Wednesday, August 31, 2022

রক্ত

ভালো না লাগলে চোখ বন্ধ করে থাকো?
বলতেই পারি কিন্তু বরং বলব, দৃষ্টি 
কঠিন করে দেখে পরে চেষ্টা কর 
নিজে করতে কাজটা। মুরগি খাবে কিন্তু 
হালাল বা ঝটকাটা দেখতে ভিরমি খাবে 
ড্রামের ভিতর থেকে ছটপটানির ঢুপ ঢুপ
শুনতে শিউরে উঠবে, চোখ ঘুরিয়ে নেবে 
পাখিটা ওঠালে ......হয়? হয় না দোস্ত!
নিজে হাতে কাটো। পৃথিবীতে বাঁচার 
বয়সটাই তো যুদ্ধ, বাইরে, কৌম-গ্রামে, 
আবার যুদ্ধের বয়স – ছুরি ধর হাতে। 
আর সেটাই কবিতা – হাতে রক্ত লাগবেই।

১.৯.২২



Monday, August 29, 2022

চাচাভাতিজা

হঠাত চিৎকার, "চাচা"! অদেখা বছর পঁচিশ-তিরিশের
ভাগ করি কিছুক্ষণ পুরোনো ভাতিজাসঙ্গে, চায়ের দোকানে;
রাতের ফিরতি পথে মোলাকাতে দুকাপ চায়ে হেঁটে বেড়াই
মুম্বাইয়ে, কখনো পাটনায় বেঁচে-থাকা বাঁচিয়ে রাখা যুদ্ধে

হারি-জিতি-ছাড়বনা-পথ-কিম্বা-গত্‌ সংকল্পের হাড়-মুখে
মিষ্টি ধোঁয়া লেগে চশমা ঝাপসা, স্পষ্টতর হাসে বহ্ণিমন;
ওদিকে উড়ালপুল, পাশে হাঁটাপুল, এদিকে সব্জিবাজার
দুজনে সাথেই রাস্তা পেরোই, ভিড়ে হেঁকে বলি বাড়ি আসিস!

সবার ছেঁড়ে না শিকে, যাও ছিল উবে যায় মারির আকালে  
গেল শতকে গ্যালিলিওতে আমার ফুটপাথি ওভারকোট
(গাঢ়বাদামি), ইঁদুরে খেয়েছিল, আজ বুঝি, আছে ওর কাঁধে
রক্ত আছে লাল, মাঠে হোক মঞ্চে হোক নাটকেই সে থাকবে।

ঘরে ওর ঘরণী-সন্তান, কমাস আগে দেখলাম প্রথম,   
ভিডিও কলে; আগামি শো-এ আশা করি যাব, ওরাও আসবে।    

২৯.৮.২২

 


Friday, August 26, 2022

অবাক দহন (নিহত নারী সাংবাদিকদের স্মরণে)

তাকেও তার হত্যার খবরে প্রথম
দেখি এবং বুকে ধরি অবাক দহনে,
তেজীয়ান তার মুখ। আরো কিছু ছবি,
তার যুদ্ধ দুঃসাহসিক, সাংবাদিকতা,
তার ভাষা, স্বপ্ন! দুজনে গা-ঘেঁষে 
চষি রাজপথ, ঘিঞ্জি চৌরাস্তা, আড়াল
 
জনকে ছিনিয়েছে দুর্বৃত্ত সময়!
আকাশ খুলছে তবু উদ্ভ্রান্তি যাচ্ছে না!   
……
চল্‌ সে ডাকলো, ভরে যাচ্ছে স্টেডিয়াম!
আসছি দুটো আইসক্রিম কিনে নিই!
 
মাঠে তার ছবি। হত্যার বিরুদ্ধে গান!
নে, ধর্‌! মুঠোয় গুঁজতে এক শীত
হাতে টের পাই শূন্য রোদ।
                                   মগ্ন ভীড়।
কব্জি বেয়ে ঝরে পড়ছে আইসক্রিম।  

২৪.৮.২২


 

 

পঁচাত্তরী

ধর্ষকেরা মুক্ত হল
           পঁচাত্তরী মহোৎসবে
                    ব্রহ্মজন্মে হল গুণবান,  
দলিতজন্মে একটি শিশু
            ব্রহ্মজাত শিক্ষকের
                   জল ছোঁয়ার সাজায় দিল প্রাণ
স্বাধীনতার অমৃত আজ
            তেরঙার জিগির তলে
                 আধেক নাফা, আধেক হিন্দু-ত্রাণ।
ভারতবর্ষ এই পেল?
          শিশুমেধ, নারীমেধ,
                   ধর্মনামে স্বৈরাচারের গান?             

২১.৮,২২

 


আধুলি

আসলে সে জায়গাগুলোই চিরকাল
সবচেয়ে ভালো লাগে আমার
যেখানে বে-রুটের বাস নামিয়ে চলে যায়,
খালাসি নিরুদ্দেশে দেখায়,
ওদিক ধরে যান! পেয়ে যাবেন সওয়ারি!
 
দূরে প্রান্তর ভরে গবাদি পশুগুলো
গাজরঘাসের বাড় এড়িয়ে খাদ্য খুঁজছে,
দুটো রাস্তা দুদিকে চলে গেছে
কোন দিকে যাব? তখনি বৃষ্টি
নামে বড় বড় ফোঁটায় সজোরে
 
এত ঝোপঝাড়, আগাছা,
ঘাসে ঘাসে সবুজ অথচ
একটা বড় গাছ নেই যে দৌড়ে
তার পাতার ছায়ায় দাঁড়াব!
কোন দিকে যাই?
 
পকেট থেকে আধুলি বার করে
আঙুলে নাচিয়ে ছুঁড়ি হাওয়ায়
হেড হলে এরাস্তা টেল হলে ও
যাঃ সে আধুলিও ধুত্তোরি!
গড়িয়ে গিয়ে খাড়া হয়ে থামে

ভেজা ঘাসের ভিতরে
কোত্থেকে আসছিলাম কোথায়
যাওয়ার ছিল ভুলে যাই,
আধুলিটা চকচক করে
রামধনু জাগান বৃষ্টিরোদে!
 
২৬.৮.২২



প্রাচীন সুখ

আজ নদীর এই বিজনে মন উতল!
যদিও বৃষ্টি কম, বড় নদীর জল
ফিরতি স্রোতে দিচ্ছে তাকে বন্য রূপ।  
বিস্তীর্ণ নলবনে লুকিয়ে মুখ,
অনেকখানি জায়গা জুড়ে ঝিল হয়ে
শরীর খুলে মেলেছে তার প্রাচীন সুখ!
 
আলিঙ্গনে আকাশকে তার নীলেই চেয়ে
বোঝেনি দুকাঁধ ছড়ান কৃষ্ণ মেঘ
নামবে আগে, উলোঝুলো। নামুক! সে
আকাশ বুকে সোহাগী আজ, নিরুদ্বেগ!
 
শুকনো নদী দেখে দেখে সবাই ভুলি,
মানুষ তারও তীরে, জনপদ গড়ে
পেরিয়েছে পাথর কাংস্য লৌহযুগ,
তারই মাটির ইঁট লাগছে গ্রামে ঘরে।
অপ্রধান সে সভ্যতার নাম না হোক,
নদী সে তো নদীই, আসবে কামের ঝোঁক!

২৫.৮.২২/ ২৫.৮.২৩
  

Wednesday, August 17, 2022

ঠাকুরঘর

এই আমাদের ঠাকুরঘর, থাকবেও এমন।
ঘর বলতে ঘরও নয় আঁধার এক কোণ।

ছবিগুলোর বেড়ে ওঠা বচ্ছরে বচ্ছরে
আবার আছেন বালগোপাল, পেতলের,
                       কেনা, মেলায় ঘুরে।

আছেন রাধাকৃষ্ণ বাঁশের, কার যেন দেওয়া?
মাটির গণেশ রয়ে গেলেন, জলে দিতেও মায়া।

পাঁচখানা শিবলিঙ্গ, কে কবে দিয়েছিল,
                           রাখা তামার টাটে।
পুরোনো সব ক্যালেন্ডারের লক্ষীনারায়ণ,
মহাদেব, মহিষাসুরমর্দিনীও,
                             মেঘের রাজ্যপাটে।

আবার আছেন বুদ্ধদেবও, আছেন কাবা,
                       উর্দু লিখন, সাতশো ছিয়াশি!
আছেন যীশুখ্রিষ্ট, আছেন দুই বাড়ির গুরু এবং
আরো অনেক, মালা তাবিজ, যন্তর একরাশি

কিসে কী হয় কে জানে! থাকলে থাকে স্বস্তি,
থাকে শান্তি, কতক্ষণ? মানেও তো না বর
প্রদীপ থেকেই বিড়ি ধরায় তবু
থাকবে এম্নি, স্নেহমায়া-চিন্তার প্রহর।

যখন যাবে সব যাবে
গঙ্গাজলে কিম্বা বাঁচামরার অকুস্থলে
নিজের জ্ঞান রাখো নিজের কাছে,
কাড়লে অনেক, আর কেড় না শাস্ত্রকথার ছলে।

১৮.৮.২২

 


Tuesday, August 16, 2022

বেসুর

সব গান কি ভাবছি ধরবে সুরে?
বেসুর যেতেই হবে দুর্ঘটনায়,
মৃত্যুমুখ থেকে যেমন ফেরে
পাড়ের মাটি আঁচড়াব বেসুরে!
 
বেসুরেরও নিয়ম বলবে শাস্ত্র।
তা ছাড়িয়ে, যেমন যায় উচ্ছন্নে
বহু মানুষ, দুখযাপনে, তেম্নি,
বেসুর ধরতে ভাঙব সুরের পাত্র।

তাড়া তো নেই, জেনেশুনেই যাওয়া
জানবে না ত্রাণদলও, কোথায় মরছি।
রক্তে কাদায় চেষ্টা করছি অস্ফুট,
বেসুরটাকেই ফুসফুস ভরে গাওয়ার।

নিভন্ত চোখ দেখছে পাড়ার মোড়
বাঁচা-সুর সব বেসুর করার দৌড়!

১৬.৮.২২