পূর্ণেন্দুদাকে নিয়ে কিছু
লেখা সত্যিই খুব মুশকিল।
এতে তো সন্দেহ নেই যে
মনেপ্রাণে মানভুইয়াঁ ছিলেন।
বিস্মৃত ব্রাহ্মণত্ব এবং
জীবন্ত ভিয়েতমিন, দুটোতেই।
মাফিয়া-চেলারা কি আদৌ ভয়
পেত? তবু তাদেরই সামলাতে
বিশাল গোঁফে টাঙানো
রোগা শরীর
কোলিয়রি কামগারের-দপ্তরে
রায়বাবুর সামনে বসে একুশের
চেতনা নিয়ে গল্প করত।
দুপুরে ফিরতে একবার
পুরানা বাজারের পানের দোকানে
কথা বলে আসতেন শ্রীনিবাস
পানুরির সাথে,
“আগামি শনিবার ঝরিয়া, মনে আছে তো!
হ্যাঁ, আলোকধনোয়া আসবে!
গদ্দিসাহেবও থাকবেন মনে হয়।”
রোহিনীবাবুর বাড়ি ধরা থাকত
বিকেলের খাতায়।
বলতে পুরো হীরাপুর,
লিন্ডসে ক্লাব! সিন্ধ্রি, বোকারো, কাত্রাস,
দুবরাজপুর তো সেবার আমিই
গিয়েছিলাম।
সেও তো কয়েকবছর হল ধানবাদে
পুরানা বাজার থেকে এগিয়ে
দেখেছিলাম গুঁড়িয়ে মাটি
হয়ে গেছে রেলওয়ে ইন্সটিট্যুট; গরু বাঁধা।
বাংলা সিনেমা হত, মহাশ্বেতা
দেবী এসেছিলেন এখানেই।
পূর্ণেন্দুদাকে নিয়ে কিছু
লেখা সত্যিই খুব মুশকিল।
সারা জীবন, যা কেউ
চায়না তাই তিনি চেয়ে গেলেন –
ভাষামিলন, ধানবাদে,
পাটনায় সাকুল্যে পঞ্চান্ন বছর ...
বাংলা, হিন্দি, উর্দু,
মগহি, খোরঠা, সাঁওতালি, মুন্ডারি,
ভোজপুরি, মৈথিলি, অঙ্গিকা,
বজ্জিকা ... সব ভাষার
কাব্যসেতুবন্ধন!
বলতে ভালো লাগে। যেতেও ভালো
লাগে। তবু, কেউ চায়?
কতটুকু দেখি আমরা নিজেদের
ভিন্নতর ভাষায়?
সারা জীবন, যা কেউ
চায়না তাই তিনি চেয়ে গেলেন –
বার বার নিজের লেখা মাঝপথে
ছেড়ে সাংস্কৃতিক কোনো সভায়
এগোবার সঠিক পথটা নিয়ে
উদ্বিগ্ন, উত্তেজিত, সোচ্চার।
সুখের অধ্যাপনাতেও হকের
লড়াইয়ে জেলে, জন্ডিসে!
কে যায়? অনেকে যায়। যাওয়ার
ঐতিহ্য জারি রাখে।
পূর্ণেন্দুদাও তেমনই
একজন, জাস্ট একজন ছিলেন।
-
এত
বিশদে গিয়ে পড়ালে কোর্স কি করে পুরো হবে স্যার?
-
কিন্তু
যেটা জানার, গভীরে গিয়ে জানতে হবে তো!
পূর্ণেন্দুদাকে নিয়ে কিছু
লেখা সত্যিই খুব মুশকিল।
ছিন্নবিছিন্ন কবিতা,
প্রবন্ধ, সম্পাদকের নামে চিঠি ছড়িয়েছিটিয়ে
মানভুইয়াঁ লালমাটির বন্ধুবৎসলতার
চারা পুঁতে যেখানেসেখানে
গোটা সাতেক পত্রিকা শুরু
করে তবু মাঝপথে ছেড়ে
চোখের ক্ষীণ দৃষ্টি আর
দুর্বল শরীর নিয়ে একটা জীবন,
শুধু জীবনের মত বোঝার, বাঁচার
চেষ্টা করে গেলেন।
ব্যাঙ্গালোর
৮.২.২১
No comments:
Post a Comment