বেনালিম সমুদ্রতীর থেকে মাডগাঁওয়ের জন্য বেরিয়ে শেষরাতে,
অজানা গ্রামে ঢুকেই হঠাৎ চারদিক থেকে এগোন শুরু করেছিল
একরাশ কুকুরের গর্জন; অন্ধকারে একটাই বাল্ব জ্বলছিল এক
বারান্দায়, দেখলাম স্কুলবাড়ি – গেট খুলে মেঝেতে গিয়ে বসলাম।
হেডমাস্টারের বন্ধ ঘরে ঘড়ি বেজে উঠল – রাত তিনটে। …
কোঙ্কণি ভাষার সে গ্রাম এ দেশেরই এক অঞ্চল, যে দেশটাকে
নতুন করে গড়ার কথায়, আমার ভাষার কাটাকুটিতে ভরা কাগজে
সুদূর গঙ্গাতীরের শহরে আমার ছোট ঘরটা ভরিয়ে রেখেছিলাম।
এটাও বাস্তব যে ভাষারই দূরত্বে, ঈষৎ ভয়ও করছিল আমার –
এক্ষুনি বেরিয়ে এল বোধহয় চোর মারতে দু’দশটা দোনলা। …
বোধহয় ভয়টারই জন্য শুনতে পারছিলাম না সেই অদ্ভুত শব্দ, যেন
বাড়ির ভিতসুদ্ধু জালে টানছিল কারা – মাছ আর গুল্মে ভরা জাল।
বস্তুতঃ স্কুলবাড়িটাকেই টানছিল, পুরোনো, কত প্রজন্মের ছাত্ররা, যারা
ছড়িয়ে পড়েছিল জীবনে; স্বপ্ন ও স্মৃতি একসাথে টানছিল প্রতিটা ইঁট।
সে টান জানত না, জালের মধ্যিখানে গিয়ে, বসে সিগারেট টানছে
একটি ভিনভাষী – আরবসাগরের নুনে শক্ত প্যান্ট, চামড়ায়, চুলে
বালি আর শঙ্খবীজ, ঠোঁটে তারাদের বিদায়স্পর্শ! … ভুল করে
ঢুকেও পড়তে পারে তাদের স্মৃতিতে, স্বপ্নে, স্কুলবাড়িটার সাথে।
অন্ধকার ছিল গভীর ও উদগ্রীব! যেন কোনো মহাকাব্যের শেষ ক’টি
পংক্তি লেখা হচ্ছে কোথাও! আকাশে মেঘের ছোট ছোট অনুজ্জ্বল স্তবক
ভেসে আসছিল, একটু পরে এক বর্ণাঢ্য, মহান ভোরের জন্ম দিতে।