[নাট্যস্থলে ৮-১০ বছরের একটি শিশু কম্বল
মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। কম্বলটা সরে গেলে শীতে কাঁপতে কাঁপতে নিজেই গায়ের ওপর টেনে
নেয় আবার। পরীর সাজে এক নারী প্রবেশ করে। সে পরীই। তার হাতে জাদুর ছড়ি। কাঁধে
ডানা। জাদুর ছড়ি ছুঁইয়ে সে শিশুটিকে স্বপ্নে জাগায়।]
পরী - ফ্রাঞ্জ! ওঠো!
ফ্রাঞ্জ- (ঘুম ভেঙে ওঠার
মত, স্বপ্নে জাগে) তুমি?
পরী - হ্যাঁ, আমি। যাবে
না?
ফ্রাঞ্জ- কোথায়?
পরী - নদীর তীরে! কাল
দেখেছিলে না একটা পাখির বাসা? ওটা নামাবো। ওর ভিতর থেকে পাখির বাচ্চাগুলো বার করে
হাতের ওপর রাখবো। দেখবো কেমন করে ওরা দু’পায়ে চলার চেষ্টা করে! তারপর অনেকক্ষণ চান
করবো নদীতে। জলে ট্রাউট মাছগুলোর ঝিকিমিকি! আহা! ... আবার, কাঠচেরাই কলে কাজ করে
যে বুড়ো ওজের – ও তো কথা দিয়েছিলো তোমায় যে অনেকখানি কাঠের গুঁড়ো দেবে! কেমন সোঁদা
গন্ধ হয় টাটকা কাঠের গুঁড়োয়! চলো, চলো! অনেকক্ষণ ধরে ঘুরবো শহরের বাইরে মাঠগুলোয়।
ঝিঁঝিঁপোকার আওয়াজ শুনবো ঝোপে!
ফ্রাঞ্জ - (উঠে হাত ধরে
চলতে শুরু করে) কিন্তু তোমাকে আমার মায়ের মত দেখাচ্ছে কেন? তুমি তো পরী!
পরী- কেন, পরীরা মায়ের
মত হতে পারেনা বুঝি?
ফ্রাঞ্জ- না, মানে, পারে
কিন্তু তাহলে ভয় করে।
পরী - (হেসে ওঠে) কী
ব্যাপার? কিসের ভয়?
ফ্রাঞ্জ- তুমিও আবার আমাকে
স্কুলে যেতে বলবে না তো?
পরী - বাব্বা! স্কুলকে এত
ভয়? আচ্ছা, বাদ দাও স্কুলের কথা। দেখ, (একটু ঘুরে, নাট্যস্থলের অন্যদিকে) আমরা
কাঠচেরাই কলের পিছনে রিপার মাঠে পৌঁছে গেছি। আরে! আজ তো হাওয়ায় শীতও নেই! (মাটিতে
হাত ছোঁওয়ায়) শিশিরে ভিজে আছে ঘাস!
ফ্রাঞ্জ - (চিত হয়ে শুয়ে
পড়ে ঘাসে) কী ভালো লাগে আকাশটাকে এভাবে দেখতে! (হঠাৎ নেপথ্যে শিশুদের লেখাপড়ার
কোলাহল ভেসে আসে। কয়েকজন নামতা মুখস্ত করছে – সতেরো এক্কে সতেরো, সতেরো দুগুণে
চৌঁত্রিশ, সতেরো তিনে একান্ন ... । কয়েকজন ভুগোল পড়ছে – বিষুব রেখার ওপরকার আদ্ধেক
পৃথিবীকে উত্তর গোলার্ধ এবং ... । তিন চার ধরণের পাঠের কোলাহলে যে এক ছন্দ উৎপন্ন
হয়, যেন সে ছন্দেই নাট্যস্থলের এক ধার থেকে এক রোগা বুড়ো মানুষ প্রবেশ করে। তার
গায়ে একটা পুরোনো কোট। বাঁ হাতে ছড়ি এবং ডানমুঠোয় চক, বোঝা যায় তিনি স্কুলের
শিক্ষক।)
শিক্ষক- ফ্রাঞ্জ! কোথায়
গেলে, ফ্রাঞ্জ! এত দুষ্টু এ ছেলেটা! চোখ সরতেই ক্লাস থেকে অদৃশ্য! নিশ্চয়ই গিয়ে
হবে নদীর তীরে। এলে বোঝাবো। আজ এই ছড়ি ওর পিঠে ভাঙবো। একটাও টাস্ক পুরো করে আসে না
বাড়ি থেকে। বাড়ির লোকেরাও হয়তো নজর দেয় না! ফ্রাঞ্জ!
ফ্রাঞ্জ - বাপরে! এ যে
মঁসিয়ে আমেল! আমায় খুঁজতে খুঁজতে এখানেও চলে এসেছেন? (পরীর দুটো হাত ধরে টানতে টানতে) আমাকে ঢেকে নাও। লুকিয়ে নাও আমাকে।
আমাকে দেখতে পেলে মঁসিয়েঁ এখানেই আমাকে মুর্গী হতে বলবেন। (পরীকে টেনে বসিয়ে তার
দুটো ডানা নিজের মুখের ওপর টেনে নেয়)।
শিক্ষক - (নাট্যস্থলের বাইরে,
অদৃশ্য ক্লাসের দিকে হাত নাড়িয়ে) ঠিক আছে। আজকের মত তোমাদের ছুটি। (বাচ্চাদের
কোলাহল এখন আনন্দের, সপ্তমে পৌঁছোয়) চুপ, চুপ! একদম চুপ! (সবাই চুপ করে) কাল সবাই
সময় মত স্কুলে আসবে। সবাই টাস্ক পুরো করে আনবে। ... আর একটা কথা। কালকের ক্লাস
একটা বিশেষ ক্লাস হবে। কাল একটা বিশেষ দিন। সব ক’জন কাচা, পরিষ্কার জামাকাপড় পরে
আসবে। সব ক’টা বই আর খাতা সঙ্গে করে আনবে। বিশেষ করে ভাষাশিক্ষার বই, (একটু থেমে,
কিছু ভেবে) মাতৃভাষা, মায়ের মুখের ভাষা, ফরাসী ভাষার বই আনতে কেউ যেন না ভোলে।
যাও, এবার ছুটি। (ছুটির কোলাহল ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়; মঁসিয়েঁ আমেলও নাট্যস্থল
থেকে বেরিয়ে চলে যান)।
পরী - (ফ্রাঞ্জের হাতের
টানে ইতিমধ্যে ডানাদুটো কাঁধ থেকে খুলে গেছে; ফ্রাঞ্জকে সজোরে নাড়াতে নাড়াতে, কঠোর
কন্ঠস্বরে) ফ্রাঞ্জ! ফ্রাঞ্জ! ওঠ্! সকাল হয়ে গেছে। স্কুলে যাবি না? এ এক ছেলে
হয়েছে আমার! না স্কুলে যাবে না বাড়ির কোনো কাজ করবে! বাপ তোর কখন, সূর্য ওঠার আগে
চলে গেছে ক্ষেতে। স্কুলে যাবি না তো যা, বাপের সাথে চাষের কাজও কর! তাও তো কিছু
শিখবি! ফ্রাঞ্জ! ওঠ্!...
ফ্রাঞ্জ - (ধড়ফড়িয়ে উঠে)
মঁসিয়েঁ আমেল চলে গেছেন?
মা - কে মঁসিয়েঁ আমেল?
সেই তোদের স্কুলের শিক্ষক? এখানে কোত্থেকে আসবেন? স্বপ্ন দেখছিস নাকি?
ফ্রাঞ্জ - আরে! এখন তো
তোমাকে এক্কেবারে মায়ের মত দেখাচ্ছে!
মা - মায়ের মত! কী যা
তা বলছিস?
ফ্রাঞ্জ- (এবার পুরোপুরি
জেগে উঠে) মা! ...ওই পরীদিদি এক্কেবারে তোমার মত... (মেঝের দিকে তাকিয়ে) আর, এই তো
ওর ডানাদুটো!
মা - ও দুটো ডানা? ঘরের
জিনিষগুলোও চিনিস না? হাতপাখাদুটোর একটায় বাঁট নেই। কোথায় রেখেছি, পাচ্ছিনা। আরেকটার বাঁট খুলে গেছে । ব্লোপাইপটার ভিতরে কিছু
জমে আছে (পরীর ছড়িটা তুলে দেখায়)। হাওয়া
দিলে আগুন ধরে না কাঠে। ঘরগুলো কনকন করে ঠান্ডায়। তোর কাছে নিয়ে এসেছিলাম যে একটু
ভালো করে মেরামত করে দিবি। তা, ঘুম ভাঙলে তবে তো! এখন বন্ধ কর স্বপ্ন দেখা। শিগ্গির
তৈরি হ। তোর ধোওয়া জামাকাপড় সিন্দুকের ওপর রাখা। জলখাবারও তৈরি। না খেয়ে বেরোবি না
বলে দিলাম।
ফ্রাঞ্জ - (মায়ের দিকে অবাক
হয়ে তাকিয়ে) কিন্তু, মা! তুমি আজকে কী সুন্দর দেখাচ্ছো! এই পরীদের মত গাউন কোথায়
পেলে? একদম পরী মনে হচ্ছে তোমাকে!
মা - কেন, তুই তো মাঝে
মধ্যেই সিন্দুক ঘাঁটিস। মানা করা সত্ত্বেও। চোখেও পড়েনি গাউনটা? তা পড়বে কেন, শুধু
অকাজের জিনিষ খোঁজার ধান্ধা। ভাঙা হাতুড়ি, বাঁকা পেরেক, ছেঁড়া কাপড়...। এই গাউনটা
আমার বিয়ের। আজ পরলাম এতোদিন পর। (ফ্রাঞ্জের প্রশ্নসঙ্কুল মুখের দিকে তাকিয়ে) তোর
সাথে স্কুলে যাবো যে আজ!
ফ্রাঞ্জ - (আঁতকে উঠে)
স্কুলে যাবে! মঁসিয়েঁ আমেল নালিশ করেছেন আমার নামে?
মা - না, তবে বলেছেন
তোর ওপর নজর রাখতে। তুই স্কুলে যাস না অন্য কোথাও চরিয়ে বেড়াস। আর তোর সাথে বসে
একটু লেখাপড়াও করবো!
ফ্রাঞ্জ - ধ্যাৎ। তুমি তো
অক্ষরই চেনো না।
মা - চিনে নেবো! আসল
কাজটা তো হবে! তোর ওপর নজর রাখা! (ফ্রাঞ্জের ভয় ও অবিশ্বাসে ভরা মুখের দিকে
তাকিয়ে) ওলে আমাল পাগল ছেলে! মুখটা ভয়ে শুকিয়ে একেবারে নীল হয়ে গেল! তোর মনে নেই
মঁসিয়েঁ আমেল কী বলেছিলেন গতকাল? আজ একটা বিশেষ দিন?
ফ্রাঞ্জ - তুমি জানলে
কীভাবে? উনি তো স্কুলে বলেছিলেন!
মা - ওই যে, মঁসিয়েঁ
পিয়েরে, ডাকপিয়ন, উনি কাল সন্ধ্যেবেলা প্রতিটা বাড়িতে খবর দিয়েছেন যে আজ সবাইকে
স্কুলে পৌঁছোতে হবে, পরিষ্কার জামাকাপড় পরে। তাই তো এই গাউনটা বার করলাম। এবার যা।
কথা না বলে শিগ্গির তৈরি হ তো!
ফ্রাঞ্জ- (বাইরে যেতে
যেতে) বাবাও আসবে স্কুলে?
মা - নিশ্চয়ই। ওনাকেও
তো বলা হয়েছে। তুই তৈরি হয়ে শিগ্গির পৌঁছো। আমি ক্ষেতে গিয়ে দেখছি উনি যাবেন কিনা। উনি না যেতে পারলে আমি একাই পৌঁছোবো
একটু পরে (মাও বাইরে চলে যান)।
[দর্শকদের মাঝ থেকে একেক জন একেকটা লাইন বলতে নাট্যস্থলে আসে]
১ - ১৫ই মার্চ ১৮৭১,
মানে আপনাদের সময় থেকে ১৪৬ বছর আগে
২ - ইওরোপের ফরাসী
দেশটা জার্মানি কর্তৃক আক্রান্ত
৩ - দক্ষিণ ফ্রান্সের
আলসাশে লোরেন এলাকাটা জার্মানির কব্জায়
৪ - আলসাশে লোরেনের
প্রত্যেকটি জনপদে জার্মান ফৌজ
৫ - আজকের সরকারী
ফরমান
৬ - জার্মান সরকারের
সিদ্ধান্ত যে আগামীকাল থেকে আলসাশে লোরেন অঞ্চলের কোনো স্কুলে ফরাসী ভাষা পড়ানো হবে না
৭ - জার্মান ছাড়া আর
কোনো ভাষা কোনো স্কুলে পড়ানো হবে না
[অষ্টম জন হাতে একটা লম্বা লাঠি হাতে ঢোকে
যার ওপরে একটা বোর্ড লাগানো – ‘টাউন হল’; তার নিচে একটা স্ক্রল ঝুলছে যাতে ওপরে
লেখা ‘আজকের সরকারী ফরমান’ এবং তার নীচে তারিখ দিয়ে ফরমানটা লেখা। সে এক জায়গায় দাঁড়ায়
এবং বাকি সবাই তাকে ঘিরে ধরে ফরমানটা পড়তে থাকে] ... ফ্রাঞ্জ পরিষ্কার জামাকাপড়
পরে, স্কুলের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে প্রবেশ করে। টাউন হলের সামনে ভীড়
দেখে দাঁড়িয়ে যায়। ভাবে, ভীড়ের ভিতরে ঢুকবে কি ঢুকবেনা।]
ফ্রাঞ্জ- (স্বগত) না, না,
ঢুকবো না। এমনিতেই দেরী হয়ে গেছে। আর দেরী করলে মঁসিয়েঁ আমেল মেরে আমার হাড়গোড়
ভেঙে দেবেন। কে জানে, আজকের ফরমানে কী খারাপ খবর রয়েছে। রোজই তো খারাপ খবরই থাকে
(আস্তে, মুখ ভেঙিয়ে) জার্মান সেনার প্রবেশ, বার্লিনের হুকুমনামা... । নাঃ, আজ আর
যাবো না টাউন হলের দিকে। (এগোতে যায় কিন্তু পিছিয়ে আসে কেননা সামনের দিক থেকে দুজন
জার্মান সৈনিক ঢোকে। ওদের দেখেই আগে ফ্রাঞ্জ তারপর বাকি সবাই দৌড়ে পালিয়ে অদৃশ্য
হয়ে যায়।)
[জার্মান সৈনিক দুজন নাট্যস্থলের একদিকে
বাইরে গিয়ে ঘুরে দাঁড়িয়ে কড়া নাড়ে। অন্যদিক থেকে এক বৃদ্ধা ঢোকেন]
বৃদ্ধা - খুলছি, খুলছি।
(দরজা খোলেন, খুলেই ভয়ে পিছিয়ে আসেন) কী ব্যাপার? কী হয়েছে?
সৈনিক- মঁসিয়েঁ আমেলকে ডেকে
দিন।
বৃদ্ধা- হ্যাঁ, হ্যাঁ,
ডাকছি। ডাকছি। (ভিতরে অন্য প্রান্তে গিয়ে একটা ঘরের দরজায় টোকা দিয়ে ফিসফিস করে
বলেন) মঁসিয়েঁ আমেল! শুনছেন? (দরজায় আস্তে চাপ দেন, দরজাটা খুলে যায়) আরে, ভিতরে
তো নেই! জলখাবারটাও তো খেলেন না। কী বলি ওদের? নিশ্চয়ই গ্রেপ্তার করতে এসেছে
ওনাকে, বা নজরবন্দী করতে। ঘরে নেই বললে ওরা সতর্ক হয়ে যাবে। তার চেয়ে বরং ...(হাতে
একটা ঝুড়ি নিয়ে, বাইরের দরজা দিয়ে উঁকি মেরে সৈনিকদের উদ্দেশ্যে) আপনাদের একটু অপেক্ষা
করতে হবে। উনি ঘুমিয়ে ছিলেন। উঠিয়ে দিয়েছি। আসছেন।... আমি একটু বেরোবো, বাজার
করতে, যাই? (বেরিয়ে যান)
[শূন্য নাট্যস্থলে একটা ভালো কোট পরে
প্রবেশ করেন মঁসিয়েঁ আমেল। এক এক করে কিছু শিশু ও কিছু বয়স্ক মানুষ প্রবেশ করতে
থাকে, এবং তারা মাটিতে (বা চেয়ার, বেঞ্চ ইত্যাদি রাখার ব্যবস্থা হলে তাতে) বসে
পড়ে। একজন বৃদ্ধ কর্মচারী স্ট্যান্ডে ব্ল্যাকবোর্ড এবং একটি চেয়ার এনে রাখে, তারপর
বাকিদের সাথে পাশ দিয়ে বসে পড়ে।]
আমেল - (দর্শকদের উদ্দেশ্যে)
আমি আমেল। বিগত চল্লিশ বছর ধরে গ্রামের এই স্কুলটায় পড়াচ্ছি। ফরাসী ভাষা, আমাদের
মাতৃভাষার শিক্ষক আমি। ... আপনাদেরও তো নিজেদের মাতৃভাষা আছে। আপনার আছে। আপনার
আছে। আপনার... । মাতৃভাষা অর্থাৎ সেই ভাষা যে ভাষায় মা আমাদের স্তন্যপান করান। সেই
ভাষা যার পথ ধরে আমরা পৃথিবীর যেকোনো অন্য ভাষার অন্তরঙ্গতম সত্যে পৌঁছোতে পারি।
যে ভাষাটি হৃদয়ে না থাকলে আমরা কোথাও যেতে পারি কিন্তু পৌঁছোতে পারি না। কেননা
ভাষার সত্য তো আর শুধু অক্ষরে, শব্দে আর বাক্যগঠনের ব্যাকরণে থাকে না। ভাষার সত্য
(মাটিতে নুয়ে একমুঠো মাটি তুলে) এই মাটিতে মাইলের পর মাইল দুলতে থাকা ফসলের শীষে,
দানাগুলো পেকে ওঠার নৈঃশব্দেও থাকে।... আর, আপনাদের কেনই বা বলছি? আমার পর এই
পৃথিবীতে প্রায় দেড়শো বছর পেরিয়ে গেছে। মাতৃভাষার সংগ্রামকে স্বাধীনতার সংগ্রামে
রুপান্তরিত হতে, মাতৃভাষার পতাকাকে দেশের পতাকা হয়ে উঠতে আপনারা দেখেছেন। অনেকে
শরীক হয়েছেন। ... (বেদনার হাসি মুখে নিয়ে) কিন্তু দেড়শো বছর আগে, পৃথিবীর অনেক
নিপীড়িত ভাষার মত ফরাসী ভাষাও নিপীড়িত হয়েছিল, আর আলসাশে লোরেন অঞ্চলের এই গ্রামে
আমরা সেই নিপীড়নের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা ছোট্টো করে ভাবছিলাম। ... আর তাই, আজ,
১৫ই মার্চ ১৮৭১ আমাদের গ্রামের জন্য এক বিশেষ দিন! (চেয়ারে বসে পড়ে। ইতিমধ্যে আরো
অনেকে এসে বসে পড়েছে। সব শেষে ফ্রাঞ্জ দৌড়ে ঢুকতে গিয়ে, দেরী হয়ে গেছে ভেবে দরজার
কাছে দাঁড়িয়ে যায়)।
(কোমল স্বরে) এসো
ফ্রাঞ্জ! বসে পড়ো শিগ্গির! তোমাকে ছাড়াই আমরা শুরু করতে যাচ্ছিলাম। (ফ্রাঞ্জ
তাড়াতাড়ি ঢুকে কাউকে ডিঙোতে গিয়ে পড়ো পড়ো হয়। তারপর ধপ করে বসে পড়ে। ভয় পায় যে
শিক্ষক বকবেন অথবা ছেলেটি নালিশ করবে। কিন্তু কেউ কিছু বলেনা। ফ্রাঞ্জ অবাক হয়ে
সবাইকে দেখতে থাকে) প্রিয় শিশুরা! ভদ্রমহোদয় ও ভদ্রমহোদয়াগণ! আমি বলেছিলাম যে আজ
একটি বিশেষ দিন। ডাকপিয়ন পিয়েরেকে দিয়ে সবার বাড়িতে খবরও পাঠিয়েছিলাম। আর তাই, আজ
এই স্কুলে শিশুদের সাথে তাঁদের অভিভাবকেরাও এসেছেন। আপনাদের সবাইকে এজন্য আমার
ধন্যবাদ। হ্যাঁ, আজ বিশেষ দিন কেননা শিশুদের সাথে আজ আমার শেষ ক্লাস। আর তাই,
অভিভাবকগণ, এ ক্লাসে আপনাদেরও স্বাগতম! শেষ ক্লাস। বার্লিন থেকে হুকুম এসেছে যে
আলসাশে লোরেন অঞ্চলের কোনো স্কুলে এবার থেকে জার্মান ছাড়া অন্য কোনো ভাষা পড়ানো
হবে না। কাল তোমাদের নতুন শিক্ষক আসবেন। আজই তোমরা শেষবারের মত ফরাসী ভাষা পড়তে
পারবে। তোমাদেরকে অনুরোধ, মন দিয়ে নিজেদের পড়া করো। (এর পর ক্লাস চলে মূকাভিনয়ে বা
স্তিমিত আওয়াজে। শিক্ষক কিছু পড়ান, বোর্ডে লেখেন, শিশুদের প্রশ্ন করেন, শিশুরা
জবাব দেয়...। ফ্রাঞ্জ, দর্শকদের দিকে তাকিয়ে স্বগত বলতে থাকে।)
ফ্রাঞ্জ - তার মানে টাউন
হলের নোটিশ বোর্ডে এটাই লেখা ছিল! আমি শেষবারের মত ফরাসী পড়ছি? আমি তো লিখতেও পারি না ভালো করে!... মঁসিয়েঁ আমেল চলে
যাবেন? ... তাই আজ ইস্ত্রি করা কোট পরে এসেছেন! তাই, বুড়ো ওজের, পুরোনো মেয়র
সাহেব, ডাকপিয়ন ওজের, সবাই বসে আছে এখানে। মা, বাবারও তো আসার ছিল? আর মঁসিয়েঁ
আমেলের বোন?
আমেল - ফ্রাঞ্জ! এবার তোমার
পালা। (চমকে, হড়বড়িয়ে শিক্ষকের দিকে তাকিয়ে উঠে দাঁড়ায় ফ্রাঞ্জ) উঠে এসো। (ফ্রাঞ্জ নিজের জায়গা থেকে বেরিয়ে শিক্ষকের সামনে
গিয়ে দাঁড়ায়। শিক্ষক হাতের খড়িটা ফ্রাঞ্জের হাতে দেন) লেখো তো - ‘আমি ফ্রাঞ্জ,
আলসাশে লোরেনএ থাকি’। (ফ্রাঞ্জ ভাঙাচোরা অক্ষরে লেখে। আলসাশে লোরেনের বানানটা ভুল।
অনেকে হেসে ওঠে।) তোমাকে বকবোনা ফ্রাঞ্জ। দেখো কী হয়, ঠিকমত লেখাপড়া না করলে। সব
সময় তুমি হয়তো ভাবতে, ‘ওহ, এখন তো অনেকটা কাল পড়ে আছে, কাল নাহয় যাওয়া যাবে
স্কুলে’। এবার দেখো কী হল! ... আর শুধু তুমি কেন, এই এলাকার মানুষজনেরাই দুর্ভাগা;
লেখাপড়া শেখার কাজটা কালকের উপর ছেড়ে দিল। এখন যদি জার্মানরা আসে আর বলে, “কী? এতো
বড়াই করতে যে তোমরা ফরাসী! তোমরা তো নিজেদের ভাষাটাই জানো না! না বলতে পারো না
লিখতে পারো!” এমন নয় যে দোষটা একা তোমাদেরই। অনেকের বাবা মা এটাই চাইতো যে তাদের
ছেলে ক্ষেতে বা মিলে কাজকর্ম করে কিছু শিখুক, কিছু রোজগার করুক। এখনো সেই
অবস্থাতেই আছি আমরা। ... আমিও দোষী। কখনো পড়াতে ইচ্ছে করেনি, তোমাদের দিয়ে স্কুলের
বাগানের পরিচর্যা করিয়েছি। কখনো ছুটি দিয়ে দিয়েছি, অথচ তেমন কিছু কাজও ছিলো না।
ভালো রোদ উঠেছিলো বলে নদীতে মাছ ধরতে গেছি। (ইতিমধ্যে মঁসিয়েঁ আমেলের বোন অর্থাৎ
আমেলের বাসস্থানের সেই বৃদ্ধা মহিলা নিঃশব্দে প্রবেশ করে দাঁড়িয়েছে, হাতে
প্যাকিংএর দড়ি, কিছু জিনিষ আর খবরের কাগজের বান্ডিল)।
বোন- আমেল! আমরা কি এই
পুরোনো খবরের কাগজগুলোও নিয়ে যাবো?
আমেল- জার্মান সৈনিক দুজন
এখনো দাঁড়িয়ে আছে?
বোন - মনে হয় না। নিশ্চয়ই
ওরা দপ্তরে খবর দিয়েছে এবং হয়তো এদিকেই আসছে। এসব ভেবেই আমি ঝুড়িতে করে এসব নিয়ে বেরিয়ে এসেছিলাম। হয়তো তোমার এক্ষুণি এখান থেকে
বেরিয়ে যাওয়া উচিৎ।
আমেল- আমি তো ওদের ফরমান
অমান্য করছি না! ফরাসী ভাষা পড়ানো বন্ধ হবে আগামীকাল থেকে। আজ তো আমরা পড়তেই পারি।
বোন - জানি না। ওদের
মতিগতি বোঝা খুব মুশকিল। একটা মেরুদন্ডহীন রাজা আর তার সরকার না থাকলে কি এসব হতে পারতো? ... যাহোক, খবরের কাগজগুলো?
আমেল - দিদি! আমরা কি উঠোনে
দাঁড়িয়ে থাকা আখরোটের ওই গাছটা নিয়ে যেতে পারবো? চল্লিশ বছর আগে নিজের হাতে চারাটা
পুঁতেছিলাম। আর ছাত অব্দি পৌঁছে যাওয়া হপএর লতাটা? চল্লিশ বছরের স্মৃতির একটা অংশ
আমাদের সাথে আছে। বাকিটা সেই সমস্ত কিছুর সাথে, এই সমস্ত মানুষজনের সাথে আছে যাদের
সাথে জীবনটা কাটিয়ে দিলাম। ... কিন্তু, হ্যাঁ খবরের কাগজ। নিশ্চয়ই নিয়ে যাবো এই
খবরের কাগজগুলো। (কাগজগুলোর ওপর হাত বোলান) কেননা এগুলো ফরাসী-আলসাশের খবরের কাগজ,
জার্মান-আলসাশের নয়। (বোন চলে যান। আমেল মাথা নত করে বসে পড়েন যেন মাথাটা ভারী হয়ে
গেছে। ওপরে ছাতের কাছে পাখির আওয়াজ পেয়ে ওপরে তাকান।)
[ক্লাস যেমন ছিলো তেমনই থাকে।
মুকাভিনয়ে, ঈষৎ পরে আমেল নিজের কাজে ব্যাপৃত হন। নাট্যস্থলের অন্যদিকে সেই দুজন জার্মান সৈনিক ঢোকে।)
১ম - ধ্যাস্সালা,
ভাল্লাগে না।
২য় - কী হল?
১ম - কী হবে? সক্কালে
উঠে গ্রামের এক প্রান্তে এতক্ষণ একটা ফাঁকা বাড়ি পাহারা দিলাম। এবার ছুটছি অন্য প্রান্তে, স্কুলে, হয়তো ওটাও ফাঁকা পাবো।
২য় - কেন, ফাঁকা বাড়ি
থেকেই তো ওই সুইস ঘড়িটা হাতালি।
১ম - বাঃ, আর ওই পুরোনো
রূপোর বাতিদানটা। ওটা কে হাতালো?
২য় - ঠিক আছে। আমিই
হাতালাম। মানে বলছি, ভালোই তো হল, সকালের কামাইটা। তো, ভাল্লাগে না বলছিস কেন?
১ম- আরে, অন্য কোনো
একটা বাড়িতে পাঠাতে পারতো না? (২য় জনের দিকে চোখ মেরে) যেখানে সুন্দরী মেয়ে থাকতো
দুটো। বা নাহয় একটাই। ওতেই দুজনের কাজও চলে যেত, কী বলিস?
২য় - তুই শুধরোবি না।
(প্রথমজন কথার উত্তর না দিয়ে এক দিকে দৌড়ে গিয়ে সজোরে নিজের তরোয়ালটা চালায়। তারপর
নিচে হাত ডুবিয়ে একটা রক্তাক্ত খরগোশ ঠ্যাং ধরে উঠিয়ে আনে।)
১ম - যাক বাবা, একটা
জোগাড় তো হল। দুদিন ধরে শুধু কালো রুটি খাচ্ছি। এবার আগে এটাকে পোড়াবো, দুজনে মিলে
খাবো, তারপর ডিউটি। কী বলিস! (২য় জনেরও চোখ চকচক করে খরগোশটা দেখে।)
২য় - দাঁড়া, শুকনো কাঠ
জোগাড় করার ভারটা আমার। (সে এগিয়ে যায়। নাট্যস্থল থেকে বেরিয়ে যায়। তারপরেই হিড়হিড় করে একটি কাঠকুড়ুনি মেয়েকে টানতে টানতে
ঢোকে।) এই দ্যাখ। মাথায় বোঝাই শুকনো কাঠ, অথচ দেবে না। এখন বল, তোর কাঠ চাই, না
(মেয়েটার শরীরের দিকে অশ্লীল ভাবে আঙুল দেখিয়ে) এটা চাই। নাকি দুটোই চাই।
১ম - (হঠাৎ গলার স্বরটা
অদ্ভুত রকমের দ্বিধান্বিত হয়ে যায়) শুধু কাঠ রেখে নে যে কটা প্রয়োজন। মেয়েটাকে যেতে দে।
২য়- (মেয়েটির কাঁধে হাত
রেখে গালে হাত বোলায়) কেন রে? এখনই তো খুঁজছিলি!
১ম - (তরোয়ালের হাতলের
ওপর হাতটা শক্ত হয়, আবার ঢিলে করে সরিয়ে নেয়, মেকি কটাক্ষে) তোর কোনো স্বাদের বোধ নেই।
আমি বলছিলাম কোনো ধনী ঘরের আদুরে বেটির কথা আর তুই কাঠকুড়ুনির চক্করে পড়ে গেলি।
ভাগা ওকে। (মেয়েটিকে) অ্যাই, দেখি তোর কাঠ (জোর করে তার কাঠের বান্ডিলটা নামিয়ে
আন্দাজ মত কয়েকটা কাঠ রেখে নেয়। তারপর তাকে ধাক্কা দিয়ে নাট্যস্থলের বাইরে পাঠিয়ে
দেয়।)
[দুজনে মিলে আগুন জ্বালায়। তরোয়ালে গেঁথে
খরগোশটাকে আগুনের ওপর ধরে রাখার ব্যাবস্থা করে। গুনগুন করে গান ধরে।]
২য় - (নিজের জলের থলেটা
বার করে। দেখে জল নেই) তোরটায় জল আছে?
১ম - নাঃ।
২য় - একটু জল নিয়ে আসি
নদী থেকে, তুই বোস। (বলে বেরিয়ে যায়)
১ম - (দর্শকদের দিকে) লোরেনেরই
পুবদিকে জার্মান এলাকায় আমার গ্রাম। এই একই রকম। ছোটোবেলায় আমার দিদিও কাঠ কুড়িয়ে
আনতো। আমি কতবার গেছি তার সাথে। এখন এসব এই ভদ্রপুঙ্গবকে বলে তো লাভ নেই। তাই
কায়দা করলাম। ... (ছুরি দিয়ে খরগোশটার ভালোভাবে পোড়া অংশটা খোঁচায়। একটু উঠে আসে
ছুরির ডগায়। ফুঁ দিয়ে দিয়ে সেটা মুখে দেয়, চিবোয়) আঃ ! (একটা কাঠির ভর দিয়ে বড়
টুকরো কাটার চেষ্টা করে। এবং এটাই চলতে থাকে)।
[ক্লাসে আওয়াজ জোরালো হয়ে ওঠে।]
আমেল - সবাই পড়া করো নিজের।
আজ কেউ আগে ছুটি পাবে না।
ফ্রাঞ্জ - (স্বগত) জার্মান
সৈনিকেরা এলে তো ছাতের এই পায়রাগুলোকেও বলবে (সৈনিকের ভঙ্গীতে) ‘হেএই! লেফ্ট-রাইট,
জার্মান বলো!’ কিন্তু ফুর্র্র করে উড়ে যাবে পায়রাগুলো। বেচারাগুলো ভয়ের চোটে
হাগু করে ফেলবে ওদের হেলমেটের ওপর (হাসে)। মঁসিয়েঁ আমেল মাঝেমধ্যে ইতিহাসও পড়ান।
আমি তো, যখনই প্রাচীন ইতিহাস পড়ি, মঁসিয়েঁ আমেলই মনে পড়েন। এনার থেকে প্রাচীন তো
কাউকে দেখতেই পাইনা। ...বুঝতে পারছিনা কান্না পাচ্ছে কেন! এটাকেই কি দুঃখ বলে? কেন
দুঃখ? ফরাসী না শিখতে পেরে? মঁসিয়েঁ আমেলের চলে যাওয়াতে? মঁসিয়েঁ আমেলের দুঃখ
দেখে? যবে থেকে স্কুলে আসছি মঁসিয়েঁ আমেলকে এত দুখী কখনো দেখিনি।
(পিছন
থেকে টুপি পরা এক বুড়ো মানুষ উঠে দাঁড়ায়)
আমেল- কী ওজের? কিছু বলবে?
ওজের - (হাতে পাতলা ছেঁড়া
একটা বই) অক্ষরবোধটা আছে আমার কাছে মাস্টারমশাই। সকাল থেকে এটাই আবার থেকে
পড়ছিলাম। এই অক্ষরগুলো জুড়ে ‘ফ্রান্স’ কী করে লেখা হয় মাস্টারমশাই? (শিশুরা হাসে
আবার শিক্ষকের মুখ দেখে চুপ করে যায়)
আমেল - কী করবে জেনে? কখনো তো
স্কুলে গেলে না। আর এখন ... (বোর্ডের কাছে যায়; বড় বড় করে লেখেন) ‘আলসাশে লোরেন,
ফ্রান্স’। তার নিচে জুড়ে দেন ‘ভিভা লা ফ্রান্স’।
[দৃশ্যপট আবার সৈনিকের দিকে। ১ম সৈনিক মাংস খাচ্ছে।]
১ম- হারামজাদা গেল
কোথায় জল আনতে। (বলতে বলতে ২য় জন চলে আসে) কোথায় গেছিলি? (হেঁচকি তোলে) দে, জল দে
তো!
২য়- জল? ওঃ না, আনা
হয়নি।
১ম- মানে?
২য়- (রহস্যময় ভাবে
হাসে)
১ম - (লক্ষ করে দেখে)
এ্যাই, তোর মুখে ওগুলো কী? আঁচড়ের দাগ!
২য় - জবর্দস্ত বিল্লী
ছিলো মাইরি। বাগে আনতে ...
১ম - (হঠাৎ মুখের ভাবটা
বদলে যায়) তুই ... ওই কাঠকুড়ুনি ... (২য় জন অশ্লীল ভাবে হাসে, ১ম জন ক্ষিপ্ত হয়ে
ঝাঁপিয়ে পড়ে ওর ওপর, লড়তে লড়তে ওরা নাট্যস্থলের বাইরে চলে যায়। একটু পর ১ম জনের
তীক্ষ্ণ মৃত্যু-আর্তনাদ ভেসে আসে। দ্বিতীয়জনও ছুরির আঘাতে আহত, টলতে টলতে আগুনের
কাছে এসে বসে মাংস খেতে থাকে)।
২য় - শালা। যবখেকো চাষী!
আমার সাথে পাল্লা দেবে! দরদ উথলে পড়ছিলো ওই মাগীটার জন্য!
[নেপথ্যে বেশ কয়েকটি বুটের আওয়াজ হয়।
অফিসারের সাথে দশ বারো জন জার্মান সৈন্যের একটা দল নাট্যস্থলে ঢুকে পড়ে।]
অফিসার- (২য় সৈনিককে মাংস খেতে
দেখে কলার চেপে ধরে) তোমাদের না স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল?
(ততক্ষণে
আরেকজন সৈনিক ১ম জনকে ঝোপে পড়ে থাকতে দেখতে পায়)।
আ∙জন - আরেকটি এদিকে স্যার, এ তো মরেই গেছে মনে
হচ্ছে।
[নতুন দলের দুজন, এ দুজনকে টানতে টানতে
নিয়ে চলে যায়। বাকি দলটা অফিসারের নেতৃত্বে স্কুলের দিকে এগিয়ে যায়।]
আমেল - (‘আলসাশে লোরেন,
ফ্রান্স’ লেখাটা তাড়াতাড়ি ‘ভিভা লা ফ্রান্স’) বলো সবাই, আমার সাথে, ‘ভিভা লা
ফ্রান্স’! ফ্রান্সের জয় হোক! ফরাসী ভাষার জয় হোক! মাতৃভাষার জয় হোক! (সবাই বলতে থাকে। অফিসার গিয়ে আমেলকে ধাক্কা দেয়। আমেল
পড়ে যায়।)
[দৃশ্যটা এখানেই, ‘মাতৃভাষার জয় হোক’
ধ্বনির সাথে স্থির করা যেতে পারে।]
সমাপ্ত
[মূল ফরাসী গল্প, আলফোঁস দোদে (Alphonse Daudet) লিখিত ‘লা দেনিয়ে ক্লাস’এর স্বচ্ছন্দ নাট্যরূপান্তর]
No comments:
Post a Comment