Tuesday, September 20, 2022

রোববার

·        বাবু (দশ বছর), তার মা, বাবা, দাদু
·        চাওয়ালা বৃদ্ধ, তার পুত্রবধু, তার নাতি শিবু (দশ বছর),
·        তিনজন গ্রাহক (তার মধ্যে দুজন প্রেস ফটোগ্রাফার ও তার বন্ধু)
·        ক্লাসের দিদিমণি

[স্টেজের পিছনে বাঁদিকে একটা বসার জায়গা। ঘর। রোববারের সকাল। বাবু মোবাইল নিয়ে ব্যস্ত। মা হাত মুছতে মুছতে এসে একবার তাড়া দিয়ে গেল।]
মা -    যা না বাবু, একঘন্টার তো ক্লাস! তার জন্য সকাল থেকে ঘ্যাঁতাতে হয়। (নেপথ্যে ছেলের বাবাকে) শুনছ! ওঠো না এবার! ওকে পৌঁছে দিয়ে এস।

বাবা - (নেপথ্য থেকে) পৌঁছে দেওয়ার কী আছে? একাই তো যায়। এক রোববার ইচ্ছে যখন করছে না ছাড়ো! সারা সপ্তাহ ভোরবেলা থেকে স্কুলে যাওয়ার চাপে থাকেই বেচারা!

মা -    দূর! সব একরকমের! কী বলব। আচ্ছা দাঁড়া! আজ দুপুরে আমিই ধরব তোকে।

[দাদু ঢোকেন।]

দাদু - কী হল? প্রতি রোববারের ব্যাপার? [বাবুর সামনে এসে বসেন। রহস্যের মত করে বলেন] আচ্ছা, ঠিক আছে, আজ বাংলা ক্লাসে যেতে হবে না। শোনো না ভাই! শরীরে যুৎ পাচ্ছি না। একটু হাঁটতে যাব। না গেলে শরীরটা আরো খারাপ হবে। তুমি যাবে আমার সাথে? তুমি সঙ্গে থাকলে একটু বল পাব। [হেসে যোগ করেন] চকলেট পাবে ফেরার সময়।

[বাবু মোবাইলের দিকে তাকিয়ে গেমটা শেষ করতে করতে উঠে দাঁড়ায়। তারপর মোবাইলটা ড্রয়ারে রেখে দাদুর দিকে হাত বাড়ায়।]

বাবু -  চল। চকলেট চাই না। ক্লাসে যেতে ভাল্লাগে না।

দাদু - তা ঠিক! সারা সপ্তাহ তো ভোরবেলা থেকে স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হওয়া। তোমার বাবাও তো সারা সপ্তাহ অফিসে ছোটে। তাই রোববারে তোমাকে নিয়ে আর বেরোতে চায় না। হয় এরকম। আমিও যখন চাকরি করতাম এরকমই হত। [নেপথ্যে ছেলের মাকে বলেন।] বৌমা, আমি বাবুকে নিয়ে বেরুচ্ছি।

মা -    [পর্দা থেকে আধেক মুখ বার করে] ক্লা

দাদু - [আড়ালে হাত দেখিয়ে থামিয়ে দেন] নাঃ। ওর ইচ্ছে যখন নেই, থাক। জোর কোরো না। এই আমার সঙ্গে একটু বেড়াতে যাচ্ছে।

মা -    [বাবু কে] আজেবাজে কিছু খাওয়ার আবদার করবি না কিন্তু। আর মোবাইল নিয়ে যাবি না।

বাবু -  [ড্রয়ারের দিকে দেখায়] রাখা আছে।

          [দুজনে বেরিয়ে যায়। স্টেজের ডানদিক থেকে ঢোকেন একজন বৃদ্ধ, এক মহিলা, বাবুরই সমবয়সী এক শিশু, নেপথ্য থেকে একটা টেবিল, একটা বেঞ্চি, তিনচারটে বিস্কুটের বোয়াম, চায়ের স্টোভ, সসপ্যান সঙ্গে নিয়ে। চায়ের দোকান সাজান। একজন গ্রাহকও ঢুকে বেঞ্চিতে বসে। অন্যদিক থেকে ঘুরতে ঘুরতে ঢোকেন বাবু আর বাবুর দাদু।]

দাদু তারপর বুঝলে! তোমরা তো দেখনি কানপুরের ফিল্ডে বিশ্বনাথের স্কোয়্যার কাট।

বাবু বিশ্বনাথ?

দাদু হ্যাঁ, গুন্ডাপ্পা বিশ্বনাথ। (হাসতে হাসতে) তাবলে গুন্ডা নয় কিন্তু। যদিও মোটা গোঁফটা ছিল। সাউথের দিকে ওই ধরণের গোঁফ খুব পছন্দ। কিন্তু ছোট্টো খাট্টো। ব্যাটটা যেন আস্তে করে ঘাসের ওপর বুলিয়ে দিল, আর বল সোজা বাউন্ডারিতে। আর্ট, আর্ট ছিল ওর খেলায়।

বাবু - হুম্‌, তোমার মতিগতি বুঝতে পারছি, চা খাবে এখন।

দাদু - বাঃ, এতক্ষণ হাঁটলাম! একটু চা খাব না?

বাবু - চিনি ছাড়া খাবে কিন্তু।

দাদু -  হ্যাঁ রে ভাই, চিনি ছাড়া, দুধ ছাড়া [দোকানে ঢুকতে ঢুকতে] কী ঘোষবাবু, একাই দোকান সামলাচ্ছেন?

ঘোষ - নাঃ, একা কোথায়? বৌমা ওই বাসনগুলো ধুচ্ছে। [ততক্ষণে ওনার নাতি শিবু একগোছা ধোয়া বাসন নিয়ে ঢুকে টেবিলের একদিকে সাজিয়ে রাখল।] আর এই, নাতি এগিয়ে দিচ্ছে।

দাদু - ছেলে এখনো আমেদাবাদে?

ঘোষ - হ্যাঁ, দেখুন কদিন থাকতে পারে। পুরোনো হলেই তো ছাঁটাই। আবার নতুন দল আসবে। সেই ভয়ে বৌ, ছেলেকে নিয়ে যায় না। একটা পারমানেন্ট কাজ পেলে স্বস্তি হয়।

শিবু - পইসা দ! দুধ লাবে কে পড়তই ন?

দাদু -  [শিবুকে দেখিয়ে] ও বাংলা বলতে পারে না?

ঘোষ - বলতে পারে মোটামুটি। কিন্তু ওই, অভ্যেস। চারদিকে যে ভাষায় কথা তাই

দাদু - স্কুলে যায় তো?

ঘোষ - সে যায়। ওখানে তো আর

দাদু - হ্যাঁ, সে জানি। স্কুলে আর বাংলা কোত্থেকে শিখবে। [বাবুর দিকে তাকিয়ে] তুমি তো বাংলা বলতে পার, তাই না? দাদুভাই?

বাবু - লিখতেও পারি একটু একটু।

ঘোষ - [দাদুকে] চা খাবেন তো?

দাদু - হ্যাঁ, লিকার। দুধ, চিনি ছাড়া। [ঘোষবাবু স্টোভ থেকে কেটলি নামিয়ে একটা ছোটো মগে জল চাপান।]

ঘোষ - [বাবুর দিকে ইশারা করে] আর ও? বিস্কুট দেব?

দাদু - কী ভাই, খাবে? আচ্ছা, থাক। [ঘোষবাবুকে] না, দেবেন না ওকে। ওর মা আবার বকবে। [একটু থেমে] ওনারও মোটামুটি একই অবস্থা। বাড়িতে বাংলা শুনছে জন্ম থেকে তাই বলতে পারে ভালোই, কিন্তু [বাবুর দিকে দুষ্টুমিভরা চোখে তাকিয়ে] লেখাটা শিখতে বললেই ব্যস, প্রতি রোববার

ঘোষ - রোববার?

দাদু -  রোববারে বাংলার ক্লাস নেন এক দিদিমণি। এই, কাছেই। প্রতি রোববারে দাদুভাইয়ের মা দাদুভাইকে নিয়ে পড়েন, যা যা, বাংলা ক্লাসে যা! আর দাদুভাই, না না …’ [বাবুকে] রাগ করছ না তো, তোমার বিষয়ে বলছি বলে?

বাবু -  আমি তো শিখেই গেছি অ, আ, ক, খ লেখা। তবু মা জোর করে পাঠাবে। না আরো ভালো করে শিখে নে। পোয়েট্রি রিসাইট করা শেখ গান শেখ বাংলায় ভালো করে লেখা প্র্যাক্টিস কর বোরিং ভাল্লাগে না আমার

ঘোষ - কী ভালো লাগে দাদুভাই তোমার? খেলা? ক্রিকেট?

দাদু -  হ্যাঁ, সেটা ভালো লাগে। বিকেলে যায় তো। কিন্তু না হলে, ব্যস মোবাইল গেম

বাবু -  মোটেই না। ভালো লাগে সবই। কিন্তু স্কুলে বাংলা পোয়েট্রি আর গান কে শুনবে? সেই মা আবার ধরে নিয়ে যাবে বেঙ্গলি নিউ ইয়ারে, ক্লাবের প্রোগ্রামে। একজনও স্কুলের বন্ধু নেই সেখানে!   

          [শিবু এক কাপ লিকার চা দিয়ে যায় দাদুর হাতে।]

দাদু - [শিবুকে] তুমি তো দাদুর সাথে, মায়ের সাথে তো বাংলায় কথা বলতে পার। বল না কেন?

শিবু - [ভাঙা উচ্চারণে] ঠিকঠাক হয় না। ভালো পারি না।

দাদু - [বাবুকে] তুমি তো বললে লেখা শিখে গেছ। ওকে বাংলা লেখা শিখিয়ে দেবে?

বাবু - [শিবুকে] তুমি শিখবে?

শিবু - হমরা ফুরসৎ কহাঁ? অভি দুধ লাবে কে হ্যয়!

          [ওদিক থেকে শিবুর মা ঢোকেন হাতভর্তি বাসন নিয়ে]

মা -    লইহ বাদ মেঁ। অভি বইঠ থোড়া হুনকর লগলে। বাত কর!

[বাবু শিবুর হাত ধরে। পাশে বসায়। ততক্ষণে আরো দুজন গ্রাহক ঢোকে দোকানে। একজনের গলায় ক্যামেরা, ক্যামেরার ব্যাগ, গায়ে ফটোগ্রাফারদের মত জ্যাকেট।]

ফটো - ক্যা দাদা, অভি নাস্তা কুছ ন বনায়ে হ্যঁয়? আচ্ছা, চায়-এ পিলাইয়ে। দুগো বিস্কুট দিজিয়ে সাথ মেঁ।

অন্য -  অলগ সে তাজা বনওয়াও না।

ঘোষ - অলগ সে বনানে কে লিয়ে তো ইন্তজার করনা পড়েগা। দুধ আয়েগা তব। পিজিয়ে, কোই রাত কা বাসি নহিঁ হ্যয়, অভি বনায়ে হ্যঁয়।

ফটো - অরে বৈঠ ন। বঙ্গালিদাদা কে দুকান কী চায় ভি ঠিক হ্যয় অওর সমোসা ভি। বনৈবে নহিঁ কিয়ে হ্যঁয়। ন তো ওয়হি খাতে।

বাবু -  [শিবুকে] একদম সহজ। [ঘোষবাবুর দিকে তাকায়। ওর তাকানো দেখে বুঝতে পেরে ওর দাদু উঠে গিয়ে ঘোষবাবুর ক্যাশবাক্সের ওপর রাখা নোটবই আর কলমটা উঠিয়ে এনে এগিয়ে দেন বাবুর দিকে। বাবু নোটবইয়ে কলম দিয়ে আস্তে আস্তে লেখে।] কী লিখলাম বল তো?

শিবু - [নোটবইটা হাতে নিয়ে সোজা করে দেখে মাথা নাড়ে।] বুঝি না।

বাবু - ওর নিচে ওইভাবেই লেখ তো।

শিবু - [কলমটা হাতে নিয়ে চেষ্টা করে, পারে না।] ন হোতই হমরা সে।

বাবু - [কলমসুদ্ধু ওর হাতটা চেপে ধরে নিজের লেখার ওপর বোলায়।] এই হল শ। স নয়, শ, শ। আর এই হল রস্‌সিকার। শি। এই হল ব, ব। এই হল রস্‌সুকার। বু। শিবু। তোমার নাম। লেখ নিচে। [শিবু ভাঙা ভাঙা লেখে।]

মা -    [দুজন গ্রাহককে চা আর বিস্কুট দিতে দিতে এতক্ষণ উদগ্রীব হয়ে এদিকে তাকিয়ে দেখছিলেন। এসে শিবুর লেখা দেখে হেসে হাততালি দিয়ে উঠলেন, বাঃ, বাঃ। তারপর বয়াম থেকে একটা বিস্কুট বার করে বাবুর দিকে এগিয়ে দিলেন] এই নাও, খাও। মাঝেমধ্যে রোববারে এসে ওকে অ-আ-ক-খ শিখিয়ে গেলে তোমাকে বিস্কুট খাওয়াব। বাবু বিস্কুটটা হাতে নিয়ে দাদুর দিকে তাকায়।

দাদু - খাও, খাও। উনি দিয়েছেন তো!

          [বাবু বিস্কুটটা দুহাতে চেপে ভেঙে একটা টুকরো শিবুর মুখে ঠুঁসতে যায়।]

ফটো - এ রুকো, রুকো! [উঠে দৌড়ে এসে বাবুর হাতটা ধরে আটকে দেয়। তারপর ক্যামেরার লেন্সটা খুলে তাক করে বলে] অব খিলাও বাবু। এক ফোটো তো বনতা হ্যয়। বঢ়িয়া ফোটো, বিস্কুট খিলাতে হুয়ে। [বাবু বিস্কুটের আদ্ধেকটা শিবুকে খাওয়াতে খাওয়াতে বাঁহাতে বাকি আদ্ধেকটা নিজের মুখে পোরে।]

দাদু - চল, এবার যাওয়া যাক। দেরি হলে আবার মা বকবে। [ফটোগ্রাফারকে] ছবিটা পারলে আমাকে পাঠিয়ে দিও ভাই। এই নাও আমার মোবাইল নম্বর। [পকেট থেকে মোবাইলটা বার করে বলেন। ফটোগ্রাফার লিখে নেয়।]

অন্য আপকা পোতা হোনহার লড়কা হ্যয়। পঢ়াও বেটা, ইসি তরহ হর রবিবার কো আকর উসকো লিখনা সিখায়া করো। শিকছা এ্যায়সে হী আগে বঢ়েগা। জরুরি হ্যয়।

দাদু -  উও ভী মাতৃভাষা কী শিকছা! স্কুলোঁ মেঁ পঢ়ায়া হী নহীঁ জাতা। [ফটোগ্রাফারকে] কভি ইস সমস্যা কো ভী কভর কিজিয়ে!

ফটো - তো কহাঁ সিখতা হ্যয় আপকা পোতা? ঘর পর?

দাদু -   হা হা ঘর পর কিসে ফুরসত হ্যয় ভাই? য়হীঁ জুবিলি ক্লব মেঁ এক ম্যাডম সিখাতি হ্যঁয় রবিবার কো।

ফটো [মোবাইলটা বার করে] ক্যা নাম হ্যয় উনকা?

দাদু -  অনুরাধা শিকদার। উয়ো খুদ টিচর হ্যঁয় স্কুল মেঁ।

ফটো - ঠিক হ্যয় স্যর! মিলেঙ্গে উনসে। এক ফিচর হোনা চাহিয়ে ইস প্রব্লেম পর। নমস্কার! [বলে দুজনে বেরিয়ে যায়]

[দোকান ছেড়ে মাঝ স্টেজে সামনের দিকে আসে দুজনে।]

বাবু -  তুমি এত ভালো হিন্দি শিখলে কি করে? তুমি তো ছোটবেলায়, গল্প করো, যে কোন গ্রামে

দাদু -  ধ্যাৎ, তুমি তো প্রেস্টিজ পাংকচার করে দেবে, কালনা গ্রাম হল? তুমি গেলে বুঝবে। এখন তো অন্য রূপ। তবে তখনও গ্রাম ছিল না। ঐতিহাসিক শহর। কত মন্দির! লোকে দেখতে যায়, দূর দূর থেকে।

বাবু -  হিন্দি শিখলে কি করে, বল না!

দাদু -  বলতে বলতে, পড়তে পড়তে। ইংরিজিও সেভাবে শিখেছি। ভাষা চাইলেই শেখা যায়। হরিনাথ দের নাম শুনেছ? বহু পুরোনো দিনের মানুষ। আজকের নয়। তিনি আঠাশটা ভাষা জানতেন।

বাবু -  (বিস্ময়ে) আঠাশটা!

দাদু -  এমনিতেও দেখ, তুমি তো বাবা, মার সঙ্গে শিলং বেড়াতে গিয়েছিলে?

বাবু -  হ্যাঁ।

দাদু -  সেখানে হোটেলে যে ম্যানেজারবাবু ছিলেন, মনে আছে? তোমাকে চকলেট দিয়েছিলেন!

বাবু -  হ্যাঁ।

দাদু -  উনি কটা ভাষা জানতেন, মনে করে দেখ তো?

বাবু -  (করে গুনতে গুনতে) বাংলা, ইংলিশ, হিন্দি

দাদু -  ব্যস? আর খাসি? অসমিয়া? উনি খাসি খবরের কাগজ পড়তেন, অসমিয়া খবরের কাগজ পড়তেন। অথচ লেখাপড়া কী? এমন কিছু না। ভাষা চাইলেই শেখা যায়।  

[ওদিক থেকে বাংলা ক্লাসের দিদিমণি ঢোকেন।]

দিদি - আরে? কী হল অয়ন, আজ ক্লাসে এলে না যে? [দাদুর দিকে তাকিয়ে] নমস্কার! আপনি ওকে নিয়ে বেরিয়েছিলেন? কোনো কাজে?

দাদু -  হ্যাঁ, ভীষণ জরুরি কাজে। তা আপনি ক্লাস ছেড়ে কোথায় চললেন? এত তাড়াতাড়ি তো শেষ হয় না!

দিদি - হ্যাঁ, আজ পড়াইও নি। একটা গানের রিহার্সাল করাব ভাবলাম, সামনে নেতাজি জয়ন্তি আছে, তাও পুরো হল না। আমার নিজেরই একটা আর্জেন্ট ফোন এসে গেল।

দাদু -  কোন গানটা গাওয়াবেন?

দিদি - ওই তো! কদম কদম বঢ়ায়ে যা! আর যদি দুটো গানের সময় দেয় অর্গানাইজাররা তাহলে বল বল বল সবে …, ওটা ওদের তৈরিই আছে, ১৫ই আগস্টে গেয়েছিল। আমি আসি এখন, তাড়া আছে।

দাদু হ্যাঁ, হ্যাঁ, যান!

দিদি - একজন অসুস্থ। তাই ছুটি দিয়ে দিলাম। [বাবুকে] কী অয়ন, সামনের রোববারে আসবে তো? আমার তাড়া আছে, এগোচ্ছি এখন। [এগিয়ে যেতে যেতে] এস কিন্তু। গানের রিহার্সালেও তোমাকে দরকার।

দাদু - [জোরে, দূরে যাওয়া দিদিমণিকে] যাবে, যাবে। যাবে নিশ্চয়ই। আপনার ছাত্র এখন শিক্ষক বলে কথা! [বাবুকে] কী দাদু! যাবে নিশ্চয়ই এবার, নাকি? নইলে ওকে শেখাবে কী করে? তুমি নাকি স্বাধীনতা দিবসে গান গেয়েছিলে? বল বল বল সবে? গেয়ে শোনাও না একটু!

বাবু -  সে তো সবাই মিলে গেয়েছিলাম!

দাদু -  মানে তুমিও গেয়েছিলে তো? নাকি গলায় আওয়াজ নেই, দেখে দেখে মুখ নাড়িয়ে যাচ্ছি

বাবু -  না গেয়েছিলাম

দাদু -  তা শোনাও না!

বাবু - বিস্কুটের কথাটা মাকে বোলো না।

দাদু -  ও, ব্ল্যাকমেল? আচ্ছা, ঠিক আছে, বলব না। এবার শোনাও!  এমনিতেও, মা বকবে না তোমাকে। নিশ্চিন্ত থাক।

বাবু - না, মা না, বাবা বকবে। [দাদু হেসে ওঠেন] বুঝেছি, বুঝেছি। শোনাও এবার গানটা!

          [বাবু গানটা ধরে। দাদুও তাতে গলা মেলান। আস্তে আস্তে দুজনে একে অন্যের হাত ধরে বেরিয়ে যায়। এদিকে বাবুর বাবা একটা টুল আর বাল্ব হাতে নিয়ে ঢোকেন। একটা দেয়ালের কাছে টুলটা রেখে তার ওপর দাঁড়িয়ে বাল্ব বদলান।]

বাবা -  শুনছো? প্যাসেজের বাল্বটা বদলে দিলাম।

মা -     প্যাকেটটা?

বাবা -  আছে ড্রয়ারে। তবে দরকার নেই। বাল্বেই লেখা আছে কেনার তারিখ।

মা -     ওরা এত দেরি করছে কেন কে জানে! একবার ফোন করো না!

[ফোন করার আগেই দাদু আর বাবু ঢোকে বাড়িতে]

দাদু -  এসে গেছি। এসে গেছি। ফোন করতে হবে না।

মা -    এত দেরি হল কোথায়?

দাদু -  কেন? একটাই ক্লাস আছে দাদুভাইয়ের জন্য? যেখানে ওকে ছাত্র হতে হবে? আর তোমার বকুনি শুনতে হবে? আর সেই ক্লাস? যেখানে ও টিচার?

বাবা -  মানে?

দাদু -  তুই তো কথাই বলিস না! বড় ভারি অফিসে কাজ করনেওয়ালা হয়েছে। প্রতি রোববারে ওর মা বলে যাবে, বাবুকে ক্লাসে নিয়ে যাওয়ার জন্য আর তুই সোফায় বসে পা নাচাবি। নিজে একটু আদর করে বেড়াতে নিয়ে যেতে পারিস না?

মা -    ওকে ছাড়ুন তো। আমি চা দিচ্ছি আপনাকে। টিচার কী বলছিলেন?

দাদু -  সে পরে বলব। আগে বলো, ও যে এত সুন্দর বাংলা গান গায় কখনো শুনেছো?

মা -    হ্যাঁ। সে তো কোরাসে গেয়েছিল। সে প্রোগ্রামেও তো ওর বাবা গেল না। আপনি ছিলেন না সে সময়। আমি একাই গিয়েছিলাম।

দাদু -  আমি তো আজ শুনলাম। দাদুভাই, প্লিজ, আরেকটি বার শোনাও। বাবাকে ছাড়ো। আচ্ছা আমি গাইছি, আমার সঙ্গে গাও
বল বল বল সবে,
শতবীণাবেণু রবে,
[বাবু গলা মেলায়]
ভারত আবার            জগতসভায়
শ্রেষ্ঠ আসন লবে।
[রান্নাঘর থেকে মা গলা মেলান]
ধর্মে মহান হবে,
কর্মে মহান হবে,
নবদিনমণি               উদিবে আবার
পুরাতন এ পূরবে।
          [বাবুর বাবাকে] কি রে? তুই মেলা, গলা! [বাবাও গলা মেলান।]
বল বল বল সবে

          হ্যাঁ, এই তো! একে বলে ক্লাস। এবার চা দাও বৌমা। একটু আরামে বসে খাই।

 

[শেষ]


২১.৯.২০২২/ ১.৯.২০২৩ 

No comments:

Post a Comment