Saturday, June 15, 2024

অপেক্ষার শেষ

অপেক্ষার শেষ তিন ভাবে হয়।
একঃ যদি সে আসে, যার অপেক্ষা।
দুইঃ যদি সে না আসে –
               অপেক্ষার
               সম্পূর্ণ ক্ষয় অব্দি না আসে।
তিনঃ যদি অপেক্ষারত,
                             মৃত্যুকবলিত হয়।
 
প্রথমটা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই;
মুহূর্তের ঢেউয়ের একটা আলোকোজ্জ্বল জোয়ার
মিলনের গা ভিজিয়ে দিয়ে যায়।
তৃতীয়টা নিয়েও কোনো সমস্যা নেই;
জোয়ার কিছুক্ষণ ধরে
           শূন্য পাথরের ভাঁজে ভাঁজে নেমে যায়।
 
সমস্যা দ্বিতীয়টাকে নিয়েই।
অপেক্ষারত ফিরে আসে শেষ বার
এমনভাবে, যাকে ফিরে আসা বলে না।
দরজা খুলে ঘরে ঢোকে
এমনভাবে, যাকে ঘরে ঢোকা বলে না।
কিছুক্ষণ!
কিছুক্ষণ অনেককিছুই সে করে যায়,
এমনভাবে, যেগুলোকে করা বলে না।
 
তারপর সে ওঠে – ওঠাটা বিপজ্জনক।
আমরা একটা পরবর্তী দৃশ্য খুব বেশি জানি –
তার, নিজেকে শেষ করে দেওয়ার চেষ্টা।
 
কিন্তু, আরেকটা পরবর্তী দৃশ্য –
তার বেঁচে থাকার ভিতরটা –
যখন ছিঁড়ে গেছে ভরসার পেশি,
অজান্তে অকেজো হয়ে গেছে
        ভালোবাসা, শ্রদ্ধা, বাৎসল্যের গ্রন্থি –
             এবার তৈরি হতে পারে সেখানে বিজাতীয় কোষ,
খুব বেশি রক্ত জমা হয়ে গেছে
                 মস্তিষ্কের পিছনে কোথাও,
অবসন্ন ফুসফুস
      স্তিমিত চলন যুগিয়ে চলেছে তার জানা
                                           বর্ণমালায় …
 
খুব বেশি জানি না।
কিছু একটা অস্বাভাবিক হলে তাও বোঝা যায়!
কিন্তু সে যে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক!
অথবা সে যা, আরো অনেকেই যে তা,
আমরা খেয়াল রাখি নি বহুকাল যাবৎ।
 
১৫.৬.২৪

 

গ্রীষ্মের ফলগুলো

আমের কথা ভাবায় গাছে গাছে বৈশাখের ঝড়
ঝরে যাবে? গত বছরও তো কম ঢুকেছে বাজারে!
একেক বছর ছেড়ে এই চুক্তি, কর্কটরেখীয়,
আমগাছের সাথে আবহাওয়ার, এখানে শাশ্বত!  
 
লিচু তো বিদেশি। দিব্যি লাল ধরে ডাহুক গরমে।
একঝোঁকে মাস্তানি করতে ঢোকে ফলের পট্টিতে!
ঝরা পাতায় খচমচে রাস্তায় গন্ধ বিকেলের
বলে দেয় তার রাজত্ব চলবে চুটিয়ে কদিন।
 
আর জাম? এত শান্ত ভদ্র স্তূপ, বোঝাই যায় না,
কত শিশুর চিৎকারে আকাশ করেছে বেগুনি।
তালশাঁস ধরে ঘনত্ব আলোর। জঙ্গলেই নেমে
হাতে হাতে বিক্রি হয়ে তারপর বাজারে পৌঁছোয়।
 
মাথায় না পড়াই ভালো, তবে কাঁঠাল নিজেই
মাথা ঘেঁষে পড়ে দারুণ রগড়ে আঁতকে পেছিয়ে
বাসের ড্রাইভারটি বিড়ি ফেলে দৌড়ে ফিরে আসে
গামছা ভরে তুলতে, গন্ধে ফেটে পড়া কোয়াগুলো!
 
কলা আর পেঁপের তো আর কোনো মরশুম নেই।
পেয়ারা শীতবর্ষার, তবে ডাঁশা যদিও বিদেশি
দেশজ আত্মীয়তায় লুব্ধ করে পাতার আড়ালে,
প্রথম কামড় যেন কামেচ্ছায় জেগে ওঠা দেহ
 
বেলের আঠালো সোনার রেশায় যেন সারা রাত
চিন্তার উৎক্ষেপণ শেষে ঋষিদের মগজের দ্যুতি।
আরো কতো স্বাদের বৈভবে গ্রীষ্মে উপমহাদ্বীপ
জেগে ওঠে, সব মনে বন্ধুত্বের দুষ্টুমি বাড়ায়!
 
১৬.৫.২২

ফ্ল্যাটবাড়ির ছাত

একটা সুর সেই সকাল থেকে ভাঁজছি
খুব উৎসাহিত হলে
ছাতে যাবো চারতলার
মাঝেমধ্যেই তো যাই
কখনো সকালে,
চায়ের মগটা নিয়ে হাতে
কখনো রাতে
জোরালো হাওয়ায় আর
রাতের আলোর কাঁপনে
কখনো বৃষ্টি এলেই
শরীরের নিঝুমে ভিজতে
আর কোনোদিন ছেঁড়া মেঘে
ধ্রুপদী ভোর বা সন্ধ্যা হলে তো
কথাই নেই
তারা অবশ্য দেখা যায় না আর
লোডশেডিং ছাড়া
আর দেখা গেলেও
কে বলবে ঐ দ্যাখো
কাকে বলবো ঐ দ্যাখ্‌
আমাদের এই ছাতটা গুগ্‌ল
আর্থে দেখা যায়
আমিও এই ছাতে এলেই
ওপরে তাকাই যেন
চলন্ত উপগ্রহ নয় সিসিটিভির
ক্যামেরা খুঁজছি জাংশনের
শেষপ্রান্তে যার পর
রেললাইন হাঁটাপুল কুয়াশা
পাঁচ দশক দুটো শতক
(বেমক্কা সহস্রাব্দও একটা)
কিছু গানের সুর হারানো
গান হারানো কিছু সুরের
ছাতে গাছের ছায়া নেই
কোনোকিছুরই ছায়া নেই
তবে সুরের ছায়া পড়ে গাইলে
নিজের পুরোটা জীবনে
আমারও তো নিমেষে দরজা খুলে
দৌড়ে যাওয়ার নেই
কোনো ঢালু মাঠ চোরকাঁটার
একটা ছাত আছে সটান
দশবাড়ির ভেজা কাপড় পেরিয়ে শেষ চিলতেয়
চিৎ শুয়ে পড়ার
সিমেন্টের শক্ত খসখসে
চেনা সিঁড়ি আছে পৌঁছোবার
সুর থেকে মেজাজ অব্দি শব্দে চলনে

৩১.৫.২০২৪   

সাক্ষী মালিক

মুখটা শিশুর, মেয়ে
                   কুস্তিগির!
আছড়ে উপুড় করে
প্রতিপক্ষের পিঠের ওপরে চড়ে
জাপটায় যেন অক্টোপাস,
এক দুই গুনতি পাস
জয়ী
সরল হাস্যময়ী,
অবাক দেখে ভিড়!
 
আবার সেদিন পথে
রাজপথে প্রতিবাদে
সহ-পালোয়ান ভিনেশেরও
ওপরে কচ্ছপ
পিঠে নিচ্ছে পুলিশের
অসভ্যতার হাত।
লম্পটের হুকুম
মানেনি দাসখতে!

সত্যে নতুন পাঁখ-টি,
হরিয়াণবী সাক্ষী!

২১.৫.২৪

 

 

 

জানলা

সব জানলাই তো কিছুটা অন্ততঃ
আকাশের দিকে খোলে।
আকাশের অভাবের দিকে খোলা
জানলাগুলোও –
দেয়ালের কালচে ইঁট
নালিমুখে
ভিতরের মেঝে ধোওয়া জল
ফাটলে বেরুনো
বট অশ্বত্থের চারা
ওপরেই হারানো রোদ্দুর
মাঝে মধ্যে
শালিক বা কাঠবেড়ালিও
আসে না এমন নয়
ইঁদুর
বেরিয়ে ঢুকে যায় সুরুৎ
বৃষ্টি দুর্গন্ধ বাড়ায়

কাজে আসে সিগরেটের
বুটকি ফেলতে
সারাবচ্ছর
কিম্বা খালি পাঁইট
ছাড়ানো ন্যাতা কন্ডোম
কাগজে মোড়া বাচ্চার গু …
হঠাৎ ঝঞ্ঝাট হয় একদিন
দরজায় কড়া নাড়ে বাড়িওলা
কে ফেলছে এসব
বেমালুম বলি জানিনা
আর তখনই, ঠিক
তখনই ঐ জানলাটার  
আকাশ দেখা যায়
দাঁতখোঁচানি মুখে নিয়ে
মুচকি হাসছে
মাথা নাড়ছে অল্প অল্প
স্‌সালা শুধরোবে না 

২০.৫.২৪ 

ক্লিষ্ট আশনাই

সেদিন মথিত এক গানে অজানার
জয় দিলো খোঁচা, আরো
                           নিষেধ ভাঙার।
নব্বইয়ের পর থেকে তাই তো ভাঙছি
পেতাম সান্নিধ্য যদি আরেকটু বেশি !! 

তবে দূরে আছি ভালো! আপনাকে পাই
মেমাসের লু-য়ে গড়ি ক্লিষ্ট আশনাই,
মানুষের আগামির পথে। স্মিত দৃষ্টি
আপনার,
                 যুক্তিপথ ভাবায় কৃষ্টির।

মধ্যবিত্ত বাঙালির বিপন্ন বৈভবে,
কেন যে বলে গেলেন, গান শুধু রবে?
শাপে বর জানতাম, এ যে বরে শাপ!
গান ছাড়া বাকি রবি, পরিত্যক্ত ধাপ?

সুরের সম্ভ্রান্তলোকে ভাসমান সাঁঝ  
আপনার বিনির্মাণে মন খোঁজে কাজ।

৬.৫.২৪

গ্রীষ্মের দুপুরে

গ্রীষ্মের দুপুরে বসে টিনচালা ভাতের দোকানে
ঘেমেচুমে অপার্থিব আনন্দে খেয়েছি মাংসভাত!
অথবা স্নেহান্নে মুগডাল, লঙ্কা, শশার চচ্চড়ি
দুর্গাবতীর ঝুপড়িঘরে দুপুরে; মনে আছে অমিত?

খাওয়াগুলো খাওয়া হয় না বস্তুতঃ, বন্ধুত্বযাপন,
এবং অন্যদিকে চাখা, সে বসতের রহস্য-মৌতাত।
বেঁচে থাকার সাতকাহন টানে প্রতিটি বসতে,
ভোরে রেলগেট-কাঁপানো ট্রেনের ফুলকি খবর,
এমনকি থানার বিটগুলোর নক্‌শা রোজকার,
চিত্তাকর্ষী মনে হয়। যদি এখানেই হতো বাড়ি?

তাও তো ঘুচেছে ভাতমাছ কিছু স্টিমারঘাটায়
বালিয়াড়ি ঠেলে হল্ট, কোয়ার্টার, চিলতে-বাজার
থাকলে ছুঁয়ে নিতাম গেটে ঘেমো চিবুকের দাগ,
অপরাহ্নের আলোয় এক ভিন্ন জন্মের আশ্বাস।

২৩.৫.২৪

রবি ও জগদীশ

আপনাদের বন্ধুত্ব, শতাব্দীর
সন্ধিকালে ভারতেতিহাস।
দেশজিজ্ঞাসায় বিজ্ঞানে কবিতা,
কবিতায় বিজ্ঞানের বাস।
আমরা ফেল পড়ুয়া, গোলাপ,
জ্যামিতিরই বাক্সে তবু রাখি
শুনি সে জ্যামিতিকে ছোঁড়ে চ্যালেঞ্জ;
ভয়ে ঝাঁপ বন্ধ করে থাকি
কবিতায়ই পথ পেয়ে দাসত্ব ঘুচিয়ে
মানুষের কাজে নামে
বৈজ্ঞানিক; অসীমের বহুত্ব গড়তে
কবি জাগে মধ্যযামে!     

কোন সভ্যতা ধরে নি তার
লোকগানে বিজ্ঞানের পরিক্রমা?
কোন সভ্যতা বলে নি তার
বিজ্ঞানে সৃষ্টির ছন্দের সুষমা?

অজানার ভয়হীন দুজনেই
সহযাত্রী রূপে ও অরূপে,
বিজ্ঞানমন্দিরে, বিশ্ববিদ্যালয়ে,
সুচেতনার ধাত্রীস্বরূপে।
আপনাদের প্রয়োগশালা ভিন্ন,
শব্দপথ, যন্ত্রপথ গড়ে
শোনালেন বনস্পতিভাষে,
বাতাসি তরঙ্গে, অশান্ত অক্ষরে,
আকাশলিখন সময়েরঃ
বন্ধুত্ব ভাঙলে কবিতা-বিজ্ঞানে,
দুটোই লুটেরা-শাসক পোষণে,
ধ্বংস দেবে মুক্তিপথ জ্ঞানে।     

১২.৫.২৪