Thursday, November 9, 2023

ইংরেজি

কথা চলছিল বিসাল গ্রামের বিডিও আর ডিএমএর, অর্থাৎ বাংলায় ব্লক উন্নয়ন আধিকারিক এবং জেলাশাসকের মধ্যে। বিডিও কে.পি.সিনহা, যাদবজি। চাকরিজীবনের প্রথমে নেতারহাট স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। তারপর বিপিএসসি করে প্রশাসনিক লাইনে আসেন। কাজেই তাঁর আশেপাশে বা মাথার ওপর অনেকেই বয়সে কম। জেলাশাসক তো তাঁর ছাত্রই ছিলেন। তিনিও যাদব। আবার স্থানীয় থানার যে ওসি, সেও বয়সে কম এবং যাদব। তবে বিডিও কে.পি.সিনহা শুধু বয়সেই বড় নয়, শিক্ষিতও বেশী এবং জাতপাতের বিরুদ্ধে। একটা শিক্ষকীয় স্নেহশীল মনোভাব থাকে কথাবার্তায়।

ওই ব্লকেই তালবন্না বলে একটা গ্রাম আছে। সেখানে ঝামেলা পাকিয়েছিল। বিডিওসাহেব তৎপরতার সঙ্গে সামলে নিয়েছিলেন। সেই সূত্রেই ঘটনাটা সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন জেলাশাসক। সব শুনে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন, কি করে সামলান স্যার? আপনি শিক্ষক মানুষ!

-              সেখানেও ইংরেজি পড়াতাম। এখানেও ইংরেজি পড়াই।
-              ইংরেজি? আপনি তো পুরো ভাষণটা দিলেন বলছেন হিন্দিতে। হিন্দিও না, অংগিকায়।
-              ইংরেজি কী, বল তো?
-              ভাষা!
-              আঃ, ভারতবাসীর জন্য কী?
-              ইংরেজদের নকল করে সাহেব হওয়ার তালিম। আর ভালো অর্থে নতুন জ্ঞান আহরণ করার ভাষা।
-              দুটোর কোনোটাই না। দেশপ্রেমিক ভারতীয়দের জন্য ইংরেজি, ইংরেজদের বিরুদ্ধে লড়ার হাতিয়ার।
-              তাই হল নাহয়। তবে এখানে ?
-              কায়েমি স্বার্থের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য কায়েমি স্বার্থের ভাষাটা ভালো করে জানার নামই হল ইংরেজি জানা। কায়েমি স্বার্থের ভাষা হল টাকা, জমি, আইন, আমলাতন্ত্র, শোষণ। ভেদবুদ্ধি, দুর্নীতি । এসব জানলে তবে না গ্রামের মানুষ এককাট্টা হবে? শান্তি বজায় রাখবে নিজেদের মধ্যে? নিজেদের শক্তি লাগাবে ব্যবস্থাটা পাল্টাতে?
-              তা, এসব আপনি শেখান?
-              সবটুকু না। সব শিক্ষকের কাজ আমি একা করব কী করে? তাও আবার সরকারি চাকুরে হয়ে। (হেসে বলেন) আমি শুধু র‍্যাপিড রিডিংটুকু ধরি। বাকি গ্রামার, প্রোজ, পোয়েট্রির শিক্ষক ওরা নিজেরাই খুঁজে নেবে!

৩১.১২.২০০৬  

  

No comments:

Post a Comment