল।
“এ ঘুমটিটাও শুনছি বড় করবে?” দিদা জিজ্ঞেস করলেন।
“হ্যাঁ, শুনছি আমিও” জামাটা গলাতে গলাতে বললাম, “আমাকেও বেরুতে হবে।” ভাইকে জোর করে ওঠালাম, “চল, তোকে আদ্ধেক রাস্তা এগিয়ে দিই।”
কালভার্টের পাশ দিয়ে গিয়ে ফুটোটা পেরোলাম। আসার সময় বাঁদিকে গৌড়ীয় মঠটা দেখাতে ভুললাম না। দিদার বৃত্তান্তে এটা ছেড়ে গিয়েছিল। আমাদের সময়েই তৈরি হয়েছে। বস্তুতঃ মঠটার তৈরি হওয়া দেখতে দেখতেই নাম শুনে ধন্ধ জন্মেচ্ছিল। মাকে জিজ্ঞে করে জেনেছিলাম গৌড় বলে একটা জায়গা আছে বাংলায়, বৈষ্ণব বলে একটা মত, সম্প্রদায় কিসব যেন আছে, আবার বিপরীতে শৈবও আছে। তার আগে একটাই মঠ জানতাম, গোসাঁইজির মঠ, বাবা-মা যার শিষ্য, লোভনীয় মুড়ি, তরকারির জলখাবার জোটে সকালে আর উৎসবে, দুপুরে এত ভালো খিচুড়ি যে পোলাওয়ের জন্য পেটে জায়গা রাখতে ইচ্ছে করে না।
দুই রেললাইনের মাঝে দাঁড়িয়ে ভাইকে দেখালাম, ডানদিকে হোই দূরে দেখ বড় ঘুমটি, তারপর স্টেশন। ট্রেন দাঁড়িয়ে আছে দেখতে পাচ্ছিস? আর বাঁদিকে – এই দৃশ্যটা দেখতে খুব ভালো লাগে, ওকেও দেখালাম – প্রথমে সামনের ঘুমটিটা, রিক্সা, গাড়ি, মানুষজন পেরুচ্ছে দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার … তা ছাড়িয়ে দূরে আরেকটা ঘুমটি, যানবাহন, মানুষ একটু অস্পষ্ট … তারপর অনেক দূরে আরেকটা ঘুমটি … লোকজন ভাসা ভাসা … শহর তারপরেও দূর অব্দি ছড়িয়ে পড়েছে। সেসবের পর ছিল আমার স্কুল। সেখান থেকেই পিছনের আমবাগান পেরিয়ে রেললাইন ধরতাম অনেক সময় বাড়ি ফেরার পথে। সঙ্গে থাকত ডোমনজির কাছ থেকে চাওয়া বিনিপয়সার ঝালনুন আর কাঁচালঙ্কা, মুখের বেস্বাদটা কাটাতে … এভাবে বাসে ফেরার পয়সাটা বাঁচত। সে পয়সায় সেবার স্টেশনে হুইলারে গিয়ে কিনেছিলাম দেব সাহিত্য কুটিরের পুজোর বই ‘অরুণাচল’।
পাশ দিয়ে একটা জোড়া কথা বলতে বলতে বেরিয়ে গেল। মেয়েটা সুন্দরি। আমি আর ভাই দুজনেই দুজনের থেকে লুকিয়ে ওকে দেখছিলাম। ভাইই ফুট কাটল, “বাঃ, তোর এই ফুটোপথ তো বেশ রোমান্টিক হয়ে উঠেছে দেখছি।”
ঝোপঝাড় পেরিয়ে, লোকাল রেললাইনটা ক্রস করে মোড়ে উঠলাম। আমার অন্যদিকে যাওয়ার ছিল। ও তাড়াহুড়ো করে রিক্সা ধরল, “দেরি হয়ে গেছে।”
তুইই তো দেরি করলি। যাক এখন আধঘন্টা নিউজ ডকুমেন্টারি আর বিজ্ঞাপন দেখাবে। সিনেমাটা ধরে ফেলবি।
------------
এতটাই ছিল পুরোনো পাড়ার পুরোনো গল্প। যে সে পুরোনো নয়, পঞ্চাশ বছর পুরোনো। এখন আমার বয়স সত্তর বছর। এখনো সে পুরোনো পাড়ায় যাই মাঝে মধ্যে। ট্রেনের গতি বাড়াতে হবে, সব লেভেলক্রসিং বন্ধ করতে হবে বলে শহর ভরে গেছে উড়ালপুলে। যেভাবে নদীর ওপরও উঠেছে দ’দুখানা পুল। আরো একটা তৈরি হচ্ছে।
একদিন গেলাম। অটোরিক্সায় স্টেশন অব্দি গিয়ে হেঁটে পার হলাম। উড়ালপুলের একপাশ দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠলাম, অন্যপাশ দিয়ে নামলাম। যাওয়ার ছিল নিজের পুরোনো পাড়ায়। কী শখ হল, কালভার্টটা পেরিয়ে ডানদিকে নালার পাশে নেমে গেলাম। গিয়ে দেখি সেই ফুটো। আরেব্বাস, এখন আবার রেলবিভাগই সিমেন্ট দিয়ে বাঁধিয়ে দিয়েছে। পেরোও বাবারা, পেরোও। যদ্দিন বুলেট ট্রেন না আসে। তবে দেখে পেরিও। ফুটপাথে ইন্সিওরেন্স আছে, ফুটোপথে নেই।
না থাকুক, তবে ওই যে উর্দুতে বলে, ‘কওন কহতা হ্যয় কি আসমান মেঁ সুরাখ হো নহীঁ সকতা / এক পত্থর তো তবিয়ত সে উছালো ইয়ারো’! আমার শৈশবের পাড়াটা হাতেকলমে প্রমাণ দিল যে ঠিক মত অবাধ্য হতে পারলে সরকারে তো ফুটো করাই যায়। আকাশ – দেখা যাবে! এক চমকে সেই ১৯৬৭র কোনো এক দিন দুপুরে দেখা, ওদিকের পেট্রল পাম্প থেকে ওঠা ধোঁয়া আর আগুনের হলকাগুলো ভেসে উঠল।
No comments:
Post a Comment