ভারতী প্রিন্টিং প্রেস
কন্যা
বিদ্যালয়ের মোড়টা বার বার ফিরে আসে। যখন নাকি ওই বিদ্যালয়ের কন্যাদের দিকে তাকাইও নি।
এখনও কাউকে চিনি না যে ছোটোবেলায় ওই স্কুলে পড়ত। না, তেমন কিছু ‘ভালো ছেলে’পনার ব্যাপার নয়, মনে একটা অহংকার ছিল যে আমার
খাস আপন বলতে অন্য কেউ আছে।
সেই
কবে থেকে! প্রথম সিনেমার ‘হিরোইন’ দেখতে ছুটেছিলাম ছোটোবেলায় – ‘কুমুদ ছুগানি’ – কোথায় না, কন্যা বিদ্যালয়ের সামনের পুরোনো
বাড়িটায়। গোয়ালার জল-মেশানো দুধ ছেড়ে বাবা রাগের চোটে ডেয়ারির দুধ আনতে আমায় পাঠাতে
শুরু করল, সে বুথটাও কন্যা বিদ্যালয়ের লাগোয়া। বাইরে থেকে আসা মাস্তুতো দিদির সাথে
সকালে ঘুরতে বেরিয়েছিলাম। একটা বাজে লোক দিদির গা ঘেঁসে বেরুলো সাইকেলে। এগিয়ে গিয়ে
পিছন ফিরে চোখ মারল। আমিই বরং দিদিকে নিয়ে এড়িয়ে যেতে চাইছিলাম। দিদি চটি খুলে তাড়া
করল, তুখোড় হিন্দিতে গালাগাল দিতে দিতে। কানপুরের মেয়ে। লোকটা ঊর্দ্ধশ্বাসে সাইকেলে
প্যাডেল মেরে পালালো। এটাও হল সেই কন্যা বিদ্যালয়ের মোড়ে। তারপর কত বছর! পাড়া ছেড়ে
গেছে। বন্ধুসমাজ বদলে গেছে। একদিন, পুরোনো পাড়ায় পার্থর সাথে দেখা করতে গেছি। বললাম
যে আমাদের নতুন বন্ধুদের সঙ্গে আজকাল ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত নিয়ে চর্চা হয়। এসব সেসব আমরা
শুনি রাতের পর রাত। আমার সাথে সন্ধ্যায় হাঁটতে বেরিয়ে ও নিয়ে গেল সেই কন্যা বিদ্যালয়ের
মোড়ে। আমাদের গ্রুপ থেকে আলাদা থাকা একটি ছেলে, অনুপের বাড়ি। তাকে ডেকে নিয়ে এল নিজের
বাড়িতে। পার্থর দোতলার ঘরে ক্লাসিক্যাল গান শুনিয়ে অনুপ আমাকে অবাক করে দিল, “মোহম্মদশাহ রঙ্গিলে” … এত বছর আমাদের আড্ডাবাজি থেকে আলাদা থাকত
কারণ সে নাকি গান শিখছিল! “… মেরে দিলি বস্!” … তারও
কত বছর পর! শুনলাম শঙ্করদা নাকি রিটায়ার করছেন। রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের সংগঠনে সর্বমান্য
পার্টি নেতা। পিপলস ডেমোক্রেসি আর লোকলহর বিক্রি করা তাঁরই জিম্মায়। কেউ বলেছিল নাকি
নিজের থেকেই গিয়েছিলাম তাঁর বাড়িটা কোথায় জিজ্ঞেস করে – রিটায়ারমেন্টের পর তাঁকে নতুন কিছু কাজে জড়াবার
জন্য। কোথায়? সেই কন্যা বিদ্যালয়ের মোড়ে। শঙ্করদা থাকলেন না। একমাত্র মেয়েটিকে নিয়ে
চলে গেলেন ফালাকাটায়, তাঁর ভাইদের কাছে।
‘অভিযান’ হাতে লেখা পত্রিকাটা ওই, কন্যা বিদ্যালয়ের দিকে কোনো একটা বাড়িতে
থাকা অন্য এক পার্থর উদ্যম ছিল। সঙ্গে ছিল আরো কয়েকজন। তার মধ্যে ছিল আমার বন্ধু পার্থও
আর সে-ই পরিচয় করিয়ে আমাকে শামিল করাতে নিয়ে গিয়েছিল। কাঁচা রাস্তায় জমা জল মাড়িয়ে
সেই পার্থর বাড়িতে পৌঁছেছিলাম।
তারপর যা হয়। ছুঁচ
হয়ে ঢুকলেই ফাল হয়ে বেরোতে চাওয়া অথবা লোককথার উটের মত, তাঁবুতে মাথা ঢোকাবার জায়গা
দিলে শেষে মালিককেই গুঁতিয়ে বার করে নিজের পুরো নধর বদন লগবগ করে পেড়ে ফেলা বিছানায়।
তাই কি ছিল? মনে
নেই। হয়ত, ওরাই বলেছিল, পত্রিকাটা বার করতে অসুবিধে হচ্ছে, হাত লাগাতে। নাকি সেই পার্থর
চাকরি হয়ে গিয়েছিল কোথাও। যাই হোক, লব্বোলুবাব, ফল হল যে আমি ঢোকার পর হাতে লেখা সংস্করণ
একটাই বেরুলো। সেটা এখনো আমার কাছেই আছে কোথাও না কোথাও। সিদ্ধান্ত নেওয়ালাম যে ছাপা
হবে। নিজের ঘাড়ে দায়িত্ব নিয়ে চলে গেলাম ভিখনাপাহাড়ি, ভারতী প্রিন্টিং প্রেস, তারা
বাংলা ছাপে খবর পেয়েছিলাম। (সেই প্রথম গেলাম ভিখনাপাহাড়ির মোড়ে। পরে অনেকটা জীবন ওই
পাড়ার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল)। এখন মোড়ের সেই বাড়িটাও কি আর আছে? যাতে সৌম্য চেহারার
বুড়ো মালিক বসতেন এবং ঘর ভরে সীসের টাইপে আঙুলের খড়খড় আওয়াজ তুলে কম্পোজিং চলত। ঘটাং
ঘট ঘটাং ঘট করে ট্রেডল চলা শুরু করত গ্যালি প্রুফ ছাপতে এবং ময়লা টানা কাগজে ছেপে বেরিয়ে
আসত পত্রিকার ম্যাটারগুলোর প্রথম মুদ্রিত রূপ। ত্রুটি সংশোধন করতে গিয়ে কালির কলমের
কালি ছড়াত অনেক সময় ব্লটিংএর মত।
সেই শুরু হল প্রেসের
কাজের নেশা।
‘ল’ এক পোয়া
প্রেসের
কাজের মত, মানে ছাপাই সংক্রান্ত যাবতীয় কাজের মত সুখ হয় না। কত সময় আমি ফালতু বইয়ের
প্রুফ দেখায় মিছিমিছি নষ্ট করেছি! ভাবতেও অবাক লাগে। কেন? না প্রেসের মালিক, বা ডাটা
সেন্টারের মালিক বন্ধুস্থানীয় মানুষটি হয়তো অনুরোধ করেছিল। কখনো কিছু পয়সাও পেয়েছি
হয়তো, কিন্তু তার কোনো প্রয়োজন ছিল না। চাকরি একটা করছিলামই। এমন কিছু অভাবের সংসার
নয়। কিন্তু ওই যে, দেখতে দেখতে, প্রুফ দেখার চিহ্নগুলো মকশো করা! শিখে নেওয়া! সেটাই
ছিল যথেষ্ট পুরস্কার। একবার তো হাজার পৃষ্ঠার বৌদ্ধসাহিত্য-সম্পর্কিত বিরাট গ্রন্থ
নিয়ে বসে গেলাম, ঝন্টুর কথায়। তাও আবার ছত্রিশ হাজার না কত বৌদ্ধ দেবদেবী, শুভ-অশুভ
শক্তির লড়াই আরো কত সব ব্যাপার! এই নাকি বৌদ্ধদর্শন! তবুও দেখে দিলাম পুরোটা। প্রুফ
শুধরে দিলাম। বোধগয়ার কোনো মঠের মোহান্ত ভদ্রলোক নাকি ঝন্টুকে বলেছিলেন গ্রন্থটি প্রকাশিত
হলে এক কপি আমাকেও পাঠিয়ে দেবেন। কুড়ি বছরেও পেলাম না। লাবণী মারা যাওয়ার পর তার থিসিসটা
প্রকাশ করা নিয়ে কত আলোচনা করলাম তার মা, মানে রাত্রিদির সঙ্গে। পুরো প্রুফটা খুঁটিয়ে
খুঁটিয়ে দেখে সংশোধন করলাম। যাঃ শালা, কবে মাঝখান থেকে অন্য প্রকাশক পান্ডুলিপি কিনে
নিয়ে বইটা বার করে দিল, রাত্রিদি খবরটা দিলেন না পর্য্যন্ত। তবুও কখনো মনে হয় নি, সময়ের
ক্ষতি হল। প্রুফ দেখার সুখটা রয়ে গেছে। আর রাত্রিদির নিজের বইটাও তো। সেটা অবশ্য আমরাই
ছাপলাম। মানে আমার আর পূর্ণেন্দুদার প্রতর্ক সাহিত্য সংসদ। প্রচ্ছদও আমার করা। যদ্দুর
আমি চেক করেছি, একটাও মুদ্রণ-প্রমাদ নেই বইটাতে।
আর প্রুফ
দেখা তো মাত্র একটা কাজ। তাও বাড়িতে বসে করার। আসল সুখ তো প্রেস পাড়ায় বসে থাকার, মেশিনের
ঘটর ঘটর বা গিলোটিনের ঘ্যাঁস শব্দ, কেমিক্যালের গন্ধ, কালি, কাগজের গন্ধ, কথাবার্তা,
ঠাট্টা-তামাশা এসবে বুঁদ হয়ে থাকার। মাঝে মধ্যে মনে হয়, তাহলে কি চাকরি না করে একটা
প্রেস খুলে বসে ব্যবসা করা উচিৎ ছিল? এক জ্যোতিষি নাকি আমার ছোটো বেলায় তাই বলেছিলেন।
যারা
আছে লাইনে তারা জানে যে লেখার যেমন নেশা, আঁতলামোর যেমন নেশা, ছাপার কাজের নেশাটাও
কম নয়। ঠিক পাগলের মত বা উদ্ভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াতে না হলেও নাওয়া-খাওয়া ভুলতে হয়,
জামাকাপড়ে তেলকালি মাখতে হয়, একটু ওস্তাদিও মারতে হয় আর সেটাই আনন্দ। সেটাই ঘোর। এবং
মালটা যথাযথ ছেপে গেলে রাগমোচন।
এটা ঠিক যে আর কেউ
আমার মত এ কাজে বুঁদ হয়ে থাকতে পারত না। গুরুজনদের তো ব্যাপারই আলাদা। গুরুচরণদা, দীপকদা,
ভগবানদা, এমনকি পূর্ণেন্দুদাও ছিলেন ধ্রুপদী যুগের প্রুফ রিডার। বা টেক্সট এডিটর। প্রেসের
লোক বাড়িতে এসে প্রুফ রেখে দিয়ে যাবে, তাঁরা সময় মত দেখে ফোন করবেন প্রেসের লোককে,
সে আবার এসে নিয়ে যাবে। আর আমার নিজের জেনারেশনের বন্ধু কলমবাজেরা, আড্ডায়, সিগরেটে,
লেখার টেবিলে, অনুষ্ঠানে … সব জায়গায় আছে,
প্রেসে যাবার বেলায় কেউ নেই। প্রুফ দেখাও (মানে নিজের লেখা বাদ দিয়ে) তাদের পোষায় না।
আর আমি? লম্বা লম্বা
সীসের টাইপগুলো হাতে নিয়ে দেখা, এক শীর্ষে সূক্ষ্ম উঠে আছে অক্ষর বা অক্ষরাংশ, যতিচিহ্ন
…এক পৃষ্ঠা কম্পোজ হয়ে গেলে গ্যালিটা সুতো দিয়ে
শক্ত করে বাঁধার কাজটা দেখা, ট্রেডলে চাপানোর অপেক্ষা করা, গ্যালি প্রুফের নন-ব্লিচড
হলদেটে কাগজের রোলটা হাতে ঘষে তার অমসৃণ গা’টা বোঝা,
তারপর গ্যালি প্রুফগুলো ঝোলায় ভরে যুদ্ধজয়ের হাসি মুখে পাড়ায় ফিরে আসা, হয় নিজের ঘরে
বা বন্ধুর মেজানাইন ফ্লোরের চিলতে কুঠরিটায় বসে প্রুফ কারেকশন করা … তারপর সেকেন্ড প্রুফ, কখনো থার্ড প্রুফ … তারপর ফাইনাল – ফর্মা সেট
করে ফ্ল্যাট মেশিনে চড়ানো। পৃষ্ঠার কী নিখুঁত হিসেব! কীভাবে বোঝেন ওঁরা! যাতে ভাঁজ
করার সময় ঠিক পরের পর পৃষ্ঠা থাকে – এক, দুই,
তিন, চার, পাঁচ …! ফর্মার বস্তার সাথে বাঁধাইকরের কাছে পৌঁছোন,
ছোট ছোট বাচ্চাছেলেগুলোকে অবাক হয়ে দেখা, কী অভ্যস্ত ছন্দে তারা দুলে দুলে একের পর
এক কাগজের তা নিয়ে স্কেল দিয়ে ভাঁজ করে করে ফর্মা সাজিয়ে ফেলছে! সব সাজান হয়ে গেলে
বাঁধাই। কত রকমের বাঁধাই – ছোটো পত্রিকার জন্য
স্টেপল, তাও দু’রকম, সেন্টার স্টিচ বা সাইড স্টিচ, মোটা বইয়ের
জন্য সেলাই, তারপর আঠা দিয়ে মলাট লাগানো …।
পরে আমি নিজেও বাড়িতে
দুধরণের বাঁধাই নিয়ে প্রয়োগ করেছি। মোটা পকেটবুকের বাঁধাই খুলে গেলে ঝামেলায় না গিয়ে
সোজা ব্যাঙ্কের নোট স্টিচিং মেশিন দিয়ে সাইড স্টেপল মেরেছি, আর মোটা আর্টপেপারের এ্যালবামের
বাঁধাই খুলে গেলে ওস্তাদ দপ্তরির মত পৃষ্ঠাগুলোকে দুই মিলিমিটার জায়গা ছেড়ে ছেড়ে গুছিয়ে,
ক্ল্যাম্প দিয়ে আটকে ফেবিকল লেপেছি। তার পর ক্ল্যাম্প খুলে আবার সমান করে গুছিয়ে ক্ল্যাম্পের
চাপে রেখে দিয়েছি এক ঘন্টা। সে বাঁধাই আজও চলছে।
সে যা হোক, বাঁধাইয়ের
দোকানে সবচেয়ে দেখার মত হয় ফাইনাল পার্টটা। এক সেট বই যখন ভালো করে গুছিয়ে ফেলা হয়
গিলোটিনে – ঘচ, পরিষ্কার মসৃণ প্রেসকাট! তখন তো ফরাসি
বিপ্লবের গিলোটিনের কোনো ছবিও দেখিনি, বাইন্ডারের গিলোটিনটাই জানতাম।
“ম্যানেজার সাহেব, ‘ক’ শেষ হয়ে আসছে, আনিয়ে
নিন আধ কিলো, আর ‘ল’ এক পোয়া” এ ধরণের যে বাক্য যে ডায়লগের অংশ হতে পারে, তা প্রেসে বসেই জেনেছিলাম।
আর তারপর সেই ‘ক’এ বা সমস্ত অক্ষরের
ডিজাইনের কত রকম দেখলাম। দেখতে দেখতে ফুরিয়েই গেল সীসের অক্ষরগুলো। উঠে গেল ট্রেডল
বা ফ্ল্যাট মেশিন। জানি না, পুরোনো পরিচিত কম্পোজিটরেরা তাদের শেষ জীবনের যক্ষ্মা সারানোর
সময় কোনো মাইনে পাওয়া কাজে ছিল কি ছিল না বা মালিক তাদের কত খোরপোষ দিয়েছিল ডিজিট্যালে
যাওয়ার সময়। আমরা তো সহজে পৌঁছে গেলাম ডিজিট্যালে। কম্পিউটারের সামনে বসে, খোলা পেজমেকারে
বা কোরেলে ফাইল দেখতে দেখতে, পৃষ্ঠার লীডের মাপ নিয়ে বচসা করতে করতে পেরোলাম বিদ্যাসাগরের
জন্মের দুশো বছর। ট্যাবে পিডিএফে বই পড়তে পড়তে মনশ্চক্ষে বিদ্যাসাগরকে দেখলাম দুপুরে
কলকাতা থেকে শ্রীরামপুরের অধর টাইপ ফাউন্ড্রিতে যাচ্ছেন, গিয়ে বলছেন, “ক-এ আর কএ মূর্ধণ্যষ খিয়এর আকারে, আকৃতিতে
একটা সমতা থাকবে তো! ইংরেজি টাইপ এত সুন্দর তৈরি হয়! বাংলা টাইপফেসগুলো দেখুন তো, কেমন
ছন্নছাড়া, ছোট, বড়! লাইন সাজাতে বেশি স্পেস দিতে হয়, বইয়ের পৃষ্ঠা সংখ্যা বেড়ে যায়,
দাম বেড়ে যায়! একটু দেখুন যাতে যুক্তাক্ষরগুলো একটু ভালো করা যায়!”
অভিযান
‘অভিযান’এর অবশ্য একটাই সংখ্যা বেরিয়েছিল ভারতী প্রিন্টিং থেকে। আর ব্লক
তৈরি হয়েছিল সৈদপুর গলির মুখে ব্লকের দোকানটায় – মশালের মুখে আগুন জ্বলছে। পরের বার চলে গেলাম বর্মন প্রেস, নালা
রোড। বর্মন প্রেস থেকে বেরোনো তৃতীয় সংখ্যাটার মুখে মানে প্রচ্ছদে রাগি স্বেচ্ছাচার
আনতে, ছাপার পর ডান হাতের পাঞ্জার ছাপ দিলাম লাল কালি দিয়ে; রাতে এক ঘন্টা বসে সব ক’টা কপি দাগালাম।
আর তার পর? তদ্দিনে
আমিও চাকুরে। আটটা-চারটা ডিউটি। তারি মাঝে চুক্তি হল জীবনদার সাথে – রবীন দত্তের কবিতার বইটা করতে হবে। নাম ঠিক করা আছে আগে থেকেই – ‘মানুষের নাম ভূমিকায়’। কাজেই সাইজ পাল্টাবে – ক্রাউন নয়,
ওয়ান এইটথ ডিমাই হবে। কাগজও হোয়াইট প্রিন্ট নয় এ্যান্টিক হবে। বত্রিশ পৃষ্ঠা মানে এক-আট
ডিমাইয়ে দুই ফর্মার বই – প্রথম ফর্মা, এক
থেকে ষোল পৃষ্ঠা সংখ্যা ছাপব আমি মানে ‘অভিযান’ আর দ্বিতীয় ফর্মা, সতের থেকে বত্রিশ ছাপবে ‘সপ্তদ্বীপা’। ‘সপ্তদ্বীপা’ মোটা হয়, সতের-বত্রিশ
খেয়ে নেবে, ‘অভিযান’ দুবলা, কুড়ি পৌঁছোতেই ফুরিয়ে যাবে। পাটনার প্রেসে বাংলার অত টাইপ
কারুর কাছে নেই, কেউ আনিয়ে বরবাদও করবে না, গ্রাহক কই? কাজেই কলকাতা। তবে যেতে হল না।
পান্ডুলিপি পাঠিয়ে দিলাম জীবনদার বলা ঠিকানায়, ছেপে ট্রান্সপোর্টে চলে এল। তখন বর্ষা,
কচি দেবদারু গাছের নিচে দাঁড়িয়ে সিগ্রেট খাচ্ছি, কাজের টেবিল ছেড়ে বেরিয়ে।
অনেকে ছিলাম, আমি,
পার্থ মানে পার্থসারথি মিত্র, সেই পার্থ মানে পার্থ সারথি রায় … প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন অশোকদা (অশোক বাগচি, শ্রদ্ধেয় বিপ্লবী বটুকেশ্বর
দত্তের জামাই), নিতুদা, বাদল (বয়সে একটু বড় হলেও দা বলতাম না) … আর অনেক বড় ছিল উৎসাহী সমাজ। অভিযানের চারটে ছাপা সংখ্যা বেরিয়েছিল।
তারপর তো আমিই চলে গেলাম ধানবাদ।
প্রেসের
কাজে কলকাতা প্রথম গেলাম ধানবাদ থাকতে। সেই প্রেস, যেখানে ‘অভিযান’এর শেষ সংখ্যাটা ছেপেছিল কিন্তু তখন চোখে দেখিনি।
সমস্যাটা একই। ধানবাদে বড় কাজের বাংলা প্রেস নেই। ওখানে অবশ্য দরকারও ছিল না। পাশেই
আসানসোল। তবে আমি সবকিছুতেই স্থানিকতায় বিশ্বাসী বলে ধানবাদেই কাজ করাতে চাইছিলাম।
পূর্ণেন্দুদা বললেন বিষ্ণুদার নাম। প্রেসের নাম। চমকে গেলাম, এ তো সেই প্রেস! শুধু
বিষ্ণুদার সাথে দেখা হবে এই লোভে ঘাড়ে নিলাম ‘স্বাক্ষর’ ছাপাবার কাজ। খুঁজে গেলাম কলেজ স্ট্রিটে,
রেনেশাঁ প্রিন্টার্সে।
তবে
মজা পেলাম না। কলকাতায় বসে আর বাংলার করাবো কী? ওই কাজেই তো ওস্তাদ সেখানকার কম্পোজিটার,
প্রুফরিডার … কোনো কিছু নিয়ে ঘ্যাঁতাতে হয় না, পাশে
বসতেও হয়না, দু’প্রুফে বই ফাইনাল। বরং মজা পেলাম কয়েক
মাস পর যখন একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ‘একুশের দর্পণে’ ফোল্ডার তৈরির কথা উঠল। বললাম, না পূর্ণেন্দুদা এখানেই ছাপব। বোধহয়
পূর্ণেন্দুদারই দেওয়া ঠিকানায় খুঁজে গেলাম ঝরিয়ার একটা প্রেসে। সীসের টাইপের গুনতি
হল, কাঠের টাইপের গুনতি হল, তবে কাজ হাতে নিলেন ভদ্রলোক। রোজ ধানবাদ থেকে ঝরিয়া যাওয়া
এমন কিছু ব্যাপার তখনও ছিল না, কিন্তু ঝরিয়া শহরটা অন্যরকম, যাওয়ার মজা ছিল। তারপর
লালচে বোর্ড পেপার পছন্দ করা, বসে প্রুফ দেখা … একদম অনুষ্ঠানের দিন সন্ধ্যায় হাতে গরম নিয়ে
আসা প্রেস থেকে, তাও কোথায়? সোজা লিন্ডসে ক্লাবে! লোকজন জুটে গেছে। তারপরেই আবার ছাপা
হয়েছিল, ‘বারবধু’ নাটক উপলক্ষে অপসংস্কৃতির বিরুদ্ধে হ্যান্ডবিল।
সেটা কোথায় ছাপা হয়েছিল, এখন আর মনে নেই।
বড় বটগাছটা
শ্রমিক
মুদ্রণালয়ে পৌঁছোন সহজ ছিল না। মহেন্দ্রু পাড়ার ওই গলিটা চোখে পড়েছে বহুবার, প্রথম
বার ঢুকেও এমন কিছু আলাদা মনে হয় নি অন্যান্য গলিগুলোর থেকে, কিন্তু দরজা দিয়ে ঢুকে
প্রথম ঘরটা পেরিয়ে ভিতরের ঘরে যাওয়ার মত করে একটা ব্যারাকের মত বারান্দায় পৌঁছোন এবং
তার শেষ প্রান্তে ডান দিকের শেষ দরজা দিয়ে ভিতরে ঢুকে একটা ঢাকা উঠোন, চার দিকে মেশিন
বা তার অংশ ছড়ান এবং তিন দিকে ঘর আর পায়খানা, বাথরুম, পুরো স্বতন্ত্র একটা ইউনিট – ওটাই শ্রমিক মুদ্রণালয়।
অবশ্য
প্রেসগুলো এমনই হয়, অন্ততঃ হত, তিরিশ বছর আগে অব্দি। শ্রমিক মুদ্রণালয়ের আগেও যে প্রেসে
যেতাম, এক সহকর্মীর ভাইয়ের প্রেস, বড় কম্পাউন্ডের সবচেয়ে দূরের কোনাটায়। এখন যে ডিজিট্যাল
কম্পোজিংএ যাই, শুধু এটুকুই তফাৎ যে বড় উঠোন আর জরাজীর্ণ ঘরের-ভিতর-ঘর-ওয়ালা সে বাড়িগুলোই
নেই, ভেঙে বহুতল হয়েছে, শুধু সামনেটা মেক-আপ, বাকি তিন দিক ব্যান্ডেজ-খোলা ঘা। তার
ভিতরেও সেই – প্যাসেজের ভিতরে প্রায় অদৃশ্য এক ভাঁজ
দিয়ে ওপরে ওঠার সিঁড়ি, কোনো এক তলার কয়েকটি ঘরের পেছনে লুকিয়ে থাকা একটা ঘর, তরুণ প্রজন্মেরই
এক মানুষ কিন্তু চোখ আর কাঁধের অবসাদ বুঝিয়ে দেয় কাজটা বড় ঝক্কির।
সে যা
হোক, এই বুড়ো মালিক এমার্জেন্সিতে জেল খেটেছিলেন, লোহিয়াপন্থী এবং নকশালপন্থী পত্রিকা
ছেপে। যার সূত্রে প্রেসটার সন্ধান পেয়েছিলাম তার বন্ধুস্থানীয় ছিল তাঁর ছেলে। কিছু
দিনে আমারও বন্ধুস্থানীয় হয়ে গেল।
বছরের
পর বছর ইউনিয়নের কত কাজ করিয়েছি। হিন্দি কাজ মানেই বিজয়জি। তবে একটা রাত মনে রাখার
মত থাকবে।
ইউনিয়নের
রিপোর্ট ছাপছে। দুদিন দরকার। কিন্তু একদিন পর গয়ায় সম্মেলন। কী করে হবে? বিজয়কে বললাম,
“রাতভর থাকব, খেয়ে আসছি।” তাই গেলাম। রাত তিনটে অব্দি লাগাতার
চলল কম্পোজিং, গ্যালি প্রুফ, সেকেন্ড প্রুফ, ছাপাইয়ে যাওয়া। শেষ হলে বিজয়কে বললাম বাইন্ডিং
করিয়ে (ছোটো রিপোর্ট, স্টিচের দরকার ছিল না, শুধু স্টেপলিং আর কাটিং) সাতটার মধ্যে
আমার কাছে পৌঁছে দিতে। মহেন্দ্রু মোড় ছাড়িয়ে বড় বটগাছটা ভরে শুরু হয়ে গিয়েছিল পাখিদের
কিচিরমিচির। চারটেয় বাড়িতে গিয়ে দু’ঘন্টা ঘুমোলাম। সাতটায় বিজয় পৌঁছে দিল বান্ডিল। সাড়ে সাতটায় বেরিয়ে
আমি সাড়ে আটটার ট্রেন ধরলাম। একটায় পৌঁছোলাম গয়া। আড়াইটেয় সম্মেলন শুরু হল।
তখনই
মহেশজির সঙ্গে আলাপ হয়েছিল। ফেডারেশনের পত্রিকা ‘ক্রান্তিদূত’, পরে ‘আন্দোলন’এর কাজ রাঁচি থেকে পাটনায় আনা হল, দায়িত্ব
ঘাড়ে চাপলো। ঘোষদা রায় প্রিন্টার্সের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন। দোতলায় কম্পোজিটর, রোগা-পাতলা
মহেশজি বন্ধু হয়ে উঠলেন। অবশ্য বাংলার কাজ নয়, সবই হিন্দি বা ইংরেজির কাজ, আর মাঝে
মাঝে ছোট ছোট পোস্টার-বিলে কাঠের টাইপের কাজ। মহেশজির সঙ্গেই বসে বসে ’৮৪তে বড় কাজ করলাম বেফি সম্মেলনের স্মরণিকা।
বোধহয় পুরোনো টাইপসেটে শেষ বড় কাজ আমার সেটাই ছিল। অফসেট তত দিনে বাজার ধরতে শুরু করে
দিয়েছে। বড় ট্রেডল বসে যাচ্ছে। ফ্ল্যাট মেশিনও বসবে বসবে করছে। তবু চলেছে আরো বেশ কিছু
দিন ঢিকিয়ে ঢিকিয়ে। আরে আমাদের মত ছোট কাজকরিয়েদের অফসেট তো পোষাবে না।
এসময়টাতেই
এসে গিয়েছিল আরো দুধরণের ছাপার কাজ। এসে গিয়েছিল মানে আমার রোজনামচায়, কাজদুটো তো আগের
থেকেই ছিল। একটা পোস্টার ছাপাই, লিথোগ্রাফ মেশিন। রমনা রোডেই ছিল লেবেল লিথো প্রেস।
পোস্টারের প্রথম নকশা করে নিতাম। আর্টিস্ট তো নই, আর সংগঠনে মাল্টিকালারের পয়সাও থাকত
না। তাই বিশেষ করে হিন্দির ক্যালিগ্রাফিক টাইপ দেখে দেখে যতটা সম্ভব আলাদা আলাদা আকৃতি
এবং আকারে বিষয়টা সাজাতাম যাতে দুটো রঙেও (লাল আর কাগজের সাদা) মোটামুটি দৃষ্টি আকর্ষণ
করে। তারপর প্রেসকে দিতাম। লিথোর বড় বড় কার্বন বলগুলো খুব টানতো। একটা কালচে ভাব ছেয়ে
থাকতো বন্ধ ঘরটাতে। পরে লেবেল লিথো উঠে গেল। তখন গেলাম সব্জিবাগে, আজাদ লিথো প্রেসে।
আজাদ লিথোতেই একদিন ঐতিহাসিক ঘোষণা শুনলাম। লিথো উঠে যাচ্ছে। ১৮-২০ অফসেটে ছাপছে। ২২-৩০
এখন কিছুদিন ছাপবে লিথোয়, তবে পয়সা থাকলে ২২-৩০ কেন তার দ্বিগুণ সাইজেরও পোস্টার অফসেটে
ছেপে দেবে চেন্নাই, তখন ম্যাড্রাস। ট্রান্সপোর্টে আনিয়ে নাও। ১৯৮৪তে বেফির দুহাজার
পোস্টার সেভাবেই ছাপিয়ে আনা হল। সেসময়েই এল ফ্লেক্স আর ভিনাইলের বোর্ড। কী অসাধারণ
কর্মপটু মিডিয়া গ্রাফিক্সের রোগা পাতলা ছোট্ট ছেলেটি। অনওয়র বা কী যেন নাম। রোজ ডেলি
প্যাসেঞ্জারি করে। চটপট কী সুন্দর ডিজাইন করে ফ্লেক্সের ব্যানারগুলো। লাল শালু বা সাটিনের
ওপর সিল্ভার বা সাদা পেন্ট দিয়ে লেখা ব্যানারের দোকানগুলো সব উঠে গেল। এসে গেল ফ্লেক্সের
ব্যানার, পোস্টার, ফেস্টুন। কত রঙের বাহার! কিন্তু শালুর লাল আর রইল না। ফ্লেক্স যদি
টানা লালও হয়, ছাপাই বলে কিনারে সাদা বর্ডার ছাড়তেই হবে। শালু যেন এখন শুধু লাল পতাকায়
থেকে চ্যালেঞ্জ করে, “দেখা,
কিনারটাও লাল করে, তবে বুঝি!”
থ্যাঁতলানো দাঁতন আর আলতা
পোস্টার
নিয়ে কথা বলতে গেলে হাতে লেখা পোস্টারের কথাও সেরে নিতে ইচ্ছে করে। ধানবাদ থেকে তখনো
ফিরিনি, কিন্তু লাইনে এসে গেছি। পাটনায় এসেছি ইউনিয়নের সম্মেলনে যোগ দিতে। কেউ বলেছিল,
শুভানুধ্যায়ী, “আসবি, নেতারা দেখবে, চিনবে, একবার নিজের
মুখে বলেও আসবি জেনারেল সেক্রেটারিকে, বাড়িতে গিয়ে … এসব করতে হয়! নইলে লালাবাদে আর ভুমিহারবাদে
ফেঁসে যাবি, প্রথম খেপে অন্য কারুর হয়ে যাবে!” হয়েও ছিল তাই – ঝগড়া, চ্যাঁচামেচি করতে হয়েছিল ম্যানেজারের
সঙ্গে – তবে সম্মেলনের আগের দিন সকালে পাটনায়
জেনারেল সেক্রেটারির বাড়িতে গেলাম। পোদ্দারজি। পরে অবশ্য তাঁর ভক্তও হয়ে উঠেছিলাম।
খুব সৎ, কর্মনিষ্ঠ মানুষ ছিলেন। ট্রান্সফারের কথ বলব কি বলব না ভাবছিলাম, তার আগেই
বলে উঠলেন, “ও, সম্মেলনে এসেছ? ভেরি গুড! শোনো, পঞ্চাশটা
হাতে লেখা পোস্টার তৈরি করে নিয়ে কাল নিয়ে এস তো ভেন্যুতে! এই সার্কুলারটা নিয়ে যাও,
ইস্যুগুলো সব পেয়ে যাবে।”
তার
আগে কখনো পোস্টার লিখিনি হাতে। কাগজটাকে যে চার্ট পেপার বলে তাও জানতাম না। পঁচিশটা
শিট কিনে আদ্ধেক আদ্ধেক করে শুরু করলাম বোনেদের স্কুলের সময়কার পোস্টার কালার আর তুলি
দিয়ে। সারা রাত জেগেও পঁচিশ-ছাব্বিশটার বেশি হল না। তবে হলে পোদ্দারজি আর জিজ্ঞেস করলেন
না পঞ্চাশটা কেন হয় নি।
তবে
নেশাটা রয়ে গেল। ভালো পারি, খারাপ পারি, করে গেছি তার পরেও। তত দিনে একটু আধটু সংগঠনের
কাজে হাত পাকাতে পাকাতে বুঝেছি সবাইকে নিয়ে বসে সারা সন্ধ্যে, রাত এধরণের … হাতে পোস্টার লেখা, দেয়াল লেখা, ফেস্টুন
টাঙানো ইত্যাদির কী গুরুত্ব। আমরা তো বাংলার ছেলে ছিলাম না, যে ছাত্র জীবন থেকে এসব
করার অভ্যেস থাকবে! অভ্যেসটা গড়তে হয়েছে বুড়ো-হাবড়াদের নিয়ে। তারই মধ্যে আমাদের মত
খারাপ-লিখিয়েদের জন্য, তাড়াতাড়ি বড় অক্ষর লেখার একটা পথ পেয়ে গেলাম। সহকর্মী মীরা কক্কড়,
আমাদের ভাবীজি (কেননা তাঁর স্বামীও তাঁর সহকর্মী আর সংগঠনে নেতা) বুদ্ধি দিলেন, “পুরোনো ব্যবহার করা নিমের দাঁতন যোগাড়
কর। ঘেন্না হলে নিমের দাঁতন কিনে মুখটা হাতুড়ি বা নোড়া দিয়ে ছেঁচে নাও। তাতে তুলো জড়িয়ে
নাও শক্ত করে। তারপর বাজার থেকে আলতা কিনে ডুবিয়ে ডুবিয়ে লেখ।” দারুণ রাস্তা পেয়ে গেলাম। ইউনিয়নের
অফিসের ঘরে, সামনের মাঠে সবাইকে বসিয়ে দিলাম দু-তিনটে ডবল-স্কেপ তা-কাগজ বা খবরের কাগজ,
দাঁতনের তুলি এক ঢাকনি করে আলতা আর স্লোগানের লিস্ট দিয়ে। “লেখো। খারপ হোক, ভালো হোক, স্লোগানগুলো
বড় বড় করে লেখো।”
আর নেশা
হল নতুন নতুন কাগজের। ভিখনাপাহাড়ির মোড়ে যখন পোস্টার একজিবিশন হল, বড় ব্রাউন পেপারে
নানারকমের রঙিন কাগজ, ভালো ম্যাগাজিনের গ্লসি কাগজ ইচ্ছেমত কেটে কেটে সেঁটে দিয়েছিলাম।
কখনো ঘন্টাখানেক বসে যেতাম কেসরিজির দোকানে। ভালো মানুষ ছিলেন। কাগজের হোলসেল ডিলার।
তাঁর গুদামে ঢুকে কাগজ বাছতাম, চার্ট, বোর্ড, ব্রাউন, এমনকি বড় ফুল ডিমাই হোয়াইট প্রিন্ট
… (কাগজের গন্ধ আমার ছোট বেলা থেকেই ভালো
লাগে, চোখ বন্ধ করে গন্ধ শুঁকে বলতাম কোনটা কোরাল আইল্যান্ড, কোনটা মডার্ন প্রোজ, কোনটা
বেঙ্গলি সেলেকশন্স)।
আর দ্বিতীয়
ধরণের ছাপাইটা এল জেরক্স। প্রথম জেরক্স। কার্বনের গুঁড়ো, খাড়াই প্লেট, কাগজ শুকনো রাখার
জন্য ড্রয়ারের ভিতরে একশো ওয়াটের বাল্ব। অবশ্য তার মাঝে আরেকটা প্রয়োগ করেছি। স্ক্রিন
প্রিন্টে বুলেটিন বার করেছি হিন্দিতে - রোজনামচা। একটাই সংখ্যা বেরিয়েছিল।
জেরক্সে
নিয়মিত ডকুমেন্ট কপি তৈরি করার কাজ, সাইক্লোস্টাইলের বদলে নতুন আসা কম্পিউটারে টাইপ
করিয়ে (পরে শিখে নিজেই করে) ওতেই শ’খানেক কপি করে সার্কুলার তৈরি করার কাজ এসব তো চলছিলই। নতুন জিনিষ
করলাম, ডাকবাংলোয় ‘প্রতিলিপি’ দোকানটায় গিয়ে আমন্ত্রণপত্র তৈরি করলাম
নতুন ধরণের। নতুন বলব না, হয়তো আরো অনেকেই করা শুরু করেছিল, পরে তো দেখলাম সেটাই ট্রেন্ড
হয়ে গেছে। অর্থাৎ একটা ফুলস্ক্যাপ কাগজে এক-তৃতীয়াংশে বা আদ্ধেকে (প্রয়োজনানুসারে)
একটা ছবি বা ডিজাইন কপি-পেস্ট করে, অনুষ্ঠানের নাম, বিষয়-চুম্বক ও আমন্ত্রণ টাইপ করে
সেটাকে ফ্লুরোসেন্ট কালার জেরক্স পেপারে (সবুজ, কমলা, হলুদ ইত্যাদি) কপি করে নেওয়া। তারপর স্কেল বসিয়ে ছিঁড়ে ছিঁড়ে আলাদা
আলাদা করে নেওয়া। তিরিশটা ছাপালে নব্বইটা হয়ে গেল। একটা আলোচনাচক্র বা সভার জন্য যথেষ্ট।
সোজাসুজি হাতে দাও বা খাম কিনে নিয়ে খামে ভরে দাও – মান্যগণ্য বুঝে।
আর করলাম
হাতে লেখা পত্রিকা বা বুলেটিন ছাপাই। এটা অবশ্য আমার মাথায় আসে নি। একদিন বুদ্ধমূর্তির
কাছে রাণা সাইকেল থামালো। পত্রিকা-ফোল্ডার বিক্রি করছে, বাইলিঙ্গুয়াল – ‘স্পর্শ’। বাঃ, এ তো ভালো আইডিয়া! আগে ওয়ান-বাই-ফোর
ডিমাই চার্ট পেপারে হাতে লিখে, সুন্দর অলঙ্করণ করে তারপর পয়সা বেশি থাকলে স্ক্রিণ করো,
রঙিন কালিতে হবে, এমবসের মত সুন্দরভাবে উঠে উঠে থাকবে। আর নয়তো জেরক্স করো। আমার হাতের
লেখাও ভালো নয়, অলঙ্করণও ভালো নয়। তাই ‘বীজপত্র’এর কাজটা শুরু করল কুমার, কুমার রাণা, এখন কলকাতায়, সে সময় পাটনায়,
মহেন্দ্রু পাড়ায় থাকত। সঙ্গে রইলাম, রাণা, আমি, বিশ্বজিত সেন, আরো অনেকে - পূর্ণেন্দু
মুখোপাধ্যায়, দীপক গোস্বামী … । সেটাও একদিন আমার ঘাড়ে পড়ল। নিজের হাতে লিখতে আর অলঙ্করণ করতে
গিয়ে বুঝলাম চলবে না। সেই শেষ একটা বেরুলো হাতে লিখে জেরক্স। তার পর সোজা কম্পিউটারে
ছাপাইয়ে চলে গেলাম।
সদাহাস্যমুখ
ঘোষদা
কম্পিউটার
সেন্টারের মালিক আমাদের সবার প্রিয় সদাহাস্যমুখ ঘোষদা। ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে রিটায়ারমেন্টের
পর তিনি কম্পিউটার সেন্টার খুলেছিলেন। এসসেল কম্পিউটার্স। যখন ঘোষদা আছেন তখন আর চিন্তা
কিসের? এই মনোভাবে আমাদের ইউনিয়নের কাজ নিয়ে আগে তাঁর কাছে গিয়েছিলাম। কিন্তু যখন ‘বীজপত্র’ নিয়ে গেলাম, সমস্যা হল টাইপিস্ট নিয়ে। চটপটে
একজন বাংলা টাইপিস্ট খুঁজে পাওয়া যায় না। তবুও পত্রিকার চারটে সংখ্যা তাঁর হাত দিয়ে
বেরুলো। তখনই বোধহয় কুমার চলে গেল কলকাতায়, ‘বীজপত্র’ আর বেরুলো না। তারপর ‘ঈক্ষণ’ একটা সংখ্যা। সেটাও বোধহয় ঘোষদার হাতে বেরিয়েছিল।
কিন্তু বাংলা টাইপিস্ট নিয়ে সমস্যাটা ছিলই। ঝন্টুর সাথে প্রথম আলাপ হয়েছিল গুরুচরণদার
বাড়িতে। যখন আমাদের সাহিত্যপ্রয়াসের সমষ্টিগত রূপ বলতে রয়ে গেলাম শুধু পূর্ণেন্দুদা
আর আমি, তখন ঝন্টুদের প্রিন্টস কেয়ারকে ধরলাম। ‘প্রতর্ক’ কোনো রকমে দুটো সংখ্যা বেরুলো। তারপর তাও
বন্ধ হয়ে গেল। নীট অভিজ্ঞতা হল এটাই, যে একজনকে থাকতেই হবে যার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান
হবে পত্রিকা। নইলে যতই বড় হোক সাহিত্যগোষ্ঠি, পত্রিকা বন্ধ হবেই হবে। আর মাদের মধ্যে
কেউ এমন কখনো ছিল না যার একমাত্র ধ্যানজ্ঞান পত্রিকা। সবাই বড় মাপের মাল্টিফেরিয়াস
বুদ্ধিজীবী।
আরেকটা
ছাপাই কাজ, সাইক্লোস্টাইল, চলছিল অবশ্য অনেক আগে থেকেই, তবে তার সঙ্গে কিছু মজার গল্প
জড়িয়ে আছে। এমার্জেন্সির সময়, একটা স্বঘোষিত গুপ্ত সংগঠনে আছি। সেকেন্ড হ্যান্ড ডুপ্লিকেটিং
মেশিনের দরকার। একজনকে পাঠানো হল জেস্টেটনারের অফিসে। সে খবর নিয়ে এল, কে কিনছে, কোথায়
ব্যবহার হবে, কী কাজে ব্যবহার হবে সব লিখে দিতে হবে এবং সেসব ভেরিফিকেশনে যাবে। আমরাও
আনকোরা। আরেকবার অন্যভাবে ঝালিয়ে দেখতে গেলামই না। নিজের বদভ্যাস মত আমি বললাম, দেখা
যাক নিজেরা তৈরি করা যায় কিনা। স্টেনসিল যোগাড় করলাম। ডুপ্লিকেটিংএর কালি যোগাড় করলাম
ব্যবহার করা হাফ-টিউব। রুটি বেলার বেলন-চাকি কিনে ব্যাপারটা করতে চেষ্টা করলাম। হল
না বলব না। তবে যত কষ্ট করতে হল, যত কালি মাখলাম, যত সময় নষ্ট হল, সেসব দেখে ভাবা গেল
যে হাতে কপি করেই চলুক আপাতত। অথচ এমার্জেন্সি শেষ হওয়ার দু’এক বছরের মধ্যে এমন ঠেকের খোঁজ পেয়ে
গেলাম যেখানে মেশিন, স্টেন্সিল, কালি, মায় প্রয়োজনে টাইপিস্ট পর্য্যন্ত সব ফ্রিলি এভেলেবল।
যদিও কাজের ক্ষেত্রটা ছিল ইউনিয়ন, গুপ্ত কিছু না, কিন্তু স্টেনসিলে টাইপ করে এনে চেষ্টা
করাই যেতে পারত। জানতামই না ঠেকটার কথা। অবশ্য ইউনিয়নেও স্টেনসিলে টাইপ কখনো নিজে করিনি,
খুব খারাপ করতাম। করত শঙ্কর বা অনুপম বা অন্য কেউ। জীবনে একবারই আমার নিজের কাটা স্টেন্সিলে
ডুপ্লিকেশন হয়েছে, সে আবার আরেক গল্প। আমার বাংলা টাইপরাইটারের গল্প। কত রোমাঞ্চিত
হয়ে কলকাতা থেকে বাংলা টাইপরাইটার কিনে এনেছিলাম! অনুপম তখন কলকাতায়, সে-ই যোগাড় করে
দিয়েছিল।
আসলে
আমাদের জীবনের পুরোটা সময় সময়েরই সঙ্গে পাল্লা দিতে দিতে ফুরিয়ে গেছে। পয়সাও থাকত না।
যদ্দিনে মোটামুটি একটা এসএলআর ক্যামেরা কেনার পয়সা হল, তার কিছু বছরের মধ্যে সে ক্যামেরার
নতুন নামকরণ হয়ে গেল – এনালগ
ক্যামেরা, বাতিল। যদ্দিনে ছেলেকে ডিজিটাল ক্যামেরা কিনে দিলাম, তার কিছু বছরের মধ্যে
এসে গেল স্মার্ট ফোন – ডিজিট্যালে
ডিএসএলআর না হলে বাতিল। যে হ্যাসেলব্লাডের স্বপ্ন দেখতাম আশির দশকে, নতুন সহস্রাব্দে
দেখলাম ওএলএক্সে পাওয়া যাচ্ছে, কেউ কিনছে না। ঠিক তেমনই হল টাইপরাইটারের সঙ্গে। কেনার
কয়েক বছরের মধ্যে এসে গেল ইলেক্ট্রনিক টাইপরাইটার, তারপর ডেস্কটপ, তারপর ল্যাপটপ। এখন
তো অনেকে মোবাইলেই উপন্যাস লিখে ফেলছে। আমার টাইপরাইটারও লোহার দরে বিক্রি হয়ে গেছে।
ইউনিকোড
একটা
সময় কম্পিউটারের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। জানতাম, আটকাতে পারব না। কিছুটা সচেতনতা পারবে,
কিছুটা প্রতিরোধ করতে পারবো কর্মীসংখ্যায় হ্রাস এবং স্তিমিত করতে পারব হ্রাসের গতি,
আর একটা বার্গেনিং কাউন্টার পাব কিছু অধিকার আদায় করতে। শেষে যখন হাতের নাগালে এসে
গেল মেশিনটা, শিখেও নিলাম বেশ তাড়াতাড়ি। বাড়ির জন্যও একটা কিনলাম, সাইবার কাফেতে গিয়ে
ইন্টারনেটে চিঠিপত্র পাঠানো, কাজকর্ম করা শুরু করলাম … সম্ভবতঃ, দু’হাজার দশ বা এগারো থেকে কলমের পাট চুকিয়ে দিলাম।
নিজের ল্যাপটপেই, বাংলা, হিন্দি বা ইংরেজি লেখার ওয়র্ড ফাইল তৈরি করি। প্রেসের ঠেক
বলতে তিনটে। বাংলার জন্য আশীষ, হিন্দির জন্য অজয়, ইংরেজির জন্য নির্মল। এদের মধ্যেও
ঝামেলা। আমি তো রানিং ওয়র্ড ফাইল দিয়ে খালাস। তাও বাংলা আর হিন্দির বেলায় ইউনিকোডে।
এখন হিন্দি করবে অজয়, পেজমেকারে। সেটা ইউনিকোড খায় না। বদলাতে হয়। বাংলা করবে আশীষ,
কোরেলে, সেটাও ইউনিকোড খায় না। কত বলি, নতুন সফটওয়্যার তো বেরিয়ে গেছে কবে, এডোবের,
নাও না কেন? খবরের কাগজগুলো তো দিব্যি ব্যবহার করছে! … নাঃ এখানে অসুবিধে আছে। এরই মধ্যে চলছি।
পুরোনো
সাহিত্যবলয়ের আদ্ধেক লোক গত, এক-চতুর্থাংশ ব্যাঙ্গালোরে বা পুনায়। এমনকি সেই মাই ডিয়ার
ঘোষদাও গত। আমি যদ্দিন আছি। আপাতত কোরোনা পেরিয়ে এসেছি। ‘অভিযান’ থেকে ‘বীজপত্র’ অব্দি র্যাকে কোথাও না কোথাও রাখা আছে। অনেককিছু
নেইও। এখন তো পত্রিকাও বদলে যাচ্ছে ওয়েবজিনে অথবা সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপে। কী মজার খেলা
এই বদলগুলো। নিজে পিছলে পড়ে হারিয়ে যেতে যেতেও শেষ পর্য্যন্ত হাসিই পায়। বিশেষ করে
তাদের দেখে যারা ১৯৯১এ বিশ্বাস করে নি যে বেঁচে থাকার বা দুনিয়া বদলানোর লড়াইটার একটা
ভিন্ন, অপরিচিত প্রেক্ষিতে তারা পৌঁছে যাবে খুব তাড়াতাড়ি।
মাঝে
কোভিড যেমন অনলাইন ক্লাস আর ফ্রম হোম কাজ দেখিয়ে দিল, দেখিয়ে দিল অনলাইন মিটিং
আর আলোচনাচক্র, সাহিত্যের আড্ডা, সঙ্গীতের আসর জমিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনা, তেমনি দেখিয়ে দিল ইমেলের মাধ্যমে প্রুফ চালাচালি। এখন তো পত্রিকাও ওয়েবজিন হয়ে গেল। বইও ছাপা কয়েকটা বেরোয়, বাকি ছড়িয়ে পড়ে পিডিএফ, ইবুক বা কিন্ডলএ। সাত বছর ধরে 'বিহার হেরাল্ড', 'সঞ্চিতা' বা বইপত্রগুলো সেভাবেই চলছে! দিব্যি এগোচ্ছে ব্যাপারটা। তবুও ওদের
দোকানঘরগুলোর গন্ধ, গল্প আর চা এত টানে, চলে যাই। বলি ভুল বেশি ছিল, সামনে বসে কারেকশন
করাবো।
এদিকে
গৌড়ীয় মঠ বা ওদিকে সেই কন্যা বিদ্যালয়ের মোড়ে চটজলদি পৌঁছোতে এখন দুদিক থেকে দুখানা
ফ্লাইওভার। কন্যা বিদ্যালয়ের মোড় লিখতে গিয়ে হঠাৎ মনে পড়ল আরে, সেই হলুদ বাড়িটাও তো
কন্যা বিদ্যালয়ের পিছনে বড় রাস্তায় – সরস্বতীসদন – যেখানে আমার জন্ম হয়েছিল। কী আশ্চর্য সমাপতন, না? সমাপতনের শেষ
আপতনটা কী হবে? বেঁচে থাকতে থাকতে এমন কোনো নারীর সঙ্গে দেখা, যে ছোটোবেলায় ওই কন্যা
বিদ্যালয়ে পড়াশুনো করেছিল? তেমন কিছু কি অপেক্ষা করছে কোথাও?
মনে
পড়ছে চার বছর আগে। নির্মলের দোকানে বসে আছি। দোকান বলতে একটা ডেস্কটপের মনিটর, তাও
তার সামনে লোক বসলে পেছনটা থাকবে গ্রাহকের দিকে। ঘরটার সাইজ পাঁচ ফুট বাই নয় ফুট। ডেস্কটপের
সিপিইউটা টেবিলের নিচে। টেবিলের ওপর মনিটরের পর প্রিন্টার, তারপর আরেকটা সিপিইউ – সেটা নাকি তার ভাই আমেরিকা থেকে নিয়ে
এসে দিয়েছে, কিন্তু একটু প্রব্লেম করছে, দেখাতে হবে। আজকাল এরকমই দোকান হয় ডাটা এন্ট্রি
বা গ্রাফিক্সের কাজের। অজয়ের দোকানটাও এই একই রকম। আশীষের দোকানটা একটু বড় কেননা নিজেই
একটা ডিজিট্যাল প্রিন্টার রেখেছে। তবে সাধারণত ছাপাইটা অন্য দোকানে হয় যারা অফসেট আর
মিনি অফসেট আর ডিজিট্যাল প্রিন্টার নিয়ে বসে আছে। এখন নয়াটোলার প্রেসপাড়ায় তাই মেশিনের
আওয়াজ অনেক কমে গেছে। নিঃশব্দেই বেশির ভাগ কাজ হয়। কার্বনের গুঁড়োও আর নেই হাওয়ায়।
তবে জলজমাটা আছে গলির মুখে। হাফ কাপ চা কাগজের কাপে আরো ছোটো হয়ে গেছে। সন্ধ্যে হতে
হতে বরং বড় রাস্তায় হাজার হাজার কোচিংএর ছাত্রছাত্রীদের আওয়াজ বেশি হতে থাকে। একদিন
তো দেখলাম একটা পুরো ক্লাস প্রত্যেকে নিজের নিজের চেয়ার মাথায় তুলে এক বিল্ডিং থেকে
আরেক বিল্ডিংএর দিকে ছুটছে! এরকমও হয়? আনারসের ভিতরে মাঝখানের শক্ত ভাগটা ঠেলাওয়ালারাও
কোনো কাজে লাগায় না। গরুকে দিলে হয়তো খেয়ে নিত, বা খেত না। সেদিন একটি ছেলেকে দেখলাম
ঠেলা থেকে ওই শক্ত ডাঁটিটা তুলে এগিয়ে গেল। কামড়ে চিবোতে থাকল। এত খিদে পেয়েছিল?
নির্মলের
দোকানে আমি একা বসে আছি কেননা, নির্মল ডিজিট্যাল প্রিন্টারে একটা ম্যাটার প্রিন্ট করাতে
গেছে নিচে। ম্যাটারটা আমারই। প্যালেস্টাইনের ফ্রিডম থিয়েটার থেকে একটা ডেলিগেশন এসেছে
পাটনায়। তাদেরকে মেমেন্টো দিতে হবে। মেমেন্টোটা ডিজাইন করেছি। একটা ডিজিট্যাল পেপারে
ছ’টা প্রিন্ট বেরুবে। প্রিন্টটা নিয়ে আরেকজনকে
দিয়ে আমি ডাক্তারবাবুর সঙ্গে বেরিয়ে যাব চেন্নাই। সেখানে মিটিং করে দুদিন পর ফিরে সোজা
হলে ঢুকব যখন মেমেন্টো দেওয়া হবে সবাইকে এবং একটা ওয়েলকাম ফিল্ম স্ক্রিনিং করা হবে।
সেই ফিল্মটাও পাটনা সিটিতে সোনুর ডিজিটাল স্টুডিওতে বসে তৈরি করিয়ে এসেছি।
হাঃ,
হাঃ, যুগ পাল্টে গেল, নিজের মুখ পাল্টে গেল, বাঁচার অসুখ পাল্টে গেল কিন্তু এসব কাজের
নেশা আমার গেল না।
পাটনা
১৮.৮.২৩
No comments:
Post a Comment