Thursday, October 12, 2017

নন্দনকানন ও বিহার বাঙালি সমিতি


বিহার বাঙালি সমিতি নন্দন কাননের সন্ধান পায় কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর সত্যেন্দ্রনাথ সেন মারফৎ । সত্যেন্দ্রনাথ বা সত্যেন সেন পাটনার বিখ্যাত ডাক্তার, জনপ্রিয় বামপন্থী নেতা এবং পাটনা শহর থেকে তিনবার নির্বাচিত বিধায়ক ডাঃ অজিত কুমার সেনের আত্মীয় ছিলেন । সত্যেনবাবু সে সময় বিদ্যাসাগর রচনাবলী প্রকাশ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ ইত্যাদি কাজের সাথে যুক্ত ছিলেন । তিনি বিচলিত ছিলেন যে বিদ্যাসাগরের স্মৃতিবিজড়িত কিছুই কলকাতা শহরে বা বীরসিংহ গ্রামে বাঁচিয়ে রাখা যাচ্ছেনা । কর্মাটাঁড়ে বিদ্যাসাগরের শেষ বাসস্থানের কথা তিনি জানতেন, এও জানতেন যে সে বাসস্থানের মালিকানা অন্য কারোর হাতে চলে গেছে, কিন্তু বাসস্থানটির হদিশ জানা ছিলনা ।
তাঁর কথা শুনে বিহার বাঙালি সমিতি যেচে এই বাসস্থানটি সন্ধানের ভার নেয় ।

কর্মাটার যাত্রা
সমিতির দুজন প্রতিনিধি গুরুচরণ সামন্ত এবং নরেন মুখার্জিকে এই সন্ধান-কাজের ভার দেন বিহার বাঙালি সমিতির সে সময়কার সর্বমান্য নেতা ডাঃ শরদিন্দু মোহন ঘোষাল । যেহেতু সে সময় কর্মাটাঁড় যাওয়ার সোজাসুজি কোনো রেলপথ ছিলনা তাই ডাক্তারবাবু নিজের গাড়ি আর টাকাও দেন এই কাজে।
দুমকা, মিহিজাম, জামতাড়া হয়ে তিনদিন পর তাঁরা কর্মাটাঁড় পৌঁছোন। রাস্তায় তাঁদের কেউ কোনো হদিশ দিতে পারেনি নন্দনকাননের বিষয়ে। কিন্তু কর্মাটাঁড় রেলস্টেশনের স্টেশনমাস্টার (শিবদাস মুখার্জি) সৌভাগ্যক্রমে বাঙালি তো ছিলেনই, কাকতালীয় ব্যাপার যে, তাঁর বাড়িও ছিল বীরসিংহ গ্রামে। স্টেশন থেকে অদূরে একটা অশ্বত্থ গাছ দেখিয়ে বললেন ওর পিছনেই নন্দনকানন। সেদিকে যেতে যেতে একটা চায়ের দোকানে জিজ্ঞেস করাতে পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এক বৃদ্ধ বললেন, “ইশ্বরচন্দ্র দেওতা?” পাটনা থেকে আগত দুইজনেই প্রথম বার শ্রদ্ধাসূচক এই স্থানীয় শব্দটার সম্মুখীন হলেন। পরে জেনেছিলেন বিদ্যাসাগর ওই অঞ্চলে এক দেবতা হিসেবেই প্রসিদ্ধ ছিলেন।
গুরুচরণ সামন্ত এবং নরেন মুখার্জি নন্দনকাননের বাস্তবিক অবস্থান, পরিস্থিতি, মালিকের নাম ঠিকানা ইত্যাদি তো সন্ধান করেনই, তার সাথে আরো কিছু কাজ করে রাখেন। তাঁরা জামতাড়ায় বাঙালি সমিতির একটি ব্রাঞ্চ গঠন করেন এবং তাদের মধ্যে থেকেই নন্দনকাননের খোঁজখবর রাখার জন্য একটা তদর্থক সমিতি গঠন করেন। তাঁরা মিহিজামের ডাক্তার পরিমল ব্যানার্জির সাথে দেখা করে তাঁরও সহযোগিতার আশ্বাস পান।

[*গুরুচরণ সামন্ত কর্মাটাঁড়ের স্টেশনপমাস্টারকে প্রশ্ন করেছিলেন, স্টেশনের নামবদলের জন্য কিভাবে এগোতে হবে। স্টেশনমাস্টার বলেছিলেন কঠিন কাজ। ‘তাহলে চিত্তরঞ্জন কি করে হল?’ ‘বিধান রায় ছিলেন! আপনাদের বিধান রায় আছে?’   
*বিদ্যাসাগর পায়ে চোট পেয়েছিলেন কলকাতায় থাকাকালীন। কর্মাটাঁড় স্টেশনে নামতে অসুবিধা হত। ইংরেজ কর্তৃপক্ষ সেটা শুনে প্ল্যাটফর্ম উঁচু করে দেয়। ওই লাইনে আসানসোল থেকে মধুপুরের আগে অব্দি একমাত্র কর্মাটাঁড়েরই প্ল্যাটফর্ম উঁচু ছিল। ]
     
বিদ্যাসাগর মেমোরিয়াল কমিটি গঠন
গুরুচরণ সামন্ত এবং নরেন মুখার্জি পাটনায় ফিরে এসে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর বাঙালি সমিতির তরফ থেকে সম্পাদক দীপেন্দ্রনাথ সরকার ৫.১০.৭২ তারিখে নন্দনকাননের তৎকালীন মালিক কলকাতার মল্লিক পরিবারের জিতেন্দ্রনাথ মল্লিককে চিঠি পাঠান। চিঠির জবাব ২৩ তারিখের মধ্যে চলে আসে এবং অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক জবাব আসে। বস্তুতঃ তাঁরাও অত দূর থেকে সম্পত্তিটির রক্ষণাবেক্ষণ করতে পারছিলেন না। মল্লিক পরিবারের যে পূর্বসূরী, যাঁকে বিদ্যাসাগরের পূত্র নারায়ণচন্দ্র বাড়িটা বিক্রী করেন, তাঁরও উদ্দেশ্য ছিল বিদ্যাসাগরের প্রতি শ্রদ্ধাজ্ঞাপন। সেই উদ্দেশ্যে নিজের এক বন্ধুর কথায় এক ডাক্তারকে বেশ কয়েক হাজার টাকা দেন এবং কর্মাটাঁড়ে গিয়ে চিকিৎসাকেন্দ্র খুলতে বলেন। কিন্তু সেই লোকটি প্রতারক ছিল। পরে খবর পাওয়া যায় সে কর্মাটাঁড়ে গিয়ে বেশ কিছু লোককে ঠকিয়ে আরো কিছু টাকা হস্তগত করে উধাও হয়ে যায়। তাই তাঁরা সম্পত্তিটা নিয়ে ভাবনায় ছিলেন।
তাঁদের চিঠি পেয়ে ২৬.১১.১৯৭২ তারিখে ছাপরায় অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে বিহার বাঙালি সমিতি একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে বিদ্যাসাগর মেমোরিয়াল কমিটি বা বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা কমিটি (নাম হিসেবে দুটোই ব্যবহার হচ্ছিল তখন) গঠন করে। ১১ জনের কমিটিতে প্রধান পৃষ্ঠপোষক রাখা হয় বিহারের তৎকালীন রাজ্যপাল দেবকান্ত বড়ুয়াকে (যদিও কিছুদিনের মধ্যেই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হয়ে যাওয়ার ফলে তাঁর নামটি পরে বাদ দিতে হয়) । কমিটির সভাপতি হন বর্ষীয়ান সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় এবং সম্পাদক হন সত্যেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী। এছাড়া কলকাতা থেকে ছিলেন সহ-সভাপতি হিসেবে পূর্বে উল্লিখিত ডাঃ সত্যেন্দ্রনাথ সেন, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য এবং পার্থ সেনগুপ্ত, যুগ্ম সম্পাদক, পশ্চিমবঙ্গ নিরক্ষরতা দূরীকরণ সমিতি। জামতাড়া ও মিহিজামের গণ্যমান্য কিছু ব্যক্তির সাথে জামতাড়ার মুখিয়া হনুমান সাওও এই কমিটিতে ছিলেন।

নন্দনকাননকে জাতীয় স্মারকে রূপান্তরিত করার প্রচেষ্টা
স্মৃতিরক্ষা কমিটি নিজেদের মত করে কাজ এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার সাথে সাথে একটা চেষ্টা চালায় যাতে বিহার সরকার সম্পত্তিটি অধিগ্রহণ করে জাতীয় স্মারকে রূপান্তরিত করে । এই মর্মে ২৮.১.১৯৭৩ তারিখে কর্মাটাঁড় ও  জামতাড়ার বিশিষ্ট ২৮ জন ব্যক্তির (যাঁদের মধ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারাও ছিলেন) স্বাক্ষরসম্বলিত একটি চিঠি বিহারের মুখ্যমন্ত্রীকে দেওয়া হয় । এতে মনে হয় একটা লাভ হয়েছিল । পরে সম্পত্তিটা কেনার সময় বিহার সরকারের অর্থসাহায্য পাওয়া গিয়েছিল ।

স্মৃতিরক্ষা কমিটির প্রথম বৈঠক
এই কমিটির সম্ভবতঃ প্রথম বৈঠক হয় জামতাড়ায়। ২৭শে এপ্রিল ১৯৭৩ থেকে ২৯শে এপ্রিল ১৯৭৩, তিনদিন ব্যাপী এই বৈঠকে, নন্দনকাননের ১০ বিঘা জমি ও বাড়ির দাম হিসেবে তৎকালীন মালিক মল্লিক পরিবার যে টাকার অঙ্কটি দাবী করেছে তা নিয়ে আলোচনা ছাড়াও, নন্দনকানন অধিগৃহীত হলে আদিবাসীদের জন্য একটি বিদ্যালয়, নারীদের জন্য একটি হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কর্মসংস্থানমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলার প্রস্তাব নেওয়া হয়। একই সাথে এ প্রস্তাবও নেওয়া হয় যে কর্মাটাঁড় রেলস্টেশনের নাম বদলে ‘বিদ্যাসাগর’ করার দাবী করা হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে ।

অর্থসংগ্রহ অভিযান
ইতিমধ্যে স্মৃতিরক্ষা কমিটিকে প্রসারিত করে ১৯ জনের করা হয় । বিশিষ্ট নামের মধ্যে এলেন বিহারের নতুন রাজ্যপাল আর ডি ভান্ডারে, বিহার বিধানসভার স্পিকার হরিনাথ মিশ্র, আজিজা ইমাম, সাংসদ, বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও রবীন্দ্র-অনুবাদক হংস কুমার তেওয়ারি এবং খ্যাতনামা ঔপন্যাসিক ফণীশ্বরনাথ রেণু । কমিটির তরফ থেকে বিদ্যাসাগরের জন্মদিন ২৬শে সেপ্টেম্বর ১৯৭৩ তারিখে এক টাকা মূল্যের কূপন জারি করেন পন্ডিত হরিনাথ মিশ্র । সেইদিন সেই জনসভাতেই সংগ্রহ হয় ২,৫৩৬ টাকা । পরে ১৬.১১.১৯৭৩ তারিখে নন্দনকাননের বাড়িটির ছবিসম্বলিত একটি দ্বিভাষী আবেদনও জারি করা হয় ।

বিহার সরকারের সহযোগিতা
বিহার সরকারের কাছে বারবার আবেদন নিবেদনের ফল পাওয়া যায়। মুখ্যমন্ত্রী আব্দুল গফুর সাড়া দেন। ১৯৭৩-৭৪ বিত্তবছরের শেষ দিন শিক্ষা বিভাগ থেকে মঞ্জুর করা ১৫০০০/- টাকার চেক ট্রেজারি থেকে হাতে পাওয়া যায়।

সম্পত্তি ক্রয় ও অধিগ্রহণ
যদিও চেকটি ৩০শে মার্চ পাওয়া গিয়েছিল, নন্দনকাননের মালিকানা হস্তান্তরের পঞ্জিকরণ (রেজিস্ট্রেশন) হয় ২৯শে মার্চ। কথাবার্তায় শেষ দাম ধার্য হয়েছিল ২৪,০০০/- টাকা। ৯,০০০/- টাকা কূপন বিক্রি করে সংগ্রহ করা হয়েছিল। ১৫,০০০/- টাকা বিহার সরকার দেয়। বিহার সরকারের চেক ৩০ তারিখে পাওয়া গেলেও, এই মুহূর্তে এটা জানতে পারা যাচ্ছেনা যে মল্লিকরা ওই ১৫,০০০/- টাকা দুদিন পরে পাওয়ার ব্যাপারটা মেনে নিয়েছিলেন নাকি কেউ তাৎক্ষণিক ভাবে টাকাটার ব্যাবস্থা করেছিল।  

অতিক্রমণ মুক্ত করা
সে সময় ওখানে জায়গাটার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে বা যাকে বলা যায় কেয়ারটেকার ছিলেন কার্তিক মন্ডল। চাষের জায়গাটা তাঁর ভোগদখলে ছিল। গুরু চরণ সামন্তরা কথা বলে জেনেছিলেন কার্তিক মন্ডলের ঠাকুর্দা খোদ বিদ্যাসাগর কর্তৃক নিযুক্ত হয়েছিলেন। একা কার্তিক মন্ডলের পক্ষে পুরো জায়গাটা সামলে রাখা সম্ভব ছিল না। আশেপাশের কয়েকজন মারোয়াড়ি ব্যাবসাদারের নজর ছিল সম্পত্তিটার ওপর। একজন চেষ্টাও করেছিল। নন্দনকাননের পাশেই সুভাষচন্দ্র বসু পরিবারের এক আত্মীয়ের বাড়ি ছিল। তারা চাপে পড়ে কোনো মাড়োয়াড়ির হাতেই বাড়ি বিক্রি করে চলে যায়। তবু, পাটনা থেকেও দূরে এবং কলকাতা থেকেও দূরে এই সম্পত্তির রক্ষণাবেক্ষণের জন্য কার্তিক মন্ডলের থেকে বেশি যোগ্য আর কারোর থাকার প্রশ্নও ছিলনা। তাই কার্তিক মন্ডলই আগামী দুই দশক অব্দি কেয়ারটেকার থাকেন।   

বিদ্যাসাগর প্রকল্পের উদ্বোধন
১৪ই নভেম্বর ১৯৭৬ তারিখে বিদ্যাসাগর প্রকল্পের উদ্বোধন হয়। সম্পত্তি রেজিস্ট্রেশনের পর তার দখল নেওয়া, ১১ কামরার মূল বাসভবনটাকে ঠিকঠাক করে তোলা, বিদ্যাসাগর ব্যবহৃত জিনিষপত্র যা বেঁচেছিল সেগুলো হেপাজতে নেওয়া তারপর শিক্ষামন্ত্রী এবং অন্যান্য ভিআইপিদের এপয়েন্টমেন্ট পাওয়া এসবে সময় গিয়েছিল। এর আগে ১৯৭৪এর এপ্রিল মাসে মুখ্যমন্ত্রী আব্দুল গফুরের কথা ছল বিদ্যাসাগর প্রকল্প উদ্বোধন করার। খবরের কাগজেও বেরিয়েছিল। কিন্তু মনে হয় যেতে পারেননি। ২৬শে সেপ্টেম্বর ১৯৭৫এ মুখ্যমন্ত্রী জগন্নাথ মিশ্রও কর্মাটার পরিদর্শনে যেতে রাজি হয়েছিলেন। কিন্তু তিনিও মনে হয় যাননি, কেননা কোনো বিবরণ পাওয়া যায়না।
এরপর পূর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিচ্ছি, “কর্মাটার। পথের দুধারে লোক দাঁড়িয়ে। বিদ্যাসাগরের বাড়ি ‘নন্দন কানন’ লোকে লোকারণ্য। দেখলাম বাড়িতে যাবার যে পথ একদা জবরদখল হয়েছিল, তা এখন মুক্ত। ...ঢুকলাম নন্দন কাননে। আগাছাগুলি নেই। আবর্জনার স্তূপ অন্তর্হিত। স্থানটা বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হয়েছে। কর্মাটারের রেলকর্মীরা এবং স্টেশন মাস্টার সবাই মিলে এই দুরূহ কাজটা সম্পন্ন করেছেন। স্থানীয় ছেলেরা ব্যাজ বুকে সারাক্ষণ খাটছেন। পুরোনো বাড়িটা মেরামত করা হয়েছে। নতুন পলেস্তারা লাগেনো হয়েছে। অপহৃত জানালা-দরজাগুলি অবশ্য এখনও লাগানো হয়নি।”
সেদিনের সেই প্রকল্প উদ্বোধনে শামিল ছিল নন্দন কাননে (১) বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন, (২) পানীয় জলের ব্যাবস্থা, (৩) হোমিওপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপন এবং (৪) জামতাড়ায় সাক্ষরতা কেন্দ্রের উদ্বোধন। বস্তুতঃ বিহারে নিরক্ষরতা দূরীকরণের কাজ এই সাক্ষরতা কেন্দ্র দিয়েই শুরু হয়। গণ্যমান্য ব্যক্তিদের মধ্যে এসেছিলেন বিহারের শিক্ষামন্ত্রী রামরাজ প্রসাদ সিং, বিধানসভার স্পীকার পন্ডিত হরিনাথ মিশ্র এবং স্মৃতিরক্ষা কমিটির সভাপতি বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায় এবং আরো অনেকে। এই বালিকা বিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকাদের মাইনে যোগাড়ের কাজে স্মৃতিরক্ষা কমিটিকে বছরের পর বছর প্রভূতভাবে সাহায্য করেছিল পশ্চিমবঙ্গের বিশ্বকোষ পরিষদ, নিরক্ষরতা দূরীকরণ সমিতি এবং আরো কয়েকটি সংস্থা।
 
রেলস্টেশনের নামবদল
রেলস্টেশনের নামবদলের চেষ্টা ১৯৭৪ থেকেই চালিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। চিঠির পাহাড় জমে উঠছিল। সরকারী স্তরে ব্যাপারটা নিয়ে তদ্বির তদারক করার অনেক গল্প আছে। সে সময় বেহার হেরাল্ড ইংরেজি সাপ্তাহিকটি, বাঙালি সমিতির তত্বাবধানে প্রকাশিত বেশ জনপ্রিয় কাগজ ছিল কাজেই যাকে বলে মিডিয়া ফোকাস, সেটা ভালো ভাবে দেওয়া যাচ্ছিল। যাই হোক, অবশেষে ফল পাওয়া গেল রেলমন্ত্রী মধু দন্ডবতের আমলে। বাঙালি সমিতির আবেদন এবং বিহার সরকারের শংসায় রেলমন্ত্রক স্টেশনের নামটা কর্মাটারের বদলে ‘বিদ্যাসাগর’ করে ১৯৭৮ সালে।
১৯৭৮এরই ২রা অক্টোবর মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী (মাধ্যমিক) গোলাম সরবর কর্মাটাঁড়ে বিহার সরকারের বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন এবং বিদ্যাসাগর বালিকা মধ্য বিদ্যালয়কে বিত্তরহিত (সংখ্যালঘু) বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি প্রদানের ঘোষণা করেন। স্মৃতিরক্ষা কমিটিকে বয়স্ক শিক্ষার ১২০টি কেন্দ্র পরিচালন করার অনুমোদন দেন।

সাক্ষরতা কেন্দ্র
সে সময় বিদ্যাসাগর বালিকা বিদ্যালয়ের সচিব ছিলেন জামতাড়ার ডাকসাইটে উকিল ও এককালে জামতাড়ার বিধায়ক অরুণ বসু যিনি সকলের কাছে বীরুবাবু নামে বেশি পরিচিত। তাঁর উদ্যোগে জামতাড়া থেকে কর্মাটাঁড় অব্দি উনিশ কিলোমিটার রাস্তা পাকা করানো গিয়েছিল। সে রাস্তার নামকরণও হয়েছিল – বিদ্যাসাগর পথ। ১৯৭৪ থেকে ১৯৭৭, এই তিন বছরে বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা কমিটি গড়ে প্রতি বছর ২০টির মত বয়স্ক সাক্ষরতা কেন্দ্র পরিচালনা করেছে। ১৯৭৭-৭৮ সালে ৫০টি এবং ১৯৭৯ সালে ৬০টি নতুন সাক্ষরতা কেন্দ্র কেন্দ্রীয় সরকারের সহযোগিতায় চালানো হয়েছে। এ কাজে প্রায় ২ লক্ষ টাকা মত খরচ হয়েছিল এবং প্রায় ১.৫ লক্ষ টাকা সরকারী অনুদান পাওয়া গিয়েছিল। ভারত সরকার দু’বছর কমিটিকে ২টি করে জাতীয় সেবা প্রকল্পের স্বেচ্ছাসেবীর পদ মঞ্জুর করেছিল। বিহারে একমাত্র এই কেন্দ্রগুলিতেই বাঙলায় সাক্ষরতার কাজও হয়েছিল। 

তারপর বারো বছর
১৯৮০ থেকে ১৯৯২ অব্দি নন্দন কাননে বিশেষ নতুন কিছু হয়নি। বালিকা বিদ্যালয় চলতে থাকে, হোমিওপ্যাথিক দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রও চলতে থাকে। কার্তিক মন্ডল রক্ষণাবেক্ষণের কাজে থাকেন। কিন্তু টাকার অভাব একটা বিরাট সমস্যা হয়ে ওঠে। সরকারের স্বীকৃতিতে অর্থসাহায্যের কোনো কথা ছিলনা। বিদ্যালয়ের শিক্ষক/শিক্ষিকাদের মাইনে দেওয়া, দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্রের জন্য ওষুধ সংগ্রহ করা এক কঠিন দায় হয়। কিছু কলকাতা থেকে আসা সাহায্য, কিছু পাটনায় চাঁদা করে অথবা সমিতির ঈষৎ স্বচ্ছল কর্ণধারদের ব্যক্তিগত দানে মাইনের টাকাটা কুলিয়ে ওঠেনা। তবু যেমন করে হোক, বিদ্যালয়টা চলতে থাকে। আরেকটি সমস্যারও সম্মুখীন হতে হয়। চারদিকে ইংরেজি-মাধ্যম স্কুলের প্রাধান্য বাড়তে থাকায় বিদ্যালয়ে ছাত্রীসংখ্যাও বাড়েনা। বরং কমতে থাকে।
আরো কিছু সমস্যা হয় – স্মৃতিরক্ষা কমিটি ও বাঙালি সমিতির প্রধান নেতৃবৃন্দের বাড়তে থাকা বয়স, নতুন উৎসাহী কর্মীর অভাব। সেই একই সমস্যার সম্মুখীন সমিতির জামতাড়া ব্রাঞ্চ বা স্মৃতিরক্ষা কমিটির জামতাড়াবাসী নেতৃবৃন্দকেও হতে হয়। এছাড়া ব্যক্তির দৃষ্টি ও কর্মক্ষমতারও একটি ভূমিকা থাকে। উল্লেখ না করে থাকতে পারা যায়না যে ১৯৭৬এ দীপেন্দ্রনাথ সরকারের অসাময়িক মৃত্যুর পর তাঁর যোগ্য উত্তরসুরী গুরুচরণ সামন্ত সম্পাদক হলেন বাঙালি সমিতির এবং তিনি ১৯৮২ অব্দি ছিলেন। তাঁরপর যাঁরা হলেন তাঁরা সবাই যোগ্য, হয়ত অন্যান্য অনেক ব্যাপারে যোগ্যতর ছিলেন, কিন্তু দৃষ্টি, কর্মক্ষমতা ও উদ্যমের হয়ত কিছু অভাব ঘটেছিল। সেটা আরো বেশি প্রমাণিত হয় যখন দেখি সেই গুরুচরণ সামন্ত আবার ১৯৯১এ নির্বাচিত হলেন আর ১৯৯৩এ আবার একটা বড় (যদিও ক্ষণস্থায়ী) জোয়ার এল কর্মাটাঁড়ের কাজে।     

প্রতিমা স্থাপন ১৯৯৩
নব্বইয়ের দশকের শুরুতে দেশের রাজনীতিতে যে বদলগুলো এল তার একটা বড় প্রভাব সাংস্কৃতিক মানসেও পড়ল। যেন সাংস্কৃতিক প্রতিরোধের রসদ জোটাতেই ঐতিহ্যের পুনরাবিষ্কারের একটা ঝোঁক এল। আজ ফিরে দেখলে ১৯৯৩এর ঘটনাবলী তারই প্রতিফলন মনে হয়। যদিও পরবর্ত্তী দিনে বিদ্যালয়ের অবস্থার খুব বেশি বদল হলনা (বাধ্য হয়ে বলতে হয় যে আবার গুরুচরণ সামন্ত সম্পাদক পদ থেকে সরে গেলেন) কিন্তু কর্মাটাঁড় বিহার এবং বাংলার সংবাদপত্রগুলোর মাধ্যমে পাদপ্রদীপের আলোয় ফিরে এল। ১৯৯৩ সালের ২৬শে সেপ্টেম্বর (অর্থাৎ বিদ্যাসাগরের জন্মতিথিতে) কর্মাটাঁড়ে বিদ্যাসাগরের একটি মর্মর প্রতিমা স্থাপিত হল। প্রতিমাটি দান করেছিলেন পাটনার বিখ্যাত জনদরদী আইনজীবী এবং বার এসোসিয়েশনের অধ্যক্ষ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। অনাবরণ করেন পাটনা উচ্চ আদালতের প্রধান বিচারপতি বিমল চন্দ্র বসাক। এরপর পূর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়ের মুখে শুনুন (হিন্দুস্তান টাইমসে ৩.১০.১৯৯৩ তারিখে প্রকাশিত সংবাদ)। 
    “it was the morning of September 26. The sky was overcast and it had been raining since dawn. At about 9 O’clock the rain stopped. The crowd had been increasing steadily. One could see the century-old house – Nandan Kanan – surrounded by extensive grounds. A well decorated stage had been erected to the left of the house where a marble statue was covered with a piece of red cloth. The backdrop of the stage proclaimed ‘Vidyasagar Janmotsav, Bihar Bengalee Association’. …
“Justice Bimal Chandra Basak dwelt on the relevance of the concept of justice in the context of modern life and said that Vidyasagar had realized that only mass-education could lead to social justice.
“The artistes of Jamtara presented a cultural programme after which crowds of tribal men and women dressed in their best attire offered floral tributes to the statue – a sight enough to send a thrill down the spine and bring tears to the eyes. Vidyasagar is a god of action – ‘Karamdevata’ – to them. They have been worshipping for generations the cemented dais marking the spot where Vidyasagar sat every day.

ভগবতী ভবন নির্মাণ
দেখা যাচ্ছে যে ১৯৯৪এর সেপ্টেম্বর মাস থেকে বিদ্যালয়টির ব্যয়ভার পুরোপুরি কলকাতার বিশ্বকোষ পরিষদ ওঠাতে শুরু করে। বিশ্বকোষ পরিষদের পার্থ সেনগুপ্ত তখন বিদ্যালয় কমিটির সচিব হন। সে বছরই বিশ্বকোষ পরিষদ এবং ‘পথের পাঁচালী’ নামের একটি সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায়, দেড় লক্ষ টাকায় নন্দন কানন পরিসরে ‘ভগবতী ভবন’ নামে একটি ভবন নির্মিত হয়। স্থানীয় বিধায়ক শশাঙ্ক শেখর ভোক্তার বিধায়ক-ফান্ডের টাকায় বিদ্যালয়ের একটি ভবন, যেটি অর্দ্ধনির্মিত হয়ে ছিল, পুরো করা হয়। ১৯৯৪ সালেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ক্রীড়া ও পরিবহন মন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী, ‘ফ্রেন্ডস অফ দি স্টেডিয়াম’এর পক্ষ থেকে সমিতিকে বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য এক লক্ষ টাকা দান করেন।

বিহারের বিভাজন এবং ঝাড়খন্ড রাজ্য গঠন
২০০০ সালে বিহারের বিভাজনের পর পরিস্থিতিতে আমূল পরিবর্ত্তন হল। সাধারণ বাঙালি মানসেও তার একটা প্রতিকূল প্রভাব পড়ল। বিভক্ত বিহার বাঙালি তার প্রান্তিকরণ থেকে বেরুবার চেষ্টা করছিল। অন্যদিকে বাঙালি-অধ্যুষিত কিন্তু আদিবাসী অস্মিতার রাজ্য ঝাড়খন্ডএ বাঙালি নিজের সঠিক অবস্থানটা নিতে দ্বিধান্বিত হল। তার সুযোগও নিল সরকার। দ্বিতীয় রাজভাষার লড়াইয়ে একসাথে ১১টা দ্বিতীয় রাজভাষায় বাঙলাকে ঢুকিয়ে দিল, প্রধান রাজভাষা করে দিল হিন্দী। এই সময় ঝাড়খন্ডের বিহার বাঙালি সমিতির বাঃ তখনো অগঠিত ঝাড়খন্ড বাঙালি সমিতির পুরোনো একটি শাখার অবদান অনস্বীকার্য। সেটি হল জামশেদপুর শাখা। দ্বিধাদ্বন্দ্বে সময় ব্যতীত না করে তারা প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এগিয়ে এল বিদ্যাসাগর বালিকা বিদ্যালয়ের সহায়তায়। তারপর থেকে কলকাতা ও কিছুটা পাটনা ছাড়া তাদেরই সাহায্যে স্কুলটি চলতে লাগল।

বর্ণপরিচয়ের সার্ধশতবার্ষিকী উদযাপন
২০০৪ সালে বর্ণপরিচয়ের সার্ধশতবার্ষিকী উদযাপনে বিহার বাঙালি সমিতি এবং বিহার বাঙলা আকাডেমি যৌথভাবে এক সুদৃশ্য ও সমৃদ্ধ দ্বিভাষিক ফোল্ডার বার করেছিল। আরো কিছু কার্যক্রম করা হয় এবং এভাবে নন্দনকাননের গুরুত্বকে জনসমক্ষে তুলে ধরার চেষ্টা চলে।

আরো কিছু দান ও অবদান
২০০৮ সালে বিদ্যাসাগর দাতব্য হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা কেন্দ্রের গৃহ নির্মাণে জামশেদপুরবাসী চামেলী চ্যাটার্জি ৪০,০০০/- টাকা দান করেন। ডাঃ চিন্ময় চক্রবর্ত্তী সেখানে প্রতি শুক্রবার চিকিৎসক হিসেবে নিঃশুল্ক সেবা দান করছিলেন। ২০০৯ সালে পথের পাঁচালী, কলকাতার পক্ষ থেকে রমলা চক্রবর্ত্তী বিদ্যালয় আমানত কোষে ৫ লক্ষ টাকা দান করেন।
এবং এই প্রসঙ্গে একজন মানুষের উল্লেখ করতেই হয়, তিনি হলেন পার্বতী কিঙ্কর রায়। যখন নন্দনকাননের দেখাশোনা নিয়ে একটা সমস্যায় ছিল সবাই, তখনই পার্বতী কিঙ্কর বাবু কর্মাটাঁড়ে এসে, সেখানকার অবস্থা দেখে প্রস্তাব দেন যে তিনি নিজেই যেচে ওখানে থাকতে চান এবং জায়গাটার দেখাশোনার ভার নিজের কাঁধে তুলে নিতে চান। সবাই এ প্রস্তাবে রাজি হয়। তারপর থেকে বেশ কিছু বছর উনি একাই ওই জায়গাটার এক প্রকারে অভিভাবক হয়ে যান – কিছুটা নিজের টাকা খরচ করে, কিছুটা পাটনা, কলকাতা থেকে আনিয়ে কাজও চালিয়ে যান। অতিক্রমণের প্রকোপ কিছুটা কমে। উনি ব্যক্তিমানুষ, সংগঠনের কাছে জবাব দিতে বাধ্য নন কাজেই পরবর্ত্তীকালে কিছু সমস্যারও সৃষ্টি হয়, কিন্তু ওই কয়েকটি বছর তাঁর ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।       

গুরুদক্ষিণা
২০১১ সাল থেকে নব-উজ্জীবিত বিহার বাঙালি সমিতি একটা রণনীতিক সিদ্ধান্ত নেয়, নন্দনকাননে ‘গুরুদক্ষিণা’ কার্যক্রম করার। বিদ্যাসাগর আমাদের ভাষাগুরু, তাঁর পায়ে ফুল দিতে যাব। রণনীতিক বলছি এই জন্য যে নতুন পরিস্থিতিতে, একদিনের ছোট্টো ‘তীর্থদর্শন ও পর্যটন’ প্যাকেজের আকর্ষণ তৈরি করার চেষ্টা করা হয়। চেষ্টাটি সফল হয়েছে। পাটনা, কলকাতা, জামশেদপুর, রাঁচি, ধানবাদ, বোকারো থেকে একদিন এবং বিহারের অন্যান্য জেলা, ভাগলপুর, দ্বারভাঙ্গা, বেতিয়া ইত্যাদি থেকে দেড় দিন। পূর্ণিয়া, কাটিহার থেকে দুদিন। লোকে এমনকি শিলিগুড়ি বা দিল্লী থেকেও আসা শুরু করেছে। শিল্পীদের দল যেচে এসে অনুষ্ঠান করে যায়।  
তারই সাথে সমিতির প্রচেষ্টায় অতিথিশালা, আহারের ব্যাবস্থা, নিকটবর্ত্তী দর্শনীয় স্থানগুলোতে যাওয়ার গাড়ির জন্য ব্যাবস্থা এসব হয়েছে। কর্মাটাঁড়, জামতাড়াতেও মিডিয়া প্রস্তুত হতে থাকে ধীরে ধীরে। গুরুদক্ষিণার খবর তারা ছাপবেই। প্রথমে বছরের যা কোনো দিন আয়োজন করা হত, এখন স্থির হয়ে গেছে, ২৯শে মার্চ, সমিতির মালিকানায় আসার দিন। এদিকে ধীরে ধীরে জন্মদিবস, ২৬শে সেপ্টেম্বর এবং তিরোধান দিবস ৩০শে জুলাইয়েও কার্যক্রম শুরু হয়েছে।
বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতি নতুন করে তৈরি হয়েছে, পঞ্জীকৃত হয়েছে। স্মৃতিরক্ষা সমিতির নতুন নেতৃত্বে এমন মানুষ পাওয়া গেছে যাঁরা উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণের কাজে বিচক্ষণ ও একনিষ্ঠ। উপরোক্ত তিনদিন ছাড়াও তাঁরা প্রায় প্রতি মাসেই জায়গাটির পরিদর্শনে যান। তাঁদেরই প্রচেষ্টায় এবং অনেক মানুষের আর্থিক সাহায্যে আজ নন্দনকাননের চার দিকে উঁচু পাঁচিল দেওয়া গেছে, গাড়ি নিয়ে ঢোকার মত গেট তৈরি অন্যদিক দিয়ে... নন্দনকানন এখন কোনো রকম অনুপ্রবেশ থেকে সম্পূর্ণ সুরক্ষিত।
কিন্তু দুঃখের কথা, বাঙলা মাধ্যম বিদ্যাসাগর বালিকা বিদ্যালয় বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ইংরেজি মাধ্যম স্কুল খোলার চেষ্টা হয়েছিল, ফলপ্রসু হয়নি।
২০১৭র গুরুদক্ষিণার কিছু আগে থেকেই ঝাড়খন্ডের সরকারী মহলে কিছু সাড়াশব্দ টের পাওয়া যায়। তার কিছুদিন আগে ঝাড়খন্ডের মুখ্যমন্ত্রী জামশেদপুরে ঘোষণা করেন যে নন্দনকাননকে ঐতিহ্যক্ষেত্র করার চেষ্টা করবেন তিনি। ১৫ই মে, ২০১৬র বেহার হেরল্ডের পাতায় দুটি খবর পাশাপাশি ছাপা হয়।
…the block-cum-circle office of Karmatand has submitted a DPR for one crore and fourteen lakh rupees to develop Nandan Kanan as a heritage site and develop it from the aspect of tourism.
District administration has also sent a proposal to the state tourism department. This may well be reminded that Chief Minister of Jharkhand had also given a nod to the proposal of declaring Nandan Kanan as a heritage site.
১ কোটি টাকার থেকে বেশির এই দাক্ষিণ্যে স্কুলের কোনো কথা ছিলনা। ছিল হ্যালোজেন আলো, পার্ক, ফোয়ারা, বাড়িগুলির মেরামত, চুনকাম, হোমিওপ্যাথিক ডিস্পেন্সারিটাকে সাজিয়ে তোলা ইত্যাদি। দ্বিতীয় খবরটি নিচে দিচ্ছি।
 “On 30th April a delegation of Vidyasagar Smriti Raksha Committee which also included the President of Nandan Kanan School Committee met DC, Jamtara, Dr. S. K. Agrahari. Dr. (Capt.) Dilip Kumar Sinha, eminent lawyer of Jamtara Arun Kumae Bose (popularly known as Biru Babu), Sachchidanand Sinha, Purnendu Shekhar Pal, Sunirmal Das, Chameli Pal, Debashish Mishra and Bishwanath Deb were in the delegation.
এই প্রতিনিধিমন্ডল মুখ্যতঃ বিদ্যাসাগর দ্বিশতবার্ষিকী উদযাপনের খবর দিতে ও তাতে জামতাড়া প্রশাসনের সহযোগিতার আশ্বাস নিতে যায়।
যাই হোক, দুই বিচ্ছিন্ন ধারায় চলতে থাকা কাজদুটি মিলিত হয় ২০১৭র গুরুদক্ষিণায়, ২৯শে মার্চ তারিখে। সেদিনকার প্রতিমায় মাল্যদান অনুষ্ঠানে একটু হঠাৎ করেই চলে এল ঝাড়খন্ডের কৃষিমন্ত্রী রঞ্জিত সিং এবং প্রশাসনের সব কজন বড়কর্তার গাড়ির মিছিল। ‘ঐতিহ্যক্ষেত্র’ হিসেবে উন্নীত করার কাজের ভিত্তিস্থাপন হল। ভাষণ হল। এখন কাজ শুরু হওয়ার অপেক্ষা।
বিদ্যাসাগর দ্বিশতবার্ষিকী – নন্দনকানন উদযাপন কমিটির লক্ষ্য হল ২০০ বছর উদযাপনের অনুষ্ঠান যতদূর সম্ভব ছড়িয়ে দিয়ে নন্দনকাননকে ভাষাতীর্থ হিসেবে জনপ্রিয় করে তোলা, সরকারের নজরে নিয়ে আসা যাতে নিয়মিত অর্থসাহায্যের একটা স্রোত তৈরি হয়। তাহলেই, বালিকা বিদ্যালয়, বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র, কৌশল-বিকাশ কেন্দ্র, হস্ত-শিল্প প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, স্বাস্থ্যকেন্দ্র... যত রকম পরিকল্পনা আছে সবক’টি সুষ্ঠুভাবে শুরু করা যায় এবং চালান যায়। নইলে শুধু ওই বছরে একদিনের হুজুগ ছাড়া কিছু হবেনা।   
বিহার বাঙালি সমিতি এবং ঝাড়খন্ড বাঙালি সমিতি, অথবা বিদ্যাসাগর স্মৃতিরক্ষা সমিতি, এই কাজেই সহায়কের ভূমিকায় আছে।   

বিদ্যুৎ পাল 

1 comment: