Saturday, October 6, 2018

দোকান

ওভারব্রীজের নিচে হাট।
                             রেলজমির পাঁচিল বরাবর
চারপেয়ে ছটি নতুন গুমটিঘর
সস্তা কাঠের কারসাজি হাফডজন;
খরিদের পর শহরের বিভিন্ন পাড়ায়
                             কিছু গেরস্তের হবে মূলধন,
                                      পাবে স্বপ্নপ্রণয়ন
 
চাকার মেলা দেখেছি বিদিশায়
অবশ্যই প্রাচীন কেন না চলে গেলে, চাকা ও মেলা দুটোই
                             গভীর শূন্যতা রেখে যায়;
কিন্তু পর পর সাজানো লক্ষ্মীর এই নতুন ঝাঁপিগুলোর ছক
নিতান্ত ছিঁচকে, অনুন্নত, দক্ষিণ এশীয়
                             হাপিশ করে আক্‌ছার
                             প্রশাসন ওরফে প্রগতির ধমক।
 
তবু দেখে মনে হয় লুঙ্গি গুটিয়ে এখনি
                             বাঁদিকের দোর খুলে ঢুকি
নতুন ঠিকানা ধরে
                   নতুন তুরুপে মনরহস্যের নিই ঝুঁকি।
 
 
 
চৈত্রের রোদে কাঠের খোলতাই।
                                      যদি কিনি,
প্রাইমারে, ভারি রঙে, বৌয়ের সাথে সাজাবো স্বর্গ!
সঙ্গতি কম বুঝলে শুধু যোগান সাজাবো,
                   রক্তে শুনি আছে ব্যবসার গোঁ!
পানের দোকান যদি করি,
সামনের উঁচু পাটায় বসাবো ল্যামিনেট, এ্যালুমিনিয়াম;
ভিতরে থাকবে চুন জর্দা মশলা খয়েরগোলা আর
ভেজা লাল
          শালুতে সবুজ মিঠে বাংলা
                                      মগহি গঞ্জাম।
দোকান
          করতে পারি মনোহারী সম্ভারে মনোহরণ!
অথবা ধরতে পারি লাইন
                   পাথরকুচি, ছড়, বালির খুচরো ব্যবসার
রেলইয়ার্ড, নদীতীরে
পায়ের ধুলো দেবেন স্যার, চিনে রাখুন
                             এই অধমের চাঁদবদন!’…
 
 
 
ইয়ারদোস্তের সে দলটাই তো নেই যে বলি,
চল, লাগা পূঁজি!
          ছিঁচকে এই গুমটিঘরে
                   শুরু করি কবিপক্ষ, সমবায়ী রুজি!
 
গুমটির ভেতরের তাজারং পেস্তা-দেয়ালে
হিমেল দক্ষিণ অরণ্য চিলির,
জোহান্সবার্গের বৃষ্টি আর
প্যালিস্টিনিয় পাথরের বাজবে যত সুর
তামিল নুন, গুরুমুখী ঝিল,
মারাঠি কুঁয়োতলা, মগহী পানিফল,
          খাসি আনারস দেবে তাল
আরো বেশি করে
কানে তালা লাগিয়ে বাজাবো
                             কাঠের ঘুঙুর!
 
 
 
কে বলে ছোটো? বিশ্ব বড় হচ্ছে ক্রমাগত।
প্রতিটি সকালে সমুদ্র দেয় নতুন ম্যাগেলান,
দিনযাপনের বাঁকে নতুন কবীর!
 বহমান গীতিকায়
                   নতুন প্রণয় ঢুকছে অবিরত।
কোন্‌ সে প্রণয় গীতি যার তরে বহমান?
এ কোন হাওয়া যাতে উড়ছে ছিন্নভিন্ন
                             তার পর্ণনীড়?
 
 
 
জানি না কেন ওই কাঠের
                   দোকানঘরগুলো ডাকছে।
কচ্চী দরগার মেলার মত ডাকছে।
একশরীর ভরাট যৌন আবেদনে
                   জিরো মাইলে গুমনাম
                             ঘর বাঁধতে ডাকছে।
 
জলাজমি বুজিয়ে তৈরি রাস্তার
দুধার ঠেসে ফুটছে জলকুম্ভী।
বৈশাখের সোনালি ভোরে নম্র মাটিতে রাখা লব্‌নিতে
ফেনা মরছে তাড়ির।
চাঁইটোলার গলিতে সবুজ সাবানজল।
মোগলপুরায়
রেললাইনের নিচ দিয়ে হাঁটা-সুড়ঙ্গপথ
সিঁড়ি বেয়ে
সাইকেল বগলদাবা করে নামছি,
যেন মায়ের বুকে শিশুর
                             নগ্ন তৃষ্ণাতুর ঢল।
কিসের এত টান এই জলহাওয়ায়?
একি ফুরিয়ে যাওয়ার?
মখলি গোসালের, অজিত কেশকম্বলির শব্দছল!
 
বুদ্ধ! বুদ্ধ!
এক জন্মে শেষ হই না ভাই সিদ্ধার্থ!
নির্বাণ শুধু দাসমালিক, শ্রেষ্ঠী ইশ্বরেরা পায়
এ সত্য গোপনের অপরাধে
কী যে করি তোমায়, বলো তো!



No comments:

Post a Comment