Thursday, January 5, 2023

ম্যাটিনি শো

কবি আলোকধন্বার একমাত্র প্রকাশিত কাব্যসঙ্কলন দুনিয়া রোজ বনতি হ্যয়। ১৯৯৮-এ প্রকাশিত। কবিতাগুলির আকার তিন পংক্তি থেকে দশ পৃষ্ঠা অব্দি। আকারের তফাতটা উপেক্ষা করলে গুনতিতে মোট একচল্লিশটি কবিতা। রচনাকাল ১৯৭২ থেকে ১৯৯৭, পঁচিশ বছর। সর্বাধিক কবিতা ১৯৯৬-এ লেখা এগারোটি।

আকৃতির তফাৎ উপেক্ষা করে এই বার্ষিক মাথাগুনতির সাফাই পেশ করব। অবশ্যই। তার আগে আলোকধন্বার রচনা প্রক্রিয়া সম্পর্কে কিছু কথা।

দীর্ঘ কবিতায় নিঃসন্দেহে ভাবনার একটা পূর্ণ শৃংখলা থাকে। আলোকধন্বার সঙ্গে থেকে দেখবার সৌভাগ্য হয়েছে বলে আরো বলতে পারি, মাসের পর মাস ধরে কাব্যযাপনে উঠতে থাকে শৃংখলার এক-একটি জোড় পরিমার্জনার নিরন্তন শোধন পার করে বাসা পায় কবিতায়। ছোট কবিতাগুলোতে সাধারণতঃ একটি ভাবনা অথবা একটি চিত্রের ভিত্তিতে কয়েকটি অন্তর্সম্পর্কিত ভাবনার ইশারা থাকে। মাঝারি কবিতাগুলোয় কয়েকটি চিত্রের মাধ্যমে একটি ভাবনাকে প্রত্যাশিত গভীরতা ও ব্যাপকতা দেওয়া যায় সর্বাধিক কাহিনীতত্ত্ব এইসব কবিতায় ঢুকে পড়ে।

আলোকধন্বার প্রসঙ্গে দীর্ঘ কবিতাগুলোর আলাদা গুরুত্ব আছে। জনতা কা আদমি থেকে সফেদ রাত অব্দি নিজের দীর্ঘ কবিতাগুলোয় তিনি প্রতিবার সমসাময়িক সাংস্কৃতিক প্রতর্কে শুধু সার্থক নয়, দিশারী হস্তক্ষেপ করতে সফল হয়েছেন। অনুপম কাব্যিকতায় এই কাজটি করতে পারা এবং উপমহাদ্বীপব্যাপী ক্যানভাসে জীবনের কঠিনতম সংশ্লিষ্ট উদ্বেগসমূহ অব্দি পৌঁছোতে পারার জন্যই পুরো হিন্দি এলাকায় তিনি এত জনপ্রিয়। এত কম লিখেও বারবার তরুণ-তরুণতর প্রজন্মের কন্ঠস্বর!

গ্রন্থিত কবিতাগুলির নীচে দেওয়া রচনাকাল ধরে কেউ যদি বলেন ১৯৭৪-৭৫-এ উনি কিছুই লেখেন নি, যখন নাকি পাটনার মোড়ে সে সময় প্রায় প্রতিদিনই আন্দোলনরত যুবসমাজের ভিড়ে কাব্যপাঠ চলছে এবং নাগার্জুনের সঙ্গে জনতা কা আদমির কবিও সেখানে শিহরণ জাগানো তারকা, সদ্য পাঞ্জাবে গ্রেপ্তার হয়ে ছাড়া পেয়েছেন জনতার চাপে, তিনি ভুল বলবেন না।

কিন্তু যাঁরা কবিকে জানেন তাঁরা জানেন, বহুপঠিত জনতা কা আদমি, গোলি দাগো পোস্টরএর পর কিছুদিন ওই একই ধরণের বুনটে আরো কিছু কবিতা লেখার চেষ্টায় তিনি দেয়ালে আটকে যাচ্ছিলেন। নতুন বন্ধুরা, নতুন বিশ্বকবিতা, নতুন বাস্তব, দারুণ গরমে ঘরে বসে চন্দ্রভূষণ তিওয়ারির (হিন্দি সাহিত্যের খ্যাতনামা সমালোচক ও সম্পাদক) অক্লান্ত প্রশ্নবাণে জর্জর হতে থাকা । প্রথম বৈপ্লবিক আত্মপ্রকাশের কিছু দিনের মধ্যেই কবি জীবনকে আরো ভালো করে বোঝার, নতুন পথে হাঁটার তাগিদটা পেয়ে গেলেন। এটা কবির সৌভাগ্য। সকলে পান না।

১৯৭৬-এ ভাষার নতুন বুনটটা পেলেন। তৈরি হল পতঙ্গ হিন্দি সাহিত্য জগত ঝংকৃত হয়ে উঠল তার স্বকীয় মূর্ছনায়। একই ভাবে, ১৯৭৭-৭৮-এ তিনি কপড়ে কে জুতের ওপর কাজ করছিলেন। প্রকৃতি ও মানবকৃত নির্মাণের দ্বান্দ্বিক নিয়ে একটি কনসার্টও বাজছিল তাঁর হৃদয়ে।

তারপর দশ বছর। একটাও কবিতা নেই। এরকম ভাবা হাস্যকর হবে যে দশ বছর ধরে তিনি ভাগী হুঈ লড়কিয়াঁ (১৯৮৮) অথবা জিলাধীশ, ব্রুনো কী বেটিয়াঁ (১৯৮৯) রচনা করার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। অবশ্যই নানা ধরণের ভাবনার ঢেউ এসে থাকবে যা পরে কবিতার রূপ গ্রহণ করেছে।   

 কিছু ভাবনা, কিছু পংক্তি, কিছু অসমাপ্ত গোধূলি (এই নামে একটি দীর্ঘ কবিতায় বিচরণ করছিলেন সে সময় পুরো করতে পারেন নি) ড্রয়ারে, ছিন্ন বিচ্ছিন্ন কাগজে বন্দি রয়ে গেছে।

তবু, পূর্ণ বিষয়মুখে কবিতার সন্ধান, যা প্রথমে শিশুদের এলিমেন্টালিটি (পতঙ্গ) ও তারপর মানবনির্মিত বস্তুগুলোর জগত (কপড়ে কে জুতে) হয়ে এগোচ্ছিল, পৌঁছোবার চেষ্টা করছিল মানবনির্মিত সম্পর্ক, পরিবার, নাগরিক সমাজ ইত্যাদি (ভাগী হুঈ লড়কিয়াঁ) পার করে শ্রমজীবী জনতার স্বাভিমান (ব্রুনো কী বেটিয়াঁ) অব্দি। নারী-প্রতর্কের (হিন্দিতে স্ত্রী-বিমর্শ) তীক্ষ্ণ ধারের ওপর পা রেখেই চলেছিল এই সন্ধান। কেননা সংস্কৃতি-চিহ্নগুলির গহনতম শ্রেণী সংগ্রাম ওই প্রতর্কেই জারি রয়েছে আজও।

আবার, সেই যাত্রাপথেই শোষণের ব্যবস্থার বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক উপকরণসমূহ সম্পর্কে কবির সমঝদারি স্পষ্ট হল। গোলি দাগো পোস্টর-এর, এমনকি পতঙ্গ-এরও প্রায় বিমূর্ত অত্যাচারী শাসকের খুবই আটপৌরে মূর্ত প্রতিনিধি চিহ্নিত হল জিলাধীশ-এ।

১৯৮৯-এর পর থেকে প্রতিবছর কবি কিছু না কিছু লিখেছেন।

এ সমস্ত কিছু সত্ত্বেও কবিতাগুলির আকৃতির ভিন্নতা আমি উপেক্ষা করতে বললাম কেননা একটি কবিতা (ছোট হোক বা বড় হোক) একটি একক ধরলেই বলা সম্ভব হবে যে ১৯৯৬ সালে কবি সবচেয়ে বেশি উৎপাদনশীল ছিলেন। অর্থাৎ সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ভিন্ন, ভিন্নতর ভাবনা নিয়ে সৃজনের আঙিনায় খেলা করেছেন (আম কা পেড়, রাস্তে, থিয়েটর, মোড়, কিসনে বচায়া মেরী আত্মা কো)। আর বোধহয় তাই, এই খেলায় তিনি পঁচিশ বছরে শুধু একবার (পুরো কাব্যসঙ্কলনে একবার) নিজের দ্বিতীয়তা, দ্বিতীয় সত্তা, এক বিশ্লিষ্ট অপরিচিত আত্মস্বরূপের সম্মুখীন হতে পারলেন (হতে বাধ্য তো তিনি ছিলেনই, বহুদিন যাবৎ, নৈতিক ভাবে)।

ম্যাটিনি শো। তিন পৃষ্ঠার এই মাঝারি কবিতাটি প্রথমে হংস পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।

এই কবিতায়, আর শুধু এই কবিতাটিতেই, প্রথম পুরুষ কবি নয়। কবিসত্তার প্রসারও নয় যেমন জনতা কা আদমি অথবা গোলি দাগো পোস্টর-এ ছিল। দ্রষ্টা-স্বরূপও নয় সফেদ রাত-এর মতো।

ম্যাটিনি শো লিখতে গিয়ে কবি নিজের এই অভিন্ন নয়-কবির সাথে দেখা করেন। দুনিয়ার সাথে নিজের এই দ্বিতীয় সত্তা, বড়-বড় সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক উদ্বেগ থেকে আপাতদৃষ্টিতে বিচ্ছিন্ন এই অপরিচিত আমির পরিচয় করান। এই আমির আত্মপ্রকাশই ম্যাটিনি শো কবিতাটির কাব্যবস্তু। এই কন্ঠস্বরটিকে আমি alter-ego বা দ্বিতীয় সত্তা বলছি কেননা কবি নিজেই এই ব্যক্তিটির পরিচয় প্রথম পুরুষে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

ম্যাটিনি শো-এ প্রথম পুরুষ বলছে

করেছি প্রেম, পুরোনো ভাঙা ট্রাকের পিছনে
……………………
সাঁঝকে পর্দা করে
মিথ্যে বিনে
চাঁদ বিনে আকছার

দূরে ছিল অবধের শহর লখনউ
আর রেখ্‌তায় ভেজা
তার ভাষা মনোহারী

অর্থাৎ এই মানুষটির ভাষা রেখ্‌তায় ভেজাও নয়, মনোহারীও নয়। আবার সেটা তার বেদনাও বটে। মনে হয় সে নিজের মাতৃভাষার মনোভৌগোলিক জগত থেকেও দূরে, নইলে বেদনা হত না। মাতৃভাষা তো প্রত্যেকের কাছেই শ্রেষ্ঠতম, সে ভাষার ক্রোড়ে থাকলে রেখ্‌তায় ভেজা লখনউ-এর মনোহারী ভাষা থেকে দূরে থাকার গ্লানি বোধ হবে কেন?

তাহলে কোন ভাষায় তার বাস? কবিতার ছত্রে ছত্রে স্পষ্ট যে তার ভাষা সেই কুগঠিত জনপদী যাতে আমরা, আর কোথাও না হোক, অন্ততঃ বিহারের শহরগুলোতে তো কথা বলিই। সেটা শুদ্ধ খড়িবোলি হিন্দি নয়, শুদ্ধ মগহীও নয়, শুদ্ধ মৈথিলী অথবা ভোজপুরীও নয়। অঙ্গিকা, বজ্জিকা কিছুই তাতে আর শুদ্ধরূপে নেই।

সুতরাং এই প্রথম পুরুষকে মূর্ত করতে এর ভাষাকে পাটনাইয়া নাম দেওয়া যাক। পাটনাইয়ার জায়গায় মুঙ্গেরিয়া, ভাগলপুরিয়া হতেই পারে, বরং আরো বেশি করে, আরো মহানাগরিক হয় ভাষার এই কুগঠন। পৃথিবীর সব শহরের ঝোপড়পট্টিতে যুবহৃদয়ের ভালো করে ভালোবাসি বলার ইচ্ছে এই ভাষাসঙ্কটে পড়ে যুঝতে থাকে

নিজের দেশের বিষয়ে মানুষটি বলে

           আপাতত কোনো একটা দেশ বলতে নেই
           প্রথম তারাটি ছাড়া, গোধূলির

এখানে কোনো এবং একটা এই দুই শব্দের ব্যবহার একই সঙ্গে এই মানুষটির দেশবহুলতা এবং সেই দেশগুলি থেকে তার বিচ্ছিন্নতার অনুভূতি করায়। আবার প্রথম তারাটি ছাড়া, গোধূলির পংক্তিটিতে, ভবিষ্যতে নিজের একটা দেশ হওয়ার স্বপ্ন যে আছে, সেই দিকে ইশারা করা হয়।

দেশের সমঝদারির সঙ্গে জড়িয়ে আছে শহর নিয়ে একটা সৌন্দর্যপিপাসা। সব শহর শহর নয়। সব শহরে ভালোবাসার মুক্ত গণতান্ত্রিক স্পেস নেই।

পিঠপিছনে শহর যেটা ছিল
ছিল, তবু ছিল না
হতে হতে তার
এখনো হওয়ার ছিল শহর

অবশ্যই সে এখনো ওই শহরেই জীবনধারণ করছে কেন না, পুরোনো ভাঙা ট্রাকের পিছনে তার প্রণয়।

অমর ম্যাটিনি শো-এর অন্ধকারে কৃত প্রেমের কথা বলতে গিয়ে মানুষটি নিজেকে সমষ্টিতে বদলায়

আমাদের লেখাপড়া ছিল অল্প
বাঁচার সংস্থানগুলো অত্যন্ত কঠিন
এত অবসর ছিল না বসি তর্কে
ছাই হওয়া অব্দি ঘুরি নিরুদ্দেশ
ঠাসা জনবহুলে পালিত আমাদের শরীরগুলোয়
এত কোলাহল ছিল এত ইচ্ছে ছিল
যে, সেই যে এক শূন্য ভয় ধরা শুরু করে
প্রেমের সঙ্গে সঙ্গে
অজানাই প্রায় রইল আমাদের

যেন বিয়েই ছিল লক্ষ্য
সাধন, আমাদের আগামী সফরের

এই অংশের প্রথম দুটি পংক্তিতে সে নিজের রোজগার ও জীবনযাপনের সমষ্টিগত আর্থিক সীমারেখাগুলি নির্দেশ করে। পরের দুটি পংক্তিতে সে বুদ্ধিজীবীতা এবং প্রেমোন্মাদ (দিব্যোন্মাদ / দিওয়ানগী অথবা বোহেমিয়ানিজম ৬০ / ৭০-এর দশকে বিশেষ করে, বুদ্ধিজীবীতারই পরিপূরক) থেকে নিজের সমষ্টিকে আলাদা করে। প্রেমের ব্যাপারে নিজের চিন্তাভাবনা স্পষ্ট করতে কবিতার শুরুতে সে যেমন মহানগরীয় কুলীনতা এবং রোমান্টিকতা থেকে নিজেকে আলাদা করে নিয়েছিল (মিথ্যে বিনে / চাঁদ বিনে আকছার) এখন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর জীবনদর্শন / প্রেমদর্শন থেকে নিজেকে আলাদা করে এই বলে যে যেহেতু তাদের শরীর ঠাসা জনবহুলে পালিত, তাই এত কোলাহল, এত ইচ্ছে আছে তাতে যে শূন্য ভয়-এর কোনো জায়গাই নেই। বরং সাদামাটা বিয়েই এই প্রেমের লক্ষ্য, অভীষ্ট এবং আগামী সফরের সাধন।

আলোকধন্বার সব কবিতার মতো এই কবিতাও যেহেতু কোনো একটা চলমান বিতর্কের মাঝপথে হস্তক্ষেপ করে, তাই এই কবিতাতেও প্রতিটি পংক্তি একেকটা counter-statement to join the issue। এবং যেহেতু কবি নিজেই transmutate করে এই দ্বিতীয় সত্ত্বায় এসেছেন তাই যে প্রবৃত্তিগুলো থেকে নিজেকে এই মানুষটি বিযুক্ত করেছে সেগুলো সম্পর্কে দেখা যায় সে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল। এই ambiguityটা এড়াতে কবিতায় একটু বেশিই ব্যবহার হয়েছে আকছার, প্রায়, যেমন ইত্যাদি শব্দগুলির। তারপর

টাটকা নিশ্বাস নেওয়া বস্তিগুলো থেকে বাইরে বেরিয়ে উঁচুতে তৈরি, আদ্ধেক দেয়াল তোলা ফুটপাথের আকাশটার সঙ্গে গলাগলি করা এই প্রেমিকের বিয়ের কথা পাকা হয়ে যায় কেন না

ঘরের লোকগুলোও শিগ্‌গির
রাজি হয়ে গেল
মেহনতের রুটি খেতে অভ্যস্ত আমাদের পরিবার
ছিল না এত জটিল এত পাষাণহৃদয়
এতটুকুও অপরিচিত
          ছিলাম না তাদের কাছে আমরা
নির্দোষ মানুষ হওয়া আমাদের
তাদেরো রক্তে ছিল মজুত

পংক্তিগুলোয় underline আমার করা। পরে প্রয়োজন হবে ফিরে তাকাবার।

পাঠকের যাতে ভ্রান্তি না হয় যে দাম্পত্যের অর্থ প্রেমের মৃত্যু অথবা প্রেম দাম্পত্য থেকে ভিন্ন কিছু, কবিতার প্রথম পুরুষ কবিতার শেষের দিকে এগোতে এগোতে বলছে, বিয়ের পর ঘরগেরস্থালি গোছাতে গোছাতে প্রেম করছি আমরা এখনো

শেষে, এই প্রথম পুরুষ কবিতা থেকে এক্‌জিট নিচ্ছে এই বলে যে, সে আজকাল আশেপাশের রঙরুট প্রেমিকদের সাহায্য করতে মোটরের চাকা বদলে / ইঞ্জিনে তেল ভরে তৈরি থাকে।

এই শেষ বাগ্‌রীতি, সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকার কাব্যিক ইংগিতের সঙ্গে সঙ্গে জানি না কেন আমার মাথা এক শ্রেণীক-সাংস্কৃতিক ইংগিতে বিদ্ধ করে যায়।

আমি পূর্ব পাটনার বাসিন্দা, সিটি চওক, চওক শিকারপুর হয়ে নিচল্‌কি রোড (নিচের রাস্তা) দিয়ে ফিরতে ফিরতে, অটোড্রাইভারের ডানদিকে অর্ধেক বসে কথা বলতে বলতে, দক্ষিণ এশীয় সন্ধ্যার জনপদীয় ভিড়ের কোলাহলে ডুবতে ডুবতে, সামনের কাঁচে লাগানো স্টিকারে একটা সস্তা শের বারবার পড়তে পড়তে এই কবিতায় এর এক্‌জিট দিয়ে প্রবেশ করি।

নিজেকে প্রশ্ন করি, ১৯৯৬ সালেই এই কবিতা কেন লিখলেন আলোকধন্বা? কেন এই মানুষটিকে নিজের দ্বিতীয় সত্তা ভাবলেন? কে এই মানুষটি? এই যে আমার বাঁপাশে থাকা অটোড্রাইভার, এই সেই মানুষ নয় তো, যার সঙ্গে কবির সাংস্কৃতিক মুখোমুখি (interface) পঁচিশ বছর পরে হল?

পাটনা এক আজব শহর। এত প্রাচীন তবু গ্রামের মতন। শুধু এই জন্য নয় যে রাজপথের দোকানপাট ছাড়িয়ে ভিতরে ঢুকলে দেখা যায় পাড়ার ভিতরে টোলা ভাগ করা আছে। অথবা শিক্ষা-স্বাস্থ্য-রোজগার-বিবাহ-সরকারের সঙ্গে নৈকট্য-দূরত্ব, আস্থা-অনাস্থা জাতের সঙ্কেতে গতিশীল হয়। শহরটির নগরায়নের প্রসার আজ যখন বিশ্বায়নের অর্থনীতি কর্তৃক সঞ্চালিত, উন্নয়নী মেক-আপে ব্যস্ত, তখনও সেই প্রসারের বুনটটা গ্রামীণ বিহারকেই যেন আরো বেশি করে আঁকড়ে ধরে।

সে যা হোক, পুরোনো বাসিন্দারা জানে, পাটনা খুব রোমান্টিক শহরও ছিল একসময়। মহানগর থেকে ভিন্ন এর রোমান্টিকতার ভয়ানক বিশ্লেষ খেয়েও ফেলেছে অসাবধান মানুষদের। কম কথা নাকি? বিশ্বের প্রথম রাষ্ট্রশক্তির পত্তন এই শহর! বৌদ্ধ শ্রমণদের প্রধান তীর্থপথ! এর পুরোনো পাড়ার নামগুলোর বিষয়ে ভাবুন তো! রাণীপুর কি খিড়কি, ফসাদ কা ময়দান, কৈমাশিকোহ, কোটগশ্ত, পাদরি কি হাওয়েলি, মোগলপুরা, গুড় কি মন্ডি, পত্থর কি মসজিদ, পশ্চিম দরওয়াজা ইতিহাসের অন্তর্ধারা থেকে বেরিয়ে আসা এতগুলো পাড়ার নাম একসঙ্গে খুব কম জায়গায় পাওয়া যাবে। তারপর ঔপনিবেশিক যুগ। বাঙালি, বাঙলার সংস্কৃতি-সাহিত্য। শ্রীকান্ত তো সেই পথ দিয়েই গিয়েছিলেন রাজলক্ষ্মীর কাছে, যে পথ দিয়ে কয়েক শো বছর আগে চীনা পরিব্রাজক গিয়েছিলেন। সৈয়দ হাসান আস্করি (প্রখ্যাত ইতিহাসবিদ) সাহেব কিছু কাজ করেছিলেন এই শহরের পাড়ার নামগুলোর উৎপত্তি (etymology) নিয়ে। বাঁকিপুর নাকি কলিঙ্গের রাজকুমারী, সম্রাট অশোকের দয়িতা কৌরবকির নামে, তিনি বলেছিলেন।

মোটেই সুস্থ রোমান্টিকতা নয়। আধুনিক শিল্প গড়ে ওঠেনি তাই শিক্ষা, রোজগার, সফলতার তাগিদে প্রজন্মের পর প্রজন্ম পাড়ি দিচ্ছে দিল্লী, কলকাতা, মুম্বই, চেন্নই, ব্যাঙ্গালোর।

তাহলে কি শুধু এই শহরের পিছিয়ে থাকার গল্পের ইতিহাসাশ্রয়ী রোমান্টিকতায় আক্রান্ত মানুষেরা এখানে থেকে যায় জলকুম্ভির ফুল, তাড়ির ঠেক, ছেঁড়া খবরের কাগজ, পলিথিন আর ধোঁয়ার ভিতরে?

আসলে এসবেরই কেন্দ্রে আছে ওই মানুষটির কঠোর বাস্তব। যেমন দৈত্যের প্রাসাদে, সরোবরের নিচে কৌটোবন্দি থাকে দৈত্যের প্রাণভোমরা, তেমনই এই রোমান্টিকতার জীবন ও মৃত্যু একই সঙ্গে ওই মানুষটির মুঠোয়।

সৈদপুর গলি, মুসল্লহপুর হাট, শাহগঞ্জ, মহেন্দ্রু, ভিখনাপাহাড়ি, চাঁইটোলায় লক্ষ লক্ষ পরিচয়ে সে ছড়িয়ে রয়েছে।

বা শুধু এখানেই কেন? ভাগলপুরে, সিওয়ানে, গয়ায় মুঙ্গেরে, আরায় সব শহরেই সে আছে।

শিল্প নেই এসব শহরে বা আশেপাশে। কাজেই খুব সংগঠিত শ্রমিকশ্রেণী সে নয়। সংগঠিত কর্মচারীদের মধ্যেও তার উপস্থিতি নেই। কিন্তু অসংগঠিত শ্রমজীবী এক বিশাল সংখ্যক জনসমুদায় যারা এই সব শহরে (এবং দেশের মহানগরগুলোতেও) ছোট ছোট রুজিরোজগারে জীবনযাপন করে তাদেরই সে একজন।

বড় বড় আন্দোলনে সমাজের বড় উদ্বেগগুলির পাঠ নেওয়ার সৌভাগ্য তার হয় নি। তাকে শিখিয়েছে ম্যাটিনি শো। কোনো প্রতীকী অর্থে নয়। যা কিছু তার আশেপাশে ছিল, তাতে নতুন মূল্যের অভিঘাত এনেছিল পঞ্চাশ, ষাটের দশকের সিনেমা ম্যাটিনি শো। সেই শিক্ষাকে সে জারিয়েছে ইয়ারদোস্তদের সঙ্গতে, চায়ের দোকানে, খবরের কাগজে, চোলাইয়ের ঠেকে অথবা মন্দিরের বা মসজিদের সৎসঙ্গে, কখনো-সখনো জাতের বা সম্প্রদায়ের মুখিয়ার ভাষণের পরিপ্রেক্ষিতে। আর কঠিন জীবন সংগ্রামে।

বাঁচার জন্য সংস্কৃতি জরুরি। সংস্কৃতি অর্থে মানুষ যাখানে আছে, যেমন পরিস্থিতিতে আছে, সেখানে মানুষেরই মত আছে এটা বুঝবার এবং বোঝাবার জন্য জরুরি মূল্য-অভিব্যক্তিগুলির সমষ্টি।

তার সমুদায় এই মূল্য সমষ্টি আহরণ করেছে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে বিভিন্ন উৎস থেকে আহরণ করে। মধ্যযুগীন নাগরিক অবশেষ, গ্রামের ভর্ৎসনা, ঔপনিবেশিক চমক ও চুক্তি, স্বাধীনতা আন্দোলনের সাড়া। এরই মাঝামাঝি পর্যায়ে সবচেয়ে নতুন সাংস্কৃতিক হস্তক্ষেপ ঘটলো সিনেমার। সেলুলয়েডের জীবন হৃদয়ের নিবিড়ে পৌঁছে দিল বুর্জোয়া মানবতাবাদী মূল্যজগত।

নানাধরণের ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে তারা নিজেদের জন্য এক শহুরে লোকসংস্কৃতি তৈরি করে নিল যার নিজস্ব, কুগঠিতই সই, নৈতিকতা ছিল, নিজস্ব চুক্তি ছিল। বিদ্রোহ ছিল, সমর্পণ ছিল, ভালো আর খারাপের নিজস্ব সমঝদারি ছিল।

একটু ভাবুন, সমাজবদলের প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক চিন্তাকাঠামোয় শ্রমিক, কৃষক, আমজনতা, শ্রমজীবী ইত্যাদি শব্দসমূহের অর্থনির্দ্ধারণ প্রসঙ্গে (বিশেষ করে সাংস্কৃতিক দিক থেকে) আমরা কবে এই সম্প্রদায়টিকে আলাদা করে এঁকেছি?

চিহ্নিত করেছি?

যদিও এই সমুদায়ের কিছু কিছু অনশ বিগত কুড়ি পঁচিশ বছরে নিজেদের বেশ ভালো সংগঠন গড়ে নিয়েছে তবু এদের কাজের প্রকৃতিটাই এমন যে এদের চেতনার উন্নতি, সামগ্রিক আন্দোলনের গভীরতার ওপর অনেকখানি নির্ভর।

তাই এই প্রশ্নটায় জোর দিচ্ছি যে এদের মধ্যে সংগ্রামী চেতনার বিকাশ কতখানি, তা থেকে এদের বিকাশ-চেতনায় সংগ্রামটার স্বরূপ কী, জানা কি বেশি প্রয়োজনীয় নয়? এদের জীবনযাপনে তৈরি হতে থাকা শহুরে লোকসংস্কৃতির স্বরূপ এবং দ্বন্দ্ব নিয়ে কি সেই ধরণের চিন্তাভাবনা হয়েছে যে ধরণের চিন্তাভাবনা গ্রামীণ লোকসংস্কৃতির স্বরূপ, তার মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ, গণতান্ত্রিক মূল্যগুলির সমাবেশ ইত্যাদি নিয়ে হয়েছে?

এইসব অটোচালক, ড্রাইভার, গ্যারেজকর্মী, প্রেস, বাঁধাই, নানারকম মেরামতির কারখানার শ্রমিক, কারিগর, ফেরিওয়ালা, ঝি-চাকর, খুব ছোট দোকানদার, আরো কত বিভিন্ন পেশার মানুষজন! পেশায় সর্বাধিক বিবিধতা থাকা সত্ত্বেও, অসংগঠিত হওয়া সত্ত্বেও এবং আয়ের বিভিন্নতা থাকা সত্ত্বেও এদের একটা স্থানীয় সামুদায়িক জীবন বহু দশক যাবৎ দেখা যায়।

আমরা তো প্রথমবার এই ম্যাটিনি শো ধরা প্রেমিককে দেখলাম ভাবকাঠামোগত এক বিস্ফোরণে ৬ই ডিসেম্বর ১৯৯২-এ। ৭ই ডিসেম্বর, ৮ই ডিসেম্বর, ৯ই ডিসেম্বর ভারত বন্ধ আর কারফিউয়ের মাঝে সেই পুরোনো মোহল্লার গলিগুলোতে তাকে ফিরতে দেখলাম পেটে খিদের মোচড়, জিভে থুথু, তবু চোখে সামূহিক শক্তির মুখরতা। মাথায় জয় শ্রীরামের ফেট্টি। পকেটে বাবরি মসজিদের নোনাধরা পাটকেল।

আমরা তো খেয়ালই করিনি ৬০, ৭০, ৮০, ৯০-এর দশকগুলোয় কত দ্রুত পাল্টে গেছে সে! সেক্যুলর, লিবারাল বিশ্লিষ্টতা জিও অওর জিনে দো থেকে সাম্প্রদায়িক হিংস্র সংশ্লিষ্টতা, রামললা হম আয়েঙ্গে, মন্দির ওয়হিঁ বনায়েঙ্গের দিকে এগিয়ে গেছে। এগিয়েছে সেই ম্যাটিনি শো, চায়ের ঠেক, খবরের কাগজ, ইয়ার-বন্ধুদের সঙ্গ, মন্দির মসজিদের সৎসঙ্গ আর জাত, ধর্মের মুখিয়াদের ভাষণ ধরেই।

সত্যি বলতে, সাম্প্রদায়িক সে তখনও ছিল না। হিংস্রও নয়। তার সংশ্লিষ্টতার অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য রিপাব্লিকান ছিল। অবশ্যই সে মসজিদ ভাঙতে গিয়েছিল। কিন্তু এই জন্য নয় যে মসজিদ মুসলমানদের উপাসনার জায়গা, পবিত্র জায়গা। এই জন্য তো নয়ই যে মসজিদটি নাকি বাবর তৈরি করিয়েছিল। সে তো নিজে মুসলমানও ছিল নিজের সমষ্টিগত সাংস্কৃতিক পরিচয়ে। খিদে মানুষকে পশু করে। কিন্তু সে তো জানে পশুত্ব কী আর মনুষ্যত্ব কী! হ্যাঁ, আগেও বেশ কয়েকবার খিদের মুখে শাসকের চাবুক তাকে পশু করে ছেড়েছিল। কিন্তু, এবার সত্যি বলতে সে শাসকেরই মাথা ভাঙতে গিয়েছিল। যে শাসকের কাছে ভাত নেই, পাথর রয়েছে। ভাতের অভাবে শাসকীয় গৌরব জাহির করা অজস্র প্রতিমা ও পাথরচুড়োর মধ্যে, তাকে কানে কানে বোঝানো হয়েছিল, অযোধ্যার ওই চুড়োয় চড়া সবচেয়ে সহজ, ভেঙে মনের ঝাল মেটাতে পারবে।

ম্যাটিনি শো দেখা মানুষটি, পুরোনো ভাঙা ট্রাকের পিছনে প্রেম করা, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কঠোর জীবন বাঁচতে থাকা মানুষটি এই হিন্দের প্রাচীন শহরগুলোয়, জনপদগুলোয় যে শহুরে-লোকসংস্কৃতির জন্ম দিয়ে চলেছে, সে লোকসংস্কৃতি নিজের বনিয়াদে আজও লোকায়ত, ধর্মনিরপেক্ষ এবং রিপাব্লিকান। রিপাব্লিকান বলতে প্রয়োজনে শাসন-বদল ঘটাতে জবরদস্ত লড়াকু। জাত, ধর্ম ইত্যাদির প্রশ্নগুলো সে ভালোবাসা ও সমঝোতার মধ্যে দিয়ে, পারিবারিক কল মেটানোর মতো করে সমাধান করে চলেছে। তাও বহু বছর ধরে, শহরগুলোর শহর হওয়ার সময় থেকে।

এবং তার ওই নির্দোষ মানুষ হওয়া তার পরিবারের রক্তেও মজুত ছিল কেননা ত্র পরিবার মেহনতের রুটি খেতে অভ্যস্ত। তারা জটিলও নয় আর পাষাণ হৃদয়ও নয় যে মনুষ্যত্বকে বারবার মরতে দেখবে

সবশেষে নিজেকে করা প্রশ্নটির জবাব এভাবে খুঁজে নিই যে ১৯৯২-এর ৬ই ডিসেম্বর, অতি সংবেদনশীল কবিহৃদয়কে নিশ্চয়ই ঠেলে দিয়েছিল সাংস্কৃতিক আত্মমন্থনের ঘূর্ণাবর্তে (প্রমাণ অন্যান্য কবিতা যেমন, কিসনে বচায়া মেই আত্মা কো)। সেই মন্থনের প্রক্রিয়ায় কবির মুখোমুখি এসে থাকবে মানুষটি।

কবি নিজেও তো ম্যাটিনি শো দেখেছেন বছরের পর বছর, এরই সঙ্গে বসে। আগে এভাবে, সব হারাবার মত করে বোঝেন নি এই তাঁর সাংস্কৃতিক শক্তির, তাঁর কাব্যের তারুণ্যের বেসিক রিপজিটরি, মূল আধার।

----------------------------------------

১। যদিও হিন্দিতে উচ্চারণ ধনোয়া, নামটা আসলে আলোকধন্বা, আলোর ধনুক ধারণ করে যে জন; কবি রামধারি সিং দিনকর নামটা রেখেছিলেন প্রথম পরিচয়ের দিন।

২। রেখতা উর্দুভাষার পুরোনো নাম বা পুরোনো উর্দু।

৩। এখানেই সমাধান যোগায় ভারতের মত দেশে, বাজারবাদী বিশ্বায়নের ভাষায় আই লাভ ইউ। ভাষার খুটঝামেলা শেষ। কুলীন, ঔপনিবেশিক। কাজেই শুদ্ধতা নিয়ে হীনতাবোধটা ঝেড়ে ফেলা যায়।

৪। ঠিক এ জায়গাটিই কিন্তু জিয়নকাঠি। মনের ভিতরে অনুভবও করেছি কিন্তু তবু উপেক্ষা করে গেছি। একটা উদাহরণ দিচ্ছি। হিন্দির খ্যাতনামা ফিল্মী গীতিকার শৈলেন্দ্র শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামের সঙ্গে জড়িয়ে ছিলেন বেশ গর্ব করে বলি। তাঁর ফিল্মবহির্ভুত গানগুলো, বিশেষ করে আন্দোলনের জন্য যেগুলো লেখা, সভা-সমিতি, অনুষ্ঠানে গাই। কিন্তু সেই শৈলেন্দ্রেরই ফিল্মের জন্য লেখা অসাধারণ মানবিক আবেদনসম্পন্ন গানগুলো নিজেরা শুনি, পাগল হই কিন্তু সভাসমিতিতে গাই না। কেন? না, ওগুলো সংগ্রামী গান নয়। আর সংগ্রামী গণসঙ্গীত গায়ক ভূপেন হাজারিকা জয় শ্রীরাম হয়ে যান।

৫। এমনিতেই ৯০-এর দশকের শুরুতে সোভিয়েত পতন আমাদের চিন্তার কাঠামো নড়বড়ে করে দিয়েছিল। দুবছরের মাথায় বাবরি ধ্বংস বুঝিয়ে দিল শ্রমজীবী আত্মপরিচয় ও ইতিহাস-পরিচয়ের ওপর হামলা কত সংগঠিত ভাবে চালাতে সক্ষম সাম্রাজ্যবাদ। (গর্বের সঙ্গে ৭০ বছর ধরে বলেছিলাম, আমরা শ্রমিক। তাকে ভাঙতে শুরু হল গর্বের সাথে হিন্দু বলা, গর্বের সাথে মুসলমান বলা, গর্বের সাথে আগড়ি জাত, পিছড়ি জাত বলা নিজেদের। Identityর fragmentation-এর এই ষড়যন্ত্রটাকে ঢেকে দিল multiple identity-র নব আবিষ্কৃত ন্যায়সঙ্গতি।)  

----------------------------------------

[বোধহয় ২০১১-১২ নাগাদ শব্দহরিণ পত্রিকায় প্রকাশিত]




No comments:

Post a Comment