Labels
- Ajker dintar janya (10)
- Alokji's poems in English translation (6)
- Articles (116)
- Behar Herald (2)
- Bhinshohore (55)
- Biography (1)
- Engels (11)
- Hindi (48)
- Housing Question (10)
- Kedarnath Bandopadhyay (1)
- Krishak Sabhar Smriti (2)
- Lok Janwad (4)
- Magadher Sahitya (6)
- Meghsumari (155)
- Phire ese (170)
- Plays (10)
- Poems (462)
- Poems by Robin Datta (5)
- Priyo Pochis (8)
- Sanchita (1)
- Sirir mukhe ghor (20)
- sketches (6)
- Smritiprasanga (2)
- Somudro Dubhabe Dake (29)
- Song (1)
- Songs (7)
- Stories (51)
- Translations (88)
- Video (5)
- कौन थे इश्वरचन्द्र विद्यासागर (200वीं जन्मजयंती पर एक कर्मवीर की कीर्तिगाथा) (19)
Saturday, February 24, 2024
ভাঙা গলির পাথরগুলোয়
Friday, February 23, 2024
ডাক্তারবাবুর সঙ্গে আমার করিমগঞ্জ সফর
বিহার বাঙালি সমিতির বার্তা নিয়ে একবার উত্তর-পূর্ব ভারতের বাঙালিদের মাঝে পৌঁছোতে পারলে ভালো হয়, এই প্রস্তাবটা প্রথম দিয়েছিলেন সমিতির সর্বপরিচিত শুভানুধ্যায়ী প্রফেসর তন্ময় বীর। কিন্তু সুযোগ আসছিলো না। গত বছর, বোধহয় মে মাসেই একটা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করার প্রস্তাব এল, কিন্তু আমরাই নানান ব্যস্ততায় সুযোগটা হারালাম। নভেম্বরে যখন ‘বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন’এর তরফ থেকে তাঁদের সম্মেলনে অংশগ্রহণ করার জন্য আমন্ত্রণ এল, ডাক্তারবাবুকে বলায় তিনি সাগ্রহে স্বীকার করে নিলেন।
১৮ই জানুয়ারি বিকেলে
রওনা হয়ে রাতে কলকাতা। শেষ রাতে শিলচরের দিকে উড়লাম। শীতরোদে শিলচর থেকে বেরিয়ে দু’ঘন্টা পর করিমগঞ্জ।
করিমগঞ্জে আগে কখনো
যাই নি। বস্তুতঃ, বরাকবঙ্গে বা বরাক উপত্যকার কোনো শহরেই আগে কখনো যাই নি। একবার বহু
আগে আমি শিলচরে এক রাত হোটেলে থেকেছিলাম কিন্তু সে সফরের উদ্দেশ্য ভিন্ন ছিল। এমনকি
শিলচরের ভাষা শহীদদের কথাও তখন জানতাম না।
শিলচরে আমাদের সফরসঙ্গী
হলেন করিমগঞ্জের এক তরুণ স্কুলশিক্ষক এবং গাড়ির চালক। দুজনেই করিমগঞ্জের বাসিন্দা।
আগেই যেমন বলা ছিল, শহরে ঢুকে সবচেয়ে আগে রেলস্টেশন চত্বরে ‘ভাষা-শহীদ স্মারকস্তম্ভে’ ফুল দিলাম।
এটা ডাক্তারবাবুর আর আমার দুজনেরই বহু দিনকার ইচ্ছে ছিল।
করিমগঞ্জ এখন জেলা
সদর। সম্মেলন উপলক্ষে শহরের বেশ কয়েকটি জায়গায় আলাদা আলাদা ধরণের অনুষ্ঠান চলছে সেটা
জেনেছিলাম। কিন্তু শহরটা একেবারেই অজানা বলে একা একা বেরিয়ে ঘুরে আসা সম্ভব ছিল না।
হোটেল থেকে বেরিয়ে নিজেরাই সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের জায়গাটার দিকে রওনা দেব কিনা
ভেবে ফোন করছিলাম তখনই আমাদের সঙ্গী এবং গাইড হিসেবে ‘নিযুক্ত’ করিমগঞ্জ কলেজে
ইতিহাসের অধ্যাপক বজলুর রহমান খাঁ সাহেব দেখা দিলেন। আগামী দু’দিন আমরা নিজেদেরকে তাঁর হাতেই সঁপে দিলাম।
বজলুরভাই ছিলেন বলে
যে ব্যাপারটা আন্দাজ করতাম সেটা করিমগঞ্জ শহরে সন্ধ্যায় স্পষ্ট দেখতে পেলাম। বেঁচে
থাকার স্তরে স্তরে বাংলা ভাষিক-জাতীয়তার বিভাজনের যন্ত্রণা। যদি শহরের একেকটা এলাকা
পার হতে হতে কানে শোনেন – এই যে রাস্তার বাঁকটা
দেখছেন এখানে একটা খাল ছিল (এবং তারপর সে খাল-সম্পর্কিত জনশ্রুতি); ওই যে আলোটা দেখছেন
ওর পাশ দিয়েই আমরা বাড়ি ফিরতাম, এখন ওটা অন্য দেশ (এবং তারপর সে বাড়ি ফেরার গল্প) …, আপনার ভিতরটাতেও পাড় ভাঙতে থাকে।
আর তারপর! এক ষড়যন্ত্রমূলকভাবে
সীমায়িত গণভোটে (সিলেট রেফারেন্ডাম ১৯৪৭) সিলেট জেলাকে দুভাগে ভাগ করার বাহাত্তর বছর
বাদে যারা ভারতে থাকার পক্ষে রায় দিয়েছিল তাদেরই সরকারি আমলা আর পুলিস এসে ধমকায়, “কাগজ দেখান! প্রমাণ করুন যে আপনারা ঘুসপেঠিয়া, বহিরাগত নন!” আর তাও শুধু কোনো স্থানিক দুর্বৃত্তায়ন বা প্রশাসনিক অব্যবস্থার
কারণে নয়, দেশের নতুন আইনের অনুপালনে … তখন কেমন
লাগে?
আমরা যারা বিহারে
থাকি, আমাদের বুকে বিভাজনের কষ্টটা এক রকম। ভৌগোলিক ভাবে দূরের, এবং অনেক ক্ষেত্রে
সামাজিক স্মৃতিবাহিত। কিন্তু যাকে বরাকবঙ্গ বলা হয় তার বুকে বিভাজনের কষ্টটা প্রতিদিনকার,
যেন ঘরের দরজার পাল্লায় একটা খোলা পেরেক বা টিনের ফালি, খুলতে যাই অথবা বন্ধ করতে যাই,
রোজ একই জায়গায় খচ করে বিঁধে জখম করে দেয় – জখমের ওপর
জখম; আর সারতেই চায় না। কুশিয়ারার ওপারের অন্ধকার যেমন, সামনে এসে দাঁড়ানো অস্ত্রসজ্জিত
বিএসএফও তেমন, জখমটা খুঁচিয়ে দেয়।
অনুষ্ঠানের মঞ্চ অব্দি পুরো রাস্তাটা সাংস্কৃতিক ইতিহাসের স্থানিকতার জানান দিচ্ছিল। উদ্বোধনী অনুষ্ঠান ছিল বিপিনচন্দ্র পাল স্মৃতিভবনে। তিনি ভারতের জাতীয় নেতা, লাল-বাল-পাল ত্রয়ীর অংশ, এবং অবিভক্ত সিলেটের মানুষ। করিমগঞ্জ থেকে জকিগঞ্জ হয়ে সড়কপথে চার ঘন্টার পথ হবিগঞ্জ; সেখানেই তাঁর জন্ম। সেই স্মৃতিভবনে যাওয়ার রাস্তার মুখে বসানো হয়েছিল মুজতবা আলি স্মৃতি তোরণ। সৈয়দ মুজতবা আলির জন্ম তো খাস করিমগঞ্জেই। তোরণ পেরোবার পর ছিল একে একে ‘নলিনীকান্ত দাশ স্মৃতিতোরণ’, ‘মতীন্দ্র ভট্টাচার্য স্মৃতিতোরণ’, ‘সুজিত চৌধুরি স্মৃতিতোরণ’, ‘নৃপতিরঞ্জন চৌধুরি স্মৃতিতোরণ’, ‘তরুণ দাস স্মৃতিতোরণ’, ‘সুবীর কর স্মৃতিতোরণ’ … আরো অনেক। বিপিনচন্দ্র পাল স্মৃতিভবনে ঢুকে বোর্ডে নজর বুলিয়ে দেখলাম এঁদের অনেকেই ‘বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন’এর করিমগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি বা সম্পাদক ছিলেন এক সময়।
বিহারকে জবরদস্তি বহির্বঙ্গ করা হয় নি। মধ্যযুগ থেকেই বিহারের ভাষিক-জাতীয় স্বরূপ ভিন্ন হতে শুরু করেছিল। আকবরের আমলের পনেরটা সুবার মধ্যে বিহার আলাদা, বঙ্গাল আলাদা। ইংরেজ আমলে প্রশাসনের সুবিধের জন্য প্রেসিডেন্সিতে শামিল করে নিলেই তো বিহার আর বাংলা এক হয়ে যায় না! বিশ শতকের শুরুতে বিহার-ওড়িশাকে বাংলা থেকে ছিন্ন করার পিছনে ইংরেজদের অভিসন্ধি বা কুমতলব যাই থাক না কেন, উনিশ শতকের শেষে শুধু শিক্ষিত বিহারিরাই চাইছিলেন তা নয়। বিচক্ষণ বাঙালিদেরও একাংশ বুঝছিলেন যে বিহারকে আলাদা করতেই হবে আজ নয় তো কাল। ভাষিক-আদমশুমারিতে বিহার বহির্বঙ্গই ছিল। কিন্তু বরাকবঙ্গ – শিলচর, করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি অঞ্চল তো খাস অন্তর্বঙ্গ! বিভাজনের লীলায় কি অদ্ভুত ভাবে বহির্বঙ্গ হয়ে উঠল! ভারতের ভাষা-মানচিত্রের হিসেবে দেখলে, পশ্চিমবঙ্গকে মূলভূমি ধরতে হয়। বিহারের মাননীয় রাজ্যপাল আবার গতবছর কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশ অনুসারে ‘পশ্চিমবঙ্গ দিবস’ উদযাপন করতে বিহার বাঙালি সমিতিকে ডেকেছিলেন। আমারও কিছু বলার সৌভাগ্য হয়েছিল। বলেছিলাম, আমি খাস পাটনার জক্কনপুর মোহল্লার বাঙালি স্যার …! অর্থাৎ, আদতে বিহারি। কিন্তু করিমগঞ্জের বাঙালি? বা সিলেটের সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক? বাংলার সঙ্গে তাঁদের সম্পর্ক? তার ভৌগোলিক ছেদটা জোর করে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হয়েছে। তারপর সামাজিক, সাংস্কৃতিক দুর্ব্যবহারের কয়েকটা স্তর গড়ে উঠেছে স্বাধীনতা-উত্তর ভারতীয় অর্থনীতির সঙ্কটপর্বগুলোকে কাটাতে প্রয়োজনীয় ক্রমবর্দ্ধমান রাজনৈতিক সুবিধেবাদে।
স্থানিক ইতিহাস নিয়ে আজকাল বেশ কাজকর্ম হচ্ছে। কখনো কোথাও কোনো সভায় শুনেছিলাম তামিলনাডুতে এটা একটা আন্দোলনের মত। কোনো গ্রুপ একেকটা গ্রাম ধরে তার ইতিহাস, অনুলিখিত বা কথিত, সিডিতে ধরে রাখতে শুরু করেছে। পাটনায় আমার যখন যেখানে সুযোগ হয়েছে, এর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছি। এদিকে একেবারে ভিন্ন দিক থেকে ব্যাপারটা প্রণোদিত হয়েছে। মোবাইলের যুগে সামাজিক মাধ্যম আজ এক রাত-দিন বহমান মিলনমেলা। তাতে অনেকেই নিজের নিজের এলাকার ছেলেমেয়েদের সাফল্যের কথা বলতে গিয়ে সেই এলাকাটা সম্পর্কেও বলেন। ইউপিএসসির পরীক্ষায় হোক, বড় বিজ্ঞান সংস্থার বড় চাকরি পাওয়ায় হোক, টেলিভিশনে গান, নাচের প্রতিযোগিতায় হোক, তরুণ মুখগুলোর মফস্বলী বা গ্রামীণ শিকড় চাগিয়ে দিচ্ছে সেই এলাকাটা সম্পর্কে জানার ইচ্ছে। বিজ্ঞাপনে ট্যাগলাইন আসছে ‘রামপুরকে লোকে আজ পার্ক (একটা স্পোর্ট) দিয়ে চেনে’। ওমুক গ্রামের মেয়েদের কথা আসছে, তারা স্থানীয় এফএম রেডিও চালায় নারীদের ওপর জুলুমের প্রতিরোধে। হরিয়াণার মেয়ে কুস্তিগীর বা মণিপুরের মেয়ে বক্সার, আসামের মেয়ে ওয়েটলিফটার, এমনকি বড় বড় কম্পানির মেয়ে বাউন্সারেরাও সব গ্রামের মেয়ে এবং তাদের মুখে উঠে আসছে সেই গ্রামের সামাজিক দ্বন্দ্বের কথা – সেই সব মানুষের কথা যারা হাজার প্রতিকূলতার মধ্যে ঐ মেয়েদের সমর্থন করেছে, সাহস যুগিয়েছে। অতীত পথ দেখাচ্ছে বর্তমানকে। বই, উপন্যাস লেখা হচ্ছে ছোটো ছোটো শহরকে বিষয় করে, তারা ভেঙে দিচ্ছে মেট্রোপলিসের বা রাজধানীর গুমোর। যদিও বস্তুনিষ্ঠ স্থানীয় ইতিহাস একটা ভিন্ন কাজ। তবে কাজটার গুরুত্ব আজ অনেকে বুঝছে। আর করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি, শিলচর বা বরাক এলাকার স্থানিক ইতিহাস এখানকার মানুষজনের জন্য আরো গুরুত্বপূর্ণ কেননা সেটা শুধু বিভাজনের রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের প্রতি ক্ষোভ নয়, পরবর্তী পঁচাত্তর বছরের সামাজিক, ভাষিক ও সাংস্কৃতিক দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ।
সম্মেলনে পর পর তিন
দিন তিনটে আলোচনাচক্র ছিল, “উত্তরপূর্ব ভারতের
বাঙালিঃ অস্তিত্ব, সঙ্কট ও উত্তরণ”, “বাঙালির জাতিপরিচয় ও সংস্কৃতির বিকাশঃ স্মৃতি ও সত্তার উত্তরাধিকার” এবং “সমস্যাদীর্ণ বরাক
উপত্যকাঃ ভবিষ্যতের পথচিন্তা”। আমরা শুধু দ্বিতীয়টাতেই
অংশগ্রহণ করতে পেরেছিলাম। কিন্তু তিনটেরই বিষয়ের উল্লেখ করলাম প্রেক্ষিতটা বোঝাতে।
দুদিনের যাত্রায়
অনেক মানুষের সঙ্গে আলাপ হল। তাঁদের কারোরই জীবনযাপন বরাকে সীমিত নয়। অনেকেরই বিহার
বা হিন্দী এলাকার মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব আছে। কলকাতা যাওয়া আসা তো আছেই। কিন্তু কথায়
বার বার অন্ধকার দুশ্চিন্তার ফিরে আসছিল ‘তৃতীয়’ আলোচনাচক্রের বিষয়টা – বরাকঃ ভবিষ্যতের
পথচিন্তা! আর চিন্তার কারণগুলোও স্পষ্ট। দেখতে পাওয়া যাচ্ছিলো – সাংস্কৃতিক সম্মেলনের ওপর গোয়েন্দা খবরদারি আর পরের দিন রাস্তায়
গেরুয়া মিছিলে। সরকারি ব্যাঙ্কের কয়েকটা শাখা দেখলাম, সাইনবোর্ডে বাংলা নেই। ভাষিক
জনসংখ্যার নকশাটা সময়ের সঙ্গে পাল্টাবেই। রোজগার, ব্যবসা সবই বাইরে থেকে লোক টানবে।
কিন্তু সেটাকে কাজে লাগিয়ে মূলনিবাসীকেই কোনঠাসা করে দেওয়া! ‘বহিরাগত’র সন্দেহ ছড়িয়ে দেওয়া
দেশের মনে। তাদের প্রতি, যারা জনমতের বিরুদ্ধে হওয়া জনমতসংগ্রহেও (উপরুল্লিখিত রেফারেন্ডামে)
এদেশে থাকার পক্ষে রায় দিয়েছিলো!
সংগঠনের কর্মকর্তা
ও কর্মী-স্বেচ্ছাসেবকদের আন্তরিক আতিথেয়তায় মুগ্ধ হলাম। আর এলাহি খাবার ব্যবস্থায় প্রায়
হাবুডুবু খেলাম।
এক অদেখা বাংলার
স্বপ্নলীন স্মৃতি সঙ্গে নিয়ে ফিরলাম।
২৩.২.২৪
Wednesday, February 21, 2024
হিংসে
চিৎকার করে হাত নেড়ে আমাদের দিকে ফেলতে বলছি;
যা: ছাতের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বোন
ঝপ করে জলে পড়লো চপারের
হাওয়ার ধাক্কায় ...
বন্যায় ছাতে তোলা বইয়ের ডাঁইটা রাতভর
প্লাস্টিকের ঢাকা চাপা দিয়ে বাঁচিয়েছিলাম
আটচল্লিশ বছর আগের, আমার শহরের সেই বন্যায়!
কেমন ভ্যাদা ছিলাম!
মনে হতো কী যেন বিরাট কিছু করেছি
একটা বন্যা পেরিয়ে ...
আর আজ ওকে দেখ!
ছোট্টো মেয়েটা
কোসির গ্রামের ফিবচ্ছরের বন্যায়
বাঁশের মাচাঘরে দিব্যি বইখাতা ছড়িয়ে বসেছে,
পরীক্ষা দিতে হবে তো!
দুর্যোগের অভ্যাস থাকলে মাথায়
কতো সুবিধে হতো বাঁচাটা বুঝতে!
২১.২.২৪
Sunday, February 18, 2024
শীতে বৃষ্টি
রাণার মৃত্যুতে
Saturday, February 17, 2024
বিহার বাঙালি সমিতির ইতিহাসের তিনটে পর্ব
ভুগোলের সঙ্গে রাজনীতির যে সম্পর্ক সেটা আমি না জানলেও বিদ্বানেরা তো জানবেনই। মনে প্রশ্ন জাগে না, যে নিচের ঘটনাগুলোর পাশাপাশি ঘটা নিছক কাকতালীয় না অন্তর্সম্পর্কিত? – (ক) ১৯৩৬এ বিহার ও ওড়িশার বিভাজন এবং ১৯৩৮এ বিহার বাঙালি সমিতির প্রতিষ্ঠা; (খ) ১৯৬৭ সালে বিহার সহিত নয়টি রাজ্যে সম্মিলিত বিধায়ক দলের সরকার প্রতিষ্ঠার আগের অস্থির সময় এবং তখনই, ১৯৬৬ সালে নিষ্ক্রিয়১ বিহার বাঙালি সমিতির পুনর্গঠন এবং পুনরুজ্জীবন; (গ) ২০০০ সালে বিহার ও ঝাড়খন্ডের বিভাজন এবং ২০০৬ সালে বিহার বাঙালি সমিতির বিকাশের নতুন পর্যায়ের প্রারম্ভ!
তারও আগে গেলে, বাংলা-বিহার বিভাজনের পরেই তো ইংরেজ প্রশাসন
কর্তৃক ডোমিসাইল রুল সম্পর্কিত সার্কুলার জারি হওয়া, বিহারে বাঙালিদের সঙ্গে সরকারি
দুর্ব্যবহারের প্রারম্ভ ও ফলশ্রুতিতে বিহার বাঙালি সমিতির জন্ম।
সমাজবিজ্ঞানে কার্য্যকারণ সম্পর্কগুলো এত সরল হয় না। তবে
এটা স্পষ্ট যে সমিতির কাজেকর্মে ব্যস্ততা যখনই বেড়েছে, নতুন উদ্যমে যখনই শুরু হয়েছে
সাংগঠনিক উজ্জীবন, তার সম সময়ে দেখা যাচ্ছে একটা ভৌগোলিক বিভাজন। অর্থাৎ, হয়তো এভাবেও বলা যায় যে (১) যখনই বিহার
ছিন্ন হয়েছে, সেখানকার বাঙালির বাঙালিত্বের যে একটা জনবিস্তৃতি, একটা বিশেষ সামাজিক
অস্মিতা ছিল সে-যাবৎ স্মৃতি ও সত্তায়, তাতেই সবচেয়ে প্রবল কুড়ুলের ঘা পড়েছে; (২) আবার
তখনই সরকারে, প্রশাসনে ও মিডিয়ার একাংশে বেড়েছে বিশেষ করে বাঙালিদেরই বিহারের জনজীবন
থেকে বিচ্ছিন্ন করার চেষ্টা – কখনো ‘বহিরাগত’, কখনো
‘নগণ্য’ বা
‘নেই’ বলে,
আর (৩) তখনই অবশিষ্ট বাঙালির বেশি করে মনে হয়েছে তাদের সংগঠনটাকে জিইয়ে রাখার কথা।
প্রথম বার তো মূল বাংলাই বিচ্ছিন্ন হল, তারপর ওড়িশা বিচ্ছিন্ন
হল, তারপর মানভূমের বড় অংশ বিচ্ছিন্ন হল (প্রভাবটা পড়তে সময় লাগলো সংগঠন একেবারেই নিষ্ক্রিয়
ছিল বলে; রাজনৈতিক অস্থিরতা শুরু হওয়ার চাপে চাগিয়ে উঠলো) আর সব শেষে ঝাড়খন্ড বিচ্ছিন্ন
হল, নতুন অধ্যায় শুরু হল।
মোটামুটি ভাবে বলতে গেলে সমিতির ইতিহাসে বিকাশের এই যে তিনটে
পর্যায় আছে সে-তিনটেরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে।
১
১৯৩৮ সালে বিহার বাঙালি সমিতির প্রতিষ্ঠা হল। পাটনার এংলো-স্যাংস্কৃট
স্কুলে ১২ই ফেব্রুয়ারি যে বৈঠকে সমিতির প্রতিষ্ঠা হল, তাতে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা
সারা বিহার থেকে এসেছিলেন। পাঠানো নোটিসে লেখা ছিল –
“A representative meeting of
the Bengalees residing in Bihar will be held at the Suhrid Parishad and Hemchandra
Library on Saturday, the 12th February at 5 p.m. to consider various
questions of interest to the community and to organise a strong Central
Association of the Bengalees in Bihar on a democratic basis.
“You are cordially invited
to attend.”
P. R. Das
Convener
এই নোটিসে মোট একুশটা জেলা সদর বা শহর – পাটনা,
রাঁচি, গয়া, ছাপরা, ডালটনগঞ্জ, পুরুলিয়া, ভাগলপুর, জামশেদপুর, ঝরিয়া, পূর্ণিয়া, মুজঃফরপুর,
দ্বারভাঙ্গা, মোতিহারী, আরা, সাঁওতাল পরগণা, হাজারীবাগ, মুঙ্গের, সমস্তিপুর, চাইবাসা,
পাকুড় এবং দুমকা – থেকে মানুষ এসেছিল।
কোনও কারণে সুহৃদ পরিষদ ও হেমচন্দ্র গ্রন্থাগারে বৈঠক হতে
পারে নি, এখন যে স্কুলটাকে আমরা পি এন এংলো স্কুল বলে জানি, সেখানে হয়েছিল।
স্পষ্টতঃ সমিতি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে একজন ব্যক্তি কর্তৃক
(তা সে যতই স্বনামধন্য হন না কেন) আহ্বায়িত বৈঠকে এতগুলো জেলা থেকে মানুষের আসা প্রমাণ
করে সংগঠন গড়ার প্রয়োজনীয়তা বিশেষ বোঝাতে হয় নি, সবারই মনের চাহিদা ছিল।
তার প্রধান কারণটা সবাই জানেন। ভকতপ্রসাদ মজুমদার এবং গুরুচরণ
সামন্ত লিখিত “বিহার বাঙালি সমিতির ইতিবৃত্ত” বিগত
পঁচিশ বছর ধরে সমিতির দপ্তরে লভ্য। তাতে সমিতির প্রথম বার্ষিক অধিবেশনে (জামশেদপুর,
৮ই এপ্রিল ১৯৩৯) প্রথম সম্পাদক শৈলেন্দ্রনাথ দত্ত কর্তৃক প্রদত্ত ভাষণের প্রাসঙ্গিক
অংশ উদ্ধৃত করা হয়েছে। এদিকে দু’তিন বছরে কলকাতা আন্তর্জাতিক
পুস্তক মেলা উপলক্ষে দুটো বইও প্রকাশিত হয়েছে – ‘বিহার
বাঙালি সমিতি, সংহতি ও সমন্বয়ে …” এবং ইংরেজিতে “দি বিহারি
বেঙ্গলি কোশ্চেন”। কাজেই সে বিষয় নিয়ে এখন আলোচনা
করবো না।
কিন্তু অন্য একটি দিক উল্লেখ করা বোধহয় অপ্রাসঙ্গিক হবে
না। উপরুল্লিখিত “… ইতিবৃত্ত” বলছে
–
“১৯৩৮ থেকেই যে কেউ জাতি, ধর্ম,
পেশা নির্বিশেষে সমিতির সদস্য হতে পারেন। সমিতির সকল সদস্যই বিহারবাসী। … ১৯৩৮
সালে যাঁরা দাতা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে পুরুলিয়ার ললিত মিত্র মহাশয়ের এক হাজার টাকা ও
দেওঘরের শিবকালী সোম মহাশয়ের পাঁচ টাকা দান সম্পাদক কর্তৃক সমান প্রশংসায় স্বীকৃত হয়েছে।
… পুনর্গঠিত সমিতির বীরকিটি এবং আগলই শাখার সকল কর্মকর্তাই
ইসলাম ধর্মাবলম্বী, অধিকাংশ সদস্যও তাই। ১৯৭৮-এর ধলভূমগড় শাখার সম্পাদক ছিলেন শ্রী
মাধব রাও (বাঙলা ও তেলেগুভাষী), মোসাবনী শাখার সভাপতি ছিলেন শ্রী যদুনাথ বাস্কে (বাঙলা
ও সাঁওতালীভাষী) এবং সহ-সভাপতি ছিলেন শ্রী হৃষিকেশ দাশ (বাঙলা ও ওড়িয়াভাষী)।”
১৯৩৮এর পর থেকে সমিতির বার্ষিক অধিবেশন হয় যথাক্রমে, জামশেদপুর
(১৯৩৯), হাজারিবাগ (১৯৪০), মুজঃফরপুর (১৯৪১), ভাগলপুর (১৯৪২), মুঙ্গের (১৯৪৩), দ্বারভাঙ্গা
(১৯৪৪), পুরুলিয়া (১৯৪৫), পাটনা (১৯৪৬), জামশেদপুর (১৯৪৭)।
এই দশ বছরে সমিতির ‘লক্ষ্য
ও উদ্দেশ্য’ অনুসারে কী কী কাজ হয়েছিল তার
বিস্তারিত বিবরণ এ মুহূর্তে লভ্য নয়। ‘ডোমিসাইল
রূল’ নামক বিভেদনীতিটার আক্রমণ প্রতিহত করার প্রথম উদ্দেশ্যে
যে সমিতি সফল হয়েছিল তা সবাই জানেন। এবং এই লড়াইয়ে সমিতি যে নিজের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক
চরিত্রকে সুসংহত করেছিল তা, সদস্যতা ও সম্মেলন সম্পর্কিত ওপরের দুটো প্যারাগ্রাফেই
স্পষ্ট।
‘ … ইতিবৃত্ত’এ লেখা
আছে, “১৯৪১-এর পর থেকে ধীরে ধীরে, এবং ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত
সমিতি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে।” খুব স্বাভাবিক! বিহার
বাঙালি সমিতির ইতিহাসের প্রথম পর্যায় শুরু হওয়ার দেড় বছরের মধ্যে শুরু হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ
এবং চার বছরের মাথায় শুরু হয় ‘ভারত ছাড়ো আন্দোলন’
এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের শেষ পর্যায়। সমিতির চরিত্র প্রথম থেকেই ‘অরাজনৈতিক’। যদিও
জাতীয় স্বাধীনতা সঙ্কীর্ণ অর্থে শুধুমাত্র রাজনৈতিক এজেন্ডা নয় তবু সমিতির ব্যানারে
সে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করা সম্ভব ছিল না। কেননা সদস্যরা সবাই নিশ্চয়ই কোনো একটি ভাবধারার
মানুষ ছিলেন না। তাই তাঁরা নাগরিক হিসেবেই সে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে থাকবেন। আর দেশের
ভবিষ্যৎ-নির্দ্ধারক সর্বাত্মক আন্দোলনে ছোটো ছোটো ভাষিক ও অন্যান্য পরিচয়-ভিত্তিক সংগঠনগুলোর
কাজকর্মে ভাঁটার টান আসবে সেটাই তো স্বাভাবিক!
১৯৩৮ সালে সমিতির প্রতিষ্ঠা-বৈঠকেই ‘বিহার
হেরাল্ড’এর তদানীন্তন মালিক রায় বাহাদুর
মিহির নাথ রায় পত্রিকাটির মালিকানা অধিকার বিহার বাঙালি সমিতিকে দেওয়ার প্রস্তাব দেন।
সমিতি সে প্রস্তাব স্বীকার করে। ‘বিহার হেরাল্ড’এর ওপরে
আমরা আজও লেখা দেখতে পাই, ‘সেকুলারিজম এ্যান্ড ডেমোক্র্যাসি
ইজ আওয়ার মোটো’। আপাততঃ বিহার হেরাল্ড ডিজিটাইজেশনের
কাজ চলছে। হয়ে গেলে আমরা ওই পত্রিকারই পৃষ্ঠা থেকে হয়তো সমিতির ১৯৩৮-১৯৪৭ পর্যায়ের
কাজকর্ম সম্পর্কে আরো কিছু তথ্য পাবো।
কেউ বলতে পারে, স্বাধীনতা সংগ্রামের বছরগুলো তো বুঝলাম।
তারপর? তা, তারপরের বছরগুলো কি দেখতে পান? সাতচল্লিশে দেশভাগের মর্মান্তিক রাজনৈতিক
চক্রান্তের মধ্যে দিয়ে স্বাধীনতা, পঞ্চাশে সংবিধান গ্রহণ, একান্নোয় প্রথম পাঁচসালা
পরিকল্পনা, একান্নো-বাহান্নোয় প্রথম সাধারণ নির্বাচন, তিপ্পান্নোয় রাজ্য পুনর্গঠন আয়োগ
গঠন, পঞ্চান্নোয় তার রিপোর্ট ও পুনর্গঠনের কাজ শুরু, ছাপ্পান্নোয় দ্বিতীয় পাঁচসালা
এবং শিল্পনীতি প্রস্তাব, এক দিকে দেশের শ্রীবৃদ্ধি আর অন্য দিকে মূল্যবৃদ্ধি, খাদ্য-যোগান,
বেকারি, দারিদ্র-দূরীকরণ ইত্যাদি প্রশ্নে ব্যাপক মোহভঙ্গ … আর
এই দেড় দশক ধরে ক্রমাগত গভীর হয়ে চলেছে বাঙালির জীবনে ও মননে উদ্বাস্তু-সমস্যা! হ্যাঁ,
সমস্যাটা উদ্বাস্তুদের তো বটেই, কিন্তু সাধারণভাবে বাঙালিদেরও তো। তাদের সার্বিক যাপনকে
প্রভাবিত করছে প্রতিনিয়ত। বিধান রায় তো উদ্বাস্তু ছিলেন না। পাটনায় জন্ম, বাল্যকাল
… শেষে কিম্বদন্তী ডাক্তার এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
অথচ স্বাধীনতার পর প্রথম পাটনায় এলেন কী করতে? না নিজের পৈত্রিক ভিটেতে নিজের মা-বাবার
নামে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করতে। কিন্তু কেন? পাটনায় আসা বাঙালি উদ্বাস্তু দুস্থ পরিবারের
মেয়েদের নিখরচায় পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে। যারা শিক্ষিকা/শিক্ষক হলেন, প্রধান শিক্ষিকা
হলেন তাঁরা কিন্তু উদ্বাস্তু নন। খাস পাটনার বাঙালি। কিন্তু উদ্বাস্তু-সমস্যা তাঁদের
ব্যবহারিক জীবনে ও সাংস্কৃতিক/নৈতিক মননে ঢুকে গেল।
সাতচল্লিশের উদ্বাস্তু বিহারে ষাটের দশক অব্দি এসেছে। ছত্তিসগড়ে
দন্ডকারণ্যে গেছে ১৯৬৩তে। স্বাভাবিক ভাবে বিহারের বাঙালিদের ‘সমিতিত্ব’টাই
প্রশ্নসঙ্কুল হয়ে উঠছিল। দুই দশক নিষ্ক্রিয় থাকা স্বাভাবিক।
২
দ্বিতীয় পর্যায় ১৯৬৬তে শুরু হল। ‘ … ইতিবৃত্ত’ বলছে,
“১৯৬৬তে এটি পুনর্গঠিত হয় এবং কেন্দ্রীয় কমিটি ২৫শে
ফেব্রুয়ারি ১৯৬৮ সালে, অর্থাৎ প্রতিষ্ঠার ত্রিশ বছর পরেও পূর্বোক্ত চারটি ধারাই যথাযথ
বজায় রাখে। কেবল Provinceএর বদলে State শব্দ
ব্যবহৃত হয়, কারণ ১৯৫০ সালের ভারতীয় সংবিধানে রাজ্যগুলিকে State আখ্যা দেওয়া হয়। উল্লিখিত
তারিখে আরও যে কয়েকটি উদ্দেশ্য সংযোজিত হয়, তার মূল বিষয় হল – বাঙলা
ভাষা ও সাহিত্যের সংরক্ষণ ও পরিবর্দ্ধন করা; শিক্ষা ও অন্যান্য কল্যাণমূলক প্রতিষ্ঠান
স্থাপন ও অধিগ্রহণ করা; পুস্তকাগার স্থাপন ও পরিচালনা করা, ছাপাখানা চালানো এবং পুস্তক
ও পত্রিকা প্রকাশ করা; নানাবিধ প্রতিষ্ঠান স্থাপন প্রভৃতি।”
এই পর্যায়ের ইতিহাসটা আমরা অনেকেই জানি। বর্তমান বরিষ্ঠ
সদস্যদের মধ্যে অনেকে আছেন যাঁরা এই পর্যায়ের বিভিন্ন গতিবিধিতে অংশগ্রহণ করেছেন। এই
পর্যায়ের বিরাট তিনটে কাজের মধ্যে একটা হল ১৯৭৪ সালে কর্মাটাঁড়ে পণ্ডিত ঈশ্বরচন্দ্র
বিদ্যাসাগরের বাড়ি ‘নন্দনকানন’ অধিগ্রহণ,
সংরক্ষণ, উন্নতিসাধন (রাজ্য, কেন্দ্র সরকার ও রেল মন্ত্রককে অনবরত দাবি জানিয়ে শেষে
১৯৭৮ সালে কর্মাটাঁড় রেলস্টেশনের নাম ‘বিদ্যাসাগর’ করাতে
পারা); উল্লেখ্য যে সেই দশকের শেষে যখন কেন্দ্রীয় সরকারের
‘প্রৌঢ় শিক্ষা কার্যক্রম’ শুরু
হয় তার ১০০টা কেন্দ্রের সঞ্চালন কেন্দ্র বা হাব হয় নন্দনকাননে।
দ্বিতীয় বিরাট কাজ হল ১৯৮১তে সরকারের ওপর চাও সৃষ্টি করতে
সাংগঠনিক স্তরে বাংলা আকাডেমি প্রতিষ্ঠা ও এক বছর পর সরকারকে দিয়ে ভারতের প্রথম বাংলা
আকাডেমি (বিহার বাঙলা আকাডেমি) প্রতিষ্ঠা করাতে পারা।
তৃতীয় কাজ হল, বিহারের স্থানীয় ভাষিক আবহে পশ্চিমবঙ্গের
বাংলা পাঠ্যপুস্তকে ছাত্রদের অসুবিধে হচ্ছে বুঝে বিহারের নিজস্ব বাংলা পাঠ্যপুস্তক
তৈরি করানো। শিক্ষা বিভাগকে দিয়ে তার সিলেবাস ও পাঠ্যপুস্তক রচনার জন্য এনসিইআরটির
সহযোগিতায় ওয়র্কশপের আয়োজন করে নতুন পাঠ্যপুস্তক তৈরি হয় এবং স্কুলে স্কুলে সেসব পাঠ্যপুস্তকই
স্বীকৃত হয়।
চতুর্থ কাজ, ‘বেহার
হেরাল্ড’এর নিয়মিত প্রকাশন এবং বেশ কয়েকটি
শহরে বাঙালি-অবাঙালি ঘরে ঘরে পৌঁছ, এবং প্রথমে সাহিত্যপত্র হিসেবে ও পরে সাংগঠনিক মুখপত্র
ও বুলেটিন হিসেবে ‘সঞ্চিতা’র নিয়মিত
প্রকাশন।
পঞ্চম কাজ, বিভিন্ন দাবিদাওয়া ও নালিশের নিষ্পত্তি করতে
সরকার ও প্রশাসনের সঙ্গে নিয়মিত বার্তা।
এবং, ষষ্ঠ কাজ, যেটা বস্তুতঃ প্রথম কাজ, সংগঠনটাকে আবার
দাঁড় করানো। ‘ … ইতিবৃত্ত’ বলছে
–
“পুনর্গঠনের সময় ১৯৬৬ সালে আগস্ট
মাসে পাটনা শাখাই ছিল একমাত্র২ শাখা। ১৯৬৮র মে মাস পর্য্যন্ত এইভাবে চলার
পর ১৯৬৮র আগস্ট থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে ভাগলপুর ছাড়া আরো ৮টি শাখা পুনর্গঠনের পর থেকে
শাখা ও সদস্য ছিল নিম্নরূপ – …”
দেখা যাচ্ছে শাখার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে আগামী তেরো বছরে ১০২এ
পৌঁছেছে আর ‘প্রাপ্ত লেভী অনুসারে সদস্য সংখ্যা’ আগামী
উনিশ বছরে ১১০০০এ পৌঁছেছে।
সংখ্যাই বলছে, (এবং সে তথ্য সমর্থনকারী অন্যান্য দস্তাবেজও
আছে), সদস্যতা আর উচ্চবিত্ত ও মধ্যবিত্তে সীমিত নেই, শহরের গরীব বাঙালি শুধু নয়, গ্রামের
চাষি বাঙালি অব্দি ছড়িয়েছে।
৩
তৃতীয় পর্যায় শুরু হওয়ার সময় আর নতুন শতক ও সহস্রাব্দ শুরু
হওয়ার সময় এক হয়ে গেছে কেননা তখনই বিহারকে বিভাজিত করে ঝাড়খন্ড রাজ্য তৈরি করা হল।
তৃতীয় পর্যায় মানে এ নয় যে প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের মাঝের দু’দশক
যেমন সমিতি নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল, দ্বিতীয় ও তৃতীয়ের মাঝেও তেমন কোনো কালখন্ড আছে। না।
আশির দশকে আকাডেমির কাজ বিস্ময়কর! সে তুলনায় নন্দনকাননের কাজ একটু স্তিমিত। নব্বইয়ের
দশকে নব্দনকাননের কাজ আবার গতি পেয়েছে। আকাডেমির কাজ একটু কমেছে। সংগঠন এগিয়েছে। সর্বভারতীয়
একটা প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে। নব্বইয়ের দশকের শেষে ভারতীয় বাংলাভাষী মহাসভার আয়োজন হয়েছে
পাটনায়।
কিন্তু এটা উল্লেখ্য যে জনজীবনের ধারায় পরিবর্তনের প্রভাব
অন্য সবার মত বিহারের বাঙালিদের ওপরও পড়েছিল। স্বাধীনতা-উত্তর যে ভারতীয় জীবন এক বিশেষ
অর্থনীতির ক্রমবিকাশে (এবং ডামাডোলে, সমস্যায়, সংগ্রামে) চলতে অভ্যস্ত ছিল তার সব কিছু
ওলটপালট করে দিয়েছিল ১৯৯১ – একদিকে সোভিয়েত বিপর্যয়,
নতুন অর্থনীতি আর অন্যদিকে নতুন তথ্যপ্রযুক্তির নতুন দিগন্তের উন্মোচন। এবং তার প্রভাব
সমিতির কাজকর্মের ওপরও পড়ছিল।
তৃতীয় পর্যায়ের কাজকর্ম নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ‘বিহার
বাঙালি সমিতি, সংহতি ও সমন্বয় …’ বইটায় আছে। কাজেই সেসব
বলে আর কথা বাড়াবো না। শুধু সেই আলোচনাগুলোরই প্রসঙ্গ টেনে বলবো, তৃতীয় পর্যায়ের প্রধান
বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
(১) বিহারের বিভিন্ন জেলায় গ্রামাঞ্চলবাসী বাঙালি উদ্বাস্তুদের
মধ্যে বিহার বাঙালি সমিতিকে ছড়িয়ে দেওয়া হল। বৃহত্তর অর্থে, বিহারবাসী সাড়ে ছয় লক্ষ
উদ্বাস্তুর সমস্যাকে সমিতি নিজের দায়িত্ব করে নিল। ফলে, সদস্যতার শ্রেণীচরিত্র জনজীবনের
আরো গভীরে প্রবেশ করলো। (সিংভূম, ধলভূম, মানভূম বা সাঁওতাল পরগণার গ্রামীণ বাঙালির
স্বার্থরক্ষা এখন যেমন ঝাড়খন্ড বাঙালি সমিতির কর্তব্য, বিহারে পুনর্বাসিত বাঙালি উদ্বাস্তুসমাজের
স্বার্থরক্ষা এখন বিহার বাঙালি সমিতির কর্তব্য।) এই বিরাট পদক্ষেপের চমকপ্রদ ফলশ্রুতি
– চম্পারণের যে উদ্বাস্তু বাঙালি প্রায় ‘ইচ্ছাকৃত’ ভাবে
বাংলা ভুলে ভোজপুরি সমাজের লেজুড় হয়ে বাস করছিল, ছ-সাত বছরে তারা আবার ‘বাঙালি’ হয়ে
পঞ্চায়েত ও জেলা পর্ষদ নির্বাচনে ১০০র বেশি সংখ্যায় জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হল।
(২) সংগ্রামের নতুন পথে বিহার বাঙালি সমিতিকে চলতে দেখা
গেল। জেলায় জেলায় ধরনা, জেলাশাসকের কাছে ডেপুটেশন ও স্মারকলিপি প্রদান, রাজধানীতে কেন্দ্রীয়
ধরনা, মিছিল, গ্রামে গ্রামে প্রচারসভা ও শেষে ভোট বয়কটের ডাক … এসব
অভিজ্ঞতা একেবারে নতুন ছিল। এবং তার প্রভাবও অকল্পনীয় হল। যে রাজ্যের প্রশাসন তাচ্ছিল্যের
সুরে বলেছিল “বিহারে আর বাঙালি কই” সেই
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী সমিতির সভাপতিকে ডেকে পাঠিয়ে প্রশাসনিক বৈঠক ডেকে দাবিদাওয়াগুলোর
নিষ্পত্তি করলো। বিহার রাজ্য সংখ্যালঘু আয়োগে রোটেশনে একজন বাঙালি উপাধ্যক্ষ নেওয়ার
কথা থাকলেও প্রথম ২০১১ সালে সমিতির সভাপতিকে সরকার উপাধ্যক্ষ নামিত করলো।
(৩) বিহার বাঙালি সমিতি, ঝাড়খন্ড বাঙালি সমিতিকে সঙ্গে নিয়ে
নতুনভাবে বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতি ও নন্দনকানন পরিচালন সমিতি তৈরি করলো। বিদ্যাসাগরের
জন্মদিন ও মৃত্যুদিন ছাড়াও ‘গুরুদক্ষিণা’ নামে
একটি নতুন বাৎসরিক কর্মসূচি নেওয়া হল। একদিকে স্থানীয় স্কুলগুলোর ছাত্রছাত্রী এবং সাধারণ
মানুষকে অনুষ্ঠানের কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা হল এবং অন্য দিকে বিদ্যাসাগরের দ্বিশতজন্মবার্ষিকী
উপলক্ষে এশিয়াটিক সোসাইটি এবং বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক
স্থাপিত হল। বিভিন্ন দাতা ও ঝাড়খন্ড সরকারের সহযোগিতায় নন্দনকানন এখন সেজে উঠেছে। এখন
ব্লকের নামও বিদ্যাসাগর।
(৪) প্রায় দুই দশক পর বিহার বাঙলা আকাডেমি ২০১২ এবং ২০১৩য়
দুটো আন্তর্জাতিক সেমিনার করলো। ২০১৬ অব্দি কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রকাশন তো হলই, পাঠ্যপুস্তক
(তৈরি হওয়া সত্ত্বেও) মুদ্রিত হয় নি বলে স্কুলে স্কুলে, আকাডেমির তরফ থেকে তার ফটোকপি
বিনামূল্যে বিতরণ করা হল।
(৫) ১৯৮৭ থেকে বন্ধ পড়ে থাকা ‘বেহার
হেরাল্ড’এর প্রকাশন ২০১৫ থেকে আবার শুরু
হল। ‘বেহার হেরাল্ড’এর সংরক্ষিত
পুরোনো সংখ্যাগুলোর ডিজিটাল-করণ, উইকিপিডিয়ার পশ্চিমবঙ্গ গ্রুপের সহযোগিতায় শুরু হয়েছে।
কোরোনার সময় ‘সঞ্চিতা’ প্রকাশ
বন্ধ হয়ে গেছে, কিন্তু কলকাতা আন্তর্জাতিক পুস্তক মেলা উপলক্ষে প্রতি বছর ‘সঞ্চিতা,
সাহিত্য সংখ্যা’ প্রকাশিত হচ্ছে। এই পর্যায়ে
সমিতি আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বই প্রকাশ করেছে যার মধ্যে আছে, ত্রিভাষিক সচিত্র রবীন্দ্রজীবনী,
সমিতির প্রতিষ্ঠাতা শ্রী পি. আর. দাশ লিখিত ‘দি বেঙ্গলি
বিহারি কোশ্চেন’এর নতুন সংস্করণ এবং ‘বিহার
বাঙালি সমিতি, সংহতি ও সমন্বয় …’। ২০১৭ সাল থেকে সমিতি
‘বিহার বাংলা সাহিত্য সম্মেলন’এর আয়োজন
করেছিল। পরে ভাগলপুরেও সে আয়োজন হয়।
(৬) ২০১১ সালে পাটনায়, মুজফফরপুরে এবং ভাগলপুরে কবিগুরু
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সার্ধশতবার্ষিকী উদযাপন করা হল। স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়েছিল। তার
আগে ২০০৬ সালে বিদ্যাসাগরের ‘বর্ণপরিচয়’ প্রকাশের
সার্দ্ধশতবার্ষিকী উদযাপন হয়েছিল।
(৭) বহির্বঙ্গের বাঙালিদের ঐক্যকে লক্ষ্যে রেখে ২০১১ সালেই
পাটনায় ভারতীয় বঙ্গভাষী মহাসভার অধিবেশন হয়েছিল। তারপর বেশ কয়েকবার সমিতির সম্মেলনে
বহির্বঙ্গের অতিথিরা এসেছেন। ইতিমধ্যে দিল্লিতে অল ইন্ডিয়া বেঙ্গলি এসোসিয়েশন তৈরি
হয়েছে। বিহার বাঙালি সমিতি তার গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। সদ্য কলকাতায় সমিতি ‘বিহার
বঙ্গভাষী সম্মেলন’এর আয়োজন করলো।
(৮) বিহার বাঙালি সমিতি নিজের নিয়মাবলী অনুসারে বিদ্যালয়
ও অন্যান্য সংস্থাকে সম্বদ্ধতা প্রদান করতে পারে। পাটনার রামমোহন রায় সেমিনারি এখন
বিহার বাঙালি সমিতির সঙ্গে সম্বদ্ধ। সে ছাড়া পাটনার অঘোর প্রকাশ শিশু সদনের পরিচালন
সমিতিও বিহার বাঙালি সমিতির দায়িত্ব। মুজফফরপুরের হরিসভা স্কুলও বিহার বাঙালি সমিতির
মুজফফরপুর শাখা পরিচালন করে। সমিতির শাখাগুলো স্থানীয় সংখ্যালঘু বাঙালি বিদ্যালয়, গ্রন্থাগার
ইত্যাদি যে সংস্থারই রক্ষণাবেক্ষণে থাকুক না কেন, সেগুলোর ওপর নজর রাখবে এবং সমিতির
কেন্দ্রে সে সম্পর্কে প্রতিবেদন পাঠাবে যাতে ভূমি-মাফিয়াচক্রে বেহাত হওয়ার পরিস্থিতি
এলে সরকার ও মিডিয়াকে ওয়াকিবহাল করা যায় – এটা
কেন্দ্রীয় পরামর্শ।
………………………
এখন ২০২৪। সমিতির কার্যনির্বাহী সমিতির গড় আয়ু পঞ্চাশের
কম হবে না। সেটাকে কমিয়ে চল্লিশে নিয়ে আসা আমাদের আশু কর্তব্য। কীভাবে করবো, সেটাই
হবে আগামী সভা ও সম্মেলনগুলোর প্রধান বিচার্য বিষয়। যদি করতে পারি, তাহলেই আপাততঃ বন্ধ
পড়ে থাকা আকাডেমিকে আবার চালু করাতে পারবো, অমুদ্রিত বাংলা বই মুদ্রিত ও বিতরিত করাতে
পারবো, বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আপামর বিহারি-বাঙালির ভালোবাসা উজ্জীবিত রাখতে
পারবো (যার ফলে বিহারের সার্বিক উন্নয়নে তাদের অংশীদারি আরো ভালো হবে), সমিতির গতি
অপ্রতিহত থাকবে এবং ২০৩৭এ আমরা সমিতির শতবর্ষে প্রবেশ করবো।
--------
১। ভকতপ্রসাদ মজুমদার এবং গুরুচরণ সামন্ত লিখিত “বিহার
বাঙালি সমিতির ইতিবৃত্ত” বলছে, “১৯৪১-এর
পর থেকে ধীরে ধীরে, এবং ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৬ পর্যন্ত সমিতি নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ে। অর্থাৎ, ১৯৫৬
সালে মানভূম জেলার ১৯টা থানা সম্বলিত এলাকা পুরুলিয়া জেলা হয়ে পশ্চিমবঙ্গে চলে যাওয়ার
এবং ফলে মানভূম ভাষা আন্দোলনের চুড়ান্ত দিনগুলো আর পরিসমাপ্তির বছরগুলোয় বিহার বাঙালি
সমিতি নিষ্ক্রিয় ছিল।
২। মনে রাখতে হবে ১৯৩৮এর ১২ই ফেব্রুয়ারি ২১টা শহর থেকে প্রতিনিধি
এসে সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিল।
बालविवाह का दोष - पंडित ईश्वरचंद्र विद्यासागर
आठ साल की उम्र में कन्या का दान करने पर पिता माता को गौरीदान का पूण्य होता है। नौ-साल वाली को दान करने पर पृथ्वीदान का फल प्राप्त होता है। दस-साल वाली को पात्र के हाथों सौंपने पर आगे चलकर पवित्रलोक की प्राप्ति होती है। स्मृतिशास्त्रों के द्वारा प्रतिपादित ऐसी ही कल्पित मृगतृष्णाओं में मुग्ध होकर, परिणाम की विवेचना से शून्य चित्त के साथ हमारे देश के मनुष्य मात्र ने बाल्यकाल में पाणिग्रहण की रीति को प्रचलित किया है।
किसे न अनुभव है कि
इसके कारण आज तक कितने दारुण अनर्थ संघटित हुये हैं? शास्त्रकारों ने इस बालविवाह
को संस्थापित करने हेतु एवं तारुण्यावस्था में विवाह को निषिद्ध करने हेतु अपनी
अपनी बुद्धि की कौशल से, अधर्म के भागी होने की कैसी कठोर से कठोर विभीषिका दर्शाई
है! अगर कोई कन्या कन्यादशा में ही पिता के घर में स्त्रीधर्मिनी
होती है, तो वह कन्या पिता और माता दोनों कुल के लिये कलंक की मूर्ति बन कर सात पीढ़ी
तक को नरक में भेज देती है और उसके पिता और माता आजीवन अशौचग्रस्त हो कर लोकसमाज में
अनादर एवं भेदभाव के भागी होते हैं।
इस बात से अगर किसी
सुबोध व्यक्ति के अन्त:करण में उक्त विधि के प्रति द्वेष उत्पन्न होता है, फिर भी वह परंपरागत
लौकिक आचरण के अधीन हो कर अपने अभीष्ट की सिद्धि करने में असमर्थ होता है। उनका आन्तरिक
विचार अन्तर्मन में उदित हो कर क्षणप्रभा की तरह क्षणमात्र में अन्तर्मन में ही विलीन
हो जाता है।
इस तरह लोकाचार व
शास्त्रव्यवहारपाश में आबद्ध हो कर दुर्भाग्यवश हम सदा बाल्य-विवाह
के कारण अशेष क्लेश व कभी न जाने वाली दुर्दशा झेल रहे हैं। बाल्यावस्था में विवाह
होने के कारण दम्पति, विवाह के मीठा फल, प्रणय का स्वाद कभी नहीं ले पाते हैं। फलस्वरूप,
आपस में प्रणय के साथ घरसंसार का निर्वाह करने में भी पग पग पर विडंबनाएं आती हैं।
आपस के उलझन भरे संबंधों में जो संतान की उत्पत्ति होती है, उसमें
भी उसी प्रकार हीन भावना होने की विलक्षण संभावना रहती है। नवविवाहित
बालक-बालिकायें एक दूसरे के मनोरंजन की खातिर सरस बातचीत, निपुणता, बातों की
चतुराई, कामकलाकौशल आदि के अभ्यास व प्रकाश के लिये सदा यतन में रहते हैं, तथा उस दिशा
में आवश्यक मार्गों की परिपाटी पर सोच बनाने में भी तत्पर रहते हैं। अत: उनके विद्याभ्यास
में प्रबल बाधा उत्पन्न होता है। जगत का सारपदार्थ, विद्या के धन से वंचित रह कर
वे केवल मनुष्य के आकार मात्र रह जाते हैं। वस्तुत: यथार्थ मनुष्य
में उनकी गणना नहीं होती है।
सारे सुख का मूल जो दैहिक स्वास्थ्य है, वह भी बालविवाह से
क्षयप्राप्त होता है। फलस्वरूप, दूसरी जातियों के मुकाबले हमारे देश के लोग दैहिक
व मानसिक सामर्थ्य की दृष्टि से जो नितांत दरिद्र हुये हैं, ढूंढ़ने पर निस्सन्देह उसका भी कारण
मुख्य रूप से बालविवाह ही पाया जायेगा।
हाय! जगदीश्वर हमें इस दुर्गति से
कितने दिनों में उद्धार करेंगे। और
वह शुभ दिन भी कितने युगों के बाद आयेगा। जो भी हो, आजकल इस विषय को लेकर जो
आंदोलन हो रहे हैं, यह भी अच्छी बात
है। लगता है कभी न कभी इस देश के लोग उस आगामी शुभ दिन के शुभागमन पर सुख की
स्थिति भोगने में सक्षम होंगे।
इसी तरह, अगर हमारे
देश की दूसरी बुरी परिपाटियों पर नियमित लिखा जाय और उनकी समीक्षा की जाय, निस्सन्देह उन्हे समाप्त
करने का कोई न कोई सही उपाय अवश्य ही निकाला जा सकेगा। लगातार मिट्टी खोदते रहने
पर एक दिन पानी निकलेगा ही।
काठ के टुकड़ों को निरंतर रगड़ते रहने पर कभी न कभी आग जरूर निकलेगी। अनवरत सत्य का
अनुसंधान करते रहने पर कितने दिनों तक वह मिथ्या के जाल से ढका रहेगा? वह निश्चय
ही प्रकाशित होगा।
इसी तरह अपने अन्त:करण में नाना प्रकार से सोच कर मैंने बालविवाह के बारे में
यथासाध्य किंचित लिखने को प्रवृत्त हुआ।
सृष्टिकर्ता की इस
विश्वरचना में सभी जीवों के भीतर स्त्री पुरुष का अस्तित्व एवं उनके बीच घनिष्ठता
दृष्टिगोचर हो रहे हैं। इससे स्पष्ट तौर पर विश्वरूप का यह अभिप्राय प्रकाशित होता
है कि स्त्री और पुरुष किसी तरह के प्रतिबंध के बिना आपस में बंधे रहकर एक दूसरे
का देखभाल करते हुये स्वजातीय जीवों की उत्पत्ति के निमित्त यत्नशील होते हैं। खास
कर मनुष्यजातीय में, एक स्त्री और एक पुरुष मिल कर एक दूसरे के अनुरोध आदि मानते
हुये, प्रणय के साथ उत्तम नियमानुसार संसार के नियम की रक्षा करते हैं।
जगत के सृजन के कितने
कालावधि के उपरांत मनुष्य जाति के बीच इस विवाह संबंध का नियम प्रचलित हुआ है उसका
ठीक ठीक निर्णय करना यद्यपि कठिन है, फिर भी इतना कहा जा सकता है कि जब मनुष्यसमाज
में वस्तुपरक ज्ञान थोड़ा साफ होने लगा और राजनीति में कुछ प्रबलता आने लगी, सभी के
अन्त:करण में बोध का
उदय होने लगा कि आत्म-पर-विवेक, स्नेह, दया, वात्सल्य, ममता की अभिमान के बगैर
संसारयात्रा का अच्छा निर्वाह नहीं होता है और विवाह संबंध ही उन सभी गुणों का
मुख्य कारण है, निस्सन्देह तभी ही दाम्पत्य संबंध यानि विवाह का नियम संस्थापित
हुआ था।
उसके बाद से सभी देशों
में विवाह की यह रीति उत्तरोत्तर पहले से अधिक उत्कृष्ट होती आ रही है। लेकिन
हमारे देश में उत्तरोत्तर उत्कृष्ट होना तो दूर, बल्कि इतना निकृष्ट हो चुका है कि
सही ढंग से विचार करने पर स्पष्ट प्रतीत होगा कि मौजूदा विवाह-नियम ही हमारे देश
के सर्वनाश का मूल कारण है।
इस देश में पिता और
माता कन्या को सौंपने के लिये, खुद या दूसरों के द्वारा पात्र की खोज कर, सिर्फ
निस्सार कुलीन मर्यादा का खयाल रखते हुये, अगर पात्र मूर्ख हो या विवाह की उम्र
प्राप्त न किया हो या अयोग्य हो फिर भी उसे कन्या दान कर खुद को कृतार्थ एवं धन्य
महसूस करते हैं; आगे के जीवन में कन्या के संभावित सुखदुख से नजर फेर लेते हैं। इस
संसार में दाम्पत्य से मिलता सुख ही सर्वोच्च सुख है। इस तरह के सच्चे सुख में
विडंबना आने पर दम्पति को सारा जीवन विषाद में बिताना पड़ता है। हाय, कितनी दुख की
बात है! जिस पति
के प्रणय पर प्रणयीनी का सारा सुख निर्भर करता है, और जिसके सच्चरित्र होने पर
सारा जीवन सुखी और सच्चरित्र न होने पर सारा जीवन दुखी रहना मजबूरी होती है, परिणय
के समय उसके आचार व्यवहार व चरित्र पर कन्या की सम्मति की ही अगर जरूरत न रहे, तब
उस दम्पति के सुख की क्या संभावना बचेगी।
मन की एकता ही प्रणय
का मूल है। वह एकता उम्र, अवस्था, रूप, गुण, चरित्र, बाहरी भाव व आंतरिक भाव आदि
विभिन्न कारणों पर निर्भर करता है। हमारे देश के बाल दम्पति परस्पर का आशय नहीं
जान पाये, परस्पर के अभिप्राय को समझने का अवसर उन्हे नहीं मिला, एक दूसरे कि
अवस्था की खोजखबर नहीं पाये, आपसी बातचीत के द्वारा एक दूसरे के चरित्र को जानने
कि बात तो दूर, एक बार एक दूसरे से आंखें भी नहीं मिला सके, बस एक उदासीन वाचाल
घटक के सोद्देश्य वृथावचन को भरोसा कर पितामाता की जैसी अभिरुचि हो, बेटी बेटा को
उसी प्रकार बांध देना सुखदुख का अनुल्लंघनीय सीमा होकर रह गया। इसी लिये इस देश
में दाम्पत्य से उपजा निश्छल प्रणय अक्सर दिखाई ही नहीं पड़ता है। प्रणयी बस भोजन
देने वाला और प्रणयीनी घर की दासी बन कर घरगृहस्थी का निर्वाह करते हैं।
ठंडे दिमाग के शरीर-क्रिया विज्ञानी, जानकार चिकित्सकों ने कहा है कि
शैशवावस्था में ही पत्नी-पति संबंधों के फलस्वरूप जो संतान की उत्पत्ति होती है,
उसके गर्भवास में ही प्राय: विपत्ति होती है। अगर जीवित जन्म ले भी ले, दाई की गोद
में न जा कर जल्द ही ‘भुत की दाई’ की गोद में सोना पड़ जाता है। कभी अगर जनक-जननी
के सौभाग्यवश वह बच्चा जनसंख्या का आंकड़ा बढ़ाने में सक्षम हो भी गया, देह की
स्वाभाविक कमजोरी और सर्वदा प्रवल पीड़ा आदि का शिकार होकर वह संसारयात्रा का नगण्य
यात्री बन, अल्पकाल में ही परलोक सिधार जाता है। अत: संतानोत्पत्ति की जिस परिणति
के लिये दाम्पत्य संबंधों के नियम बने हैं, बालविवाह से वही परिणति यूं
वाधाप्राप्त होती रहती है।
हमारे देश के लोग भूमंडल पर स्थित लगभग सभी जातियों की अपेक्षा भीरु, क्षीण,
दुर्बलस्वभाव और थोड़े ही दिनों मे बुढ़ापे की अवस्था प्राप्त कर थक जाता है।
हालांकि ढूढ़ने पर इसके अन्य सामान्य कारण मिल सकते हैं, लेकिन विशेष रूप से
अनुसंधान करने पर यही प्रतीत होगा कि बालविवाह ही इन सभी स्थितियों का मुख्य कारण
है। पितामाता सबल और दृढ़ शरीर के न होने पर संतान कभी भी सबल नहीं होंगे। यह सभी
स्वीकार करेंगे कि दुर्बल कारण से सबल कार्य की उत्पत्ति कभी संभव नहीं होता है।
जिस तरह बंजर जमीन में उत्कृष्ट बीज बोने और उपजाऊ जमीन में निकृष्ट बीज बोने से
उत्कृष्ट फल नहीं होते, उसी तरह असमय में बोने पर भी इष्ट की सिद्धि में विसंगति
आती है।
ऐसा नहीं कि भारतवर्ष में साहसी वीर पुरुषों का अभाव था। पूर्व के क्षत्रिय-संतान
और कुछ विप्र-संतान भी युद्ध आदि में प्रबल पराक्रम और असीम साहस दिखा कर इस
भूमंडल पर शाश्वत कीर्ति संस्थापित कर गये हैं। उनका वह चरित्र पौराणिक आख्यानों में ग्रंथित है। उन सभी
वीरों का प्रसव करनेवाली यह भारतभूमि भी वीरप्रसविनी के नाम से ख्यात थी। और अभी भी पश्चिम प्रदेश में भूरी
भूरी पराक्रमी पुरुष अनेकों विषय में साहस और शौर्यगुण के कार्य दर्शाकर अपने
पूर्वजों के पराक्रम के दृष्टांत बन रहे हैं। इस देश के हिन्दु, उसी जाति और उसी वंश में उत्पन्न होकर
भी जो इस तरह के निर्बल दशा से ग्रस्त हुये हैं, क्या बालविवाह ही उसका मुख्य कारण
नहीं है? क्योंकि पहले लगभग सभी जातियों में अधिक उम्र में विवाह की क्रिया संपन्न
होती थी। हालांकि उस समय आठ प्रकार के विवाहक्रिया का शास्त्र उपलब्ध है, फिर भी
अधिक उम्र में होने वाला गांधर्व, आसुर, राक्षस, पैशाच, इन चार प्रकार का विवाह
अधिक प्रचलित था। इसके अलावे स्वयंबर प्रथा का भी प्रचलन था, और ये सभी
विवाहक्रिया वर और कन्या की अधिक उम्र के बिना संभव नहीं थे। और भी। अनुसंधान के
द्वारा पश्चिम देश के लोगों से हम ज्ञात हुये हैं, उस देश में आज भी लगभग सभी जाति
में वर और कन्या की अधिक उम्र होने पर ही विवाहकर्म का निर्वाह होता है। फलस्वरूप,
उस देश में संतानोत्पत्ति में जनक-जननी संभावित कोई विसंगति न रहने के कारण लगभग
सभी पराक्रमी व साहसी बनते आ रहे हैं। इसका
प्रमाण है, पश्चिम देश के लोगों को जब दूसरी जीविका नहीं मिलती है तो वे राज की
सेना में एवं दूसरे धनाढ्य लोगों के यहां प्रहरी आदि के काम में नियोजित होकर
अनायास ही जीवन निर्वाह करते हैं। इस देश के लोग अन्न के अभाव में जघन्य कार्य भी
स्वीकार कर लेते हैं, पर साहस और पराक्रम के कोई कार्य करने को इच्छुक नहीं होते।
इसी लिये राज की सेना में बंगदेश में पैदा हुआ कोई व्यक्ति देखा नहीं गया।
उत्कलदेश के लोग हमसे भी अधिक भीरु एवं दुर्बलस्वभाव के होते हैं, इस करण से हम भि
उन्हे डरपोक और कायर कहकर उपहास किया करते हैं। ज्ञात हुआ है कि उनके बीच भी इस
देश की तरह बालविवाह प्रचलित है। अत: पश्चिम के लोगों के बनिस्बत हमारे और उत्कलवासियों के साहस
और पराक्रम में इतनी अधिक भिन्नता देख कर किसे न स्पष्ट प्रतीत होगा कि बालविवाह
ही इस तरह की भिन्नता का कारण है। नहीं तो क्या कारण है कि जिन दोनों देशों में
बालविवाह प्रचलित है, उन्ही देशों में लोग निर्बल और साहसहीन होते हैं, और जिस देश
में विवाह अधिक उम्र में हो रही है, वहीं के लोग ही क्यों साहसी और पराक्रमी हो
रहे हैं।
इस देश में अगर स्त्रीजाति के लिये विद्याशिक्षा की प्रथा प्रचलित रहती, तब
हमारे देश के बालक-बालिकायें मां से भी सही परामर्श प्राप्त कर कम उम्र में भी सुशिक्षित
हो पाते। संतान अपने शैशव में जिस तरह अपनी अपनी प्रसूति के अनुगामी रहते हैं,
पिता या अन्य गुरुजनों के उतने अनुगामी नहीं होते। शिशुओं को सस्नेह मधुर वचन
जितनी अनुकूल अनुभूति प्रदान करती है, उपदेशक का हितवचन उतना प्रीतिकर नहीं होता
है। इसलिये बच्चे स्त्रीसमाज में रह कर जितने खुश रहते हैं, पुरुषसमाज में रह कर
उतने खुश और संतुष्ट नहीं होते। अत: स्तन्यपान छोड़ने के तुरंत बाद अगर बच्चे मातृ-मुख-चन्द्रमंडल से सरस
उपदेश-सुधा का आस्वादन कर पायें, तब बचपन में ही विद्या के दृढ़ अनुरागी बन कर वे
अनायास सुशिक्षित हो सकते हैं। क्यों
कि संतान के हृदय में जननी का उपदेश जितना गहरा पैठता है और उसके द्वारा जितना
शीघ्र उपकार होते हुये दिखता है, दूसरे शिक्षकों के द्वारा उसका शतांश भी संभावित
नहीं होता, जननी की उपदेशक-शक्ति रहने के कारण ही यूरोपीय लोग कम उम्र में ही समझदार
होते हैं और उनमें सभ्य होने के लक्षण होते हैं। अत: जब तक हमारे देश से बालविवाह की रीति का अंत नहीं होगा, वैसा उपकार कभी भी घटित नहीं होगा। हम जानते हैं, कुछेक भद्रसंतान अपने
कन्यासंतानों को भी पुत्रवत शिक्षा प्रदान करते हैं, लेकिन उन कन्याओं का
अक्षरपरिचय होते न होते विवाह का दिन आ जाता है। फलस्वरूप उनके पठन का प्रस्ताव
उसी दिन अस्त हो जाता है। बाद में पराये घर के निवासी बन कर, पराये के अधीन होकर,
सास ससुर आदि गुरुजनों की इच्छानुसार घर बुहारना, बिस्तर लगाना, भोजन पकाना,
परोसना व अन्यान्य परिचर्या की परिपाटी की शिक्षा लेनी पड़ती है। पिता के घर में जो
कुछ अक्षर सीख पाई थी, थाली, कड़ाही, कलछुल आदि के साथ नियमित वार्तालाप के कारण वे
सारे लुप्त हो जाते हैं। अगर उन कन्याओं
के पिता माता इस देश के विवाह-नियम के आज्ञाकारी बन कर शिक्षा की शुरुआत में ही
कन्याओं को पात्र के हाथों न सौंपें, तब कुछ दिनों और शिक्षा ग्रहण करने पर उनकी वही बेटियां
भावी संतानों को उपदेश देने की क्षमता अर्जित कर पिता माता की अनगिनत अभिलाषाओं को
सफल कर पायेंगी। अत:, आधुनिक सभ्य सुशिक्षित
व्यक्तियों को हम अनुरोध करते हैं, वे स्त्रीजाति को शिक्षा प्रदान करने के मुद्दे
पर जितना उद्यम दिखायेंगे, उतना ही यतन बालविवाह को निर्मूल करने के लिये भी करें,
नहीं अभीष्ट की सिद्धि कदापि नहीं होगी।
बाल्यावस्था में विवाह कर हम सभी प्रकार से शर्मिन्दा और अतिव्यस्त हो जाते
हैं। कारण है कि, अव्वल तो विवाह् से संबंधित
आमोदप्रमोद व अठखेलियों में विद्याशिक्षा का मुख्य समय, बाल्यकाल वृथा चला जाता
है। दूसरा, कमाने का सामर्थ्य पैदा होने के पहले ही संतान के जन्मदाता बन जाते हैं। तब नित्य आवश्यक पैसों की खातिर व्याकुल होना पड़ता है।
क्योंकि गृहस्थ व्यक्ति के हाथों में क्षण भर भी पैसा न रहे तो दुनिया अंधेरी हो
जाती है। उस समय अगर बुरा काम कर के भी पैसा मिलता है तो उससे दूर रहने के बजाय
बार बार करने की प्रवृत्ति जन्म लेती है। अक्सर ऐसा भी देखा गया है कि वास्तव में
सच्चे स्वभाव वाले लोग भी परिवार के कुछेक निकम्मे सदस्यों से घिर कर अन्तत: गलत काम करना स्वीकार किये हैं। और वैसी स्थिति में परम प्रीति के पात्र बेटा, पोता, परिवार सब उत्पात लगते
हैं। तब बाध्य होकर पिता के घर में
उनके अधीन रह कर, कभी सहोदरों के अनुग्रह पर जी कर, कभी रिश्तेदारों पर भार बन कर,
अपनी स्वतंत्रता के सुख से वंचित व मोहल्ले में कदम कदम पर अपमानित होकर अति कष्ट
में मनोव्यथा के साथ जीवन व्यतीत करना पड़ता है। अत: जिस बालविवाह के कारण हमारी इतनी
दुर्दशा होती है, उसे पूरी तरह खत्म करना क्या सब तरह से श्रेयस्कर नहीं?
अगर कोई व्यक्ति यूं अपनी आपत्ति दर्ज करते हैं कि हमारे देश में बालविवाह
प्रथा न रहने पर बालक बालिका दुष्कर्म के प्रति आसक्त होंगे, इस बात पर हम पूरी
तरह उदासीन नहीं रह सकते हैं। लेकिन यह अवश्य बोल सकते हैं कि अगर बाल्यकाल में
विद्या के अनुशीलन में निरंतर मन निविष्ट रहे, तब कभी दुष्कर्म की प्रवृत्ति ही
नहीं जगती है। क्योंकि विद्या से धर्म-अधर्म का तथा सत-असत कर्म की
प्रवृत्ति-निवृत्ति का निर्णय उपजता है और विवेकशक्ति की प्रखरता की बृद्धि होती
है। तब, बुरी इच्छा के उदय का अवकाश कहां? अत: बिना पक्षपात के विवेचना करने पर
इस तरह का तर्क आ ही नहीं सकता है।
अगर इस विषय पर हम विचार करें कि किस उम्र में मनुष्यों की मृत्यु
होने की अधिक संभावना है, तब अवश्य ही प्रतीत होगा, मनुष्य के जन्मकाल
से बीस वर्ष की उम्र तक मृत्यु की अधिक संभावना है। यानि अगर बीस वर्ष पार होने के
बाद विवाह कर्म सम्पन्न किया जाय तो विधवाओं की संख्या भी अधिक नहीं होगी। और उसकी आशंका भी पितामाता के हृदय में कम
होगी। सभी अनुभव से जानते हैं कि चूंकि हमारे देश में विधवाओं
के विवाह की विधि दृढ़तापूर्वक अवरुद्ध है, फलस्वरूप उन्हे शास्त्रानुसार
कितना कठोर व्रत का आयोजन एवं उसके चलते किस प्रकार असह्य दुख सहना पड़ता है। विधवा
का जीवन केवल दुखों का पहाड़ है। और यह विचित्र जगत उसके लिये मनुष्यहीन अरण्य जैसा
है। पति के साथ साथ उसका सारा सुख समाप्त हो जाता है। और पतिवियोग के दुख के साथ
सभी दुस्सह दुखों का समागम होता है। उपवास के दिन प्यास लगने के कारण या भयानक
किसी बीमारी के कारण अगर उसका प्राण चला जाता है, तब भी निर्दयी विधि उसके सूखकर
मर रहे जीभ पर एक बूंद पानी या दवा देने की अनुमति नहीं देती है। अत: कोई बालिका अगर
अनाथ होकर इस निदारुण अवस्था तक पहुँचती है – जो बालविवाह के कारण नित्य संभव है –
तब विचार करें कि उसके जैसा दुखी और यातनापीड़ित कौन होगी? जो कठोर व्रताचरण का
निर्वाह परिपक्व शरीर के लिये भी दुष्कर होता है, उस कठोर व्रत में अगर कोमल अंग
वाली बालिका को बाल्यावस्था से ही व्रती होना पड़े तब उसका दुख से दग्ध जीवन और
कितना दुख में बीतता है, क्या बतायें? हम अपनी आंखों से देख रहे हैं, इस प्रकार
सैंकड़ों की संख्या में हतभाग्य कुमारी उपवास की रात में भूख-प्यास से क्षीण हो रहे
उदर, सूख रहे तालु, म्लान चेहरा लेकर मृतप्राय हो जाती है, फिर भी कोई कारुणिक
व्यक्ति उसके उस दयनीय अवस्था पर करुणा दिखाते हुये, निर्मम शास्त्रविधि और
लोकाचार का उल्लंघन करने का साहस नहीं करना चाहता है। और उन अभागिनियों में भी
संस्कारों की इतनी कठोरता पनपती है कि प्राणवायु निकल जाये तो जाये, स्वीकार है
लेकिन एक बूंद पानी भी गले के नीचे नहीं उतारेगी। अत: जिस समय लालन
पालन, शरीर का देखभाल आदि के द्वारा पितामाता को संतानों की रखवाली करनी चाहिये,
उस समय विवाह द्वारा उन्हे पराये घर में विसर्जित कर इस तरह के असीम दुख के सागर
में फेंक देना नितांत अनुचित है। और भद्रकुल में विधवा स्त्री के रहने पर कितने
प्रकार के पापों की आशंका है, विचार करने पर सभी समझ सकते हैं। विधवा नारी अज्ञान के वश में कभी कभी
सतीत्व धर्म को भी भूल कर विपथगामिनी हो सकती है, और लोकापवाद के भय से भ्रूणहत्या
आदि अत्यंत गर्हित पाप कार्य करने में भी प्रवृत्त हो सकती है। कम उम्र में जो
विधवा होने की स्थिति उत्पन्न होती है, बालविवाह ही उसका मुख्य कारण है। बाल्यावस्था में
विवाह देना अतिशय निर्दयी व नृशंस का कर्म है। अत: हम विनयपूर्वक
स्वदेश के भद्र महाशयों के निकट निवेदन कर रहे हैं, सभी एकमत होकर सतत यूँ यतन
करें ताकि बालविवाह-स्वरूप यह कुरीति हमारे देश से हटे!
बालविवाह के बारे में हमने आज की पत्रिका में जो लिखा वह
केवल उपक्रम है। विषय से संबंधित अनेकों युक्ति और दृष्टांत मन में बचे रह गये।
क्रमश उन्हे प्रकाशित करने के लिये सचेष्ट रहूंगा।*
______________________________________________________
*प्रस्तुत आलेख सन 1850 में मतिलाल चट्टोपाध्याय
महाशय के सम्पादन में प्रकाशित ‘सर्वशुभंकरी’ मासिक पत्रिका में मुद्रित हुआ था।
इस पत्रिका में प्रकाशित किसी भी रचना में लेखक का नाम नहीं था। ‘सर्वशुभंकरी’
पत्रिका के पहले अंक में प्रकाशित ‘बालविवाह के दोष‘ शीर्षक आलेख विद्यासागर महाशय
की रचना है इसका जिक्र राजनारायण बसु रचित ‘आत्मचरित’ तथा शम्भुचन्द्र विद्यारत्न
रचित ‘विद्यासागर जीवनचरित’ में है।
17-2-24