Saturday, April 30, 2022

কমরেড সিঙারাভেলু! লাল সেলাম!

তামিল শিখিনি, অনুবাদ ধরে
ভিজে বেড়াই বৃষ্টিফোঁটায়
আমশাখাটির নিচে।
মাতলাই মাছ, নারকোল নিয়ে  
প্রাচীন নগরে কাব্যধারায়
যোদ্ধা নারীর পিছে। 

ঘষে রাঙাই নিজের শরীর 
গোন্ডোয়ানার পাথরে-ধুলোয়
খাড়ির চাঁদের তীরে।
সাধে কি দেশটা টানে এমন?
বুদ্ধও সেই এখানেই লাল
ঝান্ডা নিলেন সিঙারাভেলুর
সাথে – দাঁড়িয়ে ভীড়ে,

মেরিনার বালুবেলায় দিলেন
জাতপাত ভুলে ঐক্য গড়ার
প্রথম মে’দিন বাণী, 
প্রথম শ্রমিক সঙ্ঘ, লড়াই,
শহীদ! … এবং আজ দুজনেই
হাতে দেন পারানি!

১.৫.২২



Friday, April 29, 2022

মে-দিনের রণোল্লাস

পৃথিবীর সব দেশের আবহাওয়া তো জানা নেই।
তবে ভারতে গনগনে রোদ্দুরে আসে মে-দিবস।
মাথাগুলোও গরমই থাকে ফি-বৎসর, আর এবার তো
জিনিষের দাম, কাজের ঘন্টা, ভাইয়ের বেকারি …
করোনার স্মৃতি তো আছেই। কিন্তু কী অদ্ভুত দেখ!
কৃষ্ণচুড়া, অমলতাস, জ্যাকারান্ডার এটাই সময়।

বিলেতিরা পলাশ কিন্তু এদেশে শহরে লাগায় নি,
যখন নাকি ভরে ছিল, চতুর্দিকে, পাহাড়ে, প্রান্তরে!
হয়ত সিদহো-কানহো বা বিরসার হাতে মার খেয়ে –
আর কিনা ওদের আনা কর্কটরেখীয় গাছগুলোই 
ওদেরই বইপত্র বেয়ে আসা মে-দিনের 
রণোল্লাস হয়ে গেল আমাদের সমাবেশে, 
লাল, উজ্জ্বল হলুদ, নীল … সব শহরে, চত্বরে!
ফুলে ফুলেই হয়ে গেলাম তিন-চারটে মহাদেশ! 

কেননা এত বছর পেরিয়ে এসে মনে হয় 
মে’দিন এমন এক দিন যার একশো-পঁয়ত্রিশ বছরে
রক্ত যা ঝরেছিল তার অনেকটাই ফুল করে 
ফুটিয়ে তুলতে পেরেছি, তাও এমন এক ফুল 
যা এক প্রদীপ মাটিতেও ফুটে ওঠে। 
এমনকি শিকাগো শহরেও তো একশো বছর 
খুনে সার্জেন্টটাকে শহীদ করে রেখেছিল সরকার!

বার বার হাঁটুতে বোমা গুঁজে ফাটাতে হল ব্রোঞ্জ, মুখে
লেপতে হল কালি, শেষে ওরা স্বীকার করল পরাজয়।
মেনে নিল, হে-মার্কেট আমাদের – সাইনবোর্ড পাল্টালো,
স্মারক পাটাতন বসালো, এখন মূর্তিও বসিয়েছে 
নতুন শতকে – অভিনন্দন, মেরী ব্রগার! 
মে’দিনের চায়ে বিস্কুট ডোবালে আঙুলের 
প্রান্ত অব্দি ধোঁয়া ধোঁয়া আর মিষ্টি হয়ে যায় …

৩০.৪.২২  



Thursday, April 28, 2022

ব্যাজ

ঠেকে শিখছিঃ একটু নারী
নয় যে, সে পুরুষ নয়;
মুসলমান না হলে পর
হিন্দু হওয়াও সম্ভব নয়;
ভীত অরণ্য, করুণ বন্য
প্রাণী নয়, তো মানুষও নয়।
গভীর ফসিল, অনেক দহন,
মৃত্যু চেনায় প্রাণের জয়!
 
উল্টো হাঁটা শুরু, যেদিন
সোভিয়েত ভাঙার পরেও
পকেট তুলে ধরেছিলাম
শ্রমিক লেখা লড়াকু ব্যাজ
দুনিয়া গড়া মুখটা আমার,
ঢেকে ধর্ম-জাতের মালায়,
কত নামে তোয়াজ করে,
শিরদাঁড়ায় বাঁধলো ল্যাজ!
 
ভাবলাম তালে ঢুকেই গাই,
যে শাশ্বত মানবপথের
ভাবনালীন ভারতপথিক,
ধারা, আবহমান বাণীর!
সুর ডাকল নদীর জলে,
ছন্দে বাজল পাহাড়গুলো,
গানের মূল কথা কিন্তু
দিল চার্বাক, বুদ্ধ, কবীর!
 
নয়া শতকে হিন্দুত্বের
হামলা রুখতে চিনছি যে
সমরাহ্বান আমার মুসল-
       মানি, আমার শূদ্রত্ব,
নারীত্ব! ভুলে না যাই,
দুষ্টাচারীর সালতামামি! –
লিখছি, হাতুড়ি-কাস্তে-ব্যাজের
          পিছনটায় সর্বত্র।
 
২৮.৪.২২




Saturday, April 23, 2022

আমার ঘর

আমার ঘর তো আমার মতই অনেকটা ছিল আজগুবি
অনেক কাজে একটু গিয়েই ক্লান্ত হয়ে চিৎপটাং 
তবু নতুন কাজ দেখতেই হাত লাগানো একটিবার 
সারা জীবন গোঁয়ার্তুমি বুদ্ধি বলতে সাড়ে দু’হাত 

ঘরের ওই যুদ্ধজাহাজ বন্যার পর সাজিয়েছিলাম
যে বন্যায় বাঁচিয়েছিলাম পৃথিবীটা বুক আগলে
আকাশফাটা আলোয় ছাতে বোনেদের, মা-বাবার মুখ
দেখে বুঝেছিলাম নোয়ার নৌকোটা কী হয়ে থাকবে 

তারপর তো দখল নিল এন্ড্রোমেডা জানলা জুড়ে …
বস্তুতঃ ঘর একটা কোথায়, একে একে চারটা হল
প্রথমটা তো দীপনেরই, দ্বিতীয়টা আমি দিলাম
তৃতীয়টা আলোকজী আর রবীনদার চতুর্থটা

দুনিয়াজাহান জানত না এই চারটে ঘরের কারখানাতে
তৈরি হত বেআইনি মাল – চোখ-কান-গলা-আঙুল
কিশোরী ডাকত 'সহেলা'য় আর খাঁ-সাহেব ধীর কানাড়ায়
বরিনেজের আলু চাখতাম, ক্ষার শুঁকতাম কার্দেনালে

তখনই তো ‘অস্ত্র আর বাদ্যযন্ত্র’ লিখল দীপন
তাশার বাদ্যে জংলি হাতির নাচ ধরলেন আলোকজী
ভাঙাবস্তির কার্টার আর তারের খাঁচার কারিগরেরা
দাগিয়ে তুলল রবীনদার ডাইরির পাতা, ড্রইং খাতা

এসব মাঝেই জমল পপুলারের গলির কমিউনে দিন
ইকমিকে রান্না সেরে সবার সাথে দেশচিন্তায়
গান বাঁধলাম প্রথম প্রথম, গিটারটা কার ভুলেও গেছি
জানার, বোঝার, দাপিয়ে বাঁচার সেসব কিছু দিন ছিল ভাই

২৪.৪.২২



Thursday, April 21, 2022

আমরাই কেউ দরজা খুলেছি

হাঁটুজলে জুতো খুলতে কখনো 
আপত্তি করেননি লেনিন
প্রশ্ন করেন নি কোন রাস্তা
বেধড়ক গলির ভিতরে
ভেজা কাপড়
দোকানে টাঙানো রকমারি
বাঁ হাতে সরিয়ে এগিয়েছেন

ভিতরের পাড়াগুলো তো একই রকম
বাংলার তামিলের মারাঠির বা ভোজপুরির
ডোগরি পশতু বা হিন্দি মলয়ালমের
পাহাড় সমুদ্রতট শহুরে সমতল জঙ্গল সব
শেষমেশ 
ঘিঞ্জি ধাক্কাধাক্কিতে ঢোকে বেঁচে থাকার 

লেনিন ঠিক সময় মত পৌঁছে গেছেন 
দরজায় টোকা দিয়েছেন
আমরাই কেউ দরজা খুলেছি
অবাক হয়ে দেখেছি তাঁর পিছনের আকাশ
যে চিলতেটুকু দেখা যায়
কী অপরূপ রক্তিমাভা
    
পরিচিত মুচকি হাসিটা ধরে রেখেই
চেয়ারে বা ছালা পাতা খাটে 
মাদুরেও বসছেন হাঁটু মুড়ে …
“কই? শুরু করো বৈঠক!”

আমরা কি সবাই পৌঁছোচ্ছি সময় মত?
কতটা পৌঁছোচ্ছি?

২২.৪.২২



Wednesday, April 20, 2022

হাঁটাপুল

রোজ দেখি দুর্ঘটনা, পেরোতে রেললাইন
কে জানছে এ স্টেশনে, থ্রু কোন্‌ ট্রেন !  
শেষে এল এপারওপার নতুন হাঁটাপুল।

মাটি ছেড়ে কিছুক্ষণ আকাশ ধরে চলা
এইতো উন্নয়ন! কবে প্রজার দাবি মেনেও
সাজায় না রাজা তার অবদানের গুল?  
 
সাঁঝে নামছি, সভা আছে, পুলের আঁধার দিল
নানান চিরকুটের সাথে একটি দরকারি
চাকরি পেতে ফোন করুন (পাঁচটা নম্বর) ...
 
ফেলতেই পারতাম তবু আলোয় মেলে পড়ি।
কাজ ইজ্জত বলে কথা, গুঁজে রাখি বুকে!
কাউকে দেব চিরকুটটা? পৌঁছে সত্বর?
………

ঠান্ডা মেঝে দুদিনের বৃষ্টি-স্যাঁতসেঁতে
কষ্ট ঢাকবে নিজের মত পুরোনো শহর
মা বোনে পরিবারের অভাব গেঁথে মিল!   
 
রাত বাড়বে, দরজা খোলা, ফিরবে একটু পরে
ঘরের আশা, ভাষা সবার, সোনার সন্তান
চিরকুট দেখালে যদি দেখা বান্ডিল?
 
ব্যাঙ্গালোর
১৯.১২.২০



Monday, April 18, 2022

রবীন্দ্র-নজরুল-সুকান্ত সন্ধ্যা

বিভুয়েঁ যে! হিসেব করতে হয় বৌদি!
তাই ও তিন ছবি বসাই এক আসরে।
দুজনের তো গ্রীষ্মে জন্ম, পিঠোপিঠিই!
মাঝে আরেক, নাহয় মৃত্যুদিন,
পথটায় তো তিন মশালের আলো ঢালি!
 
তাই আমরা সন্ধ্যা ধরি জুনের শেষের।
মরশুমি মেঘ পাহাড় ছেড়ে ফেরে যখন।
তিন কবির কাব্যধারায় সুরের বানে
বলতে, দাদু-ছেলে-নাতিই তো,
ভাষার মেজাজ বাঁচার মেজাজ হয় স্মরণে।
 
বলি, বরং আপনি বাঁধুন রবিতে নাচ;
নিজের স্কুলের মেয়ে টানুন রিহার্সালে।
ছেলেটাকে বাংলা ধরান লিচুচোর!
আবৃত্তি দাদার নাকি শখ?
ঝালিয়ে নিক; প্রিয়তমাসু উতরে যাবে।
 
আবহাওয়াকেও বলি, একটু ছায়া রেখ!
এমন না হয়, হপ্তাভরের বৃষ্টি শুষে
পোড়া আকাশ অনিচ্ছেটা চাগিয়ে দিল!
মেঘের কালো শুনি ঘনায় নুন
মায়ের ভাষার বাষ্পে সেদিন জল বাঁধব।  

১৮.৪.২২   

 


Sunday, April 17, 2022

ঠেকা

সে দুপুরে আপনি কোথায় ছিলেন, গুরুদেব?
হাজিপুরের হলটায় ঝিম গরম চিটচিটে!
নদীর দিকের হাটের পথেই কোথাও নজরুলের
পূর্বপুরুষেরা ছেড়ে গিয়েছিলেন ভিটে।
 
আপনারই তো সার্ধশত জন্মবর্ষ ছিল!
আবাহনে ছিল জেলার হাকিম, প্রশাসন!
পাটনা থেকে শিল্পী, বক্তা এবং এভাবেই
মহামানব তীরে আমরা করি অবগাহন।
 
শিল্পী বলতে ছোট্ট মিষ্টি শিক্ষিকা মেয়েটি
এসে অব্দি বিচলিত, তবলচির কী হবে!
বিকল্পে ব্যবস্থা হল ঢোল-মেরামতির
দোকানের তাও শাকরেদ -  চামড়া বাঁধছে সবে!

হাতে একঘন্টা মত আলোবাতাসহীন
সভাঘরের পাশে ঘিঞ্জি কামরায় বসে খাটে
আপ সির্ফ তিনতাল অওর একতাল পর চলেঁ!
দ্রুত নয় আরো আস্তে বাংলা গানের ঠাটে।  

তাও নখানা গান হল বাংলা হিন্দী মিলে
একাই মেয়েটি চরণ ছুঁল আপনার, দুই ভাষায়!
টেনে ছোঁয়াল শাকরেদটিরও শক্ত আঙুলকটি।
বিহার বলেই গুরুদেব, নিই এমন দায়!
 
পাটনা, 
৩১।৫।২০১২ / ১৮.৪.২২ 




 

নতুন রিক্রুট

জায়গাটার নাম বলায় দুবার ভুরু কুঁচকে অটো ড্রাইভার অন্যদিকে তাকিয়ে ভাড়া বলল। বোঝালো যাওয়ার খুব বেশি ইচ্ছে নেই, তবে ওইরকম মোটা ভাড়া পেলে যেতে পারে। কিন্তু সুমনের যাওয়ার ইচ্ছে ছিল। মানে দরকার ছিল। আর জায়গাটা পুরোপুরি অচেনা। কাজেই, দরদাম করার স্কোপ খুব বেশি ছিল না।

রাস্তায় ইয়েলাহাঙ্কা নামে একটা জায়গা পড়ে; নামটা বহুবার সে শুনেছে, গুগল ম্যাপে দেখেওছে তাই মনে আছে তারপর?

ইয়েলাহাঙ্কা ছাড়িয়ে ক্ষেত, বনবাদাড় কব্জা করে তৈরি হতে থাকা নতুন এলাকায় বহুক্ষণ ঘুরতে ঘুরতে শেষে পেল জায়গাটা। কর্মচারি আন্দোলন, ওদের ভাষায় ইউনিয়নবাজিকে শায়েস্তা করতে আজকাল এটা চল হয়েছে, প্রশাসনিক ভবনের নতুন এক্সটেনশন এবং প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বা স্টাফ কলেজগুলোকে শহরের কেন্দ্রে না রেখে দূরে, একেবারে বাইরে নিয়ে যাওয়া। তাবলে এতটা বাইরে! তাও ব্যাঙ্গালোরের মত শহরে! যেখানকার ইউনিয়নবাজি যেমনই হোক, কলকাতা আর পাটনার মত নয় নিশ্চয়ই।

তাও ভাগ্যিস ঠিক সময় মত পৌঁছেছিল। ভেবেছিল, পৌঁছে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে, রাস্তায় চা-টা খাবে তারপর ছুটি হলে সবাই যখন বেরিয়ে আসবে, গেটের মুখে ধরবে। এক তো অচেনা জায়গা, তায় অচেনা ভাষা, তার ওপর কলেজটাও তার নিজের ব্যাঙ্কের নয়, অন্য ব্যাঙ্কের, নতুন রিক্রুটদের ইন্ডাকশন করানোর ঠিকা নিয়েছে। কাজেই ভিতরে ঢোকা বুদ্ধির কাজ হবে না। কিন্তু পৌঁছে অটোওয়ালাকে পয়সা দিয়ে ফিরতি সফরের টোপ দিতে দিতেই দেখল সবাই বেরিয়ে পড়েছে, এমনকি অনেকে হেঁটে এগিয়েও গেছে কিছুদূর।

যাহোক, দেখল গেটের মুখে জমা ভীড়টার ভাষা হিন্দি। কাজেই সবার সাথে আলাপ করতে একেবারে এগ্রেসিভ মোডে নিজের পরিচয় দিয়ে হাত বাড়ালো। কাজও হল। সবাই হাত মেলালো। কথাবার্তা এগোল। একসময় সবাইকে ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার আহবান জানালো। একটি ছেলে সোজাসুজি ফর্ম চাইল। তাকে একসাথে পাঁচটা ফর্ম এবং আরো দুএকজনকে একেকটা করে ফর্ম দিল সুমন। জানত এই সন্ধ্যারাতে নির্জন জায়গায় কেউ এখন দল বেঁধে চায়ের দোকান খুঁজতে আর গিয়ে আড্ডা দিতে উৎসাহিত হবে না। সে কথাটাই মুখে বললও, এখানে তোমাদের সঙ্গে কোনো দোকানে বসে একসাথে চা খাবো সে পরিস্থিতিও নেই আর তোমরাও রেস্ট নিতে চাইবে সারাদিনের ক্লাসের পর। পরে তো দেখা হবেই পাটনায়। হ্যাঁ, আমি চাকরিতে আর নেই, রিটায়ার করেছি তবে কাজেকর্মে তো আছিই। মিটিং, সিটিংএ দেখা হবে। তখন নাহয় আমরা একসাথে চা খাবো আজকেরটা বাকি রইল।

 

বিদায় নিয়ে অন্ধকারে ফিরছিল ইয়েলাহাঙ্কার দিকে। নতুন রিক্রুটদের একেবারে গোড়ায় ধরা প্রথম থেকেই ইউনিয়নবাজির একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ভাবতে পারত সংগঠন গড়ে তোলার, তবে কলকাতার লোক তো সে নয়। অত গম্ভীর, সাংবিধানিক শব্দ বিহারে চলে না। বিহারের শ্রেণীগুলোর গঠনে যেমন, ভাষাতেও গ্রাম্য অবিচ্ছিন্নতা ইউনিয়ন একটা বিলিতি হুজুগ যেন, তাই ইউনিয়নবাজি। নতুন রিক্রুট ফস্কে যাওয়াতে বহুবার বকুনি খেতে হয়েছে। ইউনিয়নগত প্রতিযোগিতা আছে, এবং যেহেতু সংখ্যালঘু ইউনিয়ন, কর্তৃপক্ষের পেটোয়া ইউনিয়নের সাথে একটা লড়াইয়ে থাকে সব সময় তাই নতুন রিক্রুটদের মধ্যে কতজন এদিকে এল সেটা বড় নেতাদের কাছে কাজের বড় পরীক্ষা। পেটোয়া ইউনিয়নের লোক আছে এস্ট্যাব্লিশমেন্টে। নতুন রিক্রুটদের লিস্টটা মায় ঠিকানা সহ, তাদেরই কোনো সদস্য টাইপিস্ট টাইপ করে অথবা ফ্যাক্স রিসিভ করে; কর্তৃপক্ষ যতই ড্যাম-সিরিয়াস মুখ দেখিয়ে না-না করুক, পাঁচ মিনিটের মধ্যে খুব সহজে একটা কপি পৌঁছে যায় তাদের নেতাদের টেবিলে।

আর আমরা? কতরকম প্যাঁচপয়জার কসতে হয়!একটা পুরোনো ঘটনা মনে পড়ল সুমনের। ইউনিয়ন তৈরি হওয়ার পরে পরেই নতুন রিক্রুটমেন্ট হয়েছিল বি.এস.আর.বি.র আর হেড অফিস থেকে বিহারের লিস্টটা আসার অপেক্ষা শুরু হয়ে গিয়েছিল দুদিন ধরে।

যেদিন ফ্যাক্স পৌঁছোল, রাজীব খবর দিল। বিকেলে সে পৌঁছে গেল পার্সোনেল ম্যানেজারের টেবিলের সামনে। কিন্তু কিছুক্ষণ পরে দেখল, যা চ্যাঁচামেচি সে-ই করছে, রাজীবের গলাটা কেমন নরম। এরকম তো হয়না। কাজেই কিছুক্ষণ এটা অন্যায়! আপনারা মুখেই শুধু বলেন আপনাদের কাছে সব ইউনিয়ন এক। সামান্য একটা জিনিষ, কাল যারা এই ব্যাঙ্কেই জয়েন করবে তাদের লিস্ট, যাতে আমরাও তাদের গ্রিটিংস পাঠাতে পারি, আমাদের দেবেন না। অথচ ওরা পেয়ে গেছে …” এসব নীতিপ্রসঙ্গ কপচে রাজীবের হাত ধরে টেনে বেরিয়ে এল। সুইং ডোরটা বন্ধ হতে হতে শুনল পার্সোনেলের বিশ্বাস করুন ভাই, আমার এই টেবিল থেকে কারোর কাছে কোনো লিস্ট যায় নি …”

বাইরে এসে কিছু বলার আগেই রাজীব আশ্বস্ত করল, ব্যবস্থা হয়ে গেছে। আমাকে মুজফফরপুর পৌঁছোতে হবে আজ রাতেই। কাজেই আপনিও স্টিমার ধরুন। ওখানেই বলব গল্পটা।

 

হ্যাঁ। তখন মুজফফরপুর মানে তো স্টিমার। পহলেজা ঘাট। এক অন্য যুগ। এখন তো পুল তৈরি হয়ে গেছে পঁচিশ বছর হল। দ্বিতীয় পুলটাও তৈরি হচ্ছে তাতে আবার রেললাইনও থাকবে।

পরে রাজীবের মুখে যে গল্পটা শুনেছিল সেটা জোনাল অফিসের টাইপিস্টদের মধ্যেকার। জোনাল অফিসে টাইপিস্ট দুজন। সুহৈল হিন্দি, কিন্তু ইংরিজিও জানে। চাকলাদার ইংরেজি কিন্তু আবার স্টেনোও। মেজরিটি ইউনিয়নের খাস লোক। সুহৈল কথায় বার্তায় একটু বদমেজাজি কিন্তু আমাদের ইউনিয়নের ছেলেদের সাথে বেশি বন্ধুত্ব। রাজ্যের পাস করা ক্যান্ডিডেটদের লিস্টটা চাকলাদার টাইপ করবে। টাইপ মানে সেই পাতলা কাগজে সাত কপি, তার কার্বনও পাতলা একবারের পর দ্বিতীয়বার ব্যবহার করা যায় না। রাজীবের সাথে হওয়া কথা মত সুহৈল একটা পার্সোনাল কাজের কথা বলে চাকলাদারকে, ইংরেজির। চাকলাদার লিস্টটা টাইপ করেই শেষ কপিটা নিয়ে ছুটবে ইউনিয়নের ঘরে তাই অস্বীকার করে আর সুহৈলকে নিজেই করে নিতে বলে। সুহৈলের কাজটা ফেক, ফালতু ডকুমেন্টগুলো ছড়িয়ে টাইপরাইটারে কাগজ চড়িয়ে খুটখাট করে যায় আর আড়চোখে চাকলাদারকে দেখতে থাকে। টাইপ করে, পার্সোনেল অফিসারকে সাতটা কপি আর অরিজিনাল ফ্যাক্সটা দিয়ে চাকলাদার, টাইপে লাগানো আট নম্বর কপিটা নিয়ে যেই ছুটল ইউনিয়ন অফিসে, সুহৈল গিয়ে চাকলাদারের টাইপরাইটারে ঝুলে থাকা সাতটা কার্বন থেকে মাঝের দ্বিতীয়টা সরিয়ে একটা নতুন ওই রকমই কার্বন ফিট করে দিল। তারপর নিচে গিয়ে রাজীবকে খুঁজে আস্তে করে পকেটে গুঁজে দিল ভাঁজ করা কার্বনটা।

মুজফফরপুর রাজীবের শ্বশুরবাড়ি। আর সুমনেরও মুজফফরপুরে আসা হয়েই যায় কেন না ছোট জ্যাঠামশায়ের বাড়ি। কিন্তু রাজীবের শ্বশুরবাড়িতে কখনো সে যায় নি। তবে দেখল রাজীবের শালীই এসে দরজা খুলছে। ওকে সে চেনে। গিয়ে বসে রইল দুঘন্টা। মশার কামড় খেল এন্তার আর চা খেল দুবার। জলখাবার ফিরিয়ে দিল; রাজীব এলে একসঙ্গে খাবে। রাজীব এল রাত নটায় তাই জলখাবার আর হল না। আগে দুজনে রাতের খাওয়া সারল। আলোর সাশ্রয় ব্যাপারটার খুব চলন ছিল সেসময় এসব শহরগুলোয়। পুরোনো পনেরো ওয়াটের টাংস্টেন বাল্ব মানে কালি-মোছা লন্ঠন। সেই আলোয় কার্বনটা মেলে ধরে পাঠোদ্ধার করতে করতে একে একে সবকটা নাম ঠিকানা কাগজে লিখে নিল দুজনে মিলে। পরের দিন পাটনায়। আর কি! রাজা! পাড়া ধরে ধরে পাঁচছটা গ্রুপ করল সবাই মিলে কঙ্কড়বাগ এলাকার ঠিকানা, বোরিং রোড এলাকার ঠিকানা (কুর্জি, দীঘা ইনক্লুডেড), মহেন্দ্রু-সুলতানগঞ্জ। একেকজন একেক এলাকার দায়িত্ব নিল। চার দিন পর পেটোয়া ইউনিয়ন মুখ চুন করে দেখল তেইশ জনের মধ্যে এই ইউনিয়নের ঝুলিতেও এসেছে ছজন। ততদিনে সুহৈলেরই যে কোন কারসাজি আন্দাজ পাওয়া গেছে। ওরা ডিজিএমকে বলে জবরদস্তি বেচারাকে সুপারনিউমেরারি পোস্টিংএ ঠেলে দিল একটা ব্রাঞ্চে। সেটা অবশ্য পরে বদলাতে পেরেছিল সুমনেরাও। লাভের মধ্যে, সুহৈল পাকাপাকি তাদের মেম্বার হয়ে গিয়েছিল।

 

হঠাৎ খুব তাড়াতাড়ি মারা গিয়েছিল সুহৈল। ওর কথা মনে পড়লেই সুমনের মন খারাপ হয়ে যায়। তাদের ইউনিয়নের মেম্বার হওয়ার পর তার ওপর কতো আক্রমণ, হেনস্থা। তার ওপর সেও শালা রগচটা, ঝগড়া করতে করতে অফিসারদের মধ্যে কে বন্ধু কে শত্রু তাও গুলিয়ে ফেলে। বৃষ্টির মেঘলা দিন ছিল। ফুলওয়ারিশরিফের একটা পাড়ায়, মঞ্জিলের সঙ্গে গোরস্তান অব্দি পৌঁছেছিল। জোনাল অফিসে কতোবার ওর টিফিন থেকে ভাগ নিয়ে খেয়েছে! যাহোক, পরে ওর বৌটার চাকরি করাতে পেরেছিল কম্প্যাসোনেটে।

 

পাটনায় ফিরে এসে একদিন সাপ্তাহিক বৈঠকে মেন ব্রাঞ্চে গেছে সুমন। এখন আর সে অবস্থা নেই। তাদের ইউনিয়ন সংখ্যাগরিষ্ঠতার দিকে এগোচ্ছে। দুবছর আগের রিক্রুট দেবেশের গল্প শুনে সে নিজেই সিঙাড়া আর মিষ্টি আনিয়েছে সবার জন্য। দেবেশ মানে সেই ছেলেটা যার সাথে ব্যাঙ্গালোরে, মানে ইয়ালাহাঙ্কা থেকে আরো মাইলখানেক গিয়ে তাদের ট্রেনিং সেন্টারে দেখা করেছিল। দেবেশই পাঁচটা ফর্ম চেয়ে নিয়েছিল তার কাছ থেকে।

সেই দেবেশ নিজে উদ্যোগ নিয়ে সদ্য গিয়েছিল, রাঁচি। রাঁচি আবার পেটোয়া ইউনিয়নের ঘাঁটি। অথচ তারই মধ্যে গিয়ে দেবেশ ওখানকার জোনাল অফিসে নতুন ব্যাচের রিক্রুটদের সঙ্গে দেখা করে সবাইকে ফর্ম দিয়েছে, নিজেদের ইউনিয়নের বক্তব্য রেখেছে। অন্য ইউনিয়নের লোকেরা মারপিটের হুমকি দিতে শুরু করলেও জায়গা ছাড়েনি। শেষে ম্যানেজমেন্টের কয়েকজন কর্তা এসে হাতজোড় করায় বেরিয়ে এসেছে।

মিটিংএ বেশ কয়েকটি নতুন মুখ। কয়েকটি মেয়েও আছে। ওদের দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারে সুমন, আর বেশিদিন নেই তার বা তার বয়সের বন্ধুদের ইউনিয়নবাজির। নতুন ছেলেমেয়েদের হাতে দায়িত্ব দেওয়ার সময় ওই ছেঁদো প্রশ্নটা তুললে হবেনা, ওরা এখনো দায়িত্ব নিতে যোগ্য কিনা। প্রকৃতির নিয়ম অস্বীকার করে কোনো বদল আনা যায় না, এই সত্যটা মানতে হবে।

বক্তব্য রাখতে উঠে সুমন সেই দুটো রাতেরই গল্প শোনালো। মনে মনে আঁক কষছিল ফেসবুকে দেবেশ তার ফ্রেন্ড; মাঝেমধ্যে ওর টাইমলাইনে গিয়ে লক্ষ্য রাখে প্রতিবাদী স্টেটমেন্টগুলো ধরে ঠিকই ছেলেটা, কিন্তু! একটা আত্মকেন্দ্রিকতা আছে কি? ১৯৯০এর আগের পৃথিবীটা যে আর নেই! অবশ্য ও বয়সে তরুণ। বিয়ে করবে আজ নয় তো কাল। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় রীচ বাড়ানোর তো আর কোনো উপায় নেই একটু আত্মকেন্দ্রিক, আত্মমুগ্ধ হওয়া ছাড়া। সেল্‌ফি শব্দটাই তো এ যুগের! দেবেশের মতো ছেলেমেয়েদের যতো শিগগির সম্ভব ঠেলে দিতে হবে জলে, পেঙ্গুইন শিশুদের মতো। 

১৭.৪.২২

 

Saturday, April 16, 2022

কিশনগঞ্জের পথে

চায়ের সাথে আনারস
খেতে দিলে খাবেও না কেউ
                   উল্টে দেবে খোঁটা।
তবু দেখ বাড়ছে সাথে
পাশাপাশি দুটি ক্ষেতে
কালো-সবুজ, আলো-সবুজ;
মাটির নিচের রসদ থেকে
জুটিয়ে নিচ্ছে ভিন্ন সুবাস,
নিচ্ছে স্বাদ নিজের নিজের  
তিতকুটে তেজ, টকমিষ্টি
একটি বাঁচবে একশো বছর,
দিয়েই যাবে পাতা,
একটি মরবে টইটুম্বুর এক ফলনেই
                   ছড়িয়ে রক্তটা।

এপাশে ট্রেন ওপাশে বাস
          বাচ্চাগুলোর সহাস্য হাত
                   দুদিক পানেই ওঠা।

পাটনা
..১৪


 

ছায়াসকাল

ঘুম থেকে উঠে একটি নতুন জায়গায়
একটি অচেনা রাস্তায় ছায়াসকাল
সরকারি পরিসরে ভাঙা যন্ত্রপাতি,
       বাতিল উন্নয়ন ডুবিয়ে বেড়ে ওঠা বর্ষামাটি, ঘাস
তালগুঁড়ির চায়ের দোকানে বেঞ্চির
          নিশ্চিন্তির শীতল কালো আড্ডাপালিশ
চায়ে, পোড়াপাত্রের ছেঁকা লাগানো দুধ
 
বেলা চড়ে ছকবাঁধা ব্যস্ততায়
বাস বাইক সার বীজ ব্যাঙ্ক থানা ব্যান্ড চপ্পলের কাদাছিট
চোখে পড়া নতুন বলতে কিছু বিজ্ঞাপন আর
বড় বাজারদারদের ছাতে টাওয়ার, কিছু ডিশ

হঠাৎ একঝাঁক কিশোরী খলবল করে বেরোয় একটি গেট থেকে
বাঃ, এ তো কোনো কোচিংএর প্রথম খেপ!
          কখন ঢুকেছিল এরা ক্লাসে? 

পাটনা, জুলাই, ২০১২




গালিবের শহর

গালিবের শহরে ঘুরছি দুদিন যাবৎ
অথচ একটু দেখা করে আসব
                             পারছি না।
একজনকে দেখে কাল সন্ধ্যায় মনেও হল গালিব,
সাহস করে ডাকতেও পারলাম না  
যদি ঘুরে তাকান!
কী করে সইব তাঁর চাউনি
তাঁর একটাও শের যে এ মুহুর্ত্তে আমার 
মনে নেই!
 
কী করে চলছে আপনার?
 যাঃ, সে কি জিজ্ঞেস করা যায় ....

দিল্লীর কী করে চলছে!
কী করে চলছে গোটা দেশটার!
কী করে চলছে ...? বলে ফেললাম
একটু জোরেই বোধহয়
মেট্রোর চলন্ত সিঁড়িতে।

তখনি, সত্যি
তিনিই ঘুরে তাকালেন।

দিল্লী (ট্রেনে), ৫।৯।২০১২ 


তাডেপল্লিগুডেম

যখনি ভাবি কচি কলাপাতায় রোদ
মনে পড়ে একটু বেলা-সকালের তাডেপল্লিগুডেম।
বাঁধানো খালের দুপাড়ে কাপড়কাচা, স্নান
 
এমনই এক খালের সন্ধান পরে
সুনীতিবাবুর বালিদ্বীপে পেয়েছিলাম আর ওই খাড়াই
পাড়ের ওপর-নিচ ছোঁয়া দৌড়
পেলাম দেশভাগের শৈশবে সিয়ালকোটে।
 
যখনি ভাবি দেখি, তা সে কবেকার দেখা -
সাইকেলে পৌঁছে, একটু বেলা-সকালের তাডেপল্লিগুডেম,
মুখে রোদ্দুর ধরে হেসে উঠি কেননা
কলা নয়, নারকেলও নয়
মনেও নেই কোন পাতায় রোদ ধরেছিল, তবু
 
রোদ যে সকালে,
বাঁচার আরো বেশি বেশি ভাষার
ভিতরপাড়ার 
পাতায় পড়তে ভালবাসে 
তাই কি প্রমাণ করে নি বেলা-সকালের তাডেপল্লিগুডেম?

পাটনা, ২০।৫।২০১২  


বিমান মুখোপাধ্যায়

ঘর থেকে ঠিক বেরোবার মুখে শচিনকর্ত্তার
সেই গানটা ধরলেন বিমানদা আশ্চর্য!
এ ভাষা ধার করছি কেন?
পাটনার আবহাওয়ায়
বর্মনদা বা পুরোপুরি শচিন দেববর্মন বেশি মানায়,
বিমানবাবুকে তো চেনেও না কেউ।
আমিই বা চিনি কোথায়?
এই যা টিভিতে দেখছি।
অথচ এই কুম্‌হ্‌রার, নয়াটোলায় প্রতিদিন সকালে
গলির ছায়াটুকু পেরিয়ে বড়রাস্তার
                  রোদটা বিমানবাবুই
              মুখের ওপরে নেন মনে হয়
চশমায় মুচকি হাসেন; 

এই ছবিটুকু না রাখলে
কী করে গাই হিন্দির সাথে বাংলায়ঃ
আমি ছিনু একা, বাসর জাগায়ে!

পাটনা, জানুয়ারি ২০১২ 

 


জল নেই

জল নেই;
খাতটা তো আছে!
রাতে রেলগাড়ি পেরোবার সময়
লোহার সেতুটা বাজে একই রকম
সওয়ারিদের
ঘুম ভিজিয়ে দেয়
না-থাকা জল।
তবে যারা নামবে সামনের
এগিয়ে আসা স্টেশনটায়,
উঠে, চাদর গুটিয়ে
ভীড় করছে কামরার
দরজায়,
বিশেষ করে যারা বাসিন্দা শহরের
তারা জানে
মরা নদী,
হড়কাও আসেনা কোনো বর্ষায়।
তারা ঘুরে তাকায়
জানলার কপাট তোলা শব্দে -
কেউ না কেউ করেই
প্রতিটি ভোররাতে
নদীটির বুকে জলের সন্ধান।

স্টেশনে নেমে ছড়িয়ে পড়তে পড়তে
তারা ঘুমস্বরে আলোচনা করে
নদীটির গতিপথ, শেষ জল,
এলাকার অনাবৃষ্টি, কিছু প্রস্তাবিত সেচখাল,
এবং অবশ্যই
দর্শনতত্ত্ব,
নদী বাঁচানোর। 

আসল কথা, একজোট হতে হবে সবাইকে!
তবেই আসবে জল!

কথাটি শুনে
কোথাও ঘুরে তাকায়
আরো কিছু লোক
যারা এ নদীর তীর থেকে
এদেশের, পৃথিবীর অন্য সব
বড় বড় সুন্দরতর শহরে
বড় বড় নদীর তীরে চলে গেছে।

পাটনা
২৪।১১।২০১৩


 

বন্যার এলাকা

 বন্যার এলাকা।
এদিককার বাড়িগুলো এমনি।
ছেড়ে পালাতে সুবিধে,
ত্রাণের টাকায় গড়া টিন-মাচা।
 
বন্যার সাথে লড়াই
সে কি শুধু নেতাদের কাজ?
হাকিমদের ব্যস্ততা?
বন্যার সাথে লড়ার নামে প্রতি বছর
তারা গুছিয়ে নেয় দিল্লী, মুম্বায়ে ফ্ল্যাট
পাটনায় জমি
ব্যাঙ্কে আমানত
বউয়ের গলায় জড়োয়া।
 
আমরা শুধু ত্রাণের জন্য লড়ি।
গ্রাম ছেড়ে পালাবার জন্য ধাক্কাধাক্কি করি।
নদীকে পুজো দিই যেমন বলে পুরোহিত।

অথচ নদীর সাথে বেশ তো লড়ছি!
বলতে, হারিয়েই দিচ্ছি নদীকে!
নিশ্চিহ্ন করে ফেলছি প্রায়!
প্রতিবার নতুন জল আনতে হচ্ছে তাকে
চল্লিশ-পঞ্চাশ হাজার কিউসেক,
আমাদের হারাতে, তাড়াতে
নিজেকে বাঁচাতে!

পাটনা
..১৪

 


ধুবড়ি - ২৯.১২.২০১৩

এক বৃক্ষে বহুবিধ পাখির কূজন!
গদাধর-কূলে কবিতার যৌথ উচ্চারণ
বাংলা, অসমিয়া,
বোড়ো, টোটো, গোয়ালপাড়িয়া
 
ডানার ঝাপটে ঝরে পাতা,
ওড়ে নীড়বাঁধা খড়,
বুকের পালকও কিছু খসে।
দেশ বাজে -
অর্থ ত্যাগ করে শব্দ, হয় শুধু সুর
ভাষান্তরে সখ্যের মানসে।
 
কুয়াশাবৃত দুদিন ভাষায় ধর্মে মিশি অহর্নিশ;
ডাইরিতে ফোটে রোদ
দলসিংপাড়া, কোকরাঝাড়, টোটোপাড়া, বেলোনিয়া,
গৌরিপুর, বিলাসিপাড়া, লুমলিং
বন্ধুত্বের নয়া কিছু পথের হদিশ। 

পাটনা
৩১.১২.২০১৩