গোলাপ ও জ্যামিতির বাক্স
একেক দিন বর্ষায় উষ্ণ আকাশের গা বেয়ে জল ঝরে।
প্রায়ান্ধকার জানালার কাছে
ডাকি “ইউক্লিড”!
চোখের ভীষণ সামনে জেগে ওঠে বড়সড় বাসন্তী গোলাপ!
ডাকি, “গোলাপ!”
টিনের জ্যামিতির বাক্স খুলে যায়।
শিশিরের প্রতিসারনে ধীরে
ফুটে ওঠে প্রোট্র্যাক্টর, সেটস্কোয়ার,
ডিভাইডার,
কম্পাস,
ইরেজার,
তীক্ষ্ণ পেনসিল!
তীক্ষ্ণতা ফোটে।
আঙুলের ডগায় এক বিন্দু রক্ত –
ইউক্লিডের গোলাপ!
প্রেমের শেষ কবিতা
হোক অন্য পথে,
আমারই বিরুদ্ধে এক বোঝাপড়ায়,
তবু পৌঁছোও!
চটিটা পায়ে গলাই। বেরিয়ে পড়ি পথে।
গাছের গুঁড়িগুলো গায়কের
রেয়াজের
মত। স্নানরত শিশুর
গায়ে
সর্ষের তেলের গন্ধ,
স্টেশনের কাছে ভীড়,
চায়ের কেটলি থেকে ধোঁয়া…ওঃ আমার
ভালো লাগে না এই হোঁচট খাওয়া শীতের সকালে!
আঙুলের ফাঁকে অসহ্য তোমার স্পর্শনীয়তা –
ঢোকাবো উনুনে, হাতদুটো?
পৌঁছোও!
আমি যাই, কুড়োই সারা ঘরে
নষ্ট রক্ত দুজনের।
আউটডোর
টিটেনাস ছড়িয়ে পড়াতে পনের দিন বন্ধ ছিল ওটিগুলো, গতকাল
খুলেছে।
রুগী দেখার হলঘরে জনাচল্লিশ গর্ভবতী নারী। দরজার কাছে
দাঁড়িয়ে আমরা পাঁচ,
বেশি উদ্বিগ্ন পুরুষ।
এক একজন ফুটবোর্ডে পা রেখে উঠে শুচ্ছে টেবিলে।
ডাক্তার দস্তানা-হাত তার শাড়ির ভিতরে ঢোকাচ্ছেন।
লেখাচ্ছেন উপসর্গ, ওষুধ।
অসহ্য গরম, দুর্গন্ধ।
পৌঁছোবার মুখে পিছনে ধাক্কা খেয়ে একবার
চোখ
ফিরিয়ে দেখলে আমায়।
এগোও কাজল! আমি আছি এখানেই। থাকব। কোথাও গেলেও
মেনো যে আছি। যেমন আর সবাই
মানছে।
তুমি না মানলে এই নরককে কোনোদিন
কী করে ভাবছি, করব হাসপাতাল?
অন্যমনস্ক
নিঃসঙ্গ নারীদের নিঃসঙ্গতায় তুমি ভরে থাক।
কেউ যুবতী কেউ বিগতযৌবনা
কেউ বিবাহিতা – বিধবা, পরিত্যক্তা, গৃহত্যাগিনী
কেউ অবিবাহিতা;
সব বন্ধু তোমার।
আমায় জড়িয়ে ধরো যখন তখনও
তাদের নিঃসঙ্গতায় মাঝে মাঝে
অন্যমনস্ক
হয়ে পড়ো তুমি!
বুঝতে সময় লাগে
নানান কথার মাঝে তুমি বলে ওঠো,
‘ভীষণ দুরন্ত হয়ে উঠছে এখনই’…
আমার হাতটা টেনে
পেটের ওপর চেপে ধরে বোঝাও,
‘এইটে মাথা, দেখ দেখ, এদিকে সরছে ধীরে ধীরে!’
তোমার হাঁটাচলার মধ্যে ওর সঞ্চরণ,
তোমার ঘুমের মধ্যে ওর ঘুম,
উড়ালপুলের পর
ভাঙা রাস্তাটুকুর ঝাঁকুনিতে ওর বিরক্তি,
তোমার কষ্টে ওর বয়ে যাওয়া –
পৃথিবীরও বুঝে উঠতে সময় লাগে কিছুদিন
তুমি কার কথা বলছ।
কারসাজি
ফেব্রুয়ারির উজ্জ্বল রোদ্দুরে হঠাৎ মেঘ,
চেতরপুরে সন্ধ্যায় গ্রামে অবক্ষয়ী বিষন্নতা,
জোলো
হাওয়ার বিচ্ছিরি কাঁদুনি…
এসব তোমার সাথে আমার
সম্পর্কে দুর্বোধ্যতা নয় – প্রিয় বান্ধবী,
আমাদের জোর নিয়ে সন্দেহের কারসাজি।
এর বেশি জায়গা পাবো না বাসে, এস উঠি!
জীবনের দুর্বোধ্য মানেগুলো এভাবেই ধাক্কাধাক্কি করে
শেষে
হয়ত চালকের
পাশে বসে পড়ে একসময়!
পাহাড়ি পথে বাসটা ওঠার আগে
রাস্তার দুপাশ হঠাৎ চওড়া।
বাঁদিকে একটা কাঁচা পথ
নতুন কোনো প্রজেক্ট বা কোয়্যারির।
মন্দিরটায় বাজছে হাইওয়ের ড্রাইভারদের ভরসা।
ভেজা বুনো গন্ধ হাওয়ায়।
দুগ্লাস চা এনে
একটা বাড়াই বাসের জানলার দিকে –
তোমার চোখদুটোয় খুঁজি
কয়স্তর মেঘের পর পাথর বেসামাল করছে রোদ্দুর,
গুটিগুলোর দেয়াল চরাচরে
কাঁপছে নাকি রঙিন ডানার চাপে, আলোড়নে।
ঢেউগুলো
তুমি মানবে আমাদের পৃথিবীটার
ঢেউগুলো অনেক স্তিমিত ইদানিং,
এখন জ্যোতির্ময় শরীর দুলিয়ে
ঘাসের সাথে ওঠার পায়না মেয়াদ -
দু’এক রঙে চটজলদি অভ্যাসে
নেমে পড়ে আসর জমাতে ঋতুদের।
ঋতুরাও আর সে প্রাচীন ঋতু নয়
শুধু ঘড়ি দেখে অধীর, এত বেয়াড়া!
একশ ওয়াটের খাড়া হলুদ আলোয়
দেখি মগ্ন চারকোলে দশ বছর
দেগা’র নারীর মত কালচে কেজুড়ে
তোমার দেহের ভাঁজ, তীব্র যৌন।
হাওয়া উথালপাথাল – ভালো লাগে না।
কেন মনে হয় তারারা কিছু বলবে!
গোদাবরী রেলওয়ে জাংশনে
দিনের নদী অনেকটা উজানে গিয়ে জাগে
রাতে তার জাগরণ তটে উঠে আসে
বর্ষায় গাছ বেয়ে জড়ায় কোকিলের গলা
নিসর্গ
তুমি আমায় নিয়ে এলে তাই
এ
নদীটার নাম
জানতে চাইলাম।
ওপারের
হাওয়া এসে খেলছে তোমার চুলে তাই
এ
নদীটার বয়স
আমায় শোনালো মানুষের হয়ে ওঠার সঙ্গীত।
হাতে রাখলে হাত তাই মনে হল -
কত জন্ম ধরে এ নদীর পাড়ে আসছি ।
ফাল্গুন – ২০১০
বাসা বাঁধার চেষ্টায়
কিছু ঘরে, এ শহরের বিভিন্ন পাড়ায় আমরা থেকেছি।
ঘরগুলো আজ আরো জীর্ণ, তবু আমাদের
পরের প্রজন্মটিকে জায়গা দিয়ে, রাতে
সস্তার এফএমএ গুলজার।
পথে পথে হোলিকাদহনের
আগুনেমোষগুলো গলার দাউ
দাউ শিরা ফুলিয়ে চাটছে
চন্দ্রাসব।
মনে পড়ে, এক ঘরের এক কোনায় অর্থহীন
ছিল একটি বাড়তি থাম। পর্দা দিয়ে ঢেকে
ঘরটাই সংক্ষিপ্ত, এমন বুঝিয়ে রেখেছিলাম।
পিছনে থাকতো সাইকেল।
এই প্রজন্ম
থামটাকে বানিয়ে নিয়েছে ঘরটির
নতুন মাত্রা – ছবির ছয়লাপে নিরুদ্দেশের
রঙীন
অর্কেস্ট্রা;
পিছনে আজও রয়েছে সাইকেল।
বাসা বাঁধার চেষ্টার বাসাটি বস্তুতঃ
এক হয় সারা পৃথিবীতে।
সভ্যতার খালপারে,
ছায়া পড়ে – আরো মায়া ধরে,
নোনা ঝরে - রোদে কূল ভরে,
হোঁচট, পতন – মাধ্যাকর্ষণরহিত,
ভূলগুলো – প্রণয়ে উত্তাপ।
বাসা বাঁধার চেষ্টায়
না মচকানোর গুনগুনটাই সব।
তাড়া
এত ভারী
গাঢ় জল
ক্ষেত ছাপিয়ে
আরেক ক্ষেতে
নামছে!
দূরের ওই
শস্যময়
পাহাড়গুলো
আঁধার হয়ে
মাতাল মেঘের
ঘেমো স্তনে
মুখ ডুবিয়ে
ঘামছে।
প্রকৃতিও
বলতে নারাজ,
কতটা তার
মানুষ!
আমার
কাজের এবং
যাওয়ার তাড়া
ঢুকে পড়ছে
এ ওর ভিতর -
মেঘের বুকের
হারছড়াটা
নাকে
মুখে
বাধছে।
মায়া
চাস-কাত্রাস –
ভাপা জুনমাস,
দিগন্তলীন
কালচে ধুলোয়
হাওয়ার মরচে খুঁচোচ্ছে এক ফিঙে।
হ্যাঁচকা-কাঁখে শিশুমুখ টিঙটিঙে;
ভরদুপুরে রোগা মা’টি
বাসের
ভীড়ে ঠেলছে -
অসময়কে ধরতে দুহাত
সময়
যেন, মেলছে!
এই তো আমার মৃত্যুপারের স্বদেশ!
বাঁচছে আমার বৌ ও ছাওয়াল;
মানুষজনের চোখে, হাল্লায়
দুষ্টুমি এক কঠিন পথের
খেলছে!
বসন্ত
ফ্ল্যাটবাড়ির এই ঘরের ভিতর
হঠাৎ দেখি গজিয়ে উঠল সিঁড়ি!
চিলেকোঠাও পেলাম!
জানলা দিয়ে ঢুকল খাতায়
পেট্রলপাম্প,
শেরঘাটিতে ঢোকার আগে লাইন হোটেলে
চা-চুমুকের হাওয়া!
……………
উড়ুক্কু মন, বাজে কাপাস,
ক্লান্ত রাতে প্রতিটি বার
বুনট ফাঁসা,
সুতো ছিঁড়ে যাওয়া।
মৌ
অমৃত এ প্রাচীন মাটি
গাছের নতুন ছাঁও,
নশ্বরতার শিষ বাজিয়ে পথ পেরোতে
ভালোবাসার বাঁও।
কালদুপুরে দেখেছিলাম
কুঁয়োতলার সাবানফেনায়
স্নানরতা
অজেয় এক
দেশ।
কালদুপুরে?
কোন সে কাল?
ব্যাভিচারী মেধার জাল।
দুর্বিনীত হাওয়ার খুরে
পোড়া ঘরের শ্লেষ।
তুই নি আমার সাধের মেয়ে?
তুই নি আমার বৌ?
অশথতলার আঁধার ফোটায়
অপরিচয়ের মৌ।
আমি আমার কেউ না,
আমি আমার রোখ;
রাস্তাটা বাঁক নেওয়ার আগেই
ফিরিয়ে নিলাম চোখ।
নতুন আইভি
এমন একটি বীজ যে’টি
হয়ে
চলে।
বীজবন্দী আকাশ – আরো সুদূর
বীজবন্দী মাটি – আরো আতুর
বনস্পতি ও মেঘ
কথা
বলে।
রঙে খেলা – শিমুলের গুটিতে উত্তাপ
স্পন্দিত নির্জনতা – ঢেউয়ে চোখের চাপ
জলবাহিত কথা…
একটি বীজ – অটুট নশ্বরতা।
তুমি আমায় অনেক কিছু আরো
দেবে না?
আমি তোমায়?
কী?
বসন্তের ঝিল্লিতে নতুন আইভি –
সাদা চুল, তোমার আমার – শিকড় বৈকি!
নিমফুল
কোন্ সকালে মেয়েটাকে
ডাক্তার
দেখাতে গেছ,
এখনো
ফিরলে না।
কাজের পথে ওইদিকে
চৌরাস্তায়
হঠাৎ যদি
আসছ
দেখি, নিশ্চই
থামিয়ে
দেব সাইকেল।
দেরি হলেও ঘেমেচুমে
চা খাব
কিসুনজীর
দোকানে
এককাপ।
চায়ের ফাঁকে ঝরবে না নিমফুল?
শুধু পাহাড় বা সমুদ্র নয়
কোন জায়গা মন টানে না বলো?
সে শুধু পাহাড় বা সমুদ্র নয়
এমনকি এই সপাট সমতল ঘিঞ্জি শহরেও
যদি আসো কোনোদিন, ওঠো এ আড়াইঘর মেঘে,
যদি দিতে পারি যাকে বলে জলরেণু, প্রাণের ছোঁয়াচ –
দশজন মেয়েপুরুষ, দুটো প্রজন্ম রাত তিনটে অব্দি
“এবার একটা ডুয়েট হোক বুলি, তোর প্রাক্তন প্রেমিকের সাথে”
সকাল আটটায় গাদাগাদি ঘুম থেকে উঠে
অপরিচিত জানলার বাইরে এক আটপৌরে পৃথিবীর মুখোমুখি
দুপুরে ঘুরে আসবো কোথাও, শিশুর হাত ধরে তার দর্পে –
মনোরম সবুজ, পাখির কাকলি, পুরোনো মন্দির ইত্যাদি…
বিকেল হতেই “কী ধুলো রে বাবা তোদের শহরে”
তবু সন্ধ্যায় কারো ডেরায় নেমন্তন্ন –
মানুষটি বৌয়ের ক্যান্সার সারাতে সারাতে নিজের
দাম্পত্য,
ভালোবাসা বাঁচছে রোয়াবে
যেন বিশবছর ধরে ফোরলেনে চালাচ্ছে বুলেট
আর কিছু না হোক
ফিরে গিয়ে ওই বুলেটের শব্দ মন টানবে আলবাৎ।
পথসভায় বৃষ্টি
আকাশ ভরে ধেয়ে আসছে কালো মেঘ,
তার নিচে ঝড়, সাথে
দিগন্তঝাপসা বৃষ্টি-
আমরা আমাদের পথসভার বাকি কর্মসূচী কাটছাঁট করে নিচ্ছি কানে কানে;
ঠিক শেষের স্লোগানগুলোরই ওপর
বৃষ্টির প্রথম
তোড়টা এসে পড়ল…
সবার চোখ বলছে তারা হাসিমুখে জানে যে এ শত্রুর কোনো কারসাজি নয়
আমাদের প্রিয় দেশটার মরশুমী লীলা
এমন যেন আমাদের ঘরণীদের সম্মিলিত অট্টহাস, ‘আরো দেরি করো রোজ!’
রোসো! তোমাদেরও পথসভা হোক! আমরাও বৃষ্টি হতে জানি!…
আর যেদিন একসাথে করব পথসভা?
আমরা ও আমাদের ঘরণীরা, কাঁধে কাঁধে?
আঃ, সেদিনের বৃষ্টি তো সেদিনেরই বৃষ্টি হবে!
মশারি
বন্ধ ঘরে দুটো কবেকার পাতা বিছানা, টাঙানো
মশারি।
দরজা ঠেলে খুলছে কামিনী ঝোপের ভিতরের
শূণ্যতার হাওয়া।
কদম গাছ
বিরাট কদম গাছটা মাটিতে শুয়ে আছে।
বড় গাছ তো! শাখা প্রশাখায়
মৃত্যু ধরতে সময় লাগবে।
তবু আকাশ ছেয়ে আছে কালো মেঘে,
শুধু গাছটার গা ভরা ফুলে আর রঙ নেই।
এত সেন্টু হোয়ো না,
এর আগে ওদিকের শিমূলটা পড়েছিল,
এবাড়িতে আসার পর কত চৈত্র ওর তুলোর
ওড়াউড়িতে পেয়েছি, মনে আছে?
আর, নিজে যে দাঁড়িয়ে আছ তিনতলায়
ওখানে কটা পড়েছিল গাছ, জানো?
চলভাষ
এই একটা ছোট্টো সিগারেটবাক্সের মত চলভাষে,
কখনো ভেবেছিলাম?
হাঁটতে, হাঁটতে বা কখনো অটোয়,
মায়ের সাথে স্মরণ করছি টুসুর সেই বাহাত্তরে
হত্যার পর
নকশাল
বলে ছাপ্পা হয়ে যাওয়া,
সাথীকে আশ্বাস দিচ্ছি বিকেলের সভায় নিশ্চিত
পৌঁছোবো, “হ্যাঁ, হ্যাঁ
সবাইকে
খবর দিচ্ছি এক এক করে
ছেলেকে পাচ্ছি দ্বারভাঙ্গা ছাড়িয়ে রাজনগরের
কাছে বাইকে তিনজন;
কানে
বকবকানি শুনে ভাবছি, নাঃ
কিছু
দৃষ্টি তার আমার থেকে বেশি যৌক্তিক,
যা
চলছে তার বিরুদ্ধে নতুন ভাবে জোরালো!
কবে যেন বন্ধ হয়ে গেছে গঙ্গার বুকে
স্টিমার!
বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা সামনের ডেকে
একটু
আড়াল করে পাঁপর ভাজা হত!
গতকাল একটা সেতু ভেঙে নদীতে পড়ল ট্রাক।
কী আকষ্মিক মৃত্যু হয় মানুষের!
…বাতিল
সেই লোহার ডেকে করতল চেপে ভেজাই।
গন্ধ শুঁকি।
ভেজা লোহার গন্ধ।
মুঠোর এই চলভাষে কাউকে পাঠানো যাবেনা এই
গন্ধ।
বর্ষণমুখর ধারা কেটে এগিয়ে চলেছি ভেজা
অতিকায় লোহা।
চাকায় জল
আকাশ ঢাকা মেঘের আলোয় তুমি।
আমার
কে?
জানিনা।
চাকায় জল উঠছে ফেনিয়ে।
বারাণসী ৯৯
দেখা হলে হত অঘটন
অথবা ইশ্বরের
লীলা
বলতে পারো।
অদেখা নিজেই, তেইশ বছরের –
যত ঐশ্বর্যে ফেরালাম, এখনো ফেরাচ্ছি,
এ ক্ষমতা কোনো ইশ্বরের নেই।
মায়ে ও দুই বোনে মিলে
বাড়িখানা পুরো করেছো দেখলাম।
মাধবীলতা দোতলা ছাড়িয়ে গেছে।
তোমার বোনপোর বয়স,
যদ্দুর
মনে পড়ছে,
আমাদের অদেখা থেকে বেশ কিছুটা কম।
আর তার মুখে তার মাতৃভাষার জড়তা –
সে আরো এক অনেক বড় অদেখা
আমাদের সবার, যার বিষন্নতা
সন্ধ্যারতির ঘন্টাধ্বনিতে ফুটছিল।
বিরদোপুর, কামাচ্ছার গলিতে
আলো জ্বলে উঠছিল এসটিডি বুথগুলোয়।
গাছের মাথায়
পাখিদের ঘরে ফেরা ডাক তো শোনাও যায়না
আজকাল।
তুমি কোন শহরে আছো কর্ণাটকে, জানিনা।
ইঁটের শ্যাওলা
অনেক ধ্রুপদী জীবনশিল্প আমরা আবার থেকে
বাঁচি
প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে
যখন সন্তানের হাত ধরে ভোরের কুয়াশার মাঠে
যাই –
পুজোর ফুল দেওয়ার নামে
পুরোনো ভাঙা পাঁচিলে টাল সামলে উঠে
এক রাশ কনক ফুল
ইচ্ছে করে ডালটা তোমার মাথার দিকে নিয়ে
ঝাঁকিয়ে ঝাঁকিয়ে ঝরাই
নামতে গিয়ে
তোমার বকুনিতে ঘষা খেয়ে
ইঁটের শ্যাওলায় জামাটা হয় সবুজ
ভিত্পাথরে ফিরে যাওয়া
আলোর সে বৃষ্টিতে স্নান আমারই রক্তে বিষ
হয়ে আছে
তোমার মুখ যার প্রতিটি ফোঁটার সুধায়
ভিজিয়েছিলাম।
ওই বিষ আমার স্বাভিমান, তার দংশনই আমার আলো
বৃষ্টি ঝরছে নিরন্তর – সে প্রান্তরে এজন্মে
আর যাবোনা।
দেখ বিষ জাগছে শরীরে – দেখ চরাচরে আমার
কাঁপন,
অশ্রুর অহঙ্কারে এভাবে ভিত্পাথরে ফিরে
যাওয়া রোজকার।
মায়েদের কথোপকথন
তোমার অভিসারে জেগে থাকতে,
তোমার বাতাসী স্ফটিকে মেলতে ঘুমচোখ
ললাটে স্পর্শ করাতে জানালার শীতল গরাদ
এখনো যে কী ভালো লাগে এপ্রিলের মধ্যরাত!
এই তো সময় যখন পৃথিবী ঘুরছে টের পাই।
সামনের অস্পষ্ট মাঠে আমি আমার মায়েদের সাথে
বসি।
মায়েদের কোলে মাথা রাখি এক এক করে।
আহ! কত শতাব্দীর ভিতর-উঠোনে
আমার
প্রাচীন শক্তিশালী মায়েদের কথোপকথন!
ছবি
অনেকদিন ধরে ভাবছি
আমার ডাইরিতে তোমার ও ছেলেমেয়ের
একটা ছবি রাখবো –
কিছুতেই হয়ে উঠছে না।
বাইরে মুষলধারে বৃষ্টিতে নিঝুম হয়ে আছে
রাত।
শেষে হঠাৎ, বেশ কিছুদিনের জন্য একদিন
বাইরে যেতে হবে অথচ
ছবি থাকবেনা তোমাদের।
বাইরে মুষলধারে বৃষ্টিতে নিঝুম হয়ে আছে
রাত।
ছেলে মেয়ে ঘুমিয়ে রয়েছে,
তুমি আমার ওপর রাগ করে
ঘুমের ভাণ করতে করতে সত্যি –
ঘুমিয়ে পড়েছ কি?
বাইরে মুষলধারে বৃষ্টিতে নিঝুম হয়ে আছে
রাত।
কাল সকালে জলে ডোবা স্টেডিয়াম, রাস্তা
পেরিয়ে
যাওয়া আছে এদিক ওদিক,
নানা কাজে,
বহুবিধ সিঁড়ি ভাঙা আছে রোজকার।
রাগ
এখনো রাগটা রয়েছে তোমার ওপর।
তুমি কেন তেমন হলেনা যেমন
হওয়ার ছিল তোমার, আমারও
হওয়ার ছিল যদিও হতে পারিনি
আমিও।
আর একটু পরে আমি
ক্ষমা চাইব তোমার কাঁধের কাছে মুখ এনে, আর
একটু পরে।
ততক্ষণ যেন অচল থাকে ঘড়ি।
No comments:
Post a Comment