Monday, September 30, 2024

রাজত্ব তো আছেই

নিচুঘরের মেয়ে ছিল তো!
খাবলে-খুবলে ক্ষান্ত হয়ে
চান কর নি?
পাপ হবে যে!
গঙ্গাজলটা ছিটিয়ে নাও বরং,
তুলসি রাখ মাথায়, আহা
বলতে চাঁদের ছেলে তোমরা
এট্টুআধটু সুখ নেবে না?

কথায় বলে নীচজাত
তার মেয়ের আবার নষ্ট!
বাপের-মায়ের কষ্ট!

না না,
মেরে ফেলেও বেশ করেছ
দোষ নেই শাস্ত্রে!
ওসব কাজেও নেই,
ধর্মই, বয়সের, শুধু
ছোঁয়ার দোষটা কাটতে
গঙ্গাজলের বিধান।

আপাততঃ থাক জেলে
সুরক্ষিত,
সময় হলে বেরিয়ে এস,
চিন্তা নেই।

এসব দেখতে
রাজত্ব তো আছেই!
আছে কিসের জন্য?

স্মৃতি সংগঠিত হও

যদি বল জ্যোৎস্না রাত
চাইব দিদিদের ছায়ায় ভরা জোড়া-ছাতের
 সেই সফেন গুঞ্জন
যার শহর ছিনিয়ে নিয়েছে দেশভাগ।
জ্যোৎস্নায় যে ট্রেনটা গতি কমিয়ে থামল
তার ভিতরে-বাইরের জমজমাট
ঘরে ফেরা ঘামের
অথবা ঘরছাড়া রুটির গন্ধ
টুপটাপ ছড়িয়ে পড়ছে এদিক ওদিক
একটি লন্ঠন ইঞ্জিনের দিকে যাচ্ছে …
যদি বল জ্যোৎস্না রাত
আমি ওই ট্রেনের শূন্য কামরায় সটান শুয়ে
দুপুরের গলিটা ভাবব 
যাতে খেলনাওয়ালা সবুজ করে তুলত
সেই প্রশ্নগুলো যা আমাদের
উত্তরের নিচে পিষছে, অনির্দিষ্ট কোমলতা হয়ে।

২৫.৭.১৯৯৭

Friday, September 27, 2024

বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে

বৃষ্টি তো তেমন জ্যাঠামশাই নন যে রাগাশ্রয়ী
গান চাইবেন প্রতিবার! আর সত্যি কোনোদিন
ভিজতে ভিজতে স্টাইলে দুহাত দুদিকে ছড়িয়ে
গান গেয়ে দেখো আকাশের দিকে চেয়ে! চোখে মুখে
অবিরল ফোঁটাগুলো না দেখতে দেবে না গাইতে!
এমনকি স্লোগান তুলতেও নোয়াতে হবে ঘাড়!
বস্তুতঃ নোয়ানো ঘাড় বহুকাল যাবৎ মাথাটা
বহু ক্ষেত্রে উঁচু থাকার লক্ষণ! খরজের সা
নিংড়ানোর হৃদয় খোঁজা কন্ঠস্বরটাকে ভাবো তো,
কানাড়ায়, তাও দরবারী! বৃষ্টি তো সমগ্রতায়
ধরে, বেঁচে থাকা আমাদের নীরবতার প্লাবনে
এক পৃথিবী স্বপ্নমুখর গৃহযুদ্ধ মানুষের!
     
আমরা আমাদের নিভৃত কথোপকথনে, এসো,
গভীরতর বৃষ্টির গিঁটগুলোর দিকে এগোই। 

২৭.৯.২৪

 

সতীনাথ

আপনি আমাদের, বিহারিদের গর্ব সতীনাথ!
সে হই না আমি নীলুদের দলে, আপনি বিজুর,
এই লড়াই, ভ্রাতৃত্বও তো খাস এই অঞ্চলের!
যে মাথা নিয়ে ঢোঁড়াই এগিয়েছিল পাক্কিতে শেষে,
স্বাধীনতার দুর্জ্ঞেয় রোদে, সে রোদেই আরো গিয়ে
আজ আঁধারের ঘুর্ণাবর্তে ঘুরছি দৃষ্টিবিচ্যুত!
 
ভালোবাসা নেই তাই বল নেই, অর্থ নেই, একে একে
হারিয়ে ফেলছি বাসস্থানগুলো পূর্ণিয়ায়, দ্বার-
ভাঙায়, ভাগলপুরে আপনার, বিভূতিবাবুর,
বনফুলের! তবু আপনাদের স্মরণ করেই
লড়ছি; বাংলার, বাংলাভাষীর দাবীগুলো জানাচ্ছি
ডামাডোলে আখের গোছানো প্রশাসনের সম্মুখে!
 
বিকেলে রেলপথের পাশে দেখি আপনি দাঁড়িয়ে
এক্টিভিস্ট! দুদিন পর চেলা রেণু নেপালে যোদ্ধা!   

২৭.৯.২৪ 

 

Tuesday, September 17, 2024

উন্নয়নী

লোকে এতো স্বপ্ন খায় উন্নয়নী! পরিকল্পনায়
হয়তো হওয়ার ছিলো চওড়া নতুন রাজপথ;
সে আর হয় নি, বাতিল বন্ধ রাস্তায় ঘেঁজে ওঠা
পাড়াগুলো, চাউর হল নব্বই, সত্তর ফিট নামে।
খবরের কাগজে বেরোয় দুটো শিশু মৃতদেহ
পাওয়া গেছে সত্তর ফিটে; না, ওপাড়ার নয়
তবে কোন পাড়ার, কোথায় তাদের মা-বাবা?
 
সে বন্ধু থাকলে বলত! – থাকতো একটু এগিয়ে;
রাস্তা নেই; মামলা চলছে, পাঁচিল টপকে পৌঁছে
শুনতাম তার আইনি টেক্কা, বন্ধুপত্নীর প্রশ্ন,
চা খাবে?” ... সে বন্ধু ক্যান্সারে মৃত্যুকেও কুযুক্তির
টেক্কায় মারতে অবিরাম সিগারেট ফুঁকে গেল!
 
উন্নয়নী স্বপ্নের ধুলোয় শ্বাসকষ্টে পাড়াগুলো
মরে মরে জায়গা করে দেয় আরো উন্নয়নের।

১২.৯.২৪

 

Wednesday, September 11, 2024

গ্যালিপ্রুফ

গ্যালিপ্রুফের কাগজগুলো ব্লিচ হত না কখনো।
কালিও সস্তায় ঘরে তৈরি হয়ে যেত প্রয়োজনে।
কাঁচা ছাপা একটু না শুকিয়ে নিলে কালো ছোপে
ভরে দিত শীতের চাদর, ওমে ধরা নোনা গন্ধ
ঘর্মাক্ত ভালোবাসার।
                           ভাঙাচোরা সীসের অক্ষরে
দুনিয়ার লড়াকু সমঝদারি, রাত জেগে লেখা!
সে এক অবিস্মরণীয় দেখা নিজেকে মুখোমুখি
পৃথিবী অনেকটাই ছিল সহজ, অন্যরকম।
 
তেমনই মনে হয় চিরকাল সদ্য চোখ ফোটায়!
ভুল শুধরোচ্ছি; সময়কে গালতে দেব না চোখ!
প্রেসঘরে ঘটাং ঘটাং ট্রেডলের শব্দে ভরা ঘুমে,
বহু রাতের দুঃস্বপ্নে পেরিয়ে ছড়ানো ছেঁড়া প্রুফ,
পারবো আরো একবার নিজের সামনে দাঁড়াতে?
একদৃষ্টে ল্যাপটপে অক্ষরের দিকে চেয়ে থাকি।

১১.৯.২৪